#অন্যরকম তুমি
#সূচনা পর্ব
#তানিশা সুলতানা
সাদাত দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেতেই বুকের ভেতর ধক করে ওঠে ছোঁয়ার। একটু নরেচরে বসে ছোঁয়া। ভয় পাওয়ারই কথা। মাএ ষোলো বছর বয়স ছোঁয়ার। বিয়ে সম্পর্কে ওর কোনো ধারণা না থাকলেও ফুলসজ্জা সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা আছে।
ছোঁয়ার চাচাতো বোন বিথির কাছে শুনেছে ছোঁয়া। বিথির হাসবেন্ড ফুলসজ্জার রাতেই খুব মেরে ছিলো বিথিকে। মারার কারণটা ছিলো সেদিন মিথির পিরিয়ড চলছিলো। এতে বেচারি বিথির কোনো দোষ ছিলো না। তবুও মার খেয়েছিলো বিথি।
সাদাতের বোন আর কাজিনরা একটু আগে ছোঁয়াকে যখন এই রুমে এনে বসিয়ে দিয়ে গেছিলো তখন বলেছে আজ ওদের বাসর রাত। বর যা বলবে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই শুনবে।
ছোঁয়া মাথা নেরে সায় জানিয়েছে।
বাবার বাড়ি থেকে আসার সময়ও মা কাকিমা দাদিমা সবাই পই পই করে বলে দিয়েছে। বর যা বলবে তাই শুনবি।
মিথি জড়োসরো হয়ে বসে। মাথায় থাকা লাল রংয়ের ঘোমটাটা আরও একটু টেনে দেয়। ভয়ে বুকটা টিপটিপ করছে।
সাদাত রুমে ঢুকে ধাপ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। বিকট শব্দে দরজা বন্ধ হয়ে যায়। কেঁপে ওঠে ছোঁয়া। ঘোমড়াটার আড়াল থেকে এক পলক তাকায় সাদাতের দিকে। কেমন জানি উসকো খুশকো দেখাচ্ছে সাদাকে, ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছে না। চোখ জোড়াও খুলে রাখতে পারছে না। মনে হচ্ছে এখনই ঢলে পড়ে যাবে।
উনি কি অসুস্থ?
ছোঁয়ার মন থেকে প্রশ্নটি উদয় হয়।
দরজা বন্ধ করে সাদাত দরজায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গায়ের সাদা শার্টটা ঘামে ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেছে। কপালের রগটা ফুলে উঠেছে। চোখের সাদা আংশ টকটকে লাল হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে রক্ত।
ছোঁয়া ঢোক গিলে। কাচুমাচু হয়ে বসে।
এই ভয়ংকর লোকটার সাথে থাকবে কি করে ছোঁয়া?
“আআপনি কি অসুস্থ ভাইয়া? কিছু লাগবে আপনার?
রিনরিনিয়ে প্রশ্ন করে ছোঁয়া।
সাদাত ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। সাদাতের চাহনি দেখে থেকে থমকে যায় ছোঁয়া। ভয়ে জমে যায়। লাল লাল চোখ দুটো পাকিয়ে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। ভ্রু দুটো আড়াআড়ি ভাবে কুচকে আছে।
মনে হচ্ছে এখুনি ছোঁয়াকে টুপ করে গিলে খেয়ে নেবে।
ছোঁয়া মনে মনে নিজেকে বকতে থাকে। কি দরকার ছিলো প্রশ্ন করার?
একপা একপা কর এগিয়ে যায় সাদাত ছোঁয়ার দিকে। ছোঁয়ার ভয় বাড়তে থাকে। হাত পা রীতিমতো কাঁপছে। মাথার ঘোমটাটা কখন পড়ে গেছে সে খেয়াল নেই ছোঁয়ার। মাথা নিচু করে আছে। ছোঁয়ারর দৃষ্টি সাদাতে পায়ের দিকে।
খাটের কাছে চলো এসেছে সাদাত জুতো না খুলেই হাঁটু মুরে বিছানায় বসে। বলিষ্ঠ হাত দিয়ে এক টানে খাটের সাথে ঝুলানো ফুল গুলো ছিঁয়ে ফেলে।
দুই হাতে কান চেপে ধরে ছোঁয়া।
সাদাত বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে।
ছোঁয়া একটু পিছিয়ে যেতে নেয়। সাদাত হাত ধরে ফেলে ছোঁয়ার। চমকে তাকায় সাদাতের দিকে।
” কককি করছেন টা কি আপনি?
ছোঁয়া ধরে আসা গলায় বলে।
সাদাত উওর দেয় না।ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ছোঁয়াকে। খাটের মাঝখানে পড়ে যায় ছোঁয়া। হকচকিয়ে ওঠে। বড়বড় চোখ করে তাকায় সাদাতের দিকে। সাদাত সেদিকে পাত্তা দেয় না।
একটা বালিশ ছোঁয়ার পেটের ওপর রেখে তাতে ভর দিয়ে ছোঁয়ার দিকে ঝুঁকে।
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে ছোঁয়া। সাদাতের দুই বাহুতে হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে থাকে ছোঁয়া। নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে সরাতে চাইছে সাদাতকে। কিন্তু এক চুলও নরাতে পারছে না।
” ককি কররছেন কি আপনি?
কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ছোঁয়া
উওর দেয় না সাদাত। ছোঁয়ার হাত দুটো শক্ত করে বিছানার সাথে চেপে ধরে। মুখটা এগিয়ে নেয় ছোঁয়ার মুখের দিকে। বিশ্রি গন্ধ বের হচ্ছে সাদাতের মুখ থেকে। নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম ছোঁয়ার। মুখ ঘুরিয়ে নেয় ছোঁয়া।
নিজেকে অসহায় লাগছে খুব। কান্না চেপে রাখতে পারছে না।
“প্লিজ ছেড়ে দিন আমায়। লাগছে আমার।
চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছে ছোঁয়ার। হাতে প্রচন্ড ব্যাথা পাচ্ছে।
সাদাত একটা হাত ছেড়ে দেয়। ছোঁয়া ছাড়া পেতেই সেই হাত দিয়ে সাদাতকে সরানোর জন্য ধাক্কা দেয়। কিন্তু এক চুলও সরাতে পারে না।
” প্লিজ ছেড়ে দিন।
কেঁদে কেঁদে বলে ছোঁয়া।
সাদাত ছোঁয়ার ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে দেয় বাম হাতের তালু দিয়ে।
ছোঁয়ার বুক থেকে আঁচলটা সরিয়ে কাঁধে হাত গলিয়ে দেয়।
ছোঁয়া আর নিতে পারছে না। হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।
“কেনো এমন করছেন? আমি কি করেছি?
সাদাত ছোঁয়ার ঘাড়ে মুখ গুঁজে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। সাদাতের পুরো নিঃশ্বাসটা ছোঁয়ার ঘাড়ে পড়ছে। ভীষণ অস্বস্তিতে পরে যায় ছোঁয়া।
ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে কান্না করতে থাকে। সাদাতের পুরো শরীরের ভর ছোঁয়ার ওপর ছেড়ে দেয়। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ছোঁয়ার দম আটকে আসছে।
হাত ছেড়ে দেয়।
এভাবে বেশ কিছুখন কেটে যায়। তারপর হুট করে ঝড়ের গতিতে উঠল বসে সাদাত। দুই হাতে মাথা চেপে বসে থাকে।
” তুই আমার সাথে এমনটা করতে পারিস না। ছাড়বো না তোকে আদি। খুন করবো তোকে আমি।
বিরবির করে বলছে সাদাত।
ছোঁয়া তারাহুরো করে উঠে শরীরে আঁচল জড়িয়ে নেয়। ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
এই অমানুষটা কেনো করলো এমন? আবারও এমন করবে না তো?
আতঙ্কে ওঠে ছোঁয়া।
এখানে থাকা যাবে না আর।
বিছানা থেকে নামতেই দরজায় টোকা পড়ে। নিশ্চয় বাবা এসেছে।
আমাকে এখানে পাঠানোর সময় তো বলেছিলো ছোঁয়ারে রে তুই ওনাদের সাথে যা বুঝলি আমি পরে গিয়ে তোকে নিয়ে আসবো।
এখন নিশ্চয় নিতে এসেছে। কান্নার মাঝেও হাসি ফুটে ওঠে ছোঁয়ার মুখে।
এক দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
বাবা আমি আর এখানে থাকবো না
বলে সামনে তাকাতেই ছোঁয়ার হাসি গায়েব হয়ে যায়। কারণ দরজার কাছে ছোঁয়ার বাবা নয় বরং গম্ভীর মধ্য বয়সি এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। হাতে তার খাবারের প্লেট।
এই মহিলাটি সাদাতের মা। ছোঁয়াকে এই বাড়িতে আনার পর উনিই মিষ্টি খাইয়েছিলেন।
“এখানেই থাকতে হবে তোমাকে৷ বিয়ে হয়ে গেছে তোমার।
কর্কশ গলায় বলেন উনি। মাথা নিচু করে ফেলে ছোঁয়া। ইচ্ছে করছে মুখের ওপর বলতে ” আপনার এই অমানুষ ছেলের সাথে আমি জীবনেও থাকবো না”
কিন্তু গুরুজন উনি। মুখের ওপর বলাটা ঠিক হবে না।
সালমা বেগম ছোঁয়াকে ভালোভাবে পরখ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
“বাড়ির গুরুজনদের সামনে যাওয়ার আগে আয়না দিয়ে নিজেকে একবার পরখ করে মাথায় ঘোমটা টেনে তবেই যাবে।
বুঝলে?
ছোঁয়া মাথা কাত করে বোঝায় বুঝেছি।
“এই খাবারগুলো সাদুকে খাওয়াবে। আমার ছেলে সকাল থেকে কিছুই খায় নি।
ছোঁয়ার হাতে খাবারের প্লেট দিয়েই উনি দরজা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে চলে যায়। ছোঁয়া দীর্ঘ ফেলে।
ওর ও সারাদিন কিছু খাওয়া হয় নি। ভীষণ খিধে পেয়েছে।
এখন কি করবে? এই খাবার গুলো নিজেই খেয়ে নেবে না কি সাদাতকে ডেকে খেতে বলবে?
ডাকলে যদি আবারও ওমন করে?
থাক আর রিক্সা নেবে না ছোঁয়া।
ডানপাশ থাকা সোফার পেছনে বসে পড়ে ছোঁয়া। এখানে বসেই খাবারটা খেয়ে নেবে এবং রাতে এখানেই ঘুমবে৷ যাতে ওই লোকটা ওকে দেখতে না পায়।
প্লেটের ঢাকনা সরাতেই ছোঁয়ার খাওয়ার ইচ্ছেটাই মরে যায়। খুব সামান্য পরিমাণ ভাত আর তার পাশে করলা ভাজি, করলা ভর্তা, করলা দিয়ে মাছের ঝোল।
“আচ্ছা ওই দজ্জাল শাশুড়ী কি আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলো না কি? যে আমি ওনার ছেলেকে খাবার না দিয়ে আমিই খেয়ে নেবো?
কি ধরি বাজ শাশুড়ীরে? এটাও জেনে গেলো।
একটুখানি খাবো বলে করলার গোডাউন দিয়ে গেলো।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে আবার খাবারটা ঢেকে রাখে ছোঁয়া। এবার আস্তে আস্তে পা ফেলে খাটের দিকে এগোয়। খাবারটা কোনোরকমে খাটের পাশে থাকা টেবিলে রেখে আবার দৌড়ে গিয়ে সোফার পেছনে লুকিয়ে পড়বে।
নিশ্বাস বন্ধ করে প্লেটটা টেবিলের ওপর রাখে ছোঁয়া। আর তখনই একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। সাথে সাথে ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে ওঠে ছোঁয়া।
চলবে,,
#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ২
#তানিশা সুলতানা
রুমের মধ্যে আরেকটা রুম। একটা মেরুন রঙের পর্দার আড়ালে আরেকটা দরজা।
“লোকটা নিশ্চয় বাচ্চাদের ধরে এনে পাচার করে দেয়। তাই রুমের মধ্যে রুম বানিয়েছে। বাচ্চাদের ধরে এনে এই রুমেই বন্ধ করে রাখে।
ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে ছোঁয়ার। ও নিজেও তো বাচ্চা। তাহলে এই লোকটা ওকে পাচার করে দেবে?
ভয়ে ভয়ে এক পলক তাকায় সাদাতের দিকে। লোকটা একই ভাবে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমের ঘোরে আবার নাকাও ডাকছে।
আশ্চর্য ছোঁয়া ধপ করে শব্দ করে পড়ে গেলো আর পড়ে গিয়ে এত জোরে চিৎকার করলো, আবার বাচ্চাটাও এতে জোরে কান্না করছে তবুও লোকটার ঘুম ভাঙলো না?
মরে টরে গেলো না কি? মরে গেলে কি মানুষ নাক ডাকে?
নিজের মনের এরকম বোকা বোকা প্রশ্ন শুনে নিজেই বিরক্ত হয় ছোঁয়া।
” ছোঁয়া তুই না সাইন্সের স্টুডেন্ট। স্মার্ট সুন্দরী টেলেন্টেট। তোর মনে এরকম বোকা বোকা প্রশ্ন মানায় না। এই রাহ্মসটা মরবে? কখনোই না।
নিজেকে ধাতস্থ করে বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে আস্তে করে দরজাটা খুলে ছোঁয়া।
দরজাটা খুলেই অবাক হয়ে যায় তুলতুল বিশাল বড় রুম। ধবধবে সাদা দেয়াল ফ্লোরও সাদা। বা পাশে কিচেন ডান পাশে ওয়াশরুম। রুম টার ঠিক মাঝখানে একটা নীল রংয়ের দোলনা। তাতে বসে আছে দুই তিন বছরের একটা পরির মতো বাচ্চা মেয়ে। কেঁদে কেঁদে মুখটা লাল করে ফেলেছে।
ধবধবে সাদা বিছানার চাদর বালিশ। খাটের রংটাও সাদা সেখানে সাদা একটা কুকুর আর সাদা বিড়াল। বিছানায় আধশোয়া হয়ে আছে।
মানে শুধুমাএ কুকুর বিড়ালের জন্য এতো সুন্দর খাট? ভাবা যায়?
ছোঁয়াকে দেখে বাচ্চাটা কান্নার আওয়াজ বাড়িয়ে দেয়। হকচকিয়ে ওঠে ছোঁয়া। মায়া হয় বাচ্চার প্রতি। গাড়ো নীল রংয়ের একটা ফ্রক পড়ে আছে। হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে আটকানো চুলগুলো অধখোলা হয়ে আছে।
ছোঁয়া বাচ্চার দিকে এগিয়ে যায়। হাত বাড়িয়ে দিতেই বাচ্চাটা ঝাপ দিয়ে ছোঁয়ার কোলে আসে। ঠোঁট ফুলিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে।
“আমার ময়নাটা কাঁদে না।
বাবুটার পিঠে হাত বুলিয়ে আদুরে ভাঙিতে বলে ছোঁয়া। বাচ্চাটা শান্ত হয়ে যায়। আশ্চর্য হয়ে যায় ছোঁয়া। মুখে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি।
” নাম কি তোমার বাবু?
আদুরী গলায় বলে ছোঁয়া।
বাচ্চাটা অস্পষ্ট ভাষায় বলে
“পরি
” খিধে পেয়েছে সোনা? খাবে?
পরি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে। সামনের সব গুলো দাঁত উঠেছে। হাসলে দুই গালে টোল পড়ে।
দারুণ একটা বাচ্চা।
ছোঁয়া বুঝে যায় বাবুটা খাবে। এই তো কাঁদ ছিলো আর এখনি হেসে ফেললো?
পরিকে কোলে করেই কিচেনে যায়। চুলায় আগে থেকেই দুধ দেওয়া ছিলো। একটুখানি গরম করে নেয় ছোঁয়া।
ফিটারে দুধ ভরে পেছনে ঘুরে দেখে কুকুর আর বিড়াল ছোঁয়ার পা ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে।
“কি বড়লোক কুত্তা বিলাই?
তোরাও কি বড়লোকি দুধ খাবি না কি?
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে ছোঁয়া। কুকুরটা হালকা ঢেউঢেউ করে ওঠে। আর বিড়ালটাও জীভ বের করে।
ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
এ কেমন কিডনাপার রে ভাই? কুত্তা বিলাই পুচকে একটা বাচ্চা আর আমার মতো একটা কিউট বাচ্চাকেই কিডন্যাপ করলো।
লোকটার মতলব ভালো না।
বাকি দুধটুকু একটা বাটিতে করে কুকুর বিড়ালকে দিয়ে দেয়।
বাচ্চাটাকে দুধ খাওয়াতেই আবার ঘুমিয়ে পড়ে। বিছানায় শুয়িয়ে দেয় ছোঁয়া। সাদা রংয়ের একটা কাবাড আছে। সাহস করে সেটা খুলে ছোঁয়া। চেঞ্জ করা দরকার। এরকম বধু বেশে আর কতখন থাকবে?
কাবাড খুলতেই অবাক হয়ে যায় ছোঁয়া। সেখানে শুধু শাড়ি শাড়ি আর শাড়ি।
দারুণ দারুণ ডিজাইনের সব শাড়ি। কিন্তু এগুলো পড়ে রাতে ঘুমবে কি করে?
তারপর কাবাডের নিচের পাট্টা খুলে। সেখানে সব ধরনের ড্রেস আছে। ছোঁয়া গাড়ো নীল রংয়ের স্কার্ট আর সাদা টিশার্ট নেয়।
সেটা পড়ে ফ্রেশ হয়ে পরির পাশে শুয়ে পড়ে।
কুকুর বিড়াল ছোঁয়ার পায়ের কাছে শুয়ে পড়ে।
জানালার পর্দা ভেদ করে এক ঝলক সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় ছোঁয়া। বিরক্ত হয়ে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। কিন্তু তাতে বেচারি সূর্যের কোনো হেলদোল নেই। সে তার আঁচ কমাবে না।
আড়মোড়া ভেঙে লম্বা হাই তুলে উঠে বসে ছোঁয়া। পুরোপুরি চোখ খুলে সামনে তাকাতেই চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায় ছোঁয়ার।
কেনোনা কাল রাতের সেই রাহ্মসটা পরিকে করলা ভাজি দিয়ে রুটি খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পরি মুখে নেওয়া তো দুর তকিয়েও দেখছে না। মুখ ঘুরিয়ে চোখ মুখ খিঁচ বন্ধ করে আছে।
পাশেই কুকুর বিড়াল লেজ গুটিয়ে শুয়ে আছে। তাদের সামনেই করলা ভাজি দিয়ে রুটি ছোট ছোট টুকরো করে মাখানো।
ছোঁয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারা।
“এই যে মিস্টার রাহ্মস এরা করলা ভাজি খাবে না। সবাই কি আপনার মতো করলা না কি?
মনে মনে বলে ছোঁয়া মুখে বলার সাহস নেই। যদি আবার কাল রাতের মতো অভদ্রতা শুরু করে দেয়।
পরি ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে মাম্মা বলে ডাকে।
ছোঁয়া চমকে ওঠে। সাদাত ভ্রু কুচকে ছোঁয়ার দিকে তাকায়।মুহুর্তেই সাদাতের চোখ মুখের রং পাল্টে যায়। ফর্সা মুখটা লাল হতে থাকে।
চোয়াল শক্ত করে ফেলে।
ছোঁয়া আতঙ্কে ওঠে। রেগে যাচ্ছে কেনো উনি?
খাবারের প্লেট ঠাস করে টেবিলে রেখে হনহনিয়ে ছোঁয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সাদাত।
” এই মেয়ে তোমার সাহস হলো কি করে এই রুমে আসার?
ছোঁয়ার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে সাদাত। রাগে সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে।
ভয়ে বুক টিপটিপ করছে ছোঁয়ার। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। রাহ্মসটা হঠাৎ হ্মেপে গেলো কেনো?
চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া।
“সাহস পেলি কোথা থেকে এই ড্রেস পড়ার?
মেঘের মতো গর্জন তুলে বলে সাদাত। ছোঁয়া ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। হাত দুটো ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো বড় পাথরের নিচে চাপা পড়েছে।
“কেনো পড়েছিস বল? কেনো পড়লি? তোকে এখন খুন করতে ইচ্ছে করছে আমার।
মুখটা আরও একটু এগিয়ে নেয় ছোঁয়ার দিকে।
ওদের ঝগড়া করতে দেখে পরি কেঁদে ওঠে। ভয় পেয়ে গেছে বেচারি।
পরির কান্নার শব্দ শুনে ছেড়ে দেয় সাদাত।
ছোঁয়ার রাগে দাঁতে দাঁত চাপে। চোখের পানি মুছে ফেলে।
সাদাত পরিকে কোলে নিতে গেলে পরি সাদাতের কোলে যায় না।
দৌড়ে ছোঁয়ার বুকের মাঝে লুকিয়ে পড়ে। ভীষণ ভয় পাচ্ছে সাদাতকে। রীতিমতো কাঁপছে বাচ্চাটা। দুই হাতে পরিকে আগলে নেয় ছোঁয়া।
” একটা ড্রেসের জন্য ছোটলোকের মতো করার কি আছে? আমার পড়ার মতো কোনো ড্রেস ছিলো না বলেই পড়েছি। আপনার মতো অসভ্য অভদ্র লোকের ড্রেস পড়ার কেনে ইচ্ছে ছিলো না আমার।
সামান্য একটা জামা পড়েছি হিরে গহনা চুরি করি নি।
পরিকে দুই হাতে আগলে নিয়ে কড়া গলায় বলে ছোঁয়া। এখনো চোখ থেকে পানি গড়াচ্ছে। হাত দুটোও ব্যাথা হয়ে গেছে।
কথা গুলো বলার পর দাঁত দিয়ে জিভ কাটে ছোঁয়া, হায় হায় কি বলে ফেললাম?
এখন এই বন্ধ ঘরে খুন করে ফেললেও কেউ বাঁচাতে আসবে না।
এই রাহ্মসটা এখন টুপ করে গিলে খাবে ছোঁয়াকে।
সাদাত বুকে হাত গুঁজে চোয়াল শক্ত করে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার দিকে। সাদাতের চাহনি দেখে শুনে ঢোক গিলে ছোঁয়া।
“এই মেয়ে আমার মুখের ওপর কথা বলার সাহস একদম দেখাবে না বলে দিলাম। নাহলে মেরে পুঁতে ফেলবো।
আবারও চিৎকার করে বলে। পরি আর ছোঁয়া ভয়ে সিঁটিয়ে যায়। পরিকে ভয় পেতে দেখে চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে সাদাত।
এই ড্রেস এখনি খুলে ফেলবা। এন্ড ভালো করে কেঁচে স্ত্রী করে যেভাবে ছিলো সেভাবেই রেখে দিবা।
টাইম 30 মিনিটস।
হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে সাদাত।
” পারবো ন
বলতে বলতে সাদাতের দিকে তাকায় ছোঁয়া। চাহনি দেখে কথা আটকে যায়।
“পারবো
মেকি হেসে বলে ছোঁয়া।
” ননসেন্স
পরি চলে এসো খাবে।
বলে সাদাত খাবার আনতে যায়। এই ফাঁকে ছোঁয়া পরিকে কোলে নিয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
একদম রুমের বাইরে এসে থামে। পেছনে তাকিয়ে দেখে কুকুর আর বিড়াল আসে নি।
নিশ্চয় ওই রাহ্মসটা আসতে দেয় নি।
করলা ভাজি খেলে তো মরেই যাবে ওরা।
পরি ছোঁয়ার গলা জড়িয়ে ধরে মিটমিট করে হাসছে। পরির হাসিতে থেমে যায় ছোঁয়া।
“কে এই মেয়ে? এখানে কেনো? সাদাতের সাথে এর কি সম্পর্ক? মেয়ে তো হবেই না। কারণ পাক্কা খবর আছে ছোঁয়ার কাছে সাদাত ঠিক এক সপ্তাহ আগে বিদেশ থেকে এসেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রেম করে এতে বড় মেয়ে যাওয়া তো কোনোভাবেই পসিবল না।
তাহলে কে এই মেয়ে?
ছোঁয়া পরির মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে।
চলবে
#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ৩
#তানিশা সুলতানা
“তুমি এইসব কি জামা পড়েছো?
এটা তোমার শশুড় বাড়ি। এখানে এসব জামাকাপড় চলবে না। শাড়ি পড়তে হবে।
চৌধুরী পরিবারের বড় বউ তুমি। এটা মাথা রেখে চলবে।
সাবিনা বেগম পরিকে ছোঁয়ার কোল থেকে নিয়ে বলে।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে ওনার কথা শুনছে।
” ইসস রে সেই সাবানার যুগের সিনেমার ডাইলোক। বলি কি শাশুড়ী মা যুগ চেঞ্জ হয়ে গেছে। এখন আর কেউ এসব ডাইলোক বলে না।
বিরবির করে বলে ছোঁয়া।
ছোঁয়াকে বিরবির করতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় উনি।
” কি বিরবির করছো? এসব বিরবির করা আমার পছন্দ না। আমার ছেলেরও পছন্দ না।
কাঠ কাঠ গলায় বলেন উনি।
“ইয়ে আসলে বিরবির করে সরি বলছিলাম। জোরে বললে যদি বলেন (ওনাকে নকল করে) শোনো মেয়ে আমার আর আমার ছেলের এসব সরি টরি শুনা পছন্দ না।
বলেই দাঁত দিয়ে জিভ কাটে ছোঁয়া। জল্লাদ শাশুড়ী নিশ্চয় রেগে বম হয়ে গেছে। চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে ছোঁয়া।
সাবিনা বেগম সরু চোখে কিছুখন তাকিয়ে থাকে ছোঁয়ার দিকে৷ ভেবেছিলো সহজ শরল। এখন দেখছে আস্ত বদমাইশ।
” সাদুকে খেতে ডাকো। আমি খাবার সার্ভ করছি।
আর শোনো আমার ছেলের দিকে নজর দাও।
ছোঁয়ার দিকে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে বলেন উনি।
ছোঁয়া হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। যাক বাবা বেঁচে গেছি।
“ইয়ে মানে শাশুড়ী সাদুকে?
” স্বামীর নাম জানো না এখনো? এই মেয়ে না কি সংসার করবে? আমার হয়েছে মরন।
ওনাকে বললাম একটা বউমা এনে দিতে আর উনি একটা ফিটার খাওয়া বাচ্চাকে ধরে এনেছে।
বেশ জোরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন সাবিনা বেগম।
ছোঁয়া কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়।
(সাদাত নামটা অনেকের ভালো লাগে নি তাই সাদি দিলাম)
“শাশুড়ী বকছেন কেনো?
আপনার ছেলে তো তার নামটা রুমে বাঁধাই করে রাখে নি। আর আমি খুব ভদ্র ভালো মেয়ে। তাই ওনার কাছে নাম জিজ্ঞেস করি নি।
মুখটা ছোট করে বলে ছোঁয়া।
” আমায় উদ্ধার করেছো তুমি।
সাদুকে ডেকে নিয়ে এসো। ওর বাবা বসে আছে।
“যতসব,
হাঁটুর বয়সী মেয়ের সাথে না কি আমার ছেলে সংসার করবে?
প্রলাপ বকতে বকতে উনি চলে যায়। ছোঁয়া হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।
” ছোটমট একটা টর্নেডো বয়ে গেলো আমার ওপর দিয়ে। শাশুড়ী তো নয় যেনো ভাঙা রেডিও। তাই তো আপু পালিয়েছে। আপু নিশ্চয় আগে থেকেই জানতো এই চৌধুরী পরিবার থেকেই করলার উৎপত্তি। তাই ভেগে গেছে। আমার আমার গুনোধর বাবা মা আমাকে ফাসিয়ে দিয়েছে।
তবে আমার বরটা কিন্তু বেশ কিউট।
কোমরে হাত দিয়ে মুচকি হাসে ছোঁয়া।
সাদি রুম গোছাচ্ছে। সাদি খুব গোছালো ছেলে। একটুও অগোছালো পছন্দ না ওর।
ছোঁয়া দরজায় কাছে দাঁড়িয়ে দেখছে সাদিকে। মন দিয়ে কাজ করছে বেচারা।
“এই মেয়ে আমার ছেলের দিকে নজর দিচ্ছো কেনো?
আবারও পেছন থেকে শাশুড়ীর কর্কশ গলা শুনে চমকে ওঠে ছোঁয়া।
সাদি ভ্রু কুচকে দরজার দিকে তাকায়।
” আপনিই তো বললেন আপনার ছেলের দিকে নজর দিতে। তাই তো নজর দিচ্ছিলাম। আপনি না করলে আর দিবো না।
ছোঁয়া মাথা নিচু করে রিনরিনিয়ে বলে।
ছোঁয়ার কথা শুনে শাশুড়ী বড়বড় চোখ করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। সাদি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।
“সাধে কি তোমাকে আমি গাঁধা বলি? গর্ধব একটা।
বিরবির করে বলেন উনি। কথাটা ছোঁয়ার কানে পৌঁছে যায়।
” এই যে শাড়ি নাও। (ছোঁয়ার হাতে এতোগুলো শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলেন উনি)
“শাড়ি দিয়ে কি করবো?
ছোঁয়া শাড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে।
” আমার মাথায় দাও
বলেই উনি চলে যায়।
সাদি আবার নিজের কাজে মন দেয়।
ছোঁয়া শাড়ি গুলো হাতে রুমের ঠিক মাঝখান টায় দাঁড়িয়ে আছে। কোথায় রাখবে শাড়ি গুলো?
সাদির ফোন বেজে ওঠে। ছোঁয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে ফোন রিসিভ করে বেলকনিতে চলে যায় সাদি।
ছোঁয়া জোরে শ্বাস টানে।
এই রুমে পূর্ব পাশে একটা ছোট আলমারি আছে সেখানে শাড়ি গুলো রেখে আসে।
ছোঁয়ার এখনো দাঁত ব্রাশ করা হয় নি।
গোলাপি রংয়ের একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে ছোঁয়া। কিন্তু ছোঁয়া দরজার ছিটকিনি নাগাল পাচ্ছে না। আটকাবে কি করে?
শেষমেশ বাধ্য হয়ে দরজা না আটকেই ব্রাশ করতে থাকে।
একেবারে গোছল করে বের হবে। নাহলে আবার দজ্জাল শাশুড়ী বলবে “এই মেয়ে তুমি চৌধুরী পরিবারের বড় বউ। তুমি গোছল কেনো করো নি? আমাদের পরিবারের একটা নিয়ম আছে। বড় বউদের দিনে সাত বেলা গোছল করতে হয়”
ওনার ওইসব ভাষণ শোনার কোনো ইচ্ছে নেই ছোঁয়ার।
সাদি ফোন রেখে টিশার্ট খুলে ফেলে। নতুন জব পেয়ে গেছে। ভেবেছিলো কয়েকদিন পরে থেকে জয়েন করবে। কিন্তু অফিসের বস কল করে আজকে থেকেই জয়েন করতে বলেছে।
তাই এখন একেবারে সাওয়ার নিয়ে রেডি হয়ে খেতে যাবে।
তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে সিটকেনি আটকে দেয় সাদি।
ছোঁয়া টিশার্ট খুলে গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে নায়িকাদের মতো ভাব নিচ্ছে।
কেউ যে ভেতরে ঢুকে পড়েছে এদিকে খেয়াল নেই ওর।
সাদি দরজা আটকে পেছনে ঘুরতেই চোখ বড়বড় করে ফেলে।
“ইস্টুপিট তুমি এখানে কেনো?
ভুবন ভোলানো ধমক দিয়ে বলে সাদি।
ছোঁয়া সাদিকে দেখে দুই কানে হাত দিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে।
সাদি ছোঁয়ার মুখ আটকে ধরে।
” স্টপ স্টপ
করছো টা কি?
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সাদি।
ছোঁয়া চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।
“উমউমউম
” কি উমউম করছো প্রতিবন্ধীর মতো? কার পারমিশনে আমার ওয়াশরুমে ঢুকেছো?
দাঁত কটমট করে বলে সাদি।
ছোঁয়া সাদির দিকে তাকায়৷ লোকটাকে এতকাছে দেখে নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সাদির নিশ্বাস মুখে পড়ছে।
চোখের ইশারায় হাত সরাতে বলে ছোঁয়া।
সাদাত হাত সরিয়ে পিছিয়ে যায়।
“ননসেন্স
ওয়াশরুমে ঢুকলে দরজা বন্ধ করতে হয় এই টুকুও জানে না।
বিরবির করতে করতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে যায় সাদি। ছোঁয়া লজ্জায় জরোসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ তুলে তাকাতেও পারছে না। ছি ছি লোকটা কি অবস্থায় দেখে ফেললো ওকে?
এখন মুখ দেখাবে কি করে ওনাকে?
এতোটা লজ্জার মধ্যেও দুই হাতে মুখ ঢেকে মুচকি হাসে ছোঁয়া।
সাদি ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হতেই মুখোমুখি হয় তনু সাগর ইরিন (সাদাতের বেস্টফ্রেন্ড) রাব্বির।
সবাই লাইন ধরে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে সাদির দিকে।
সাদি ওদের দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।
” তোরা এখানে?
গম্ভীর গলায় বলে সাদি।
“এখানে না আসলে তো জানতেই পারতাম না তুই একটা বাচ্চা মেয়েকে ডিস্টার্ব করছিস।
রাব্বি সুর টেনে বলে।
“ফাজলামো করিস না।
ভালো লাগছে না।
ওদের পাশ কাটিয়ে বিছানায় বসে সাদি।
তনু ফ্লোরে বসে সাদির পায়ের ওপর হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। রাব্বি আর সাগর সাদির পাশে বসেছে।
” তুই কি ফাজলামো করছিস না?
বাচ্চা মেয়ে। ছি ছি ভাইয়া।
তনু মুখ গোমড়া করে বলে।
“তোরা যেমনটা ভাবছিস তেমনটা নয় রে।
সাদি বিরক্ত হয়ে বলে।
” তাহলে কেমনটা বল আমাদের?
সাগর বলে।
“যাবি তোরা এখান থেকে।
ধমক দিয়ে বলে সাদি।
সাদিকে সবাই খুব ভয় পায়। ওর ধমক খেয়ে আর কারো কিছু বলার সাহস হয় না। তবুও ওরা যায় না। চুপচাপ বসে থাকে।
এদিকে ছোঁয়া শেম্পু আনে নি।
এখন যদি চুলে শেম্পু না করে তাহলে যদি শাশুড়ী মা বলে ” বউমা শেম্পু কেনো করো নি? তুমি চৌধুরী পরিবারের বড় বউ। ব্লা ব্লা ব্লা।
কিন্তু এখন রুমে যাবে কি করে? সাদির ড্রেসিং টেবিলের ওপরে শেম্পু দেখেছে ছোঁয়া।
কাঁপা কাঁপা হাতে দরজাটা একটু ফাঁকা করে ছোঁয়া। চোখ বন্ধ করে ফেলে।
“সাদু ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে শেম্পুর বোতলটা একটু এগিয়ে দেন না প্লিজ।
সেই মুহুর্তেই সাবিনা বেগম সাদির রুমে আসে। আর ছেলেটা বউয়ের মুখে ছেলের নাম শুনে তেলে বেগুনের জ্বলে ওঠে।
সাদি নিজের নাম সাদু শুনে রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে। আর বাকিরা সুরে টেনে বলে
“সাদদদদদদদদদদদদাদদদু শেম্পুর বোতলটা এগিয়ে দেন না প্লিজ।
সাদি ওদের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই সবাই ভৌ দৌড় দেয়।
” এই ইডিয়েটটাকে আজকে আমি খুন করবো।
সাদি মনে মনে বলে।
চলবে