অন্তহীন প্রেম পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

0
689

#ধারাবাহিক গল্প
#অন্তহীন প্রেম
শেষ পর্ব
মাহবুবা বিথী

রুবাইয়াত বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নিজের অতীতের ভাবনায় এতোটাই ডুবেছিলো যে দরজা নক করার শব্দ ওর কান অবধি পৌঁছাতে একটু সময় লাগলো। ও একটু অবাক হলো এভাবে কে দরজা নক করছে। পরে মনে হলো ওমরের কোনো বিপদ হলো নাতো?রুবাইয়াত দৌঁড়ে এসে দরজাটা খোলা মাত্রই ওমর ওকে জড়িয়ে ধরে চোখ ছলছল করে বললো,
—–রুবাইয়াত তুমি ঠিক আছো? বলো, আমাকে ছেড়ে তুমি কোথাও যাবে না?
ওমরের এরুপ আচরণে রুবাইয়াত খুব অবাক হলো। নিজেকে ওমরের বন্ধন থেকে মুক্ত করে বললো,
—–ঠিক আছি বলেই তো এখনও তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ তোমার কি হলো বুঝলাম না?
—–তোমাকে নিয়ে খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্নটা দেখার পর মনে হচ্ছিলো আমার বুকের পাঁজরটা যেন শতসহস্র খন্ডে বিভক্ত হয়ে গেছে।
রুবাইয়াত অবাক হয়ে ওমরকে দেখছিলো। ওমরের ভাসা ভাসা চোখের পাপড়িগুলো তখনও ভেজা ছিলো। রুবাইয়াত আগে হয়তো ভালোবাসার যন্ত্রণা বোঝেনি তবে এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে কাউকে ভালোবাসলে কতটা যন্ত্রণা বুকের পুকুরে লালন করতে হয়। তাই আজ যেন ও ওমরের ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পারলো। ওর জন্য ভীষণ মায়া হতে লাগলো। মনে হলো ওমরকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকের কষ্টের বোঝাটা হালকা করে দিতে। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলো। অপরাধীর ডেরায় দীর্ঘদিন বন্দী থাকার কারণে সমাজে ওকে নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা আছে তা শুধু ওর একার। এরসাথে ও ওমরকে জড়াতে চাইছে না।
——ওমর আমি জানি,তুমি আমাকে খুব ভালোবাসো। আমারও তোমাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তুমি তো জানো আমি বর্তমানে একটা ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এ সমাজে আমাকে নিয়ে অনেক নেতিবাচক ধারণা আছে। সে কারনে আমি চাইছি না তোমাকে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে নিতে? আঙ্কেলের একটা স্ট্যাস্টাস আছে, এমনকি তোমার নিজেরও সমাজে একটা পরিচিতি আছে। এগুলো সব তখন কলঙ্কিত হয়ে যাবে।
—–আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে সব কলঙ্ক মুছে দিবো।
—–তবে এখন আর এসবে জড়াতে চাইছি না। ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগী হবো। এর একটা কারণও আছে। সেদিন তুমি ফোনে জানতে চাইছিলে না, আমি কাঁদছি কিনা? আমি আসলেই কাঁদছিলাম। আমার প্রতিবেশী এক আন্টি অর্থাৎ আব্বুর কলিগ এর স্ত্রী আমাকে দেখতে এসেছিলেন। খুব ভালো লেগেছিলো। কিন্তু পরক্ষণেই যে খোঁচাটা আমায় দিলেন যে এর থেকে কেউ যদি আমাকে ছুড়ি দিয়ে আহত করতো তাও মনে হয় ব্যথাটা কম হতো। তাই তোমাকে আমার অভিশপ্ত জীবনের সাথে জড়াতে চাই না।
—–কি বলেছিলো?
——আমার বাচ্চার প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে গিয়ে বললেন, বাচ্চাটা মরে গিয়ে নাকি ভালোই হয়েছে। ঐ বাচ্চার তো বাবার ঠিক নাই। সন্ত্রাসীদের আস্তানায় তো এমনি এমনি আমাকে রাখেনি। ওরা সবাই মিলে আমাকে রেপ করেছে। এখন কি মনে হয় জানো, যা হয় ভালোর জন্যই হয়। আমার বেবিটা যেখানে আছে ভালোই আছে।
——যে যাই বলুক এসব নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নাই। আমার মাথার চুলও যদি পেকে যায় দাঁতও পড়ে যায় এমনকি আমি যদি থুরথুরে বুড়ো হয়ে যাই তাও আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
রুবাইয়াত খিলখিল করে হেসে উঠে বললো,
—– যদি কোনোদিন মনে হয় আমার নিজের একজন মানুষ দরকার। সেদিন যদি আমারও চামড়া কুঁচকে যায়,চোখে দৃষ্টি যদি ঝাপসা হয়ে যায় তবুও তোমার কাছেই ফিরে আসবো। ওমর আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে। লাঞ্চ করে আমরা আজকে পাহাড়ে ঘুরবো। বৈসাবী উৎসবের জন্য পাহাড় আজ নতুন করে সাজবে।
ওরা দুজন দুপুরের খাওয়া শেষ করে পাহাড়ে ঘুরতে বের হলো। হাঁটতে হাঁটতে বৈসাবী উপলক্ষে যে মেলার আয়োজন করেছিলো ওরা সেস্থানে পৌঁছে গেল। মেলার স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে থেকে কে যেন দিদি বলে ডেকে উঠলো। কন্ঠস্বরটা রুবাইয়াতের খুব পরিচিত মনে হলো। তাই ও দাঁড়িয়ে পড়লো। মেয়েটি সামনে এসে ওকে বললো,
—–দিদি, আমায় চিনতে পারছো না? আমি কমলা।
তুমি যেখানে বন্দী ছিলে সেখানে তোমার দেখাশোনার জন্য আমি ছিলাম। এমনকি দাদার সাথে তোমার বিয়েরদিন আমি তো তোমাকে সাজিয়ে দিয়েছিলাম। তোমার বিয়েতে স্বাক্ষী ছিলাম। তুমি এখানে কেন?
রুবাইয়াতের সব মনে পড়ে গেল। খুশীতে ওর মুখটা ঝলমল করে উঠলো।
——কেমন আছো কমলা?
——ভালো। তুমি কেমন আছো? (ওমরের দিকে তাকিয়ে বললো) উনি কি জামাইবাবু?
ওমরও খুশীতে গদগদ হয়ে বললো,
—–ধরে নিন, আপনার ধারণাই সঠিক।
——দিদি, জামাইবাবু দেখতে তো খুব সুন্দর।
প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে রুবাইয়াত বললো,
—–জুলকারনাইনের কবর কোথায় হয়েছে জানো?
—–হুম,আমি দাদার দাফন কাফনের ব্যবস্থা করেছি। ভিন্ন ধর্মের মানুষ আমি। তোমাদের নিয়ম কানুন তো জানি না। তোমাদের বিয়ে যে হুজুর পড়িয়েছিলেন তাকে দিয়েই সব কাজ সেরেছি। তুমি আর এসব নিয়ে ভেবো না। তোমার নতুন জীবনে সুখী হওয়ার চেষ্টা করো। আর একটা কথা। তোমার এখানে বেশীক্ষণ থাকা ঠিক না। কোথা থেকে আবার কোন বিপদ এসে পড়ে?
—–আমি ওর কবরটা দেখতে চেয়েছিলাম।
—-খবরদার, সে সাহস করো না। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছো। এছাড়া ঐ জায়গা খুব বিপদজনক। তোমার ওখানে যাওয়া ঠিক হবে না। তুমি বরং আমার ফোন নাম্বার নিয়ে দ্রুত এখান থেকে চলে যাও।
কমলার কথা শুনে ওমর ওখানে আর দাঁড়াতে চাইলো না। ওমর আর রুবাইয়াত খুব দ্রুত সাইরুতে চলে আসলো। ওমরের একটু ভয় হতে লাগলো। তাই রুবাইয়াতকে ডেকে বললো,
——রুবা,আমরা রাতে ডিনার করেই এখান থেকে চলে যাই।
——রাতে যাওয়া ঠিক হবে না। এজায়গাটা তো আর্মিদের এলাকা। এখানে সিকিউরটি ব্যবস্থাটা বেশ ভালো। তার থেকে চলো আজ সারা রাত বেলকনিতে বসে পাহাড়ের জোৎস্না দেখি। তুমি তো কখনও দেখোনি? আমি দেখেছি। জানো ঐ জঙ্গলে বন্দী অবস্থায় আমি অনেক দুর্লভ জিনিস দেখেছি। পাহাড়ের শরীর বেয়ে যখন জোৎস্নার জল গড়িয়ে পড়ে কি অপরূপ সেই দৃশ্য! যা তোমার ধারণার মধ্যে নেই।
রুবাইয়াত আর ওমর রাতের ডিনার সেরে দুকাপ কফি নিয়ে এসে রুমের সাথে লাগোয়া খোলা বারান্দায় বসলো। মাথার উপরে চাঁদের আলোর ঝলমলে আকাশের চাঁদোয়া আর নীচে দু,জন নরনারী বসে নিজেদের ভালোবাসার প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির জাল বুনছে। কিংবা হৃদয়ের কাছাকাছি ওরা আসতে চাইছে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ওমর ভাবছে রুবাইয়াত কিছুটা হলেও ওর ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পেরেছে। এটা ভেবে ওর ভীষণ ভালো লাগছে। একটু দেরীতে হলেও ওর স্বপ্নটা হয়তো সফলতার মুখ দেখবে। রুবাইয়াতেরও কেন যেন ওমরের কাছাকাছি আসতে মন চাইছে। তারপর নিজের আবেগ আর ইমোশনকে কন্ট্রোল করে রাতের নির্জনতা ভঙ্গ করে বললো,
—–এতো নিরব কেন ওমর? কি ভাবছো?
—–পাহাড়ের গা বেয়ে জোৎস্নার জল গড়িয়ে পরা দেখছি।
——আমি আমার ভবিষ্যতের প্লান করে ফেলেছি।
ওমর রুবাইয়াতের একথা শুনে মনের অজান্তে চমকে উঠলো। ভয়ে ভয়ে বললো,
—–কি ভেবেছো?
—–আমি ইউকে চলে যাবো। ওখানে প্লাব পরীক্ষা দিয়ে ওখানকার রেজিস্ট্রাট ডাক্তার হবো। তারপর এমআরসিপির কোর্সটা শেষ করবো।
——দেশে ফিরে আসবে না?
——দেশে ফিরে কি হবে বল? মানুষ আমার অতীত নিয়ে আমাকেই ক্ষতবিক্ষত করবে। এর থেকে প্রবাসে পড়ে থাকবো। কেউ কিছু জানতে পারবে না। তবে যদি কোনোদিন মনে হয় ফিরে আসা দরকার তাহলে তোমার কাছে ফিরে আসবো।
আশানিরাশার দোলাচলে ওমরের মনে বিষাদের মেঘ ছড়িয়ে পড়লো। তবুও হাল ছাড়লো না। ওর বিশ্বাস রুবাইয়াত একদিন ওর কাছে ফিরে আসবে।

ভোরের আলো ফুটার আগেই ওমর আর রুবাইয়াত ঢাকার পথে রওয়ানা হলো। সাইরু থেকে ঢাকায় ফেরার পথে চেকিং পোস্টে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো। সে সময়টাতে ওরা সকালের নাস্তা করে নিলো। তারপর ঢাকায় পৌঁছে ওমর রুবাইয়াতকে ইস্কাটনে নামিয়ে দিয়ে উত্তরার দিকে রওয়ানা হলো।এতো তাড়াতাড়ি ফিরে আসাতে সানজিদা বেগম অবাক হয়ে বললো,
—–কিরে এতো তাড়াতাড়ি ফিরে আসলি?
——আমার প্লাব পরীক্ষার রেজিস্টেশন করতে হবে। আজকেই লাস্ট ডেট।
——তুই কি ইউকে যাবি?
—হুম।
একথা বলে ফ্রেস হতে রুবাইয়াত ওয়াশরুমে চলে গেল। হাতমুখ ধুয়ে মা সানজিদাকে এককাপ চা রুমে দিতে বলে ল্যাপটপ খুলে বসলো। ওইটিতে নাম রেজিস্টেশন করলো।
খুব মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে ভালোভাবেই রুবাইয়াত ওইটি পাশ করে গেল। ওর বাবা মা ও বাঁধা দেয়নি। ওমরও নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

সাত বছর পর———-
——পাপা, তাড়াতাড়ি উঠো আজ তো মাম্মা আসবে।
ওমর ঘুম থেকে উঠে দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ভোর পাঁচটা বাজে। ডিসেম্বর মাসের আজ বারো তারিখ। শীতটা বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। ঘুম ঘুম চোখে রাজনকে ওমর বললো,
—–বাবাই, মা আসতে এখন তিনঘন্টা দেরী আছে। তুমি রাতে ঘুমাওনি?
——না,বাবা আমার রাতে ঘুম আসেনি। আমি তো এই প্রথম মাকে দেখবো। সেই খুশীতে আমার ঘুমই আসেনি।
ওমর রাজনকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,
——,আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু ঘুম না হলে তুমি তো অসুস্থ হয়ে যাবে। মা আসতে এখনও তিন ঘন্টা দেরী আছে। এই ফাঁকে তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও। আমি ফজরের নামাজ পড়ে নেই।
——পাপা, আমিও তোমার সাথে নামাজ পড়বো।

ওমর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে রাজনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। রাজনও ওজু করে এসে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে ওরা একসাথে নামাজ আদায় করলো। এরপর দু,জনে রেডী হয়ে নিলো। আকলিমা খালা টেবিলে নাস্তা দিয়ে ওমরের রুমের দরজায় নক করে বললো,
—–রাজন ভাইয়া,টেবিলে নাস্তা দিয়েছি। বাবাকে নিয়ে খেতে আসো।
ওমর আর রাজন টেবিলে এসে নাস্তা করে নিলো। উত্তরা থেকে এয়ারপোর্ট যেতে খুব বেশী সময় লাগবে না। তারউপর আজ শুক্রবার। ছুটির দিন। ওমর ভাবছে ধীরে সুস্থে রওয়ানা দিবে। ওমর এখন আর ওর বাবা মায়ের সাথে থাকে না। রাজনের দায়িত্ব নেওয়াটা ওর বাবা মা ভালোভাবে মেনে নেয়নি। এটা নিয়ে ওমরের মাথা ব্যথা নেই। উসমান বউ নিয়ে বাবা মায়ের সাথে থাকে। ও আর বউ সরকারী ডাক্তার। এখন টাঙ্গাইলে পোস্টিং।বাসা থেকেই যাতায়াত করে। উত্তরার দক্ষিনখানে চারকাঠা প্লটের উপর ডুপ্লেক্স বাড়ি তৈরী করেছে ওমর। বাড়ির নাম দিয়েছে রুবীমহল। আজ বহুদিন পর হয়তো রুবীমহলে আনন্দ উপচে পড়বে। রাজনও খুব এক্সাইটেট। জন্মের পর কোনোদিন মাকে দেখেনি। এ বছর ও আট এ পড়েছে। মানারাত এ স্টান্ডার্ট ওয়ান এ পড়ে। ভালোই বুঝতে শিখেছে। মাকে দেখতে না পারার কারনে মাঝে মাঝে খুব মনমরা হয়ে থাকে। আজ ওর প্রতীক্ষার অবসান হবে।
ওদিকে রুবাইয়াতের জন্য এটা অনেক বড় সারপ্রাইজ। ওমরের ভাবতে খুব ভালোলাগছে। ও রুবাইয়াতের আমানতকে সযতনে আগলে রেখেছে। রুবাইয়াত ও বলেছে, ও এসে ওমরকে অনেক বড় সারপ্রাইজ দিবে। রুবাইয়াত ছোটোবেলা থেকে ছাত্রী হিসাবে বেশ মেধাবী। প্লাব পাশ করে ও এখন ইউকে রেজিস্ট্রাট ডাক্তার। পাশাপাশি এমআরসিপির ড্রিগ্রীটা কমপ্লিট করেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল সাড়ে সাতটা বাজে। গাড়ি বের করে ও আর রাজন এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয়। আধ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যায়। ওমর খবর নিয়েছে ইউকে থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানটা কেবল ল্যান্ড করেছে। ওমর আর রাজন অধীর আগ্রহে রুবাইয়াতের জন্য অপেক্ষা করছে। ইমিগ্রেশন ক্রস করে রুবাইয়াত হেঁটে আসছে। দূর থেকে ওমরকে দেখে হাত নাড়িয়েছে। পাশে রাজনের দিকে তাকিয়ে ওর চোখ দুটো যেন চঞ্চল হয়ে উঠে। পায়ের গতিও বেড়ে যায়। খুব দ্রুত ওমরের কাছে এসে বলে,
——ওমর এ কে? অবিকল একদম তার মতো।
ওমর রুবাইয়াতের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে। রুবাইয়াত একরাশ উৎকন্ঠা নিয়ে আবারো জিজ্ঞাসা করে
——এটাই কি তোমার সারপ্রাইজ।
রুবাইয়াতের রাজনের চোখে মুখে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে,
——তুমি কে বাবা? তোমার মায়ের নাম কি? তোমার বাবা কে?
——তুমিই তো আমার মা। (ওমরের দিকে তাকিয়ে বলে)পাপা বলেছে।
রুবাইয়াত রাজনকে বুকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে ফেললো। এরপর ওমরের দিকে তাকিয়ে বললো,
——ইউকে যাওয়ার পর প্রতিদিন আমার তোমার সাথে কথা হয়েছে। কিন্তু তুমি আমাকে রাজনের কথা বলো নাই।
——তুমিও জানো, বলার মতো পরিস্থিতি ছিলো না। আর ওর কথা শুনলে তুমি সব ফেলে চলে আসতে। এতে সমস্যা বাড়তো বই কমতো না। ওতো আকলিমা খালার কাছে খুব যত্নে ছিলো। আমি বাড়ি করার পর আকলিমা খালা আর রাজনকে আমার কাছে নিয়ে আসি। এখন গাড়িতে উঠো।
ওরা তিনজন গাড়িতে উঠে বসলো। ওমর গাড়িতে স্টার্ট দিলো। রাজন ওর মায়ের বুকের সাথে লেপ্টে থাকলো। মা ছেলে কারো মুখে কোনো কথা নেই। দু,জনের চোখ দিয়ে বাদলের ধারা বইছে। রাজন একসময় কাঁদতে কাঁদতে রুবাইয়াতের বুকে ঘুমিয়ে পড়লো। রুবাইয়াত আজ যেন স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে বুকের কষ্টের মেঘটা বাদল হয়ে চোখের কোল বেয়ে ঝরে পড়ছে। একসময় নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
——ওমর,তোমার ঋণ তো আমি কোনোদিন শোধ করতে পারবো না। তবে কিছু প্রতিদান তোমায় আমি দিবো।
ওমরও মুচকি হেসে বললো,
——সারপ্রাইজটা তো বললে না?
——আমি ইউনাইটেট হাসপাতালে কনসালটেন্ট হিসাবে সামনের মাসে জয়েন করছি।
——-তাহলে তুমি কি ইউকের সব পাট চুকিয়ে দেশে ফিরেছো?
—–হুম,মশাই। এবার বিয়ে করে স্বামী সন্তান নিয়ে চুটিয়ে সংসার করবো। আমার কিন্তু চামড়া কুৃঁচকে যায়নি। চোখে এখনও খুব ভালো দেখি।
——আমারও চুলে পাক ধরেনি। থুরথুরে বুড়ো হইনি।
—–আমরা কিন্তু আজই বিয়ে করে ফেলবো।
—–যথা আজ্ঞা ম্যাম। রাতে বাবা মা আর আঙ্কেল আন্টিকে আসতে বলেছি। আয়ানকে খুব মিস করছি। ওতো বিয়ে করে পিএইচডি করতে ইউএসএ তে পাড়ি জমালো আজ পাঁচবছর হয়ে গেল।
——ক্রিসমাসের ছুটিতে ওরাও তো দেশে আসছে?
—-খুব ভালো খবর। একটা কথা বলি তোমায়,আমার কাছে তোমার কোনো ঋণ নেই। ভালোবাসার কাছে ঋণ বলে কিছু থাকে না। তোমাকে ভালেবাসি বলেই তোমার সুখ দুঃখের অংশীদারও আমি। তাই রাজন তোমার সন্তান হলেও ওকে সবসময় আমার নিজের সন্তান বলেই মনে হতো। ওর স্পর্শে আমি তোমার ছোঁয়া পেতাম।
রুবাইয়াত মুচকি হেসে বলে,
——ঋণ আছে সেটা হলো ভালোবাসার ঋণ। আমি আমার ভালোবাসা দিয়েই তোমার ঋণ শোধ করে দিবো।
ওমরের চোখ দুটো আদ্র হয়ে গেল।

সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে