অনুরক্তি এসেছে তোমার শহরে পর্ব-৬+৭

0
573

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ৬
#বর্ষা

—ম্যাম,আপনি এদিকটায় কি করছেন?এপাশটা তো অনেক নিরিবিলি।

ফাতেহ বাইক থামিয়ে ইলিয়ানার উদ্দেশ্যে বলে।ইলিয়ানা হঠাৎ করে ফাতেহ-র উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়।ঠিক তখনই আহান স্যার আইসক্রিম হাতে উপস্থিত হন।সন্ধ্যা গড়িয়ে এসেছে। নদীর পাড়েই ছিলো ওরা এতক্ষণ। মাত্রই উঠেছে এসেছে।রাত গভীর‌ হলে যেতে সমস্যা।

—ম্যাম ইনি কে?(ফাতেহ)

—তা আপনি এদিক থেকে যাচ্ছেন,আপনার বাসা কি এতদূরেই?(ইলিয়ানা)

আহান স্যার চোখ ছোট ছোট করে রেখেছেন।ফাতেহ বাইক থেকে নেমে কথা বলতে উদ্দিগ্ন হতে নিলেই ইলিয়ানা বলে,

—এই ছেলে শুনুন কর্মস্থলে যান।এখানে সময় অপচয় না করে।

ফাতেহ হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো অগোছালো করে বহু কষ্টে মুচকি হাসে।হ্যান্ডসাম ছেলে ফাতেহ।বহু নারীর ক্রাশ হিসেবে বেশ সুনাম এখনো তার নিজ মেডিকেল কলেজে।তাইতো সিনিয়র ম্যামকেও নিজের দিকে অ্যাটট্রাক্ট করার চেষ্টা করছে সে।বেশি কিন্তু বড় হবে না তারা। কেননা ইলিয়ানা গ্যাপহীন স্টাডি করেছে, পাশাপাশি বেস্ট রেজাল্টের কারণে সিনিয়র ডক্টরদের সাথেও বিভিন্ন অপারেশন এটেন্ড করার সুযোগ পেয়েছে।তবে সেক্ষেত্রে ফাতেহ তো অনেক পিছিয়ে। এক্ষেত্রে বছর দুই/আড়াইয়ের পার্থক্য হবে হয়তো।

ফাতেহ বিদায় নিয়ে চলে যেতেই আহান স্যার মাথায় আঙুল ঘসতে ঘসতে প্রশ্নসিক্ত করেন ইলিয়ানাকে। জিজ্ঞেস করেন,

—আমার সাথে তো এখন আর তেমন হেসে কথাই বলো না।আর বাইরের অচেনা মানুষদের সাথে কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলো!

—আর ইউ জেলাস?

ইলিয়ানার প্রশ্নে হকচকিয়ে গেলেও দ্রুত নিজেকে সামলে নেন তিনি।নিজের থেকেই তিনি শিখেছেন যে,কাউকে ভালোবাসার ইজহার করলে অপর ব্যক্তি তাকে বেশি মূল্যায়ন করে না।এই শিখটা তো সে নিজের কর্মেই খুঁজে পেয়েছেন।ইলিয়ানা যখন তার জন্য পাগলামি করতো, তখন তিনি ইলিয়ানার মনের বাসনা জেনেও তার ভালোবাসাকে‌ বুঝিয়ে‌ সমাজ মানবে না এ সম্পর্ক।

—একদমই না।তা তোমার এমন কেন মনে হলো?(আহান)

—মেয়েদের মন তো তাই কতকিছুই ভাবে।(ইলিয়ানা)

—মেয়েদের মন!(আহান)

—আপনার সন্দেহ আছে?(ইলিয়ানা)

—না,না।তবে আশ্চর্য হলাম।যেই মেয়ে মাঝরাতে ভয় না পেয়ে একজন পুরুষকে উত্তম মধ্যম দিতে পারে সেই মেয়ের মন তো মেয়েদের মন হওয়ার কথা নয়!(আহান)

—আপনি আপনার এক লাইনে কতবার মেয়ে উচ্চারণ করছেন তা জানেন?আর যেহেতু আমি মেয়ে সেহেতু আমার মনটাও মেয়েদের মন হিসেবে গণ্য হবে।(ইলিয়ানা)

—আচ্ছা বাদ দেও।আগেও তোমার সাথে তর্ক লাগতে পারতাম না।আর এখনও পারি না।(আহান)

—আপনি ইচ্ছাকৃত পিছু হটতেন আগে। আপনার জন্য আমাকে কতবার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে জানেন!(ইলিয়ানা)

—আচ্ছা, সব কথাই শুনবো।তবে আগে যাওয়া তো যাক।ওই যে একটা রিক্সা আসছে ওইটা করেই যাই চলো।(আহান)

—আগে রিক্সা চালককে দাড় করান।তারপর যাওয়ার দিকটা ভাবছি (ইলিয়ানা)

রিক্সা চালক প্রথমে ভয় পেলেও পরে রিক্সা থামান। সচরাচর এদিকে মানুষ দেখা যায় না।এতোটাই নিরিবিলি।তবে বাম দিকের রাস্তায় দু্ই মিনিটের দূরত্ব পেরিয়েই একটা গলি আছে সেখান থেকেই লোকালয়ের শুরু। কিন্তু ডান দিকে কয়েক মিনিট হাঁটলেও কোন কূলকিনারা পাওয়া যাবে না।শেষমেশ রিক্সা উঠে আহান স্যার বলেন,

—এখন বলো

—কি?(ইলিয়ানা)

—ওইযে আমার জন্য তুমি কত প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছো তা।(আহান)

—অনেক আছে।এতকিছু কিভাবে বলবো এতো কম সময়ে!(ইলিয়ানা)

—ছোট করে বলে দেও(আহান)

—মনে পড়ে একদিন আমি আপনাকে ভাইয়া ডাকবো বলে বলেছিলাম।আপনি হয়তো সেদিন আশ্চর্য হয়েছিলেন বটে।তবে আমি যখন বললাম এটা ডেয়ার তখন আপনি আমাকে তো কিছু বলেননি নাই। পাশাপাশি যাকে দেখিয়ে ছিলাম তাকেও কিছু বলেন নাই।আর তাই তার প্রথম কথাই ছিলো যে স্যার তোকে কিছু বললো না কেন!(ইলিয়ানা)

—তাই?(আহান)

—না

ইলিয়ানা কপট রাগ দেখিয়ে বলে।আহান স্যার ইলিয়ানাকে আরো রাগাতে বলে,

—মাত্রই না বললা।তাহলে এখনই আবার ‘না’ হলো কিভাবে?

—ধূর আপনার সাথে কথাই বলবো না।(ইলিয়ানা)

—বাপজান,আম্মায় মনে হয় রাগ করছে।আম্মাজানরে আজ রাইতেই গোলাপ আর চকলেট দিয়া দেইহেন।রাগ গইলা যাইবো।(রিক্সাচালক চাচা)

রিক্সাচালক চাচার কথায় আহান স্যার হাসেন।তবে ইলিয়ানা লজ্জা পায়। রিক্সাচালক চাচা হয়তো ওদের স্বামী-স্ত্রী ভেবেছেন। কেননা ওরা যেমন আচরণ করছে,গল্প করছে তা ওরকমই বোঝায়।

গল্পের মাঝেই ইলিয়ানার ফোনটা বেজে ওঠে।’মাই লাভ’দিয়ে সেভ করা নাম্বার।আহান স্যার ইলিয়ানার দিকে এমনভাবে তাকান যেন ইলিয়ানা বিশাল অপরাধ করে ফেলেছে।রাগে ফুলতে থাকেন।ইলিয়ানা কিছুই বলেনা তবে মজা পায়।ইলিয়ানা ফোন রিসিভ করে।

আহান অবাক চোখে ইলিয়ানার দিকে তাকিয়ে। হাস্যোজ্জল একটা বাচ্চা হাসছে।কি মায়াবী মুখশ্রী।বাচ্চাটাকে দেখে বিদেশীই মনে হচ্ছে আহান স্যারের তবে কিছু বলেন না।বাচ্চাটা বলে ওঠে,

—আন্ট আই মিস ইউ

—আন্ট মিস ইউ ঠু জেনি

—হোয়েন ইউ উইল ক্যাম আন্ট?

—ভেরি সুন বেবি।ওকে ফর নাউ আই নিডস টু গো।আন্ট লাভ ইউ বেবি। আল্লাহ হাফেজ

—আল.. আল্লাহ হাফেজ

ইলিয়ানারা পৌঁছে গেছে।স্কুল মাঠে এখন এই গলি পেড়িয়ে গেলেই চলবে।আজ কয়েকটা মুহুর্ত ক্যাপচার করেছে ওরা।ইলিয়ানার ইচ্ছে পূরণ করেছে। দুজনের একসঙ্গের ছবি।বহু বছর পূর্বে ইলিয়ানা পাগলামি করেছিলো দুজন একত্রে ছবি তুলবে।আহান স্যার বারবার জেনির ঘটনার পর শুধু ইলিয়ানার দিকে তাকাচ্ছেন আর হাসছেন। এদিকে ইলিয়ানা আজ হসপিটালে যাওয়ার প্ল্যান ক্যান্সেল করেছে কেননা খবর এসেছে যেই মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে তা আদৌ এসে পৌঁছায়নি।

ইলিয়াস চৌধুরী ড্রয়িংরুমে লেপটপে কাজ করছিলো।এমেলি এসে কফির কাপ হাতে দিতেই ইলিয়াস চোখ তুলে তাকায়। ভালোবাসার মানুষটার দিকে তাকানোর সময়টা বহুদিন সে পায়না।ভালোবেসেই তো সতেরো বছর বয়সেই রেজিঃ করিয়ে ফেলেছিলো।আর তখন থেকেই প্রেম চলছে ওদের। পবিত্র ভালোবাসা/প্রেম।

—এমেলি সিট হেয়ার(ইলিয়াস)

—বাহ,বাহ,আজ দেখি ভালোবাসার মানুষের কথা মনে পড়ছে?(এমেলি)

—আমি কি তোমায় ভুলে বসেছি নাকি!(ইলিয়াস)

—তা আপনিই ভালো জানেন মহাশয় (এমেলি)

—এমেলি তুমি দেখছি ইলিয়ানার সংস্পর্শে ভালোই বাংলা শিখেছো!বাহ বাহ(ইলিয়াস)

—আমার ননদিনী যে সুপারব তা কি জানো না তুমি?(এমেলি)

—দেখতে হবে তো কার বোন!

ইলিয়াসের কোলে বসেই এমেলি কথা বলেছিলো।তখনই ছোট্ট জেনি ছুটে আসে ওদের কাছে।এমেলি ইলিয়াসের পাশে বসতেই ছুটে এসে সোফায় ট্যাব ফেলে পাপাইয়ের কোলে উঠে বলে,

—পাপা,আর ইউ নো হোয়াট আই ডিসকভার টু ডে?

—হোয়াট বেবি?

—আন্ট ইজ উইথ অ্যা গায়!

ইলিয়াস চৌধুরী সিরিয়াস হয়ে বসেন। বোন কোনো পুরুষের সাথে তা শুনে যেন ভয় পান, রাগান্বিত হোন।মেয়েকে জিজ্ঞেস করতে নেবেন তার পূর্বেই অন্যদিকে ছুট দেয় জেনি। ছটফটে হয়েছে মেয়ে।এমেলি বলে,

—আরে ইলিয়াস সিরিয়াস হয়ো না।জেনি বাচ্চা মেয়ে ও কি দেখতে কি দেখেছে!হয়তো ভুল দেখেছে।এমন কিছু হলে অন্তত আমি তো জানতাম।(এমেলি)

—এমেলি তুমি ইলিয়ানাকে ঢাকার/আবৃত করার চেষ্টা করো না।এরকম কিছুর হলে আমাকে বিষয়টা দেখতে হচ্ছে।তুমি এগুলো বাদ দিয়ে মেয়েকে খাইয়ে দেও দশটা প্রায় বাজে।(ইলিয়াস)

—আচ্ছা।তুমিও চলে আসো।পুরো পরিবার একসাথে ডিনার করবো।(এমেলি)

—ডেড খেয়েছেন?(ইলিয়াস)

—ডেডকে আমি ডাক দিচ্ছি।তুমি তোমার মেয়েকে নিয়ে আসো(এমেলি)

জেনির পেছন ইলিয়াস ছুটতে থাকতে।মেয়েটা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।একবার এদিক যাচ্ছে তো একবার ওদিক যাচ্ছে।আর হাসছে।পুরো তার আন্টের প্রতিচ্ছবি।ইলিয়ানা বাসায় থাকলেই দুজন একসাথে খুনসুটি করতো।তবে পড়াশোনার তাগিদে চারবছর দূরে ছিলো ইলিয়ানা। কিন্তু জেনি হওয়ার পর এইবারই তার প্রথম এতদিনের সফরে যাওয়া।

মেহেরের ফোনে ওর শাশুড়ি আম্মু কল করেছেন। মেহেরকে ঝাড়ছেন।কেন সে এই শীতের মাঝে বাড়ি ছেড়ে বাইরে। অবশ্য প্রকৃত কারণ এটা না। প্রকৃত কারণ হচ্ছে মেয়েটা ছাড়া দূরে থাকা। আল্লাহর রহমতে এবং তাকদির নির্ভরে মেহের পেয়েছে উচ্চ মানসিকতা সম্পন্ন শশুরবাড়ি।সবাই এতো এতো ভালো।

মেহেরের যত্ন-আত্মীয় কোনো অংশ কম করেনা।শিফাক আহমেদ বর্তমান সময়ের জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেটর।তাইতো খেলার সূত্রে এদিক-ওদিক কিংবা এদেশ-ওদেশ করতে হয়।সে মেহেরকে বাপের বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিয়ে রাখলেও মেহের যায়না। কেননা বাপের বাড়ি থেকে বেশি শান্তি যে সে তার শশুর বাড়িতেই পায়। শশুর আব্বু তো ‘আম্মু’ ছাড়া কথাই বলেনা।আর শাশুড়ি মা শাসন করলেও আদর কিন্তু কম করেন না।

চলবে?

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ৭
#বর্ষা

—স্যার আপনি বিয়ে করেছেন?

সাঈদা সরাসরি আহান স্যারকে প্রশ্ন করে।প্রশ্নটা করতে একটু বিব্রতবোধও তার মাঝে লক্ষণীয় নয়।আহান স্যার যে বিব্রত বোধ করছেন তাও কিন্তু না।এই মেয়েগুলো যে এরকম তা তিনি ভালোই জানেন। অভিজ্ঞতা বলেও তো একটা কথা আছে।যখন ক্লাস নিতেন তখন বুঝতেন এরা একেকটা কতবড় বড় ড্রামাবাজ।

—না তবে শীঘ্রই করবো।(আহান স্যার)

সাঈদা জাস্ট ‘ওহ’ বলে ওখান থেকে সরে আসলেও কিছুটা দূরে গিয়ে বিশাল শ্বাস নেয়।দমটা যেন বেরিয়ে আসতো আরেকটু হলেই।কত গম্ভীর হয়েছে আগের থেকে তাদের এই স্যারটা!সাঈদা ইলিয়ানাদের উদ্দেশ্যে হাঁটলেও পথিমধ্যে শুভ-র সাথে দেখা হয়।ছেলেটা কারো সাথে কথা বলছে। কথাবার্তা ফর্মালিটিতে ভরপুর।কল কাটতেই সাঈদা লাফিয়ে ভয় দেখায় শুভকে।বেচারা ভয় না পেলেও বিরক্ত হয়। সাঈদা যেহেতু পুরোপুরি পরিবর্তন হয়েছে তাই চেনার উপায় নেই।

—এই যে মিস দেখেতো মনে হয় আপনি প্রাপ্তবয়স্ক।তবে বাচ্চাদের মতো বিহেভ করছেন কেন?(শুভ)

—ওই তুই প্রাপ্ত বয়স্ক,আমি না। সাঈদার যখন নিজেকে প্রাপ্তবয়স্ক বলে মনে হবে সে তখন তেমন বিহেভ করবে।(সাঈদা)

অবিশ্বাস্য ভঙ্গিমায় চলে যেতে গিয়েও ফিরে এসে সাঈদার সামনে দাঁড়ায় শুভ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে।না, পুলিশের চোখেও ধরা পড়ে না সেই আগের সাঈদার।আগের সাঈদা বোঝার একটাই উপায় আর তা হলো তার আচরণ এখনো সেই তৎকালীন সময়েরই রয়েছে।

—তোর মাঝে সেই আগের সাঈদার একভাগও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

শুভ কথাটা বলে কিছুক্ষণ চুপ থাকে।তবে সাঈদা কিছু বলতে নেওয়ার পূর্বেই বলে উঠে,

—তা বিয়ে সাদী করেছিস?নাকি এখনো শুধু দুষ্টামি ফাজলামোর উপরেই আছিস!

সাঈদা মুচকি হাসে।তবে সে হাসিতে আছে আনন্দের বার্তা।সাঈদার হাসিতে হাসে শুভও।একসময় সাঈদা সবচেয়ে বেশি তাকেই পচাতে।তবে তাদের মাঝেকার বন্ধুত্বপূর্ণ শয়তানিটা ছিলো তার চেয়েও বহুগুণ বেশি।তাইতো টান রয়েই গেছে।

—হ্যা,বিয়ে করেছি।একটা ছেলেও আছে।
যাইহোক তোর আর স্নিদ্ধার কি অবস্থা?একসাথে আছিস তো?সেই স্কুল লাইফের প্রণয় বলে কথা।(সাঈদা)

শুভ-র মুখে মলিনতা ভার করে।হাসি খুশি মুখটা চুপসে যায়।সাঈদার মুখের হাসিও বিলীন হয়।স্কুল লাইফে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ঘটনা ছিলো শুভ,স্নিদ্ধার প্রণয়।তবে কি এমন হয়েছে যে শুভ-কে ওদের দুজনের প্রণয় নিয়ে প্রশ্ন করায় মুখশ্রীতে তার মলিনতা ভর করেছে!

—শুভ?(সাঈদা)

—স্নিদ্ধা আমার জন্য অপেক্ষা করেনি।বহু আগেই আমাদের প্রণয়ের সমাপ্তি ঘটেছে।ওর স্বপ্ন ছিলো ফ্যাশন ডিজাইনার হবে।আর আমার ক্যাডার হওয়ার।তবে ও চাইনি আমি দেশেই আটকে থাকি।তাই আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়টা ওকে বোঝাই।তবে ও একদমই বোঝেনি।শেষে এই না বোঝাবুঝির প্যারায় আমাদের সম্পর্কটা কখন যানি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়!(শুভ)

সাঈদা কি বলবে ভেবে পায় না। ভালোবাসার মানুষকে হারানোটা অনেক কষ্টের তবে তাকে হারানোর পরও ভালোবাসা আরো কষ্টের। কিন্তু সবাইকেই একটা সময় মুভ অন করতে হয়।হয় নিজের ভালো থাকার জন্য,নয়তো পরিবারের জন্য।তবে ভালোবাসা তো তখনই স্বার্থক যখন ভালোবাসার মানুষটির সাথে যৌবন অতিক্রম করে বার্ধক্যে পা ফেলা যায় হাতে হাত রেখে!

—তা স্নিদ্ধার পর কেউ এসেছে জীবনে?(সাঈদা)

—এসেছে।বলতে গেলে এখন বেশ ভালোই আছি। স্নিদ্ধা তো কলেজ লাইফেই হাত ছেড়েছিলো। উচ্ছন্নে যাওয়া জীবনটা তোদের ভাবীই গুছিয়ে দিয়েছে। একদম শেষ অব্দি বন্ধু হয়েই পাশে থেকেছে।তার মনে আমার জন্য অনুভূতি ছিলো।তবে আমার ভয়টাও সে জানতো,তাইতো লুকিয়েছিলো তার অনুরক্তি।তবে আমি তাকেই জীবনসঙ্গী করেছি।(শুভ)

সাঈদা খুশি হয়।কিছু কিছু মেয়েদের জন্য মেয়ে জাতির ওপর কতই না কলঙ্ক অর্পিত হয়।তবে সব মেয়ে যে সমান না তা অধিকাংশই প্রমাণ করে দেয়।সাঈদা শুভকে বিদায় জানিয়ে আরেক পাশে চলে আসে। ভালোবাসা শব্দটাই যেন আলাদা আনন্দ দেয় সাঈদাকে।

ইলিয়ানারা আটটার দিকে পৌঁছানোর পরই অন্তরা আর মেহের আটকিয়েছে ওকে। কেননা ওর ওদের প্রশ্নের উত্তর চায়।কাল এতো রাত্রি কেন হলো ইলিয়ানার? পাশাপাশি আজ সে কোথায় বা গিয়েছিলো!তবে ইলিয়ানা মাথা ব্যথার বাহানায় বারবার শুয়ে পড়ছে।আর অন্তরা নাকের পাটা ফুলিয়ে বসে আছে।

রাত দশটা।এবার ঠান্ডা যেন একটু ভালোই পড়েছে।তবে ইলিয়ানার কাছে তেমন অনুভব হচ্ছে না। রিসার্চের জন্য দুইমাস কানাডা ছিলো সে। গ্রীষ্মকাল চলছিলো তখন।তবুও ঠান্ডা ভালোই ছিলো।তবে ইলিয়ানা তখন নিজেকে সে দেশের নাগরিকদের মতোই হ্যান্ডেল করতে গিয়ে ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলো। অবশ্য সপ্তাহ অতিক্রম হতেই ইলিয়ানা অভ্যস্ত হয়।

রান্না-বান্না বলতে রাত্রি ভোজনে খিচুড়ি হয়েছে।সবজি খিচুড়ি।ইলিয়ানা খায়।ভালোই রান্না হয়েছে।অনেকদিন খাওয়া হয়নি খিচুড়ি।তবে গতকালকে সকালেও খিচুড়িই হয়েছিলো।আর এখন রাতেও!ইলিয়ানা খাবার খেয়ে নেয় দ্রুত।তবে ওর স্মরণে আসে পছন্দের মানুষটার সবচেয়ে অপছন্দের খাবার খিচুড়ি।সে কি সকাল থেকেই অভুক্ত!আর ইলিয়ানা সেই দিকটা খেয়ালও করেনি।ইলিয়ানা দ্রুত ফোন দেয় আহান স্যারকে।

—হ্যা বলো..(আহান)

—কোথায় আপনি?(ইলিয়ানা)

—খেতে এসেছি(আহান)

—সকালে খেয়েছিলেন?(ইলিয়ানা)

—হুম

—আচ্ছা রাখছি। আল্লাহ হাফেজ (ইলিয়ানা)

কল রাখতেই ইলিয়ানার সামনে পড়ে অন্তরা তার দিকেই কেমন করে তাকিয়ে আছে।যে চোখে সন্দেহরা ভরপুর।তবে সেদিকে লক্ষ্য দেওয়ার পূর্বেই সাঈদা ইলিয়ানার ওপর দৌড়ে এসে পেছন থেকে হামলে পড়ে।

—দোস্ত আহান স্যার তো আবিয়াত্তা (সাঈদা)

—তো?(ইলিয়ানা)

—আগের ফিলিংস কি নাই আর?

ভ্রু কুঁচকে সাঈদা তাকায়।ইলিয়ানা নিশ্চুস থাকে।সাঈদা নিজেকে আবারো প্রফুল্ল করে বলে,

—ভুলিসনি যখন তখন একবার ট্রাই করে দেখ।স্যার তো এখনো তোর মনের কথা তোর মুখে শুনেনি। তুই স্যারকে বলে দে।আমি নিশ্চিত তোর মতো কিউটের ডিব্বাকে স্যার না করতেই পারবেনা।

ইলিয়ানা জাস্ট মুচকি হাসি দেয়।তবে যে তা কৃত্রিমতায় ভরা তা বোঝা যায় না।ইলিয়ানা মনে মনে বলে,

—দোস্ত তোরা তো জানিস না তোদের স্যার আমাকে আরো এগারো বছর আগেই রিজেক্ট করেছে।তবে আমার মনে হয় সে আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু সেই চিন্তা আমার ভুলও হতে পারে।তবে তার সত্যতা যাচাই করার আগ্রহটা নেই। কেননা যদি জানতে পারি যে স্যার আমায় নয় এখনো অন্য কাউকেই ভালোবাসে!

সাঈদা হয়তো আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো তবে তৎক্ষণাৎ ওদের চোখ পড়ে আফরোজার ওপর।মেয়েটা কারো সাথে মিষ্টি বুলিতে পটরপটর করছে।আজ সকাল থেকে বেশ অনেকক্ষণ উধাও ছিলো।আর সন্ধ্যার পর জন্য দেখলো তখন থেকেই ফোনে।সাঈদা কপাল চাপড়িয়ে ইলিয়ানাকে বললো,

—ওই এই হারামীগুলো রিইউনিয়নে আসছে কেন?

ইলিয়ানা অবাক হলেও তৎক্ষণাৎ বান্ধুবীর কথার মানে বুঝে বললো,

—ফোনে প্রেম করতে।

—বা**,চল তো দেখি বাকিগুলো কই! আমাদের খোঁজও নিলো না। আমরা তো পর হয়ে গেছি।(সাঈদা)

—দোস্ত তোর ইমোশনাল কথা দেখলে হাসি পায়।যেমনে বলছ!হি হি হি

ইলিয়ানার কথায় সাঈদাও হেসে দেয়।সাঈদার স্মরণে আসে ছোটবেলা থেকেই মেয়েটা সবসময় হাসিখুশিতে মেতে থাকতো।তবে হঠাৎ কি যেন একটা হলো।টেনের বছরের মাঝামাঝিতে গিয়েই ওর হাসি মাখা মুখটা দেখা বন্ধ হয়ে গেলো।আজ অব্দি সেই কারণ ওদের নিকট অজানা।এস.এস.সির পর তো একপ্রকার লাপাত্তাই হয়ে গেল।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে