#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৪
“প্লিজ দাদু আমাকে ছেড়ে দিন। আমার শরীরে শক্তি নেই। ইন’জেক’শন দিয়েন না। প্লিজ ছেড়ে দিন।”
“আইম সরি দাদুভাই। বিয়ে তো করতে হবে নাকি? তোমাকে প্রিপার করার জন্য এই ইন’জেক’শন দিচ্ছি। যাতে তুমি নিজে সাজুগুজু করতে পারো। আমার প্রিয় দাদুভাই। চলো চলো হাত এগিয়ে দাও। এই তোরা কি দেখছিস? আমার দাদুভাই এর হাত ধর। একটুও ব্যথা লাগবে না দাদুভাই। এখনি সব ব্যথা দূর হয়ে যাবে।”
কথাটি বলে দাহাব এহসান পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভাড়াটে লোকের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলেন। লোকটি ইঙ্গিত বুঝতে পেরে নাজীবার হাত চেপে ধরে। দাহাব এহসান নাতনীর কোমল হাতের কব্জিতে চুমু দেয়। নাজীবার শরীর ঘৃণায় গলিয়ে এলো। হাত সরাতে নিয়েও পারল না। তার শরীরে মা’রধর এর চিহ্ন। বিধেয় দাহাব এহসান পৈশাচিক হেসে নাজীবার শরীরে ইন’জেক’শন চুবিয়ে দেয়। আস্তে ধীরে নাজীবা নেতিয়ে পড়ে। কান্নায় ফুঁপালেও এখন সেই শব্দ অব্দি নেই। দাহাব এহসান তার ভাড়াটে লোকদের বের হতে বললেন। তারা যেতেই কামনার দৃষ্টিতে নাজীবার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“তোর জামাই বাজপাখির মত বেশি পাখা ঝাপটা ছিল? সেই পাখা কেটে দেওয়ার জন্যেই এই ব্যবস্থা। তোর সেন্স ফিরলে আমার হাতের পুতুলের মত নাচ নাচবি। তখন মজা আসবে তোর জামাই তোর আর আমার বিয়ের কার্যক্রম দেখে যে কষ্টটা পাবে তাতেই আমি খুশি হবো। খুব বেশি পিছে লাগতে আসছিলো আমার। একদম কলার টেনে পায়ের নিচে না ফেললে আমার নামও দাহাব এহসান না।”
দাহাব এহসান নাজীবার দিকে একপলক তাকিয়ে বেরিয়ে যায়।
অন্যথায়, আফরাজ পরিবার সমেত খাদিজা বেগম এর কবরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘণ্টাখানেক আগেই দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়েছিল। কুসুমার অবস্থা তো ম’রম’রা। একে তো প্রেগন্যান্ট তার উপর মানসিক আঘাতে বিধ্বস্ত। পরিবারের অতীব প্রিয় মানুষটি চলে গেল। যার রেশ যেনো তাদের মস্তিষ্ক কে অচল করে রেখেছে। আফরাজ দাফনের কাজ করার সময় থেকেই নিশ্চুপ হয়ে আছে। আকবর এর মনে নাকিব মুনসিফ কে নিয়ে প্রশ্নের ছড়াছড়ি চলছে। তবুও পরিস্থিতির সাপেক্ষে চুপ করে রইল। আফরাজ এর বাবার অবস্থা কাহিল। ঘুম থেকে জাগলেই মায়ের কবরের কাছে ছুটে আসেন। মিসেস ফেরদৌসী খুব কষ্টে স্বামী-কে সামলাচ্ছেন। সকাল থেকে একবারো চোখজোড়া বন্ধ করতে পারেননি। পারবেনও কেমনে প্রথমে আফরাজ এর চিন্তা, তার পর নাজীবা,শ্বাশুড়ি আর এখন স্বামীর চিন্তায় মশগুল। চোখও বোধহয় ব্যথা করছে। মিসেস ফেরদৌসী তপ্ত বেদনাময় শ্বাস ছেড়ে আরেক মগ কফি খেলেন। কিন্তু চোখজোড়া বন্ধ না করে পারলেন না। স্বামীর পাশে বালিশে মাথা রাখতেই হাজারো ক্লান্তির রেশে ঘুমিয়ে পড়লেন। তিনি ঘুমিয়ে যাওয়ার পরপরই রুমে আফরাজ এলো। বাবার বিধ্বস্ত মুখশ্রীর দিকে কয়েকপলক তাকিয়ে রইলো। চোখজোড়া থেকে দু’ফুটো পানি পড়ল বোধহয়। প্রতিবার তার বাবা শোকাহত অবস্থায় যে পাগলামীপনা করেন তার জন্য সে বাবাকে ঘুমের ইন’জেক’শন দিয়ে দেয়। কি