#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১০ (পারফিউম ভার্সাস পাদ)
“বিবিজান আগের বারের মত কফিতে মরিচের গুঁড়া মিশিয়েছো কি? চাইলে মেশাতেও পারো। আই ডোন্ট হেভ এনি প্রবলেম। ঐসময় আমার কাছে টেস্টের জন্য মিষ্টি ছিল না। এবার তো আমার কাছে মিষ্টির চেয়েও দারুণ মিষ্টির খাবার আছে। একবার মুখে নিলেই ছাড়বো না বলে দিলাম।”
মুখ ভোঁতা হয়ে গেল নাজীবার। সে চাইছিল এতদিন কষ্টের বিনিময়ে আফরাজ কে হলুদ,জিরা গুঁড়া ও নুন মেশানো কফি খাওয়ে মজা বুঝাবে। কিন্তু এখন তো তারই উপর বারি হয়ে যাবে ব্যাপারটা। ঢোক গিলে হেহে হেসে দিয়ে বলে,
“আসলে বলছিলাম কি আমি না আরেকটা কফি বানিয়ে আনছি। আপনি বসুন,কাজ করুন কেমন?”
চটজলদি পালাতে নিলে আফরাজ গম্ভীর মুখশ্রীর ন্যায় বিবিজান এর হাতের বাহু চেপে ধরে। সন্তপর্ণে বিবিজান এর হাতে থাকা কফিটা উঠিয়ে নেয়। চোখ বড় বড় হয়ে যায় নাজীবার। আফরাজ বাঁকা হেসে যেই না কফির মগে ঠোঁট লাগাবে, তখনই আকবর এসে দরজা নক করে। আফরাজ এর ধ্যান একটুর জন্য সেদিক ঘুরে গেল। ব্যস নাজীবাকে আর পায় কে? তৎক্ষণাৎ স্বামীর হাত থেকে কফিটা নিয়ে পালিয়ে যায়। বিবিজান কে পালাতে দেখে মনে মনে আকবরের নামে বাঁশ দেয়। আকবর বেচারা খিচুড়ি চিবাতে গিয়েও পারল না। জিভ দাঁতের মধ্যে চাপা খেয়ে ব্যথা পেয়ে যায়। কুসুমা দুপুরের খাবারের জন্য প্লেটগুলো রেডি করছিল। আকবরের অসহায় মুখ দেখে সে চিন্তিত গলায় বলে,
“এই কি হলো গো আপনার? ওমনে মুখটা লটকিয়ে রাখলেন কেন? কিছু হয়েছে বলুন?”
“কি বলতাম আর? গেছিলাম ভাইরে ডাকতে। অসময়ে ডাকতে গেয়ে গা’লি খেয়ে জিভে কামড় লাগছে।”
কুসুমা মৃদু হেসে বলে,
“আপনিও কম যান না ভাইয়ের পিছে চব্বিশ ঘণ্টা লেগে থাকেন। কে ,কার ,কেমনে নেগপুল করতে পারবেন সারাক্ষণ যেনো সেই চিন্তা করেন।”
“সব কপালের ফাটা দোষ।”
“আয় তোর কপালটাই ফা’টিয়ে দেয়।”
গম্ভীর গলায় ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে বলল আফরাজ। আকবর দেখে বোকা হাসি দিয়ে বলে,
“আরে দোস্ত আসলি , আয় না দেখ খাবার কত মজা হয়েছে। আজ ভাবী রান্না করেছেন। ওয়াও মাশাআল্লাহ লা-জাবাব।”
নাজীবা খাদিজা বেগম এর কাছে দাঁড়িয়ে খাবার প্লেটে বেড়ে দিয়ে আকবরকে ‘ধন্যবাদ’ জানায়। আফরাজ এর মুখের গম্ভীরতা তবুও যায়নি। স্বামীর এরূপ আচরণে নাজীবা পড়ল বিপাকে। কেমনে রাগ ভাঙানো যায় সে ফন্দি আটকাচ্ছে! আফরাজ নিজের প্লেট নিতে গেলে নাজীবা চট করে তার হাতের উপর মৃদু চা’প’ড় মা’রে। ব্যাপারটা সবার চক্ষু আড়ালেই করল সে। কারণ নজরে এলে সেই লজ্জায় কাঁচুমাচু করতো। আফরাজ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কোনো কথা বলল না। নাজীবা লাজ-লজ্জা ভুলে ঢোক গিলে এক লোকমা ভাত আফরাজ এর মুখের সামনে ধরে। সে দেখে বিনা বাক্যে লোকমা মুখে ফুরে নেয়। পুনরায় আরেক লোকমা খাওয়াতে নিলে নিজেরই মুখের সামনে লোকমা দেখে আশ্চর্য হলো নাজীবা। আফরাজ নিজ হাতে লোকমাটা নাজীবার মুখের ভেতর ফুরে দেয়। দু’জন দু’জনকে খাওয়ে দিচ্ছে দেখে তিনজন ব্যক্তি মনে মনে প্রশান্তি অনুভব করে। খাদিজা বেগম খাওয়া শেষ করেই রুমে চলে যান। তিনি দরজা ভিড়িয়ে ফোন নিয়ে নিজ ছেলের নাম্বারে কল চাপেন। নাম্বারটা বিদেশী, তাই ম্যাসেঞ্জার মাধ্যম ব্যবহার করে কথা বলেন তিনি। কল রিসিভ হতে দশমিনিট সময় লাগল প্রায়। খাদিজা বেগম ফোঁসে বলেন,
“ঐ হ্যাবলা ব্যাটা বানিয়েছিস তো করলার মত ব্যাটা। তোর করলা দেশে আর তুই বিদেশে বসে কোন মুলার ফসল ফলাচ্ছিস হুম? নিজে তো গেছস আমার ঘরের লক্ষ্মীটারেও জোর করে নিয়া গেছস। বলি কি? মহা বলদ ছেলে টা দেশে আসলে খুশি হতাম। আপনাদের গণ্যমান্য ছেলে যে বিয়াত্তা ব্যাটা হয়ে গেছে। তার কোনো ধারণা আছে কি?”
এত বছর পর মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে খুশিতে চোখে পানি চলে এলো জনাব ইসমাইল ফাহিম এর। তিনি কল্পনাও করেননি তার মা কোনো দিন তাকে কল করবেন! তিনি খুশির ঠেলায় গলার থেকে আওয়াজ বের করতে পারছেন না। অন্যথায় মিসেস ফেরদৌসী স্বামীর অবস্থা দেখে ফোনটা স্বামীর হাত থেকে ছিনিয়ে নেন। তিনি নিজেই সালাম দেন শ্বাশুড়ি কে। খাদিজা বেগম বউমার কণ্ঠ শুনে বেশ খুশি হলেন। বউমাকে আদেশের সুরে বলেন,
“শোনো বউমা। তোমার বদ জামাইকে একটু বলে দিও। আমি আর কোনো এক্সকিউজ শুনছি না। এবার যদি তোমার জামাই দেশে না আসে, তাহলে যেন সে ভুলে যায় যে, আমি তার মা ছিলাম। এত বছরেও যে ছেলে মায়ের খবর নেয় না। তার থেকেও বা কিসের আশা করবো? ছেলেটা নাহয় তার মাকে ভুলে গেল। তাই বলে নাতি কেও কেড়ে নিয়ে গেল। এখন বুঝতেছে তোমার জামাই? সন্তান দূরে থাকার কষ্টটা কেমন? নিজের মা’কে দেশে একা ফেলে নিজেরা বিলাসবহুল জায়গায় ঠাঁই পেয়েও লাভ নেই। সেই মায়ের কাছেই বাচ্চারা শান্তি সুখ পায়।”
শ্বাশুড়ির কথা শুনে মিসেস ফেরদৌসী কেঁদে দেন। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন,
“মা মা গো আপনি আমার শ্বাশুড়ি নন আমার নিজের মায়ের সমান। এই এতিম মেয়েকে আপনি ভালোবেসে ছিলেন বলেই বেঁচে ছিলাম। মা গো আমার ছেলেটা কোথায়? একবারও ফোন দেয়নি। যতবার ফোন দিয়েছি ততবার কেটে দিয়েছে। বাপের কারণে মায়ের সাথেও রেগে কথা বলছে না ছেলেটা। মা আপনি একটু তারে বোঝান না। আমরা কখনো তার খারাপ চাইনি। একসময়ের দুর্ঘটনায় আমরা ভয় পেয়ে গিয়ে ছিলাম। সেই ভয়ে আমরা চলে এসে থাকতেই লাগলাম ভীনদেশে। মা আপনি ছেলেটার কাছে সত্য কথা এখন বলিয়েন না। নাহলে আমরা অপরাধী হয়ে যাবো।”
খাদিজা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। তিনি নিজেও সেই ঘটনার সাক্ষী। কিন্তু কোথাও এক খারাপ লাগা থেকেই যায়। সেই ঘটনার রেশ ধরে আজ কত বছর তার ছেলে ভীনদেশে সংসার গুছিয়ে বসবাস করছে। অথচ নিজের মায়ের কিরূপ হাল তা জানারও আক্ষেপ করেনি। অতঃপর মনটাকে নরম করে তিনি বলেন,
“বাদ দাও বউমা। ওসব চিন্তা বাদ দিয়ে তোমরা রেডি হয়ে নাও। যখন মন চাই ,তখন চলে এসো। কোনো বারণ নেই। রাখি এখন ভালো থেকো।”
“আপনিও সুস্থ থাকিয়েন মা। ইন শা আল্লাহ আমরা শীঘ্রই আসছি। আল্লাহ হাফেজ।”
“ইন শা আল্লাহ্। আল্লাহ হাফেজ।”
মায়ের সাথে কথা বলবে ভেবে জনাব ইসমাইল নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছিল। এতক্ষণ যাবত মায়ের অভিমানে ভরা কথাগুলো শোনছিলেন তিনি। কিছু বলার পূর্বেই বউ আর মায়ের কথার সমাপ্তি দেখে অসহায় মুখে বউয়ের দিকে তাকান তিনি। করুণ গলায় বলেন,
“বউ কখনো কি মা আমাকে আর মাফ করবেন না? উনি তো জানেন যুবরাজ আমার কত না আদরের। ঐ সময়কার মারাত্মক ঘটনায় আমি হিতা-হিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ছিলাম। তাই তো ছেলে কে নিয়ে এই দূর দেশে চলে আসতে হলো। আমি কখনো চাইনি এমনকি ভাবিওনী এতটা বছরে মায়ের সাথে দূরত্ব এতটা বেড়ে যাবে।”
কথাগুলো বলতে জনাব ইসমাইল এর চোখ থেকে পানি পড়তে লাগল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
মিসেস ফেরদৌসী স্বামীর কাঁধে হাত রেখে প্রেরণা দেন। তবুও তিনি একবার চেষ্টা করতে বলেন,
“আমাদের উচিৎ এবার ফিরে যাওয়া। ছেলেকে সত্যও বলতে হবে। নাহলে তার বৈবাহিক জীবনে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।”
“রেডি হয়ে নাও। আজ রাতের ফ্লাইটেই আমরা দেশে ফিরব। অনেক হয়েছে মায়ের অভিমান আর সহ্য হচ্ছে না।”
মিসেস ফেরদৌসী খুশি হলেন খুব। তিনি চটজলদি সাভেন্ট’স কে বেড রুমে আসতে বললেন।
____
আকবর চিন্তিত গলায় বলে,
“তাহলে তোর কথা হচ্ছে ভাবী তোকে চিনে। অথচ তুই ভাবীকে চিনিস না এমনকি আগে যে কখনো ভাবীর সাথে দেখা হয়েছে তেমন কোনো ধারণা ও নেই তোর?”
“হুম। কিন্তু কোথাও একটা প্রশ্ন মনে জাগছে! আসলেই কি আমি মেয়েটাকে চিনি না? যদি নাই চিনতাম তাহলে কেনো মেয়েটাকে প্রথম দেখতেই ‘বিবিজান’ বলে খুশি অনুভব করে ছিলাম। এমতা তো নয় যে, তখন আমি তাকে ভালোবাসতাম। এসময় তাবাসসুম কে ছাড়া কিছু বুঝতাম না। আর আজ বিবিজান এর জীবনের রহস্য সম্পর্কে জানতে কৌতুহলে ম*রছি।”
“আরে ব্যাটা তুই সরাসরি ভাবীর মুখ থেকেই জেনে নেহ্।”
“তোর কি মনে হয় আমি চাইলেই ওর মুখ থেকে শুনতে পারতাম না ? অবশ্যই পারতাম। কিন্তু রাতে বিবিজান এর শরীরের কন্ডিশন দেখে, আইম ফুললি শকড। সি ইজ মেন্টালী ডিসপ্রেসড। আমাদের সামনে হাসিমুখে দাঁড়ালেও ভেতরে সে চিৎকার করেই কান্না করে। গতরাতে আমি এমনি এক দৃশ্যের সম্মুখীন হয়েছি। বিবিজান এর অসুস্থ সময়ে তার অতীত জানতে চাইলে সে ফুললি মেন্টাল পেশেন্ট হয়ে যাবে। তাও যতটুকু জানতে পেরেছি, এতে আমি এটুকু বুঝতে পারছি আমার সব প্রশ্নের জবাব এক জায়গায় গিয়েই পাবো।”
আকবর বন্ধুর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
“কোন জায়গায়?”
আফরাজ নিজের কেবিনের জানালার নিকট এসে দাঁড়িয়ে যায়। পেন্টের পকেটে হাত গুটিয়ে বলে,
“হাউ এবাউট টেকিং আওয়ার ফাস্ট হানিমুন ট্যুর ইন ফেনী? ইট উডবি ইন্টারেস্টিং রাইট?”
আকবর কথাটা শুনে হা করে তাকায়। পরক্ষণে চিল্লিয়ে বলে,
“ওও ব্রাদার নট অনলি ইন্টারেস্টিং বাট অলসো মিস্ট্রি উইল বি রিভিলড।”
বন্ধুর কথায় আফরাজ বুকের উপর হাত গুজে ঠোঁটের মাঝে বাঁকা হাসি দেয়। জানালার সামনে থেকে সরে কেবিনের থাই গ্লাস দিয়ে কর্মরত এমপ্লয়র্স এর দিকে তাকিয়ে বলে,
“ইয়েস মিস্ট্রি উইল ডিফনেটলি রিভিলড।”
হঠাৎ কেবিনে নক পড়ায় আকবর পেছন ফেরে। তাবাসসুম কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে বিরবিরিয়ে বলে,
‘ডাইনির লেজ যেখান সেখানেই চলে আসা।’ সামনে টু শব্দ করল না বরং আফরাজ এর দিকে চেয়ে বলে,
“দোস্ত তোর প্রাক্তন প্রেমিকা এসেছে।”
‘তাবাসসুম’ এর কথা শুনে চোখ ঘুরিয়ে আকবর এর দিকে ত্যাড়া দৃষ্টিতে তাকায়। বেচারা হকচকিয়ে গেল। সিংহের গুহায় দাঁড়িয়ে ভুল কথা বলে ফেলল। কিন্তু তাদের চেয়ে বেশি উড়নচণ্ডী হলো স্বয়ং নাজীবা। তাবাসসুম কেবিনে এসে বলে,
“স্যার আমাকে ডেকে ছিলেন?”
“ইয়েস মিস পিএ। আপনি দুটো কাপলের জন্য হানিমুন টিকেট বুক করেন। আমার আর আকবরের নামে। আমরা বউ নিয়ে হানিমুনে যেতে চাই ফেনীতে। সো আপনি আপনার কাজ শেষে টিকেট ই-মেইল করে দিয়েন।”
তাবাসসুম এর চোখ বড় হয়ে যায়। তারই সামনে আফরাজ তার হানিমুনের কথা বলছে। ব্যাপারটা অসহ্যকর লাগল তার। সে গলা ঝেড়ে একটুর জন্য আকবরকে স্পেস দেওয়ার জন্য ইঙ্গিত দেয়। আকবর চোখ সরু করে তাবাসসুম এর আপাতমস্তক দেখতে থেকে বেরিয়ে যায়। আকবরকে বের হতে দেখে শান্তির শ্বাস নেয় সে। কেননা অর্ধেক ঝামেলার নাট্যমূল তো এই আকবর কেই মনে হয় তার। বাকি অর্ধেক হলো ঐ মেয়েটা। তাবাসসুম নিজেকে অসহায় ভাবে ফুটিয়ে তুলতে আফরাজ এর পায়ের উপর পড়ে যায়। নড়েচড়ে উঠল আফরাজ। পা সরিয়ে পিছিয়ে তাবাসসুম কে ধমকে উঠে। তার ধমকে কেঁপে উঠলেও ঢোক গিলে আবদার করতে লাগল।
“জান আইমিন স্যার সরি এখন তো আমি আর তোমার ভালোবাসা নেই। তাই বলে এত কষ্ট দিও না। আমি সইতে পারব না। কাল যদি তুমি আমাকে জবের এপয়নমেন্ট লেটার না পাঠাতে তাহলে আমার থেকে রাস্তার ভিখারি হয়ে ঘুরতে হতো। তবেই কি তুমি আমাকে কষ্ট দিতে এই জব দিলে? আমি সহ্য করতে পারছি না আফরু।”
‘আফরু’ শব্দটা তাবাসসুম এর মুখে শুনে বিরক্ত বোধ করে। আফরাজ নিশ্চুপ তার মধ্যে যেনো এসব কথার কোনো প্রভাব হলো না। সে নিজের মত নীরবে ফাইল’স চেক করছে। তাবাসসুম এর একেকটা বাণী বা’নো’য়া’ট মনে হচ্ছে তার। সে ফাইল’স সাইন করার মাঝে বলে,
“দেখো তাবাসসুম এসব বাচ্চামি বাদ দাও। তোমার জবের দরকার ছিল। দিয়েছি এর চেয়ে বেশি কিছু আমি করতে পারব না। আর রইল তোমাকে জব দিয়েছি মানবতার খাতিরে। আশা করি যা আদেশ করেছি তাই পালন করবে।”
তাবাসসুম মনে মনে ফোঁসছে। সে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। আফরাজ এর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
“ওকে আমি টিকেট বুক করে জানাচ্ছি।”
আফরাজ হাতের ইশারায় কেবিনের বাহিরে দিকে যেতে ইঙ্গিত করে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তাবাসসুম ধুপধাপ পা ফেলে বেরিয়ে যায়। শাকচুন্নী কে বের হতে দেখেই মুখ ভেটকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে আকবর। বন্ধুর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,
“এই ডাইনি মেয়ের হাবভাব আমার মোটেও পছন্দ না। সারাক্ষণ আমার কচি বন্ধুর সাথে চিপকে থাকতে চাই। বলি বিয়াত্তা ব্যাটার সাথে আবার চিপকানোর কি দরকার শুনি? এমনেই তো দুজনেই সেকেন্ড হ্যান্ডেড মা*ল।”
শেষের কথায় আফরাজ কিউব বলটি উঠিয়ে আকবরের দিকে ছুঁ’ড়ে মা’রে। এই দেখে চট করে সরে যায় সে। জোরে জোরে শ্বাস ফেলে বলে,
“কিরে আজ তো আমারে মে’রেই ফেলতি? এটাই তোর ভালোবাসা আমার প্রতি তাই না? এই ভালোবাসলি আমাকে? আজ বুঝছি বন্ধুত্ব বলতে এই যুগে কিছু নেই নেই নেই। ধুমতানানানানা, ধুমতানানানানা।”
আফরাজ ধীরে ধীরে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বন্ধুর নিকটে গিয়ে বুকের উপর হাত গুজল। পাগলের মত বিহেইভ করে বেহুদা টিউন করতে করতে আকস্মিক আফরাজ-কে এতটা কাছে দেখে স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে যায় আকবর। বোকার মত হেসে বলে,
“আরে দোস্ত আমি তো মজা করছিলাম। হেহেহহ।”
আফরাজ আকবরকে ছুঁতে নিলেই দু’জনে ধপাস করে পাশে থাকা সোফার পর ছিটকে পড়ে। আফরাজ এর নিচে আকবর ঠাস করে পড়ায়। বেচারা ব্যাকসাইডে হালকা একটু ব্যথাও পেল। আফরাজ বুঝতে পেরে উঠে বসে। আকবরের কোমরে চাপড় মে’রে বলে,
“মনে হচ্ছে এই বয়সেই তুই কিডনী হারাবি। সমস্যা নেই তুই তো আমার দোস্ত। তোর জন্য খাল কেটে কুমির এনে তার কিডনী দিয়ে হলেও তোকে বাঁচাব। হ্যা এতে একটাই সমস্যা। যেখানেই যাবি কুমিরের দলবল তোর পেছনে ঘুরবে। এমনি তো কম ফ্লাটিং করিস না। ভাবীকে দেখলেই তো তোর কলিজা ছ্যাত করে উঠে। তাই ভাবছি তোর কিডনী বেছে আইফোন ফিফটিন কিনব।”
“আজ ফকির বলে এভাবে অপবাদ দিলা বন্ধু। হ্যা হ্যা মনে থাকবে একদিন আমার কিডনীকে তুই ভীষণ মিস করবি। এই কিডনী না থাকলে তো পা*দও দিতে পারব না। তুই না আমার বন্ধু? আমার পা*দ দেওয়ার জন্যে হলেও আমার কিডনী বিক্রি করবি না বলে দেহ্ দোস্ত!”
“এই বলদ এত পা*দ,পা*দ করিস কেন? তোর পা*দের গন্ধে অফিসেও থাকা যায় না। কোন দিন না আবার তোর পা*দের গন্ধে ফ্রাই হয়ে যায় সেই ভয় লাগতেছে।”
“আরে দোস্ত শোকরিয়া কর আমার। আমি পা*দ দেয় বলেই তোর পারফিউমের কোম্পানি এত উঁচু পর্যায়ে গেছে। নাহলে তো মামা তুমি ব্যবসা চালাতে পারতে না। কেমনে জানিস? পা*দের শব্দে পা আছে, পারফিউম এর শব্দেও পা আছে তার মানে কি? তুই পা*দ মা*র আর পারফিউম মা*র একই কথা। যেই লাউ সেই কদু। হুদাই পারফিউম মে*রে লাভ কি সেই খানা টোসার পর তো পা*দই মা*রবে। বাই দ্যা ওয়ে দোস্ত তুই কখনো পা*দ দিস নাই কেন? শোন আজ থেকে পা*দ দিবি। তোর বউকেও পা*দ দিতে বলবি। যেখানে থাকিস পা*দ দিবি আর পেট পরিষ্কার করবি। পা*দ মা*রা ইজ সো হেলদি ওয়ার্ক ইউ নো?”
আফরাজ বন্ধুর কথায় বাঁকা হেসে উঠে দাঁড়ায়। আকবর আফরাজ এর হাবভাব দেখে বলে,
“ছিঃ ছিঃ দোস্ত আমার মুখে পা*দ দিস না। ইজ এ্যা ব্যাড ম্যানার ইউ নো?”
“হা*রামী তোর ইউ নো বের করছি। পা*দের উপর পিএইচডি করছিস তো। আসলেই একজন মানুষ কে দিনে ১৪ বার পা*দ দিতে হয়। নেহ্ বাঁশ খা পু*ত ,পু*ত,পু*ত,পু*ত….”
করে আকবরের মতই নেচে নেচে আফরাজ বন্ধুকে জ্বালাচ্ছে। আকবর নাক চেপে বলে,
“ছিঃ বন্ধু আমার নাকে পু*ত মেরে আমার পা*দ মা’রা কিডনীকে অপমান করলি। এর শোধ আমিও নেবো।”
আকবর ও সমান তালে পা*দ দেওয়ার ভান ধরে দুজনে লুঙ্গি ডান্সের মত নাচতে লাগে। কেবিনের ভেতর দুজনের পা*দের দৃশ্য দেখে তব্দা খেয়ে যায় নাজীবা আর কুসুমা।
চলবে…….
#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১১ (মুখোশধারী)
“জামাইজান আপনার পেটে কি গ্যাস হয়েছে? না মানে আপনি আর আকবর ভাই যেমন করে কোমর ঝাঁকা ছিলেন ওমন করে তো মানুষে পেটের গ্যাস ছাড়ে। আপনার হলে বলুন পেটের গ্যাস দূর করতে আমি সাহায্য করবো। দিনে দু-তিন বার আপনার পেটে বা’রি মা’র’ব। দেখবেন গ্যাস সব ফুড়ৎ করে বেরিয়ে যাবে।”
নাজীবা ভাবীর কথায় শুনে ফিক করে হেসে দিল আকবর। আফরাজ থমথমে মুখে বিবিজান এর কথা শুনলেও আকবরের হাসি দেখে রাগান্বিত নজরে তাকায়। চুপ হয়ে যায় আকবর। তবুও নিজেকে সামলাতে না পেরে বলে,
“দেখিয়েন ভাবী গ্যাস বের করতে যেয়ে কোনো আবার সিলেন্ডার ব্লাস্ট করে ফেলিয়েন না। বন্ধু আমার আপনার উপর ব্লাশ হয়ে আছে। খেয়াল রাখিয়েন, গ্যাস বের করতে গিয়ে সুপার গ্লু না চলে আসে।”
আফরাজ শুনে তেড়ে আসতে নিলে আকবর তার বউকে ধরে অন্যপাশে সরে যায়। ঢোক গিলে নিজের পাগলী বিবিজান কে বুঝ দিতে বলে,
“বিবিজান চোখ থাকতেও অন্ধ হয়ে যাও। আজ সকালে আকবর ছাইপাশ খেয়ে মাথা নষ্ট করে ফেলেছে। তারে ঠিক করতে গিয়ে আমারেও বিগড়ে দিল। বলদ একখান।”
মনে মনে গা’লি ছাড়ল আফরাজ। অন্যথায় আকবরও বন্ধুর শেষের কথাটুকু বিপরীতমুখে কুসুমা কে বলে দেয়। অথচ নাজীবা আর কুসুমা ঠিকই তাদের স্বামীর ভন্ডামি ধরে ফেলেছে। বেচারা-দের লজ্জায় ম’রি ম’রি অবস্থা। নাজীবা আর কুসুমা আড়চোখে নিজেদের মাঝে গোপন ইশারা ইঙ্গিত করে নেয়। নাজীবা কণ্ঠে গাম্ভীর্যতা টেনে বলে,
“আমরা এখন ক্যান্টিনে খেতে যাচ্ছি। হঠাৎ এসে আপনাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে নিজেদের খারাপ লাগছে। তাই যায়। আল্লাহ হাফেজ।”
কথার সমাপ্তি টেনে দু’জন মেয়ে যেমনে এসে ছিল ঠিক তেমনি বেরিয়ে যায়। লিফটে ঢুকে দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে আকস্মিক হাসতে লাগল। দু’জন ব্যাটার মুখই দেখার মত ছিল। কুসুমা কোনো মতে নিজের হাসি থামিয়ে বলে,
“যাই বলো ভাবী দু’জনকে মজামাস্তি করতে ভালোই মানায়।”
নাজীবা তবুও হেসে যাচ্ছে। তাকে হাসি থামাতে বলে কুসুমা। কিন্তু সে থামে না। বরং ফোন বের করে একটা ভিডিও কুসুমার চোখের দিকে ধরে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)সে দেখে হতবাক। নাজীবা লুকিয়ে ফোনে ভিডিও করে ফেলেছে। কুসুমা তার হাত ধরে বলে,
“ভাবী আমারে ওয়াট’স আপে দাও প্লিজ প্লিজ! এই ভিডিও দেখায় আকবর-রে মজা বোঝাব। বিয়ে করেও অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লাটিং করার মজা চু’টিয়ে দেব একদম।”
কিন্তু নাজীবা আনমনে বিরবিরিয়ে বলে,
“জামাইজান আপনাকে এই ভিডিও ভাইরালের ভয় দেখিয়ে শাকচুন্নী কে মা’রা খাওয়াবো। খুব শখ না মেয়ে পিএ রাখার। তাও শুধু শখই না,মানবতার শরীর জনাবের। আপনার মানবতা আচ্ছামত ফলিয়ে বের করবো দেখিয়েন।”
কুসুমা নাজীবা ভাবীকে চুপ থাকতে দেখে মৃদু চা’প’ড় মা’রে। সে নড়েচড়ে বলে,
“হ্যা কি হলো?”
“ক্যান্টিনের ফ্লোরে চলে এসেছি আসো।”
দু’জন মিলে ক্যান্টিনের ভেতর ঢুকে পড়ে। কুসুমা কে প্রায় সবাই চিনে। আকবর নিজেই বলেছিল এই তার বউ। সেজন্য তার ক্যান্টিনে আসা, না আসা একই। এই ক্ষেত্রে নাজীবা একে বারে নতুন। কখনো আফরাজ এর অফিস ঘুরে দেখেনি। আজ এসে ছিল জামাইজান এর সাথে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু দু’ব্যাটার পাগলামীপনা দেখে নিজের মত পাল্টে নেয়। ভাবল কুসুমা ভাবীর সাথে আসল, বিধায় সমস্যা নেই অফিসটা ঘুরে দেখা যাবে। সেই ভেবে দুজনে প্রথমে খেতে এসেছে। তাদের অ্যাসিস্ট করবে তাবাসসুম। আকবর ইচ্ছাকৃত বন্ধুর অগোচরে অ্যাসিসটিং এ ফাঁসিয়েছে তাকে। তাবাসসুম ক্যান্টিনে বসা ছিল। খাওয়া শেষ করে যাওয়ার আগেই ঘোমটা পরিহিত মেয়ে-কে দেখে ফেলল। চিনতে তার মোটেও ভুল হয় না যে,মেয়েটা আফরাজ এর সা’ই’কো ওয়াইফ। শ’য়’তানি বুদ্ধি করে ইচ্ছাকৃত নিজের গলায় পেঁচানো স্কাফ দিয়ে মুখ ঢেকে নেয় সে। নাজীবা তো বেখেয়ালি মুগ্ধ চোখে ক্যান্টিনের মধ্য ডিজাইন দেখ ছিল। কুসুমা কাউন্টার এ যেয়ে অর্ডার করে দেয়। তারা যে টেবিলের কাছে গিয়ে বসতে যাচ্ছিল। সবার চক্ষু অগোচরে নাজীবার চেয়ারের মধ্যে সস ঢেলে দেয় তাবাসসুম। নাজীবাও সেই চেয়ারের উপর বসে পড়ে। তার খেয়াল নেই সেদিকে। তাবাসসুম বাঁকা হেসে মনে মনে বলে,
“এবার বুঝবি আমার সাথে টক্কর নেওয়ার মজা।”
কুসুমা কফি শেষ করে নাজীবা কে বলে,
“ভাবী আপনি হালকা করে ঘোমটা সরিয়ে খান। এখানে কেউ তাকাবে না। কড়া সিকিউরিটি আছে এখানে।”
“তাও ভাবী ভয় হয়।”
“ভয় এখানে কিসের ভয়?”
নাজীবা ভুলে যে মুখ ফসকে সত্য বলতে নিচ্ছিল বুঝতে পেরে হকচকিয়ে যায়। গলা ঝেড়ে বলে,
“আব না মানে আমাকে তো চেনো। আমি একটু পর্দাটা মেইনটেইন করার চেষ্টা করি।”
কুসুমাও বুঝতে পেরে মাথা নাড়ল। তাদের খাওয়া শেষ হতে দেখে তাবাসসুম ফোন বের করে। ফোনের ফোকাস আফরাজ এর বউয়ের ব্যাকসাইড বরাবর রাখে। তারা উঠে চলে যায়। নাজীবার শাড়ির ব্যাকসাইডে লাল রং লেগে আছে যা তাবাসসুম ভিডিও করে রাখল। সস হলেও দেখতে লাগছে পিরিয়ডের র’ক্ত। ক্যান্টিনের এমপ্লয়র্স এর নজরে এলো জিনিসটা। নাজীবার শাড়িতে লাগোয়া র’ক্ত খেয়াল করে মিটমিট হাসতে থাকে। অনেকে কানাঘুষা করে বলতে লাগে।
“মেয়েটার মনে হয় ফাস্ট টাইম পিরিয়ড হচ্ছে।”
“ছিঃ এসব শাড়িতে লাগিয়ে বেশরমের মত ঘুরছে কেমনে মেয়েটা।”
“ছিঃ অফিসের মধ্যে বসও আছেন। তিনি যদি দেখতেন তবে নাক সিটকিয়ে বের করে দিতেন এসব আউল ফাউল মেয়ে-কে।”
“আরে তার চেয়ে বড় কথা এই পাগল মেয়ে-রে নিয়ে কুসুমা ভাবী কি করছেন? মনে হয় আকবর স্যার এই পাগল মেয়ে কে সামলাতে কুসুমা ভাবীকে দায়িত্ব দিয়েছে।”
আশপাশের কটু কথায় নাজীবার যতটা না খারাপ লাগছে, তার চেয়ে ‘পাগল’ শব্দটা বেশি উত্তেজিত করছে তাকে। এখনই যদি সে ‘ড্রা’গ’ না নেয়। তবে তার শরীরে পাগলামীপনা জাগ্রত হবে। নিজেকে কোনো মতে সামলানোর চেষ্টা করছে সে। কিন্তু কিছুতে পারছে না। কুসুমা এমপ্লয়র্স এর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তার পাশে থাকা থাই গ্লাসের দিকে তাকায়। তাকে ঠিকই লাগছে। কিন্তু যখন খেয়াল করে দেখল তখন দেখে নাজীবার শাড়িতে লাল রঙের কিছু লেগে আছে। সে স্তদ্ধ হয়ে নাজীবার পেছনের গিয়ে শাড়ির আঁচল ধরে ফেলে। নাজীবার ধ্যান ফেরে সে কুসুমার স্তদ্ধ চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করে।
“কি হলো ভাবী আপনি আমার পেছনে কি দেখছেন?”
“ভাবী আপনার শাড়িতে এই লাল রঙ নাকি সস? হ্যা ভাবী আপনার পেছনের দিকে কেউ সস লাগিয়েছে। দেখুন আয়নার সামনে!”
নাজীবা থাই গ্লাসের পাশে এটার্চ আয়নার সামনে গিয়ে পরখ করে দেখে। হ্যা কুসুমা ভাবীর কথা সত্য। সে হালকা করে সসের উপর হাত ছুঁয়ে ভাবনায় পড়ে যায়। পরক্ষণে তার মাথায় আগুন ধরে যায়। কুসুমা নিজের পার্স থেকে টিস্যু বের করে মুছতে নিলে নাজীবা তার হাত ধরে ফেলে। সে বলে,
“না ভাবী যে আমার সাথে এই কাজটা করেছে তাকেই এর শোধ দিতে হবে। নাহলে আমি শান্তিতে বসতে পারব না। আপনি আমাকে বলুন অফিসের কত নং কেবিনে সিসিটিভি ফুটেজ আছে?”
“এই কেবিন নিচের গ্রাউন্ড ফ্লোরে। আর আমরা আছি ২নং ফ্লোরে এখন।”
কথাটি শুনে সে কুসুমার হাত ধরে সোজা লিফটে চলে যায়। অন্যথায় তাদের লিফটের মধ্যে যেতে দেখেও কোনো পরোয়া করে না তাবাসসুম। বরং সে নাজীবার অগোচরে যে ভিডিও করেছে, সেটার জন্য একটা ক্যাপশন ভেবে ভেবে নিজের কেবিনে চলে যায়। সে আফরাজ এর পিএ বলে কেবিনটা পেয়েছে। কেবিনে বসে সে তার মা’কে ফোন দেয়। কোনো এক অজানা কারণে তার মা ফোন তুলছে না। সে আজ দুদিন ধরে তার মা’কে ফোনে পাচ্ছে না। যত বারই কল দেয়, নট রিচেবল বলছে। বিধেয় সে আফরাজ এর দেওয়া ফাইল’স চেকিং করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
এদিকে নাজীবা সিসিটিভি ফুটেজ চেক করছে। তার পাশেই কুসুমা ভাবী ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নাজীবার পাগলামীপনা যেন প্রকাশ্যে না আসে, মনে মনে তারই প্রার্থনা করছে সে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)নাজীবা-কে নিজের মত ভিডিও রিভাইন করতে দেখে বিরক্ত বোধ করে সিসিটিভি কন্ট্রোলার। তিনি রূঢ় গলায় নাজীবার উদ্দেশ্যে বলে,
“ম্যাম আপনি কিন্তু নিয়ম ভঙ্গ করছেন। এখানে অফিসের বসকে ছাড়া আর কাউকে এলাউ করা হয় না। আপনি আকবর স্যারের ওয়াইফ এর সঙ্গে এসেছেন দেখে সম্মানের সহিতে বলছি, প্লিজ! ম্যাম আপনি নিজের লিমিটেশনে থাকুন। আমাকে দিন ব্যাপারটা আমি হ্যান্ডেল করছি।”
নাজীবার মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না। বরং সে তার কাজ করেই যাচ্ছে। তার ষষ্ঠইন্দ্রিয় সাক্ষী , ঐ সময় তার চোখের আড়ালে কোনো না কোনো অঘটন ঘটেছে।
ম্যাম এর পাত্তা না পেয়ে কন্ট্রোলার রাগে গজগজিয়ে নাজীবার হাতে স্পর্শ করে। যা দেখে প্রতিবাদ করতে গিয়েও করল না সে। নিজেকে শক্ত রেখেই জ্বলন্ত অগ্নি চোখে তাকায় নাজীবা। তার অগ্নিশর্মা রূপ দেখে আচমকা হাতটা ছেড়ে দেয় কন্ট্রোলার। মাথা নিচু করে নেয়।
নাজীবা তার হাতের উপর আপাতত খেয়াল দিল না। ফুটেজে সে-সময়ের দৃশ্য ভেসে উঠে। বাজপাখির মত ফুটেজের দিকে তাকিয়ে আছে সে। তাবাসসুম এর কৃতকর্মের দৃশ্যপট দেখানো হচ্ছে। যা দেখে নাজীবা আর এক মুহূর্তও সিসিটিভি ফুটেজ এর কেবিনে দাঁড়াল না। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তৎক্ষণাৎ লিফটের দিকে এগিয়ে যায়। সে এখনো তার পরণের শাড়ি চেঞ্জ করেনি। কুসুমাও তার পেছনে গেলো।
_____
দাহাব এহসান আজ নিজেকে পরিপাটি করে তার মেয়ে মিসেস হিয়া কে ডাক দেন। কিন্তু সাড়া শব্দ না পেয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দেন। তিনি কটি পড়তে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল করলেন। গালের একপাশের চামড়া ধসে পড়বে মত লাগছে। একপ্রকার ঘাবড়ে যান তিনি। তাড়াহুড়ো করে আলমারির পেছনের দিকেই এটার্চ করা রুমে ঢুকার জন্য দাঁড়িয়ে যান। দরজায় লকার লাগানো। একটাই কোড দিলেন,’ব্লা’ড এডিকশন’। এই টাইপ করতেই দরজা খুলে যায়। চটজলদি তার টেবিলের কাছে যান। টেবিলের উপর বিভিন্ন রঙের কেমিক্যাল সলিউশন তৈরি করে রাখা। যেনো এগুলো তার জন্যে রেখেছে কেউ। সময় ব্যয় না করে তৎক্ষণাৎ এক কেমিক্যাল সলিউশন এর ভেতর টিস্যু ডুবিয়ে ভিজিয়ে নেন। পরে টিস্যুটি নিজের মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে ছিপছিপে করে নেন। টিস্যুটি ডাস্টে ফেলে টেবিল ফ্যানের সামনে বসে সুইচ অন করেন। ফ্যানটি চালু হতেই তিনি শান্তি অনুভব করেন। যে গালের চামড়া ধসে পড়-ছিল। সেই চামড়া পুনরায় লেগে গিয়েছে দেখে শয়তানি হাসি দেন। হাসা থামিয়ে পাশে থাকা মিনি ফ্রিজ থেকে র’ক্ত এর প্যাকেট বের করেন। একটা গ্লাসে র’ক্ত ঢেলে সেই গ্লাসে চুমুক দিতে লাগলেন। আপনমনে বিরবিরিয়ে বলেন,
“একমাত্র নাজীবার কারণে আমি জমিদারী প্রথার উত্তরাধিকারী হতে পারলাম না। তোর জীবিত অবস্থা আমার জন্য কাল হয়ে আছে। আজও জমিদারী প্রথার ভাগ নিতে গেলে তোর নাম উঠে আসে। তোর একার জীবনের জন্য আমি আটকে আছি। তোকে মুক্ত করতে পারলেই জমিদারী প্রথা পেয়ে যেতাম। কিন্তু তোর ঐ মৃত দাদীর খতিয়ান নামার কারণে তোকে বিয়ে না করা অব্দি প্রথা হাসিল করতে পারব না। তোকে একবার পেয়ে বিয়েটা করতে পারলেই আমার হাতের মুঠোয় পুরো আলী ভিলা ঝুঁকে পড়বে। কত বছর ধরে এই প্রথার অপেক্ষায় আছি। সেটা শুধু আমিই জানি। তোর কাছ থেকে প্রথা ছিনিয়ে নিতে আমার নিজের শরীরের যে কত ক্ষতি করেছি আমি।”
কথাটুকু বলে নিজের গালে হাত রাখে দাহাব এহসান। মাথার চুলে হাত বুলিয়ে দেখলেন। অর্ধচুল তার হাতে চলে এসেছে। তার চেয়ে বড় কথা চুলের অর্ধেকই সাদা। এক-দুটোই কালো শুধু। আয়নায় নিজের মুখশ্রী দেখে অতীতে ডুব দেন।
অতীত……
“এই বুড়ি তুই তোর উকিল দিয়ে খতিয়াননামা আমার নামেই কর। নাহলে তোর পরিবারে কে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দেব।”
“আপনি এতো খারাপ সেটা আগেই বুঝে ছিলাম। আফসোস আমার বাবা বুঝেননি। তাই প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর পর আপনার ফাঁদে পড়ে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে ছিলেন। কিন্তু আমিও শের কাশেম এর মেয়ে ফাতেমা শেরা। আমি বেঁচে থাকতে কখনো আপনার আশা পূরণ হবে না। আপনি পা’পী, নি’কৃ’ষ্ট এক জা’নো’য়া’র। আপনার অন্তিম মুহূর্ত খুব ভয়ানক হবে মিলিয়ে নিয়েন আমার কথা।”
বুড়ি স্ত্রীর কথায় দাহাব এহসান উচ্চস্বরে হাসতে লাগল। তার হাতের তাবিজ ছুঁ’ড়ে মে’রে ‘ঠাসস’ করে চ’ড় বসিয়ে দেন স্ত্রীর গালে। স্ত্রীর গাল চেপে ধরে বলেন,
“এই বুড়ি বয়স তো কম হলো না তোর। এখন ম’রলে কেউ সন্দেহ ও করবে না। ভাববে অসুস্থতায় ভোগচ্ছিলি এর রেশ ধরেই মা’রা গেলি।”
কথার ইতি টেনে জোরে ধাক্কা দেন তিনি। ফাতেমা শেরা ফ্লোরের উপর পড়ে ব্যথা পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠেন।ঘুমন্ত নাজীবা জেগে উঠল। ভয়ে ঘুমন্ত মা’কে চেপে ধরে। জনাব মোবারক আলীও জেগে গেলেন। স্ত্রী কে ঘুমন্ত দেখে ডাকলেন না। অক্লান্ত পরিশ্রমের পর রাতে ঘুমিয়েছে তার বউ। বিধেয় ভয়ার্ত মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুমাতে বলেন তিনি। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)গায়ের টিশার্ট ঠিক করে রুম থেকে বেরিয়ে যান। মায়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে বাবা-মা’র রুমে যান। দাহাব এহসান দরজা খুলেই ম’রাকান্না জড়িয়ে দিলেন। নিজের কোমর ব্যথার ভান ধরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। মা-কে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে জনাব মোবারক আলী মা-কে পাঁজাকোলা করে বিছানার উপর শুয়ে দেন। কপালে হালকা আঁচ দেখে কিছুটা আন্দাজ করতে পারলেন তিনি। তবুও টু শব্দ করলেন না। মায়ের জ্ঞান ফেরাতে পাশে পানি ভর্তি মগ থেকে হালকা পানি বের করে মায়ের মুখে ছিটিয়ে দেন। মিসেস ফাতেমার জ্ঞান ফেরতেই ছেলে-কে কাছে দেখে খুশি হোন। মুখ খুলতে নিলে পেছনে থাকা জা’নো’য়া’র-কে বড়সরো ফুলদানি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন। শেষ বয়সে এসে ছেলের বংশ কে হারাতে চান না তিনি। অতঃপর মিথ্যা ঘটনা বলে ছেলেকে তার রুমে পাঠিয়ে দেন। মোবারক আলী রুম থেকে বের হওয়ার পর পরই ধরাম করে দরজা লাগিয়ে দেন দাহাব এহসান। বাবার এরূপ আচরণে অবাক হোন তিনি। বাবাকে ছোট কাল থেকে দেখে এসেছেন তিনি। কখনো বিরূপ আচরণ করতে দেখেননি। রাত বেশি হওয়ায় মায়ের কপালে ব্যান্ডেজ করে নিজ রুমে চলে গেলেন।
অন্যথায় দাহাব এহসান নিজের স্ত্রীর শিউরে বসে তার গলার কাছে হাত রেখে মৃদু গলায় বলেন,
“আহারে বউ আমার। ব্যথা লাগছে কপালে? জানিস তোর প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর তোকে কেন বিয়ে করে ছিলাম ? যাতে করে তোর রাজমহল আমি পেয়ে যায়। কিন্তু আফসোস কে জানতো আমার শ্বশুর যে এক নাম্বারের চতুর মানব বের হবে। আমার নামে ব্যবসার খতিয়াননামা লিখে জমিদারী প্রথা তার কন্যার নামে লিখে দিলেন। এতে কী? আমিও শ্বশুরের মন জয় করে তোকে বিয়ে করে নিলাম। যদিও জানতাম তুই বিধবা,এক ছেলের মা তবুও আই ডোন্ট কেয়ার। এই বুড়ো বয়সে এসেও আমার লোভ নিয়ন্ত্রণে নেই। কেনো? কারণ আমার তোকে সহ্য হয় না। তুই আমাকে ছেলে সন্তান দিস নাই। ছেলে সন্তান তো আগের জামাই-রে দিয়ে খেয়ে দিলি জামাই-রে। আমার বংশে সব কিছু নিজ ছেলেকে দিতে চেয়েছিলাম তাও হতে দিলি না। তোর আগের পক্ষের সন্তান কে তো আমি পৃথিবী ছাড়া করব দেখে নিস। শুধু সে নয় তার পরিবারও ধ্বংস হবে। কিন্তু একটা ইন্টারেস্টিং কথা বলব তোকে? আমাদের নাতনী নাজীবা আছে না? ওকে না আমার মা’রতে মন চাইছে না। তাহলে কী করা যায় ভাবছি?
কথাটুকু বলে দাহাব এহসান নিজের সাদা দাড়িতে হাত বুলাতে লাগলেন। মিসেস ফাতেমার কপালে প্রচন্ড ব্যথা করছে। তিনি বহু কষ্টে উঠে বসেন। দেওয়ালে হেলান দিয়ে তার দ্বিতীয় স্বামীর নি’কৃ’ষ্ট মনের বাণী শুনছেন। যবে নাতনী-র কথা বললেন। পিলে চমকে উঠলেন। স্বামীর দিকে চেয়ে আতঙ্কিত গলায় জিজ্ঞেস করেন।
“মা মানে আমার নাতনী কে দিয়ে কী করবেন আপনি ? দেখেন নাতনী আমার মাত্র সাত বছর বয়সী। আমার ছেলের পরিবারের ক্ষতি করিয়েন না। আমি আমার পক্ষের সম্পত্তি আপনার নামে করে দেব। কিন্তু আমার নাতনীর….।”
তাকে চুপ করতে ইশারা করে তিনি হাস্যজ্জ্বল গলায় বলেন,
“তোরে মে’রে ফেলার পর তোর ছেলে আর ছেলের বউকেও মে’রে দেবো। কিন্তু তোর নাতনিকে নিজের দ্বিতীয় বউ বানিয়ে রক্ষিতা করে রাখব। কি করব বউ? নাতনী আমার কচি শরীরে ভরা। ওকে না পেলে জীবনটা বৃথা মনে হবে। জোয়ান বয়সে তোর মত বিধবা-রে বিয়ে করে নিজের পায়ে কুড়াল মে’রে ছিলাম। এর প্রায়শ্চিত তোর নাতনী কে বিয়ে করে করবো। আমার শখ ছিল অবিবাহিত, কচি মেয়ে বিয়ে করার। তুই ম’রার পরই না হয় করব।”
কথার ইতি টেনে হাসতে লাগলেন তিনি। মিসেস ফাতেমা তীক্ষ্ণ কথা বলতে গিয়েও পারলেন না। তার গলা কেমন যেন জ্বালা পোড়া করছে। চোখে ঝাঁপসা দেখতে পাচ্ছেন। হঠাৎ গলা দিয়ে র’ক্ত ঝরতে লাগে। দাহাব এহসান রুমের বাহিরে গিয়ে মেইন দরজার ছিটকিনি খুলে দিলেন। দরজার তালা ভেঙে মাটিতে ফেলে রাখলেন। পুনরায় রুমে এসে আয়েশে রকিং চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দেন। ফ্লোরের উপর থেকে বড় সাইজের পাথর হাতে নিলেন। বউ ফাতেমা কে ছটফট করতে দেখে খোশমনে নিজের কপালে জোরেসরে আ’ঘা’ত করে বসেন। ব্যথার চোটে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।
চলবে……