অন্যরকম তুই পর্ব-১৩

0
1951

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃDoraemon
অনন্তের এমন অদ্ভুত কথায় অহনার এতটাই লজ্জা লাগছিল যে অহনা পেছন ফিরে দৌড়ে চলে যেতে নিলে অনন্ত অহনার হাতটা খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলে। অহনার হাত অনন্ত আবারও ধরায় অহনা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। অনন্তের স্পর্শ অহনার মনে বিদ্যুৎের মতো অনুভূতি তৈরি করতে লাগল। অহনাকে আবারও টান দিয়ে অনন্ত নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল। অহনার ভীষণ ভয় লাগছে কারণ অনন্ত অহনাকে কিছুতেই যেতে দিচ্ছে না। অহনা ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অনন্তকে বলল
–আপনি আমাকে যেতে দিন স্যার। আমি বা বা বাসায় যাব।
অহনার এই ভীতু চেহারাটা দেখে অনন্ত মুচকি হেসে দিল। কারণ অহনার এই ভীতু চেহারাটা অনন্ত ভীষণ উপভোগ করে।
–তুই কি আমাকে ভয় পাচ্ছিস অহনা?! কিন্তুু আমাকে যদি তুই এখনই ভয় পাস তাহলে সারাটা জীবন আমার সাথে কাটাবি কি করে? কিন্তুু বিয়ের পর আমি তোর সব ভয় দূর করে দিব তুই চিন্তা করিস না অহনা।
অনন্তের কথা শুনে অহনা অবাক হয়ে চোখ বড়বড় কর অনন্তের দিকে তাকাল। বৃষ্টির পানিতে এখনো ওরা দুজনে ভিজছে। তাও আবার জড়িয়ে ধরা অবস্থায় দুজনে ভিজে যাচ্ছে৷ অহনা অনন্তের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেস্টা করছে কিন্তুু অনন্ত অহনাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে। কিছুতেই অনন্ত অহনাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়ছে না। অহনার এখন ভীষণ রাগ হচ্ছে। অহনা মনে মনে বলল
–উফফ এই লুচু দানবটা আমাকে ছাড়ছে না কেন! একটু পরেই রাস্তায় লোকজনদের আনাগোনা শুরু হবে৷ এখন যদি কেউ আমাকে এই দানবটার সাথে এভাবে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় দেখে ফেলে তাহলে তখন সবাই কি ভাববে? লোকে তো আমাকে চরিত্রহীন মেয়ে বলবে!
অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমাকে কি একবারের জন্য ক্ষমা করে কাছে টেনে নেওয়া যায় না অহনা? আমি যে তোর অবহেলা আর সহ্য করতে পারছি না।
অহনা কিছু বলছে না। অনন্ত অহনাকে জড়িয়ে ধরাতে অহনা অনন্তের বুকের হৃদস্পন্দন খুব ভালো করে শুনতে পারছে। যেমনটা অহনার বুকে ধুকপুকানি হয় ঠিক তেমনি অনন্তের বুকের ভিতরও একইভাবে ধুকপুকানি হচ্ছে। দুজনের মনেই একই কম্পন!
অনন্তের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে কিন্তুু বৃষ্টির পানিতে অনন্তের চোখের জলগুলোও ধুয়ে মিশে যাচ্ছে। অহনা তা দেখতে পারছে না। হঠাৎই আকাশে বজ্রপাত হওয়ায় অহনা অনন্তকে ভয়ে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। এতক্ষণ অনন্ত অহনাকে জোর করে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল কিন্তুু এখন অহনাও অনন্তকে জড়িয়ে ধরেছে। অনন্ত অহনাকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে ভীষণই খুশি হয় কিন্তুু অনন্তের এ খুশি বেশিক্ষণ থাকল না। অহনা অনন্তকে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সড়িয়ে দেয়। অনন্ত ধাক্কা খেয়ে কিছুটা পিছিয়ে যায়। অহনার এমন আচরণে অনন্ত কিছুটা অবাক হলো। আবারও আকাশে বজ্রপাত হলো। অহনা চিতকার করে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না৷ আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে স্পর্শ করার? আর কি যেন বললেন! আপনাকে ক্ষমা করব! আমি?! হা হা হা কি করে ভাবলেন আপনি?! আমার একটা যথেষ্ট আত্নসম্মান বোধ আছে৷ আমি গরীব হতে পারি কিন্তুু আমি সস্তা নই যে আপনার মন গলানো কথায় আমি ভুলে যাব। আমি জানি এটা আপনার কাছে ভালোবাসা না আসলে আপনি তো আমাকে ভোগ করতে চান৷ নিজের চাহিদা মেটানো শেষ হয়ে গেলে আমারও প্রয়োজন ফুরাবে। তারপর একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে আপনি বিয়ে করে নিবেন। আমি কি এতটাই বোকা স্যার?! যে আমি আপনার চালাকি ধরতে পারব না?! পুরুষ মানুষের মনে নারীদের জন্য কখনো ভালোবাসা থাকতে পারে না! যা আছে তা শুধু শারীরিক চাহিদা। মিটে গেলেই ছুড়ে ফেলে দিবেন! তাই আমি আবারও বলছি স্যার আমার পেছনে না পড়ে থেকে আপনি অন্য কোনো ভালো মেয়ে খুঁজে নিয়ে প্রেম করে বিয়ে করে নিবেন। শুধু শুধু আমার মতো এক অসুন্দরী ভিখারির বাচ্চাকে কেন ভালোবাসতে যাবেন?
অহনা কথাগুলো বলতে বলতে চোখের জল ফেলছিল। কেন ফেলছিল তা অহনা নিজেও জানে না। অহনার চোখের জলগুলো বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। কিন্তুু অনন্তের চোখে তা এড়ালো না। অনন্ত দেখতে পেল অহনার চোখের জল এবং অহনার চোখ যে ভীষণ লাল হয়ে আছে তা স্পষ্ট।
অনন্ত হঠাৎই হেসে উঠল। অনন্ত খুব মন প্রাণ ভরে হাসছে৷ কিন্তুু অনন্তের এই হাসিটা সুখের না দুঃখের সেটা অহনা বুঝতে পারছে না৷ অহনা মনে মনে বলল
–স্যার এভাবে হাসছে কেন? আমি যা বললাম তাতে তো উনার রেগে যাওয়ার কথা কিন্তুু উনি হাসছেন!
অনন্ত হাসতে হাসতে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তোর কাছে যা মনে হয় তুই তাই ভাবতে পারিস অহনা। কিন্তুু তোকে ছাড়া আমি যে বাঁচতে পারব না। হা হা হা কথাটা শুনতে ভীষণ অদ্ভুত লাগছে তাই না অহনা? এত এত সুন্দরী বড়লোক ঘরের মেয়ে থাকতে আমি তোকেই কেন ভালোবাসি! তোর পেছনেই কেন ঘুরঘুর করি! তুই এটাই ভাবছিস!?আমি জানি রে অহনা। কিন্তুু ভালোবাসা যে সুন্দর-অসুন্দর, ধনী-গরীব, কিংবা শারীরিক চাহিদা দিয়ে হয় নারে অহনা। ভালোবাসা মন থেকে হয়। এই যে দেখ তোকে আমি কোনো কারণ ছাড়াই ভালোবেসে ফেলেছি তার মানে কি আমার ভালোবাসাটা বিশুদ্ধ ভালোবাসা না? তুই হয়তো বলবি এটা আমার আবেগ কিন্তুু আমি জানি এটার আমার পবিত্র ভালোবাসা আর সেটা তুই অস্বীকার করলেও আমি অস্বীকার করতে পারব না। কিছুতেই অস্বীকার করতে আমি পারব না৷
অহনা অনন্তের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইতিমধ্যে অহনার গায়ে কাঁটা ধরে যাচ্ছে। অজানা অনুভূতি অহনার মনকে গ্রাস করছে। অহনা মনে মনে বলল
–এটা কি সত্যি আপনার ভালোবাসা নাকি কোনো এক ছলনা? আমি আপনাকে ভালোবাসি না বলে তাই আপনি কোনোভাবে আমার উপর প্রতিশোধ নিতে চাইছেন নাতো?! আপনার শাস্তি পেতে পেতে যে আমি ক্লান্ত স্যার। আর যে আপনার শাস্তি সহ্য করার মতো কোনো শক্তি আমার নেই।
অনন্ত অহনার দিকে তাকিয়ে একটু মৃদু হেসে অহনাকে বলল
–কি হলো অহনা? চুপ করে আছিস কেন? কিছু তো বল?
অহনা কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার আমি এখন বাসায় যাবো।
এটা বলেই অহনা চলে যেতে নিলে অনন্ত আবারও অহনার হাত ধরে টান দিয়ে নিজের একদম কাছে নিয়ে এসে দাঁতে দাঁত চেপে অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য বলল
— তুই বাসায় যাবি ভালো কথা। কিন্তুু আমার গাড়ি করে তুই বাড়ি যাবি। বৃষ্টির পানিতে ভিজে তোর শরীরের সবকিছুই দেখা যাচ্ছে। এভাবে যদি তুই রাস্তায় হেঁটে বাড়ি ফিরে যাস তাহলে রাস্তার লোকেরা তোর দিকে লালসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে যা আমি একদমই হতে দিব না।
অনন্তের কথায় অহনা নিজের শরীরের দিকে তাকিয়েই দেখল সত্যি অহনার শরীরের সবকিছুই দেখা যাচ্ছে। অহনা ওড়না দিয়ে নিজের শরীর ঢাকার চেস্টা করছে কিন্তুু ওড়নাটা এতটাই বাজেভাবে ভিজে গেছে যে কিছুতেই নিজের শরীর ঢাকতে পারছে না অহনা।
অহনার এমন ঘাবড়ে যাওয়া অবস্থায় দেখে অনন্ত মুচকি হেসে দিল৷ অনন্তের মুচকি হাসি দেখে অহনার রাগ উঠে গেল। অহনা রাগী গলায় অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হলো স্যার? আপনি এভাবে হাসছেন কেন?
অনন্ত অহনার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
–তোকে এ অবস্থায় দেখেই হাসছি। জানিস তোকে এ অবস্থায় দেখতে কতটা কিউট লাগছে?
অনন্তের কথায় অহনা আবারও চোখ বড়বড় করে অনন্তের দিকে তাকাল। অহনা অনন্তে বলল
–আপনি অনেক বাজে ছেলে। আমি আপনার গাড়ি করে বাসায় যাবো না। আমি এ অবস্থাতেই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি চলে যেতে পারব।
অহনার কথা শুনে অনন্ত রাগী দৃষ্টিতে অহনার দিকে তাকিয়ে বলল
–আমি যা বললাম তাই হবে। বেশী বাড়াবাড়ি করবি তো তুই ভালো করেই জানিস অহনা আমি কতটা ভয়ংকর হতে পারি। আশা করছি তুই আমার ভয়ংকর রূপটা আর দেখতে চাইবি না।
অনন্তের রাগী কন্ঠে বলা কথাগুলো শুনে অহনা ভয়ে চুপসে যায়। অহনা ভয়ে চোখগুলো বন্ধ করে ফেলে।
অহনার এমন ভীতু চেহারা দেখে অনন্ত আবারও মুচকি হেসে অহনাকে কোলে তুলে নিল৷ হঠাৎই অনন্ত অহনাকে এভাবে কোলে নেওয়াতে অহনা ভয়ে অনন্তের গলা জড়িয়ে ধরল।



#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে