#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৬
“আপনি আমাকে কি কারণে চ’ড় মা’রলেন আফরাজ? আমি তো আপনার কোনো কথা অমান্য করিনী। তবুও?”
কথার সমাপ্তির পূর্বেই পুনরায় ‘ঠাসস’ চ’ড়ের শব্দ হলো। এই নিয়ে আরেক বার চ’ড় মা’রল আফরাজ। একেবারে নীরবতা ছেড়ে গেল রুমের মধ্যে। বিবিজানের নিশ্চুপতা যেন আফরাজ এর মেজাজ খারাপ করে দিল। রাগান্বিত গলায় চিৎকার দিয়ে বলে,
“দাহাব এহসান এর সাথে কিসের সম্পর্ক তোমার হ্যা? খেয়াল করলাম আজকাল তোমার মোবাইলের কল-লিস্টে তার কলের আনাগোনা চলছে। আমি তো ব্যস্ত থাকায় তোমায় ফোন অব্দি দিতে করতে পারি না। তাই বলে অন্য পুরুষের সাথে তুমি রংতামাশায় মগ্ন হবে?”
স্বামীর হাতে চ’ড় খেয়ে প্রথমত আশ্চর্য হয়ে যায় নাজীবা। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কথাগুলো শুনে তীব্র রাগ পেয়ে যায় নাজীবার। স্বামীর মুখে অবাঞ্ছিত কথা শোভা পেল কেমনে বুঝার চেষ্টা করল সে। তার চরিত্রের উপর আঙ্গুল তোলার আগেই উপ্রে ফেলল নাজীবা। আফরাজ কে ধাক্কা দিলো। বিবিজান এর আকস্মিক ধাক্কা সামলাতে না পেরে কাপের্টের উপর পড়ে যায় সে। তার কারণে মাথায় হালকা আঘাতও পেল। ‘আহ’ করে মাথায় হাত ধরে উঠে বসে। নাজীবার রাগ দমে গেল। স্বামীকে আঘাত করার মোটেও ইচ্ছে ছিল না তার। বরং শুধু চুপ করাতে চেয়ে ছিল। তাই সে আফরাজ-কে ছুঁতে নিলে এক ঝটকায় তার হাত সরিয়ে দেয়। নাজীবা অবাক চাহনি নিয়ে বলে,
“দেখুন আইম সরি। আমি ইচ্ছে করে আপনা-কে আঘাত করতে চাইনি। আপনি আমার ব্যাপারে খারাপ কথা বলতে নিচ্ছিলেন। যেটা আমার সহ্য হচ্ছিল না। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমাকে দেখান কোথায় বেশি ব্যথা লাগছে? বলুন আমায়।”
নাজীবা-কে ছুঁতে দিল না। বরঞ্চ সে নিজ দায়িত্বে নিজের মাথায় মলম লাগিয়ে নেয়। কথা বিহীন রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নাজীবার চোখজোড়া কান্নায় ভরে গেল। সে দু’হাতে মুখ চেপে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। খানিকবাদে কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ চমকে তাকায়। শ্বাশুড়ি কে দেখে ইতস্তত বোধ করল নাজীবা। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কোনো মতে চোখ মুছে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। মিসেস ফেরদৌসী নাজীবার বাহু ধরে বিছানায় বসিয়ে দেন। নিজ হাতে পানির মগ এগিয়ে দেন। নাজীবা বিব্রত অবস্থায় পানির মগে চুমুক দিয়ে পান করে ফেলে। শ্বাশুড়ি মায়ের সামনে এরূপ অবস্থায় পড়া কতটা লজ্জার তা সে হারে হারে বুঝতে পারছে। মিসেস ফেরদৌসী বউমাকে নিশ্চুপ দেখে স্বেচ্ছায় কথা বলতে আগ্রহ দেখালেন।
“বউমা আফরাজ এর সাথে কোনো কারণে রাগারাগী হয়েছে? আজ প্রায় পাঁচ-ছয় দিন ধরে দেখছি তোমরা এক ছাদের নিচে থেকেও কোনো কারণে যেন দূরত্ব বহন করছো। এমনটা হওয়ার কারণ জানতে পারি কি?”
“আম্মু আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমনটা নয়। আসলে একটু রাগারাগী করেছেন উনি। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।”
কৌশলে চ’ড়ের কথাটা চুপিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে জোরপূর্বক হাসল নাজীবা। মিসেস ফেরদৌসী বুঝতে পেরে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলেন,
“তুমি বুঝি আমাকে শিখাচ্ছো বউমা? জানো কি তোমার এসব দিন আমি পার করে এসেছি। তাই শিখিয়ে লাভ নেই। বলো কি হয়েছে? মায়ের সাথে যদি ভাগাভাগি না করো। তবে সুরাহা পাবে কেমনে হুম? আর আমার ঢেড়স-কেও তো একটু মজা বোঝাবে তাই না?”
নাজীবা কষ্ট ভুলে হেসে ফেলল। যা তৃপ্তি সহকারে দেখতে লাগলেন মিসেস ফেরদৌসী। তিনি নাজীবার চিবুক ধরে মুখখানির উপর দোয়া পড়ে ফুঁ দিলেন। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“মা এবার বলো কি হয়েছে? মনে কষ্টের কথা জমিয়ে রাখলে মানসিক কষ্টে তোমার শরীরের অবনতি হবে। তাই নির্দ্বিধায় বলে ফেলো।”
নীরব হয়ে গেল নাজীবা। তবুও বিব্রত বোধক কণ্ঠে বলে উঠে।
“জানি না আম্মা কি হয়েছে উনার? আজ কয়েকদিন উনি আমার ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছেন। আমিও এসবে মন দেয়নি। কারণ সামনের মাসে মিড টার্ম এক্সাম। তাই পড়তে হচ্ছে। এখনো প্রথম সেমিস্টারের ছয় মাসের মধ্যে মাত্র একমাস শেষ হবে। হানিমুন ট্যুর’টা তো ক্যান্সেল করতে চেয়ে ছিলাম। কারণ কুসুমা ভাবী প্রেগন্যান্ট। কিন্তু কুসুমা ভাবী নিজ মুখে অস্বীকৃতি দিয়ে আমাকে আর আফরাজ কে যেতে বলে। ভাবীর ঐ অবস্থায় ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না। আকবর ভাই আর ভাবী মিলে আমাকে মেন্টালি সাপোর্ট দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম যে, মিড টার্মের পর একসপ্তাহ ছুটি দেওয়া হবে। তখন আমরা হানিমুনে যাবো। তিনিও দ্বিমত করেননি। কারণ উনিও বলছিলেন একমাস এর জন্যে ব্যবসাভিত্তিকে বিদেশে যাবেন। মন খারাপ হলেও মানিয়ে নিয়ে ছিলাম। কিন্তু যে কয়েকদিন ভার্সিটি যাওয়া আসা শুরু করলাম। উনার স্বভাব বদলে গেল। যেন আমার ভার্সিটিতে যাওয়া-আসা উনি মোটেও পছন্দ করছেন না। তার উপর আজকে উনি আমার ক্লাসের লেকচারার দাহাব এহসান স্যারের সাথে আমার নাম মিলিয়ে অসভ্য কথা বলতে চাইছিলেন। যা আমি সহ্য করতে না পেরে কান চেপে ধরতে নিলে হাতের ধাক্কা লেগে যায় আফরাজ এর সাথে। এতে উনি পড়ে একটু ব্যথাও পায়। আমি দেখতে চাইলেও দেখতে দিলেন না। রাগ করে চলে গেলেন।”
বউমা-র প্রতিটা কথা শুনে তিনি সন্দেহের কণ্ঠে বলেন,
“দাহাব এহসান এর সাথে কেনো তোমার নামে কটু কথা বলল সে? তুমি কি পরপুরুষের সাথে হাঁটাচলা করেছো?”
শ্বাশুড়ি মায়ের গাম্ভীর্য ভরা গলায় নাজীবা থতমত খেলো। তৎক্ষণাৎ মাথা নেড়ে না বোঝিয়ে বলে,
“এমনটা না আম্মা। আমি তো দাহাব স্যার-কে শুধু স্যারই ভাবি। উনিই আমাকে একলা ফেলে যেমনে তেমনে কথা বলতে চাইতেন। এই যে আপনাকে বললাম, কল লিস্টে স্যারের নাম্বার দেখে উনি রাগারাগী করলেন। অথচ আমি স্যারের কোনো কলের ব্যাপারে জানিই না। অবশ্য স্যার জিজ্ঞেস করে ছিলেন। আমি কেনো তার কল রিসিভ করি না? কিন্তু এর জবাব না থাকায় আমি মুখ ফিরিয়ে চলে এসে ছিলাম। এর পর থেকে স্যার উনার গাড়িতে উঠতে বাড়াবাড়ি করতেন। যেন উনি আমাকে পৌঁছে দিতে পারেন। তাই ভয়ে আমি নিজেকে উনার কাছ থেকে সরিয়ে নিতে থাকি। এসব ব্যাপারেই হয়ত উনি জানতে পেরেছেন। কিন্তু আম্মা আপনিই বলুন এতে কি আমার দোষ ছিল?”
কথার স্বরে কান্নাভাবটা চলে এসেছে নাজীবার গলায়। মিসেস ফেরদৌসী বুকে আগলে নেন মেয়ে-কে। ছোট বাচ্চার মত মায়ের গন্ধ পেয়ে বুকের সাথে গুটিয়ে গেল নাজীবা। আজ বহু পর সে মায়ের স্পর্শ পেল। কান্নার মাঝেও সুখ অনুভব করল। আড়ালে আফরাজ তৃপ্তির হাসল। সে রেগে লাইব্রেরীর মধ্যে পায়চারী করছিল। সে জানত তার বিবিজান মন খারাপে নিজের শরীরকে কষ্ট দিতো। তাই বুদ্ধি করে সে তার মা’কে ফোন দিয়ে রুমে যেতে বলে। তার মাও বিনা বাক্য ব্যয় করে ছেলের বেডরুমে চলে যান। সেখানে গিয়ে ছেলের ফোন করার কারণ বুঝতে পারলেন। কাপের্টের উপর হাঁটুতে মুখ গুঁজে বউ-মা কে কাঁদতে দেখলেন। আফরাজ ভাবনা ছেড়ে পুনরায় লাইব্রেরীর মধ্যে চলে এলো। সে রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল। কারণ তার মা রুমে এসেছে কিনা তার একবার পরখ করতে। মা-কে দেখে সে নিশ্চিন্তে লাইব্রেরী রুমে ফিরে গেল। তার ইচ্ছে করছে বিবিজান-কে বুকের মধ্যে চেপে ধরে চোখের পানি নিজ হাতে মুছে দেওয়ার। কিন্তু অনুতপ্ততায় সে নিজের রকিং চেয়ারে বসে চোখ বুজল। রকিং চেয়ারে দুল খেতে থেকে ভাবনায় ডুব দিল।
পূর্বের ঘটনা……
যখন থেকে আফরাজ তার স্মৃতি সম্পর্কে জানতে পারল। যে, নাজীবা-ই তার ছোটবেলার খেলার সঙ্গী এবং বর্তমানে তার অর্ধাঙ্গিণী। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) তখন থেকে সে নিজের আচরণ স্বয়ংসম্পূর্ণে পরিবর্তন করে নেয়। প্রতিনিয়ত নাজীবার প্রতিটা কাজে খেয়াল রাখা শুরু করে, কোনো ব্যথা পেলে তৎক্ষণাৎ সেই ব্যথা উপশমের জন্য তড়-জড় লাগিয়ে দেয়, কোনো কাজ করলে সেও তার সঙ্গে থাকবে নাহয় কলের মধ্যে তাকে দেখতে থেকে কাজ করবে এই শর্ত জুড়ে দেয়। স্বামীর কান্ডে নাজীবা ক্লান্ত হয়ে গিয়ে ছিল। তার স্বামীর পাগলামী ওতপ্রোতভাবে নাজীবার হৃদয় রাঙিয়ে দিতে লাগল। কুসুমা ভাবী-কে তো আকবর কাজে হাতে দিতে বারণ করে দিয়ে ছিল। কারণ সে প্রেগন্যান্ট এই নিয়ে তিন সপ্তাহ চলছে। তার প্রেগন্যান্সির ব্যাপারে যে দিন আকবর শুনল , সে দিন খুশিতে যেন পাগলামীপনা ছাড়িয়ে দিয়ে ছিল। সে তার অনাথ জীবনে এত ভালোবাসা কামনাও করেনি। অথচ আল্লাহ তাকে ভরিয়ে দিচ্ছেন। সম্ভবতাও হচ্ছিল আফরাজ এর কারণে। তার বউ প্রেগন্যান্ট শুনে সর্বপ্রথম বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ছিল হাসিমুখী ছেলেটা। আফরাজ ও ব্যঙ্গ করে নেগপুল করতে থাকে। নাজীবা তো কুসুমা ভাবীর আগপিছ ঘুরতে থেকে প্রেগন্যান্টে কিরূপ অনুভূতি হয় তা নিয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করতো। কিন্তু নাজীবার বায়ো-ডেটা চেক করার পর আফরাজ সিদ্ধান্ত নিল। সে তার বিবিজান-কে অনার্সে ভর্তি করিয়ে দিবে। কারণ তার এইচএসসি পরীক্ষার পর এক’বছর পার হয়ে গেল। অথচ নানাবিধ কারণে তার শিক্ষাময় জীবন থেমে গিয়ে ছিল। সেই ভিত্তিতে খুশির মহলে নাজীবার শিক্ষা ব্যবস্থার কথাও বলে দেয়। যা শুনে নাজীবাও ভীষণ খুশি হয়। অনার্সের প্রথম সেমিস্টারের ফি পে করার তিনদিন পর ফ্রেশার্সের জন্যে ওরিয়েন্টেশন ডে ডিকলার করা হয়। আফরাজ শার্ট-কোর্ট-প্যান্ট পরে নিজেকে স্টাইলিশ লুকিং দেয়। নাজীবা রাগে ফোঁসে উঠে। মুখ ভেটকিয়ে বলে,
“এত সুন্দর হওয়ার দরকার নেই। আমার নামের সাথে মিসেস এড করা আছে। আপনি যে আমার জামাই সেটা সবাই জেনেই যাবে।”
আফরাজ বাঁকা হেসে বলে,
“ভুল বললে বিবিজান। তোমার নাম মিস নাজীবা মুসাররাত দেওয়া। আর ম্যারিটাল স্টেটাসে আনম্যারিড দেওয়া। যেনো কেউ আমাদের সম্পর্কে না জানতে পারে সেই ব্যবস্থাই করে রেখেছি। এখন তো আমি মেয়েদের সঙ্গে ভাব নিতেই পারব রাইট?”
আফরাজ এর কথায় রাগে বালিশ তুলে ছুঁড়ে মা’রল নাজীবা। সেও কম কিসে? ওয়াশরুমে গিয়ে ঢিলাঢালা কটন সিল্কি থ্রিপিচ পরে নেয়, চোখে কাজল-আইলানার টেনে মুখে হালকা পাউডার মেখে নেয়। মাথায় সুন্দর করে হিজাব পরে পিনআপ করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায়।
আফরাজ থ হয়ে গেল। নাজীবা হাতের কবজিতে আতর মেখে ব্ল্যাক মাস্ক পরে স্বামীর দিকে তাকায়। স্বামীর ঘোরলাগা নজর দেখে সন্নিকটে গিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। আফরাজ এর ধ্যান ফিরে বিবিজান এর কান্ডে। তার নজরকাড়া সৌন্দর্য দেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“এত সাজার কোনো দরকার ছিল না। যাও গিয়ে মুখ ধুয়ে আসো। তোমার ওরিয়েন্টেশন-ডে-তে গিয়ে বেসিক জিনিসগুলো দেখেই চলে আসব আমরা। তাই এতো রেডি-সেডি হয়ে ছেলেদের ফাঁদে ফেলতে হচ্ছে না। ভার্সিটির কোনো ছেলেও পাগলের প্রেমে পড়ে না।”
নাজীবা মুখ ভেঙিয়ে মুখের পাউডার মুছে নেয়। তবুও তার সৌন্দর্য কমেনি। বরং মনে হচ্ছিলো সৌন্দর্যতা দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। আফরাজ মনে মনে বলে,
“আজকের পর প্রতি ক্লাসের বাহিরে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিতে হবে। নাহলে বউ হারানোর সম্ভাবনা ১০০%।”
“নিজের মত করে কি বলছেন হ্যা? যা বলার জোরে বলুন?”
আফরাজ নীরবে নাজীবার হাত ধরে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে। ওরিয়েন্টেশন-ডে সকলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। অতঃপর আফরাজ আর নাজীবা স্বামী-স্ত্রী হওয়ার কারণে একসাথে বসে ছিল। সকল টিচার্স এর পরিচিতি দেওয়া হলো। এতে বেশ বোরিং ফিল করে দুজনে। অতএব, আড়ালে দু’জনে মোবাইলের মধ্যে লুডু খেলতে লাগে। হঠাৎ করেই হোস্টের ভাষণে এমন একটি নাম শুনল। যে নামের মালিক-কে আফরাজ এই ভার্সিটি-তে আশা করেনি।
‘দাহাব এহসান দ্যা নিউ লেকচারার অফ ফার্মেসী ডিপার্টমেন্ট’।
দাহাব এহসান? নামটায় নাজীবাও চমকে সামনে তাকায়। আফরাজ আড়চোখে বিষয়টা খেয়াল করে। দাহাব এহসান কে আপাত-মস্তক চোখ বুলিয়ে নেওয়ার পরপর নাজীবা শান্তির শ্বাস ফেলল। কেননা স্টেজে উক্ত নামের মালিক-কে দেখতে আফরাজ এর বয়সী মনে হচ্ছে। একটুর জন্যে তার মনে হয়ে ছিল তার অতীতের সৎ দাদা বুঝি বর্তমানে ফিরে এলো। বুকের কাঁপনও স্বাভাবিক হয়ে যায়। আফরাজ-কে ইশারা করে আর খেলবে ‘না’ বোঝায়। সেও দ্বিরুক্তি করল না। দাহাব এহসান লেকচারার হিসেবে তার বক্তব্য শেষ করে স্টেজ থেকে নেমে যায়। তাদের পেছনের সিট থেকে কয়েকজন ছেলে শিস বাজিয়ে নাজীবার কাধে স্পর্শ করার স্পর্ধা করে। বি’শ্রী হেসে নাজীবা-কে উ্যক্ত করতে লাগে।
চলবে……..
#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৭ (রহস্যের টুয়িস্ট-০২)
“আফরাজ উঠ ব’দ’মাই’শ। এত বড় কান্ড করে আরামে ঘুমিয়ে আছিস। তুই ভার্সিটির ছেলেপেলে-রে মা’ই’রে বেঁধে রাখলি কেন? ঐ ব্যাটা ঘুম থেকে উঠ।”
বন্ধুর পকপক আফরাজ এর শ্রবণে যেতেই তার চোখজোড়া খুলে গেল। শান্ত দৃষ্টিতে আকবরের দিকে তাকিয়ে আড়মোড়া ভেঙ্গে বসল। শরীরটা টান টান করে একপলক জানালার বাহিরে দৃষ্টি ফেলল। পরক্ষণে আকবর-কে বলে,
“যা তোর ভাবী-রে বল কফি বানিয়ে আনতে।”
বন্ধুর ভাবলেশহীন স্বভাবে আতংকে ম’রম’রা অবস্থা আকবর এর। একে এই দামড়া ছেলে রাজনীতিবিদের ছেলেপেলে-রে কিডন্যাপ করল। এখন শান্তস্বরুপ প্রদর্শন করছে, যেন সে ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না। আকবর বিরক্তসূচক কণ্ঠে কাজের মেয়ে-কে ডাক দেয়। মেয়েটা এলে তাকে আফরাজ এর বলা কথা পুনরাবৃত্তি করে বলল। মেয়েটি মাথা নেড়ে নাজীবার কাছে চলে যায়। আকবর চোরা-চোখে চৌপাশ দেখে দরজা লাগিয়ে বন্ধুর শিউরে গিয়ে বসে পড়ে। বন্ধুর অস্থিরতায় হাসি পেল আফরাজ এর। কেননা সে তো ভুল কিছু করেনি। অন্যায় হতে দেখল এর প্রতিবাদ করল। কথায় আছে না, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুজনে সমান দায়ী।’ তার বিবিজান অন্যায় সহ্য করে নেই বলে, জুতো পিটা করে ছিল। অতঃপর আড়ালে আফরাজও স্বামীকর্ম পালন করল। অস্থির-চিত্তে একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছে আকবর। অথচ আফরাজ এর মাঝে কোনো ভাবাবেগ নেই। চোখ-মুখে পানি ছিটিয়ে মাইন্ড ফ্রেশ করল। তোয়ালে মুখ মুছে জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয় আকবর। দরজায় টোকা পড়ার শব্দে আফরাজ গিয়ে দরজা খুলল। নাজীবা-কে নীরবে হাতে দু’কাপ কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। ঢোক গিলল আফরাজ। এ মেয়ে যে, কেনো পূর্ণ হৃদয়ের আঙিনায় জুড়ে বাস করছে? এখন যে তার নিশ্চুপতা আফরাজ এর বক্ষকে পুড়াচ্ছে সেটা কি মেয়েটা বুঝতে পারছে না? গলা ঝেড়ে মুখ থেকে ‘হুম’ শব্দ বের করল আফরাজ। নাজীবা মনে মনে ভেংচি কাটে। সে পণ করে রেখেছে , এই বজ্জাত হিটলারের সাথে সারাদিন কথা বলবে না। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) কফির ট্রে সম্মুখে ঠেলে দেয়। তবুও আফরাজ ‘কি’ বলে! নাজীবা দাঁতে দাঁত চেপে গরম চোখে আকবরের দিকে তাকায়। বেচারা এমনিতে অস্থিরতায় মরি মরি অবস্থা। তার উপরে ভাবীর গরম চোখ দেখে তড়িঘড়ি এসে ট্রে-টা হাতে নিয়ে ‘ধন্যবাদ ভাবী। এবার যান।’ বলেই আফরাজ-কে সরিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। আফরাজ বোকা বনে গেল। আকবরের পিঠে ধরাম করে এক চা’প’ড় মা’রে। বেচারা ‘উহ উহ উহ’ করে চেঁচালো। আফরাজ মুখ ভেটকিয়ে বলে,
“তোরে এত দরদ দেখাইতে কে বলছিল হুম? বউ আমার, আমার নটাংকি করতে মন চাইলে তো অবশ্য ঢং করবই তাই না? তোর থেকে কেন মাঝে এসে মিডেল ফিঙ্গার দেখাতে হলো? তোর কাজে তো কখনো দেখাইনি।”
“আরে ব্যস কর বাপ। ভাবীর রাগের চেহারা দেখলি না! তুই যদি আরেকটু দেরি করতি। তাহলে তোর চেহারার হাল বেহাল করে দিতেন ভাবী। সঠিক সময়ে যে তোকে বাঁচিয়েছি এর শোকরিয়া আদায় কর ব্যাটা।”
“তোর ভাবী রাগ করলে নাকের ডগা ফুলিয়ে লাল করে ফেলে। দেখতে সেই জাকার্স লাগে।”
“বিয়াত্তা ব্যাটা বউয়ের রুপে পাগল হয়ে আছে।”
নিম্ন স্বরে বিরবিরিয়ে বলল আকবর। আফরাজ কফির মগ নিয়ে জানালার ধারে গিয়ে চুমুক দেয়। আকবরও একইভাবে বন্ধুর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আফরাজ কফির মগে চুমুক দিতে থেকে স্বেচ্ছায় বলে উঠে।
“ছেলেগুলো সুস্থ আছে তো?”
“সুস্থ? লাইক ম্যান সিরিয়াসলি? তোর মনে হয় তোর হাতের মা’ই’র খেয়ে সুস্থ থাকবে? কুদরতে কারিশমা বলে বেঁচে গেছে শা’লা’রা। নাহলে জানে ম’রলে তোর জন্যে কেয়ামত হয়ে যেতো। এমনিতে ভয়ে আছি তোর সঙ্গে সঙ্গে না আমিও ফেঁসে যায়।”
“হুম গ্রেট আইডিয়া ফেঁসে যাবি। তুই যদি না ফাঁসিস তাহলে বন্ধু নামে কলঙ্কিত হয়ে যাবি। তাই বন্ধুর জন্য জান দেওয়াও সুন্নত বুঝলি।”
“শা’লা আমাকেই কপি মা’রতেছিস।”
“ইয়েস মাই ডেয়ার ব্রো। নাউ লিসেন টু মি কেয়ারফুলি। ছেলেগুলো বেহুঁশ হয়ে আছে। গার্ডস কে বল ওদের জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করতে। আমারও হাত নিশপিশ করছে। সেদিনের মা’রা কম হয়ে গেছে। আজকে আরেকটু আচ্ছামত দিতে হবে। এরপর মেরামতের ব্যবস্থা করব।”
কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে মগটি ট্রে-র উপর রেখে বন্ধু-কে বাহিরে আসতে ইশারা করে। সেও বাধ্যতামূলক কফি শেষ করে বেরিয়ে যায়। নাজীবা ড্রয়িং রুম থেকে বিষয়টা খেয়াল করে। কিন্তু ডাক দেয় না। হাতে তেল নিয়ে তার দাদী শ্বাশুড়ির চুলে মেখে দিতে থাকে। সে দৃষ্টিতে না চাইলেও একজোড়া প্রেমিক পুরুষ ঠিকই তার দৃষ্টিদ্বয় নাজীবার মুখশ্রীর দিকে চেয়ে বেরিয়ে যায়। সেটা যে আফরাজ ছাড়া অন্য কেউ নয় তা বলাবাহুল্য। দাদীর চুলে বিলি কাটতে থেকে তেলগুলো আগপিছ ভালোমত মেখে দেয়। এতে খাদিজা বেগমের মাথা ব্যথাও কম হয়ে যায়। মিসেস ফেরদৌসী সন্তুষ্টজনক দৃষ্টিতে শ্বাশুড়ি আর তার বউমা-র হাবভাব দেখছেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) জনাব ইসমাইল টুপি খুলে ভাঁজ করে রাখলেন। বউ-কে অন্যমনস্ক দেখে মৃদু ধাক্কা দেন। মিসেস ফেরদৌসী ভ্রু কুঁচকে স্বামীর দিকে তাকান। চোখের ইশারায় ‘কি’ বোঝান। এতে জনাব ইসমাইল বলেন,
“তোমার কি মাথা ব্যথা করছে? বউমা-কে তেল লাগিয়ে দিতে বলব?”
“না গো আমি শুধু তাকিয়ে আছি। মেহজাবিন সিরাত খুব কপাল করে এ মেয়ে-কে পেয়ে ছিল। আমারও না আমাদের বড় মেয়ের কথা খুব মনে পড়ে। মাত্র সাত বছর বয়সে জন্ডিস রোগের কারণে মারা যায়। তারপর আফরাজ এলো গর্ভে। মেয়ে হারানোর পর একমাত্র ছেলে পেয়ে কলিজার ভেতর লুকিয়ে রাখলাম। যেনো কোনো ধরনের রোগবালাই ছেলে-কে ছুঁ’তে না পারে। আলহামদুলিল্লাহ পারেওনি। আল্লাহর অসীম রহমতে সবাই সুস্থ আছি। কিন্তু তবুও মেয়ে আমার আফরিন-কে ভোলা দায়। বউমা-র চেহারার আদলে নিজের মেয়েকে খুঁজি।”
“তুমি যে তাকে মেনে নিলে এই অনেক বেশি। তাই হয়ত তোমার মনে মেয়ে-কে পুনরায় ফিরে পাবার আশা মনে জম্মেছে। নাজীবা-কে আগলে রাখো, দেখবে মেয়ের শূন্যতা আর অনুভব করবে না।”
মিসেস ফেরদৌসী মুচকি হেসে মাথা নাড়লেন। জনাব ইসমাইল তার মা আর বউমা-র চক্ষু আড়ালে বউয়ের হাতে হাত রেখে চেপে ধরেন। মিসেস ফেরদৌসী চোখজোড়া বড় করে ছাড়তে ইশারা করেন। কিন্তু তিনি ছাড়েন না। উল্টো হেসে দেন। খাদিজা বেগম আর নাজীবা মিটমিটে হাসতে লাগল। দাদী শ্বাশুড়ি-কে চুল বেঁধে দিয়ে নাজীবা উঠে পড়ে। শ্বশুর শাশুড়ির জন্য চায়ের ব্যবস্থা করতে রান্নাঘরে চলে যায়। ভাবল আজ মজার শীতের ভাপা পিঠা বানাবে। শীতের সময় পিঠা ছাড়া মজে না। বিধেয় কোমড়ে শাড়ির আঁচল গিঁট মে’রে ভাপা পিঠার জন্য চাল গুঁড়ো প্রস্তুত করার জন্য সামগ্রী জোগাড় করে নেয়। প্রথমে চুলোয় চায়ের পানি বসিয়ে দেয়। চাপাতা,দুধ,চিনি চুলোর পাশে রেখে গরম পানিতে দুয়েক চামচ চাপাতা ঢেলে নেয়। তখনি টিভির আওয়াজ শুনতে পেল নাজীবা।
খুব উচ্চ স্বরে টেলিকাস্ট করা হচ্ছে যে, ‘
রাস্তার পাশে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত পাঁচ জন ছেলের আহত দশায় পাওয়া গেল। তাদের আহত দশা ছাড়াতে এগিয়ে আসছেন মিস্টার আফরাজ ফাহিম আর তার সহযোগী বন্ধু আকবর। দু’জনের সহায়তায় ছেলেগুলো কে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসার পর জানা যাবে তাদের আ’ঘা’তকারী ব্যক্তির নাম। নাম জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন ধন্যবাদ।’
খবর দেখে নাজীবা-কে ঘাবড়ে যায়। কেননা ছেলেগুলো অন্য কেউ নয়। স্বয়ং তার সঙ্গে বা’জে আচরণ করা ছেলেগুলো ছিল। তাদের একেক জনের চেহারা প্রতিস্পষ্ট মনে আছে তার। তবে কি আ’ঘা’তকারী আফরাজ? কথাটা ভাবতেই নাজীবার গলা শুকিয়ে গেল। ছেলেগুলো সত্য কথা প্রকাশ করলে আফরাজ ফেঁসে যাবে এই ভয়ে ভীতিগ্রস্থ হলো। হঠাৎ ‘ছ্যাত’ করে শব্দ হওয়ায় নাজীবার ধ্যান ফেরল। চায়ের পানি গুড়িয়ে পড়ছে। হকচকিয়ে চুলোয় অফ করে দেয়। চুলোর ধারে দাঁড়িয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল সে। কুসুমা হেঁটে রান্নাঘরে এলো। নাজীবা-কে ভাবান্তর পেয়ে মৃদু গলায় ডেকে উঠে। সে ডাকের শব্দে ফিরে কুসুমা ভাবী-কে দেখল। সে এসে নাজীবার চিন্তিত মুখশ্রী দেখে প্রশ্ন করে।
“কি হলো ভাবী তোমার মুখ লটকে রইল কেনো? নিউজে দেখলাম ভাইয়া কত বড় সেবকের কাজ করছেন। ভাইয়া এ-কাজে তো তোমার গর্ব করা উচিৎ।”
“আর গর্ব? জানেন ছেলেগুলো কে? আপনা-কে ভার্সিটির ফাস্ট দিনের কথা বলতে চেয়ে ছিলাম মনে আছে? কিন্তু আপনার আফরাজ ভাইয়ের কারণে বলতে পারিনি। তিনি সোজা টেনে রুম নিয়ে গিয়ে ছিল। আর খাওয়ার সময়ে খাবার নিয়ে রুমে চলে এসেছিল। বলতে গেলে গম্ভীরতা বজায় রেখে ছিল?”
