#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৪
#তানিশা সুলতানা
সাদি আর শেম্পুর বোতলটা এগিয়ে দেয় না৷ রুম থেকে কোনো সাড়াশব্দও শোনা যাচ্ছে না। ভীষণ বিরক্ত লাগে ছোঁয়ার। একটা শিশু বিপদে পড়েছে তাকে হেল্প করা কি একটা বুইড়া খাটাস পোলার কাজ না?
“সাদু শুনতে পাচ্ছেন?
তবুও কোনো সারা নেই।
বাধ্য হয়ে ছোঁয়া শেম্পু ছাড়াই গোছলটা সেরে নেয়।
শাড়ি পড়তে অভস্ত্য নয় ছোঁয়া। আগে কখনো শাড়ি পড়েও নি। বিয়ের দিন কাকিমা পড়িয়ে দিয়েছিলো। কিভাবে পড়িয়েছে সেটাও খেয়াল করে নি ছোঁয়া। কেনোনা তখন ছোঁয়ার ভীষণ মন খারাপ ছিলো। এই লোকটাকে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছেই ছিলো না।
ঘটা করে বিয়ে হয় নি ছোঁয়ার। গ্রামের মেয়ে। একটা বোন আর বাবা মা এই তো ছোঁয়ার পরিবার। গ্রামের বাজারে একটা কাপড়ের দোকান আছে ছোঁয়ার বাবার। সেই দোকান করেই সংসার চলে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা মায়ের কাছে মেয়ে মানে বোঝা। বয়স পনেরোতে পা দিতে না দিতেই বিয়ের তোরজোর শুরু করে দেয়।
ছোঁয়ার বড় বোন অনার্স ফাইনাল ইয়ার পড়ে। এই মেয়ের বিয়ে দিতে পারছে না। যেখান থেকেই দেখতে আসে, দেখে পছন্দ হয় কিন্তু আর কোনো খবর থাকে না। সাদির বাবা মাঝেমধ্যেই গ্রামের যায়। ওইখানেই তার বাড়ি ছিলো আগে৷ এখন অবশ্য কেউ থাকে না সেখানে। তিনি মাঝেমধ্যে গিয়ে বাবার কবরটা দেখে আসে।
সেদিনও গ্রামে গেছিলো। ছোঁয়ার বড়বোন সিমিকে দেখে বেশ ভালো লেগেছিলো ওনার। সেদিনই মিষ্টি ফলে নিয়ে বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব রাখে। ছোঁয়ার বাবা মায়ের খুশি আর দেখে কে?
খুশিতে লাফাতে লাফাতে বিয়েতে হ্যাঁ বলে দেয়। সিমিকে না জানিয়েই। সাদির বাবা বলে দেয় শুক্রবারই তিনি ঘরোড়া ভাবে বিয়ে দিয়ে বউ নিয়ে যাবেন।
সেই কথাই শই।
সিমি এই কথা জানার পর কোনো রিয়াক্ট করে না। এমনকি ছেলের ছবিও দেখতে চায় না।
অতঃপর শুক্রবারে বরযাত্রি চলে আসার পরই সিমি বাড়ি থেকে চলে যায়।
বরযাত্রি বলতে দশ জন আসে।
শফিক চৌধুরী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাকে সবটা বলে ছোঁয়ার বাবা। তিনি কিছুখন ভেবে ছোঁয়ার সাথে বিয়ের কথা বলে।
আর ঘটনাটা কাউকে জানাতে না করেন।
কারণ তিনি বাড়ির কাউকেই সিমির ছবি দেখায় নি।
গোছল সেরে কোনোরকমে শাড়ি পেঁচিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে ছোঁয়া। আর সামনেই শাশুড়ীকে কড়া চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছোঁযা শুকনো ঢোক গিলে। এই মহিলা আবার রেগে গেছে কেনো?
ছোঁয়া কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওয়াশরুমের সামনেই।
সামনে আগানোর সাহস পাচ্ছে না। শুকনো একটা ঢোক গিলে ছোঁয়া।
“ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
কর্কশ গলায় বলে ছোঁয়া।
” না মানে আআমি কি কিছু
ছোঁয়া আমতা আমতা করে বলে
“না মানে আমি কি?
স্বামীর নাম মুখে নিতে নেই জানো না তুমি?
ছোঁয়া ফোঁস করে শ্বাস নেয়।
” শাশুড়ী আপনি না তখন আমি আপনার ছেলের নাম জানি না বলে বকলেন?
তাহলে এখন কেনো বকছেন? আমি তো আমার জামাইয়ের নাম জানি।
মিস্টার সাদদদদদদু
ছোঁয়া শাশুড়ীর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে।
কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ধাপ করে পড়ে যায় ছোঁয়া কাপড়ে বেঁধে।
কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে সাদি বেলকনি থেকে রুমে আসে।
শাশুড়ী বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।
“আল্লাহ গো কোমরটা গেলো গো? এখন আমাকে কে দেখবে? ও মা গো
তোমার মেয়ের কোমর ভেঙে গেছে। আর জীবনেও তোমার মেয়ের বিয়ে হবে না গো।
ছোঁয়া কান্না করতে করতে প্রলাপ বকতে থাকে। শাশুড়ী থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। কি বলছে এই মেয়ে?
” সাট আপপপপপ
সাদি একটা ধমক দেয়। কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। এক ধমকেই চুপসে যায়।
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
শাশুড়ী ভ্রু কুচকে সাদির দিকে তাকিয়ে আছে।
“যে যেটায় কমফোর্টেবল নয় তাকে সেটা পড়তে কেনো বলো তুমি মা?
সাদি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে।
” কেনো বলবো না? শাড়ি পড়তে না পারলে বিয়ে কেনো করেছে?
গম্ভীর গলায় বলেন উনি।
“ও তো ইচ্ছে করে আমার গলায় ঝুলে পড়ে নি। তোমরা এনেছো।
বিয়ে দেবে না আমায়। দিব্যি দিয়ে বিয়ে করালে। তো ওর দোষ কোথায়?
তোমরা দিব্যি টিব্যি দিয়ে বিয়ে করিয়েছো। ওকেও নিশ্চয় ওর ফ্যামেলি ট্যাপে ফেলে বিয়ে দিয়েছে।
এই টুকু বাচ্চা মেয়ে বিয়ের কি বুঝে?
চিৎকার করে বলে সাদি। সাবিনা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না।
সাদি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে।
” তোমরা ওকে এই বাড়িতে এনেছো। তো তোমার দায়িত্ব ওকে মানিয়ে নেওয়া।
“তোর ও তো দায়িত্ব ওকে তোলার।
সাবিনা বেগম বুকে হাত গুঁজে বলে।
” আমার কোনো দায়িত্ব নেই। আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি। আমি মেনে নিতে পারছি না। সময় চাই আমার।
“তো আমারও সময় চাই।
“তাহলে ওকে ওর বাড়িতে দিয়ে এসো।
সাদি বিরক্ত হয়ে বলে।
ছোঁয়া কাঁদো কাঁদো ফেস করে দুজনের কথা শুনছে। এই মহিলা তো সাংঘাতিক। ছেলেকেও এভাবেই কথা শোনায়। কথা শোনানোটাই যেনো মহিলাটির একমাত্র কাজ।
” এনিওয়ে আমি খাবো। অফিসে যেতে হবে৷ তোমাদের মেলোড্রামা শেষ হলে খেতে দিয়ে দাও আমায়৷ নাহলে বলে আমি রান্না করে খাচ্ছি।
বিছানায় বসে বলে সাদি।
“তোর পিচ্চি বউকে ঠিকঠাক শাড়ি পড়িয়ে নিচে আয়। আমি খাবার রেডি করছি।
ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যায় উনি। ছোঁয়া উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। আবারও শাড়িতে বেঁধে পড়ে যায়।
সাদি বেশ বিরক্ত।
” প্রতিবন্ধী তুমি?
সাদির এরকম প্রশ্নে হকচকিয়ে ওঠে ছোঁয়া। ছোটছোট চোখ করে তাকায় সাদির দিকে।
সাদি রুমে থাকা টিভিতে শাড়ি পড়ার ভিডিও অপেন করে দেয়।
“আই হোপ এবার পারবে।
বলেই চলে যায়। সাদির চুল গুলো ভেজা। গোছল করলো কোথায়?
সাদির ওপর ক্রাশ খায় ছোঁয়। লোকটার রাগি রাগি গলায় কথা গুলো দারুণ লাগে।
ছোঁয়া বুকের বা পাশে হাত দিয়ে মুচকি হাসে।
ভালোবাসার অনুভূতি কেমন হয় জানা নেই ছোঁয়ার। প্রেমে পড়ার বয়স এটা। আর এই বয়সেই বিয়ে হয়ে গেছে ওর। তাই ভালোবাসা ক্রাশ ভালো লাগা এসব বোঝে না।
তবে এটা বুঝতে পারছে এই গোমড়া মুখো লোকটাকে খুব ভলাো লেগেছে। যাকে বলে মারাক্তক ভালো লাগা।
ভিডিও দেখে দেখে শাড়ি পড়ে নেয় ছোঁয়া। কোমরে কিছুটা ব্যাথা পেয়েছে। শাড়ি পড়তে গিয়ে সেটা আঁচ করতে পারে ছোঁয়া।
ছোঁয়া শাশুড়ীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। খুব খিধে পেয়েছে তবুও খেতে বসার সাহস পাচ্ছে না। শাশুড়ী কি বলবে না বলবে।
সাদি করলার জুস খেয়ে নিয়েছে পুরো এক গ্লাস। আর এখন করলা ভাজি দিয়ে রুটি খাচ্ছে।
ছোঁয়া আড়চোখে সাদির খাওয়া দেখছে। লোকটার খাওয়ার স্টাইল টাও দারুণ।
” সাদি ছোঁয়াকে সাথে নিয়ে যা। এখানকার একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে তারপর অফিসে চলে যাস।
সাদির বাবা মুখে খাবার পুরে বলে।
“সাগর তনু
তোরা ওকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবি।
আর আসার সময় দুটো ফিটার কিনে নিয়ে আসিস।
সাদি খেতে খেতে বলে।
” ওমা আপনি ফিটার খাবেন?
ছোঁয়া বোকার মতো সাদিকে প্রশ্ন করে। ছোঁয়ার কথা শুনে সবাই মুখ টিপে হাসে। সাদি কটমট চোখে ছোঁয়ার দিকে তাকায়।
“সাথে কসটিপও নিয়ে আসিস।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে বেরিয়ে যায় সাদি।
” এই লোকটা এমন কেনো? একদম অন্যরকম।
ছোঁয়া মনে মনে বলে।
চলবে
#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৫
#তানিশা সুলতানা
তনু আর সাগরের সাথে ছোঁয়া বেরিয়ে পড়ে ভর্তি হতে। টেন এ ভর্তি হবে ও।
আজকে আবারও সাহস করে ওই ধবধবে সাদা রুমের কাবাড থেকে কালো জিন্স আর গোলাপি টপস নিয়ে পড়ে নিয়েছে। সাদু বকলে বকবে। কিন্তু এই শাড়ি পড়ে স্কুলে যাওয়া সম্ভব না।
শাশুড়ী তনুকে বলে দিয়েছে ফেরার পথে ছোঁয়ার জন্য কিছু ড্রেস নিতে। আর ছোঁয়াকে পার্লারে নিয়ে নাক ফুটে করতে।
ছোঁয়া ভয়ে কাচুমাচু হয়ে আছে। কান ফুটো করার সময় প্রচন্ড ব্যাথা পেয়েছিলো। এখনো নিশ্চয় আটও ব্যাথা পাবে।
সাদা কুকুরটাকে নিজের সাথে নিয়ে এসেছে ছোঁয়। ঘরটা যেহেতু ওর তাহলে ঘরের সব জিনিস গুলোও ওর।
দশ মিনিট পরেই স্কুলের কাছে পৌঁছে যায় ওরা। ইয়া বড় মাঠ। ছোঁয়া আগে যে স্কুলে পড়তো সেখানে কোনো মাঠ ছিলো না। আর এরকম বিল্ডিং ও ছিলো না। টিনের স্কুল ছিলো।
এতে বড় মাঠ আর এতে বড় স্কুল দেখে ছোঁয়া খুশিতে লাফিয়ে ওঠে।
তনু ছোঁয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। এই যেরকম ছটফট করছে যেকোনো মুহুর্তে এদিক সেদিক চলে যেতে পারে।
সাগর তনুর হাতটা শক্ত করে ধরেছে। আর কুকুরটাকে গাড়িতেই রেখে এসেছে।
সাদির চেনা এই স্কুলের হেডটিচার। ফোন করে আগেই সব জানিয়েছিলো। তাই ভর্তি করতে বেশি সময় লাগে না।
ভর্তি শেষে তনু আর ছোঁয়া বাইনা করে ফুসকা খাবে। সাগর ডিরেক্ট না করে দেয়। কে শোনে কার কথা?
দুজন দৌড়ে গিয়ে ফুসকা স্টলে বসে পড়ে।
“মামা বেশি করে ঝাল দিয়ে চার প্লেট ফুসকা দিন তো।
ছোঁয়া বলে।
” চার প্লেট কেনো? আমি খাবো না এসব।
নাক সিঁটকে বলে সাগর।
“তোকে কে দিবে? চার প্লেট তো আমাদের দুজনের জন্য।
তনু মুখ বাঁকিয়ে বলে।
সাগর খানিকটা লজ্জা পায়।
ফুসকা দিতেই দুইরমনি পাল্লা করে ফুসকা খাচ্ছে। নাকের জল চোখের জলে এক হয়ে গেছে তবুও তাদের থামাথামির নাম নেই।
সাগর বেশ বিরক্ত হয়। উঠে যায় দোকানে পানির বোতল কিনছে।
ফিরে এসে দেখে দুজন শশা খাচ্ছে ঝাল কমানোর জন্য।
সাগর ওদের হাতে পানি দেয়।
” এতো ঝাল খাওয়ার কি দরকার?
“দরজার আছে ভাইয়া। ফুসকা খাওয়ার মজাই তো এটা। নাকের পানি চোখের পানি যদি ফুসকার সাথে না মিশে তাহলে সেটা মজা লাগে না।
ছোঁয়া হেসে বলে। তনুও তাল মিলায়।
“ভাগ্যিস ভাইয়ার সাথে নেই। থাকলে তোমার কথা শুনে কি বলতো জানো?
” হুমম জানি
আপনার ভাইয়া হলো একটা আস্ত করলার বস্তা। তার মুখ দিয়ে তেঁতো কথাই তো বের হবে বলো?
তিনজনই হেসে ফেলে।
কিছু কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরে আসে ওরা। নাক ফুটো করার কথা ভুলে গেছে।
ছোঁয়া রুমে আসতেই দেখে সিমির কল। মুখে হাসি ফুটে ওঠে ছোঁয়ার।
“আপি কেমন আছো?
” আলহামদুলিল্লাহ। তুই?
“আমিও ভালো। বিয়েটা কেনো করলে না? বরটা খুব স্মার্ট ছিলো তো। আমার কিন্তু দারুণ লাগে।
” পছন্দ হয়েছে?
সিমি আলতো হেসে বলে।
“হুমম খুব।
” আলহামদুলিল্লাহ। তুই যে খুঁতখুঁতানি মেয়ে। ভেবেছিলাম আবার যদি পছন্দ না হয়।
“তুমি কোথায় এখন?
” বাড়িতে।
“কবে আসলে?
” তোর বিদায়ের পরেই।
“এমনটা করার খুব দরকার ছিলো।
” হুমম ছিলো।
“জানো আপি এই বাড়িতে একটা বাচ্চা মেয়ে আছে। তিন বছর হবে হয়ত বা তার কমও হতে পারে। নাম পরি। পরির চোখ, হাসি, হাঁটা সবটাই কেমন জানি তোমার মতো।
ছোঁয়ার কথা শুনে চমকে ওঠে সিমি। বুকেট ভেতর চিনচিন করে ওঠে।
” তাই?
নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে সিমি।
“বাচ্চাটার না মা নেই। আমাকে মাম্মা বলে ডাকে।
মা নেই শুনে সিমির বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। মনে পড়ে যায় কিছু ঘৃণ্য স্মৃতি। চোখ দুটো টলমল করে ওঠে।
” বাবাও নেই বোধহয়।
“বাবা নেই কেনো?
সিমি হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে বলে।
“দুই দিন হয়ে গেলো এসেছে ওর বাবাকে দেখি নি। বাচ্চাটা খুব একা রে।
ছোঁয়া মন খারাপ করে বলে।
” আমাকে একবার দেখাবি?
“বাবা আমাকে নিতে আসলে আমি পরিকে নিয়েই যাবো।
তারপর আরও কিছু খন কথা বলে ফোন রেখে দেয় ছোঁয়া। আর সিমি ভাবতে থাকে বাচ্চাটার কথা।
বিআরটিসি কোম্পানিতে এমডি পদে জয়েন করেছে সাদি। নিজের কেবিনে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। তেমন কাজ নেই। বাড়ি চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু বস যেতে দেয় নি।
” মে আই কাম ইন?
“ইয়েস কামিন
চোখ বন্ধ রেখেই বলে সাদি।
” দোস্ত আই এম ইন লাভ
আবির এক প্রকার দৌড়ে এসে বলে।
সাদি চোখ ছোটছোট করে তাকায় আবিরের দিকে।
“তোর আর আমার মধ্যে এরকম সম্পর্ক না যে তোর এরকম কথা শুনে আমি খুশিতে লাফিয়ে উঠবো।
সাদি বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে।
” ওহহহ তাই তো।
কিন্তু কি কারবো বল তো?
আমি আবার তোকে না জানিয়ে কিছু করতে পারি না।
বাঁকা হেসে বলে আবির।
“আমার বোনের থেকে দুরে থাকবি। ইটস মাই ওয়ার্নিং।
আঙুল তুলে চোয়াল শক্ত করে বলে সাদি।
” কুল কুল
সাদির আঙুলটা নামিয়ে দিয়ে বলে আবির।
“তোর বোনকে আমার ভালো লাগে না। একদম তোর মতো।
আমি তো ওই পিচ্চিটার প্রেমে পড়েছি।
বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বলে আবির।
সাদি উঠে দাঁড়ায়। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
” ইলেকশনে দাঁড়াচ্ছি। বিপুল ভোটে পাশ করবো। আর তার আগেই পিচ্চিটাকে
সাদি ফোনটা হাতে নিয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। আর কিছু শোনার নেই ওর।
🥀🥀🥀
ছোঁয়া পরিকে খাইয়ে দিচ্ছে। পরি ফোনে গেমস খেলছে আর খাচ্ছে।
“আচ্ছা সোনা তোমার বাবা কে?
ছোঁয়া পরিকে প্রশ্ন করে। পরি ফোন থেকে মুখ তুলে ছোঁয়ার দিকে তাকায়।
” আমার বাবার নাম সিফাত। (আমলা বাবাল নাম ছিপাত)
আলো পাপাল নাম পাদি
ছোঁয়া খিলখিল করে হেসে ওঠে। সাদি উচ্চারণ করতে পারে না পরি। ছোঁয়খে হাসতে দেখে পরিও হাসে।
“আবার বলো মা।
” পাদি পাদি পাদি পাদি
পরি বলতেই থাকে আর ছোঁয়া হাসতে থাকে।
তখনই হুরমুর করে রুমে ঢুকে সাদি।
দুজনই চুপসে যায়। কারণ সাদির চুল গুলো এলোমেলো শার্টের ইন খুলে গেছে এক পাশের। চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে।
ছোঁয়ার মুখের ওপর একটা শপিং ব্যাগ ছুঁড়ে মারে সাদি। ছোঁয়া চমকে ওঠে।
“বোরকা ছাড়া যেনো এক পাও বাড়ির বাইরে যা যায়। নাহলে পা কেটে রেখো দেবে। ইডিয়েট।
বলেই আবার গটগট করে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে।
ছোঁয়া আরও পরি মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। কি হলো বেপারটা?
” পাপা বতলো কেনো? (পাপা বকলো কেনো?)
ছোঁয়াকে প্রশ্ন করে পরি।
ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“এটাকে বকা বলে না মা। এটাকে বলে টর্নেডো। ছোটমট একটা ঘুর্ণিঝড় বয়ে গেলো।
বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে ছোঁয়া।
” মা আবার তোমার পাপার নামটা বলো তো?
“পাদি পাদি পাদি পাদি।
” এই নাম তোমায় কে শিখেয়েছে?
সাদি কোমরে হাত দিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে পানি। ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে। এবার কি হবে?
“বলো মা? কে শিখিয়েছে?
” মাম্মা
বলেই পরি এক দৌড় দেয়।
ছোঁয়া চোখ পাকিয়ে পরির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
পরি তো পালিয়ে গেলো এখন ও কি করবে? কোথায় পালাবে?
সাদির দিকে তাকানোর সাহস নেই।
আস্তে করে খাবারের থালাটা বিছানায় নামিয়ে এক দৌড় দিতে যায় ছোঁয়া।
কিন্তু দৌড় দেওয়ার আগেই ঠাস করে পড়ে যায়।
সাদি ফোঁস করে শ্বাস নেয়।
“আমার নাম কি?
ছোঁয়ার দিকে এগোতে এগোতে বলে সাদি।
ছোঁয়ার বুক টিপটিপ করছে। এই লোকটার চেহারা দেখলেই ভয়েরা দলের বেঁঊে হাজির হয়।
” কি নাম আমার?
ধমক দিয়ে বলে সাদি।
ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
চলবে
#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৬
#তানিশা সুলতানা
“এই মেয়ে তোমার কি কোনো দিন বুদ্ধি হবে না?
সাবিনা বেগম ছোঁয়ার হাত ধরে টেনে এক পাশে নিয়ে ফিসফিস করে বলে।
ছোঁয়া কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়।
” আমি কি করলাম?
মুখটা কালো করে রিনরিনিয়ে বলে।
“কি করেছো?
” হুমম কি করেছি?
“আমার ছেলে তোমার হাত ধরেছে এটা ভাসুর শশুড়ের সামনে বলতে লজ্জা করলো না তোমার?
দাঁতে দাঁত চেপে বলেন তিনি।
” ওমা হাত ধরা আবার খারাপ না কি?
কপাল চাপকে সাবিনা বেগম।
“আমার ছেলে ডাকছে তোমায়। যাও
ছোঁয়ার দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে বলে সাবিনা বেগম।
” ডাকছে তো বকা দেওয়ার জন্য। ভালো তো আর বাসবে না।
আপনি আর আপনার ছেলে দুজনই এক। কথার সাথে করলার জুস ঝড়ে।
বলেই এক দৌড় দেয় ছোঁয়া। নাহলে শাশুড়ী এখন চোখ দিয়েই ভর্স করে দেবে।
কুত্তা বিলাইয়ের সাথে ধবধবে সাদা রুমে ছোঁয়াকে বন্ধি করে রেখেছে সাদি।
রুমে ঢোকার সাথে সাথে কোনো কথা না বলেই হাত ধরে টেনে এই রুমে এনে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছেন করলা সাহেব।
ছোঁয়ার রাগ আকাশ ছুঁই ছুঁই। লোকটার কতবড় সাহস ছোঁয়াকে রুমে বন্দি করে রাখে?
“শা*লা খবিশ। জীবনেও বউ পাবি না। আমার মতো ইনোসেন্ট কিউট সুইট মেয়েকে বন্দি করে রেখেছিস?
একবার বের হই তোর টাক মাথার সব গুলো চুল টোনে টেনে ছিঁড়বো আমি।
ছোঁয়ার অদ্ভুত গালি শুনে সাদি কাচুমাচু হয়ে আশেপাশে তাকায়। সবাই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাদির দিকে।
আসলে সাদির অফিসের দুজন স্টাফ এসেছে। আর ওদের সাথে এসেছে আবির। সাদি একটা প্রজেক্ট করেছে। সেটা দেখবে বলে এসেছেন ওনারা।
যদিও সাদির ওনাদের বাড়িতে আনার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু আবির এক প্রকার জোর করেই এসেছে।
ছোঁয়ার পরিচয় জানবে বলে।
তাই সাদি ছোঁয়াকে রুমে এনে আটকে রেখেছে। ও চায় না ছোঁয়াকে আবির দেখুক।
সাদি দাঁতে দাঁত চাপে।
আবির শব্দ করে হেসে ওঠে।
” বোনকে রুমে বন্দি করে রেখেছো নিশ্চয়?
আবির এক গাল হেসে বলে।
“গাইস
প্রজেক্ট দেখা শেষ?
এবার চলুন আমার সাথে।
সাদি ধাপ করে ল্যাপটপ বন্ধ করে বলে।
” ওমা যাবো কি? আন্টি যে বললো লান্স করে যেতে। আমি আবার আন্টির কথা ফেলতে পারবো না।
আবির আড়মোড়া ভেঙে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলে।
আদি বিরক্ত হয়। যত তারাতাড়ি সম্ভব এদের এখান থেকে বের করতে হবে। নাহলে ওই ইডিয়েট টা মানসম্মানের দফারফা করে ফেলবে।
“ওই দজ্জাল শাশুড়ী তেঁতো ছেলে। দরজা খুলে দিন। আমার আম গুলো গাছ তলায় পড়ে আছে। কেউ নিয়ে যাবে।
ছোঁয়া দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে আবারও বলে ওঠে।
চমকে ওঠে সাদি। আবিরের হাসি চওড়া হয়।
” আমিই বরং দরজাটা খুলে দিয়ে আসি।
বলেই আবির উঠে বসে।
সাদি বড়বড় পা ফেলে দরজা খুলে ভেতরে ঢুলে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়।
ছোঁয়া বড়বড় চোখ করো তাকায়।
কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়।
“এই যে মিস্টার সমস্যা কি আপনার? আমাকে এখানে বন্দী
ছোঁয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই সাদি ছোঁয়ার গলা থেকে ওড়না টেনে নিয়ে হাত বেঁধে দেয়। তারপর কাবাড থেকে কসটিউব বের করে ছোঁয়ার মুখে লাগিয়ে দেয়।
ছোঁয়া বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। এটা কি হলো?
কুকুর আর বিড়াল বিছানায় আরাম করে বসে দেখছে ছোঁয়াকে।
” এবার কথা বলো? ইডিয়েট একটা।
কমনসেন্স নেই তোমার?
ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে চর বসিয়ে দেই।
কড়া গলায় বলে সাদি।
ছোঁয়া ভ্রু কুচকে শুধু তাকিয়ে আছে। কি পরিমাণ নির্দয় এই লোকটা ভাবা যায়?
সাদি দীর্ষ শ্বাস ফেলে আবার দরজা খুলে বেরিয়ে যায়। ছোঁয়া সেদিকে অসহায় চোখ করে তাকিয়ে থাকে। এই ছিলো কপালে?
বাইরে এসে দেখে আবিররা রুমে নেই। নিশ্চয় মা নিয়ে গেছে। থ্যাংক গড।
সাদিও চলে যায়। আপদ গুলোকে বাড়ি থেকে বের করতে পারলেই শান্তি।
খাবার না খেয়ে বাড়ি থেকে নরবেই না আবির।
সাবিনা বেগম খাবার বেরে দিচ্ছে ওনাদের। আদি মুখ বাঁকিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।
আবির এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ছোঁয়াকে খুঁজছে। কিন্তু কোথাও নেই মেয়েটা?
তাহলে কি এই বাড়িতে থাকে না ও?
তাহলে থাকে কোথায়?
মনে মনে আওড়াতে থাকে আবির।
“শাশুড়ী, শাশুড়ী আপনি কোথায়?
ছোঁয়া বাড়ির মেইন দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে।
চমকে ওঠে সাদি। এই মেয়ে এখানে আসলো কি করে?
সাবিনা বেগম ভ্রু কুচকে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। এই মেয়ের কোনো কান্ডব ঙ্গান নেই।
আবিরের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
সাদিকে সামনে দেখে মুখ ভেংচি কাটে ছোঁয়া। সাদি চোখ পাকিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। তাতে ছোঁয়া পাত্তা দেয় না।
আবির খাওয়া বাদ দিয়ে তাকিয়ে আছে।
ছোঁয়া ওড়নায় বেঁধে নিয়ে এসেছে আমগুলো।
সাদির ইচ্ছে করছে এই মেয়ের মাথা ফাটাতে।
” তোমার মেয়ে তোমাকে খুঁজছে।
বাচ্চা তো। বাচ্চা মেয়ে রেখে এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করো কি করে?
সাদি গম্ভীর গলায় বলে। আবিরের মুখটা কালো হয়ে যায়। এইটুকু মেয়ের আবার মেয়ে আছে? ভাবা যায়? দুই দিনে কতশত কল্পনা জল্পনাই না করেছিলো ছোঁয়াকে নিয়ে।
এতে বড় ছ্যাকা খাবে কে জানতো?
ধুর
ছোঁয়া সাদিকে ভেংচি কেটে সিঁড়ি বেয়ে হনহনিয়ে চলে যায়।
সাদি ফোঁস করে শ্বাস নেয়।
চলবে