অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-০৩

0
669

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৩

“জান তুমি আমাকে ভালোবাসো অথচ কিস করছো এই ফালতু মেয়েকে। তোমার মনে একটুও কি বাঁধলো না? ছিঃ তাই তো বলি আমার ভালোবাসা বোধহয় ফিকে হয়ে গিয়েছে। নাহয় এই গাইয়া মেয়ের করা অপমানের শোধ নিতে তুমি।”

তাবাসসুম এর কথা শুনে আফরাজ তৎক্ষণাৎ নাজীবাকে নিজ থেকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু নাজীবাও নাছোড়বান্দা। বাঁকা হেসে ঘোমটা কিঞ্চিৎ উপরে উঠিয়ে আফরাজ এর মুখশ্রী ঘোমটার ভেতর টেনে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। আফরাজ এর শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে গেল। জীবনে প্রথম কোনো মেয়ের সঙ্গে তার ঠোঁটজোড়া মিলেছে‌ । চোখ বুজে থাকায় সে কাঁপছে। অথচ স্বামীর কাছ থেকে স্বল্প সময়ের সোহাগ পেতেই নাজীবা আহ্লাদী হয়ে উঠল। স্বামীর এর কোলের উপর আয়েশ করে বসে পড়ল। নিশ্চুপে নিজের ক্রিয়া চালিয়ে যায়। ঘোমটার অন্তরে দুজনের চুম্বন ক্রিয়া মোটেও সহ্য হলো না তাবাসসুম এর। সে ছুটে গিয়ে নাজীবাকে টেনে আফরাজ এর উপর থেকে উঠিয়ে নিল। বাক্যহীন চ’ড় লাগিয়ে দেয়। আফরাজ এরও ধ্যান ভাঙল। কিন্তু দু’রমণীর মাঝে কি বলা উচিৎ বোঝতে পারছে না। তবুও গম্ভীর ভাব নিয়ে নাজীবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“নিজের সম্মান নিজের থেকেই বাঁচিয়ে রাখতে হয়। আর যে নির্দোষ হয়েও দোষী হতে চাই তাকে বলার মত কোনো শব্দ-চরণ মুখে থাকে না।”

নাজীবা স্বামীর কথা শুনে এক সেকেন্ডও সময় নষ্ট করল না। তাবাসসুম এর মেকআপ ভরা গালে ‘ঠা’স’স’ করে চ’ড় বসিয়ে দেয়। নাজীবার চ’ড়ের আক্রমণে এতটা জোড় থাকতে পারে। তা জানাই ছিল না আফরাজ এর। তাবাসসুম এর ঠোঁট ফে’টে র’ক্ত বেরিয়ে এলো। ফকফকা সাদা টাইলার্সের উপর পড়ার কারণে তার হাতের কনুইয়ের মধ্যে ব্যথা পেল। সে ভাবতেও পারেনি মেয়েটির আক্রমণ এতটা প্রভাবিত হবে। অন্যথায় সেও চ’ড় লাগিয়েছে মেয়েটিকে ততটা প্রভাবিত হয়নি যতটা তার ক্ষেত্রে হলো। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় নাজীবার দিকে। সে এখনো ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঘোমটার আড়ালে মিটমিট করে হাসছে। মনে মনে বলে,

“হাহ্ এই নাকি আমার আফরু-র গার্লফ্রেন্ড। ওহ না গার্লফ্রেন্ড না ছাই জোরজবরদস্তি গলায় ঝুলানো ফ্রেন্ড। দেখ এবার কোন পাগলের পাল্লায় পড়লি তুই।”

মনের কথা মনে রেখে , তাবাসসুম এর স্ট্রেট করা চুলের গোড়া চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠলো নাজীবা। তাবাসসুম আর্তনাদ করে উঠে। নাজীবা তো নিজের মত বলতে লাগল।

“এই শাকচুন্নী সাদা ভূতনী কোথাকার তোর সাহস তো কম না? আমারে চ’ড় মা’রস আবার আমারেই আমার জামাইয়ের কোল থেকে উঠাস। তোর ঠ্যাং ভেঙ্গে দেব হা’রা’মজা’দী।”

কথার ছলেবলে দু’টা চ’ড় ও লাগিয়ে ফেলেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে আফরাজ দাঁতে দাঁত চেপে বসার থেকে দাঁড়িয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ নাজীবার কাছে গিয়ে তাবাসসুম কে ছাড়িয়ে সোফার উপর বসিয়ে দেয়। স্বামীকে পরনারীর প্রতি সামলানো দৃশ্য দেখে মেজাজ পুরো বিগড়ে গেল নাজীবার।
“আপনিই” বলেই চিৎকার করল। আফরাজ এর নিকট যেতেই তাকে ধমকে উঠে সে। পুরো শরীর কেঁপে উঠল নাজীবার। ভয়ে তার চোখ দিয়ে পানি বের হতে লাগল। তবুও চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইল। তাবাসসুম এই দৃশ্য দেখে মুচকি হেসে ন্যাকা কান্না শুরু করে দেয়। আফরাজ তার ভালোবাসার মানুষটিকে কাঁদতে দেখে করুন দৃষ্টিতে চেয়ে জড়িয়ে নেয়। এক স্ত্রী কখনো তার স্বামীর বক্ষে পরনারীর স্থান সহ্য করতে পারে না। নাজীবা দাঁত কিড়-মিড়িয়ে তাকিয়ে রইল। তার পাগলামীপনায় যেন দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। নিজের অজান্তেই সে আফরাজ এর টেবিলের উপর রাখা ছোট কিউব বলটি হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। চোখজোড়া মেয়েটির কপাল বরাবর স্থীর রেখেই চট করে বলটি ছু’ড়ে মা’র’ল। নিশানা একে বারে তার জায়গা মত লাগল বটে। তাবাসসুম তো এবার গলাফা’টা কান্না করছে। নাজীবা বাঁকা হেসে তাকিয়ে রইল। আফরাজ নাজীবার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে কিছু বলার পূর্বেই আকবর চলে এলো কেবিনের মধ্যে। কেবিনের টাইলার্সে র’ক্ত দেখে ঘাবড়ে গেল সে। তার চোখজোড়া তিনজন ব্যক্তির উপরতেই অবাক হয়ে গেল। কেননা আফরাজ এর প্রাক্তনের সঙ্গে তার বর্তমান বউও উপস্থিত। কিন্তু কাহিনী কি হলো বুঝতে পারছে না। আফরাজ তার বন্ধু কে বলদের মত তাকিয়ে থাকতে দেখে ডাক দেয়। আকবর এর ধ্যান ফিরে। সে তৎক্ষণাৎ আফরাজ এর নিকট গিয়ে বলে,

“এই কি হলো এখানে? তাবাসসুম এর কপাল থেকে র’ক্ত কেন পড়ছে? মনে তো হচ্ছে মেয়েটার কপাল ফা’টিয়ে দিয়েছে কেউ?”

“ওও দেবরজী এই মহৎ কর্ম আমিই করেছি।”

আকবর চট করে তাকিয়ে খুশির ঠেলায় বলে,

“মাশাআল্লাহ চমৎকার ভাবী একদম শাকচুন্নী কে কেয়ামত দেখিয়ে দিলেন।”

“আকবররর।”

ধমক দেয় আফরাজ। আকবর হকচকিয়ে বলে,

“না মানে ভাবী এটা একদম ঠিক করোনি। তোমাকে যদি পুলিশে ধরে তখন কি করবা?”

“কি করব মানে? পুলিশের বাপ-দাদার ও সাহস নেই আমাকে ধরার। ধরতে গেলেই জিজ্ঞেস করব আমার অপরাধ কি? আমি তো পরনারীর মায়া থেকে আমার জামাইকে রক্ষা করছিলাম। তাই স্বাভাবিক কপাল ফা’টাতেই পারি। ইট’স ডাজেন্ট ম্যাটার এট অল। এখন যদি আমার শ্রদ্ধীয় জামাইবাবু আমার কথামত টেবিলের কাছে এসে এই চেয়ারে না বসে তবে….।”

আফরাজ চোখ পিটপিটিয়ে বলে,

“তবে কি?”

“তবে দেবরজী আর আপনার সো কলড শাকচুন্নী মার্কা প্রেমিকের সামনে ফটাফট একশটা চুমু খাবো।”

বলেই নিজেকে লজ্জায় আবৃত করতে দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেওয়ার ভান ধরল নাজীবা। আফরাজ চোখ পাকিয়ে বলে,

“সেটআপ ডিসগাস্টিং উইমেন।”

“আইম নট সাউটিং আপ মাই মাউট ডালিং। ইউ জাস্ট কাম টু মি অর আই উইল কিস ইউ।”

বলেই হেহে করে হেসে দিল নাজীবা। আকবর মিটমিট করে হেসে বন্ধুর কাছ থেকে তার প্রাক্তনকে সরাতে বলে,

“দোস্ত শুধু শুধু কেন নিজের ইজ্জত এর ফালুদা বানাতে চাচ্ছিস? এখন যদি ভাবী তোর প্রাক্তনের সামনে চুমু খায়। তাহলে তোর প্রাক্তনের মনে ভীষণ কষ্ট লাগবে। তার উপর দেখ তাবাসসুম এর অবস্থাও বেশ নাজুক হয়ে আছে। আমি ওকে ইমাজেন্সি কেবিনে নিয়ে যাচ্ছি। তুই তোর পাগল বউটারে সামাল দেয়। নাহয় অফিসের এমপ্লয়র্স এসে আমাদের কাহিনী রটাবে।”

বন্ধুর কথায় যুক্তি পেয়ে মুখটা পাংশুটে করে তাবাসসুম কে ছেড়ে দিল। তার ইচ্ছে করছিল না ভালোবাসার মানুষটিকে ছাড়তে। কিন্তু পাগল এক মেয়ের কারণে ছাড়তে বাধ্য হলো। সাবধানে তাবাসসুম এর মাথা সোফার উপর হেলিয়ে দিয়ে আকবরকে ইশারা করে। আকবর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ভাবল।

“না-রে এই ডাইনিকে কোলে তুললে ঘরের ডাইনি আমাকে চিবিয়ে খাবে। না থাক বাবা দরকার নাই শুধু শুধু মাথার উপর আপদ ডেকে আনার।”

ঢোক গিলে ফোন বের করে , ইমাজেন্সি কেবিনের ওয়ার্ড বয়কে কল দিয়ে দুজন নার্সকে নিয়ে আসতে বলে। আফরাজ নিজের চেয়ারে বসে শব্দহীন নাজীবার পরিবেশন করা খাবারগুলো খেতে আরম্ভ করে। সে তার হৃদয়ে ঠান্ডাময় প্রশান্তি অনুভব করল। আফরাজ এর খাওয়ার দিকে একমনে তাকিয়ে থেকে ভাবতে লাগল।

“আজ থেকে আপনার সব কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য প্রস্তুত থাকব। তাই বলে জরুরি কাজে নয়। শুধু মাত্র ঐ শাকচুন্নী কে শায়েস্তা করে আপনার থেকে দূরে সরিয়ে দেব। তারপর আমি আপনার,আপনি আমার হয়ে যাবেন।”

“এ মেয়ে বক্সগুলো ভাঁজ করে নিয়ে যাও। লান্স আওয়ার শেষ।”

নাজীবা ভাবলেশনহীন আফরাজ এর নিকট এগিয়ে গেল। মেয়েটির আগানো মোটেও সুবিধাজনক লাগছে না তার। ফাঁক পেতেই তৎক্ষণাৎ কেবিন থেকে বাহিরে ছুট লাগায়। নাজীবা তার স্বামীর বাচ্চামি দেখে হেসে ফেলল। সেই কি পাগলামীপনার ডোজ দিল আজ। অথচ বাসর রাতে কিনা আমাকে রাগ দেখিয়ে ছিল হাহ্। এখন তিনি নিজেই ভেজা বিড়াল হয়ে গেল হাহা। ভেবেই খুশি খুশি অনুভব করল নাজীবা। বক্সগুলো গুছিয়ে সন্তপর্ণে বেরিয়ে যায় সে। কেননা তার না যাওয়া অব্দি আফরাজ কেবিনের মুখদর্শন করবে না ভালোই জানা আছে তার। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)

______

“হারানো মেয়েটির কোনো খবর পাওয়া গেছে ?”

“স্যার আমরা গোপনে খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ মেন্টাল হাসপাতালে মেয়েটির চেহারা অসুস্থতায় একেবারে বিকৃত হয়ে গিয়ে ছিল। সেই চেহারার সাথে এখনকার কোনো মেয়ের মিল পাওয়া অসম্ভব প্রায়।”

“তোরা আমাকে শিখাচ্ছিস? তোরা যে যার মত আড্ডাবাজি করে আমাকে উল্টা জবাব দিচ্ছিস এর প্রমাণ তোদের মাথার ডান সাইডে দেখ।”

লোকগুলো আতংকে দাঁড়িয়ে গেল। তারা আসলেই জানতো না তাদের পিছনে তাদের লিডার স্পাই লাগিয়ে রেখেছে। তিনি লোকগুলোর আতংকিত চেহারা দেখে মৃদু হেসে বলে,

“কি কেমন লাগল হে? তোরা ভাবছিস আমার একটা কাজ করেই তোরা পাড় পেয়ে যাবি? না ডা.সিফাত কে রাস্তা থেকে ছড়ানোর রেকর্ডিং আমার পকেটের মধ্যে রাখা। তাই কোনো কথা শুনতে চাই না। মেয়েটির খোঁজ লাগা। যদি আবার শুনি তোরা খোঁজে পাস-নি। তবে ফাঁ’সি’র দড়িতে ঝুলার ব্যবস্থা করিস সব’কটা। টুট টুট টুট”

ফোন কেটে লোকটি ছ্যালা দের দিক থেকে নজর সরিয়ে ফেলল। বেডসাইড টেবিল থেকে ওয়াইনের বোতলটা হাতে নেয়। ছোট গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে ঢোক ঢোক করে গিলতে লাগল। তিন-চার বার খেয়ে জোরে জোরে চিৎকার করে হারানো পাগল মেয়েটির নাম উচ্চারণ করতে লাগল। তার নেশাগ্রস্ত অবস্থা রুমের বাহিরে থেকে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে এক মহিলা। তিনি জানেন না এর শেষ পরিণতি কি হবে? কখনো কি লোকটি স্বাভাবিক হবে নাকি একই রকম থাকবে?
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মহিলাটি নার্স এর হাতে মেডিসিন এন্ড ইনজেকশন এগিয়ে দেয়। নার্সটি ভয়ে ভয়ে রুমের ভেতরে গেল। লোকটির চিৎকার থেমে যায়। শান্ত হয়ে বিছানায় বসে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে থাকে। নার্স কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে,

“স…স্যার আ আপনার মে মে ডিসিন এর টাইম হয়েছে।”

লোকটি লালাক্ত নজরে নার্সের দিকে চেয়ে মাথা নেড়ে সায় জানায়। নার্স খুব কষ্টে ভয়টা গিলে মেডিসিন এগিয়ে দিল। লোকটি মেডিসিন খেয়ে হাত এগিয়ে দেয়। নার্স জোরে এক শ্বাস ফেলে চটজলদি লোকটির হাতের কবজিতে ইনজেকশন পুশ করে কটন দিয়ে মুছে ব্যান্ডেজ করে দেয়। নার্সের কাজ শেষ হতেই একছুটে পালিয়ে যায়। মহিলাটি নার্সের পালানো দেখে বিরক্ত হলো। লোকটার চিৎকার চেঁচামেচিতে তিনি তো ভয় পেলেন না। তাহলে নার্সের কেন এত ভয়ভীতি অবস্থা যতসব! ভ্রু নেড়ে একপলক লোকটির দিকে তাকিয়ে চলে যান তিনি।

_____

তাবাসসুম ইচ্ছেকৃত আফরাজ এর গলা জড়িয়ে ধরে আছে। আফরাজ এর অস্বস্তি হতে লাগল। তবুও আলতো করে তাবাসসুম এর পিঠের উপর হাত রাখে। ভ্রু কুঁচকে সে আফরাজ এর গলা থেকে হাত সরিয়ে বলে,

“জান আজ তুমিও শেষমেশ আমাকে দূরে সরিয়ে দিলে? এতটা হেইট করতে লাগলে?
যার কারণে নিজের বউকে দিয়ে চ’ড় পর্যন্ত খাওয়ালে। আজ আমি বাবা-মা হীন মেয়ে বলেই আমার সাথে অন্যায়টা করলে তাই না? প্রথম অন্যায় না চাইতেও মেনে নিলাম। বিয়ে করলে এক গাইয়াকে । দ্বিতীয় তার জায়গায় তোমার ঠোঁটের স্পর্শ আমার পাওয়ার কথা ছিল। সে কেন পেলো বলো?”

তাবাসসুম এর প্রতিটা কথার উত্তরে নির্লিপ্ত রইল আফরাজ। কিই বা বলবে সে? সে না চাইতেও বিয়ে নামক এক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
সেখান থেকে পালাতে চাইলেও রাস্তা নেই। কেননা এই বিয়ের সাথে তার দাদির জীবন জড়িত। নিজেকে শক্ত রাখবে বলে ভেবে নিল আফরাজ। সচল দৃষ্টিতে তাবাসসুম এর চোখে চেয়ে তার হাত-জোড়া সরিয়ে নেয়। তাকে নিজ থেকে খানেক দূরে ঠেলে উঠে দাঁড়ায়।
উপদেশ বোধক গলায় বলে,

“শুনো তাবাসসুম আমাদের মধ্যে যা ছিল , তা ভুলে যাও। ভেবে নাও এক স্বপ্ন ছিল আমাদের মাঝে। যা ঘুম থেকে জাগতেই ভেঙ্গে গিয়েছে। এখন থেকে না হয় আমরা ভালো বন্ধু হয়ে রইলাম। খারাপ কি এতে? আর আমি বন্ধুত্বের মান রক্ষা করতে জানি। আশা করি , তুমি আর বিয়ের কথা টেনে আমাকে হয়রানি করবে না। আমি তোমার জন্যে গাড়ির ব্যবস্থা করে রাখছি বাহিরে। সুস্থবোধ করলে চলে যেও। বাই। টেক কেয়ার।”

ইমাজেন্সি ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে শেষ এক পলক তাবাসসুম এর দিকে তাকাল। মেয়েটির গালের তিল ভীষণ পছন্দের ছিল আফরাজ এর। ঐ ঘন কালো তিলের মোহে আটকে প্রেমে পড়ে ছিল সে। আজ সেই প্রেম কে কবর দিয়ে দিল। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তার কেবিনের দিকে পা বাড়ায়। তাবাসসুম ইচ্ছেকৃত নিজেকে করুণভাবে প্রদর্শন করেছে। যাতে সে আফরাজ কে হাতিয়ে নিতে পারে। তার যাওয়ার পরপরই তাবাসসুম এর ঠোঁটের মধ্যে কুটিল হাসি দৃশ্যমান হলো। কুটিল হেসে বলে,

“হাহাহা বোকা জান আমার। তোমাকে ফাঁসানো আমার বাঁ হাতের ব্যাপার স্যাপার। কেউ কি সাধে তার সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে ছাড়তে চাই? তুমি হলে আমার সোনার ডিম পাড়া হাঁস। তোমাকে ভাগে না নিতে পারলে আবারো সেই প’তি’তা’বৃত্তি করে ঘুরতে হবে। কখনো না তোমার বউয়ের মনে তোমার প্রতি এত বিষ ঢেলে দেব। যার কারণে সে নিজেই তোমাকে ছাড়তে বাধ্য হবে। সেখানে ও ছাড়লে আমার এন্ট্রি নেওয়া কোনো ব্যাপারই না।”

তাবাসসুম মাথা চেপে উঠে দাঁড়ায়। ল্যাংরা মার্কা হেঁটেদুলে আফরাজ এর ঠিক করা গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ল। ড্রাইভার পেশেন্ট কে বসতে দেখে দেরি করল না। গাড়ি চালানো শুরু করল। গাড়ির যাওয়ার দিকে সন্দেহাতীত দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে রইল আকবর। তার ষষ্ঠইন্দ্রিয় বলছে মেয়েটা নিশ্চয় কিছু ঘটানোর পরিকল্পনা করছে। মেয়েটির কাছে থাকলেই আকবর কেমন এক নেগেটিভ ভাইভ ফিল করে। যা অন্য কারো কাছে পায় না। ঠোঁটে হাত বুলিয়ে ভাবনার রফাদফা করে চলে যায় আফরাজ এর সাথে ডিল নিয়ে ডিসকাস করতে।
আফরাজ একগাদা ফাইল নিয়ে চেকিং দিচ্ছে। তাদের ম্যানেজার ছুটিতে থাকায় , সে নিজেই কাজগুলো সম্পন্ন করছে। কেননা তার পিএ পদে এখনো কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। একলা হাতে সবটা ফাইল শেষ করতে রাতের ১টা বাজবে বুঝতেই পেরেছে। তখনই আকবর চলে এলো। তাকে দেখতেই মুখে হাসি ফুটল তার। হাতের ইশারায় কাছে ডাকে। মুখে বলে,

“এই হলো শয়তানের তিন নাম্বার নাতি । ইয়াদ কিয়া অর তু হাজির হওগেয়া।”

“সিরিয়াসলি তুই আমাকে মনে করছিলি। সপ্তম আশ্চর্যের ব্যাপার স্যাপার।”

“তোর আশ্চর্য-রে গু’লি মা’র। এদিক এসে আমাকে হেল্প কর। এতো গুলো ফাইল কি আমি চেক করব? তুই কিসের এমপ্লয় যদি কাজই না করস শা’লা?”

ভ্রু কুঁচকে আফরাজ বলল। আকবর মুখটা গোমড়া করে বলে,

“গালিকা কু’ত্তা হুন কেয়া মেহ্?”

“তা ডিএনএ টেস্ট করার পর জানা যাবে। এখন এসব কথা রাখ। আমার কথা ভালো করে শোন। কালকে পিএ সিল্কেশন এর খবর ছড়িয়ে দিস। আর এই বিশ’টা ফাইল নেহ্। চেকিং শেষে কন্ট্রোল রুমে জমা দিয়ে দিস।”

“তোরে কি আর সাধেই জ’ল্লা’দ ডাকি? সারাদিন কাম কাম করে বউয়ের লগে একটু প্রেমপিরিতি করার সুযোগ দিস না। শা’লা সুযোগ আমারও আসবে তখন তোর রোমান্সের টাইমে চৌদ্দটা না বাজালে আমার নামও আকবর মোতাহের নয়।”

“শেষ তোর অভিযোগ দেওয়া।”

হাতে অফিসের ফাইল চেক করতে থেকে আড়চোখে বন্ধুর দিকে চেয়ে বলল আফরাজ। আকবর কে আর পায় কে তড়িঘড়ি ফাইল নিয়ে চেকিং করতে লেগে পড়ে। হুদাই সিংহের মুখে খাবার হওয়ার শখ নেই তার।
আফরাজ হেসে দেয়। আকস্মিক ফাইল চেকিং করতে গিয়ে তার হাতে অনাকাঙ্ক্ষিত এক ফাইল চলে এলো। যা অন্য ফাইলের সাথে এটার্চ করা ছিল। ফাইলের কভার সরাতে গিয়েই চমকে গেল।

চলবে……….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে