#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৮ (চমক)
“আফরাজ আমারো স্বামী। আমি তার দ্বিতীয় স্ত্রী। কানে যায় না আপনাদের? এই আমাকে সম্মানের সহিতে গ্রহণ করা আপনাদের দায়িত্ব। নাহলে আমি আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।”
নাজীবার কান ঝালাপালা করে উঠল। তার স্বামীজান এর দ্বিতীয় স্ত্রী তাবাসসুম! কথাটা যেনো সে মোটেও হজম করতে পারছে না। আফরাজ বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। আকবর, কুসুমা,জনাব ইসমাইল আর মিসেস ফেরদৌসী বিস্ময় চেহারায় আফরাজ এর দিকে তাকায়। মিসেস ফেরদৌসীর বিশ্বাস হচ্ছে না তার ছেলে কেমনে এই বে’শ্যা’ মেয়ে-কে বিয়ে করল? সকলের দৃষ্টি জোড়া দেখেও কোনো পরোয়া না করে নিজস্ব অর্ধাঙ্গিণীর দিকে তাকায়। তার চোখ-মুখে অসহায়ত্ব, বিশ্বাসের অভাব ফুটে উঠায় বুক কেঁপে উঠল আফরাজ এর। তার মন বলছে, বিবিজান তাকে অবিশ্বাস করবে না। তবুও নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত রেখে তাবাসসুম এর দিকে তাকিয়ে বলে,
“দেখো তাবাসসুম ফাজলামি করা বন্ধ করো। যেখান থেকে এসেছো সেখানেই ফিরে যাও। তোমার এখন নিজের মায়ের পাশে থাকা খুব জরুরী। শুধু শুধু আমার বিবিজান এর অনুষ্ঠানে কোনো ধরনের সিনক্রিয়েট করো না। নাহলে আমি বাধ্য হবো তোমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে। নাউ গেট আউট ফম হেয়ার।”
“না না যাবো না। আমি তোমাকে ভালোবাসি আফরাজ। এই মেয়েটা যখন থেকে তোমার জীবনে এসেছে তখন থেকেই নানান সমস্যা তোমার জীবনে। এই মেয়ে একটা আপদ বুঝতেছো না কেনো? না জানে আর কত কিছু লুকিয়ে রেখেছে শরীরের মধ্যে। এই মেয়ের কারণেই তো আমার নানাভাই আমার বাবার মৃত্যু হলো। ছিঃ বলতেও লজ্জা লাগছে মেয়েটা কিনা আমার নানাভাই কে বশ করেছিল।”
শেষের কথায় ‘ঠাসস’ করে চ’ড় বসিয়ে দেয় আফরাজ। চ’ড় এর প্রতিক্রিয়ায় টাইলার্সের উপর পড়ে যায়। আফরাজ এর রা’গে মাথা ফেটে যাচ্ছে। নাজীবা সকলের সামনে মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজকের দিনটাও কি তবে ব্যর্থতায় কাটবে? একটুখানি প্রশ্নের ঘুরপাক গেল যেনো। মিসেস ফেরদৌসী তার বউমা-র উপর বলা অপবাদ সহ্য করতে পারলেন না। রান্নাঘরে গিয়ে কালো গুঁড়ার বালি পানিতে গুলিয়ে নেন। বাটির মধ্যে ঢেলে তৎক্ষণাৎ তাবাসসুম এর কাছে চলে আসেন। কথাহীন তার মাথার উপর ঢেলে দেন। ক্ষোভে তাবাসসুম যেনো উম্মাদ হয়ে উঠল। মিসেস ফেরদৌসীর হাত থেকে বাটি নিয়ে ছুঁড়ে মা’রল। বাটি ভেঙ্গে কাঁচের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। সকলে উম্মাদী এক মেয়ের কান্ড দেখে হতভম্ব হয়ে পড়েছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তাবাসসুম সবার দিকে তাকিয়ে মুখের কালো পানি হাত দিয়ে সরিয়ে বলে,
“আফরাজ আমার স্বামী। বুঝছেন আপনারা? এতদিন আমি এই কথা বলিনি নিজের স্বার্থের জন্যে। আজ এই মুহূর্তে আমি বলছি আমি আফরাজ এর দ্বিতীয় স্ত্রী। এই কথা আপনারা মানতে না চাইলেও আমার কিছু যায় আসে না। এই বাসায় এই বাসার আঙ্গিনায় আমারও হক-ধারী আছে।”
বিরক্ত হয়ে আফরাজ তার গার্ডস কে ইশারা করল। তারা তাবাসসুম কে ধরতে নিলে সে কৌশলে গার্ডের পকেট থেকে পি’স্তল বের করে স্বয়ং আফরাজ এর দিকে ট্যাগ করে বলে,
“ভালোবাসি তোমাকে। তাই এক কথা কান দিয়ে শুনে নাও। বউ হয় তোমার। যত অন্যায় করি না কেনো? সবগুলোর ঊর্ধ্বে একটাই সত্য আমি তোমার স্ত্রী। আর তোমাকে অবশ্যই আমাকে স্বীকৃতি দিতে হবে।”
“ওও যাস্ট সেট আপ ননসেন্স। কি প্রুভ আছে আমি তোমার স্বামী? আমার যতদূর মনে পড়ছে! একসময় আমি তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও তুমি তা অস্বীকার করেছিলে। তারপর আমার বিয়ে আমার বিবিজান এর সাথে হয়ে যায়। তোমার সাথে কানেক্টেড হওয়ার কোনো রাস্তাই নেই বুঝলে? যাও দরজা ঐদিকে নিজের রাস্তা মাপো।”
তাবাসসুম পৈশাচিক ভাবে হেসে উঠল। তার একেক ব্যবহারে নাজীবার মনপ্রান্তে উথাল পাতাল ঢেউ বয়েছে। আফরাজ এর শার্টের হাতা চেপে ধরে মাথা নুইয়ে রেখেছে সে। তার মন চাইছে না পুনরায় চোখ তুলে এই ক’ল’ঙ্কীনির চেহারা দেখতে। তন্মধ্যে ক্ষোভের অগ্নিকাণ্ড তার মস্তিষ্কে দাউ দাউ করে জ্বলছে। আফরাজ আড়চোখে বিবিজানের আগলানো দেখে মনেমন প্রশান্তির হাসল। নচেৎ ভয়ে সে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারতো না। বিবিজানের বিশ্বাস আছে দেখে তার মনের সন্দেহ দূরীভূত হয়ে গেল। কর্কশ গলায় বলে,
“দেখো তোমার মুখে কালো পানি মেখে থাকার স্বত্তেও এখনো সম্মান দিয়ে কথা বলছি। নাহলে তুই-তোকারি করে ঘাড় ধাক্কিয়ে তোমার যোগ্যতা বুঝিয়ে দিতাম। সো গেট লস্ট ফম হেয়ার।”
তাবাসসুম শান্ত ভাবে তার হ্যান্ডব্যাগ থেকে কিছু পেপার্স নিয়ে নাজীবার সামনে গেলো। আফরাজ ভীরু দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। তাবাসসুম নম্র গলায় বলে,
“এই দেখো ম্যারেজ সার্টিফিকেট এ তোমার স্বামীর সিগনেচার। তিনি অস্বীকার করলেও তুমি তো এখন বুঝদার। ভালোই বুঝো কোনটা নকল , কোনটা আসল? সো ফয়সালা তোমার হাতে।” কথাটা বলে তাবাসসুম নোংরা মুখে নাজীবার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলে,
‘ভালো করে দেখেশুনে ফয়সালা নিবে। নাহয় কারো না কারো জীবন যাবে। এখন তোমার হাতে পরিবারের জীবন সঁপে দিলাম।’
কথাটুকু বলে দূরে সরে গেল তাবাসসুম। নাজীবা স্তদ্ধ দৃষ্টিতে পেপার্স ঘেঁটেঘুটে দেখল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কোনো ভাবেও দেখতে নকল মনে হচ্ছে না! ঢোক গিলে আফরাজ এর দিকে এগিয়ে দেয়। সে পেপার্স নিয়ে পুরো পেপার্স ঘেঁটে দেখে। তার সাইন এ পেপার্সে কেমনে আসল? তার মাথা হ্যাং হওয়ার মত অবস্থা। নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে আফরাজ তাবাসসুম কে তাচ্ছিল্যে করে বলে,
“তোমার কি মনে হয়? অন্যকাউকে দিয়ে আমার সাইন কপি করিয়ে ম্যারেজ সার্টিফিকেট এ লাগিয়ে দিবে আর আমরা তোমার বোকামি ধরতে পারবো না ভাবছিলে?”
কথার ইতি টেনে আফরাজ তাবাসসুমের চোখের সামনে পেপার্স ছিঁড়ে ফেলল। টুকরো করে পাশে থাকা ডাস্টবিনে ফেলে দিল। তাবাসসুম এর সামনে গিয়ে হাত ঝাড়া দিয়ে বলে,
“দেখো তোমার প্ল্যান তো ফ্লপ করে দিলাম। এখন কি করবে?”
দাঁতে দাঁত চেপে তাবাসসুম বলে,
“তোমার কি মনে আমি তোমাকে আসল পেপার্স দিয়েছি? না কখনো দেবো না। যা ছিঁড়েছো তা হচ্ছে একদমই ফটোকপি করা পেপার্স। আসল পেপার্স খুঁজে পাবে না। এত কষ্টের ফল সহজে তো নষ্ট হতে দিতে পারি না। তাইত, তোমার পিএ হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফাইল সিগনেচার করানোর নামে কৌশলে ম্যারেজ সার্টিফিকেটেও সিগনেচার করিয়ে নিলাম। তুমি আমার আইনগত স্বামী এটা মানতে বাধ্য তুমি। কিছুক্ষণ পর আমার কথা সত্য হবে। ওয়েট করুন।”
তাবাসসুম এর কথা শেষ না হতেই পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠে,
“ওয়েট করতে হবে না মিসেস তাবাসসুম। আপনার কথা সত্য।”
একজন লয়ার-কে দেখে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে সকলের নজর তার উপর গিয়ে পড়ে। লয়ারের সঙ্গে হিংস্র চাহনি নিয়ে ফাহিম মহলের ভেতর প্রবেশ করলেন হিয়া দেয়ান। চোখের দৃষ্টি পুরো মহলের দিকে বুলিয়ে নিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির খাতিরে চোখের দৃষ্টি স্বাভাবিক রেখে সামনে এগিয়ে গেলেন। লয়ার জনাব ইসমাইল এর সামনে গিয়ে বলে,
“এই পেপার্স হাজারো চেকিং করিয়েও লাভ হবে না মিস্টার ইসমাইল। কারণ আপনার ছেলেকে হতবুদ্ধির মধ্যে ফেলে এই মেয়ে সিগনেচার করিয়ে নিয়েছে। আইনত তাদের বিয়ের সময় চলছে মাত্র তিনমাস। আফরাজ ব্যাটা চাইলে ডিভোর্স এর এপ্লাই করতে পারবে। কিন্তু তা কার্যকর হবে তিন মাস পর। না চাইতেও আপনাদের থেকে তাবাসসুম কে গ্রহণ করতে হবে। উক্ত ছয়মাস পূর্ণ না হওয়া অব্দি তাকে ডিভোর্স দেওয়া সম্ভব নয়।”
জনাব ইসমাইল এই লয়ার-কে চিনেন। জানা-পরিচিত মুখ। বিধেয় অসহায় চোখে ছেলের দিকে তাকান। সকলে কথাগুলো শুনেছে। বাহিরের মানুষগুলো তো কানাঘুষা করা শুরু করে দিয়েছে। কেউ কেউ ছেলে-কে খারাপ বলছে তো কেউ কেউ নাজীবা-র চরিত্র নিয়ে কথা তুলছে। আফরাজ তাদের কথায় ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে তাবাসসুমের গলা চেপে ধরল। নাজীবা হতবাক হয়ে গেল। আফরাজ এর হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করল। কিন্তু সে যে শক্ত করে চেপে ধরেছে। ছাড়ার নাম অব্দি নিচ্ছে না। নাজীবা না পারতে জোরেসরে তাকে ধাক্কা মা’র’ল। আফরাজ ফোঁস ফোঁস করে বিবিজান এর দিকে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে রুমের দিকে চলে গেল।
তাবাসসুম কাঁশতে লাগল। নাজীবা শান্ত দৃষ্টিতে পানি এগিয়ে দেয়। সে পানি খেয়ে বলে,’ধন্যবাদ’। নিজেকে স্বাভাবিক করে পুনরায় বলে,
“ছাড়ো এসব। যাও গিয়ে আমার ভরণের জন্য ভরণঢালার ব্যবস্থা করো। আফটার অল আইম হিজ সেকেন্ড ওয়াইফ।”
“ইয়েস আপনাকে স্বাগতম জানানোর জন্য আমি আছি না!”
নাজীবার কথায় উপস্থিত সকলের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। আফরাজ রুমে পায়চারী করছিল। পুনরায় বাহিরে এসে কান্ড ঘটাতে চেয়ে বেরিয়ে এলো। কিন্তু বিবিজান এর কথা শুনে বোধশূন্য চোখে তাকিয়ে রইল। নাজীবা বাঁকা হেসে তাবাসসুমের হাত ধরে বলে,
“আপনার কোনো চিন্তে করতে হবে না। এই ঘরে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন।”
কথাটা বলে নাজীবা বাসায় উপস্থিত অতিথিগণের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আপনারা খাবার খেয়ে যেতে পারেন। যা হয়েছে ভুলে যান। কয়েকদিনের মধ্যেই সত্যের সন্ধান পাবেন। আজকের জন্য এটুকু ড্রামা যথেষ্ট।”
অতিথিগণ নিজেদের মাঝে ফসুরফাসুর করে খাবার খেতে চলে যায়। একঘণ্টা পর অতিথিগণ চলে যায়। তাবাসসুম কে হিয়া দেয়ান সুন্দর করে সাজিয়ে দেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)মিসেস ফেরদৌসী কাপড় দিয়ে চলে গিয়ে ছিলেন। নাজীবা শ্বাশুড়ির কাছে গেলে তিনি মুখ ফিরিয়ে ছেলের কাছে চলে যান। সবার গম্ভীর অভিমানি চেহারা লক্ষ করে মুচকি হাসল। কিন্তু সে যে বুদ্ধি এঁটেছে। তা সকলের ধারণাতীত। তাবাসসুম আয়নার সামনে নিজেকে পরোখ করছে। নাজীবার স্বাভাবিক আচরণ দেখে হিয়া দেয়ান এর মনে খটকা কাজ করছে। তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“এতো কষ্ট করে তোর ঐ খু’নীর বউ হওয়ার দরকার ছিল না। তাদের কেকের মধ্যেই বিষ মিশিয়ে কাজটা সম্পন্ন করে ফেলতে পারতাম। তোর জেদের কারণে এই ঘৃণ্য পরিবারের কাছে হাজির হওয়া।”
“উফ মম তাহলে কোথায় থাকতে? ঐ বস্তির জীবনে টিকে থাকতে পারতে? ঐ নোংরা পরিবেশে কয়েকদিনেই জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেল। সেখানে তুমি বলছো এতো জলদি আফরাজ কে হাতছাড়া করতে? নো নো মম। আফরাজ সোনার ডিম পাড়া হাঁস। তাকে ত্যাগ করা মানে আলিশান মহলের আরাম বিসর্জন দেওয়া। আমি চাই এই মহলে বংশোদ্ভূত করতে। ভাবো মা ছেলে জম্ম দিতে পারলে এই মহলে আমারই রাজ চলবে।”
“হাহ্ বললেই হলো ঐ কুসুমা মেয়েটা প্রেগন্যান্ট। তার উপর নাজীবার প্রেগন্যান্ট হওয়ার ক্ষমতা আছে। আমি তো বুঝতেছি না তুই আসলে চাসটা কি?”
“আহ্ মম তুমি কি আমাকে কাঁচা খেলোয়াড় ভাবো? আমি তো আর প্ল্যান ছাড়া এই গেমে নামিনি। প্ল্যান রেডি বলেই নিজের দাপট নিয়ে বলছি আমার গর্ভে আফরাজ এর পুত্র শীঘ্রই আসবে। আর দু’জন মেয়ের কাছ থেকে গর্ভবতী হওয়ার ক্ষমতা একে বারে ছিনিয়ে নেবো।”
মেয়ের কথা শুনে তিনি যুক্তিযুক্ত মনে করলেন। তিনি মুচকি হেসে বলেন,
“তুইও তোর বাপের র’ক্ত পেয়েছিস। শ’য়’তান শ’য়’তানকে ভালোই বংশপরম্পরার অস্ত্র দিয়ে থাকে বলে না? সেই অস্ত্রের মধ্যে তোকে দিয়ে গেল শ’য়’তানি বুদ্ধি। ভালোই হলো আমিও রাজি।”
“আপনারা রেডি তো?”
নাজীবার কণ্ঠে দু’জন চমকে ঘাবড়ে যায়। তাবাসসুম আমতা আমতা করে বলে,
“হ্যা আমরা রেডি!”
“কি হলো আপু আপনি এমনে তুতলাচ্ছেন কেনো? আমি কি ভুল সময়ে চলে এসেছি? আসলে তাড়াহুড়ো চলছে নিচে। তাই আপনাদের নিতে ছুটে আসলাম।”
দু’জনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় নাজীবার পাশ কেটে বেরিয়ে যায়। শ’য়’তানি হাসি দিয়ে নাজীবা বুকের উপর হাত গুঁজে মনেমন বলে,
“তোরা যদি চলিস বুদ্ধি নিয়ে তাহলে আমি চলি বুদ্ধির বাপ-মাকে নিয়ে হাহ্।”
নাজীবা এটিটিউড নিয়ে যেতে নিলে একজোড়া পুরুষেলী হাত তাকে টেনে বেডরুমে নিয়ে গেল। দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে জোরপূর্বক ওষ্ঠজোড়া মিলিয়ে দেয়। ব্যথার চটে নাজীবা গুঙ্গিয়ে উঠে। কারণ তার স্বামীজান হুট করে এসেই ক্ষোভের বশে তার ওষ্ঠের উপর ক্ষোভ ঝাড়ছে। কষ্টে ব্যথাটা হজম করতে লাগল সে। কয়েক মুহূর্ত পরে আফরাজ বিবিজান-কে ছেড়ে কোলে উঠিয়ে বিছানার উপর শুয়ে দেয়। তার শরীরের উপর নিজের ভার ছেড়ে কম্বল মোড়ে নিল আফরাজ। গম্ভীর গলায় বলে,
“আর যদি বের হয়েছো। তাহলে ঠ্যাং ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেবো।”
“আরে তা কেমনে হবে? আমি যে প্ল্যান করেছি তা না করলে আমার উত্তেজনা শেষ হবে না।”
“দেখো তোমার ফাজলামির চটে এতদিনের জমানো আদর ধরে রাখতে পারব না। আই নিড ইউ এন্ড রাইট নাও। তোমার প্ল্যান আকবর আর ভাবী মিলে করে দেবে। আর কাজিনপক্ষ ভিডিও করে রাখবে। নাও কিস মি!”
লজ্জার সহিতে নাজীবা চোখ বুজে নিলো। আফরাজ বিবিজান এর কাছ থেকে পাওনার অপেক্ষা করল না। সে নিজেই ডুবে গেল তার বিবিজান এর সঙ্গে সুখের সাগরে।
চলবে….
#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৯ (চমক-রহস্য এলার্ট পার্ট)
“জামাইজান শুনেন এখন আমরা নিচে যাবো। আপনিও কিন্তু নাটক শুরু করবেন। সতীনের চু’লাচু’লি কিরকম সেটা তাবাসসুম কে বোঝানো দরকার। ভাগ-ভাটুয়ারা করার খুব শখ তার? দেখাব কত ধানে কত চাল।”
আফরাজ রেডি হয়ে বিবিজান এর কপালে চুমু এঁকে দিল। তার গাল ধরে বলে,
“একমাত্র তোমার খুশির জন্য ঐ মেয়েটাকে সহ্য করা। নাহলে আমি যে, কি করতাম তা তোমার চেয়ে বেটার আর কেউ জানে না।”
নাজীবা হাসল। ধোঁয়া উঠা গরম কফি স্বামীর হাতে দিয়ে সেও এক মগ কফি নিয়ে বসল। আফরাজ বিবিজান এর চুলে হাত বুলাতে থেকে জানালার দিকে চেয়ে রইল। তন্মধ্যে গরম কফির স্বাদ নিচ্ছে। নাজীবা শুকনো কেশে বলে,
“আসলে তাবাসসুম আপনাকে ছলে ফেলে কাজটা করেছে। তাই আপনার মানতে হবে। নাহলে সে প্রতারণার নামে আইনত আপনার উপর কেস ঠুকে দিতে পারে। এজন্য আমি সেসময় পরিকল্পনা করলাম। যাবত কয়েকদিন ভালো ব্যবহার করব। আপনিও তালাকনামা রেডি করে ফেলবেন। আমি সুযোগ বুঝে তাকে নেশাধায়ক ওয়াইন খাওয়ে বশ করে সিগনেচার করিয়ে নেবো। ব্যস তারপর তাবাসসুম এর আর এক-মুহুর্ত ও বাসায় থাকার আর্জি আমি মানবো না। উল্টো ঘাড় ধাক্কিয়ে বের করে দেবো মা-বেটিকে।”
“হিয়া দেয়ান কি করেছে? গত রাত থেকে দেখতেছি কেমন নজরে যেনো তুমি তাবাসসুম এর মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকো।”
নাজীবা তপ্তশ্বাস ফেলে স্বামীর হাত ধরে তার শোনা সে-সময়কার পুরো কথা শেয়ার করল। শুনে আফরাজ এর চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিতে উঠলে! নাজীবা হাত চেপে রেখে আঁটকে নেয়। মৃদু গলায় আওড়ায়।
“রাগ দেখালে খেলায় আমরা হেরে যাবো। তাই সাবধানে পা ফেলতে হবে।”
“ঠিকাছে এই কাজে সহায়তা করবে নাকিব ভাই।”
নামটা নিয়ে আড়চোখে বিবিজানের দিকে তাকাল। নাজীবার ভাবাবেগ হলো না। আফরাজ ঠোঁট কামড়ে বলে,
“ওহ তোমাকে তো বলাই হলো না নাকিব ভাইয়ের কথা।”
“কে উনি?”
বিবিজান কে বুকের সাথে চেপে ধরে বলে,’এক আপন মানুষ বলতে পারো। সে কালকে আসবে তাকেও সব ঘটনা খুলে বলবে কেমন?’
নাজীবা অবাক হলেও মাথা নাড়ল। হঠাৎ জোরেসরে দরজা ধাক্কানোর শব্দে দু’জনে মুখে বিস্ময়তা ফুটে উঠল। সকাল নয়টা বাজছে। এখন কে আসতে পারে তাদের রুমে? সেই ভেবে নাজীবা স্বামীকে থামিয়ে নিজে এগিয়ে গেলো। দরজা খুলতে না খুলতেই ‘ঠাসস’ করে শব্দ হলো। হাত মুঠোবদ্ধ করে নেয় আফরাজ। চোয়াল চেপে তাবাসসুম এর দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলে,
“এসব কি ধরনের ব্যবহার তাবাসসুম?”
“দেখছো কেমনে আমার স্বামীকে নিজের বাহুডোরে চেপে রাখছে এই মা**। দরজাও বন্ধ করে রেখেছে।”
কথা না বলে আফরাজ হাত উঠাতে নেওয়ার পূর্বেই দু’দুটি চ’ড় তাবাসসুম এর গালে লাগিয়ে দেয় নাজীবা। হিংস্র চাহনি নিয়ে বলে,
“ঐ বে**শ্যা তুই আমার সংসারে এসে আগুন লাগিয়েছিস। তাও কিছু বললাম না। সেই আমি সম্মানের সহিতে দ্বিতীয় সতীন হিসেবে বরণ করলাম। সেই তোর সাহস কত বড় আমাকে চ’ড় মা’রার? তুই সতীন সতীনের মত থাকবি। তুই কেন আমার সঙ্গে পাঙ্গাবাজি করতে আসবি বল? এখন কেমন লাগছে গাল জ্বলতেছে তো। আরেকটা খাবি? নাকি এখান থেকে সোজা ড্রাইনিং এ গিয়ে আমার আর আফরাজ এর জন্য নাস্তা রেডি করবি?”
তাবাসসুম এর গাল প্রচন্ড ব্যথা করায় নীরব মাথা নাড়ল। নাজীবা তার বাহু শক্ত করে ধরে দরজার বাহিরে ঠেলে জোরে দরজা বন্ধ করে দেয়। তাবাসসুম গালে হাত রেখে মনেমন গালি ছুঁড়ল। নাজীবার সামনে তার কথা শোনতে সে বাধ্য। কেননা আফরাজ স্বামী হলেও তাকে গ্রহণ করবে না বরং নাজীবার সঙ্গপাতিত করবে। সেই কারণবশত না চাইতেও বাধ্য হয়ে তাবাসসুম নাস্তা রেডি করতে গেল। আফরাজ রাগী দৃষ্টিতে নাজীবার দিকে তাকিয়ে বলে,
“চ’ড় দিয়েছো ঠিকই। কিন্তু আমার শাস্তি আমি নিজেই দেবো।”
কথাটুকুর অর্থ বুঝতে মোটেও কষ্ট হলো না নাজীবা-র। মুচকি হেসে রাগী স্বামীর পিছু পিছু গেল। ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে একে একে সবাই বসে পড়ল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তাবাসসুম ন্যাকা সেজে পরিবেশনের দায়িত্ব নেয়। মিসেস ফেরদৌসী হাত উঁচিয়ে ‘লাগবে না’ বোঝায়। তাবাসসুম থেমে যায়। আকবর আর কুসুমার দিকে এগিয়ে দিতে নিলেও, কুসুমা গম্ভীরতা বজায় রেখে নিজ হাতে নাস্তা বাড়ল তাদের দু’জন এর জন্য। তাবাসসুম উপায়ন্তর না পেয়ে জোরপূর্বক হেসে নিজের মা অর্থাৎ হিয়া দেয়ান পাশে এসে বসল। আফরাজ ডাইনিং-রুমের এসে সামনে দাঁড়িয়ে যায়। স্বামীর দাঁড়ানো দেখে নাজীবাও থমকে দাঁড়ায়। প্রশ্নাতীত নজরে তাকিয়ে ‘কি’ বোঝায়? সে দুষ্টুমি চেহারা করে বলে,
“তুমিও যদি নাটকের মজা নাও আমারও তো কিছুটা বেনিফিট থাকা দরকার রাইট?”
