#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৬ (শাস্তি)
দাহাব এহসান এর হাতের মধ্যে ফোস্কা পড়ে গিয়েছে। চোখের অক্ষিপল্লব ছিঁলে দেওয়া হয়েছে। ঘুমের জন্য ছটফটানি হচ্ছে তার শরীরে। কিন্তু কেউ নেই তাকে মুক্তি দেওয়ার। আকস্মিক খেয়াল করে দেখল ফোস্কা পড়া হাতের উপর বিষধর সাপ উঠে এসেছে। সে আশপাশ চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগল কেউ আছে কিনা! বাহিরে থাকা বাতির কারণে রুমটা-র মধ্যে ঝাপসা আলো আসছে। সাপটি দাহাব এর পুরো হাতকে পেঁচিয়ে ফেলে। যার কারণে আতংকে চিৎকার করতে লাগলেন। কিন্তু কেউ চিৎকার শোনার মত নেই। অপরদিকে, অন্ধকার রুমের বাহির থেকে নাদিম পৈশাচিক দৃষ্টিতে দাহাবের মত ন’র’পশুর মৃত্যু উপভোগ করছে। খেলাটা তখনও শেষ হলে পারতো কিন্তু আফরাজ তার বিবিজান-এর উপর হওয়া নির্যাতনের শোধ তোলবে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)যার কারণে নাদিম সঙ্গে সঙ্গে মে’রে ফেলল না। অন্তিম পরিক্রমা আফরাজ এর হাতে রেখে দিলো। নাদিম হাতঘড়ি চেক করল। ফজরের সময় হচ্ছে। গার্ডসের দিকে তাকিয়ে বলে,
“শোন সবাই ঐ কু’ত্তার দিকে নজর রাখবি। ভুলেও যাতে না মরে। ভেতরে গিয়ে পানি খাওয়ে চলে আসবি। খাবারের দানাও যেনো তার পেটে না যায়।”
গার্ডস একসাথে ‘ইয়েস বস’ বলে গার্ন নিয়ে পাহারা দেওয়া আরম্ভ করে। নাদিম তার গার্ডস এর দিকে আড়পল্লক চেয়ে চলে গেল।
___
আকস্মিক চোখের উপর বিন্দু বিন্দু পানির পড়ায় ঘুম উবে গেল আফরাজ এর। সূর্যের কারণে সদ্য গোসল সেরে আসা রমণীকে দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল তার। নেশাগ্রস্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। নাজীবা গুনগুন করে চুল মুছে চেয়ারে বসল। ড্রেসিং-টেবিলের পাশ থেকে হেয়ার ড্রায়ার নিয়ে চুল শোকা-তে লাগল। আফরাজ বুকের উপর হাত ভাঁজ করে চেয়ে রইল তার অর্ধাঙ্গিণী-র দিকে। তখনও স্বামীকে খেয়াল করেনি নাজীবা। হিতে শাড়ির আঁচল ভাঁজ করার জন্য সেফটিপিন খুলে নেয়। এতে তার আঁচল বুক থেকে সরে ফ্লোরের উপর গড়িয়ে পড়ে। ঢোক গিলে নাজীবা চোরা-চোখে বিছানার দিকে তাকায়। ওমাহ্? বান্দা তো কবেই উঠে পড়েছে আর কেমনে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। ভেবেই লজ্জায় বুকের উপর তোয়ালে চেপে ধরে। উম্মাদী দৃষ্টিতে বিবিজান-কে দেখতে থেকে পরণে শর্ট ট্রাউজার আর ঢিলাঢালা শার্ট পরে নেয় আফরাজ। সন্তপর্ণে বিবিজান এর নিকটে গিয়ে দাঁড়ায়। নাজীবা চোখের পলক অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। বিবিজান এর ফর্সা পিঠে পানির বিন্দুকণা দেখে মুখ ঝুঁকে আনল। ওষ্ঠদ্বয় কাছে নিয়ে গেল। লেহন করে পানি-গুলো চু’ষে নেয়। শিহরণে নাজীবা বসে থাকতে পারল না। চট করে দাঁড়িয়ে আঁচলটা বুকে জড়িয়ে নেয়। আফরাজ দেখে হা হয়ে গেল। বিরক্তির গলায় আওড়ায়।
“নেশা দেখিয়ে পালিয়ে যাচ্ছো কেন বিবিজান হুম? একে তো রাতে ঘুমাতে দাওনি। তার উপর সকাল সকাল চুলের পানি ছিটকে ঘুম ভেঙ্গে দিলে। এসবের শোধ তুলব। কাছে আসো।”
“এই একদম কথা উল্টা পাল্টা বলবেন না। আমি কবে আপনাকে ঘুমাতে দিলাম না হুম? আপনি নিজে করে এখন সব আমার উপরে দোষ চাপাচ্ছেন। বলি এত রোমান্স আসছে কোথার থেকে হুম?”
“প্রেমিক পুরুষের মন তার স্ত্রীর জন্য খোলা বইয়ের মত। অবশ্য তুমি যদি এভাবে আঁচল ফেলে সিডিউস করার চেষ্টা করো তাহলে আমি পাগল হবোই তাই না? আর বলি কি শোনো! আমি তোমার জামাই এসব থার্ড ক্লাস কাজ না করে ডাইরেক্ট এসে বলবে জামাই আমার আদর লাগবে। আইম অলওয়েজ রেডি টু মেইক ইউ এ হেপি ওয়াইফ। জামাইকে সিডিউস না করে কোলের উপর এসে বসে যাবা। বাকি কাজ আমার ডোন্ট ওয়ারি মাই গার্ল।”
বেশরমের মত স্বামীকে বকতে দেখে নাজীবা নীরবতা পালন করতে লাগল। সেই বা কি বলবে তার জামাই যে যে কথা বলেছে মনে তো হয় না সে তাকে রেহাই দিবে। বুদ্ধি এঁটে আফরাজ এর নিকটে গেল। তার হাতে পিন দিয়ে বলে,
“আমার আঁচলে পিন লাগিয়ে দিন। তাহলেই আমি আপনাকে মনিং কিস দেবো।”
আফরাজ খুশিতে আপ্লুত হলো। পিন করে দিয়ে ‘হয়ছে’ বলে। পরক্ষণে কাজল হাতে ধরিয়ে বলে,
“এবার কাজল লাগিয়ে দিন তো।”
বিবিজান এর কথামত সে চুমু খাওয়ার লোভে একের পর এক সাজ সাজিয়ে দেয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)আয়নায় নাজীবা নিজেকে দেখে ব্লাশিং হলো। আফরাজ এর দিকে তাকিয়ে বলে,
“এই জামাই যাও এবার ফ্রেশ হয়ে সোজা নাস্তার টেবিলে চলে আসুন।”
সে মাথা নেড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। আয়নায় নিজেকে দেখে বোকার মত বলে,
“কি রে বিবিজান আবারো আমাকে বকা বানালো? মন তো চাইছে কোলে নিয়ে আছাড় দেওয়ার। আমারে দিয়ে নিজের সাজ পূরণ করলো অথচ আমাকেই বকশিশ দিলো না। অন্যায় হলো-রে। বকশিশ তো নেবোই।”
নিজেরমত বকতে থেকে গোসল সেরে বের হলো আফরাজ। শীতে কাঁপতে থেকে চুল শুকিয়ে নেয়। বিছানার উপর কাপড় রেডি করা দেখে খোশমনে কাপড় পরে নিল। রেডি হয়ে রুম থেকে বের হলো। সামনে আকবর-কে গোমড়ামুখো দেখে তার কাছে গেলো। বন্ধু-কে দেখে আকবর অসহায়ের সহিতে বলে,
“বন্ধু ও বন্ধু তুই অপরাধী-রে। আমার কষ্টে ভরা ভালোবাসা দেহ্ ফিরাইয়া দেহ্। আমাকে তুই বন্ধুর লিস্ট থেকে বাতিল করে দিলি। মনে থাকবে। আজকাল খুব ঐ নাদিম্মার সঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষি চলছে কি হুম? আমাকে কি বন্ধু মনে হয় না? ঐ ব্যাটার লগে তোর এতো কি হুম? যেমনে ইগনোর মা’রতেছিস, মনে হয় না আর আমার লগে চলাফেরা করবি। এখন তো বড়লোক্সী বন্ধু পাইলা আমি আর কি করুম এইহানে? আজই চলে যাবো।”
মুখ ভেটকিয়ে আফরাজ এর পাশ কেটে চলে গেল। সে হাসল তার বন্ধুর জেলাসি দেখে। কিন্তু কোথাও না কোথাও তার মনে একটা প্রশ্নের উঁকি দেয়। নাজীবার ছোটবেলায় কি কোনোরূপ বান্ধবী ছিল না? ভার্সিটি-তেও কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখলাম না। ব্যাপার কি? আফরাজ সময় ব্যয় না করে নাস্তার টেবিলে চলে আসল। নাজীবা সবাই-কে নাস্তা পরিবেশন করছে। দাদি শ্বাশুড়ি-র চেয়ার খালি দেখে ভ্রু কুঁচকে স্বামীর দিকে তাকায়। স্বামীর প্লেটে পরোটা,সবজি ভাজি দিয়ে আমতা আমতা করে বলে,
“আমি কি দাদি-কে নিয়ে আসতে পারব? না মানে সবাই খেতে শুরু করেছে আমি নাহয় দাদিকে নিয়ে আসি। ঐদিনের পর থেকে আর কথা বা দেখাও হলো না। খুব মনে পড়ছে আমি কি যেতে পারি?”
নাজীবা নম্রতার সহিতে কথাগুলো বললেও চেয়ারে বসা সদস্যদের মধ্যে অন্যরকম প্রতিক্রিয়া দেখা গেল। আকবর আর কুসুমা নড়েচড়ে বসল। মিসেস ফেরদৌসী করুণ দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকান। মেয়েটা অসময়ে কথাগুলো বলেছে। না জানে তিনি কিরূপ আচরণ করে উঠেন? ঢোক গিলে স্বামীর জ্যাকেটের হাতা চেপে ধরলেন মিসেস ফেরদৌসী। জনাব ইসমাইল মুচকি হাসলেন। স্ত্রীর দিকে নম্রতা দেখিয়ে বউমা-কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“বউমা সেই কষ্ট আর করতে না দেওয়ার জন্যেই তোমার দাদি শ্বাশুড়ি পৃথিবী ত্যাগ করেছেন। হয়ত তিনি জানতেন তাঁর শরীর নানান ব্যাধিক্রমায় নেতিয়ে পড়বে। তাইত কিছুটি না বলে চলে গেলেন আম্মা। তুমি বসো না বউমা। আফরাজ এটা কেমন ব্যবহার? বউমা কে সামলাও।”
স্তদ্ধ দৃষ্টিতে শ্বশুরের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে স্বামীর দিকে তাকাল নাজীবা। মুখ খুলতে নিলে আফরাজ চট করে বিবিজান-কে টেনে বসিয়ে দেয়। মুখে এক টুকরো পরোটা চুবিয়ে দেয়। নাজীবা পরিবেশের শান্ততার জন্য নীরবে খেতে লাগল। আফরাজ নিজেও খেয়ে নেয়। কেননা বিবিজান-কে রুমের মধ্যে নিয়ে স্বাভাবিক করতে হবে। নাহয় সে নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করবে। শেষ টুকরো খাওয়াতে নিলে নাজীবা খেতে অস্বীকৃতি দিল। বসা থেকে উঠে রান্নাঘরে চলে যায়। সবাই এখন চা খেতে চাইবে। সেই বাহানায় রান্নাঘরে গিয়ে মুখ চেপে কাঁদতে লাগল। তার কারণে দাদি-কে জীবন দিতে হলো। বুঝতে পেরেছে এই কাজটা দাহাব এহসান এর ছিল। তৎক্ষণাৎ তার মনে এক প্রশ্নের হাতছানি দেয়। চায়ের কেটলি নামিয়ে মগে চিনি-দুধ মিশিয়ে ভাবনায় পড়ে গেল। আনমনে বলে উঠে,
“সে রাতে কি হয়ে ছিল? আমিও বা কেমনে আফরাজ এর কাছে এলাম? আফরাজকেও তো স্বাভাবিক দেখে অবাক হচ্ছি। আল্লাহ জানেন এ পরিবারের সঙ্গে কতকিছু হয়ে গেল। আর সবার মূল্যে আমি দোষী। আমি যদি আফরাজ এর জীবনে না থাকতাম, তবে হয়ত আফরাজ তার দাদির আদরের সোহাগ নিতে পারতো।”
হঠাৎ গরম কিছুর স্পর্শে মৃদু চিৎকার করে উঠল নাজীবা। ধ্যান ভেঙ্গে মগের দিকে খেয়াল করে দেখল, গরম চায়ের পানি তার হাতে ছিটকে পড়েছে। কিন্তু তার হাতের চেয়ে অন্য কারো হাতের উপর মাত্রাতিরিক্ত পড়েছে। হাতের মালিককে দেখে চমকে গেল। আফরাজ হাস্যজ্জ্বল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষটা কি পাগল নাকি ভেবে পেল না নাজীবা। তড়িঘড়ি কেটলি রেখে স্বামীর হাত বেসিনের সামনে এনে কল ছেড়ে দিল। ঠান্ডা পানির স্পর্শে আফরাজ এর হাতের লালাচে ভাব কিছুটা কমেছে। রাগান্বিত নজরে তার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আপনার কি আক্কেল জ্ঞান নেই? এত গরম পানির নিচে নিজের হাত কেনো রাখছেন হুম? আমার হুঁশ না আসলে তো আপনার হাতের চামড়াও ছিঁলে যেতো।”
“বিবিজান তখন ভাবনায় মগ্ন নিজেও ভাবলাম আক্কেলজ্ঞান কে গু’লিবিদ্ধ করে হাতটা এগিয়ে রাখি। দেখা যাক কতটা পানি গরম হলো? যদি কম গরম হতো তখন তোমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি-র বকা খেতে হতো। তার চেয়ে বরং আমি আমার বিবিজান-কে বাঁচিয়ে নিলাম। এত সুন্দরী বিবিজান থাকলে এই এক সমস্যা স্বামীর মন অন্যদিকে যেতেই পারে না। এই মেয়ে এই গরম লালাচে জায়গায় একটু চুমু এঁকে দাও না। দেখবে ফুঁস করে ব্যথা উবে গেলো।”
আফরাজ এর কথা শুনে মুচকি হেসে ওষ্ঠদ্বয় তার হাতে ছুঁয়ে দেয়। কারো কাশির শব্দে দু’জন আলাদা সরে গেলো। কুসুমা ভাবী-কে দেখে চোখজোড়া বড় হয়ে গেল তাদের। সে হেসে বলে,
“বলছিলাম কি আপনাদের রোমান্সের ঠেলায় চা খাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে।”
“আ আ ভাবী আমি আনছি তুমি যাও বসো গিয়ে। এই শরীরে হাঁটাচলা সাবধানে করতে হবে।”
“হুম হুম শেষ কথাটা তুমিও মেনে চলবা বুঝলে?”
মিটমিটে হাসল কুসুমা। আফরাজ মাথা চুলকে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যায়। নাজীবা লজ্জায় না পারতে জলদি চা বানিয়ে পুনরায় গরম করে টেবিলের কাছে নিয়ে এলো। কুসুমার এ অবস্থায় চা খেতে মন চাইছে না বলে রুমে বিশ্রাম করতে গেল।
____
“কি গো দাদাজান? কেমন অনুভূতি হচ্ছে আপনার? ফিলিং নাইচ রাইট? আই নো আমার মতো শত্রু আপনি হাজারের মধ্যে খুঁজলেও পাবেন না। সাপটা আপনার আদর যত্ন করছে তো? একমিনিট কিছু খাননাই? ইশ আপনার তো পেটে র’ক্ত ছাড়া আর কিছু যায় না মনে হয় রাইট?”
আফরাজ অফিসের নাম করে আকবর কে নিয়ে দাহাবের সেই গুলিস্তানে চলে আসে। যেখানে তার বিবিজান-কে বন্দীদশায় রেখে ছিল। এখন সেখানে বন্দীদশায় নিজের জীবনের শেষ সময় গুনছেন দাহাব এহসান। আকবর ভাবীর শক্রর এরূপ অবস্থা দেখে বমি করার মত অবস্থা প্রায়। তৎক্ষণাৎ রুম থেকে পালিয়ে যায়। সে মুহূর্তে নাদিম প্রবেশ করে। আফরাজ কে দেখে হেসে বলে,
“কাম শেষ করে হাত সাফ করে ফেলতে এসেছিস নাকি?”
“নোপ এতসহজে মৃত্যু কাম্য নয় এই জা’নো’য়া’র-এর। এর শাস্তি না আমি,না তুই দিবি। দিবে শুধু তোর বোন। অনেক তো সহ্য করেছে। তারও কিছু পাওনা অবশ্য আছে। যে শাস্তি আমার দেওয়ার কথা ছিল সেটা আমি আগেই বাস্তবায়ন করে ফেলেছি। যে যে অঙ্গ দিয়ে আমার বিবিজান-এর দিকে কুদৃষ্টি দিয়ে ছিল সবটা উপ্রে ফেলেছি। বাকিটুকু তোর বোন সাফসুতরো করে দেবে। এমনেই তোর বোন সংসারী হয়ে উঠেছে বটে।”
দাহাব কাতর গলায় ‘পানি পানি’ করে তৃষ্ণার্ত চোখে চাইল। আফরাজ বাঁকা হেসে গার্ডসের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে। তারা গরম র’ক্ত জল এনেছে। দাহাবের মুখ খুলে সবটা ঢেলে দেয়। বেচারার গরম র’ক্ত জলে গলার অংশটুকু জ্বলছে যাচ্ছে। নাদিম পৈশাচিক তৃপ্তিতা অনুভব করল। আফরাজ দেখে মনে মনে খুশির হাসল। সময়ের প্রতিক্রমায় তারাও চলে গেলো।
অফিসে বসে বিবিজান এর কথা ভাবতে থেকে চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দিলো।
সে-রাতে দাহাবের ভাড়াটে লোকদের প্রতিঘাত করার পরপরই যখন নাজীবার দর্শন পেল। চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে যায়। তার পরীর এই কি হাল? শাড়ির ব্লাউজ ছিঁড়ে পড়েছে, আঁচলের অংশটুকুও কোথাও নেই। পেট-পিঠের জায়গায় মা’ই’রের দাগ। হাতের বাহু আর কবজিতে সিগারেট এর ছাইয়ের দাগ। তার মধ্যে বিবিজান ঘুমে নাকি অজ্ঞান সেটাও বোঝার জ্ঞান রইল না আফরাজ এর। ক্ষোভে রুমের মধ্যে পাহারা দেওয়া লোকদের গু’লিবিদ্ধ করে ফেলে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)নাজিমের সহায়তায় হাসপাতালে এনে প্রথমে চিকিৎসার আওতায় নেয় নাজীবা-কে। নাদিমকে খেয়াল রাখতে বলে দাহাব-কে ধরার উদ্দেশ্যে হিংস্র চাহনি নিয়ে বেরিয়ে যায় সে। ভাগ্য সহায় থাকায় রাস্তার মাথায় আসতেই দাহাবের গাড়ির সাথে আফরাজ এর গাড়ির টক্কর লাগে। দাহাব তাকে দেখেই ঘাবড়ে তার ভাড়াটে লোক-কে গাড়ি ঘোরাতে বলে। কিন্তু সময় সাথ দিল না তার। আফরাজ গু’লি করে দেয় ড্রাইভার-কে। দাহাব এর কলার ধরে তার ঘাড়ে অজ্ঞানের ইন’জেক’শন চুবিয়ে দেয়। একে তো নাজীবার আহত করা হাত নিয়ে সে ফিরছিল। পরক্ষণে আফরাজ এর আক্রমণে হুঁশ হারিয়ে ফেলল। সেই তখন গুলিস্তানে নিয়ে আসে। নাদিম কে আসতে বলে সে চলে গেল নাজীবার কাছে। নাদিম বুঝতে পেরেছিল তার ক্ষোভের অর্ধ প্রকাশ ঘটানোর সুযোগ হাতে পেয়েছে সে। বিধেয় কোনো দিকবেদিক না ভেবে লা’থি মে’রে লাঠি হাতে নেয়। দাহাব এর পেট-পিঠের অংশে লাগাতার বা’রি দিতে থাকে। ততক্ষণ যতক্ষণ সে ক্লান্ত হয়নি। তার হাতব্যথা উঠতেই থেমে যায়। হাঁপাতে থাকে। মাটির অংশ দাহাবের র’ক্তে মেখে গেছে। নাদিম পুনরায় আঘাত করতে গেলে আফরাজ কল দিয়ে বারণ করে দেয়। তার কথায় দাহাব কে বন্দি করে রাখা হলো।
ভাবনার ইতি ঘটল আকস্মিক ফোনের আওয়াজে।
ভ্রু কুঁচকে ফোন হাতে নেয়। ‘মিসেস হিয়া’ নামটা দেখে অবাক হলো না। স্বামীর লা’শ বোধহয় পেয়েছেন তিনি। কল দিয়ে ফালতু আলাপ করবে ভেবে কল’টি রিসিভ করল না।
চলবে……
#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৭(ধামাকা স্পেশাল)
“এই ব’দ’মাই’শ মাইয়া আমার জামাইজান এর সাথে চিপকে আছিস কেন হুম? হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই গায়ে পড়তে মন চাই তাই না? এখনি চোখের সামনে থেকে দূর হও। নাহলে তোর চুল টেনে ছিঁড়ে তোর মুখের ভেতরে ঢুকিয়ে দেবো। আর আপনি কি হ্যা? এখনি হাত ছাড়েন নচেৎ আজ আপনার সাথে কেয়ামত হবে বলে দিলাম।”
বিবিজান এর অগ্নিশর্মা রূপ দেখে ঢোক গিলে হাতজোড়া ছেড়ে দিল আফরাজ। ধপাস করে মেয়েটা মাটির উপরে পড়ে যায়। ‘আহহহ’ করে চিল্লিয়ে তার বান্ধবীদের কাছে হাত ধরার জন্য সহায়তা চাইল। তারা সহায় হয়ে তুলল মেয়েটিকে। ধরে অন্যখানে নিয়ে গেল। তারা যেতেই আফরাজ আমতা আমতা করে কিছু বলতে নিল। নাজীবা স্বামীর চেহারার ধরণ বুঝতে পেরে মুখ ঝামটা মে’রে ক্লাসরুমের দিকে চলে যায়। আফরাজ কপাল চাপড়ে বলে,
“হয়েছে আজ তো মেরা কের নেহি। কে জানে কতক্ষণ ছোট একটা ব্যাপার নিয়ে বোকা ফুল রাগ করে থাকে। যাই হোক মহারাণী আন্দাজে ক্লাসে ঢুকে গেল। এর এডমিশন নতুনভাবে করিয়ে দিয়ে আসি।”
নিজের মত কথা শেষে আফরাজ সোজা হেড-অফিস রুমের দিকে গেলো। আফরাজ পূর্বপরিচিত হওয়ায় হেড-স্যার তার স্ত্রীর এডমিশন গ্রান্টেড করলেন। তিনি আশ্বাস দিয়ে বললেন,
“তুমি চিন্তে করো না। তোমার ওয়াইফের কোনো ক্ষতি হবে না। আমি সবাইকে এলার্ট করে দেবো। তুমি নিশ্চিন্তে অফিসে যেতে পারো।”
মাথা নেড়ে বেরিয়ে যায় আফরাজ। হেড-স্যার নিজের কথা যথারীতি পালন করলেন। নাজীবার ক্লাসে খুব অস্বস্তি হচ্ছে। পূর্বে ক্লাস করলেও মাঝে তার বিরাট গ্যাপ যায়। যার ফলে পরিচিত মুখগুলি পরের সেমিস্টারে পর্দাপণ করেছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)সে নতুন হওয়ায় সকলের দৃষ্টি তার দিকে। ঢোক গিলে নিজের দিকে ভালো করে পরখ করে নেয়। বোরকার সাথে হিজাব পিনআপ করা, মুখে মাস্ক লাগানো। খারাপের তো কিছু দেখছে না। একটা ছেলে তার পাশে এসে বসে পড়ল। শিউরে তৎক্ষণাৎ জানালার পাশ ঘেঁষে বসে নাজীবা। সে মুখ খুলতে নিলেই ক্লাসের মধ্যে ম্যাডাম চলে আসে। মিস ফারহানা ফিজিক্স নিয়ে পড়াবেন বলে বই খুললেন। নাজীবার একটা মাস গ্যাপ গেল। তাই সে এবারের পড়ায় নিজের দক্ষতা দেখিয়ে দিবে বলে ভেবে রেখেছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)অফিসের কাজ শেষ করে আফরাজ খেয়াল করল একটা ত্রিশ মিনিট পার হয়েছে। তড়িঘড়ি বিবিজান এর কথা মাথায় আসতেই সে ভার্সিটির দিকে চলে এলো। কলার ঠিকঠাক করে সামনে এগোতে নিলেই তার পা-জোড়া থেমে যায়। হাত মুঠোবদ্ধ করে সামনের দিকে চেয়ে রইল। হেসে হেসে নাজীবা তার ক্লাসমেট যে তার পাশে বসে ছিল তার সঙ্গেই কথা বলছে। ছেলেটা মন্দ নয়। নাম নিলয় চশমা এঁটে রাখা বোকা ছেলের মত দেখতে হওয়ায়। কেউ তার সঙ্গী হয় না। বিধেয় নাজীবা-কে পেয়ে সেও এক বান্ধবী পেলো ভেবে খুশি হলো। হঠাৎ নাকে ঘু’ষি লাগায় চিৎকার করে মাটির উপরে পড়ে যায় নিলয়। বেচারা হতভম্ব হয়ে গেল। তার সামনে অচেনা যুবক-কে দেখে ঘাবড়ে গেল। ভাবল সে কোনো ভুলভাল কিছু করেছে কিনা সেই চিন্তায়। কিন্তু নাজীবার আচরণে দ্বিগুণ চমকালো। সে যুবক-কে আকড়ে ধরে ফসুরফাসুর কি যেনো বলে তার কাছে এলো। নাজীবা-কে দেখে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করা শুরু করে দিল। আফরাজ বোকা বনে গেল। তার বিবিজান এর সঙ্গে অন্য পুরুষ কে দেখে মাথা গরম হয়ে গিয়ে ছিল। তাইত দিকবেদিক ভুলে ঘু’ষি মা’রল। মাথা চুলকে নিলয়-কে টেনে দাঁড় করায়। তার পিঠে চা’প’ড় মে’রে বলে,
“ওহ আমার ওয়াইফ এর সঙ্গে ভালোই বন্ধুত্ব করছো দেখি। শোনো তোমাদের বন্ধুত্ব আজীবন অটুট রাখতে তোমাকে একটা কাজ দেবো পাশে আসো।”
নাজীবা অতীব আগ্রহ নিয়ে শোনচ্ছিল। শেষের কথায় মুখ বাঁকাল। এত কি পার্সোনাল কথা কে জানে? আফরাজ আড়চোখে বিবিজান-কে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
“শোন একদম ন্যাকামি করবি না। আমার বউয়ের সঙ্গে উল্টাপাল্টা কিছু করার চিন্তাও করলে না? ডাইরেক্ট পকেট থেকে গু’লি বের করে আখিরাতের টিকেট তোর হাতে ধরিয়ে দেবো। এবার থেকে তুই ওর গার্ড বুঝছিস। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে যত ঘণ্টা নাজীবা ভার্সিটির মধ্যে কাটায়। তার সেফটির পুরো দায়িত্ব তোর উপর দিলাম। কোনো ভুল হলে??”
পকেটে হাত রেখে গু’লির দিকে ইশারা করে বোঝাল। নিলয় ভীতিকর মুখে বলে, ‘না না বস আপনি যা বলবেন তাই। ভাবী আমার বোন সমান। একদম উপরওয়ালার নামে কসম খেয়ে বললাম।’
আফরাজ মাথা নেড়ে বলে,’হয়ছে হাত নামা। প্রিটেন্ট বি নরমাল ইয়াংম্যান।’
‘নরমালের চেয়ে গু’লি দেখেই হিসি ধরে গেলো।’ মনেমন নিলয় বলল। ঢোক গিলে হাতের বেবি ফিঙ্গার দেখাল। আফরাজ যাওয়ার জন্য ইশারা করে। তাকে আর পাই কে? পালিয়ে যায় একেবারে। আফরাজ বাঁকা হেসে বিবিজান এর কাছে আসতে গেলে দেখল মহারাণী আগেই গাড়িতে বসে পড়েছে। সেও মুচকি হেসে গাড়িতে গিয়ে বসে।
অথচ তাদের গাড়ির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একজোড়া চোখের মালিক চেয়ে রইল। তার হাতের মধ্যে থাকা ফাইল চেপে ধরে মুচড়ে ফেলে দেয়। আফরাজ এর গাড়ির চলে যেতেই সেই চোখের মালিকও নিশ্চুপে চলে গেলো।
____
চারমাস পর,
কুসুমা ভারী পেট নিয়ে বেলকনিতে বসে আছে। চেহারায় মলিনতা ভাব। বলা যায়, গর্ভবতী নারীদের সৌন্দর্য্যের আদল বাড়তে থাকে। কিন্তু যাবত কয়েক মাস চিন্তা চেতনায় তার শরীরটা ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে। আজকাল স্বপ্নেও অদ্ভুত কিছু দৃশ্য দেখতে পায়। যা তার মন-কে খিটখিটে স্বভাবের করে দিয়েছে। নাজীবা রুমের বাহিরে এসে দরজা নাড়ল। কুসুমার ধ্যান ফিরল। তপ্তশ্বাস ফেলে বলে,
“আসো ভাবী।”
নাজীবা এসে কুসুমার মলিনতা দেখে কপাল চাপড়ে বলে,
“আহারে ভাবী জি ভাইয়া মাত্র একমাস এর জন্য ঢাকা গেছেন। এ নিয়ে মন খারাপ করে থাকলে হয় নাকি? চার মাস শেষ হতে চলেছে আপনার। যত জলদি সম্ভব আমাদের চাম্পকে আমাদের কোলের ঝুড়িতে দিয়ে দাও।”
“মাশাআল্লাহ নাজীবা তুমি পারোও বটে। তোমার মন খারাপ হয় না? আফরাজ ভাইয়া তো দুমাস অব্দি বাসায় ফিরছেন না। অফিসের নাম করে তিনি আগে গিয়েছেন। তারপর তো তোমার ভাইয়া। তিনি নাহয় কল দেন আমায়। আফরাজ ভাইয়া তো কল অব্দি দেন না। আপনি কেমনে সহ্য করছেন ভাবী?”
কুসুমার কথায় মুচকি হাসল। নম্র গলায় আওড়ায়।
“কে বলছে উনার সাথে কথা হয় না? হয়ত কথা স্বপ্নে আর মনে। তিনি আমার অপেক্ষার পরীক্ষা নিচ্ছেন। তিনিও আমায় তত ভালোবাসে যতটা আমি বাসি।
ভাবী আপনি তো জানেন না চার মাস আগের কাহিনী। এখন নাহয় বলি, ভার্সিটির অফ ডে-তে আফরাজ এর সাথে ঘোরার প্ল্যান করে ছিলাম। কিন্তু তার আজেন্ট কোথাও যেতে হচ্ছিল বলে তড়-জড় করে চলে যায়। কি এমন কাজ? আমার সন্দেহ হওয়ায় পিছু নিলাম। তখন যা দেখলাম। বিশ্বাস করুন ভাবী যেখানে দাহাব আমায় বন্দি রেখেছিল সেখানেই তাকে বন্দি বানিয়ে রেখেছিল আফরাজ। তাকে জানেপ্রাণে মা’র’ল না কেনো তা আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। আফরাজ যতক্ষণ ছিল টর্চার করেছিল তবুও মা’রেনি। দাহাব এহসান এর শরীরে ক’ঙ্কাল ছাড়া কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। তখনি আমি খেয়াল করলাম আফরাজ চলে যায়। রুমের আশপাশে কোনো গার্ডসও নেই। আমার চোখে বাবা-মায়ের খু’নের দৃশ্য,আমায় শারীরিক-মানসিক অত্যাচার এর দৃশ্য ফুটে উঠায় কাউকে না বলে আমি নিজ হাতে খু’ন করে দেয়। না জানে পুলিশ কেমনে জেনে ছিল? পুলিশ অব্দি জেনে গিয়ে ছিল। তাইত পরিস্থিতি সামলাতে আফরাজ এর খুব কষ্ট হচ্ছিল। আমি আমার দোষও স্বীকার করেছি। কিন্তু তিনি যে রাগ করে দুমাস কথা বলবেন না আর দুমাস পরই ঢাকা চলে যাবেন কে জানত?”
বেদনাময় চোখের জল মুছে কুসুমার হাত ধরে বলে,
“বাদ দাও ঐসব কথা। দেখবে ভাইয়াও ফিরবেন উনিও ফিরবেন।”
তড়ফড়িয়ে রুমের মধ্যে চলে এলেন মিসেস ফেরদৌসী। দু’বউমা কে ঘাপটি মে’রে বসে থাকতে দেখে হা হয়ে গেলেন। কোমরে হাত রেখে নাজীবার কান মলে দেন। সে মৃদু চিৎকার করে বলে,’আরে আরে ডোন্ট বিহেইভ লাইক এ ট্রিপিক্যাল শ্বাশুড়ি- মম। ইউ আর মাই রিয়াল মম। উম্মআহহ।’
মিসেস ফেরদৌসীর গালে চুমু দেয়। তিনি হেসে বলেন,
“পাকা বিচ্চু তুই একটা। যাহ রেডি হো আজ তোর বউভাতের অনুষ্ঠান। এমনিতে পড়ালেখার মাঝে অনুষ্ঠান রাখার সময় পাস না। এখন পেয়েও হাতছাড়া করছিস। এখনি রুমে যাহ্।”
নাজীবা শুনে মলিন হেসে বলে,
“কিই বা হবে এই অনুষ্ঠানে বলুন? আপনার ছেলের তো আমাকে একা ফেলে যাওয়ার বেশি শখ। কাছে আসতে না আসতেই দূরে চলে যান। এতটুকু ভাবে না আমার হৃদয়ের আঙ্গিনায় কি রকম অনুভুতি কাজ করছে? অত্যন্ত ক্ষমা করে হলেও কাছে আসতে পারতেন। একটুখানি বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারতেন,ভালোবাসি বিশ্বাস করি তোমায়। তাও বললেন না।”
আর কিছুটি না বলে নীরবে রুম ত্যাগ করল। মিসেস ফেরদৌসী আর কুসুমা একে অপরের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসল। কুসুমা একলা হাতে রেডি হতে পারবে না বলেই মিসেস ফেরদৌসী এসেছেন। রুমে এসে বিছানার উপর জর্জেট শাড়ি সেই সাথে মেচিং জুয়েলারি রাখা দেখে সেগুলো-তে হাত বুলাল নাজীবা। শাড়ির রংটা হলো সিলভার-ব্ল্যাক। তার ফেভারিট কালার বটে। ভেবে নিল তার শ্বাশুড়ি মা রেখেছেন এই সেট। সন্তপর্ণে গুনগুন করে মনের কষ্ট লুকাতে মুখের ফেসিয়াল করতে লেগে পড়ে।
রাত প্রায় নয়টা বাজছে,
জনাব ইসমাইল হেসে সকলের সাথে বউমা-র পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। তার ছেলের অতীব উন্নতির গুঞ্জে তিনি গর্বিত। কুসুমাকে সাথে নিয়ে গোমড়া মুখে বসে আছে নাজীবা। তার কাছে মনে হচ্ছে সে একটা পুতুল। আর সবাই পুতুল কে দেখে কমপ্লিমেন্ট মে’রে টেরে চলে যাচ্ছে। বিরক্তি নিয়ে উঠতে গিয়েও পারল না। তার শ্বশুর শ্বাশুড়ির হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রীতে গম্ভীরতা শোভা পাক তা সে মোটেও চাইছে না। আফরাজ এর ফুপি-ফুপার ছেলে-মেয়েরা এসে ভীড় জমাল। সবার চোখের দৃষ্টি দেখে ভয় পেয়ে যায়। কোনো ইনভেস্টিগেশন করবে ভেবে ভয়ে জমে গেল। কুসুমা মুচকি হেসে বলে,
“এই ফাজিল তোরা নতুন বউরে ভয় লাগাচ্ছিস কেন? যাহ্ ভাগ এখান থেকে।”
“এহ বললেই হলো নাকি? একদম যাবো না ভাবী তুমি জানো আমাদের নতুন ভাবীর জন্য অনেক শর্ত জমিয়ে রেখেছি। যদি না মানো তাহলে আফরাজ ভাইয়া কে বলে তোমাকে বিদায় করে দেবো।”
“আচ্ছা বাচ্চু? আগে আমাকে চিনে এসো তারপর কথার কথা বলিও।”
মেয়েটিকে চোখ টিপ দিল নাজীবা। কথাটি শুনে ঢোক গিলল মেয়েটি। তবুও আফরাজ এর কাজিনের দল তাকে ছাড়ল না। মুরব্বিগণ কে একসাথে রেখে নাজীবা-কে নিয়ে কাজিনপক্ষ ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে ঠান্ডা হাওয়ার কারণে নাজীবা সমেত সকলেই জ্যাকেট পরে নেয়। যেনো ঠান্ডার কারণে অসুস্থ নাহয়। এর মাঝে হিটার অন করে দেয় আফরাজ এর কাজিন। নাজীবা-কে মাঝখানে বসিয়ে সকলে আবদার করে উঠল একটা গান শুনানোর জন্য।
নাজীবা আমতা আমতা করে বলে,
“আসলে আমি না গান পারি না। আমার গলার সুর ভালো না মোটেও।”
কথাটি বলে সে মাথানিচু করে নিল। এ কথায় কারো মাঝে প্রভাব ফেলল বলে মনে হলো না। বরং তারা একসাথে হেসে বলে,
“আপনি না পারলেও আপনার পার্টনার তো আছেই। তার সাথে ডান্স উইড সং দু’টোই দেখান।”
নাজীবা চমকে গেল। মুখ খুলতে নিলে কেউ তার হাত চেপে ধরে। গরম পুরুষালি হাতের স্পর্শে শিহরিত হলো সে। ছলছল চোখে হাতের মালিকের দিকে তাকায়। ঠোঁটের কোণায় মুচকি হাসি আফরাজ এর। সকলের দৃষ্টি অপেক্ষা করে বিবিজান এর কানের কাছে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে বলে,’হেপ্পি বার্থডে মাই গার্ল। উইশিং ইউ অলওয়েজ উইড মি ইন শা আল্লাহ্।’ নাজীবা হতবাক আজ তার জন্মদিন অথচ তারই মনে নেই। সে প্রশ্নাতীত দৃষ্টিতে তাকায়। কুসুমা এসে বলে,
“ভাইয়া তোমার জন্মদিনের জন্য আগেভাগে কাজ সেরে ফেলতে দুমাসের জন্য ঢাকা চলে গিয়ে ছিল। তার পূর্বের দু’মাস তোমার উপর রাগে নয় বরং কাজের চাপে পড়ে কথা অব্দি বলার সময় সুযোগ পাননি তিনি। তাইত আজ তোমার জন্মদিনে স্বয়ং সামনে দাঁড়ানো। তিনি যে আসবেন এটা আমরা সবাই জানতাম শুধু তুমি ছাড়া।”
নাজীবা মুখ ফুলিয়ে রেলিং ধরে বুকের উপর হাত গুজে দাঁড়িয়ে যায়। তার অভিমান হলো এত কষ্ট না দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বললেও পারত মানুষটা। তা-না বলে নিজের মত কাজ-কাজ করে বেড়ালো।
হঠাৎ কোমরে হাতের স্পর্শে চোখ বুজে নিল নাজীবা। মৌন ভাবে বিবিজান-কে ধরে মুখোমুখি ঘুরিয়ে নিল। গানের টিউন বেজে উঠায় আফরাজ তার বিবিজান কে পুনরায় ঘুরিয়ে নেয়।
Samajh na aaye samjhaun ton,
Bas ch naa aaye kise hor ton ,
Dilawara aa,Mera Dil awara AA
নাজীবা-কে উল্টো পিঠ ঘুরিয়ে দুজন তাদের বিপরীত দিকে মুখ করে দাড় করিয়ে নেয় আফরাজ। লজ্জায় নাজীবা চোখ বুজে রইল।
Sangda ae challa nehde aaun ton,
Darda ae tainu billo khon ton,
Dilawara aa,Mera Dil awara AA
Dil Mera AA AAA AAA… aaaaa A. aA yeah!
আফরাজ নাজীবার কোমরে হাত রেখে একহাতে তার পিঠ চেপে ধরল। মুখটা ফিরিয়ে নেয় কপালে চুমু খেলো। সকলে দেখে মিটমিটে হেসে শিস বাজাতে লাগল।
গানের টিউন টেনে একসাইডে করা হলো।
Humm Chori Chori lukk lukk ke mein,
Dil naal la liyan,
Hauli hauli Ruk Ruk ke mein,
Massa no sambhaliyan.
Na Manda ae mere kehna,
tere Naina che hi rehna,
If I tell u , if I tell u,
Tabaah hi ho jaana.
নাজীবা-হাতজোড়া আবদ্ধ রেখে আফরাজ এর দিকে তাকিয়ে রইল। দু’জন মৃদু মৃদু হাঁপাচ্ছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) নাজীবার তো লজ্জায় কাতর অবস্থা। সে না পারছে পালাতে , না পারছে স্বামীকে থামাতে। কিন্তু বলতে গেলে তারও এই মুহূর্ত এমন সুন্দর দিনের অপেক্ষা ছিল। আজ নাহয় লজ্জা কে আটক করে নিল।
Samajh na aaye samjhaun ton,
Bas ch naa aaye kise hor ton ,
Dilawara aa,Mera Dil awara AA
Sangda ae challa nehde aaun ton,
Darda ae tainu billo khon ton,
Dilawara aa,Mera Dil awara AA
Dil Mera AA AAA AAA… aaaaa A. aA
Dil Mera ohhho ohho ohh AAA.
নাজীবার মাথা হালকা করে ঝুঁকে থাকায় তার ওষ্ঠজোড়া কাঁপছে। আফরাজ একপা ভাঁজ করে বিবিজান-কে ঝুঁকিয়েছে। সকলে তাদের কাপল পারফরম্যান্সের মুগ্ধতায় হাত তালি দিয়ে উঠে। দু’জনের ধ্যান ফিরল। নাজীবা লজ্জার রেশ পুরোপুরি আকড়ে ধরল। একছুটে ছাদ থেকে পালিয়ে যায়। আফরাজ সমেত সকলে হেসে দিল। তারাও নিচে চলে আসে। আফরাজ কেক অর্ডার করেছিল। তা পরিবেশন করা শেষ। নাজীবার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো সে। দু’জনে একে অপরের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল কয়েকপলক। পরক্ষণে মুচকি হেসে আফরাজ এর গালে মৃদু চা’প’ড় দিয়ে ছু’ড়ি হাতে নিল। কেক কাটতে নিলেই হঠাৎ করে বড়জড় ব্লাস্ট হয়।
চলবে…..