#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ০৮_৯
#লেখিকাঃDoraemon
অহনার রাগ এবার প্রচুর বেড়ে যায়। অনন্তের এসব অপমান অহনা সহ্য করতে না পেরে অহনা অনন্তের কাছে ধীরে ধীরে এসে অনন্তের গালে ক্লাসের সবার সামনে ঠাস করে থাপ্পড় মেরে দেয়। অহনার এমন আচরণে ক্লাসের সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। অনন্ত অহনার এমন আচরণে কিছু বলল না৷ বরং অনন্ত একটা হাসি দিয়ে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে। অহনা খুব রেগে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–জীবনে অনেক খারাপ মানুষ দেখেছি কিন্তুু আপনার মতো খারাপ মানুষ দেখি নি৷ আমি আপনাকে ঘৃণা করি। আপনাকে আমি মরে গেলেও ক্ষমা করব না৷
অহনা এটা বলেই কাঁদতে কাঁদতে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে যায়। অনন্তের চোখের কোণে পানি টলমল করতে থাকে। অনন্তের হাতে থাকা মার্কারটাও নিচে পড়ে যায়। অনন্ত আর নিজেকে আঁটকে রাখতে না পেরে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে অহনার পিছু নিতে থাকে। অহনা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়াচ্ছে। তারসাথে অনন্তও অহনার পিছনে পিছনে দৌড়াচ্ছে। কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা এবং কলেজের অন্যান্য স্যাররা অনন্তের এবং অহনার কান্ড দেখে অবাক। অনন্ত অহনাকে চিতকার করে ডাকতে থাকে
–অহনা এই অহনা দাঁড়া বলছি।
কিন্তুু অহনা অনন্তের কোনো কথা না শুনে দৌড়াতে দৌড়াতে কলেজ থেকে বেরিয়ে এক নির্জন গলিতে ঢুকে পড়ে যেখানে কোনো মানুষ যায় না। অনন্তের মনে অহনাকে হারানোর ভয় কাজ করতে থাকে। অনন্ত মনে মনে বলতে লাগল
–এটা আমি কি করলাম! আমি মনে হয় অহনার সাথে আজ একটু বেশী করে ফেলেছি। না না আমার অহনার কিছু হতে আমি দিব না। কিছু হতে দিব না৷
একসময় অহনার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে অনন্ত অহনার কাছে এসে অহনার হাতটা খপ করে ধরে ফেলে। অহনা অনন্তের কাছ থেকে নিজের হাতটা ছুটাতে চায় কিন্তুু পারল না। অহনা চিতকার করে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে
–আমার হাতটা ছেড়ে দিন স্যার। না না না আপনি স্যার না। আপনি স্যার নামের একটা দানব৷ আপনি আমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছেন। আপনি খুব পঁচা খুব, বাজে, খুব…..
অহনাকে কিছু বলতে না দিয়ে অনন্ত অহনার কোমড় জড়িয়ে অহনাকে নিজের কাছে এনে অহনার ঠোঁটজোড়া নিজের দখলে করে করে নিল। অনন্তের এ কাজে অহনা পুরো স্তব্ধ হয়ে গেল । কিন্তুু আজ অহনার অনন্তের স্পর্শে কালকের মতো কোনো ব্যথা অহনা পাচ্ছে না। আজ অনন্তের স্পর্শে অহনা অন্য কিছু উপলব্ধি করতে পারছে। অনেক্ষণ পর অনন্ত অহনার ঠোঁটজোড়া ছাড়ল। মুহূর্তের মাঝেই অহনা অনন্তকে জোরে ধাক্কা দিল যার ফলে অনন্ত কিছুটা হলেও পেছনে সরে যায়। অহনা রাগী গলায় অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে স্পর্শ করার? আপনি কি চান আমি মরে যাই? আপনি শেষে কিনা ক্লাসের সবার সামনে আমার চরিত্র নিয়ে কথা বললেন? আবার আমার পরীক্ষার খাতায় ফেল করে দিলেন! কেন স্যার আমি কি ক্ষতি করেছিলাম আপনার বলুন?
–আমি তোকে যা বললাম তুই তাই বিশ্বাস করে ফেললি অহনা?
–মানে কি! আপনি কি বলতে চাইছেন?
–তুই যথেষ্ট ভালো নাম্বার পেয়েছিস অহনা। আমি শুধু তোকে কস্ট দিতে একটু মিথ্যা কথা বলেছিলাম।
আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস অহনা। আমি তোর সাথে আজ একটু বেশী অন্যায় করে ফেলেছি। কেন তুই আমার ভালোবাসা মেনে নিতে চাস না অহনা? কেন?
অনন্ত মাটিতে বসে কাঁদতে থাকে। অহনার কেন জানি না অনন্তকে কাঁদতে দেখে সহ্য হলো না। ছেলেরা নাকি সহজে কাঁদে না কিন্তুু যখন তার ভালোবাসার মানুষ তার থেকে দূরে সরে যায় তখনই ছেলেরা কাঁদে যেমনটা আজ অনন্ত অহনার ভালোবাসার পাওয়ার জন্য কাঁদছে।
–আপনি এত মেয়ে থাকতে আমাকেই কেন এত ভালোবাসলেন স্যার? আপনার ভালোবাসার আগুনে আজ আমি জ্বলে পুড়ে যাচ্ছি তা কি আপনি বুঝতে পারছেন না? আপনার ভালোবাসা যে আমার কাছে ভীষণভাবে ভয়ংকর লাগছে!
অনন্ত এবার অহনার দিকে অশ্রু মাখা চোখগুলো দিয়ে তাকিয়ে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমি যে তোকে বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছি অহনা৷ তাই নিজের অজান্তেই তোর সাথে অনেক অন্যায় করে ফেলেছি। আমি সত্যি নিজের ভালোবাসাটা ঠিক করে প্রকাশ করতে পারি নি।
–আমার জন্য আপনি এই শিক্ষক পেশা ছেড়ে দিতে পারবেন স্যার?
অনন্ত অহনার কথা শুনে হাসতে হাসতে অহনাকে বলল
–হ্যা অহনা তোর জন্য আমি সব কিছু ছেড়ে দিতে রাজি আছি৷ এমনকি নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারি।
–তাহলে আমি আপনাকে ভালোবাসব স্যার।
অনন্ত খুশি হয়ে অহনাকে বলল
–সত্যি অহনা তুই আমাকে ভালোবাসবি ?
— হ্যা হ্যা হ্যা সত্যি আপনাকে আমি ভালোবাসব।
অনন্ত খুশি হয়ে মাটিতে বসা থেকে উঠে অহনাকে দৌড়ে এসে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। অনন্ত কাঁদতে কাঁদতে অহনাকে বলল
–আমি জানতাম অহনা তুই আমাকে ভালোবাসবি৷ আমার ভালোবাসা কখনো বিফলে যেতে পারে না৷ কখনো না৷
।
।
।
#চলবে….
[অহনা কি সত্যি অনন্তকে ভালোবাসল?! আপনাদের কি মনে হয় প্রিয় পাঠক/ পাঠিকা?🙂]
#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ০৯
#লেখিকাঃDoraemon
অনন্ত অহনাকে তার বাসায় পৌছে দিল৷ এবং ঠিক সেদিনই অনন্ত কলেজে গিয়ে তার শিক্ষক পেশাটা ছেড়ে দিল। প্রিন্সিপাল অনন্তকে অনেক জোর করেছিল চাকরিটা না ছাড়তে কিন্তুু অনন্ত শুনে নি। প্রিন্সিপাল ছিল অনন্তের বাবার ভালো বন্ধু। সব স্যারদেরও অনন্তকে চাকরিটা ছাড়তে নিষেধ করে কিন্তুু অনন্ত কারও কথা শুনল না। অনন্তের চাকরি ছাড়ার সংবাদ শুনে অধিকাংশ মেয়েই কেঁদে দিল। কারণ তারা অনন্তকে ভীষণ ভালোবাসত৷ অনন্তের বাবার কাছে প্রিন্সিপাল খবরটা দিল যে অনন্ত চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। অনন্তের বাবা খুশি কারণ এখন সে ছেলেকে ব্যবসার সবকিছু বুঝিয়ে নিজে আরাম করবে। আজ অনন্তকে বেশ মুক্ত লাগছে। বাসায় গিয়ে অনন্ত বেডরুমের সোফায় বসে পড়ে। আজ অনন্তের মনটা খুব হালকা লাগছে। হঠাৎই অনন্ত পাগলের মতো হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে অনন্ত নিজে নিজেই বলতে লাগল
–আমি জানি অহনা তুই আমাকে এখনোও মন থেকে মেনে নিতে পারিস নি। আমার ভালোবাসার পরীক্ষা চাইছিস তুই। দেখ অহনা আজ আমি আমার শখের পেশাটাও তোর জন্য খুব অনায়াসেই ছেড়ে দিলাম। কারণ বড্ড ভালোবাসি যে তোকে। কি করব আমি বল আমি যে নিজের ভালোবাসাটা ঠিক করে প্রকাশ করতে পারি না। তাই নিজের অজান্তেই তোকে ভয়ংকর শাস্তি দিয়ে নিজেকেই এর থেকেও ভয়ংকর শাস্তি দিতাম। যদি কোনো একদিন আসে যে তুই আমার জীবনটা চাস আমি তোকে আমার জীবনটাও দিয়ে দিতে পারব। কিন্তুু তোকে আমি আমার কাছ থেকে কখনোও দূরে যেতে দিব না। তুই চাইলেও আমার কাছ থেকে মুক্তি পাবি না অহনা। একমাত্র আমার মৃত্যু হলে তুই আমার কাছ থেকে মুক্তি পাবি তার আগে না।
তারপর অনন্ত কাঁদতে লাগল।
অনন্তের মা দরজার আড়াল থেকে সব শুনে ফেলল। অনন্তের মা ভিতরে এসে অনন্তের মাথায় হাত রাখল। অনন্তের মা অনন্তকে দেখে চমকে উঠল। তারপর তাড়াতাড়ি অনন্ত নিজের চোখের পানি মুছে নিল। অনন্তের কান্না দেখে অনন্তের মায়ের চোখেও পানি। অনন্তের মা অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–বাবা তুই কাঁদছিস কেন? একটু আগে খবর পেলাম তুই নাকি তোর চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিস? কেন করলি তুই এটা?
অনন্ত একটা হাসি দিয়ে অনন্তের মাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–মা তুমিও না কি যে বল! আমি এবার থেকে বাবার বিজনেসটায় দেখাশোনা করব। বাবার এতগুলো বিজনেসের চাপ বাবা কি একা সামলাতে পারে! তাই তো নিজে থেকে চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। এবার থেকে বাবার ব্যবসার কাজে আমি খুব মন দিব।
–কিন্তুু আমার তো এটা মনে হচ্ছে না বাবা। তুই তো তোর বাবার টাকায় চলতে চাস নি। তুই তো নিজের পায়ে দাঁড়াবি বলেই তোর পছন্দের পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করলি। তাহলে হঠাৎই তোর বাবার বিজনেসের কাজে! আমার ব্যাপারটা কেমন সন্দেহ লাগছে। তুই কি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছিস? বল না বাবা কি হয়েছে? মাকে বলবি না?
–মা আমাকে একটু একা থাকতে দাও। আজ আমি ভীষণ ক্লান্ত।
অনন্তের মা অনন্তকে আর কিছু না বলে চলে গেল। অনন্ত আবারও হাসতে লাগল। পাগলের মতো হাসতে লাগল। অনন্ত মনে মনে বলতে লাগল
–কেন আমার সাথে তুই ছলনা করছিস অহনা? আমি এতটাও বোকা নই যে তোর ছলনা ধরতে পারব না। তুই আমার কাছ থেকে মুক্তি পেতেই আমাকে কলেজ থেকে বিদায় করাতে চাইলি। কিন্তুু তুই জানিস না এই অনন্ত তোর জন্য সব করতে পারে। আর এটাতো সামান্য একটা চাকরি! আমার মনে তো আমি সেদিনই তোকে জায়গা দিয়েছি যেদিন আমি তোকে প্রথম দেখেছি। ভালোবাসাটা না বড়ই অদ্ভুত একবার মনে আসলে সেটা আর সহজে মন থেকে যায় না।
অনন্ত একটা গিটার নিয়ে মনের ভিতর থেকে গান গাইতে থাকে
“🎶আমার মনের মাঝে এসেছিস যে তুই,, কিভাবে নিজের থেকে দূরে রাখব তোকে 🎶
🎶হৃদয়ের ভিতর, গহীন মাঝে,,
রেখেছি যে আমি তোকে যতন করে🎶
🎶ভীষণ ভালোবাসি তোকে,,ভালোবাসি তোকে🎶
🎶আমার কাছে যে অন্যরকম তুই,, আমার মনের খাঁচায় রাখবো তোকে,, নিজের কাছ থেকে কখনো তোকে দূরে যেতে দিব না🎶
🎶শেষ নিস্বাস অবধি ভালোবেসে যাবো তোকে,, একদিন তুই বুঝতে পারবি আমি কি ছিলাম🎶
🎶আমার কাছে যে সবার থেকে আলাদা তুই,, একদম অন্যরকম তুই🎶
🎶তোর দু চোখে তাকালে আমি নিজের শান্তি খোঁজে পাই🎶
🎶আমার কাছ থেকে তোকে কখনো দূরে যেতে দিব না🎶
🎶আমার কাছে অন্যরকম তুই,, সবার থেকে তুই অন্যতমা🎶
অনন্ত অহনার একটা ছবি বুকে নিয়ে নিজের অজান্তেই চোখের জল ফেলে ঘুমিয়ে পড়ল৷
ঐদিকে অহনা বাসায় এসে নিজের রুমের ঘরের দরজা বন্ধ করে মনের আনন্দে নাঁচানাঁচি করছে। অহনার কাছে খবর আসে অনন্ত চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। অহনা হাসতে হাসতে চিতকার করে বলতে থাকল
— আমি পেরেছি ঐ শয়তান দানবটার হাত থেকে মুক্ত হতে। এখন কলেজে কেউ আমাকে অপমান করবে না। কেউ আমাকে আর জালাতন করবে না। হা হা হা ঐ শয়তান দানবটা কত বোকা! কি করে দানবটা বিশ্বাস করল যে এত অপমানের পর আমি তাকে ভালোবাসব! এ জীবন থাকতেও কোনোদিন আমি ঐ দানবটাকে ভালোবাসব না। কোনোদিনও না।
।
।
।
#চলবে…