#গল্প-অন্যরকম তুই
#পর্ব – ০১+০২
লেখিকা – ডোরেমন
সিড়ি দিয়ে ক্লাসরুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে উপরে উঠছিল অহনা। তখনই কেউ অহনার পেছনের ওড়না ধরে টান দেয়। আকস্মিক এমন ঘটনায় বুকটা কেঁপে উঠে অহনার। অহনা পেছনে ঘুরে যাকে দেখে তা দেখে অহনার বুকটা ধুক করে কেঁপে উঠল। অহনার ওড়না পেছন থেকে যে টান দিয়েছে সে আর কেউ নয় অহনার কলেজের টিচার। তার নাম হলো অনন্ত আহমেদ। অনন্ত দেখতে খুব সুন্দর যে কিনা সব মেয়েদের ক্রাশ কিন্তুু অহনার ক্রাশ নয়। অহনা ছেলেদের দিকে তাকায় না। তাকালেই মনে হয় অহনার এলার্জি হয়। ঠিক তেমনই অনন্তও কোনো মেয়েকেই পাত্তা দেয় না৷ সবসময় রাগী লুক নিয়ে থাকে। অহনার উচ্চতর গণিত ক্লাসটা অনন্ত নেয়। আর শুধু তাই নয় ক্লাসে কারণে অকারণে অহনাকে সবার থেকে সবচেয়ে বেশী শাস্তি দেয় অনন্ত। সেটা পড়া পারলেও কিংবা না পারলেও। অহনা খুব ভিতু, বোকা, বাচ্চা স্বভাব, ও গরীব ঘরের মেয়ে। অহনা দেখতে অতটা সুন্দরীও নয়। কোনোরকম টেনে টুনে কলেজে পড়ে৷ অন্য কোনো ছেলে অহনার সাথে এমন করলে অহনা হয়তো বকা দিত আর নাহলে টিচারদের কাছে বিচার দিত। কিন্তুু এ কাকে দেখছে অহনা! কলেজের মেয়েদের সপ্নের নায়ক আর সবচেয়ে রাগী ও ভয়ংকর যদি কোনো শিক্ষক থেকে থাকে তা হলো অনন্ত। বাবার প্রচুর টাকা থাকা সত্তেও নিজের সপ্ন ছিল একজন শিক্ষক হওয়া তাই অনন্ত শিক্ষক পেশাকেই বেছে নেয়। অহনার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অনন্ত স্যারকে উদ্দেশ্য করে বলল
— স্যা স্যার আ আ আপনি! আমার ওড়নাটা ছেড়ে দিন স্যার।
–যদি ওড়নাটা না ছাড়ি তাহলে তুই কি করবি?
অনন্তের কথা শুনে অহনার বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠল। আজ অহনা কলেজে পৌঁছাতে খুব দেড়ি করে ফেলেছে সব শিক্ষকরা ক্লাস নিতে ব্যস্ত আর অহনা এখন পড়েছে মহা বিপদে। অনন্ত স্যারকে কি বলবে অহনা বুঝতে পারছে না৷
–স্যার আমার ওড়নাটা ছেড়ে দিন প্লিজ আমি ক্লাসে যাবো।
অনন্ত অহনার ওড়নাটা ছেড়ে অহনার হাত ধরে টানতে টানতে একটা ফাঁকা ক্লাসে অনন্ত অহনাকে নিয়ে দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে দেয়। অহনার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। বুকটা রীতিমতো কাঁপা-কাঁপি করছে। অনন্ত অহনার কাছে এসে অহনার দু বাহু ধরে দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে অনন্ত দাঁতে দাঁত চেপে অহনাকে বলল
–নিজেকে খুব স্মার্ট ভাবিস তাই না অহনা। আমার থেকে সবসময় মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখিস। আমাকে অবহেলা করিস তুই। বড্ড অভিমান তোর আমার উপর তাই না!
অনন্তের কোনো কথা অহনার মাথায় ঢুকছে না। অনন্ত এসব কি বলছে! শিক্ষক হলো সম্মানিয় ব্যক্তি যদিও অনন্তের বয়স খুব কম তবুও তো উনি শিক্ষক। অনন্তের কথা শুনে অহনা মনে মনে বলতে লাগল
–স্যার কি পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি! কিসব বলছে এসব!
–কিরে আমার কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন? উত্তরটা দে?
ফাঁকা রুমে অনন্ত অহনার হাতটা খুব শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে যার কারণে অহনার হাতে খুব ব্যথা লাগছে। অহনার সাহস হচ্ছে না অনন্তকে কিছু বলার কিন্তুু তবুও অহনা অনন্তকে বলল
–স্যার আমার হাতে খুব ব্যথা লাগছে আমার হাতটা ছেড়ে দিন প্লিজ?
–তোকে ছাড়বো। অবশ্যই ছাড়বো আগে তুই বল সব মেয়ে আমাকে পাওয়ার জন্য রাত জেগে সপ্ন দেখে আর তুই কিনা আমার দিকে ঠিক মতো তাকাসও না। কেন রে আমি কোন দিক দিয়ে খারাপ?
–ছিহ স্যার আপনি এসব কি বলছেন! আপনি একজন শিক্ষক। আপনি আমার সাথে এমন আচরণ করতে পারেন না।
অহনার কথায় অনন্তের ধ্যান ফিরল এবং অনন্ত কিছুটা স্বাভাবিক হলো। অনন্ত অহনার হাত ছেড়ে দিয়ে খুব রাগী গলায় অহনাকে বলল
–যা ক্লাসে যা। তোকে তো আমি ক্লাসে দেখে নিব।
অগ্নি দৃষ্টিতে অনন্ত অহনাকে এই কথা বলাতে অহনা ভয়ে চুপসে যায়। আর এক মুহূর্তেও দেরি না করে অহনা ফাঁকা ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ক্লাসরুমে দেরি করে আসাতে টিচার অহনাকে বাইরে কান ধরে দাড় করিয়ে রেখেছে। ক্লাসের সব ছেলে মেয়েরা অয়নার কান ধরে থাকাটা উপভোগ করছে৷ আরেকজনও খুব উপভোগ করছে৷ অহনা যখন কান ধরে দাড়িয়ে থাকে তখন অহনা মুখটা পাশ ফিরাতেই দেখে অনন্ত বেশ কিছু দূরত্বে অহনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ক্লাসরুমে ঢুকে যায়। অহনার এটা দেখে খুব রাগ হচ্ছে। অহনা মনে মনে বলল
–এই শয়তান স্যারটার জন্য আজ আমার এই অবস্থা। নিজে তো অনেক শাস্তি দেয় অন্য টিচার দিয়েও শাস্তি দিল। কিন্তুু আজ স্যার আমার সাথে এমন আচরণ কেন করল?
…..
…….
[চলবে…..]
গল্প – অন্যরকম তুই
পর্ব – ০২
লেখিকা – ডোরেমন
প্রায় ৩০ মিনিট বাইরে কান ধরে দাড়িয়ে থাকার পর টিচার অহনাকে ক্লাসে ঢুকতে দিল। অহনা মাথা নিচু করে ক্লাসে ঢুকল। আর চারপাশে হাসাহাসির শব্দও অহনার কানে পৌছাল। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল অহনার। সবার পেছনের বেঞ্চে বসে পড়ল অহনা। রাগে অহনার মাথা ব্যথা করছে৷ অহনা মনে মনে বলল
–আমার সাথে এমন আচরণ করে অনন্ত স্যার কি শান্তি পান একমাত্র উনিই জানেন। অন্যান্য টিচারদের কাছ থেকেও শাস্তি পেতে হলো!
আমার তো মনে হয় সব থেকে বেশী শাস্তি আর অপমানটা উনি আমার ভাগ্যেই রাখেন। ক্লাসের সবাইকে তুমি বলে কথা বলে আর আমাকে তুইতোকারি করে কথা বলে যা আমার কাছে একদম অসহ্যকর।
তিনটি ক্লাস সম্পন্ন হলো। এখন চতুর্থ ক্লাস অনন্ত নেবে যার ফলে অহনার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। অহনা মনে মনে বলল
–হায় আমার খোদা এখন তো দানব স্যারটা আসবে। ঐ শয়তানটার জন্য আজ কত অপমানিত হলাম এখন ক্লাসে এসে তো আমায় অনবরত অপমান করবে। আমাকে ফাঁকা ক্লাসে নিয়ে যেভাবে হুমকি দিয়েছিল! আজ আমার রক্ষা নেই৷
কিছুক্ষণ পর অনন্ত ক্লাসে আসল। সাথে সাথে সবাই দাড়িয়ে অনন্তকে সম্মান জানাল। অহনাও দাড়িয়েছে কিন্তুু ভয়ে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। হাত পা রীতিমতো কাঁপা-কাঁপি করছে। কয়েকটা মেয়ে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার আজকে আপনাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। সিনেমার নায়করাও আপনার কাছে হার মানাবে৷
অনন্ত রাগী দৃষ্টিতে মেয়েগুলোর দিকে তাকাল সাথে সাথে মেয়েগুলো ভয়ে চুপসে গেল।
সবাই তারপর বেঞ্চে বসল। অহনা যেহেতু পেছনের বেঞ্চে তাই মুখ লুকিয়ে বসে ছিল। অহনা ভেবেছিল অনন্ত তাকে দেখবে না কিন্তুু অনন্তের চোখ তা এড়াতে পারে নি।
অনন্ত সামনে থেকেই বলে উঠল
–অহনা তুই দাঁড়া তো!
অহনার ভয়ে এবার কাঁপাকাঁপা পায়ে দাড়াল। অহনার বুকের ধুকপুকানিও দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
–জ্বি স্যার।
–আজকে সব পড়া শিখে এসেছিস? অংক হোয়াইট বোর্ডে করতে দিলে করতে পারবি তো?
–পা পারব স্যার।
–তাহলে তো তুই গুড গার্ল। আয় সামনে আয়।
অহনা সামনে যেতে লাগল।ক্লাসের সবাই অহনার শাস্তি দেখতে ব্যাকুল। তারা দর্শক হিসেবে আজ উপভোগ করছে।
–এই নে মার্কার। এবার তুই প্রথম অধ্যায়ের ৩নং অংকটা করে দেখা। আশা করি তুই এত সহজ অংকটা করতে পারবি।
অহনা হাতে মার্কার নিয়ে হোয়াইট বোর্ডে লিখতে নিল কিন্তুু অহনার কোনো অংকই মনে পড়ছে না। সব গুলিয়ে যাচ্ছে। বোর্ডে কি লেখবে তাও বুঝতে পারছে না।
অনন্ত রাগী দৃষ্টিতে অহনার দিকে তাকিয়ে অহনাকে বলল
–কিরে অংকটা পারিস না?
–স্যা স্যার আ আমি ভুলে গেছি।
–ওহ্ তাই নাকি? যা বাইরে দাড়িয়ে ৫০ বার কান ধরে ওঠবস কর৷
অনন্তের কথা শুনে অহনা স্তব্ধ। অহনার বুকে চাপা কস্ট অনুভব হতে লাগল। তবুও অহনা সাহস করে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–স্যার আজকে প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমি ওয়াদা করছি স্যার কালকে আমি অবশ্যই পড়া শিখে আসব।
অহনার আকুল করা কন্ঠে মিনতি করাও অনন্তের কানে পৌছাল না। অনন্ত খুব রাগী গলায় বলল
–আমার ক্লাসে যে পড়া শিখে আসে না তার জন্য আমি কঠিন শাস্তি বরাদ্দ করে রাখি। আমার মুখের উপর কথা বলার তোর সাহস হয় কি করে? তুই হাত পাত।
–স্যার আর কোনোদিন করব না।
–তুই হাত পাতবি নাকি কঠিন মার খাবি?
অহনা ভয়ে হাত পাতল। অনন্ত একটা স্টিলের স্কেল দিয়ে খুব জোরে অহনার হাতে আঘাত করল যার ফল স্বরূপ অহনার হাত লাল টকটকে হয়ে ফুলে একাকার হয়ে গেল। সবাই অনন্তের এমন আচরণে ভয় পেয়ে যায়। অহনার খুব কান্না পাচ্ছে তবুও অহনা কান্না দমিয়ে নিজের বেঞ্চে বসতে গেলে অনন্ত বলল
–দাড়া তুই। আমি কি তোকে বেঞ্চে বসতে বলেছি?
–স্যার আপনি তো আমায় শাস্তি দিলেনই তাহলে?
–তোকে আমি বাইরে ৫০ বার কান ধরে ওঠবস করতে বলেছি। যা বাইরে দাড়িয়ে কান ধরে ওঠবস কর!!
অনন্তের কথা অনুযায়ী অহনার ক্লাসের বাইরে দাড়িয়ে ৫০ বার ওঠবস করল একই তো ব্যথা হাত তার উপর ৫০ বার ওঠবস করার ফলে অহনার পা ব্যথা হয়ে যায়। যখন অহনা ওঠবস করার পর ক্লাসে পা বাড়ায় তখন অহনা হুঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নিলে অনন্ত এসে অহনাকে ধরে ফেলে। অহনা অনন্তের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এই দৃশ্য দেখার পর কিছু মেয়ের প্রচুর রাগ হয়। অনন্ত অহনাকে নিজের বুক থেকে ছাড়িয়ে সোজা করে দাড় করিয়ে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তোর পা কি নরম তুলো যে সামান্য কান ধরে ওঠবস করতে গিয়ে পড়ে যাস নাকি পড়ে যাওয়ার নাটক করলি কোনটা?
অনন্তের এমন কথা শুনে অহনা মাথা নিচু করে ফেলে। অহনা নিজের বেঞ্চে গিয়ে বসল। অহনার ভীষণ কান্না পাচ্ছে কিন্তুু সবাই কান্না দেখে ফেলবে বলে কাঁদছে না। (পরবর্তী পর্বগুলো আমার আইডিতে দেয়া আছে)
এভাবেই অনন্তের ক্লাস আজকে সম্পন্ন হয় যায়। অনন্ত কিছু পড়া সবাইকে বুঝিয়ে দিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়।
অহনা বেঞ্চের মধ্যে মাথা ঠেকিয়ে মনে মনে বলল
–স্যার আপনি আমায় শাস্তি দিবেন আমি জানতাম কিন্তুু এতটা কঠিন শাস্তি দিবেন তা আমি আশা করি নি। আমার হাত পায়ে অসম্ভব ব্যথা হচ্ছে৷
অহনা তিনদিন ধরে আর কলেজ গেল না। হাতে পায়ে অসম্ভব ব্যথা থাকার কারণে বাসায় থেকে গেল।
তিনদিন পর যখন অহনা কলেজ গেল তখন স্বাভাবিকভাবে চতুর্থ ক্লাসে অনন্ত আসল। কিন্তুু অহনা দেখতে পেল অনন্তের এক হাতে বেন্ডেজ করা। বেন্ডেজের উপর রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। এটা দেখে অহনা তার পাশে বসে থাকা মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করল
–এই শুনো স্যারের হাতে এভাবে বেন্ডেজ বাঁধা কেন?
অহনার প্রস্নের জবাবে মেয়েটি অহনাকে বলল
–তিনদিন তো তুমি কলেজ আসো নি। গত তিনদিন আগে অনন্ত স্যারের হাত কেটে যায়৷ হাতটা দেখে মনে হচ্ছে অনেক রক্ত বের হয়েছে এবং খুব জোরে আঘাত পেয়েছে কিন্তুু অনন্ত স্যারকে কেউ জিজ্ঞেস করলে অনন্ত স্যার বলে এমনি হাত কেটে গেছে।
অহনা মেয়েটির কথায় অবাক হলো। অহনা মনে মনে বলল
–এমনি এমনি কি কারও হাত কেটে যায়! স্যারের এভাবে হাত কাটল কিভাবে?
…..
…….
[চলবে…..]