#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১২
“বউ এই কি হয়ে গেল? ঘরের মধ্যে মায়ের খু’ন হয়ে গেল। বাবাকেও আহত করে দিয়েছে। কে ঢুকে ছিল কিছুই জানতে পারছি না। নাদিম নাজীবা তো দাদী-দাদী ভক্ত ছিল। অসময়ে মায়ের মৃত্যু মেনে নিতেও পারছি না।”
মিসেস মেহজাবিন স্বামীর কাঁধে হাত রেখে শান্ত্বনার গলায় বলেন,
“দেখুন এসব ভেবে লাভ নেই। আমরা বাবার কথাও অমান্য করতে পারছি না। চেয়ে ছিলাম মায়ের পোস্টমর্টেম হোক। কিন্তু বাবা যে ম’রাকান্না জড়িয়ে দিয়েছেন। এ দেখে আমারই কষ্ট লাগছে। তিনি বার বার কান্নার সুরে তাড়াতাড়ি উনার স্ত্রী কে কবর দেওয়ার কথা বলছেন। নাহলে যে মায়ের রুহ্ শান্তি পাবে না। এখন যদি লা’শের পোস্টমর্টেম করা হয়, তবে লা’শকে কাটবে অন্যান্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে লা’শের সাথে বেধরক আচরণ করতে পারে। এর জন্য ভয়ও হয়। তাই বলছি বাদ দিন। মায়ের রুহের জন্য আমরা কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করি।”
জনাব মোবারক আলী কিছু বলতে নেওয়ার পূর্বেই কাজের ছেলের উচ্চস্বরে চিৎকার শুনতে পান তারা। এতক্ষণ যাবত বাড়ির উঠোনে বসে আলাপচারিতায় বসে ছিলেন তারা। চিৎকার শুনে গিয়ে দেখলেন। নাজীবার কোলের উপর দাহাব এহসান শরীর এলিয়ে দিয়ে আছেন। দৃশ্যটি বি’শ্রী বটে। দাদার শরীরের নিচে ছোট নাজীবার শরীরটা রেহাই পাওয়ার আশায় ছটফট করছে। অন্যথায় দাহাব এহসান নিজেকে অজ্ঞান এর ভান ধরে নাতনীর শরীরে মৃদু চাপ দিচ্ছেন। কাজের ছেলে হঠাৎ কোথার থেকে এসে দেখে ফেলায়, অজ্ঞানের নাটক করে শুয়ে রইলেন সেভাবে। নাজীবা তো ঘুমিয়ে ছিল আচমকা এমন কিছু হবে সে ভাবতেও পারেনি। সেও সমান তালে জোর গলায় বলছে,
‘দাদু উঠুন প্লিজ কি হয়েছে আপনার? আমি ব্যথা পাচ্ছি দাদু উঠুন না প্লিজ!”
ছোট মেয়ের কণ্ঠ শুনেও তিনি নির্জীব ভাবে পড়ে রইলেন নাজীবার উপরে।
জনাব মোবারক আলী মেয়েকে কষ্টে দেখে আঁতকে উঠলেন। তৎক্ষণাৎ বাবাকে আস্তে ধীরে উঠিয়ে সোফার উপর শুয়ে দিলেন। মিসেস মেহজাবিন মেয়েকে উঠিয়ে হাত-পা শরীরটা মচমচে করতে চাপ দিতে লাগলেন। আড়চোখে বাবার দিকে তাকালেন। আরেকবার মেয়ের অসহায় ব্যথাতুর চেহারার দিকে তাকালেন। মনে মনে তিনি খটকা অনুভব করেন। নাজীবা কে তিনি খাওয়ে ঘুম পাড়িয়ে গিয়ে ছিলেন। তবে এখানে বাবা কেন এসে ছিলেন? ছেলের বউয়ের রুমে না বলে প্রবেশ করাটা বেমানান লাগল তার, তিনি মেয়েকে বুকে চেপে ধরে কণ্ঠে দৃঢ়তা এনে বলেন,
“বাবার মুখে পানি ছিটিয়ে দিন তো।”
মোবারক আলী মগভর্তি পানি নিয়ে বাবার উপর ছিটিয়ে দিলেন। জ্ঞান ফেরার ভান করে নিভু নিভু চোখের পাপড়ি মেলে ধরলেন সামনে। দু’কঠোর ব্যক্তির মুখোভঙ্গি দেখে মনে মনে কিছুটা ভয়ও পেলেন তিনি। যদি তারা তার উদ্দেশ্য ধরতে পারেন,তবে তার ফাঁসি নিশ্চিত করে ছাড়বেন তারা। এই ভেবে সে পুনরায় ম’রা’কান্না জুড়ে বলে,
“ও আমার নাতনী গো , তোর দাদী চইলা গেছে রে। এহন যে তোদের আমি ছাড়া আর কেউই নেই। আমাকে কেন একলা করে গেলি ফাতেমা? তোরে ছাড়া আমি কেমনে বাঁচমু এই পৃথিবীতে। আমার আর কেউ নেই। এই আলী তোর বোনডারে খবর দেয় রে, জলদি আইতে কও । কবর দেওয়ানের আগে একবার মায়ের চেহারাডা দেখে নিক।”
বাবার অপার্থিব কথা শুনে, ভাবলেন হয়ত শোক মেটাতে নাজীবাকে আগলে ধরে ছিলেন। এর মাঝেই জ্ঞান হারায়। মোবারক আলী দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোন বের করেন। ‘হিয়া বোন’ নামের নম্বরে ফোন দেন। ফোন রিসিভ হতেই তিনি বোনকে মায়ের ঘটনা বলেন। এতে তার বোনও কাঁদতে লাগলেন। তৎক্ষণাৎ স্বামী-সন্তান নিয়ে আসছেন বলেন।