করবে তা ছাড়া অন্য উপায় তো নেই যে শান্তি করতে পারবে! বারংবার থামালে মা’রতে হাত উঠিয়ে নেন জনাব ইসমাইল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাবা-মায়ের রুমের দরজা ভিড়িয়ে লাইব্রেরী রুমে গেলো। আকবর-কে গার্ডস সমেত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার মনে হানা দিল তার প্রধান উদ্দেশ্য নিয়ে। চোখ বুঁজে কিঞ্চিৎ মুহূর্ত নীরব রইল। হুট করে চোখ খুলে গার্ডস কে বলে,
“গাড়ি নিয়ে দক্ষিণ দিকের বাঁশবাগান এর রাস্তায় যাও। সেখান থেকে সোজা রাস্তায় গিয়ে গলির মুখে পরিত্যক্ত বাড়ি আছে। সেখানে ঘেরাও লাগিয়ে দাও। আমি আসছি। আকবর তুই এদের সঙ্গে যাহ্। দাহাব এর সঙ্গীকে তো ধরে আনতে হবে। যার কারণে আমার দাদি জীবনহারা হলো। তাকেও তো এর মূল্য দিতে হবে।”
আকবর মাথা নেড়ে গার্ডস নিয়ে আফরাজ এর কথামত বেরিয়ে গেল। তারা যেতেই আফরাজ ফোন বের করে এক পরিচিত লোককে কল দেয়। অপরপাশের লোকটি যেন তার ফোনের অপেক্ষায় ছিল। সেও তৎক্ষণাৎ কল রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলে। আফরাজ গম্ভীর গলায় বলে,
“আমাদের এক হওয়া উচিৎ। পুলিশ-পুলিশ খেলা অনেক হয়েছে। এবার চোর-ডাকাত-পুলিশের খেলা শুরু হোক। কি মতামত তোর?”
“অফকোর্স আমি রেডি। তুই শুধু বল কোথায় কখন আসতে হবে?”
“মিলনায়তনে পারমহল এর রাস্তা ভেদ করে শহর থেকে বেরুনোর গেইট আছে। সেই গেইটে আটক কর। আমিও আসতেছি।”
“ওকে ইয়াংম্যান।”
(স্থানভিত্তিক নামগুলো কাল্পনিক)কল কেটে বেরিয়ে গেল আফরাজ। গাড়িতে বসে ইঞ্জিন চালু করতেই ফোনে একটি ভিডিও এলো। ভিডিওটি পাঠিয়েছে দাহাব এর লোক। যাকে আফরাজ দাহাবের চেয়েও দ্বিগুণ টাকা দিয়ে পক্ষপাতী করেছে। মেসেজ অপশনে গিয়ে ভিডিওটি চালু করে। সেখানে নাজীবা-র সঙ্গে দাহাব এর অশ্লীল আচরণ করার দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। আফরাজ এর চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেল। দাঁত কিড়-মিড়িয়ে দাহাব এহসান এর ফোনে কল লাগাতে গিয়েও লাগায়নি। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কারণ আফরাজ এমুহুর্তে কল দিয়ে ভিডিও-র ব্যাপারে উল্টাপাল্টা কথা বললে দাহাব বুঝে যাবে যে, সে তার প্ল্যান সম্বন্ধে জেনে গিয়েছে। এতে পরিকল্পনা হিতে বিপরীত হয়ে যাবে। সেই চিন্তা করে কল দিল না। নিজের রা’গ-কে নিয়ন্ত্রন করে আফরাজ গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়।
_____
নাজীবার হুঁশ আস্তে ধীরে ফিরে আসায় শরীর মোচড়ে বসে পড়ে। আশপাশের পরিস্থিতি খেয়াল করে মাথায় আসে সে দাহাব এহসান এর হাতে বন্দি। যে, ছন্দবেশে যুবকের বেশভূষায় এতদিন যাবত চলাফেরা করছিল। অথচ তিনিই হলো সেই খু’নি যে তার বাবা-মায়ের র’ক্ত চু’ষে , দেহগুলো-কে মাঠিতে পুঁতে দিয়ে ছিল। কিন্তু তার তো দাহাব এর হাতে পড়ার কথা ছিল না। তবে কেমনে কি হলো? হাঁটু ভেঙ্গে বসে থাকল সে। কান্নার দৃষ্টিতে চৌপাশ চোখ বুলায়। কোনোমতে টেবিলের উপর রাখা পানি ভর্তি মগ হাতে নিয়ে পানি পান করে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ভাবতে লাগল থার্টিফার্স্ট নাইট এর কথা।