কুসুমা ভেবে ‘হ্যা’ বলে উঠে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাজীবা বলতে লাগল।
“ভাবী সেদিন ভার্সিটির ওরিয়েন্ট ক্লাস দেখে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছিল। তার উপর আমাদের পেছনে পাঁচজন ছেলে প্রচুর টর্চার করছিল। তাই আফরাজ আমাকে নিয়ে হল রুম থেকে বের হয়ে যায়। ভেবে ছিলাম পরিস্থিতি ঘোলা হবে না। কিন্তু দেখলাম ছেলেগুলো ও পিছে পিছে চলে এসেছিল। আমি যেহেতু ভার্সিটির স্টুডেন্ট। তাই তারা ভেবে ছিল রেগিং করতে পারবে। তবে তারা তো জানত না আমার সঙ্গে যে,স্বয়ং আমার স্বামী দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের মধ্যে একজন আমাকে অশ্লীল কথা বলে ফেলে। যা আমি অশুনা করলেও আড়চোখে তোমার ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তার চোখজোড়া ক্রমশ লাল হচ্ছিল। ঢোক গিলে তার হাত চেপে ধরলাম। এতে যে, বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি নিউজ দেখেই তা বুঝেছি।”
“মানে নিউজ দেখে কেমনে বুঝলে? নিউজে তো বলেনি কে তাদের এমন মারাত্মক আহত করেছে। শুধু ছবি দেখিয়ে উল্টো কে মে’রেছে তা জানার অপেক্ষায় আছে বলল।”
“কারণ ভাবী ছবিতে একেকজনের হাত,পা,কপাল,মাথা,ঘাড় ফাটা আর ভাঙ্গা। এগুলো উনি ছাড়া আর কেউ করবে না। ছেলেগুলো তাদের যে যে অঙ্গ দিয়ে আমাকে স্পর্শ করার জন্যে অশ্লীল কথা বলেছিল। আফরাজও সেই অঙ্গগুলোকে মারাত্মক ভাবে আহত করেছে। ভাগ্যিস নিহত করেনি। তাহলে পাপ হয়ে যেতো।”
“ওরা বলে দেবে যে, এই কাজ ভাইয়ার!”
“আফরাজ এর’টা না বললেও আমার’টা অবশ্য বলে দেবে।”
কথাটা অন্যরকম শোনাল কুসুমার কানে। সে প্রশ্নাতীত দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“তোমার কোনটা বলে দেবে?”
নাজীবা ফোকলা দাঁতের হাসি দিয়ে বলে,
“হিহি আমাকে টিজ করে অশ্লীল কথা কেনো বলছিল এর শাস্তি দিছি। জুতো খুলে নির্জন মাঠে ধুমধাম জুতোর বা’রি মে’রে’ছি। তারাও প্রতিঘাত করতে চেয়ে ছিল। কিন্তু কেনো জানি করতে পারেনি। কি দেখে যেনো তারা চুপটি হয়ে মা’র খেয়ে গেল। পরে ক্ষমা চেয়ে পালিয়ে যায়। আমিও আর বিষয়টা ঘাঁটলাম না। তোমার ভাইয়ার সাথে চলে এলাম। তাতে কি দেখলে না জমানো রাগ ঠিকই ফলিয়ে ছেড়েছে। আফরাজ এমনি সেই কিশোর-কালেও রাগ উঠলে জমতে দেওয়া তার পুরোনো স্বভাব। সর্ব রাগ অন্তিম মুহূর্তে ফলানো তার বদভ্যাস বটে।”
দু’জনে হেসে ফেলল। কুসুমা শেষের কথাগুলো না বুঝলেও, নাজীবার হাসিমাখা চেহারা দেখে আর প্রশ্ন করেনি। কুসুমা তার জন্য বাটিতে আচার নিয়ে বের হতে গেলে নাজীবা যেতে দেয় না। সাভেন্ট কে দিয়ে চেয়ার আনিয়ে নেয়। চেয়ারে বসতে বলে শ্বশুর, শাশুড়ি আর দাদী শ্বাশুড়ি-কে চা ,বিস্কুট দিয়ে আসে। বুদ্ধি করে কথার ছলে চা বানিয়ে ফেলে ছিল। তাই ভাপা পিঠার কাজ শুরু করতে এখন তার কোনো ধরনের ঝামেলা হলো না। আচার খেয়ে খেয়ে নাজীবার চাল গুঁড়ো করা দেখছিল কুসুমা। সে রান্নায় তরকারির কাজ পারলেও পিঠা বানানোর কাজ পারে না। তবে অভিজ্ঞের ন্যায় নাজীবার পিঠা বানানো দেখে সে বিস্মিত প্রায়।
_____
দাহাব এহসান ঘরের আসবাবপত্রের বেহাল দশা বানিয়ে ফেলেছেন। তার ক্রোধ মাত্রাতিরিক্ত সীমানায় পৌঁছে গিয়েছে। নাজীবা তার ফোন কলের জবাব দেয় না, আফরাজও তার স্ত্রীর রক্ষার্থে গার্ড’স লাগিয়ে রেখেছে। তিনি চেয়ে ছিলেন, নাজীবা-কে হানিমুন ট্যুর এ হাতে নাতে ধরার । কিন্তু তাদের হানিমুন ট্যুর ক্যান্সেল হওয়ায়। একাজ সম্ভব হলো না। বেঁচে গেল বলা চলে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)রুমের মধ্যে ধুপধাপ পা চালিয়ে পায়চারী করছে সে। ভাবনা মতে কালকে তিনি ডিএনএ রিপোর্ট দেখে বুঝতে পারবেন, আফরাজ এর ওয়াইফ নাজীবা কি মোবারক আলীর মেয়ে কিনা! কারণ খুব কৌশলে তিনি এক মেয়ে-কে ভাড়া করে আফরাজ এর বাসায় সাভেন্ট হিসেবে পাঠিয়ে ছিলেন। সেই মেয়েই নাজীবার চুলগুচ্ছ জোগাড় করে দাহাব এহসান এর হাতে দেয়। তার অস্থিরতা কমছিল না। এজন্য তিনি চুলগুলো টাকা খাওয়ে এক ডক্টর-কে হাত করে চুলগুচ্ছ পরীক্ষা করতে পাঠিয়ে দেন। কালকে রিপোর্ট পেলে তবেই সে মুখোমুখি হবে নাজীবার।
অন্য রুমে মিসেস হিয়ার পাশে আহত অবস্থায় তার স্বামী শুয়ে আছেন। তাদের দিকে ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাবাসসুম। তার বাবার র’ক্তক্ষ’য়ী শরীর দেখে তার নিজের শরীর কাঁপছে। এর চেয়েও বড় ব্যাপার হলো সে তার চাচা দাহাব এহসান কে প্যাকেটজাত র’ক্ত অনায়াসে পান করতে দেখেছে। এ নিয়ে বার কয়েক তার মা-কে প্রশ্ন করেছে সে। কিন্তু জবাব পেল না। কারণ তার মা নিজেই হিতা-হিত জ্ঞানহীন দৃষ্টিতে তার বাবার মুখপানে চেয়ে আছে। মিসেস হিয়া তার স্বামীর আহত দেহে মৃদু স্পর্শ করে বলেন,
“কেনো তুমি শত্রুতা তৈরি করছো বলোতো? এসবে না জড়িয়ে মেয়ে কে নিয়ে দূরে চলে গেলেই তো পারো। দেখলে না বাবার সঙ্গে লড়াই করতে যাওয়ার ফলাফল। বাবার কাছ থেকে তুমি যে সম্পত্তি ছিনিয়ে নিতে চেয়ে ছিলে , সেই সম্পত্তির জন্য কত জনের প্রাণ অকালে হারিয়েছে তা মনে নেই? ভুলে গেলে মোবারক ভাই-কে? কেমনে নিদারুণ মৃত্যু দিয়ে ছিল তাদের-কে বাবা।”
চুপ করে চোখ বুজে রইলেন মিসেস হিয়ার স্বামী জনাব লিয়াকত। জীবনে বিনা উপার্জনে সব হাতের নাগাল পেয়ে ছিলেন তার শ্বশুর দাহাব এহসান এর কারণে। কেননা তার অসৎ কাজে সঙ্গযোগী ছিল তিনি নিজে। আর সেই শ্বশুর কিনা তাকে দেওয়ালের পেছন গুপ্ত রুমে বন্দি করে রেখে ছিল। স্বার্থ হাসিলের লড়াইয়ে তিনিও যুক্ত আছেন। তাবাসসুম বাবা-মায়ের আলাপচারিতা বুঝতে না পেরে বিরক্ত গলায় বলে,
“ড্যাড তুমি চার বছর ধরে কোথায় ছিলে? আইমিন হঠাৎ একমাস ধরে তোমাকে নীরবে পড়ে থাকতে দেখছি। আজ তো সুস্থবোধ করছো। এখন নাহয় বলে ফেলো। কি হয়ে ছিল তোমার সাথে? আর তোমার ভাই র’ক্তখাদক সেটাও কি আগে থেকে জানতে?”
মেয়ের কথায় চরম ক্রো’ধ জেগে উঠে জনাব লিয়াকত এর মনে। তিনি হুংকার দিয়ে বলেন,
“এই মেয়ে কি চাচা চাচা লাগিয়ে রাখছিস হে? কে তোর চাচা? ঐ বুড়ো আমার ভাই লাগবে কেমনে হ্যা? ওই বুড়োর বর্তমান বয়স কত জানিস? প্লাস্টিক সার্জারির সাহায্যে যৌবনের রুপ ধরলেই সে যুবক হয়ে যায় না বুঝলি? ঐ বুড়োর রুমে গিয়ে দেখ সব বুঝতে পারবি।”
তাবাসসুম বাবার রূঢ় কথায় ক্রোধান্বিত হলেও দাহাব এহসান এর ব্যাপারে আসল পরিচয় জানার উদ্রেক বেশি ছিল তার মনে। সময় নষ্ট না করে সে তার নামেমাত্র চাচার রুমের বাহিরে গিয়ে দাঁড়ায়। আড়ালে জানালার কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে যায়। পর্দা সরিয়ে পায়চারি করতে দেখতে পেল দাহাব এহসান কে। রুমের অবস্থা কাহিল করেছে সে দৃশ্যও দেখে ফেলল তাবাসসুম। হঠাৎ দাহাব এহসান কে তার আসল রুপে দেখতে পেয়ে জোরেসরে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে।
চলবে…….