#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ২৮
#তানিশা সুলতানা
“উনি ওই মেঘার সাথে নিকনিক করে। তাই আমি ডিভোর্সের জন্য গিয়েছিলাম। আমি এসব নিকনিক সয্য করতে পারবো না।
গাল ফুলিয়ে নাক টেনে গোল হয়ে বসে বলে ছোঁয়া। সিমি মুচকি হাসে। এক হাতে জড়িয়ে ধরে ছোঁয়াকে।
” স্যার খুব ভালো মানুষ। একটু রাগী, রগ চটা। কিন্তু মনের দিকে থেকে খুব ভালো। তোর বেপারে খুব পসেসিভ। না হলে ভাব অফিস বাদ দিয়ে তোর জন্য খাবার নিয়ে যেতো?
ছোঁয়া সিমির হাত সরিয়ে দেয়।
“লাগবে না ওনার পসেসিভ হওয়ার। আমি এখানে থাকতে পারছি না। চলে যাবো। পেয়েছেটা কি উনি?
কেনো আমাকে থাপ্পড় দিলো?
চিৎকার করে বলে ছোঁয়া। সিমি দুই হাতে কান চেপে চোখ মুখ কুঁচকে বসে আছে। ছোঁয়ার বলা শেষ হলে কান থেকে হাত সরিয়ে জোরে শ্বাস নেয়
” ঠিক করেছে। থাপ্পড়টাই তোর প্রাপ্য।
খাবার কেনো ফেলে দিয়েছিলি? আবার উকিলকের কাছেও চলে গেছিস ডিভোর্স পেপারে জন্য।
এতোটা ফাস্ট তুই?
খাবার খাবি না ঠিক আছে পরে ফেলে দিতি। ওনার সামনেই কেনো ফেললি?
ছোঁয়া রাগে গজগজ করতে করতে পাশে থাকা বালিশ ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
সিমি ছোঁয়ার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।
“বোনু মাথা ঠান্ডা কর। আমার কথা শোন।
মুচকি হেসে বলে সিমি।
” তোমার কথা শুনবো না আমি। তোমাকেও বিরক্ত লাগে আমার।
হাত ছাড়ানোর জন্য মোচরামুচরি করতে করতে বলে ছোঁয়া।
“তুই দুনিয়াটাকে যতটা সহজ মনে করিস দুনিয়াটা ততটা সাহস নয় রে।
সাদি স্যার তোর সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তুই করছিস না। ফালতু কিছু লজিক খুঁজে ঝামেলা বাঁধাচ্ছিস। কোনো মানে হয় এগুলোর?
ভালোবেসে দেখ না আমি হরব করে বলতে পারি পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষ তুই হবি।
ছোঁয়া চুপচাপ সিমির কথা গুলো শুনছে।
” আগে আমরা যখন স্যারের কাছে কোচিং করতাম। তখন পড়া না পাড়লে স্যার কিছুই বলতো না। কিন্তু স্যারের সাথে বেয়াদবি করলে তাকে খুব মারতো। কথা না শুনলেও খুব পেটাতো।
স্যার তোকে যা বলতে সবটাই তোর ভালোর জন্য। তোর খারাপ হবে এমন কিছু স্যার করবে না। একটু শুনে দেখ না ওনার কথা।
“আমি ওনার কথা শুনে উঠাবসা করতে পারবো না।
কর্কশ গলায় বলে ছোঁয়া।
” আজিব তো
তোকে কে বলেছে ওনার কথা শুনে উঠাবসা করতে? জাস্ট পড়ালেখার বেপারে।
আর সব থেকে বড় কথা ডিভোর্সের চিন্তা মাথা থেকো ঝেড়ে ফেল। থাকনা তুই তোর মতো। এখানে তো খারাপ নেই তুই।
“হয়েছে ছাড়ো এবার। পড়তে বসবো।
কপাল কুচকে বলে ছোঁয়া।
” ঘুরতে যাবি না আমাদের সাথে?
“নাহহহ
ছোঁয়া সিমির হাত ছাড়িয়ে চলে যায়। সিমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। দুটোই এক রকম। কেউ একটু দম নেবে না। সমানে সমানে যুদ্ধ করবে। এদের এক হওয়া কি আদৌও সম্ভব।
ছোঁয়া নিজের রুমের চলে আসে। নিজের রুম বলতে সাদি আর ওর রুমে। সাদি পায়ের ওপর ল্যাপটপ রেখে তাতে গেমস খেলছে। ছোঁয়া সাদির দিকে এক পলক তাকিয়ে পড়ার টেবিলে বসে পড়ে।
বাংলা বইটা খুলে গভীর মনোযোগ দিয়ে বই পড়তে শুরু করে।
সাদি আড়চোখে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
” মেঘা আমার কলিগ। আমরা এক সাথে একটা কেস হেল্ডেল করছি।
সাদি দুবার কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলে।
ছোঁয়া ঠাস করে বই বন্ধ করে সাদির দিকে ঘুরে বসে। সাদি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো বিধায় দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়।
সাদি চোখ নামিয়ে ল্যাপটপে দৃষ্টি রাখে।
“ইমন আমার স্কুলের পাশের কলেজে পড়ে। দেখতে বেশ। আমার দারুণ লাগে।
আপনাকে মেঘার সাথে দেখলে আমিও ইমনের প্রপোজ এক্সেপ্ট করে নেবো।
টিশার্টের কর্লার উঁচু করে টেনে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে ছোঁয়া।
” তো?
সাদি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে।
ছোঁয়ার রাগ হয়।
“তো বুড়ো বয়সে বউ হারাবেন। শালা বুইড়া খাটাশ।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে বাংলা বই টা সাদির মুখে ছুঁড়ে মেরে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় ছোঁয়া।
সাদি ছোঁয়ার চলে যাওয়ার দিকে দুই মিনিট তাকিয়ে থাকে।
” আস্ত একটা ইডিয়েট।
বিরবির করে বলে সাদি।
পুরো বিকেল বই পড়েই কেটে যায় ছোঁয়ার। সিমি পরিকে নিয়ে আইসক্রিম খেতো গেছে। সিফাতের কথা পরি ভুলে যাওয়াতে সিমি আর সিফাতের নাম উচ্চারণ করে নি। সিফাতের মনটা কালো হয়ে যায়। সিমি আর পরির পেছন পেছন যায় দুর থেকে ওদের ওপর নজর রাখার জন্য।
সাদি বিকেলে বেরিয়েছে। ছোঁয়াকে ছোট্ট করে বলে গেছে ‘একটা বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি’
ছোঁয়া পাক্কা পাঁচ মিনিট তব্দা লেগে ছিলো। সাদি ওকে বলে বেরুলো? কিন্তু কেনো? ভাব জমতে চাইছে নিশ্চয়? কিন্তু ছোঁয়াতো এতসহজে ওই সাদা বিলাইয়ের সাথে ভাব জমাবে না।
ছোঁয়াকে থাপ্পড় মেরে ছিলো না? এবার ছোঁয়া সাদু বেবির দাঁত ভাঙবে। তারপরই ওই সাদা বিলাইয়ের কথা শুনবে।
একা একা সময় যাচ্ছে না ছোঁয়ার। তাই সিদ্ধান্ত নিলো রান্না করবে। চিকেন বিরিয়ানি রান্না করবে। আগে কখনো রান্না করা হয় নি৷ তাতে কি হয়েছে ইউটিউব বেবি আছে তো?
ছোঁয়া ইউটিউব দেখে সব উপকরণ বের করে নেয়। তারপর ওড়না কোমরে বেঁধে রান্না শুরু করে দেয়। অর্ধেক রান্না হওয়ার আগেই কলিং বেল বেজে ওঠে। ছোঁয়া খুন্তি হাতে নিয়েই যায় দরজা খুলতে।
সাদি এসেছে। ছোঁয়া দরজার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়।
“বিশ্ব যুদ্ধ করেছো না কি? এরকম ঘেমে গেছো?
সাদি ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকি
ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়। উওর দেয় না। সাদিক উওরের অপেক্ষা না করে রুমে চলে যায়।
পাঁচ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে চলে আসে সাদি। ছোঁয়া তখন চাল সিদ্ধ করছিলো।
” রুমে গিয়ে রেস্ট নাও আমি বাকিটা করছি।
ছোঁয়ার হাত থেকে খুনতি নিয়ে বলে সাদি।
ছোঁয়া কিছু বলতে গিয়েও বলে না। এরপর কি করতে হবে এটা জানা নেই ছোঁয়ার।
“ছোঁয়া কখনো কারো থেকে সাহায্য নেয় না।
ভাব দেখিয়ে বলে ছোঁয়া।
” ড্রামা না করে সরো। আস্ত একটা ইডিয়েট।
কপাল কুচকে বিরক্তির একটা চাহনি দিয়ে বলে সাদি।
“সাদা বিলাই
ভেংচি কেটে চলে যায় ছোঁয়া। সাদি নিজের কাজে মন দেয়।
সিমি ছোঁয়ার জন্য এক বক্স আইসক্রিম নিয়ে এসেছে। ছোঁয়া আইসক্রিম ফ্রিজে রেখে এসেছে। খাবার খেয়ো আইসক্রিম নিয়ে বসবে।
সিফাত সিমিদের পেছন পেছনই বাড়িতে ঢুকেছে।
রাত দশটায় সবাই মিলে ডিনারে বসেছে। ছোঁয়া সবার জন্য খাবার সার্ভ করে নিজেও বসেছে। সিমি পরিকে খাইয়ে দিচ্ছে আর নিজে খাচ্ছে। সিফাত মাথা নিচু করে চুপচাপ খাচ্ছে। সাদি ফোন দেখছে আর খাচ্ছে।
এরই মধ্যে ছোঁয়ার ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে দজ্জাল শাশুড়ী নামটা জ্বল জ্বল করছে।
ছোঁয়া এক গাল হেসে ফোন রিসিভ করে। পাক্কা দুই দিন পর কল করলো শাশুড়ী। ভাবা যায়?
” শাশুড়ী ভালো আছেন? শরীর ঠিক আছে? খেয়েছেন? শশুড়কে খেতে দিয়েছেন?
জানেন শাশুড়ী কি হয়েছে?
আপনি বলেছিলেন না আপনার আদরের ছেলের সামনে হটহট গ্রীষ্মকাল সেজে থাকতে। তাই তো সাজতে গেছিলাম। কিন্তু আপনার ছেলে ঠাটিয়ে চর বসিয়ে দিলো।
শুনুন এই জীবনে আপনার আর নাতিনাতনির মুখ দেখা হবে না।
কেনো বলুন তো?
আপনার ছেলে আস্ত একটা গাঁধ। রোমাঞ্চের র ও বোঝে না।
ফিটার খাওয়াইয়েন আপনার পুএ কে। আমি এখন রাখছি।
খট করে কল কেটে দেয় ছোঁয়া। সবার দৃষ্টি ছোঁয়ার দিকে। মুখে খাবার পুরে ছোঁয়ার নজর যায় সাদির দিকে। দাঁত কটমট করে তাকিয়ে আছে ছোঁয়া দিকে। খাবার চিবতে ভুলে যায় ছোঁয়া। চোখ দুটো আপনাআপনি বড় হয়ে যায়।
হাই হাই কার সামনে কি বলে ফেললো?
এবার কি হবে? এই হনুমান তো ছোঁয়াকে আস্ত চিবিয়ে খাবে।
চলবে
#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ২৯ (বোনাস পর্ব)
#তানিশা সুলতানা
ভয়ে ভয়ে রুমে উঁকি মারে ছোঁয়া। না জানি এখন আবার হালুম করে ঘাড় না মটকায়।
“কিছুই বলবো না তোমায়। বলার মতো জাস্ট কিছু নেই আমার। কথায় আছে গাঁধা পিটিয়ে কখনোই ঘোড়া বানাবো যায় না।
সাদি একটা ইংলিশ বই হাতে নিয়ে পায়চারি করছিলো। ছোঁয়াকে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখে বলে।
ছোঁয়া নরেচরে মাথার চুল ঠিক করে শুকনো কাশি দিয়ে খাটে বসে পড়ে।
সাদি এখনো তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।
” তা হলে কি বলতাম আমি? আপনার মা তো আমাকে ঠেসে ধরেছে বেবি দেওয়ার জন্য। আরে বাবা আমি বেবি কোথায় পাবো?
সাদি ছোঁয়ার পাশে এসে বসে। ছোঁয়া সরু চোখে তাকায় সাদির দিকে। সাদি হেলার মতো তাকিয়েই আছে। খটকা লাগে ছোঁয়ার। আগে তো এভাবে তাকাতো না।
“আচ্ছা বলুন তো আপনার কি হয়েছে?
তখন থেকে খেয়াল করছি আপনি কেমন করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। কেনো? আগে তো তাকাতেন না। হঠাৎ কি হলো? আমি কি বেশি কিউট হয়ে গেছি।
কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে বলে ছোঁয়া। সাদি ছোঁয়ার থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়। বাম হাত দিয়ে মাথা চুলকায়।
সাদির থেকে উওর না পেয়ে ছোঁয়ার সন্দেহ বেরে যায়।
” বাই এনি চান্স আপনি কি আমার প্রেমে পড়ে গেছেন?
সাদি মুচকি হাসে। ছোঁয়া চোখ দুটো বড়বড় করে সাদির দিকে তাকিয়ে থাকে।
“ওহহ মাই আল্লাহ, আপনি হাসতেও পারেন? আমি তো পাগল হয়ে যাবো।
গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে হাত দুটো গালে দিয়ে বলে ছোঁয়া।
” উল্টো করে জামা পড়েছো। এন্ড ওড়নার বদলে প্লাজু নিয়েছো গলায়। আর মুখে খাবার লেগে আছে। চুলে মাকড়সা।
তো আমি তোমার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলাম তুমি তুমিই কি না?
পাগল পাগল হলে তো ঝামেলা।
আবারও ঠোঁট টিপে হাসে সাদি।
ছোঁয়া বিষ্ময়কর চোখে নিজের দিকে তাকায়। সাদির বিবরণ মিলে যাওয়াতে লজ্জায় নুয়ে যায় ছোঁয়া। মাথা তুলে তাকাতে পারছে না। একদম জমে গেছে।
সাদি ছোঁয়ার হাতের কবজি ধরে টেনে ছোঁয়াকে একদম নিজের কাছ ঘেসে বসায়। ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।
সাদি ছোঁয়ার চুল থেকে মাকড়সা ফেলে দেয়। এক হাত ছোঁয়ার কোমরে রাখে। শিওরে ওঠে ছোঁয়া। হাত পা কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে। সাদি কামিজের ফাঁকে হাত গলিয়ে দিয়ে দেয়।
ফাঁকা ঢোক গিলে জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় ছোঁয়া। সাদির হাত সরাতে চেষ্টা করতে থাকে।
সাদি ছোঁয়ার ঘাড়ে চুল সরিয়ে নাক ডুবিয়ে দেয়।
ছোঁয়া সাদির হাত থেকে হাত সরিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো খামচে ধরে।
বেশ কিছুখন ছোঁয়ার শরীরের ঘ্রাণ নেয় সাদি। তারপর আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে কানের কাছে ঠোঁট নেয়।
“আমাকে সামলানোর মতো বয়স বা বুদ্ধি কোনোটাই তোমার এখনো হয় নি।
ফিটার কালকে তোমার জন্য নিয়ে আসবো। ওটা তোমার প্রয়োজন।
বলেই ছোঁয়াকে ছেড়ে বেলকনিতে চলে যায়। ছোঁয়া যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয়। এখনো চোখ খুলে নি৷ এই মুহুর্তে এক বালতি পানি প্রয়োজন। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ছোঁয়ার।
জোরে জোরে দুটো শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছে না। কি হয়ে গেলো এটা? এই অনুভূতির সাথে ছোঁয়া পরিচিত নয়। এটা কেমন অনুভূতি?
ডান হাতটা নিজের ঘাড়ে নেয় ছোঁয়া।
” এটাকে রোমাঞ্চ বলে?
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে ছোঁয়া।
“রোমাঞ্চ এরকম হলে এই রোমাঞ্চের কোনো দরকার নেই।
আস্তে আস্তে চোখ খুলে ছোঁয়া। সাদি রুমে নেই। ছোঁয়া চট করে লাগেজ থেকে একটা ড্রেস নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর আসবে না সাদির সামনে। বজ্জাত লোক একটা। ছি ছি কি করলো এটা?
সিমি পরিকে পড়াচ্ছে। ছোঁয়া কোনো কথা না কোম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে।
পরি আজকে বায়না ধরেছে বাবার সাথে ঘুমবে। সিমি বাঁধা দেয় না। যেতে বলে। কিন্তু পরি একা যাবে না। দুজনের মাঝখানে ঘুমবে ও।
সিমি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। বড্ড জেদি মেয়েটা। এখন না করে দিলে কেঁদেকেটে একাকার করে দেবে।
” ও মা চলো না।বাবার রুমে ঘুমবো আমরা।
জানো মিথিও ওর বাবা মায়ের মাঝখানে ঘুমায়। একজনের ওপরে হাত তুলে দেয় আর আরেক জনের ওপরে পা তুলে দেয়।
আমি কালকে ওদের কাছে গিয়ে গল্প করবো আমিও বাবা মায়ের মাঝখানে ঘুমিয়েছিলাম।
সিমি আর না করতে পারে না। বাচ্চা মেয়ে। অন বাচ্চাদের থেকে শোনে। ওরও তো ইচ্ছে করে বাবা মাকে একসাথে পেতে। সারাজীবন তো এই ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারবে না। যে ক দিন পারে কেনো বঞ্চিত করবে?
সিমি হাজারো জড়তা নিয়ে সিফাতের রুমে প্রবেশ করে। সিফাত উপুর হয়ে শুয়ে আছে। বিরক্ত হয় সিমি। এই কদিন যে কয়বার শুতে দেখেছে ততবারই উপুড় হয়েই শুতে দেখেছে।
“পরি ওনাকে বলো এক পাশে শুতে।
কর্কশ গলায় জোরে বলে সিমি। হকচকিয়ে ওঠে সিফাত। এক লাফে উঠে বসে। খালি গায়ে ছিলো। এপাশে ওপাশে হাঁতরে কাঁথা দিয়ে গা ঢেকে ফেলে।
সিমি দাঁত কটমট করে।
” এখানে ওনাকে দেখতে কেউ আসে নি। ড্রামা বন্ধ করে সাইড দিতে বলো পরি।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সিমি। পরি হা করে তাকিয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না।
সিফাত এক পাশে বসে। সিমি ধুপধাপ পা ফেলে খাটে বসে। পরির ফ্রেক খুলে দিয়ে সেন্ডো গেঞ্জি পড়িয়ে শুয়িয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে পড়ে।
সিফাত হা করে তাকিয়ে আছে সিমির দিকে।
বাল্বের আলোতে চোখ বন্ধ রাখতে পারছে না সিমি। বিরক্ততে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
“পরি ওনাকে বাল্প বন্ধ করে দিতে বলো।
চোখ বন্ধ রেখে বলে সিমি। সিফাত তারাহুরো করে বাষ্প বন্ধ করে দেয়। খাটতে থেকে নামতে যায়।
” আমার মেয়ে আজকে বাবা মায়ের মাঝখানে থাকতে চায়।
শান্ত গলায় বলে সিমি।
সিফাতের চোখে পানি টলমল করছে। নিজেকে ধরে রাখতে পারে না সিফাত।
পরি আর সিমিকে এক সাথে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে সিফাত। হঠাৎ এমনটা হওয়াতে সিমি চমকে ওঠে। নিজের পেটের ওপর সিফাতের হাত অনুভব করতেই চোখ খুলে তাকায় সিফাতের দিকে।
তারপর
চলবে
#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৩০
#তানিশা সুলতানা
“আমার হারিয়ে যাওয়া পাঁচটা বছর যদি আপনি ফিরিয়ে দিতে পারেন। তাহলে আমি সবটা ঠিক করে দেবো
তাচ্ছিল্য হেসে বলে সিমি। সাথে সাথে সিফাত সিমিকে ছেড়ে দিয়ে নিজের বালিশে শয়।
” ভুল তো মানুষই করে।
সিফাত হতাশার শ্বাস ফেলে বলে।
“আপনি ভুল করেন নি। অন্যায় করেছেন। অন্যায় হ্মমা করা যায় না। অনন্ত আমি পারবো না।
সিমি চোখ বন্ধ রেখেই বলে। সিফাত পাল্টা কিছু বলার মতো খুঁজে যায় না। পরি ঘুমিয়ে গেছে। সিমিকে পরিকে বুকে নিয়ে ঘুমনোর চেষ্টা করে। আর কিছুখনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ে।
সিফাতের চোখে ঘুম নেই। গালে হাত দিয়ে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিমির (তানিশা সুলতানা) আর পরির মুখের দিকে। পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী ব্যক্তি সিফাত হতো যদি না ভুল না করতো।
বুক চিঁড়ে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসে সিফাতের। কম্বল টেনে দেয় ওদের গায়ে। তারপর সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
ইদানীং সিগারেট খেতে খুব ভালো লাগে। মাঝেমধ্যে মদ খেতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু কি করে খাবে? সাদি মেরেই ফেলবে সিফাতকে।
অনেকখন ছোঁয়া রুমে আসছে না বলে সাদি ভেবে নেয় ছোঁয়া আজকে সিমির সাথেই ঘুমবে। তাই দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।
ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভাঙে ছোঁয়ার। কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করছে না। মন বলছে উঠে নামাজটা আদায় করে নিতে কিন্তু শরীর সায় দিচ্ছে না। শুয়ে থাকতেই ভালো লাগছে।
” এই মেয়ে উঠো
সাদি কন্ঠ শুনে লাফ দিয়ে উঠে বসে ছোঁয়া। ঘুমের রেশ এখনো কাটে নি। সাদি রুমের লাইট অন করে দিয়েছে। ছোঁয়া লম্বা হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙে।
চোখ পিটপিট করে তাকায় সাদির দিকে। সাদি কাবাড থেকে জায়নামাজ বের করছে।
“নামাজ পড়ে। পড়তে বসো।
বলেই বেরিয়ে যায় সাদি। ছোঁয়া সাদির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। আপি ঠিকি বলেছে মানুষটা খুব ভালো।
ছোঁয়া আবারও হাই তুলতে তুলতে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বই পড়তে থাকে।
একটু পরেই সাদি একটা সিদ্ধ ডিম আর এক কাপ রং চা নিয়ে ছোঁয়ার রুমে আসে। ছোঁয়ার সামনে ট্রে টা রাখে।
” খেয়ে নাও
ছোঁয়া সাদির দিকে তাকায়৷ সাদি ছোঁয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে।
“একা একা স্কুলে যাওয়ার দরকার নেই। আমি দিয়ে আসবো।
কেমন?
ভ্রু কুচকে বলে সাদি।
” আচ্ছা
ছোঁয়া বইয়ের দিকে তাকিয়ে রিনরিনিয়ে বলে।
“ওকে পড়তে থাকে।
বলেই সাদি চলে যায়। ছোঁয়া পড়ায় মন দেয়।
সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেছে পরির। চোখ বন্ধ করেই উঠে বসে। একপাশে মা শুয়ে আছে আরেক পাশে বাবা। দুজনই গভীর ঘুমে। (তানিশা সুলতানা) পরির দুজনের মুখের দিকে তাকায়। বাবার কপালে চুমু দেয় তারপর মায়ের কপালে।
তারপর খাট থেকে নেমে গুটিগুটি পায়ে দরজা খুলে কিচেনে চলে যায়। পরি জানে সেখানে সাদি আছে।
” পাপা দাঁত ব্রাশ করবো।
পরি হাই তুলে ঢুলে ঢুলে সাদির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে। সাদি তখন আটা মাখছিলো।
“জাস্ট দুই মিনিট মামনি। একটু দাঁড়াও।
পরির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে সাদি।
পরি আচ্ছা বলে ফ্লোরে বসে পড়ে।
” এতসকালে ঘুম ভেঙে গেলো যে?
সাদি জিজ্ঞেস করে।
“খুব খিদে পেয়েছে আমার।
ঘুমঘুম কন্ঠেই বলে পরি।
সাদি বুঝতে পারে খিধের জন্যই ঘুম ভেঙে গেছে। তাই আটা মাখা বাদ রেখে হাত ধুয়ে পরিকে কোলে করে ছোঁয়া যে রুমে আছে সেখানে নিয়ে আসে।
সাদিকে রুমে ঢুকতে দেখে ছোঁয়া সাদির দিকে তাকায়। পরিকে দেখে এক লাফে উঠে বসে।
” এতে সকালে জেগে গেছে যে?
খাট থেকে নেমে সাদির সামনে এসে বলে ছোঁয়া।
“খিধে পেয়েছে ওর।
তুমি দুধ গরম করে আনো। আমি ব্রাশ করিয়ে দিচ্ছি।
বলে সাদি। ছোঁয়া মাথা নারিয়ে কিচেনে চলে যায়। আর সাদি ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
পরিকে খাইয়ে দিচ্ছে ছোঁয়া। আর সাদি রান্না করছে।
” যখন আমার বেবি হবে তখনও কি উনি এমন করেই পুচকুর খেয়াল রাখবে?
ইসসস কবে যে আসবে আমার পুচকু।
লজ্জা পেয়ে যায় ছোঁয়া। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে।
ব্রেকফাস্ট করে স্কুলড্রেস পড়ছে ছোঁয়া। এবার চুল বাঁধছে। তখনই সাদি সিমিকে নিয়ে রুমে ঢোকে।
“হিজাব বেঁধে দাও ওকে।
কাবাড থেকে একটা প্যাকেট বের করে সিমির হাতে দিয়ে বলে সাদি। ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে তাকায় সাদির দিকে।
” হিজাব কেনে বাঁধবো?
ছোঁয়া কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করে।
“আমি বলেছি তাই।
সাদি চলে যায়। সিমি মুচকি হেসে ছোঁয়াকে হিজাব বেঁধে দিতে থাকে। ছোঁয়া মুখ বাঁকিয়ে আছে। হিজাব কেনো বাঁধতে বলবে?
পুরো রেডি হয়ে কাঁধে স্কুল ব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে যায় ছোঁয়া। সাদি আগেই বেরিয়েছে। গেটের কাছে আসতেই ছোঁয়া দেখে সাদি ড্রাইভিং সিটে বসে আছে আর সাদির পাশের সিটে মেঘা বসেছে। মেজাজ খারাপ হয়ে যায় ছোঁয়ার।
ধুপধাপ পা ফেলে পেছনের ছিটে গিয়ে বসে পড়ে
সাদির দিকে একবার তাকায় না পর্যন্ত। গাল ফুলিয়ে জানালার কাঁচের দিকে তাকিয়ে আছে।
সাদি ড্রাইভিং করছে আর মেঘার সাথে কথা বলছে। কই ছোঁয়ার সাথে তো কখনো এতে কথা বলে না? এই মেয়েকে দেখলেই কথা গুলো দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসে না কি? যতসব করলার জুস একটা।
তিন রাস্তার মোরে গাড়ি থামায় সাদি। সেখানে আগে থেকেই প্রভা দাঁড়িয়ে ছিলো। গাড়ি থামাতেই হুরমুর করে ছোঁয়ার পাশে বসে পড়ে প্রভা। প্রভাকে দেখে ছোঁয়া কিছু বলে না। মুখ বাঁকিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রভাকেও সয্য হচ্ছে না।
প্রভা ছোঁয়ার দিকে চেপে বসে।
” এই ছোঁয় তোর ভাই সব সময় বউ নিয়ে ঘুরে না কি রে? আমার কিন্তু ভালো লাগে না। মনের মধ্যে জ্বালাপোড়া করে।
ছোঁয়ার কানে ফিসফিস করে বলপ প্রভা। ছোঁয়া নাক ফুলিয়ে তাকায় প্রভার দিকে। ছোঁয়ার দৃষ্টি দেখে খানিকটা সরে বসে প্রভা। ছোঁয়া যে রেগে আছে বুঝতে পারে।
“প্রভা ইমন কি কিউট না রে?
আমি কিন্তু ক্রাশ খাইছি। ইসস কাল যখন আমায় প্রপোজ করছিলো না আমার তো হ্যাঁ বলে দিতে ইচ্ছে করছিলো।
ছোঁয়া কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে জোরে জোরে বলে। প্রভা কপাল কুচকে ছোঁয়ার কথা বোঝার চেষ্টা করছে। মেঘা ভ্রু কুচকে ঘাড় বাঁকিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকায়।
সাদি শান্ত ভাবে ড্রাইভ করতে থাকে।
” তো এটা মাইক লাগিয়ে বলার কি হলো?
মেঘা বলে। ছোঁয়া দাঁত কটমট করে মেঘার দিকে তাকায়।
“ইমন কে?
আর কাল তো তোকে কেউ প্রপোজ করে নি।
প্রভা কপাল কুচকে বলে ওঠে। ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে তাকায় প্রভার দিকে। মেঘা ফিক করে হেসে ওঠে। সাদি এবার ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
লজ্জায় ছোঁয়ার মাথা কাটা যাচ্ছে
ইচ্ছে করছে প্রভার মাথা ফাটাতে। ফাজিল মেয়ে।
চলবে