ফ্যালফ্যাল করে চোখ পিটপিটিয়ে কথার অর্থ বোঝার চেষ্টা করল নাজীবা। পরক্ষণে বুঝতে পেরে তেতে উঠল। স্বামীর হাতা চেপে ধরে বলে,
“বেশি না বেনিফিট থাকার প্রয়োজন নেই। নাহলে আপনার হাড়মাংস চিবিয়ে খাবো মনে রাখিয়েন।”
কথাটুকু বলে পরিপাটি হয়ে গলা ঝাড়ল। সকলের নজর কাপলের দিকে গেলো। আফরাজ মুচকি হেসে টেবিলের কাছে এসে প্রথমে নাজীবা-কে বসালো। তাবাসসুম ভেতরে অসহায়ত্ব বোধ করছে। সেও তো তার স্ত্রী। ছলে হলেও কোনো না কোনো একসময় আফরাজ কে ভালোবেসে ছিল সে। তবে কেনো এই অবহেলা, তিরস্কার? ঢোক গিলে নিজেকে শক্ত রাখল। আমতা আমতা করে বলে,
“আমারও প্লেট খালি। কেউ যদি আমাকে নাস্তা বেড়ে খাওয়ে দিতো।”
নাজীবা চোখ ছোট ছোট করে স্বামীর দিকে একপলক তাকাল। পরেই হিংস্র চাহনী নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। ধুপধাপ পা ফেলে তাবাসসুম এর নিকটে গিয়ে দাঁড়ায়। নাজীবার আকস্মিক কাছে আসাটা ভড়কে দিল তাকে। তোতলামি করে বলে,
“ক ককি হলো উঠে এলে কেনো? তোমাকে বলেছি নাকি আসতে?”
“না আপু আপনি আমাকে না বললেও ইঙ্গিত জামাইকেই করছিলে। আসলে আমার জামাই একনারীতে আসক্ত পুরুষ। এখন পরনারীর স্বেচ্ছায় ডাক দেওয়াটা তিনি নিতে পারেননা। বরং ক্ষেপে সিংহ হয়ে যায়। তাই আমিই এলাম আপনার পেটে খাবার টুসতে।”
কথার প্রেক্ষিতে কাজও আরম্ভ করে দেয়। এক টুকরো বড় পরোটার পিচে সুজি মেখে তাবাসসুম এর মুখে চেপে ধরে। হিয়া দেয়ান অবাক। তিনি নাজীবার হাত সরাতে বলে উঠেন,
“এই মেয়ে কি করছো? আমার মেয়ে গিলতে পারছে না। হাত ছাড়ো আমার। পানি খাওয়াতে দাও। নাজীবা প্লিজ ছাড়ো দেখো এতটা নিষ্ঠুর তুমি হতে পারো না। নাহলে কিন্তু….।”
“কিন্তু ফ্যাডের ফ্যাডের আরকি? রাইট! আই ডোন্ট কেয়ার হাহ্।”
চুলগুচ্ছ নেড়ে ভাব নিয়ে স্বামীর পাশে গিয়ে বসে পড়ল। আফরাজ নাটকের মজা নিয়ে বিবিজানের মুখে ছোট পিচ পরোটার মধ্যে ডাল নিয়ে খাওয়ে দেয়। নাজীবাও তার পক্ষ থেকে খাওয়ে দিতে থাকে। বাকিরা মিটমিটিয়ে হাসল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
তাবাসসুম কোনোমতে পানি খেয়ে হাঁপাতে লাগল। আজ তো নাহয় গলা আটকে মা’রা যেতো। হাত মুঠোবদ্ধ করে নাস্তা খাওয়ায় মন দেয়।
একঘণ্টার মধ্যে সবার খাওয়া হয়ে গেলে কাজের মহিলা চায়ের মগ এগিয়ে দেয়। আফরাজ আর আকবর খেলো না। তাদের অফিসের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে। নাজীবাও হ্যান্ডব্যাগ হাতে নিয়ে আফরাজ এর সঙ্গে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে। তাবাসসুম পরিপাটি হয়ে বের হতে গেলে কোথার থেকে ময়লার পানি এসে তার মাথার উপরে পড়ে যায়। নাজীবা মুখ টেপে হাসল। এ কাজ তার পরিকল্পনার অংশ ছিল। আফরাজ বোকা নজরে বিবিজান এর হাসিমাখা মুখ দেখে তৃপ্তি পেলো। কটমটে তাবাসসুম নাজীবার দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ধুপধাপ পা ফেলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। নাজীবা বাঁকা হেসে মনেমন বলে,’আভি তো ব্যস শুরুওয়াত হেয়। আগে আগে দেখো হতা হে কেয়া?’
আফরাজ গাড়ির ইঞ্জিন চালু করে রাস্তার দিকে ঘুরিয়ে নেয়। নাজীবা-কে ভার্সিটিতে ছেড়ে সে অফিসের দিকে যাবে।
____
তাবাসসুম শীতের কটি পড়ে ক্লাস রুমের দিকে এগোচ্ছে। তার ঠোঁটের কোণায় পৈশাচিক হাসি জুড়ে আছে। আফরাজ যত কিছুই করুক না কেনো! ভার্সিটির টিচার হওয়ার সুবিধার্থে তাবাসসুম ইচ্ছেকৃত নাজীবা-কে বুলিং করতে পারবে। তবে খুব সাবধানে। নাজীবা তার ক্লাসে বসে তার বান্ধবী মারজান,ফাবিহার সঙ্গে প্রশ্ন এর মধ্যে কেমন প্রশ্ন আসতে পারে তা নিয়ে আলাপ করছিল। নাজীবা ক্লাসে কম কথা বলে। কিন্তু ফ্রেন্ডদের সাথে মিশুক প্রকৃতির। নিলয়ও আফরাজ এর কথামত সর্বদা তাদের সঙ্গে থাকে। চারজনই সামনের দ্বিতীয় বেঞ্চে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তখনও ক্লাসে কোনো টিচার্স আসেনি। তাদের প্রথম সেমিস্টারের ফাইনাল টার্ম পরীক্ষা স্টার্ট হবে। গতমাসে তাদের লাগাতার ক্লাসের প্যারার সমাপ্তি ঘটে ছিল। নতুন মাসে এই তাদের প্রথম সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিধেয় তাদের মন উত্তেজিত। রুমে তখন কটি পরিহিত ম্যাডামকে প্রবেশ করতে দেখে যে যার সিটে গিয়ে বসে। নাজীবাও তখন তাকাল। তার চোখজোড়া হতবাক। তাবাসসুম ক্ষিপ্ত নজরে নাজীবা-র দিকে চেয়ে আছে। তবুও এতে কোনোরুপ ভয় পেলো না সে। কারণ তার নিজের উপর কনফিডেন্স আছে। তাবাসসুম সবাইকে খাতা বিলিয়ে পনেরো মিনিট সময় দিল। এতে সকলে খাতা মার্জিনে মন দেয়। হাতের ঘড়ি দেখে প্রশ্ন একসাথে করে বিলিয়ে দিতে লাগল। নাজীবার কাছে গিয়ে ইচ্ছেকৃত প্রশ্নটি নিচে ফেলে দিল। নাজীবা-কে ছাত্রীর চোখে দেখছে এমনটা ভাব নিয়ে ‘সরি’ বলল। সে তাবাসসুম এর কাণ্ড সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করতে পারছে। এমুহুর্তে লেখায় মন দিতে সে নিজেই প্রশ্নটি তুলে লেখা আরম্ভ করে।
পরীক্ষার সময় তিনঘণ্টা….
তাবাসসুম এর সঙ্গ দিতে একজন টিচার কলিগ এলেন। বয়স্ক বটে। তিনি হাসিমুখে কথা বলছেন। তাবাসসুম এর চোখ বয়স্ক লোকটির দিকে থাকলেও তার মন কেমনে নাজীবা-কে হারাবে সে পরিকল্পনায় ব্যস্ত। আকস্মিক তার নাম ডেকে উঠায় তাবাসসুম চোখের দৃষ্টি সেদিকে নেয়। দপ্তরি এসে তাদের ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান ডাকছে বলল। তাবাসসুম কলিগকে পাহারা দিতে বলে চেয়ারম্যানের রুমের দিকে পা বাড়াল। চেয়ারম্যান এর রুমটি কিছুটা গলির মুখে চাপা। তাই ভেতরে কি হচ্ছে না হচ্ছে সে সম্পর্কে কেউ অবগত হতে পারে না। তার প্রয়োজন মনে হলে তিনি নিজে কল করে ডাকেন। যেমনটা তাবাসসুম কে ডেকেছেন।জানালার ধারে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকচ্ছিলেন চেয়ারম্যান সাহেব। তাবাসসুম এসেই দরজা ভালো করে লাগিয়ে দিল। চেয়ারম্যানের পাশে গিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়ে যায়। পর্দা টেনে বলে,
“বুড়োর কি ভীমরতি জাগলো নাকি? গত পরশুর মজা কি শরীরের থেকে সরেনি মিস্টার মোস্তাক মিয়া? বাসায় সুন্দরী বউ-বাচ্চা রেখে খুব তো বাহিরে ফুল শুঁকে বেড়াও। কখনো যদি জানিয়ে দেয় তখন কি করবে?”
মিস্টার মোস্তাক তাবাসসুম এর কটির বুকের উপর থাকা বোতাম খুলে ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দেয়। বাঁকা হেসে বলেন,
“বয়স যতই হয়ে যাক না কেনো? ফুল তো ফুলই এখন তা খারাপ হোক বা ভালো। শুঁকতেই মজা। তোমার কি মনে হয় তুমি প্রমাণ দেখিয়ে ব’দ’মান করতে চাইলে আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো? কখনো না। আমার কাছে ভিডিও আছে আমাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের জানে’মান।”
তাবাসসুম ঘাবড়ালেও বহিঃপ্রকাশ করল না। ইচ্ছেকৃত চেয়ারম্যানের হাত ভেতরে চেপে ধরে বলে,
“দেখো তোমার যা চাই দেবো। আমি শুধু আমার প্রতিশোধ পূর্ণ করতে চাইছি। নাজীবা-কে ব’দ’মান করে এই ভার্সিটি থেকে আর আফরাজ এর লাইফ থেকে বের করতে না পারলে শান্তিতে বাঁচব না। নাজীবার মরণ না দেখে নিজেও মরব না। তাইত তোমার কাছে হেল্প চেয়ে ছিলাম। কেননা তুমিই সেই ক্লাইন্ট যার সাথে ফাস্ট টাইম আমি ফিজিক্যালি এটার্চ হয়ে প্রেগন্যান্ট হয়ে ছিলাম। পরবর্তীতে এবরশন করে ফেলি। তুমিই তো আমাকে আফরাজ এর বউ হওয়ার সত্যতা প্রমাণে হেল্প করলে। লয়ার দিয়ে আমার ম্যারেজ সার্টিফিকেট এর সত্যতা যাচাই করে আমার মায়ের সাথে ফাহিম মহলে পাঠিয়ে দিলে। আমার প্রতিশোধের আগুনে তাদের পুড়িয়ে না মা’রলে আমার অন্তআত্মা প্রতিনিয়ত খোঁচাবে আমায়। কিন্তু একটা কথা এখনো আমাকে কনফিউজড করে দেয়। তুমি কেন আফরাজ এর প্রফেশনাল লাইফ ডুবাতে চাইছো? কি এমন রিজন?”
দরজা বন্ধরত অবস্থায় এতক্ষণ তাবাসসুমের একেক কথা মন দিয়ে শোনছিলেন তিনি। তন্মধ্যে মেয়েটার শরীরে গোপন অঙ্গে হাত বোলাতে থেকে বলেন,
“হাহ্ আমার শোধ আফরাজ না বরং তার বাবার সঙ্গে। ইসমাইল ফাহিম শহরের জানা পরিচিত বিরাট ব্যবসায়ী। যার কারণে আমার প্রেমিকা একসময় আমাকেই পলাশপুর শহরে ধ’র্ষ’কে’র তকমা লাগিয়ে ছিল। আমি তো প্রচন্ড ভালোবাসতাম থাকে। কিন্তু সে আমাতে নয় ইসমাইলের প্রেমে মগ্ন ছিল। ইসমাইল তো এসবের ব্যাপারে জানতো অব্দি না। সে তো ক্লাসের ছাত্র হিসেবে ভালো সুনাম অর্জন করে ছিল। আমার প্রেমিকা আমারই সামনে ইসমাইলের জন্য উম্মাদনা প্রকাশ করতো। মন চাইতো দু’জন কেই খু’ন করে দেয়। কিন্তু ভালোবাসার খেতাবে হাত ফিরিয়ে নিতাম। একসময় খেয়াল করলাম আমার প্রেমিকা ধীরে ধীরে আমার দিকে ঘুরছিল। আমাতে উম্মাদ হচ্ছিল। সেই সুযোগে পাঁচ-ছয়েক বার ই’ন্টি’মেন্ট ও হয়েছিলাম। তারপর হঠাৎ সব পাল্টে গেল সে স্বেচ্ছায় ইসমাইল কে গিয়ে আমার নামে মিথ্যা মামলা দেয়। আমি তাকে ধ’র্ষ’ণ করেছি আর আমার কারণে সে প্রেগন্যান্ট। আমার মাথা হ্যাং হয়ে যায়। তাকে বাসায় এনে মা’রধর করে জিজ্ঞেস করে ছিলাম। জানো কি বলে ছিল? সে বলে ছিল ইসমাইল তার অসহায় অবস্থা দেখে হলেও তাকে গ্রহণ করবে। ব্যস আমার মাথায় খু’নের নে’শা ধরে গেলো। তৎক্ষণাৎ তার সঙ্গে পৈশাচিকভাবে মিলিত হয়ে তার শরীরকে নিস্তেজ করে দিলাম। দম আঁটকে যাচ্ছিল সে শহরে। তাই কোনোমতে প্রেমিকার ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে এই শহরে চলে এলাম। এখানে এসে যেদিন আফরাজ এর উন্নতির খবর টেলিকাস্টে দেখলাম। সেদিন আমার পুরোনো শোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। আমিই প্রিন্সিপাল কে বলে ছিলাম নাজীবা-কে আফরাজ এর কথামত ভর্তি করিয়ে নিতে। পুরো ভার্সিটির সবাই তাকে রেসপেক্ট করলেও তুমি তাকে বুলিং করবে তা আমি নিশ্চিত। সেই সুযোগ আমি করে দেবো। কিন্তু তোমার কাজ হলো আমার হাতে মিসেস ফেরদৌসী-কে শপে দেওয়া। আমার প্রেমিকার ভুলের শোধের পেছনে ইসমাইল দায়ী। তার কষ্টের ভাগীদার হবে তারই স্ত্রী।”
কথার ইতি টেনে রুম কাঁপিয়ে পৈশাচিক হাসি দিলেন তিনি। তাবাসসুম কে সোফার উপর ফেলে রুমের বাতি নিভিয়ে দিলেন। মোস্তাক মিয়ার কথায় তাবাসসুম আঁচ করতে পেরেছে লোকটা একপ্রকারে সা’ই’কো। সে নিজেই দোষ করেছে অথচ দোষের সাব্যস্ত করছে তার শ্বশুর কে। নট ব্যড অলসো! মনেমন কথা ভেবে তাবাসসুম কামুক হাসি দিয়ে তার শরীরের উপর টেনে নেয় চেয়ারম্যান কে। তিনি ইচ্ছেকৃত তার রুমে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগাননি। এই ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান পদ তার বাবার খেতাবে পেয়েছিলেন তিনি। তাই তার রাজত্ব তো থাকবেই বটে।
চলবে……