সেরাত যে তার জীবনে কালোরাত বয়ে আনবে। কল্পনাও করেনি। যদি কল্পিত হতো কভুও সে রাতে আয়োজন করতো না। ভেবে ছিল বছরের নতুন দিন সেই উপলক্ষে স্বামীর সঙ্গে সুখের মুহূর্ত কাটাবে। একনিমিষে সব চুরমার হয়ে গেল। তার স্বামীর বুকে বু’লে’ট লাগায় সেও র’ক্তে মাখামাখি হয়ে যায়। তার স্বামীর দেওয়া শাড়িতে স্বামীর র’ক্ত লেগে তার বুকটা ছন্নছাড়া করে দিল। পুরো ঘর কাঁপিয়ে কান্নার ফলে সবার কানে জানাজানি হয়ে যায়। কান্নার চটে কখন যে গালে চ’ড় খেলো। তারও খেয়াল রইল না। শ্বাশুড়ি নিজের ছেলের করুণ দশা দেখে একমাত্র তাকেই অপরাধী ভাবল। অথচ সত্য তো অন্য কিছু তার স্বামীকে এই দাহাব এহসান খু’ন করতে চেয়ে ছিল। আল্লাহ জানেন তিনি সুস্থও হয়েছেন কিনা। আফরাজ এর কথা ভেবে নাজীবা আবারো কান্নায় ফুঁপাতে থাকে।
আকস্মিক কোমরে কারো হাতের স্পর্শে চমকে দূরে সরে গেল নাজীবা। দাহাব এহসান এর বয়স্ক রুপ দেখে বমি চলে এলো তার। ‘ওয়াক’ করে বমি করে দেয়। দাহাব এহসান বিরক্ত হয়ে নাজীবার গালে ‘ঠাসস’ করে এক চট’কা’নি দিল। অসহায় মেয়েটির শরীর এমনিতে দূর্বল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)এর মধ্যে চট’কা’নি খেয়ে তার বিধ্বস্ত শরীর ঠান্ডা টাইলার্সে নিথর হয়ে পড়ে। দাহাব এহসান পৈশাচিক হেসে নিজের পাঞ্জাবি খুলে বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেললেন। দরজা আঁটসাঁট করে বেঁধে দেন। নাজীবার মুখের পাশে বসে তার পুরো শরীরে চোখ বুলিয়ে নেন। ঘনঘন শ্বাস ফেলছে মেয়েটা। যা দাহাব এর কামনা-কে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন ক’চি মেয়েই তার যৌবনকালের পছন্দ ছিল। প্রথমত মেয়েটার মা ছিল সুন্দরী বউমা আর তার মেয়ে হলো আগুন সুন্দরী। এমন মেয়ের লালসার মত শরীর দেখতে ফাতেমা কে বিয়ে করেছিল। ছিঃ যার শরীর চাহিদা পূরণের ক্ষমতাই ছিল না। সেসব পুরোনো কথা রেখে দাহাব এহসান নাতনী অর্থাৎ নাজীবার শরীর থেকে শাড়ির আঁচলটা ফেলে দিলেন। এমুহুর্তে নাজীবার শরীরে একের পর এক মা’ই’রের চিহ্ন দেখে সেখানে হাত বুলাতে লাগলেন তিনি। একসময়ের শ্রদ্ধীয় দাদু রুপে জানা পুরুষটির প্রতি হাজারো ঘৃণা নাজীবার বুকে। তার হাতও শরীরে সহ্য হচ্ছে না। আফরাজের খেয়াল রাখার ফলে নাজীবার মস্তিষ্কে ড্রাগের রেশধারা কমে গিয়ে ছিল সুষ্ঠুভাবে। আজ এই মুহূর্তে যেনো সেই ড্রাগের ক্রিয়া কার্যে দিল। দাহাব এহসান যখন তার বুকে হাত রাখার স্পর্ধা করল তখনি নাজীবা হিংস্র হয়ে উঠে। তার হাত দাঁত দিয়ে চেপে ধরে জোরে কামড়ে দেয়। তিনি চিৎকার করে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেন। নাজীবা কষ্টে অসার শরীরেও হিংস্রতা দেখালো। কামড়ে হাতের চামড়া ছিঁলে দিল। দাহাব এহসান এর হাতজোড়া র’ক্তা’ক্ত করে দেয়। নাজীবার হিংস্র চাহনির মাঝে পৈশাচিক হাসি দেখায়। তার দাঁতে র’ক্ত লেগে আছে। দাহাব এহসান এর দিকে থুতু ছুঁড়ে মে’রে বলে,
“তুই জানিস না নাজীবা কি জিনিস? আমি মোবারক আলী আর মেহজাবিন সিরাত এর মেয়ে নাজীবা মুসাররাত। আগের নাজীবা ভেবেছিস তুই? যে তোর পদতলে পড়ে পা চা’টবো? চ**** তোকে তো কু’ত্তার মরণ আমি দেব দেখে নিস। আরেকবার আমার কাছে আসার চেষ্টা করে দেখিস তোর কলিজা ছিঁড়ে খাবো হা**রা**মজাদা*।”
দাহাব এহসান ক্ষোভ অপমানে রুম থেকে বেরিয়ে যান। তার অচল শরীরে নাজীবার মত তরুণীর প্রতিঘাত সহ্য হলো না। হাতের জ্বালাপোড়ায় তৎক্ষণাৎ তিনজন লোক নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দেন। নাজীবার পাহারা দেওয়ার জন্য বাকি লোকদের রেখে যান। গাড়িতে বসে দাহাব এহসান ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছেন না। তার দেওয়া ইন’জেক’শন কেনো কার্যে এলো না? তিনি তো ঠিকভাবে ইন’জেক’শন প্রিপার করে চুবিয়ে ছিল তবে কি হতে পারে কারণ? হঠাৎ তার মনে হলো কেউ হয়ত তার পিঠপিছে কলকাঠি নেড়েছে। তাৎক্ষণিক সময়ে ফোনের মধ্যে ফুটেজ চালু করে। পরিত্যক্ত বাড়ির ভেতর সিসিক্যামেরা লাগিয়ে ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে ফুটেজে দেখল যে লোক ইন’জেক’শন প্রিপার করার জন্য এসে ছিল সেই ইচ্ছেকৃত ওষুধের বোতল পরিবর্তন করে ভিটামিনের বোতল ব্যবহার করে ছিল। তার হাতে কোনো নেশাধায়ক ইন’জেক’শন নয় বরং স্বাস্থ্যবেদী ইন’জেক’শন দেওয়া হয়েছে। গাড়ির মধ্যে কপাল চাপড়াতে লাগলেন তিনি। পরক্ষণে তার খেয়ালে এলো লোকটি এই কাজ কেনো করল? তিনি তৎক্ষণাৎ তার ভাড়াটে লোক কে আদেশ দেয় সেই লোক কে ধরে আনার। সেই লোক-কে আনার জন্য তাদের মধ্যে দুজন বেরিয়ে পড়ে। নাজীবা আশপাশের যোগাযোগের কোনো মাধ্যম আছে কিনা খোঁজ করছে। কিন্তু রুমের ভেতর তেমন কোনো মাধ্যম নেই। একটা জানালা ছিল তাও লোহা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। না পারতে রুমের মধ্যে থাকা বিছানায় শুয়ে পড়ে। মনেমন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে লাগল।
চলবে……
#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৫ (ধামাকা পার্ট-
১৮+এলার্ট)
“আপনি যে এক মেয়ের পিতা সে কথা ভাবতেও ঘৃণা লাগে। আপনি পিতা নন বরং এক ন’র’পশু। সেই ন’র’পশু যার হাতে অজস্র খু’ন অব্দি হয়েছে। কি ঠিক বলেছি না মিস্টার লিয়াকত? আপনি কি ভেবেছেন আপনার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অজ্ঞাত? তাহলে বলে দেয় এই আফরাজ ফাহিম কাঁচা কাজ করে না। সে তার শত্রুর সম্পর্কে এ টু জেট খবরাখবর রাখে। হ্যা বলতে পারেন এর জন্য কম কষ্ট পোহাতে হয়নি। মনে পড়ে মৃতসম মিসেস নিপার নাম?”
মুখ বাঁধা অবস্থায় নড়াচড়া করে নিজেকে ছড়ানোর চেষ্টা করছিল জনাব লিয়াকত। কিন্তু সম্ভব না হওয়ায় নীরব হয়ে যান। আফরাজ আর তার সঙ্গী তার গাড়ি-কে ট্রাক ভাড়া করে জোরেসরে প্রতিঘাত করে। যার ফলে তার গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। সেই সাথে তিনিও মারাত্মক আহত হোন। আঘাতের প্রতিক্রিয়ায় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। আফরাজ পৈশাচিক দৃষ্টিতে তার কাঙ্ক্ষিত শিকারির ঘাতময় অংশ দেখে তার সঙ্গের দিকে তাকায়। তার চোখজোরে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। দু’জন তাকে ধরে গাড়ির ব্যাক সাইডে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখল। তাদের গাড়ির এমুহুর্তে উপস্থিত আছে দাহাব এহসান এর গুলিস্তানে(কল্পিত)। যেখানে দূর থেকে দাহাব এহসান এর ভাড়াটে লোক দেখা যাচ্ছে। তাদের নজরে এখনো অব্দি পড়ল না আফরাজ আর তার সঙ্গী। ততক্ষণে পিটপিটিয়ে চোখজোড়া খুলে বসেন জনাব লিয়াকত। তার শরীর দড়ি বাঁধা দেখে আতংকে কাঁপছে। আফরাজ কে দেখে যতটা না ভয়ে আছে তার চেয়েও ভয়ানক লাগছে তার সঙ্গীকে। অথচ তিনি চিনেন না তাকে। তিনি না চিনলেও আফরাজ এর সঙ্গী ভালো করে তাকে চেনে। মূলত আফরাজ এর কথাটি শুনে তিনি ভয়ানক বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকান। আফরাজ বাঁকা হেসে বলে,
“আমার না তোকে সম্মান নয় লা’থি মা’রা উচিৎ। তবুও এই উত্তম কাজ আমি নয় আমার সঙ্গী করবে অবশ্য। তোকে ‘তোকে’ বলাতেই মানায়। তোর জন্য ‘আপনি’ শব্দটাও হা’রা’ম কু’ত্তার বাচ্চা কোথাকার। আচ্ছা! একটা কথা আজ বুঝতে পারলাম, তাবাসসুম তোর অংশ বলেই আমার ধারেকাছে ঘেঁষতে পারেনি। জানিস কি? যাকে একপলক দেখতে গিয়েও দেখলি না। তার অবস্থা কেমন? তোর শ্বশুর আমার বিবিজান কে অপ’হর’ণ করে রেখেও তোর মেয়ের শরীরের স্বাদ নিয়ে নিজের পোষা কু’ত্তাদের কাছে বিলিয়ে দিয়ে ছিল। ছিঃ সেই তুই পিতা হয়ে খু’ন হওয়ার ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলি। এভাবেই তো নিজের প্রথম স্ত্রী-কেও হারালি। কেমন অনুভূতি ছিল? যখন নিজের স্ত্রী-কে ঐ শ’য়’তানের হাতে সঁপে ছিলি? মিসেস নিপার চরিত্র হাজারে উত্তম ছিল বলেই তার সঙ্গে বা’জে আচরণটা করেছিলি। তোর মনে এই ভাবনা ছিল যে, তুই দাহাব এর মেয়ে-কে বিয়ে করলে আজীবনের মত ধনসম্পদের সাগরে ভাসবি। কিন্তু আফসোস তোর সেই ধারণায় জল ঢেলে পুরো এক’বছর এর জন্য বন্দীঘরে ফেলে দিল দাহাব এ। আই এপ্রিসিয়েট দিস। বাট সরি টু সে তোর সাথেও সেই কার্যসম্পন্ন হবে যার হক তোর আছে। ঠিক বললাম না নাকিব?”
নাকিব মুনসিফ এর কপালের রগ ভেসে আছে। সে পারছে না এই মুহূর্তে লিয়াকত এর গলা ঘাড় থেকে আলাদা করে দিতে। আফরাজ এর কথায় ধর্য্য ধরে দাঁড়িয়ে নিশ্চুপ হয়ে আছে। কিন্তু তার কথার ধরণে সে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। তার ঠোঁটের কোণায় পৈশাচিক হাসি ফুটল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)আফরাজ তার কাছে গিয়ে লিয়াকত কে দেখিয়ে বলে,
“এই নাকিব মুনসিফ কে চিনেছেন ফুপাজি? এই হলো নাদিম মুসাররাত ওরফে মোবারক আলী আর মেহজাবিন সিরাত এর বড় পুত্র। যার বর্তমান পেশার কারণে সাফল্য একজন প্রভাবশালী পুরুষ নাকিব মুনসিফ নামে পরিচিত। মনে আছে তো? সেদিন আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি-কে খু’ন করার সময় নাদিম-কে পেলেন না। আমার শ্বশুর তাকে কষ্টের জীবনে ফেললেও তিনি জানতেন একদিন তার ছেলে তোদেরকে নরক দেখাবেন। সেই থেকে খবরাখবরে আমরা দু’জন একে অপরের বিজনেস পার্টনারও হয়ে গেলাম। আচ্ছা এতকথা রাখি। চলেন তো নাদিম ভাই আপনার কাজ শুরু করেন। আমি গাড়ির উপর বসে ফিল্ম দেখি। অনেকদিন হইল ফিল্ম দেখার সুযোগ পায় না। কোথায় এই কনকনে শীতে বিবিজান-কে নিয়ে বিছানায় শুয়ে রোমান্টিক হবো তা না ইঁদুরের কাছে নিজের দাম দেখাতে হচ্ছে।”
“এ শা’লা আমার বোনের নামে এসব আমার সামনেই বলছিস লজ্জা লাগে না তোর?”
“চুপ শা’লা আমি নাকি তুই হ্যা? তোরে যে মুরগি জবাই করতে দিছি, সেই শোকরিয়া কর। নাহলে হিরোগিরি থেকে জিরোগিরি নিয়েই থাকতি। আমি তো ছাগলকে শিকার করার খুশিতে বসে আছি।”
নাদিম হাসল। হিংস্র দৃষ্টিতে লিয়াকত এর দিকে তাকিয়ে গাড়ির ভেতর থেকে ধারালো ছুরি বের করে। যা দেখে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল জনাব লিয়াকত এর। তিনি ঢোক গিলে মুখ নড়াচড়া করে ‘না’ বোঝাচ্ছে। কিন্তু যার অন্তরে শোধের আগুন জ্বলছে তাকে থামানো দায়। নাদিম লিয়াকতের কলার চেপে মাটিতে টেনে হেঁচড়ে ফেলল। দিকবেদিক বাদ দিয়ে কট করে আলাদা করে ফেলল মাথাটা। নিভে গেল এক জ’ল্লা’দ এর কাহিনী। আফরাজ এর বুকেও প্রশান্তি বইল। তার দাদির কথা স্মরণে আসায় চোখজোড়া পানিতে ভড়ে যায়। নাদিম বিষয়টা খেয়াল করল। আফরাজ এর কাঁধে হাত রেখে আশ্বাস দিল। সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গম্ভীর গলায় বলে,
“এবার মুখোমুখি হওয়ার জন্য এই কু’ত্তার চুল ধরে ছুঁড়ে মা’র গুলিস্তান এ।”
নাদিমও বিনাদ্বন্দ্বে কাজটি করে ফেলল।
____
নাজীবা কবে ঘুমিয়ে পড়ল তার জানা নেই। আকস্মিক শরীরে কারো হাতের স্পর্শে সে ঘাবড়ে জেগে উঠল। দেখতে পেল রুমের মধ্যে দু’জন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মুখশ্রী দেখে মনে হচ্ছে এস্থানে সবকিছু স্বাভাবিক আছে। সে কাকুতিমিনতি করে বলে,
“আপু আমায় যেতে দিন। ঐ শ’য়’তানের বুড়ো আমাকে বিয়ে করতে চাই। প্লিজ আমাকে যাওয়ার রাস্তা করে দিন।”
মেয়ে দুটো চমকে গেল। তারা আসলে বুঝতে পারেনি কনে তার হবু বর-কে বুড়ো কেনো বলল? তাদের মধ্যে একজন বিরক্তির সুরে বলে,
“দেখুন ম্যাম আপনার তো আল্লাহর কাছে শোকরিয়া করা উচিৎ ওমন হ্যান্ডসাম ছেলেকে বর হিসেবে পাবেন বলে। আমরা তো দেখে ফিদা হয়ে গেছিলাম। কিন্তু এই আপনাকে বিয়ে করার জন্য তিনি আমাদের এখানে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে আনিয়েছেন। ভাবতে পারছেন কতটা লাকি আপনি হুম? আচ্ছা এসব ছাড়েন এখন। আসেন আপনাকে রেডি করতে হবে।”
নাজীবা তাদের কথায় হতবাক। সে পুরোপুরি রুমটা খেয়াল করে দেখল। সে যে বন্দী রুমে ছিল এই রুম সেই রুম নয়। বরং আলিশান সৌন্দর্যের কারুকাজে রুপিত একটি রুমের বিছানায় সে এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল। কিন্তু তার মনে হচ্ছে সে যাবত কয়েক ঘণ্টা বোধহয় ঘুমিয়েছে। তাকে এই রুমে আনল কে? শরীর শিউরে উঠল। কাঁপা গলায় মেয়ে দুটোর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আ আমাকে এখানে এনেছে কে? মানে আমি তো আরেক জায়গায় ছিলাম? আমাকে আনল কে একটু বলবেন?”
“বাহ-রে ম্যাম আপনার হবু বর ছাড়া আর কেই বা আপনাকে এখানে আনার সাহস পাবেন হুম? তিনি সকলের সামনে আপনার কোমরে হাত রেখে কোলে করে এই রুমে এনে রাখছেন।”
এসব বলে তারা মিটমিটে হাসতে লাগল। অন্যথায় নাজীবার শরীর ঘৃণায় ঘেমে গেল। ঠান্ডার কোনো অনুভূতিও তার মাঝে হচ্ছে না। কেমনেও বা হবে যাকে ঘৃণা করে সেই লোক কিনা তার শরীরটাকে এই রুম অব্দি এনেছে। দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করতে লাগল সে। মেয়ে দুটো অবাক হলো। তারা গিয়ে মেয়েটার পিঠে মালিশ দেয়। নাজীবার এই নিয়ে দু’বার বমির কারণে শরীর একেবারে দূর্বল হয়ে পড়েছে। মেয়ে দুটো তৎক্ষণাৎ ভিটামিন খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে। কেননা নাজীবার শরীরের অবস্থা দেখে তাদের মনে খটকা লেগে গেছে। মেয়েটি ভিটামিন রেডি করে নাজীবার মুখে দেয়। সে খেয়ে নিজেকে সামলে নেয়। তবুও হাত-পা যেন অবশ হয়ে গিয়েছে। সে কাতর দৃষ্টিতে পুনরায় বিনতি করল।
কিন্তু মেয়ে দুটো অশুনা করে তাদের কাজ আরম্ভ করে। নাজীবা বুঝতে পারল তার এখন পালানোর রাস্তা বন্ধ। অযথা শরীর নেতিয়ে পড়ছে দেখে পুতুলের মত বসে রইল। মেয়ে দুটোও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।
ঘণ্টাখানেক পরে মেয়ে দুটো নাজীবা-কে আগলে বিয়ের মঞ্চে এলো। তার চোখজোড়া জুড়ে আফরাজ কে খোঁজে চলেছে। মানুষটাকে একপলক দেখার জন্য সে কাতরাচ্ছে। তার চোখের দৃষ্টি পড়ল তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি-কুসুমা ভাবীর উপর। দাদি শ্বাশুড়ি-কে না দেখে ভাবল বোধহয় অসুস্থ। তাদের অবস্থাও করুণ। গু’লি হাতে ঘেরাও করে রেখেছে তাদের। আশপাশে অন্যান্য লোকগণ দেখেও প্রতিবাদ করতে পারছে না নাজীবা। আশ্চর্যের বিষয় লোকগণও হাস্যজ্জ্বল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। যেনো এখানে কোনো মজার অনুষ্ঠান হচ্ছে। তার পরিবারকে আড়ালে খু’ন করার দ্বায়ে হলেও দাহাব এই ব্যবস্থা নিয়েছে। এব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারল সে। নিজের স্বামীকে না দেখে আজ তিনদিন পাড় করে দিল। সেই যে মানুষটা অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের অপারেশন রুমে ছিল তার পর থেকে আর খবর অব্দি পায়নি। করুণ দৃষ্টিতে বরের বেশে বসা পাগড়ি পরা ব্যক্তিকে দেখে নাজীবার ক্ষোভে শরীর কাঁপছে। দাহাব এর পাশে নাজীবা-কে জোরপূর্বক বসানো হলো। সে উঠতে গেলেই এক হাত তার হাতকে মুঠোবদ্ধ করে নেয়। শরীরে অজানা এক শিহরণ বয়ে গেল তার। সে অবাক চোখে তার পাশে বসা ব্যক্তিকে দেখার জন্য হাঁসফাঁস করতে লাগল। কাজি ধীরস্থির ভাবে বিয়ে পড়ানো আরম্ভ করল। এ দেখে নাজীবার হৃদপিন্ড জোরে জোরে লাফাচ্ছিল। একে তো তার পরিবার বন্দিদশায় আছে তার উপর আফরাজ কোথায় সেটাও জানে না। এই বর বেশে পুরুষটাও বা কে সেটাও বুঝতে পারছে না। দ্বিধান্বিত চোখে সে নিজেকে সামলাতে হিমশিম খেতে লাগল। মেয়ে দুটো নাজীবার অবস্থা দেখে ঘাবড়ে তৎক্ষণাৎ স্যার অর্থাৎ বর-কে জানায়। কানে ফিসফিসিয়ে বলায় নাজীবা শুনতেও পেলো না। বর আড়চোখে বউয়ের দিকে তাকিয়ে কাজিকে ইশারা করল। তিনি কাছে এলে বর ফিসফিসিয়ে কি যেনো বলল। বরের কথা শুনে তিনি মাথা নেড়ে সায় দিলেন। নাজীবার কাছে এসব সহ্য হচ্ছিল না। তার মস্তিষ্ক পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে গেছে। সে করুণ দশায় নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল না আর। কাজি যখন কবুল বলতে বলল। তখনি সে বিষের শিশি খুলে মুখে নিতে গেলে ঠাস করে চ’ড় খেয়ে যায়। সকলে চমকে গেল। পাগড়ি সরিয়ে নাজীবা-কে চেপে ধরে পাশ ঘেঁষে বসিয়ে বলে,
“আরেকবার যদি গলদ কান্ড করেন তবে আপনার গাল আর গাল রাখবো না মনে রাখিয়েন বিবিজান।”
আফরাজ-কে স্বয়ং বর বেশে দেখে নাজীবার হুঁশ উড়ে গেলো যেনো। ঠোঁট কাঁপছে বেচারীর। কারো পরোয়া না করে আফরাজ-কে চেপে ধরে ফুঁপিয়ে উঠে। কাজি জোর গলায় পুনরায় কবুল বলতে বলে। সেও সংকোচহীন বলে ফেলল। স্বামীর বুকে মাথা রেখে বিড়ালছানার মত চেপে রইল। আফরাজ আলতো হেসে কবুল বলে দেয়। কাজি ‘আলহামদুল্লিল্লাহ্’ বলে মিষ্টিমুখ করলেন। একে একে মিসেস ফেরদৌসী, জনাব ইসমাইল এসে দোয়া করে দিলেন। এই ফাঁকে পিতা সমতুল্য শ্বশুর ক্ষমা চাইতে গেলে নাজীবা তৎক্ষণাৎ আগলে কেঁদে দেয়। ‘বাবা বাবা’ বলে ফুঁপায়। মিসেস ফেরদৌসী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। দু’জন কে জড়িয়ে সে প্রশান্তি অনুভব করল। পুনরায় তার মনেপ্রান্তে বাবা-মায়ের মুখ বেশে উঠে। কুসুমা এসে কথা বলতে নিলে খেয়াল করল নাজীবার শরীর টলছে। সে গিয়ে হাত ধরে, জাগ্রত হলো নাজীবা। তার ঘুমঘুম পাচ্ছে খালি। আফরাজ মৃদু হেসে বিবিজান-কে কোলে উঠিয়ে নেয়। নাজীবার ঘুমের মাঝে টলছে। বিবিজান এর কপালে চুমু এঁকে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। আড়ালে নাদিম তার চোখজোড়া মুছে নেয়। বোনকে এতবছর পর কাছ থেকে দেখেছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)থাক না আজ নাহয় সুযোগ পেল না কাছাকাছি গিয়ে আলতো হাতে বোনকে আগলে নেওয়ার। পরের দিন বউভাতের অনুষ্ঠানে তো সে থাকছে। তখন নাহয় বোনকে জড়িয়ে ধরে এতবছরের সাধনা পূর্ণ করবে। বোনের সবটা আবদার কোলজুড়ে পূরণ করবে। নাজীবা-কে ফ্রেশ করিয়ে গভীরভাবে চুমু খেলো আফরাজ। নাজীবার চোখ-মুখ কান্নার কারণে ফুলে গিয়েছে। স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ বকতে লাগল। তার শরীর হাতড়ে মা’ই’রের দাগ দেখায়, তার কোন কোন স্থানে দাহাব বুড়ো হাত লাগিয়েছে তা দেখিয়ে ফুঁপিয়ে বলে,
“আপনি আমাকে লুকিয়ে নেন প্লিজ আমার খুব জ্বলছে বুকটা। আপনার জন্য আমি অনেকবছর অপেক্ষা করেছি। জানেন বিয়ের মঞ্চে কবুল বলতে বলছিল যে, আমি তো মরে যেতে নিচ্ছিলাম। আপনাকে খুব ভালোবাসি জামাইজান। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না। আপনি যা বলবেন তাই করব। আর কখনো আপনার সাথে রা’গ দেখাবো না।”
বাচ্চাদের মত মেয়েটা বকে যাচ্ছে। আফরাজ শান্ত চোখে তার বিবিজান এর মর্মান্তিক অবনতি লক্ষ করছে। সময় ব্যয় করল না। অপেক্ষা সমাপ্তি টেনে ওষ্ঠজোড়া চেপে ধরে নেশাধায়ক গলায় আওড়ায়,
“হুসসস আর কথা নয়। ভুলে যাও সেসব কথা। যে কষ্টসমূহ ভোগ করেছো তার চেয়ে হাজার গুণ তোমায় সুখের সাগরে ভাসাবো আজ।”
নাজীবা চোখজোড়া বুজে নিল। আফরাজ আর কোনো দিক খেয়াল দিলো না। দু’নর-নারী নিজেদের মাঝে জমাকৃত কষ্ট বণ্টনে লেগে পড়ল। রাত প্রায় তিনটার কাছাকাছি হবে। রুমের মধ্যে মৃদু ঠান্ডা হাওয়ার অনুভূতিতে আফরাজ বিবিজান-কে বুকের মাঝে চেপে রাখল। চোখ খুলে দেখে তার বিবিজান ঠোঁট ফাঁকা করে বাচ্চাদের মত ঘুমাচ্ছে। কে বলবে এ মেয়েটা যুবতী নারী? এখনো বাচ্চামি গেলো না তার। বিবিজানের শরীরে আফরাজ তার গরম জ্যাকেট পরিয়ে দেয়। কম্বল দিয়ে দু’জনের শরীরকে ভালো করে চাপিয়ে নেয়। যেনো কনকনে ঠান্ডাভাব কমে। ঘুমন্ত পরীর দিকে চেয়ে আনমনে বলে,
“বিবিজান তোমার উপর হওয়া জুলুমের শোধ আমি নেবোই। দাহাব-কে হাজারো হুলের কষ্টে বিদবো।”
বিবিজান কে স্পর্শ করার স্পর্ধা বুঝিয়ে দেবে। তাদের পুনরায় বিয়ে হয়েছে। আগেরবার ধুমধাম করে না হলেও এবারের বিয়ে ছিল জনগণ সমেত অনুষ্ঠিত বিয়ে। যার কারণে সকলেই এখন অবগত আফরাজ বিবাহিত। তার নিজস্ব এক নারী আছে। সে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বিবিজান কে বলেনি। এতে তার বিবিজান এর সেসময় কার কান্ডের কথা ভেবে মুচকি হাসল। তার চোখে যদি বিষের শিশি না পড়ত তবে অঘটন ঘটে যেতো। দিব্য সাধনার পর পেয়েছে তার বিবিজান কে। তাই তো বাসর রাতে নাজীবার কান্নায় বলা কথাগুলোর সাপেক্ষে সেও আদরে ভরিয়ে দিল। দাহাবের স্পর্শিত স্থানগুলোতে আফরাজ স্বামী হিসেবে তার পবিত্র স্পর্শে নিজস্ব নারী-কে পূর্ণ করেছে।
চলবে….