বেডরুমে মেয়ের শিউরে বসে চিন্তিত মনে ভেবেই যাচ্ছেন মেহজাবিন সিরাত। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে খেয়াল করলেন। মেয়ের গলায় লাল হওয়া জায়গাটি। এমন চিহ্ন এক অবিবাহিত মেয়ের গলায় কেমনে এলো? ঘাবড়ে রুমের বাহিরে যান। মোবারক আলী কে কাজে ব্যস্ত দেখে কিছুটি বলার সাহস পেলেন না। চুপটি করে রুমে এসে মেয়ের পাশে শুয়ে পড়লেন। মায়ের আকস্মিক মৃত্যু তিনিও মানতে পারছেন না। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
ভাবতে লাগলেন ভোরের ঘটনা।
সাতসকালে উঠা মেহজাবিন সিরাত এর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। আজ উঠে খেয়াল করলেন প্রধান গেটের তালা ভাঙা আর গেটের ছিটকিনি খোলা। এ দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন তিনি। তৎক্ষণাৎ দারোয়ান ডেকে চারপাশ নজরদারি চালাতে বললেন। ঘরের প্রতি রুম চেক দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় শ্বশুর-শ্বাশুড়ির রুমে এসে দরজা নক করতেই দরজা আপনাআপনি খুলে যায়। তিনি মৃদু গলায় ডাক দিলেন। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করে মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে চিৎকার করে উঠলেন। মোবারক আলীর ঘুম ছুটে গেল। তিনি তড়িঘড়ি দৌড়ে বউয়ের কাছে গেলেন। বউকে বাবা-মায়ের রুমের বাহিরে দেখতে পেয়ে চমকে গেলেন। তিনি ‘কি হয়েছে’ জিজ্ঞেস করতে নিলে বাবা-মায়ের আহত অবস্থা দেখে নিজেই বোবা হয়ে গেলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি বাবার কপালে ব্যান্ডেজ করে দেন, মায়ের শরীরে হাত ছুঁয়ে দিয়েই ধপ করে বসে পড়লেন। মেহজাবিন সিরাত স্বামীর অবাক চাহনি দেখে শ্বাশুড়ির শরীর হালকা ছুঁয়ে দিয়ে অনুভব করলেন শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে। তিনি আতংকে শিটিয়ে পড়লেন। এদিকে ছেলে আর ছেলের বউকে দেখে দাহাব এহসান নিজেও কান্নার অভিনয় চালু করে দিলেন। সব তো ঠিকই চলছিল। কিন্তু কেমনে মোবারক আলী আমার সত্য জানতে পেরে আমারই বানানো কালো জাদুর মন্ত্রের তাবিজ আমারই বুকে গেঁথে খন্ডবিখন্ড করে দিল। ইশ! আমার সৎ ছেলেটা যদি আমার মন্ত্র না ভাঙত। তবে আমি কবেই গুরু তান্ত্রিক হয়ে যেতাম। তখন বছরের পর বছর নাজীবার শরীর নিয়ে মেতে থাকতে পারতাম। কিন্তু সমস্যা নেই নাজীবার কারণেই তার পরিবারকে আমার পেটের ভক্তভোগী হতে হলো ।
অতীতের কথা ভেবে হাসতে থাকে দাহাব এহসান। সে নিজের মত বলতে লাগে।
“তা কি হলো? মেয়ে তান্ত্রিক বিদ্যায় কম যোগ্যতা পেলেও বিজ্ঞান বিষয়ক বিদ্যায় সাফল্যতা পাওয়েছি। বিজ্ঞানের অপব্যবহার করেই কেমিক্যালি নিজের জোয়ান রুপ ধারণ করে রেখেছি। নাজীবা তোমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলার জন্য এই যুবক রুপই আমার দরকার ছিল। এখন শুধু তোমাকে পাওয়ার অপেক্ষা।”
হঠাৎ মেয়ের ডাক শুনে দাহাব এহসান গলার স্বর বাড়িয়ে মেয়েকে গোপন রুমে আসতে বলেন। মিসেস হিয়া বাবার গোপন রুমে চিনেন। তিনি কুড়িয়ে কুড়িয়ে হেঁটে রুমে আসলেন। কিছু র’ক্ত এর নতুন প্যাকেট হাতে করে এনেছেন। বাবার মিনি ফ্রিজে সেগুলো রেখে চলতে যেতে নিলে দাহাব এহসান গম্ভীর গলায় মেয়েকে ডেকে তুললেন।
মিসেস হিয়া জানেন এখন তার বাবা খোটা দিবেন। বিধেয় নিজেকে ধাতস্থ করে বাবার সামনে যেয়ে দাঁড়ান।
“মা বাবার জন্য মেয়েটারে খোঁজতে পেরেছো কি?”
নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলেন মিসেস হিয়া। দাহাব এহসান নীরবতা পছন্দ করলেন না হুংকার মে’রে দাঁড়িয়ে যান। রাগের বশে মেয়ের কাটা পায়ে জোরে লা’থি দেন। ব্যথায় চিৎকার করে বসে যান তিনি। কাঁটা পায়ে আঘাত লাগায় র’ক্ত ঝরতে লাগল। তিনি বাবার দিকে তাকিয়ে কান্নাময় গলায় শুধান।
“বাবা আপনি এমন কেন করলেন? আমার পা’টা একবারও খেয়াল করেছেন? জ্বীনটা আমার পায়ের অর্ধ মাংস নিয়ে গেল। প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে নকল জিনিস লাগিয়েছি। সেই জায়গায় এত বড় আঘাত কেনো করলেন বাবা? আমার তো দোষ ছিল না। আমি সবোর্চ্চ চেষ্টা করছি মেয়েটিকে খোঁজার। জ্বীন দিয়েও কাজ হলো না। তবে আমি আমার এক খবর পাচারকারী থেকে দারুন খবর জানতে পেরেছিলাম। তাই সেই খবর সত্য কিনা তার যাচাই করতে তাবাসসুম কে পাঠালাম।”
মেয়ের কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকান তিনি। চোখের ইশারায় কোন খবর জানতে চাইলেন। মিসেস হিয়া নিজেকে সামলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ান। পায়ের মধ্যে উড়না পেঁচিয়ে নিয়েছেন। এতে র’ক্ত পড়া তাৎক্ষণিক সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিনি মৃদু গলায় বলেন,
“আফরাজ এর কোম্পানিতে বোধ হয় নাজীবার খোঁজ পাওয়া যাবে। কারণ নাজীবার নিখোঁজ এর পর মেন্টাল হাসপাতাল থেকে জানতে পেরেছিলাম। এক বুড়ি মহিলা তাকে রক্ষা করে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়ে ছিল। তার পর কি হয়ে ছিল এই ব্যাপারে আমার মোটেও ধারণা নেই। শুধু এটুকু বলতে পারি, মেয়েটা নাজীবাই হবে।”
শুনেই দাহাব এহসান উম্মাদের মত দাঁড়িয়ে যান। নিজের ভাড়াটে লোক নিয়ে আফরাজ এর অফিসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েন। মিসেস হিয়া দেখে মনে মনে ‘চ’ উচ্চারণ করে গা’লি দিলেন। কোনোমতে কুড়িয়ে হেঁটে গোপন রুমের বাহিরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেন। নিজ রুমে এসে গলা ফাটিয়ে কাজের মেয়ে-কে ডাক দেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) মেয়ে এসে ম্যামের নাজুক অবস্থা দেখে ডক্টরকে কল দিয়ে থাকেন।
_____
তাবাসসুম এর কেবিনের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল নাজীবা আর কুসুমা। কুসুমা ভাবী ভয়ে তড়তড় করে কাঁপছে। কারণ তিনি কখনো ঝগড়া বিবাদ কি জিনিস চোখে অব্দি দেখেননি। সেখানে আজ নাজীবা ঝগড়া বাঁধানোর জন্য নিজ পায়ে হেঁটে এসেছে। ঢোক গিলে তাকিয়ে রইল সে। নাজীবা রাগে জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে। মুখের উপর থেকে ঘোমটা সরিয়ে ফেলল। হাত মুঠো করে সশব্দে কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তার এমন কান্ডে কিছুটা হকচক খেয়ে যায় তাবাসসুম। সে ফাইল চেকিং শেষে টিকেট বুক করার প্রসেসিং করছিল। আকস্মিক কারো আগমনে সে বিব্রতবোধ করল। সামনে তাকাতেই হা হয়ে যায়। এ কোন সুন্দরী এলো? তার চেয়েও সুন্দর কাউকে দেখে তাবাসসুম দাঁতে দাঁত চেপে সম্মানের কণ্ঠে বলে,
“জ্বি আপনি কে ম্যাম আর আপনাকে কি সাহায্য করতে পারি বলুন?”
নাজীবা ভাব নিয়ে বুকের উপর হাত গুজল। তাবাসসুম এর মেকআপ ভর্তি গালের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের কণ্ঠে বলে,
“আপনার হাঁটু খালি রাইট? আইমিন আপনি তো হাঁটুর উপরে কাপড় পরে থাকুন?”
“ইয়েস ইজ দেয়ার এনি প্রবলেম?”
“নো ইজ এ্যা গুড ফর মি।”
কথাটি বলে নির্দ্বিধায় গিয়ে তাবাসসুম এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়। সে ভ্রু কুঁচকে কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই নাজীবা পেছন মোড়ে তাবাসসুম এর কোলের উপর বসে যায়। এমন দৃশ্যপটে কুসুমা দু’হাতে গাল চেপে ধরে। নাজীবা আয়েশে তার শাড়ির সসগুলো তাবাসসুম এর নগ্ন হাঁটু তে ঘেঁষে মাখিয়ে দেয়। চট করে দাঁড়িয়ে কুসুমার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। এ দেখে তাবাসসুম ‘এ্যাআআআ’ চিৎকার করে উঠে। তার হাঁটুতে সস লেগে বি’শ্রী অবস্থা হয়ে গিয়েছে। ক্ষোভ নিয়ে সুন্দরী মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে,
“ম্যাম আপনি আমার সাথে এমন কেন করলেন? আপনার কারণে এখন বাসায় চলে যেতে হবে। এই অবস্থায় অফিসও করতে পারব না।”
নাজীবা বাঁকা হেসে বলে,
“আমার সাথে পাঙ্গা নিতে চেয়েছিলে না শাকচুন্নী কোথাকার! অন্যের জামাইয়ের দিকে কুনজর দিস শা’লী বেশরমের বস্তা। তোকে তো জানে মে’রে দিতে মন চাইছে। কিন্তু জামাই আমার আবার শোক সইতে পারবে না ভেবে ছাড় দিচ্ছি। পরের বার যদি আমার শাড়িতে সস লাগানোর চিন্তা করিস। তবে তখন আর তোর নগ্ন হাঁটুতে নয়, তোর এই আটাময়দা মাখা মুখেই মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে ভস্ম করে দেব। চিনে রাখ এই মুখের মেয়ে-কে। মিসেস নাজীবা মুসাররাত ওরফে আফরাজ ফাহিম এর ওয়াইফ।”
তাবাসসুম শুনে আর কেবিনের মধ্যে অন্যান্য এমপ্লয়র্স এর আগমনে বিরক্তসূচক মাথা নুয়ে চটজলদি বেরিয়ে চলে যায়। নাজীবা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কন্ট্রোলার এর দিকে তাকায়। সে ঢোক গিলে তৎক্ষণাৎ নাজীবার সামনে গিয়ে ক্ষমা চাইল। নাজীবা নম্র গলায় শুধায়।
“দেখুন ক্ষমা চেয়ে লজ্জা দিবেন না। আপনি আমার বাবার বয়সী তাই বলে অচেনা কোনো মেয়ের হাত স্পর্শ করার স্পর্ধা করবেন না। যতই বিরক্ত হোন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে শিখুন। এবার যান সবাই।”
“এভরিওয়ান ওয়েট এ্যা মিনিট! এখনো কিছু কথা বাকি আছে। সবাই হল রুমে আসুন।”
আকবর কেবিনের দরজা খোলে বলল। কুসুমা নাজীবার প্রতিবাদী রুপে আনন্দে জড়িয়ে ধরল। দেবরের কথায় নাজীবা হেসে কুসুমার সাথে হল রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
হল রুমে এসে নাজীবা কৌতুহলী দৃষ্টিতে আশপাশ পরখ করছে। পুরো হল রুম অন্ধকারে আচ্ছন্ন। বিধেয় তার নজরে আসছে না কিছু। আচমকা হাতে টান পড়ায় মৃদু চিৎকার করে উঠে। পরক্ষণে স্পর্শ-কারী মানবকে অনুভব করতে পেরে মুচকি হাসল। আফরাজ সন্তপর্ণে নাজীবার কানের কাছে ঠোঁট এনে ফিসফিসিয়ে বলে,
“বিবিজান রুমের ডান পাশে চেঞ্জিং রুম আছে। সেখানে গিয়ে আমার রেডি করা শাড়িটা পড়ে আসো কুইক। আই ক্যান্ট ওয়েট টু সি ইউ বিবিজান।”
স্বামীর আবদার সূচক কথা শুনে নাজীবা মুচকি হেসে চেঞ্জিং রুমের দিকে গেলো। কুসুমা অন্ধকারে এদিক ওদিক দেওয়াল হাতড়ে কিছু ধরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কেননা সে একটু হলেও আফরাজ এর কণ্ঠ শুনতে পেয়েছে। তাহলে নিশ্চয় নাজীবার সঙ্গে হবে সে। তাদের স্পেস দিয়ে নীরবে সরে যায় কুসুমা। আকবর অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে চট করে কুসুমা কে আকড়ে ধরে। দেওয়ালের কোণায় ঘেঁষে দাঁড় করায় বউকে সে। কুসুমা কাঁচুমাচু করে নিজেকে সরানোর চেষ্টা করছে। কারণ কিছুক্ষণ পর বাতি জ্বালানো হলে তারা বেকায়দায় পড়বে। বউয়ের মোচড়ানো দেখে আকবর বিরক্তকর গলায় বলে,
“কি বউ এভাবে মোচড়াচ্ছো কেন? একটা চুমু খেতে চাইছি খেতে দাও না প্লিজ! লাইট অন করে দিলে মিষ্টি আর পাবো না। তাই বলে দিলাম, যদি এই মিষ্টি খেতে না পারি। তাহলে আজই সুগার মার্কা মিষ্টি খেয়ে ডায়বেটিস রোগী হয়ে যাবো।”
জামাই এর আবদার রাখতে কুসুমা তার কথামত কাজ করে।
কিছুক্ষণ পর….
একটি লাইট জ্বালানো হলো তার আলো পড়ে নাজীবার উপর। কালো-সাদা জর্জেট শাড়ীতে নাজীবাকে পরিপূর্ণ পরী মনে হচ্ছে। মুখেও হালকা সাজ সেজেছে , তার উপর ডিজাইনিং মাস্ক পরিহিত রুপ। সুশ্রী সৌন্দর্যে রাঙা তার নারী হেঁটে আসছে তার দিকে। আফরাজও নিজেকে রেডি করে ফেলেছিল। তার পরণেও সাদা-কালো সুটসেট। নাজীবার দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় আফরাজ। লাজুক হেসে স্বামীর হাত ধরে স্টেজের দিকে এগিয়ে যায়। সে জানে না এই আয়োজন কিসের জন্য? শুধু জানে তার স্বামী হয়ত কোনো কারণে ভীষণ খুশি। নিশ্চুপে দেখতে লাগল নাজীবা। স্বামীর হাত ধরে স্টেজের উপর উঠে পড়ে। আফরাজ টেবিলে রাখা ফুলের বুকি নাজীবার হাতে দেয়। বুকি নিয়ে সে আফরাজ এর বাহু শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে রইল। সে কখনো এত মানুষের সামনে এসে দাঁড়ায়নি। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে। তার শরীরও মৃদু কাঁপছে। একসময় এত মানুষের সামনেই সে লাঞ্ছিত হয়ে ছিল। তার চেয়ে বড় কথা ‘পাগলী’ নামক তর্কমা নিয়ে বদ্ধ রুমে গলাফা’টা কান্না করে ছিল। বিবিজান কে ভয় পেতে দেখে ভরসার সহিতে আগলে নেয় আফরাজ। তাকে জড়িয়ে ধরে বিবিজান এর বাঁ-হাতের অনামিকা আঙ্গুলে ডায়মন্ড রিং পরিয়ে দেয়। নাজীবার ভয় কমলেও হঠাৎ তার নজর পড়লো জানালার বাহিরে গেটের দিকে। সাইকোপ্যাথ এম্বুলেন্স ভ্যান দেখে তার চোখজোড়া বড় হয়ে যায়। স্তদ্ধ দৃষ্টিতে আফরাজ এর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আপনি এভাবে বেইমানি করতে পারলেন?”
চলবে……
#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৩
“বিবিজান দরজা খুলো। যদি তুমি দরজা না খুলছো, তবে আজ আমার কাছ থেকে তোমার রেহাই নেই। আবারো বলছি দরজা খুলবে তুমি? নাহলে এখনি দরজা ভাঙব আমি।”
না, নাজীবার রুম থেকে কোনো প্রকার সাড়াশব্দ এলো না। দাঁতে দাঁত চেপে আফরাজ তৎক্ষণাৎ তার কুসুমা ভাবীকে কল দিয়ে নাজীবার রুমের বাহিরে আসতে বলে। আফরাজ ভাইয়ের কথায় ঢোক গিলে কুসুমা রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আকবর যেতে চেয়েও গেল না। সে জানে তার বন্ধুর রাগ বেশিক্ষণ স্থায়ী হবে না। বউয়ের স্পর্শে ঠিকই গলে যাবে। এ ভেবে নিশ্চিন্তে তাবাসসুম কে নক দিয়ে টিকেট বুকিং এর কথা মনে করিয়ে দেয়।
নাজীবার রুমের থেকে কিছুটা দূরে আফরাজ কে রাগে পায়চারী করতে দেখে ভয়ে আঁতকে উঠল কুসুমা। তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে এগিয়ে যায়। কুসুমা ভাবী-কে দেখে আফরাজ অন্যদিক মুখ ফিরিয়ে বলে,
“ভাবী নাজীবাকে দরজা খুলতে বলুন। আমি নেই এটাও জানাবেন।”
কুসুমা মাথা নেড়ে তীব্র শ্বাস ফেলে নাজীবার রুমের দরজায় মৃদু বা’রি দেয়। নাজীবা ভয়ে বিছানার উপর বসে আছে। সে ভাবতেও পারেনি তার দ্বারা এত বড় ভুল হয়ে যাবে। সে যাকে মন দিয়ে চেয়ে ছিল, সেই যে তার ক্ষতির কারণ হবে কে জানত? নাজীবার কানে কুসুমার দরজা নকের শব্দ পৌঁছাচ্ছে না। বরং সে বালিশে মুখ গুঁজে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। তবুও দরজা খুলল না। কুসুমা অসহায় দৃষ্টিতে আফরাজ এর দিকে তাকায়। সে নিজের রাগ সামলাতে না পেরে জোরেসরে দেওয়ালের মধ্যে আ’ঘা’ত করে চলে যায়। কুসুমা মৃদু গলায় দরজার কাছে ঘেঁষে বলে,
“ভাবী সুস্থ লাগলে আমাকে নক দিয়েন। আমি খাবারটা নিয়ে আসব। আপনি বিকাল থেকে না খেয়ে রুমে বসেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা যাবত রুমের ভেতর আপনি। দম বন্ধ হয়ে আসতে পারে। প্লিজ আমাকে নক দিয়েন।”
নাজীবা কান্নার কারণে নীরবে ঘুমিয়ে পড়েছে। তার মন-মস্তিষ্ক আজ যেন ক্ষয় হয়ে গিয়েছে। কোনো অনুভূতি কাজ করছে না তার মনে। কুসুমাও আর না ঘেঁটে আকবরের কাছে চলে যায়।
অফিসের সময়ের ঘটনা……
নাজীবার চোখ এম্বুলেন্স এর উপর পড়তেই সে পুরোপুরি নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলল। তার শরীরে নিয়মিত ড্রা’গে’র ফলশ্রুতিতে পুনরায় উম্মাদের মত হয়ে উঠল। আফরাজ এর গলায় দাঁত বসিয়ে দেয়। এ দৃশ্য দেখে অফিসের এমপ্লয়র্স অবাক হয়ে যায়। আফরাজ শক্ত করে নিজেকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার গলার ব্যথা বেড়ে যাচ্ছে। নাজীবার সূচালো দাঁত যেন আফরাজ এর গলায় গেঁথে যাচ্ছে। টপ টপ গলা বেয়ে র’ক্ত ঝরে পড়তে লাগে। এতেও হুঁশ নেই নাজীবার। সে তার মত জোরেসরে দাঁত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে আফরাজ এর গলা। যার দরুণ সে আকবরকে ইশারা করে। আকবর ইশারা বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ এমপ্লয়র্স কে হলরুম থেকে বের করে যার যার কাজে যেতে বলে। তারাও ভাবল স্যার আর তার ওয়াইফ রোমাঞ্চকর সময় কাটাবে এ কারণে যাওয়ার আদেশ করেছে। অনেকে তো বলেই ফেলল, হ্যা স্যারও বউ পাগলা হয়ে গেছেন বুঝা যাচ্ছে। মেয়ে এমপ্লয়র্স নিজেদের মত ভাবাভাবি করে কাজে বসে পড়ে। অন্যথায়, আফরাজ এর কাছ থেকে নাজীবাকে সরানোর চেষ্টা করে কুসুমা। কিন্তু লাভ হলো না। অতঃপর আফরাজ পকেট থেকে একটি মেডিসিনাল ইন’জে’ক’শন বের করে বিবিজান কাঁধে বসিয়ে দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় আস্তে ধীরে হুঁশ ফিরতে লাগল নাজীবার। তার শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হতে লাগল। উম্মাদনা থেকে পুনরায় স্বাভাবিক জ্ঞানে ফেরল। সে খেয়াল করে আফরাজ তার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। এমন দৃষ্টির কারণ বুঝল না। সামনে তাকিয়ে দেখল কেউই নেই। কিন্তু জানালার বাহিরে তখনও এম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাগের চোটে বলে ফেলে।
“ছিঃ আপনি এত খারাপ? আমাকে এতটা অপছন্দ করেন যে ,আজকের সুন্দর মুহূর্তে আমার খুশির সময়-কে খু’ন করতে আপনার হৃদয়ে বিন্দু পরিমাণ কষ্ট লাগল না? এতটা ঘৃণা করেন যে, আমাকে পাগলাগরাদে পাঠানোর জন্য বাহিরে পাগলদের এম্বুলেন্স দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। বাহ্! মিস্টার আফরাজ আপনাকে ভালোবেসে আমি পাগলামী করেই গিয়েছি। আর আপনি তার বিন্দু পরিমাণও কদর করলেন না। জানেন? বিয়ের দ্বিতীয় দিনে আপনার রুমে হিসাবের খাতা পেয়ে ছিলাম। সেখানে সব কন্টাক্ট নাম্বার্স লেখা ছিল। বিশ্বাস করুন, যখন সেই লিস্টে পাগল হাসপাতালের কন্টাক্ট নাম্বার লেখা ছিল। এক-মুহুর্ত এর জন্যে মন চাচ্ছিল আপনাকে খু’ন করে পালিয়ে যায়। তবুও নিজেকে বুঝ দিয়ে ছিলাম, আপনার মনে ভালোবাসা জিনিসটা বসাতে পারলে আজীবন আপনার মাঝেই আবদ্ধ থাকব। এ যেনো দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে নিয়ে ছিলাম মনের মাঝে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, না আপনি মন থেকে হৃদয়হীন। আপনি কখনো আমার আফাজ হতেই পারেন না।”
শেষের কথায় আর্তনাদে ফেটে পড়ে নাজীবা। উম্মাদনা কমলেও রাগের বশে আফরাজের দেওয়া পরণের শাড়িটা ছিঁড়তে লাগল। আকবর এতক্ষণ যাবত নাজীবা ভাবীর করুণ কথা শোনছিল। কিন্তু এখন যে কান্ড করছে। এতে সে লজ্জায় অন্যদিক ফিরে যায়। আফরাজ হাত মুঠোবদ্ধ করে নিজের কোট খুলে নাজীবার শাড়ির উপর পেঁচিয়ে দেয়। নাজীবা দেখে চিল্লিয়ে নিজেকে সরাতে নিলে ‘ঠাসস’ করে চ’ড় বসিয়ে দেয় তার গালে। নাজীবার মাথা ঘুরে উঠে। এতটা ধকল তার ছোট মস্তিষ্ক সইতে পারল না। শরীর অবশ হয়ে পড়তে নিলে আফরাজ সন্তপর্ণে পাঁজাকোলা করে নেয়। তার নিশ্চুপতায় আকবর অনেকটা অবাক। সে কেন নাজীবা ভাবীর কথার জবাব দিল না। কোনো ঘাপলা অবশ্যই আছে। আফরাজ উচ্চ আওয়াজে তার ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলে।
ড্রাইভার চটজলদি গাড়ির দরজা খুলে দেয়। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) গাড়ির পেছনের সিটে নাজীবাকে বসিয়ে দিয়ে তার পাশে বসে পড়ে। কারো সাথে কোনোরুপ কথা না বলেই ড্রাইভারকে বাসার মধ্যে নিয়ে যাওয়ার আদেশ করে। ড্রাইভার মাথা নেড়ে তৎক্ষণাৎ গাড়ি চালু করে। আকবর ও কুসুমা গাড়ির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। আকবর মনে মনে কিছু একটা ভাবল। কুসুমাকে বলে,
“চলো বউ । বাসায় যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নাজীবা ভাবীর সঙ্গে কথা বলিও ।”
কুসুমাও স্বামীর কথায় সায় দেয়। তারা অন্য আরেক গাড়িতে উঠে পড়ে।
বাসার মধ্যে নাজীবাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে গেল আফরাজ। কিন্তু নাজীবার জ্ঞান ফেরতেই খেয়াল করে , সে তাদের স্বামী-স্ত্রীর রুমে আছে। বিরক্ত আর কষ্টে উঠে নিজের বরাদ্দকৃত রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয় নাজীবা। তার রুমে এটার্চ ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। আফরাজ মাথা মুছতে থেকে আয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়। আয়নার পাশে স্ট্যান্ডে রাখা পরণের পোশাক পরে নেয়। গলার যে পাশে নাজীবা কামড়ে দিয়ে ছিল, সেপাশে মৃদু স্পর্শ করে হেসে দেয়। বিরবিরিয়ে বলে,’তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ_বিবিজান’। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করে ব্যথা উপশমের ক্রিম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ নেয়। বক্সটি জায়গামতো রেখে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে নাজীবা নেই। ধপ করে মাথা গরম হয়ে যায় তার। বুঝতে পারল মেয়েটা তার কথা না শুনেই নিজের রুমে চলে গিয়েছে। দ্রুত পায়ে বিবিজান এর রুমের দিকে গেল।
নাজীবা তার পরণের ভারী শাড়িটা বেলকনিতে মেলে দিয়ে ঢিলাঢালা থ্রিপিচ পরে নেয়। মুখ মুছে বিছানায় গা হেলিয়ে দেয়। চোখ বুজতে নিলে আফরাজ এর রাগান্বিত গলা শুনে ভয় পেয়ে যায়। গলা শুকিয়ে গেল তার। তবুও সে দরজা খুলবে না। বিরবিরিয়ে বলে, ‘আপনি বেইমান জামাই আপনি বেইমান। আমাকে ঘৃণা করলে বলে দিতে পারতেন আমিই দূরে সরে যেতাম। এভাবে আয়োজন করে পাগলাগরাদে পাঠানোর জন্য এম্বুলেন্স তো ডাকার দরকার ছিল না।’
আফরাজ দরজায় বা’রি দেয়। নাজীবাও চুপ থাকল না। কড়া গলায় বলে,
“চলে যান আপনি প্লিজ! আপনার চেহারা অব্দি দেখতে মন চাইছে না। এত এত পাগলামীপনার এই দাম দিলেন? বাহ! ভালোই আমিও আজ থেকে আপনার ধারে কাছে ঘেঁষব না। প্লিজ! চলে যান। নাহয় আমি আমার ক্ষতি করে ফেলব।”
হাত থেমে যায় আফরাজ এর। মেয়েটা তার মনে এত ক্ষোভ জমিয়ে রেখেছে। বা’রি দেওয়া থামিয়ে নম্র গলায় শুধায়।
“দেখো বিবিজান, রাগ করলে তো হেরে গেলে। কি হয়েছে, কি দেখলে কিছুই জিজ্ঞেস করব না। শুধু বলছি দরজা খুলো তোমাকে আমাদের রুমে নিয়ে যাবো। জলদি দরজা খুলো।”
“আপনি কি যাবেন নাকি আমি নিজের…..!”
ধমকে উঠে আফরাজ। চিল্লিয়ে বলে,
“এই মেয়ে নিজের জীবনকে সস্তা পেয়েছিস? বারে বারে নিজের জীবন নেওয়ার হু’ম’কি দিচ্ছিস! আয় দরজা খুল এখনই। তোর জীবন আমি নিচ্ছি। আদর করে করে বাঁদর বানিয়েছে দেখে মাথার উপর ছড়ে বসেছিস। ইচ্ছে তো করছে তোর দুই গালে ঠাঁটিয়ে চ’ড় বসিয়ে দেয়, বে’য়া’দপ মেয়ে। তুই এখনই দরজা খুল। আজ তোর রেহাই নেই।”
রাগে গজগজিয়ে পুনরায় দরজায় আঘাত করে আফরাজ। এবার নাজীবা ফ্যাস ফ্যাস করে কাঁদতে লাগে। তার কান্নার শব্দ দরজার বাহিরে অব্দি যাচ্ছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)কান্নার শব্দ শুনে আফরাজ কপালে হাত চেপে ধরে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। পুনরায় বলেও নাজীবাকে রাজি করানো গেল না।
____
তাবাসসুম ক্লাবে বসে তার মা’কে লাগাতার ফোন দিয়ে যাচ্ছে। তবে কোনো সাড়া না পেয়ে রাগে ফোনটাই সুইচ অফ করে দিল। ওয়াইনের গ্লাস ধরে ড্রিংক করতে থেকে সেই সময়ের কথা ভাবতে থাকে। যখন আফরাজ এর ওয়াইফ তাকে সবার সামনে অপমান করে। সে দাঁতে দাঁত চেপে ফোন বের করে টিকেট বুকিং দেয়। কিন্তু কাপল’স টিকেটের সাথে তাবাসসুম নিজের জন্য সিঙ্গেল টিকেট বুকিং দেয়। ক্ষোভ-মিশ্রিত গলায় বিরবিরিয়ে বলে,
“তোকে আমি শান্তিতে সংসার করতে দেবো না। এবার যা আগুন লাগার লাগবে তোর হানিমুন ট্যুরে। যখন নিজের হাজবেন্ড কে আমার বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে থাকতে দেখবি তখন তোর চোখ-মুখে যে কষ্টটা ভেসে উঠবে। সেই কষ্টের উল্লাস বানাব আমি। জাস্ট ওয়েট বেব।”
টিকেট বুকিং শেষে আকবর-কে ই-মেইল পাঠিয়ে দেয়। ওয়াইনের গ্লাসে পুনরায় চুমুক দেয়। হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে দেখে। দাহাব এহসান কে সামনে দেখে কামুক হাসি দিয়ে বলে,
“আরে আমার কি নেশা ধরেছে যে, আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন?”
দাহাব এহসান আপাতত কামনার মন-মেজাজে নেই। তাই তিনি নিবিড় গলায় তাবাসসুম এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থেকে জিজ্ঞেস করেন।
“মা তুমি কি নাজীবার খবর পেয়েছো? তোমার মা যে বলেছিল খুঁজে দেখতে! জানতে পেরেছো কোনো কথা?”
চাচার কথায় কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাবাসসুম এর মধ্যে। বরং সে আয়েশে ড্রিংক করেই যাচ্ছে। দাহাব এহসান এর রাগ লাগছে মেয়েটার উপর। এতো ভাবলেশনহীন হয়ে বসে আছে কেমনে মেয়েটা বুঝতে পারছেন না তিনি! তাবাসসুম ওয়াইনের গ্লাসের শেষ অংশটুকু এক চুমুকে খেয়ে দেয়। নেশাগ্রস্ত দৃষ্টিতে চাচার দিকে তাকিয়ে বলে,
“নাজীবা রাইট? হুম আই থিংক আই ফাউন্ড হার। বাট নট সিউর দ্যাট! সি ইজ এ্যা রিয়াল নাজীবা অর নট? বিকজ সি ইজ মিসেস নাজীবা আফরাজ ফাহিম।”
কথাটি দাহাব এহসান এর কানে বজ্রপাতের ন্যায় লাগল। তিনি থমকে দাঁড়িয়ে রইলেন। ওয়েটার কে একগ্লাস ওয়াইন দিতে বলেন। তার কথামত ওয়াইন সার্ভ করা হলো। এক চুমুকে শেষ করে ফেললেন তিনি। গম্ভীর গলায় তাবাসসুম কে বলেন,
“মেয়ের ছবি দেখাতে পারবি? তাকে দেখতে চাই আমি। তার চেহারার আদল না দেখলে বুঝব না।”
তাবাসসুম ভ্রু কুঁচকে বলে,
“উফ চাচ্চু ক্লাবে দাঁড়িয়েও ঐ কোন না কোন নাজীবার ব্যাপারে জানতে চাইছো! কে এই নাজীবা হুম? মা’কে আস্ক করলেও বলে না। আপনিই না হয় বলে দিন।”
দাহাব এহসান তীক্ষ্ণ নজরে তাবাসসুম এর চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“তোর সৎ মামাতো বোন , আমার সৎ নাতনী।”
ছোট বাক্যের কথাটি শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় তাবাসসুম এর। গলা দিয়ে কোনো বাক্য বের করতে নিলে হাসতে লাগে দাহাব এহসান। নিজের শার্ট টান টান করে অন্য আরেকটি ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে চুমুক দেন। তাবাসসুম এর গ্লাসের সাথে ‘চিয়াস’ করে নিজের মত ড্রিংক করতে থেকে বলেন,
“আরে বাবা মজাও দেখি বুঝিস না।”
তাবাসসুমও হেসে ফেলল। সে ভেবেই নিয়ে ছিল তার চাচা সত্য বলছে। কিন্তু মজা বলায় সেও আর পাত্তা দিল না। এদিকে দাহাব এহসান ড্রিংক করার মাঝে আড়চোখে তাবাসসুম এর দিকে তাকিয়ে রইলেন। তিনি নিজের মনে এক বি’শ্রী ফন্দি আঁটেন। ড্রিংক করার মাঝে গলা ঝেড়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন।
“তুই আজ হঠাৎ ক্লাবে কেন? তোর তো এ সময়ে অফিসে থাকার কথা।”
“আর বলিও না চাচ্চু ঐ আফরাজ এর বউয়ের কারণে আজ অফিসের স্টাফর্সের সামনে অপমানিত হতে হয়েছে। আফরাজও আমার পক্ষ নিল না। অথচ এক টাইমে এই ছেলেই আমি বলতে পাগল ছিলাম। এখন দু’চোখেও দেখতে চাই না। আমিও আমার শোধ উঠাবো চাচ্চু। আফরাজ-এর কাপল’স হানিমুন স্যুটের বুকিং এর জন্য দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে। এরই সুবিধা উঠাবো আমি। আমিও তাদের সঙ্গে যাবো একা।”
শেষের কথায় বাঁকা হাসেন দাহাব এহসান। শয়তানি বুদ্ধি এঁটে তাবাসসুম এর হাত ধরে বলেন,
“শোন একা নয়। বরং তোর সিঙ্গেল বুকিং রিমুভ করে আমার সঙ্গে নাম মিলিয়ে কাপল বুকিং দেহ্।”
তাবাসসুম চকিত নজরে চাচার দিকে তাকায়। লোকটা কি পাগল হয়ে গেল কিনা বুঝল না! সে আমতা আমতা করে বলে,
“চাচ্চু এটা কেমনে সম্ভব কোথায় আপনি আর কোথায় আমি! দিজ হানিমুন অনলি ফর ম্যারিড কাপল’স।”
“তাতে কি? তোর আর আমার জন্য ফেইক পেপার্স রেডি করে জমা দেবো। দ্যাটস ইট। কারণ তুই সিঙ্গেল গেলে সেখানকার ম্যানেজার্স সন্দেহ করতে পারে। আমি গেলে বলবি বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ঘুরতে এসেছিস।”
চাচার কথাগুলো তাবাসসুম খানিক সময় নিয়ে ভেবে দেখল। আসলেই একা গেলে সে তার প্ল্যানে সফল হতে পারবে না। অতএব, চাচার কথায় রাজি হয়ে যায়। চাচার সাথে হাত মিলিয়ে বলে,
“ঠিকাছে রাজি আমি। কিন্তু আপনিও বিনিময়ে আমার ব্যাংকে চল্লিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিবেন।”
দাহাব এহসান হেসে মাথা নেড়ে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরল তাবাসসুম কে। সে বুঝতেও পারেনি এই ব্যাপারটা যে, তার চাচা তাকে শুধু মাত্র গুটি হিসেবে ব্যবহার করবেন।
চলবে……