অন্যরকম তুমিময় হৃদয়াঙ্গণ পর্ব-০৯

0
600

#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৯ (রহস্যের উম্মচন-০১)
(১৮+এলার্ট)

“বিবিজান তুমি নিজেই তোমার অমূল্য রুপ স্বামীর কাছে বিলিয়ে দিয়েছো। যদি মানতে কষ্ট হয়, তবে আমার কাছে ভিডিও আছে। আমি আবার প্রমাণ ছাড়া কাজ করি না। যদি আগে জানতাম, ড্রাগের রিয়েকশনে তুমি আমার মতো হ’ট,চ’ক’লে’টি ছেলে দেখে নিজেকে সামলাতে পারবে না। তাহলে কবেই আমি নিজ দায়িত্বে তোমার শরীরে ইনজেকশন পুশ করে দিতাম। আজ প্রথম মনে হচ্ছে, বাসর রাতে যদি তোমাকে চ’ড় না মা’রতাম। তবে তোমার আসল রুপ জানতে পারতাম না।
মাতব্বরি করে ড্রাগের ইনজেকশন কে নিতে বলেছিল তোমাকে হুম? বাই দ্যা ওয়ে ইউ আর লুকিং সো হ’টি বিবিজান। ওয়ান’স মোর এগেইন?”

নাজীবা খুব কষ্টে কথাগুলো হজম করছিল। আফরাজ এর শেষের কথায় বেচারী চটজলদি না’ই’টি পরে নেয়। কোনোমতে চাদর খামচে ধরে আফরাজ এর কাছ থেকে দূরে সরে বসে। মাথা চেপে কেমনে কি হয়ে ছিল তা ভাবার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার কিছুই মনে পড়ছে না। আফরাজ বিবিজান এর চিন্তিত চেহারা দেখে বাঁকা হেসে বলে,

“আহারে আমার বিবিজান। যাও গিয়ে ফরজ গোসল সেরে আসো। একসাথে নামাজ পড়ে আবার ঘুমাতে হবে। আজ সকালে অফিসেও যেতে হবে। এখন থেকে তুমিই আমার সব দায়-দায়িত্ব পালন করবে। সকাল সকাল আমার কফি খাওয়ার অভ্যাস। সেই অভ্যাস-কে পর্যাপ্ত মূল্যায়ন তোমারি করতে হবে। সকালে তোমার এই কোমল হাতজোড়া দিয়ে কফি বানিয়ে হাজির হবে বুঝলে বিবিজান?”

নাজীবা না শুনার ভান করে কান চুলকালো। স্বামীর দিকে ভাব নিয়ে তাকিয়ে বলে,

“এ্যাহ্ মগের মুলুক পেয়েছেন? আপনি বললেন আর হয়ে গেল ভাবলেনও কি করে হুম? আমি জানি আপনি ইচ্ছে করেই আমার অজ্ঞানের ফায়দা তুলছেন। আমি তো বেলকনিতে র’ক্ত দেখে অজ্ঞান হয়ে ছিলাম। আমি কেমনে অজ্ঞানে আপনার সাথে ই’ন্টি’মে’ট হতে পারি?”

“আরে তোমার মাথাভরা গোবরের মধ্যে এত চাপ নিচ্ছো কেন সেটাই বুঝতে পারছি না! বলি বয়স তো কম হলো না। এখন বাচ্চাকাচ্চা সামলানোর জন্য কাছে আসা খুব জরুরী। ফর দিস ম্যাটার আইম সো স্ট্রিক্ট ফরওয়ার্ড।”

“ধুর আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।”

আফরাজ এর সামনে থেকে পালিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে নাজীবা। তাকে খালি হাতে যেতে দেখে শিস বাজিয়ে উল্টো মোড়ে শুয়ে পড়ে। তার জানা আছে, কিছুক্ষণ পরই ডাক শুনা যাবে। সে ফোন হাতে নিয়ে তার সিক্রেট পিএ রাফিন কে মেসেজ করে।

“ইমিডেটলি নিডেড দিস প্রেসক্রাইপর্ড ইনজেকশন’স।”

মেসেজের সাথে হাসপাতালের প্রেসক্রিপশনের ছবিও সেন্ড করে দেয়। রাফিন এর পক্ষ থেকেও মেসেজ চলে এলো ‘ওকে স্যার’। ফোন রেখে ধীর স্থির মাথায় ভাবতে লাগল বিবিজান এর সাথে হওয়া ঘটনাটি।

তিনঘণ্টা আগের ঘটনা….

নাজীবা পায়ের নিচে র’ক্ত দেখে মাথায় চক্কর খেয়ে যায়। হুট করেই পাশে থাকা সোফায় নেতিয়ে পড়ে। আফরাজ সবেই বাসায় ফিরেছে। আকবর রুমে চলে গেলেও আফরাজ এর জরুরি কল আসে। সে করিডোরে দাঁড়িয়ে কথা বলে, তখন নাজীবার রুম থেকে চিৎকার শুনে চট করে রুমের বেলকনির দিকে তাকায়। কিন্তু দৃষ্টিগোচর না হওয়ায় ছুটে রুমে যায়।
বেলকনির সামনে এসে দেখল, এক টবে পচন ধরে গাছটি নেতিয়ে পড়েছে। সেই টবের গা বেয়ে র’ক্ত ঝরছে। টবে পচন ধরলে তা মানা যায় কিন্তু র’ক্ত? আপাতদৃষ্টিতে নজর দিল না। নাজীবা কে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দেয়। তার হাত-পা ও শরীরের পোশাক ছিপছিপে হয়ে আছে। বোধহয় গোসল করে ছিল সে। জ্ঞান ফেরানোর জন্য নাজীবার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। চোখজোড়া পিটপিট করে উঠে তার। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
আফরাজ সমেত চারদিকে চোখ বুলিয়ে আচমকা নিজের ঘোমটা সরিয়ে দেয় নাজীবা। বাকরুদ্ধ হয়ে যায় আফরাজ। তার বিবিজান বুঝি সেদিন নামাজ পড়ছিল? এতো বিবিজান নয়, বিবিজান এর রুপে আসমানের পরী বসে আছে। তার সৌন্দর্যে বারংবার ঢোক গিলছে সে। কোথায় সে শ্যামরঙা পুরুষ আর কোথায় তার রূপবতী নারী? স্বামীকে কাছে দেখে নাজীবা আহ্লাদী গলায় চিল্লিয়ে বলে,

“এই শা’লা’র ব্যাটা তোর চোখে কি ছানা পড়ছে? আমার মত সুন্দরী বউ রেখে ঐ মেকআপ সুন্দরী তাবাসসুম কে ভালোবাসলি কেন বল? ঐ মেকআপ সুন্দরীর মা’ই’রে বা’প চু’টি’য়ে দেবো। জানিস তুই আমি তোরে বিয়ে করে তোর কত বড় উপকার করছি? আজ যদি আমার জায়গায় ঐ মাইয়া থাকতো। তখন তার রুপের জল খেয়ে পা’য়’খা’না’র রোগ হতো। পায়খানার রোগকে কি জানি বলে?”
গালে এক আঙ্গুল রেখে ভাবছে। পরক্ষণে মনে পড়তেই বলে,

“ওহ হে ডায়রিয়া নিয়ে গু’খানায় বসে থাকতি। তখন তোরে কে বাঁচাতো হে? সেই তুই আমার জামাই হয়ে আমারেই চ’ড় মা’রছিলি।”

শেষ কথায় নাজীবা উচ্চস্বরে কান্না শুরু করে দেয়। আফরাজ বোকার মত বিবিজান কথা হজম করছিল। আকস্মিক বেহুদা কান্নার ঢং দেখে চোখ ঘুরিয়ে হুট করে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে নেয়। এমতাবস্থায় নাজীবার শরীরে অন্যরকম এক উত্তেজনার সৃষ্টি হলো। এমনিও সে স্বামীর প্রেমে পাগল ছিল। প্রথম রাত্রির সঙ্গ না পাওয়ায় এতদিন ছটফট করছিল। আজ স্বামী স্বেচ্ছায় ঠোঁটজোড়া মিলিয়েছে। এতেই সে পাগলপ্রায়। কামড়ে ধরে আফরাজ এর ঠোঁট। আফরাজ তো বিবিজান এর কামড়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একহাতে নাজীবার চুলের মুঠি ধরে আরেক হাতে কামিজের ফিতা খুলে নেয়। সেও বিনা বাক্যে আফরাজের পরণের শার্টটি খুলে নেয়। আফরাজ উত্তেজনায় শার্টটা ফ্লোরের উপর ছুঁ’ড়ে মে’রে নাজীবাকে বুকের মাঝে চেপে ধরে, একের পর এক চুমু দিয়ে তাকে সুখানুভূতির মাঝে ডুবিয়ে নিতে লাগল।
দু’মানব-মানবী আজ সুখের সাগরে ভেসে যেতে লাগে। এই বিকাল বেলা তাদের দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখবে।

আকস্মিক ‘শুনেন জামাই’ এ শব্দ দুটো শুনে ধ্যান ফিরল আফরাজ এর। তবুও সে না শুনার ভান ধরে পা টান টান করে শুয়ে রইল।
সে জানে, এই ডাক কার আর কেনোই বা ডাকছে? অতএব, চুপটি করে শুয়ে রইল। নাজীবা দরজা ফাঁকা করে আফরাজ এর এমন না শোনার ভান দেখে রাগে ফোঁসছে। সে স্পষ্ট আফরাজ কে জাগ্রত দেখছে। অথচ তার ডাক কে প্রাধান্য দিল না দেখে নিজেকে অসহায় বোধ করে। পুনরায় ডাক দেয়। ইচ্ছেকৃত আফরাজ শুনে হাই তুলে উঠে বসে। ওয়াশরুমের দরজার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকায়। নাজীবার গাল লাল হয়ে গেল। সে কাঁপা গলায় তার পোশাক চাইল। আফরাজ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,

“এমন করে চিল্লিয়ে ডাকছো কেন হুম? ওয়াশরুমেও কি চিল্লানির প্রেকটিস করতে চাইছো? এখনো রুমের ভেতরে তোমার সুখের শব্দ কানে গুঞ্জে যাচ্ছে। সেখানে তুমি ওয়াশরুমেও তোমার শব্দ ছড়িয়ে দিতে চাইছো! নট ব্যাড বিবিজান। আই ডোন্ট হেভ এনি প্রবলেম।”

“এই মিয়া চুপ করেন। আপনার ফালতু কথা অফ করে আমাকে কাপড় এনে দেন। নাহলে আপনার একদিন কি আমার একদিন বলে দিলাম।”

“কি তুমি আফরাজ ফাহিম কে হুমকি দিচ্ছো। এবার তো তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। তোমার শাস্তি হলো আজ তোমার কোনো কাপড় পরারই দরকার নেই। সারাদিন রুমের ভেতরে আমাকে চাদর হিসেবে জড়িয়ে ধরে রাখবে। দিস ইজ ইউর পানিশমেন্ট বিবিজান।”

আফরাজ এর বলা কথায় কিছুক্ষণ বোকার মত তাকিয়ে রইল নাজীবা। পরক্ষণে স্বামী কি বলছে বুঝতে পেরে ‘নাহহ’ বলে চিৎকার দেয়। আফরাজ কান চেপে ধরে বলে,

“উফফ বিবিজান এমনে চিৎকার দিও না। কলিজায় কুস কুস হতা হেয় না।”

স্বামীর কথায় ইতস্তত গলায় নাজীবা ঢোক গিলে বলে,

“আআআআ জামাইজান সরি। আমার কাপড়গুলো দেন না প্লিজ!”

‘প্লিজ’ শব্দটা একটু টান দিয়ে বলল নাজীবা। এতে আফরাজ মুখ টিপে হেসে দেয়। যা চক্ষুগোচর হয় না নাজীবার। সে উঠে আলমারি থেকে নাজীবার প্রয়োজনীয় কাপড়গুলো বের করে। ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে নক দেয়।
নাজীবা দরজা ফাঁকা করে কাপড়গুলো নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। মৃদু হাসে আফরাজ। টিশার্ট আর লুঙ্গি পরে সে বিছানার চাদর উঠিয়ে বালতির মধ্যে রাখে। আলমারি থেকে নতুন বালিশ কভার ও বেডসীট নিয়ে বিছানা গুছিয়ে নেয়। তন্মধ্যে নাজীবা উড়নাহীন চুল মুছতে মুছতে বের হলো। মুগ্ধতার দৃষ্টিতে চেয়ে রইল আফরাজ। এই নারী যে তার অস্তিত্বে মিশে গিয়েছে, যাকে ছাড়া তার অস্তিত্ব মূল্যহীন। মুচকি হেসে বিবিজান এর কানের কাছে ঠোঁট এনে বলল।

“আজ থেকে তুমিই আমার কাপড়ের সেট রেডি রাখবা। যেনো প্রতি কাপড়ে তোমার হাতের স্পর্শ পায়।”

শিহরণে নুয়ে গেল মেয়েটি। স্বামীর কাছ থেকে প্রাপ্য অধিকার পাওয়ার খুশিতে তার চোখে পানি চলে এলো। হুট করে চোখের এক ফুঁটো পানি তার গাল বেয়ে নিচে পড়ার পূর্বেই আফরাজ সেই পানি নাজীবার চিবুকে ঠোঁট চেপে চুষে নেয়। স্বামীর নেশাময় চুমুতে লজ্জায় ঠোঁট চেপে ওয়াশরুমের দিকে তাকায়। সময় ব্যয় না করে তৎক্ষণাৎ ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে আফরাজ। হেয়ার ড্রায়ারে চুল শুকিয়ে রুম-হিটার অন করল নাজীবা। কিছুক্ষণ শরীরের ঠান্ডা ভাব দূর করে আলমারির থেকে আফরাজ এর কাপড় বের করে বিছানায় রাখে।
রুম থেকে বেরিয়ে সে ভাবল, প্রথমে তার দাদী শ্বাশুড়ির কাছে যাবে। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে কুসুমা ভাবীকে সাহায্য করবে। ‘মাশাআল্লাহ’ ঘরের ছোট বউ হলেও সর্ব কাজ, সে আগে-ভাগে করে রাখে। যাতে কারো কষ্ট না হয়। সে মাথার হিজাব ঠিক করে দাদীর রুমের দিকে গেল।

_____

“বাবা এসব কি? আপনার গলা দিয়ে র’ক্ত কেনো বের হলো? আপনি কি কোনো ভাবে সূর্যের রশ্মির সামনে পড়েছেন? কি হলো বাবা কিছু বলছেন না কেনো? আপনার এসব অতিরিক্ত কর্মের ফলে আমিও না কোনো ফেঁসে যায় এই ভয় লাগে।”

দাহাব এহসান র’ক্তা’ক্ত মুখে মিসেস হিয়ার দিকে চেয়ে তার গাল চেপে ধরল। মেয়ের মুখের সামনে মুখ এনে বলে,

“বেশি মুখ চালাবি না বুঝছিস? তুই যে আমার র’ক্তপানে ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছিস। তারই ক্রিয়ায় আমার গলা দিয়ে অর্ধ পান করা র’ক্ত বেরিয়ে গিয়েছে। তুই কি ভেবেছিস? তোর মেয়ে কে আমার রাত্রি সঙ্গী হওয়া থেকে বাঁচাতে পারবি? তাহলে বলছি তোর মেয়েকেই আমার থেকে দূরে রাখ। নাহলে তোর উপরে হওয়া ক্ষোভের মাশুল না আবার ওকে দিতে হয়।”

মিসেস হিয়া ঘাবড়ে গেলেন। তিনি বুঝতে পারেননি যে, তার বাবা আন্দাজ করতে পারবেন। তিনি মাথা নেড়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। দাহাব এহসান মেয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে দেওয়ালে টাঙানো নাজীবার সাত বছরের ফ্রক পরিহিত ছবির দিকে দৃষ্টি দেয়। মেয়েটা দেখতে কেমন হয়েছে সেটাও জানেন না তিনি। নাহলে কবেই নাজীবার র’ক্ত’ খেয়ে মে’রে ফেলতো। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
মিসেস হিয়া তার বাবার রুম থেকে বেরিয়ে গেল। নিজেকে ধাতস্থ করে মেয়ে কে কল লাগায়।
তাবাসসুমের বিকাশে দাহাব এহসান টাকা পাঠিয়েছেন। সে টাকাগুলো নিয়ে পার্লারে নিজের রূপচর্চা করছে। তার ফোন আসায় পার্লারের এক কর্মী ফোন নিয়ে তাবাসসুম কে দেয়। সে কানে ধরে বলে, ‘হ্যালো মম’।
মিসেস হিয়া মেয়ের কণ্ঠ শুনে বলে,

“মা শোন , আজ কয়েকদিন তোর চাচা বিজি থাকবে। তাই তুই আছিস না বুঝছিস? তুই টাকা পেয়েছিস তো?”

‘না আসার’ কথা শুনে একপ্রকার খুশিই হলো তাবাসসুম। কেননা তার চাচাকে হ্যান্ডসাম লাগলেও শরীরের আনাচে কানাচে কেমন যেন বয়স্কের ছাপ দেখায়। বিধায় রাত কাটাতে হবে না ভেবে মন খারাপের ভান ধরে বলে,

“ওহ মম টাকা পেয়েছি বলেই আমি আরো চাচার জন্য নিজের ফেসিয়াল করছিলাম। থাক বাদ দাও। ওকে মম থ্যাংকিউ।”

কথা শেষ করে মেয়ে ফোন রেখে দিল দেখে মিসেস হিয়া চিন্তামুক্ত হলো। তিনি কোনো ভাবেও চান না তার বাবার মুখে তাবাসসুম কে ফেলতে। শরীর ভোগ তো নয় , র’ক্ত খেয়ে মে’রে দেবে তার মেয়ে-কে।

____

একসপ্তাহ পর….

আজকাল আফরাজ গম্ভীরতা বজায় রেখে কথা বলছে নাজীবার সঙ্গে। এই যেমন কথা কম বলা,মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, সে খেতে বসলে আফরাজ খাওয়া ছেড়ে উঠে পড়ে ইত্যাদি আচরণগুলো ভীষণ কষ্টে হজম করছিল নাজীবা। ঘনিষ্ঠ দিনের পর থেকে স্বামীর ভালোবাসায় পুনরায় আবদ্ধ হতে ছটফট করছিল মেয়েটি। যেভাবেও হোক আজ সে আফরাজ কে নেশায় উন্মাদ বানাবে। বিছানায় বসে ঘড়ির দিকে তাকায়। রাতের বারোটা বাজতে আর দশমিনিট বাকি। তাই সে নিজের পরণে লাল ব্লাউজ, পেটিকোট আর কালো জর্জেট শাড়ি জড়িয়ে নেয়। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে হালকা সেজে নেয়। কেননা আফরাজ এর সাজসজ্জা অপছন্দ। প্রকৃত সৌন্দর্যই সে ভালোবাসে। নাজীবা নিজের রুপ ফুটিয়ে বিছানার কাছে গেল। হাঁটু গেড়ে বিছানার নিচ থেকে তার সুটকেস বের করে। পাঁচটি ইনজেকশন এর মধ্যে আরেকটি ইনজেকশন নিয়ে কাঁধে পুশ করে নেয়। নিজেকে শান্ত করে আফরাজ এর অপেক্ষায় শুয়ে পড়ে। ঘড়ির দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ তার ঘুম পেয়ে যায়। যার দরুণ ঘুমিয়ে পড়ে‌। তখনি রুমে এলো আফরাজ। সিসিটিভি ফুটেজে নাজীবার উপর খেয়াল রাখছিল সে। নাজীবার ঘুমন্ত শরীর কে কোলে নিয়ে লাইব্রেরী রুমে নিয়ে এলো।
রকিং চেয়ারে বসিয়ে দেয়। নিজের পরণে একটি কালো কটি জড়িয়ে নেয় আফরাজ। নরম সুরে ‘নাজীবা’ বলে দু’তিনেক ডাক দেয়। ঘুমের তীব্র ঘোরে নাজীবা ‘জ্বী’ বলে। বিবিজান এর কণ্ঠ শুনে স্বস্তি পেল সে। কারণ নাজীবার জ্ঞান ফিরতে না দেখে তার চিন্তা হচ্ছিল।
যদি ডক্টরের প্রেসক্রাইপড ইনজেকশনের কারণে নাজীবার ক্ষতি হতো। তবে সে খু’নই করে ফেলতো ঐ ডক্টরকে। কিন্তু বিবিজান জানে না, তার ইনজেকশন কৌশলে পরিবর্তন করে ফেলেছে আফরাজ। আজকের ইনজেকশন ছিল সুস্থ হওয়ার মেডিসিন। ডক্টর আফরাজ এর কথায় উক্ত মেডিসিনে কড়া ঘুমের মধ্যেও হিপনোটিজম এর মেডিসিন এড করে দিয়ে ছিল। নাজীবার ঘুমন্ত চেহারার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করে।

“তুমি কে নাজীবা? আফরাজ ফাহিম মানে তোমার স্বামীকে কেমনে চিনো? আফরাজ এর সাথে তোমার সম্পর্ক কিসের? তুমি কি এতিম? আর এই ড্রাগ’স সেম্পল কেনো নাও? তুমি কি আসলেই পাগল বলো আমাকে?”

“আমার নাম নাজীবা মুসাররাত। আমার বাবার নাম মোবারক আলী , মায়ের নাম মেহজাবিন সিরাত। আমরা দু’ভাইবোন ছিলাম। আমি ছিলাম ছোট, বড় ভাই নাদিম আলী। আমাদের পরিবারে কোনো অভাব ছিল না। ধনাঢ্য পরিবারের মেয়ে আমি। ফেনীর আলিশান বাড়িতে বসবাস ছিল আমাদের। আফরাজও ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে। সে কেনো আমায় চিনছে না? কেনো আমায় ভুলে গেলো? কেউ কি তার খেলার সঙ্গীকে ভুলতে পারে? মানছি আমি সে শুধু একমাস এর জন্য এসেছিল দেশে। তাই বলে একমাস এর মধ্যে খেলার সাথী কে ভুলে যাওয়া। আসলেই অবাক-কর বিষয় ছিল। আমি তো ভুলেনি। বরং তাকে হৃদয়ে গেঁথে বড় হচ্ছিলাম। আফরাজ রাগ করবে ভেবে বয়ফ্রেন্ডও বানায়নি। তাকে স্বামী হিসেবে পেয়েও কি লাভ যদি আমাকে নাই বা চিনে!”

চুপ হয়ে গেল নাজীবা। তার বন্ধ চোখজোড়া হতে পানি গালে বেয়ে পড়ল। আফরাজ এর হাত কাঁপছে। কি শুনছে সে এসব? একমাস তার খেলার সঙ্গী এসব কি বলছে মেয়েটা? তার কেনো কিছু মনে নেই? নিজেকে স্থির করে পুনরায় বলে,

“বলো নাজীবা তোমার এমন অবস্থা কেমনে? তোমাকে কে পাগল বানিয়েছে? আফরাজ আর তোমার স্মৃতি খুলে বলো আমায়?”

“আফরাজ আমার আফাজ, আমি তার #হৃদয়াঙ্গণ। এখনো জানি না নয় বছরের ছেলের মুখে #হৃদয়াঙ্গণ এর মানে কি? আমি তো তখন ছয় বছরের মেয়ে। হৃদয়াঙ্গণ কি সেটাই বুঝতাম না! ছোট থেকে ঘোমটা দিয়ে ঘুরতে পছন্দ করতাম। সে-বার পুকুর পাড়ে আফাজ একা বল নিয়ে বসে ছিল। তার কাছে গিয়ে সঙ্গ দিয়ে ছিলাম। নাম জিজ্ঞেস করতেই আফরাজ বলে। কিন্তু নামটা ঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারতাম না। তাই শর্টকাট আফাজ বলতাম। সে হেসে দিতো। তখন থেকেই তার সাথে খেলতাম। একদিন তার কপাল কাটা দেখে ভয়ে কেঁদে দিয়ে ছিলাম। সে আমার হাত ধরে বলে ছিল, নাজুসোনা শোন তোর পরিবারে এক কালো ছায়া আছে। সে তোকে আমার থেকে দূর করতে চাই। আমি আজ থেকে আর আসব না। কালই আমার যাওয়ার দিন। তুই আমার জন্য অপেক্ষা করিস। তোকে নিজের অর্ধাঙ্গিণী বানিয়ে নিয়ে যাবো। বুঝছিস? আমার হয়ে থেকো নাজুসোনা। তার সব কথা আমার ছোট হৃদয় বুঝতে পারেনি। কেঁদে ছিলাম খুব। বুঝতে পেরে ছিলাম আমার খেলার সঙ্গী আর আসবে না। এভাবেই দিন যাচ্ছিল। নাদিম ভাই ছিল আফরাজ এর বয়সী। সে যাওয়ার পর ভাইয়া আমাকে সামলে ছিল। অথচ ভাই জানতো না কোন কারণে আমার মন খারাপ থাকতো? সে নিঃস্বার্থে আমাকে আদরে আগলে রাখতো। যখন সাত বছর হলাম তখন প্রথম বার গ্রামে এলাম। গ্রামে আমার সৎ দাদা মানে আমার দাদীর আরেক স্বামী তার মেয়ে কে নিয়ে থাকতেন। মেয়ের বিয়ে হওয়ায় সে অন্যখানে চলে গিয়ে ছিল। আমার বাবার পরিবারে সৎ দাদাই বেঁচে ছিলেন। দাদী মারা যাওয়ার আগে বাবার নামে সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে ছিলেন। আর আমার বাবা জমিদারীর অর্ধ ভাগ আমার নামে গোপনে লিখে রাখে। বাকিটুকু ভাই-কে আর মা’কে দেয়। সৎ দাদা পেয়ে আমি আর ভাই আহ্লাদী হয়ে পড়ে ছিলাম। কারণ শহরে একক পরিবারে বাস করে , দাদা কি জিনিস কখনো জানতে পারিনী। দাদা প্রতি রাতে আমাকে আর ভাইকে কাছে নিয়ে ঘুমানোর বায়না করতেন। বাবা-মা সরল মনে দাদার কাছে দিয়েও দিতেন। আমরাও দাদার আদরে গ্রামে থাকতে লাগলাম। কিন্তু একদিন এমন কিছু দেখলাম। যা দেখে আমার ছোট মস্তিষ্ক নড়বড়ে হয়ে গিয়ে ছিল।”

শেষের কথায় যেন আতঙ্কে বুক কাঁপছিল নাজীবার। সে জোরে জোরে কাঁদতে লাগল। বিবিজান এর আকস্মিক কান্নার কারণ বুঝতে পারল না আফরাজ। তবুও নাজীবার ছোট দেহটিকে চট করে জড়িয়ে ধরে শান্ত করতে লাগল। স্বামীর পরম আদুরীয় স্পর্শে নাক টানতে থেকে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় নাজীবা। তাকে আর প্রশ্ন করল না আফরাজ। আপনমনে বিরবিরিয়ে বলে,

“বিবিজান এখন থেকে তুমি একা নয়। এই আফরাজ ফাহিম প্রতি পদে পদে তোমার সঙ্গে থাকবে।”

বিবিজান এর চোখের পানি মুছে পাঁজাকোলা করে রুমে নিয়ে এনে শুয়ে দেয়। চাদর টেনে তাকে বুকে আগলে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে আফরাজ।

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে