অনুরক্তি এসেছে তোমার শহরে পর্ব-১৩+১৪

0
554

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ১৩
#বর্ষা
ইলিয়ানার মুখের হাসি যেন সরছেই না।তবে মনের মাঝে একটা ভয় এসে বাসা বেঁধেছে।ইলিয়াস ভাই কি রাজি হবে এতে!তবে ইলিয়ানা পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছে।নেই কোনো ভয়,কিংবা ডর। রায়হান ভাইয়ের মুখে বিরক্তির রেশ স্পষ্ট।ইলমা আপুও যে কম বিরক্ত তা কিন্তু নয়।তবে পাত্র সংশয় লাজ লজ্জা পায়ে ঠেলে পাত্রীর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে।এই দৃষ্টি সরানোর নয়।

আহান স্যারের তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার বিষয়টায় যে পরিমাণ লজ্জা ইলিয়ানা পাচ্ছে তা প্রকাশ করতেও হিমশিম খাচ্ছে। গাল দুটো হালকা লাল বর্ণ ধারণ করেছে‌। রায়হানের কাশিতে আহান স্যার দ্রুত চোখ সরান।বয়সে সমবয়সী দু’জনে।তবুও রায়হান ভাই দুই বাচ্চার বাপ আর আহান স্যার সুদর্শন সিঙ্গেল প্রফেসর!

—তা আপনারা আজ আসলেন যে?

রায়হান ভাইয়ের প্রশ্নে আহান স্যার সোজা হয়ে বসেন। নিজের দুলাভাইকে ইশারা করেন কিছু একটা বলতে। নাহিদ দুলাভাই যে খুব একটা স্বাচ্ছন্দে বসে আছে তাও কিন্তু নয়। বিরক্তি না থাকলেও তিনি যে বেশ অস্বস্তিতে ভুগছেন তা ইলিয়ানা বেশ বুঝলো।তবে নাহিদ দুলাভাই অস্বস্তি কাটিয়ে বললেন,

—রায়হান,তুমি তো আমার ছোট ভাইয়ের মতো।আবারো তোমার কাছে আগের আবদারটা নিয়েই আসলাম।এবার ফিরিয়ে দিয়ে না।ইলিয়ানাও তো এখন বুঝদার।

নাহিদ দুলাভাইয়ের কথার কিছুই বুঝলাম না।রায়হান ভাই ক্ষেপে কিছু বলার আগেই দরজা থেকে ইলমা আপুর জামাই অর্থাৎ ইলিয়ানার দুলাভাই তারিফুজ্জামান বলে ওঠেন,

—ভাইয়া ইলিয়ানা বুঝদার হলেও আপনার শালার সাথে আমার মেয়ের বয়স খাপ খায় না।তাহলে বলুন আবারো একই ভুল কিভাবে করবে রায়হান?

দুলাভাইয়ের কথায় আরো ঘোলাটে লাগছে ইলিয়ানার।আবারো শব্দটা কেন আসছে বারবার?তবে কি এর আগের বারও এনার সাথেই…?না,না তা কি করে সম্ভব!এমনটা হলে তো অন্তত পক্ষে আহান স্যার ইলিয়ানাকে জানাতো‌।তাই নয় কি! তাছাড়া আহান স্যারের সাথে ওর বিয়ের কথা পূর্বে না হলে ‘আবারো’ শব্দটা আসছে কোথা হতে!

ইলিয়ানার ভাবনার মাঝেই হাতে থাকা ফোনটায় রিং বেজে ওঠে। এমেলি ভাবী ফোন করেছে।ইলিয়ানা সবার দিকে একবার তাকিয়ে কল কেটে দেয়।তবে আবারো ফোনটা বেজে ওঠে।ইলিয়ানা এবার ভয় পায়।কিছু হলো নাতো আবার!ইলিয়ানা পার্মিশন নিয়ে একটু সরে আসে।

—ভাবী কিছু কি হয়েছে?

—আরে বোকা মেয়ে তোমার ভাই গাজীপুর গিয়েছে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে।তবে এখন নাকি তার তোমার ঠিকানা মনেই নেই।তাই আমাকে বললো তোমার থেকে ঠিকানা জানতে..জলদি বলো

‘তোমার ভাই গাজীপুর গিয়েছে’ এই কথাটাতেই যেন ইলিয়ানার দম বন্ধ হয়ে আসছে।ইলিয়ানা কিছু না বলেই ফোন কেটে দেয়। শুধু এতোটুকু শুনেই তার ঘাম ছুটে গেছে।এখন যদি ইলিয়াস এখানেই চলে আসে তখন! ইলিয়ানাকে ইলিয়াস কখনো মারেনি কিংবা বকেনি তবে শাসন করেছে মিষ্টি ভাষায়। অবশ্য সে শাসনে ছিল ইলিয়াসকে হারিয়ে ফেলার ভয় দেখানো।এমনভাবে কথাগুলো মস্তিষ্কে গেঁথেছে যে ইলিয়ানা চাইলেও এই শব্দগুলো ভুলতে পারে না।যে কেউ তার অবচেতন মস্তিষ্কেও গেঁথে দিয়েছে এসকল শব্দগুলো।

—কোনো সমস্যা মাম?

নুকতা পেছনে এসে দাঁড়ায়।ইলিয়ানা ফিরে তাকায়। ছোট্ট নুকতাও তাকে মাম ডাকতো।তবে আবারো আদরের নুকতার মুখে নিজের জন্য ‘মাম’ সম্বোধন যেন খুশির জোয়ারে ভাসিয়ে দেয় তাকে।ইলিয়ানা নুকতাকে কাছে টেনে কাঁধে হাত রেখে বলে,

—আবে ইয়ার তেরি মামকো কই মুসিবত ছু ভি না সাক্তা..

—মাম মুসিবত কি ছেলে?তুমি যে বললা সাক্তা?আর মুসিবত যদি ছেলে না হয় তবে কি মেয়ে?তাহলে তো সাক্তি হতো তাই না!

নুকতার মুখে এমন প্রশ্ন শুনে ইলিয়ানা নিজের ছেলেবেলায় যেন ফিরে যায়।এমন আজেবাজে প্রশ্ন সবচেয়ে বেশি সেই করতো।এমন যদি হতো ইলিয়ানা এই পরিবারের মেয়ে হয়েই বড় হতো তবে ইলমা আপু ঠিকই বলতো যে,”পুরো ইলিয়ানার কার্বন কপি!”

—নুকতা শোনো বাপ আমি এতো ব্যাখ্যা না জানি না।তুমি একটু রিসার্চ করে আমাকে জানাও?

—ছিঃ ছিঃ তুমি মস্ত বড় ডাক্তার হয়েও সামান্য বিষয়ে জানো না?সেম অন ইউ মাম

ইলিয়ানা মাথা চাপড়ে ভাগ্নের দিকে তাকায়।রায়দা,জোয়া আর রাহিদ বাসায় নেই।বিকেল হওয়ায় এখন সবগুলোই বাইরে।ইলিয়ানা ভাবে নুকতা এখানে কি করছে!তবে পরক্ষণেই মনে পড়ে,পড়াকু বাচ্চাগুলো মাঠে নয় পড়ার টেবিলেই থাকে!

—আচ্ছা বাপ আমি জানি না ।সেম অন মি।তুমি জানো তো?

—আমি জানবো না কেন?আমি অবশ্যই জানি

—তাহলে আমায় বলো।আমি একটু শিখে নেই।

—আমি তোমায় বলবো না।

—কেন?

—আমার ইচ্ছে নেই।এখন আমি বাইরে যাবো।সরো

নুকতা মুখ লুকিয়ে পালায়। ইলিয়ানা বুঝেছে নুকতা যে বিষয়টা সম্পর্কে অবগত নয়। তবে অন্যের কাছে হার মানতেও নারাজ সে।একদিকে এটা ভালো গুণ হলেও অন্যদিকে খারাপ।হার না মানার ফলে সে একসময় নিজ থেকে এ বিষয়টা আহরণ করবে,তবে হার মেনে নিলে সে কিন্তু আগেই বিষয়টা সম্পর্কে অবগত হতে পারবে এবং সময়ও বাঁচবে!

ইলিয়ানা ড্রয়িংরুমে ফিরে আসে।ইলিয়াসকে ম্যাসেজ পাঠায়।ম্যাসেজে লেখে,

”ভাই তুমি তো চাইতে আমি বিয়ে করি তাই না?ভাই আমি করবো‌।তবে ছেলে হবে আমার পছন্দের।আমি একজনকে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসি।সেই ছোট্টটি থেকেই।নিষেধ করো না। তোমাদের নিষেধাজ্ঞা পেলে বিয়ে করবো না,তবে তাকে না পেলে আর কাউকে জীবনের সাথে জড়াবোও না”

ইলিয়ানা দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস নেয়।কখনো আগে ভাইয়ের কাছে কিছু চায়নি সে,আর না চেয়েছে বিয়ে করতে। ভাই তো অনেক জোর করেছে। অবশ্য কখনো কাউকে সামনে ধরে এনে বলেনি যে তোমাকে একেই বিয়ে করতে হবে।ইলিয়ানা উপস্থিত হতেই তারিফুজ্জামান বলেন,

—শালী কি বলো তুমি?করবে বিয়ে নাকি না করে দিবো?

ইলিয়ানা লোকলজ্জা ভুলে বলেই ওঠে,

—ভাইয়া আমি রাজি‌।তবে আমার একটু সময় লাগবে ডেড এবং ভাইকে মানাতে।

সবার মুখেই কিঞ্চিত খুশি প্রকাশিত হলেও আহান স্যার ইলিয়ানার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে।হয়তো ভাবনা এটাই আবার কোন ডেড আর ভাইয়ের কথা বলছে ইলিয়ানা!

ইলিয়াস মোবাইল ঠোঁটের সাথে লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবছে। হঠাৎ গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রুকণা।চোখটা মুছে ইলিয়াস মোবাইলের গ্যালারি ওপেন করে।ইলিয়ানার মতো দেখতেই হুবুহু গড়নের এক রমনীর ছবি।বের ষোলো,সতেরোর ছেলে আর কাপড়ে মোড়ানো ছোট বাচ্চাটার ছবি।ইলিয়াস কেঁদে দেয়।বলে ওঠে,

—মাম্মাম কেন আমরা এতো ধনী হলাম?আমরা কেন আলাদা হয়ে গেলাম?কেন তোমার মৃত্যু হলো?আর কেনই বা ইলিয়ানা আমাদের থেকে হারিয়ে গেলো!

ইলিয়াসের কান্না থামে।তবে আবারো ঢুকড়ে কেঁদে ওঠে সে।চোখের পানি মুছতে মুছতেই আবারো গড়িয়ে পড়ে।ইলিয়াস বলে,

—মাম্মাম জানো আজ আমাদের ইলিয়ানা বিয়ে করবে বলে জানিয়েছে।আমার বোনটা হয়তো সত্যিই কাউকে ভালোবাসে।এতোদিন তো বিয়েই করতে চাইনি,আমি সব দেখে শুনে বিয়ে দিবো।আমার বোনটাকে আগলে রাখবো।তোমার মতো হারিয়ে ফেলবো না

ইলিয়াসের ফোনটা বেজে ওঠে।’ওয়াইফি’ দিয়ে সেভ করা নাম্বার।ইলিয়াস নিজেকে শান্ত করে। চোখেমুখে পানি দেয়।পানি খায়।ড্রাইভারকে জানালা খুলে গাড়িতে ঢোকার নির্দেশ দেয়। ইলিয়াস কল ব্যাক করে।

—হ্যা বলো?(ইলিয়াস)

—কি হয়েছে ইলিয়াস?তোমার মন খারাপ?(এমেলি)

—আরে না।টানা ট্রাভেলে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছি এই আরকি।যাইহোক তুমি ফোন দিয়ে যে…(ইলিয়াস)

—ওহ হ্যা,ডেড তোমায় তাকে ফোন দিতে বলেছে।আর শোনো আমি মমের সাথে দেখা করতে যাবো একটু।জেনিকে ডেডের কাছেই রেখে যাবো ভেবেছি।কি বলো?(এমেলি)

—তোমার ইচ্ছে। আচ্ছা রাখছি।ডেডকে একটু ফোন দিয়ে দেখি কি বলবে (ইলিয়াস)

—আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ (এমেলি)

—হুম….

ইলিয়াস কল কেটে গাড়িতে শরীর এলিয়ে দেয়।ড্রাইভার মৌচাকের দিকে গাড়ি নিচ্ছে।জ্যাক লোকেশন সেন্ট করেছে।এখনো পার্শ্ববর্তী ওই রিপোর্টেই ম্যারিও,এনি সবাই রয়ে গেছে।

চলবে?

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ১৪
#বর্ষা

—ব্রাদার প্লিজ ডু সামথিং।ইউ নো আই লাভ জেহের ঠু মাচ।

ম্যারিও কাঁদতে কাঁদতে ইলিয়াসের পায়ে পড়ে যায়। ইলিয়াস জানে যে ম্যারিও ইলিয়ানা বলতে কতটা পাগল।ইলিয়ানা যখন আমেরিকান ইংলিশে কাঁচা হওয়ায় অন্যদের কাছে কিছুটা হাস্যের পাত্রী হতো সেখানে ম্যারিও ইলিয়ানাকে সবটা দিয়ে আগলে রেখেছে।তবে ইলিয়ানার পারফেক্টনেস বাড়লেও ম্যারিও কেয়ার আগের মতোই আছে।

ইলিয়াস সোফায় গা এলিয়ে দেয়।বিরক্ত লাগছে তার এখন ম্যারিও কে। ইলিয়াসকে ইলিয়ানা আগেও জানিয়েছে যে ম্যারিও নাকি ইলিয়ানাকে প্রেম প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্য ইলিয়ানা হাসতে হাসতেই বলেছিলো তা যেন কোনো মজার বিষয়ে কথা বলছে সে। ইলিয়াস গম্ভীর কন্ঠে বলে,

—ম্যারিও তোমরা সবাই আজই সিঙ্গাপুর ব্যাক করছো।আর শোনো মরীচিকার পেছনে ছুটো না।ইলিয়ানা তোমাকে ভালোবাসে না।তাই সে তোমার জন্য মরীচিকার মতো হওয়া উচিত।এনিকে গুরুত্ব দেও।

এনি লজ্জা পায় ইলিয়াসের কথায়।তবে ভয়ও পায় বেশ।কষ্টও পায় ম্যারিও এর জন্য।যারা ভালোবাসা নামক অনুভূতি একবার অনুভব করে তারা জানে ভালোবাসার মানুষের জন্য কষ্টটা চিত্তে কত গভীরত্ব বানাতে পারে!

জ্যাক সবাইকে নিয়ে ওই রুম ফাঁকা করে দেয়।সন্ধ্যা পেরিয়েছে অনেকক্ষণ।তাইতো উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে সে।জ্যাক ততক্ষণে ব্ল্যাক কফি আর স্যান্ডউইচ নিয়ে এসেছে। ইলিয়াসের ইশারায় খাবার রেখে বেরিয়ে আসে জ্যাক। ইলিয়াস নামক মানুষটা পরিবারের কাছে যতটা নরম,ঠিক ততটাই কঠিনত্ব বজায় রাখে বাইরের জগৎ এ।

‘মাই ডটার’ দিয়ে সেভ করা নাম্বারটা থেকে কল হাসতেই ইলিয়াসের মুখে হাসি ফোটে।স্যান্ডউইচটা প্লেটে রেখে কল রিসিভ করে।বাচ্চাটার ঠোঁট ফোলানো দৃশ্য ভেসে ওঠে।

—পাপাই,হোয়ার আর ইউ?জেনি মিস ইউ সো মাচ

জেনির ঠোঁট ফুলানো কথায় ইলিয়াসও মুখ চুপসানোর অভিনয় করে মাসুম চেহারা বানিয়ে বলে,

—বেবি পাপাই সরি।তুমি তো জানো পাপাই আন্টসকে নিতে এসেছে।তুমি আন্টসকে চাও না?

—হোয়ার ইজ মাই আন্টস?আই মিস হার ঠু ঠু ঠু মাচ।প্লিজ গিফ হার দ্যা ফোন।আই ওয়ান্ট টু টক টু হার।প্লিজ পাপাই

ইলিয়াস ঠোঁট কামড়ে হাসে।মেয়েটা একদম মায়ের কার্বন কপি হয়েছে।কথা মানাতে মায়ের মতোই মুচকি একটা হাসি দিয়ে তৎক্ষণাৎ গাল ফোলায়। ইলিয়াস মেয়েকে বলে,

—বেবি তোমার আন্টস তো এখন পাপাইয়ের সাথে নেই।আন্টস আসলে পাপাই তোমায় কল দিবে।ঠিক আছে?

—ওকে পাপাই।

—ওকে বেবি তাহলে পাপাই এখন রাখছি।তোমার কিন্তু এখন ডিনারের সময়। খেয়েদেয়ে ঘুমি দেও।পাপাই আন্টস আসলেই তোমায় জাগিয়ে তুলবে।

—প্রমিস?

—হুম,প্রমিস।

ইলিয়াস কল কেটে দেয়।ইলিয়ানা কল দিয়েছিলো।জেনির সাথে কথা বলায় কল রিসিভ করতে পারেনি।তাইতো তাড়াতাড়ি কল কেটে ইলিয়ানাকে কল দিলো ইলিয়াস।

ইলিয়ানা রুমে বসেছিলো।নুকতা পাশেই বসে বসে সাহিত্যের একটা বই পড়ছে।চোখে এখনই চশমা উঠেছে এই ছেলের।ইশ,কি পড়াকু বাচ্চা ভাবা যায়!ইলিয়ানা ভাইয়ের ফোন পেয়েই দ্রুত কল রিসিভ করে।

—ভাই কোথায় তুমি?তুমি কি আমার সাথে রাগ করে ফিরে গিয়েছো?

—তোমার সাথে রাগ করবো কেন?কি করেছো তুমি?

ইলিয়াসের গম্ভীর কন্ঠে আঁতকে ওঠে ইলিয়ানা।ভাই কি তবে অভিমান করেছে তার সাথে!ভয় জাগে মনে।ইলিয়ানা কেঁদে দেয়।বলে ওঠে,

—ভালোবাসা কি অন্যায়?তুমিও তো ভাবীকে ভালোবেসেই আগলে নিয়েছিলে‌।তাহলে আমার ক্ষেত্রে কেন তুমি অভিমানী হচ্ছো ভাই?কেন!ভাই আমি যে বড্ড ভালোবাসি তাকে।পুরো বারোটা বছর আমি তাকে ভালোবাসি ভাই।বারোটা বছর!প্লিজ ভাই অভিমান করো না।

ইলিয়ানার ভেজা কন্ঠ কর্ণকুহুরে যেতেই ইলিয়াস আর রাগ করে থাকার অভিনয় করতে পারে না।ফিচলে হেঁসে বলে ওঠে,

—পাগলী আমার!আমি কি বলেছি ভালোবাসা অন্যায়? ভালোবাসা পবিত্র একটা অনুভুতি।যা জন্মাবে কখন কার প্রতি তা বলা মুশকিল।তোমার প্রিয়তম যদি তোমার যোগ্য হয় তবে সতিই আমি তার হাতেই তোমাকে তুলে দিবো। বুঝলে?

—থ্যাঙ্কিউ ভাই।লাভ ইউ।

—লাভ ইউ টু মাই প্রিন্সেস।

ইলিয়ানা হাসে।ভাইয়ের সাথে আরো কিছু কথা বলা কলটা কেটে দেয়।ইলিয়াস ম্যারিও এর কথাগুলো জানায় না ইলিয়ানাকে। কেননা নয়তো ইলিয়ানা যে চিন্তিত হতো,ফ্যাছাদে জড়াতো। ইলিয়াসের ফোন রেখেই ইলিয়ানা হেঁসে ওঠে।

ইলিয়ানাকে কাঁদতে দেখে অদ্ভুত চোখে নুকতা তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।ইলিয়ানা ভাগ্নেকে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সত্যিই ওড পরিস্থিতিতে পড়ে যায়।সে তো ভুলেই গিয়েছিলো তার পাশে কে বসে আছে।রাহিদ মাত্রই এসে বসেছে।বাকি দুটো তমা ভাবীর পেছনে রান্না ঘরে।আর ইলমা আপু তারিফুজ্জামান দুলাভাইয়ের সাথে একটু বাইরে গেছে।

”কি এভাবে তাকিয়ে আছো কেন নুকতা?”

ইলিয়ানার কথায় নুকতার হেলদোল নেই।রাহিদের দিকে তাকিয়ে থেকে ধমক দিয়ে বললো,

—এই রাহিদ তোমার পড়াশোনা নেই?যাও বই নিয়ে এসো।মাম পড়াবে।যাও

রাহিদ ঠোঁট উল্টিয়ে চলে যায়।বের আটেকের বালক সে।রাহিদ যেতেই নুকতা ইলিয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো,

—মাম তুমি কি বোকা নাকি?

ইলিয়ানা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,—কেন?

—আরে মাম তুমি কেন অন্যদের সামনে কাঁদবে?অন্যদের সামনে কাদলে তো তোমার দুর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যাবে।

ইলিয়ানা ভাগ্নের কথায় হাসে।নুকতার চুলগুলো আরেকটু অগোছালো করে বলে,

—কান্না দূর্বলতা নয় বরং নিঃসঙ্গতা থেকে বেরোতে সাহায্য করে।কান্না সবাই করতে পারে না। বরং নিজের ইন্টার্নাল ক্রাইয়িংকে রুপ দিতে না পেরে ডিপ্রেশনে গিয়ে ঝুলে পড়ে।তারপর কি হয় নিশ্চই জানো?

—হুম।

—নুকতা ভাইয়া এই যে আমার ভাই…

ইলিয়ানা আর নুকতার কথার মাঝেই রাহিদ এসে উপস্থিত হয়।ছেলেটা ইলিয়ানার থেকে দূরে দূরেই থাকে। অবশ্য নতুন আত্মীয়ের সাথে মিশতেও একটু সময় লাগে। তবে নুকতা তো ইলিয়ানাকে সেই ছোট থাকতে থেকেই চিনে।তখন তো নুকতার বয়স তিন যখন ইলিয়ানা বাড়ি ছাড়ে!

ভোরবেলা থ্রিপিস পড়ে সুন্দর করে রেডি হয়ে নেয়।আজ একটু হসপিটালে যেতে হবে।আজ পেশেন্টকে ছুটি দেওয়া হবে।তাইতো আরো একবার রিচেক দিতে হবে এবং ইন্টার্নাল ইমপ্রুভমেন্ট কতটুকু তা জানতে একটা লাস্ট চেকআপ করতে হবে।

ডাইনিং টেবিলে রায়হান ভাই আর তারিফুজ্জামান ভাই খেতে বসেছে।বাচ্চারা এখনো ঘুম থেকেই ওঠেনি।ঠান্ডাটা আর নেই। প্রতিদিন রোদের দেখা মেলে সকাল হতেই।এসময় ইলিয়ানাকে তৈরি হয়ে ডাইনিং টেবিলে দেখে তারিফ দুলাভাই জিজ্ঞেস করে,

—শালী সকাল সকাল রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছো?

—এইতো ভাইয়া,তানহা হসপিটালে যাবো।পেশেন্টকে আর একবার দেখে ডিসচার্জ দিয়ে দেবো।

টেবিলে বসতে বসতে ইলিয়ানা বলে।তারিফ দুলাভাই হাসে।রায়হান ভাইয়ের মুখ দেখে বোঝা যায় না সে হাসছে নাকি রাগছে! অবশ্য রাগান্বিত হওয়ার মতো কোনো কথাই হয়নি এখানে।

আজ কোনো এক ডে হয়তো! সে দিনটাই উজ্জাবিত হচ্ছে। অবশ্য ইলিয়ানার মাঝে এই ডে গুলো তেমন প্রভাব ফেলে না।ইলিয়ানা রিক্সায় চড়ে সফিপুরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। সফিপুরেই তো তানহা হসপিটাল। অবশ্য বর্তমানে কলেজ শাখায় খোলা হয়েছে।আগে এতো কিছু ছিলো না।দশ বছরে অনেক কিছুই পাল্টেছে।

ইলিয়ানা জ্যামের মাঝে রিক্সায় বসে দেখতে থাকে বাইরের দিকটা। রাস্তাটা প্রশস্ত হওয়ায় বড় বড় গাড়িগুলোর যাতায়াত এখন এদিক দিয়েই প্রায়শই।

”আই লাভ ইউ ছোঁয়া ”

হঠাৎ এই ব্যস্ত সড়কে কথাটা শুনে এদিক ওদিক ইলিয়ানা তাকায়।রাস্তার একপাশে একটা ছেলে একটা মেয়ের সামনে বসে আছে।ইলিয়ানা দেখে।হয়তো কলেজের শিক্ষার্থী এরা।পোশাক দেখেই মনে হচ্ছে এরা কলেজের শিক্ষার্থী।

ইলিয়ানার ফোনটা বেজে ওঠে।ইলিয়ানাকে সেদিকে মন দিতে পারে না।ফোন রিসিভ করে জানতে পারে ডক্টর জোবেদা নাকি হসপিটালে এসেছেন আজ।ইলিয়ানার সাথে ডিনার ফিক্সড করেছেন। ইলিয়ানা কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাজি হয়। অবশ্য ইলিয়ানার ভুলু মন ভুলে গেছে তাকে সাহায্য করা ছেলেটার নাম!কি যেনো ছিলো নিউ ইন্টার্ন ডক্টরের নাম?

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে