অন্যরকম তুমি পর্ব-১৬+১৭+১৮

0
1746

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ১৬
#তানিশা সুলতানা

অফিসে মনোযোগ দিয়ে ফাইল দেখছে সাদি। নতুন চাকরি পেয়েছে। প্রথমেই এতে বড় পোষ্টে চাকরি পেয়ে যাবে ভাবে নি।
কাজের পেশারটা একটু বেশিই নিচ্ছে সাদি। যাতে বস বলতে না পারে “এই ছেলেকে দায়িত্ব দিয়ে ভুল করেছি”

বরাবরই সাদি খুব গম্ভীর প্রকৃতির। অতিরিক্ত কথা বলার চেয়ে প্রয়োজন ব্যাতীত কথা না বলাই শ্রেয়। কথা বললে শুধু শুধুই কথা অপচয় হয়। এতে কোনো লাভ হয় না।
এখানে জব পাওয়ার পর বস ছাড়া অন্য কারো সাথে কথা বলা হয় নি।
সাদির কেবিনটা একদম বিল্ডিংয়ের শেষ প্রান্তে।খুব নিরিবিলি রুম। ভালোই লাগে সাদির।

“মে আই কাম ইন স্যার?

দরজায় কড়া নেরে বলে। সাদি ফাইল থেকে চোখ তুলে দরজার দিকে তাকায়। কারণ সাদির কেবিনে কারো আশার কথা না।

দরজায় নেহাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় সাদি। নেহা এক গাল হেসে ভেতরে চলে আসে। সাদির সামনের চেয়ারটা টেনে বসে।

” তুই এখানে??
সাদি আবারও ফাইলে মুখ গুঁজে বলে।

“তোর বউ দেখতে যাবো। বসের থেকে ছুটি নিয়ে নিয়েছি।

সাদির হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে বন্ধ করে রেখে বলে নেহা।

” ফাজলামো করিস না। মাথা গরম আছে?

দুই হাতে মাথা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে বলে সাদি

“বউয়ের মুখটা দেখলেই মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে। ট্রাস্ট মি

” ননসেন্স

“নিয়ে যাবি না।

” তুই তো চিনিস আমার ফ্লাইট চলে যা।

সাদি আবারও ফাইলটা নিয়ে তাতে মুখ গুঁজে বলে।

“একা গেলে তো তোর বউ আমায় চিনতেই পারবে না।
মুখ গোমড়া করে বলে নেহা।

” এই জানিস আমি বসের থেকে তোর জন্য ছুটি চেয়েছি।

খুশিতে গদগদ হয়ে বলে নেহা।

“আমি কি বলেছিলাম তোকে?

সধি গম্ভীর গলায়।

” তা বলিস নি। তুই তো নিরামিষ বলবি কি করে?
সাত দিনের ছুটি চেয়েছি। এই ফাঁকে হানিমুনটা সেরে ফেলবি বুঝলি?

সাদি কিছু বলে না। শুধু একবার নেহার দিকে তাকায়।

🥀🥀🥀
কলিং বেল বাজতেই ছোঁয়া দরজা খুলে দেয়। ছোঁয়ার কোলে পরি। সিমি পরির গালে হাত রাখে। সিফাত সিমির পেছনে দাঁড়ানো।

“আপি ভেতরে এসো।

ছোঁয়া দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। সিমি গিয়ে সোফায় বসে। পরি গিয়ে সিমির গা ঘেসে বসে। সিফাত এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকে। দেখতে চাই পরিকে সিমি আদর করে কি না?

” আপি তুমি ঠিক আছো?

ছোঁয়া সিমির কপালে হাত দিয়ে বলে।

“একদম ঠিক আছি।

‘বিয়ে করবে না তুমি। একদম সাফ সাফ বলে দিতে। তো এখন কি এমন হলো যে বিয়ে করতে চাইছো?

” একটা বেবির খুব শখ হয়েছে বুঝলি? পরিকে দেখে ইচ্ছেটা মনের মধ্যে জেগে উঠলো। তাই ডিসিশন চেঞ্জ করে ফেললাম।

পরিকে কোলে তুলে নিয়ে বলে ছোঁয়া।

“ওহহহ
তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। এক সাথে ব্রেকফাস্ট করবো।

সিমি পরিকে কোলে করে চলে যায়। ছোঁয়াও চলে যায়। সিফাত মলিন হাসে।

সাদি করলা ভাজি আর রুটি বানিয়ে রেখে গিয়েছিলো। তাই দিয়েই ব্রেকফাস্টটা সেরে ফেলে ওরা।
তারপর সিমি পরিকে নিয়ে রুমে চলে যায়। ছোঁয়াও সাদির রুমে চলে আছে।

রুমটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে ছোঁয়া। সকাল সকাল গোছল সেরে কমলা রংয়ের শাড়ি পড়েছে। শাশুড়ী মেসেজ দিয়ে এটা পড়তে বলেছে।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে থাকে ছোঁয়া।হঠাৎ চোখ যায় ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারের ভেতরে একটা ওড়নার কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে।

ছোঁয়া ড্রয়ার খুলে ওড়নাটা হাতে নেয়। সাদা ওড়না। ওড়না থেকে মিষ্টি একটা গন্ধ ভেসে আসছে। নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নেয় ছোঁয়া। বেলি ফুলের ঘ্রাণ আসছে।

ওড়নাটা মেলে ধরে ছোঁয়া। ভেতর থেকে পড়ে কয়েকটা বেলি ফুলের মালা। সব গুলোই শুকিয়ে গেছে। শুধু একটা তরতাজা। হয়ত আজকেই অনা হয়েছে।

ছোঁয়া ফ্লোরে পরে থাকা বেলি ফুলের মালা গুলো তুলে নেয়। হাতে পেচিয়ে নেয়।

ওড়নাটা আগের জায়গায় রাখতে যায়।

” মালা গুলো হাত থেকে খুলে ফেলো।

সাদি চোয়াল শক্ত করে বলে। ছোঁয়া চমকে দরজার দিকে তাকায়। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে সাদি।

“আপনি এসেছেন?

ছোঁয়া এক গাল হেসে বলে।

” বললাম না ফুল গুলো খুলে ফেলো।

সাদি চিৎকার করে বলে। ছোঁয়া কেঁপে ওঠে। দু পা পিছিয়ে যায়। চোখের কোনে পানি জমে গেছে।

সাদি হুরমুর করে এগিয়ে আসে ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়াও সাদির সাথে তাল মিলিয়ে পিছিয়ে যায়। পেছতে পেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় ছোঁয়ার। সাদি দুই হাত দেয়ালে রেখে ছোঁয়ার দিকে ঝুঁকে। ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে মাথা নিচু করে ফেলে। হাত পা কাঁপছে।

রাগে সাদি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।

“এই মেয়ে মালা গুলো খুলো।

ফিসফিস করে বলে সাদি। সাদির নিশ্বাস ছোঁয়ার চোখে মুখে আঁচড়ে পড়ছে। হাতটা এগিয়ে দেবে খুলে দেওয়ার জন্য সেটাও পারছে না।

” সাহস হয় কি করে আমার জিনিসে হাত দেওয়ার।

ছোঁয়ার দুই বাহু শক্ত করে ধরে বলে সাদি।
ঠোঁট কাঁপছে ছোঁয়ার। দুই চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি ঝড়ছে।

“সরি সরি সরি ভুল টাইমে এন্ট্রি নিলাম।

নেহা চোখ মুখ ঢেকে বলে। সাদি ছিটকে দুরে সরে যায়। ছোঁয়া দেওয়ালের দিকে ঘুড়ে দাঁড়ায়। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।

তুই এখানে?

সাদি হাত দিয়ে চুল গুলো ঠিক করে বলে।

” তোর বউ দেখতে আসলাম। কিন্তু এসে যা দেখলাম। এই তুই না নিরামিষ। নিজেকে পিওর নিরামিষ বলে দাবি করিস। তাহলে এটা কি?
না কি বউ দেখে মাথা ঘুরে যায়?

চোখ টিপ দিয়ে বলে নেহা

“তুই যেমনটা ভাবছিস তেমন টা না।

সাদি হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলে।

” ইসস কবে যে শুনবো
তুই যেমনটা ভাবছিস তেমনটাই।

ছোঁয়া আচল দিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়। নেহা ছোঁয়ার কাছে আসে।

“দেখি মেয়ে এদিকে ঘুরো। দেখি তোমায়।
ছোঁয়াকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে নেহা। ছোঁয়া মাথা নিচু করে আছে। লজ্জায় মরি মরি অবস্থা।

” মাশাল্লাহ
তাই তো বলি আমাদের পিওর নিরামিষ কি করে আমিষ হলো।

ছোঁয়ার থুতনি ধরে মাথা উঁচু করে বলে নেহা।
ছোঁয়া এক দৌড়ে বেলকনিতে চলে যায়। ওই খানে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না। ওই মেয়েটার লাগামহীন কথাবার্তা ছোঁয়ার হৃৎস্পন্দন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ছোঁয়া যেতেই নেহা খিলখিল করে হেসে ফেলে। সাদি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।

চলবে

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ১৭
#তানিশা সুলতানা

বেলকনিতে গাল ফুলিয়ে বসে আছে ছোঁয়া। দুই চোখ থেকে অনবরত পানি গড়াচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে এখন হেঁচকি উঠে গেছে। একটু পরপরই ফুঁপিয়ে উঠছে।
ছোঁয়ার কান্নার শব্দ একদম সাদির কানে গিয়ে লাগছে। নিস্তব্ধ পরিবেশে এরকম ফুঁপিয়ে কাঁদার আওয়াজ কানে লাগার কথা। একটু বেশিই অভিমানি ছোঁয়া। কখনো বাবা মা বোন বকে নি ওকে।

সাদি দুই এক বার ডেকেছে কিন্তু কথা বলে নি। আর বলবেও না কথা। জীবনেও কথা বলবে না ওই সাদা বিলাইয়ের সাথে।
সাহস কত বড় ছোঁয়াকে ধমক দেয়?
সাদিও আর ডাকে না। সব কিছু ই বিরক্ত লাগছে। পাশাপাশি ভীষণ রাগও হচ্ছে। কি একটা ঝামেলায় ফেসে গেছে। এখন কি করা উচিত সেটাও বুঝতে পারছে না। সরি বলার অব্ভাস নেই ওর। আর ওর দৃষ্টিতে ও কোনো ভুল করে নি। প্রত্যেকটা মানুষেরই একটা পারসোনাল লাইফ থাকে। পারসোনাল জিনিস থাকতে পারে।
বউ বলে সেটা তার সাথে শেয়ার করতে হবে? কেনো? সাদি সেটা পারবে না। কিছু জিনিস বউ কেনো মায়ের সাথেও শেয়ার করতে পারবে না সাদি।
তার মধ্যে এই ওড়নাটা আর বেলি ফুল একটা। ভীষণ পছন্দের এই জিনিস দুটো সাদির। এক প্রকার অভ্যাস এটা সাদির।
আর এই অভ্যাসটা সাদি কারো সাথে শেয়ার করতে পারবে না। কখনোই না। সেই দিক থেকে দোষটা ছোঁয়ার। তাই সরি বলার প্রশ্নই ওঠে না।

রাগে ফুসফুস করছে ছোঁয়া। সাদি বিছানায় গোল হয়ে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। নেহা চলে গেছে।।ফোলা ফোলা লাল চোখ দুটো বড়বড় করে বিরবির করে সাদির গুষ্টি উদ্ধার করছে ছোঁয়া।
ইচ্ছে করছে এখনি এখানে থেকে চলে যেতে। কিন্তু এখন চলে গেলে আপির শপিং করা হবে না। এমনিতেই তো কাল চলে যাবে। একটা রাত কোনো রকমে পার করে দিতে পারবে।

“ছোঁয়া কই তুই?

সিমি ছোঁয়াকে ডাকতে ডাকতে রুমে ঢুকে। বিছানায় সাদিকে দেখে এক প্রকার লাফিয়ে ওঠে সিমি। সাদিও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই মুহুর্তে একদম আশা করে নি সিমিকে। দুই ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁকা হয়ে যায় সিমি। চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।

” সসস্যার আপনি?

সিমি চোখ দুটো বড়বড় করে বলে।
সিমির গলা পেয়ে ছোঁয়াও বেলকনি থেকে রুমে চলে আসে।
সাদি ল্যাপটপ বন্ধ করে সিমিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে। আসলে ঠিক দেখছে কিনা এটাই দেখা।

“আপনি এখানে?

সাদি ভ্রু কুচকে বুকে হাত গুঁজে সিমিকে পাল্টা প্রশ্ন করে।

” আসলে এটা আমার ছোট বোনের স্বামীর ফ্লাইট। ওর কাছেই এসেছি।

রিনরিনিয়ে বলে সিমি।

“আমিই সে।

সাদি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে। আপনাআপনি সিমির ভ্রু যুগল কুঁচকে যায়। বলছেটা কি উনি? এটা ছোঁয়ার স্বামী? এর সাথে বিয়ে হয়েছে ছোঁয়ার? ভাবা যায়?

ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে সাদির কাছে টিউশনি করতো সিমি। খুব ভালো আইসিটি পড়াতো। সেখান থেকে চিনে সাদিকে।
কিন্তু এই সাদিই যে ছোঁয়ার বর এটা আজকেই জানলো সিমি।
একপলক ছোঁয়ার দিকে তাকায় সিমি।

” পড়ালেখা কেমন চলছে? কোন ইয়ারে এখন?

সাদি জিজ্ঞেস করে।

“আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি এখন।

” কিন্তু আপনার তো এখন অনার্স শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। পিছিয়ে গেলেন কি করে?

সাদির প্রশ্ন শুনে সিমি মাথা নিচু করে ফেলে। পুরোনো হ্মত আবারও জেগে ওঠে। চোখ দুটো চিকচিক করছে।

“আপি কিছু বলবে?

ছোঁয়া সিমির হাত ধরে বলে।

” হ্যাঁ একটু শপিং মলে যেতে চাইছিলাম।
স্যার ছোঁয়াকে নিয়ে যাবো?

সিমি বলে।

“ওনাকে জিজ্ঞেস করার কি আছে? আমি যাবো। ঐনি বলার কে?

ছোঁয়া কঠিন গলায় বলে। সাদি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বিজি হয়ে যায়।

” আপি তুমি যাও। আমি পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।
মুচকি হেসে চলে যায় সিমি। ছোঁয়া জিন্স আর লেডিস শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। বাসা থেকে লুকিয়ে নিয়ে এসেছিলো। এখন থেকে এগুলোই পড়বে।

ছোঁয়া ড্রেস চেঞ্জ করে বের হতেই সাদি এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে। সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেয়। ছোঁয়া ভেংচি কেটে হিজাব বাঁধতে থাকে।

সিমি পরিকে সাদা একটা ফ্রক পরিয়ে দেয়। এখন নিজে রেডি হবে। তখনই ফোন বেজে ওঠে সিমির। স্কিনে হিমু নামটা জ্বলজ্বল করছে। সিফাতও তখন রুমে ঢুকে পরিকে একটু দেখতে। সকাল থেকে মেয়েটাকে কাছে পাচ্ছে না। একদম সিমির সাথে সেটে আছে।

সিমি মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করে।

“রেডি হচ্ছি। এখনই বের হবো।

” কি কালার ড্রেস পড়ছো?

“নীল

বলেই কল কেটে দেয় সিমি।

” মিথ্যে কেনো বললে? তোমার হাতে তো ব্লাক ড্রেস।

সিফাত দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে প্রশ্নটা করে। চমকে ওঠে সিমি।

“মিথ্যে বলতে শিখে গেছি তাই।
মুচকি হেসে বলে সিমি।
সিফাত চোখ বন্ধ করে নেয়।

” বাবা আমি তোমার সাথে যাবো না। খালা মনির কাছে থাকবো।
পরিকে সিমির পা জড়িয়ে ধরে অধো অধো গলায় বলে।

“কেনো মা বাবাকে ভালো লাগছে না?

সিফাত চোখ বন্ধ রেখেই মুচকি হেসে বলে।

” লাগছে তো। আমি তোমাদের সাথে এক সাথে থাকতে চাই।

কাঁদো কাঁদো গলায় বলে পরি। তিন বছরের মেয়ের এই রকম পাকা কথা শুনে সিফাত শব্দ করে হেসে ফেলে।
চোখ খুলে ওদের দিকে এগিয়ে আসে।

সিমি নিচু হয়ে বসে৷ পরির দুই গালে হাত রাখে।

“তোমার বাবাকে মাকে এনে দিতে। যদি খুন টুন না করে থাকে।

বাঁকা চোখে সিফাতের দিকে তাকিয়ে বলে সিমি।
তারপর সিমির চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায় সিমি।
সিফাত পরিকে কোলে তুলে নেয়। কপালে চুমু খায়।

🥀🥀🥀
” শোনো মেয়ে

ছোঁয়া রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে সাদি বলে ওঠে। দাঁড়িয়ে যায় ছোঁয়া। সাদি আলমারি থেকে কিছু টাকা বের করে এনে ছোঁয়ার সামনে দাঁড়ায় সাদি। ছোঁয়া ভ্রু কুচকে সাদির মুখের দিকে তাকায়।

“টাকাটা রাখো। কেনাকাটা করবে। টাকা তো নেই নিশ্চয়।

ছোঁয়া সাদির হাত থেকে টাকা নিয়ে সাদির মুখে ছুঁড়ে মারে। সাদি দাঁতে দাঁত চেপে।

“টাকা না থাকলে কিনবো না। তবুও আপনার থেকে টাকা নেবো না। সাহস হয় কি করে আমাকে টাকা দেওয়ার।

আঙুল তুলে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে ছোঁয়া। রাগে সাদির চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।

” সাহস হয় কি করে আমার মুখের ওপর কথা বলার? থাপ্পড়ে গাল লাল করে দেবো।

হাত তুলে চিৎকার করপ বলে সাদি। ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। ভয়ে বুক ধুপ বুক করছে। হার্ট দ্রুত লাফাচ্ছে।

“টাকা না নিলে এই খান থেকে এক পা এগোতে দেবো না আমি।

টাকা গুলো কুড়িয়ে নিতে নিতে বলে সাদি।

” আআআমি টাকা নেবো না।

ছোঁয়া রিনরিনিয়ে বলে।

“তাহলে যাওয়া হচ্ছে না। আমাকে জেদ দেখানো? মেরে বালি চাপা দিয়ে দেবো ইডিয়েট। একটা উটকো ঝামেলা এসে জুটেছে আমার কপালে। জাস্ট নিতে পারছি না আমি।

ছোঁয়া চোখ খুলে সাদির দিকে তাকায়৷ ওকে উটকো ঝামেলা বলছে?
ভীষণ কান্না পাচ্ছে ছোঁয়ার।

“কালকেই চলে যাচ্ছি আমি। ডিভোর্স পেপারও পাঠিয়ে

বাকি কথা শেষ হওয়ার আগেই সাদি এক অদ্ভুত কান্ড করে বসে।

চলবে

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ১৮
#তানিশা সুলতানা

আরও একটা চর পরলো ছোঁয়ার গালে। গালে হাত দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়া সাদির দিকে। যেনো এখনই সাদিকে গিলে খাবে। সাদির সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

ছোঁয়ার থেকে ব্যাগ নিয়ে তাতে টাকা ভরে চেন আটকে আবারো ছোঁয়ার হাতে দিয়ে দেয় ব্যাগ। ছোঁয়া রাগে থরথর করে কাঁপছে। গালটা আবারও লাল হয়ে উঠেছে। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।

“এবার যাও।

ফোঁস করে শ্বাস নিয়ে বলে সাদি।

” বজ্জাত লোক। আমার সাথে অধিকার খাটাতে আসবেন না একদম। জাস্ট অসয্য লাগে আপনাকে। জোর করে আপনার ঘাড়ে চাপি নি আমি।

চিৎকার করে বলে ছোঁয়া।

ছোঁয়া সাদির গায়ে ব্যাগটা ছুড়ে মারে। ড্রেসিং টেবিলের সব জিনিসপত্র ফেলে দেয়। বিছানা চাদর বালিশের কাবার সব খুলে ফেলে দেয়। টেবিল থেকে সাদির বই প্রয়োজনীয় সব জিনিস ফেলে দেয়। তবুও যেনো রাগ কমছে না। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর কাঁপছে।
সাদি বুকে হাত গুঁজে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে দেখছে ছোঁয়াকে।

” শেষ?

ক্লান্ত হয়ে ছোঁয়া বসে পড়াতে সাদি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়।
আগুনে ঘি ঢালার মতো অবস্থা। ছোঁয়া ফোঁস ফোঁস করে শ্বাস টেনে সাদির দিকে তাকায়।
তারপর দুই হাতে মাথা চেপে ধরে ফ্লোর হাঁটু মুরে বসে পড়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
এই লোকটা এমন কেনো? এতো অদ্ভুত কেনো লোকটা?
কেনো এমন করে? থাকবে না ছোঁয়া। কিছুতেই থাকবে না।

“কান্নাকাটি শেষ হলে রুমটা আবার আগের মতো করে দেবে।

সাদি গালে হাত বুলিয়ে বলে।

” ফাজিল ছেলে। তুই একদম কথা বলবি না আমার সাথে।
দুই হাত চুল খামচে ধরে হেঁচকি তুলতে তুলতে বলে ছোঁয়া। সাদি চোখ বড়বড় করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।
তখনই দরজায় নক করে সিমি। যদিও দরজাটা বন্ধ না। তবুও নক করে।

” তুমি ভাইয়াকে সাথে নিয়ে শপিং এ যাও। তোমার বোন যাবে না।

সাদি না তাকিয়েই বলে দেয়।
সিমি কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায় সাদির ঠিক সাইডে।

“না মানে ও তো বলেছিলো যাবে?

ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে সিমি। ছোঁয়া যে কাঁদছে এটা বুঝেছে। এদের মধ্যে যে ঝামেলা হয়েছে এটাও বুঝেছে সিমি। তবুও এসব নিয়ে কিছু বলতে চায় না। ওরা স্বামী স্ত্রী। এটা ওদের পারসোনাল মেটার।

‘তখন বলেছিলো। এখন আমি বলছি।

সাদি বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে বলে।

” আপি আমি এখানে থাকবো না৷ প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও না।

ছোঁয়া করুন দৃষ্টিতে সিমির দিকে তাকিয়ে বলে।
বুকটা ধক করে ওঠে সিমির। গালটা লাল হয়ে আছে ছোঁয়ার। চোখ দুটো টলমল করে ওঠে সিমি।

“তুমি যাও সিমি।
তুমি নিশ্চয় বুঝো আমাদের বেপারটা একদমই পারসোনাল।

সিমি ধীর পায়ে বেরিয়ে যায়। সিমি চলে যেতেই ছোঁয়া হাতের কাছে থালা শেম্পুর বোতলটা সাদির দিকে ছুঁড়ে মেরে বেলকনিতে চলে যায়৷ এই লোকটার মুখটাও দেখতে ইচ্ছে করে না। বজ্জাত লোক।

সাদি পুরো রুমে চোখ বুলায়। যা ইচ্ছে কান্ড করেছে রুম টার। এরকম অগোছালো একদম পছন্দ না সাদির।
” কপালে জুটিয়ে দিয়েছে একটা ইডিয়েট। কি করে ট্রলারেট করবো একে?
পাগল হয়ে যাবো আমি।
বিরবির করে বলে সাদি।

খাটের তলা গেলে ফোনটা কুড়িয়ে নিয়ে বেরিয়ে যায় সাদি।

সিমি পরিকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। কোলে নিয়ে বুকের মধ্যে চেপে রেখেছে পরিকে। আর মনটা ছোঁয়ার জন্য হু হু করছে। নিশ্চিতে সাদির স্যার একজন ভালো মানুষ। কখনো কোনো খুত পায় নি এই লোকটার। কিন্তু তাহলে কেনো ছোঁয়া সুখি না?

” তোমার কষ্ট হবে। আমি হেঁটেই যেতে পারবো।

অস্ফুটস্বরে বলে পরি।
মৃদু হাসে সিমি। পরির মাথায় চুমু খায়।

“তোমাকে বুকের মধ্যে আগলে রাখতে আমার কষ্ট হয় না সোনা। শান্তি লাগে।

সিফাত ওদের পেছনেই ছিলো। একদম ওদের একা ছাড়তে চায় না ও।

” পরিকে আমি নিচ্ছি।

সিমি কিছু বলে না। হাতটা আলগা করে দেয়। সিফাত পরিকে কোলে তুলে নেয়।

রিক্সা নেয় ওরা। শপিং মলের সামনেই হিমু দাঁড়িয়ে ছিলো। হিমুকে দেখে সিফাতের মেজাজ গরম হয়ে যায়। আর সিমির মুখে হাসি ফুটে।
রিক্সা থেকে নামতেই সিমি এক দৌড়ে হিমুর কাছে চলে যায়। আর সিফাত ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে। পরি সিফাতের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে।

“মামা ভাড়াটা দিন।

রিক্সা ওয়ালার কথায় চমকে ওঠে সিফাত। পকেট থেকো পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে দেয় রিক্সাওয়ালাকে।

🥀🥀
কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটো ফুলে গেছে ছোঁয়ার। মাথা ব্যাথা করছে। চোখ দুটো জ্বলছে। অসয্য লাগছে। ফ্লোরেই গা এলিয়ে দেয়। বসে থাকাটাও দুষ্কর হয়ে গেছে।

সাদি ঘন্টা খানিক পরেই বাড়ি চলে আসে। রান্না করতে হবে। বাইরের খাবার খেতে পারে না সাদি।
রুমে এসে বিরক্ত হয়। এখনো একি রকমই আছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে সাদি। এখন যে ওকেই এগুলো ঠিক করতে হবে এটা ভালোই বুঝতে পারছে।
ভীষণ গরম পড়েছে। বাইরে থেকে আসাতে পড়নের শার্টটা ঘামে ভিজে গেছে৷ শার্টটা খুলে রুম গোছাতে শুরু করে সাদি।
এই ছিলো কপালে?
রুম গোছানো শেষ হলে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় দুই ডন্ড বসে জিরিয়ে নেয়। তারপর মনে পড়ে ইডিয়েট টা কোথায় গেছে?
কপালে ভাজ পড়ে সাদির। গেলো কোথায়?

বেলকনিতে যায় সাদি। ছোঁয়াকে ফ্লোরে শুয়ে থাকতে দেখে চমকে ওঠে। ডান পাশের গালটা অসম্ভব লাল হয়ে আছে। এই নিয়ে দুই দিন মেয়েটার গায়ে হাত তুললো সাদি।
মনের মধ্যে খারাপ লাগা কাজ করে সাদির।

” এই মেয়ে উঠো?

সাদি ছোঁয়ার পাশে বসে ডাকে। কিন্তু ছোঁয়ার কোনো সারা শব্দ নেই।
এবার ছোঁয়ার হাত দরে সাদি। আর চমকে ওঠে। গা টা অসম্ভব গরম।
কোলে তুলে নেয় সাদি। রুমে নিয়ে খাটে শুয়িয়ে দেয়।

“ইডিয়েট একটা
বিরবির করে বলে সাদি।
তারপর ড্রয়ার খুলে ঔষধ নেয়। ছোঁয়াকে আধশোয়া করে ঔষধ খাইয়ে দেয়। আলমারি থেকে কম্বল বের করে ছোঁয়ার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। এই মুহুর্তে লম্বা একটা শাওয়ার নেওয়া দরকার।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে