#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [৬ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
দরিদ্র, ধনী, ছোট, বড় সকলের জন্য প্রতিদিন ২৩ ঘন্টা ৪৭ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড বরাদ্দ থাকে।
সময় আর স্রোত বহমান এরা কারোর জন্য অপেক্ষা করে না। নিজের মতো চলতে থাকে। ঘড়ির ব্যটারি ফুরিয়ে গেলে সময় থামে না মাঝে মাঝে কিছু মুহুর্তে মনে হয় সময়টা এখানেই থেমে যাক। কিছু সুন্দর মুহুর্ত চলে গেলে আপসোস হয় কেনো চলে গেলো সময়টা আর কি ফিরে পাওয়া যাবে না? সময়টা ধীরে গেলে কি হতো?
সাতদিন কেটে গেলো দেখতে দেখতে। জারা আগের থেকে এখন অনেক সুস্থ হয়ে গেছে। জারার মন খারাপ বাড়ছে। আজ সন্ধ্যায় শানের ফ্লাইট কতগুলো দিন, কতগুলো মাস, কতগুলো বছর দেখা হবে না শানের সাথে ভাবতেই জারার কান্না পাচ্ছে। শানের মা শান্তি শানের ব্যাগ গুছিয়ে দিতে লাগলো। জারা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে শান বিছানায় শুয়ে নিজের মতো ফোন টিপছে। শান আর জারার সাথে তেমন খারাপ ব্যবহার করে নি। কিন্তু জারা কোনো কাজে ভুল করলে শান জারাকে চোখ রাঙিয়েছে তাতে জারার অন্তর আত্না কেপে উঠেছে। শানের মা শানকে বিভিন্ন উপদেশ দিচ্ছেন কি করবে কি না করবে। কি খাবে কি খাবে না সব ডিটেইলসে বলে দিচ্ছে। মা তো ছেলের জন্য তো মন কাঁদে। নিচ থেকে শানের বাবা ডাকতেই শান্তি চলে গেলো নিচে। শান্তি যেতেই যারা জারা বলল
-‘ চলে যাবেন ভাইয়া? ‘
-‘ কেনো তুই জানিস না? কোন দেশে থাকিস তুই? ‘
-‘ নাহ। জানি ভালো থাকবেন ওখানে গিয়ে ‘
-‘ হ্যাঁ ওখানে গিয়ে ভালোই থাকবো তোকে ওতো জ্ঞান দিতে হবে না ‘
-‘ আমি জানি ভালো থাকবেন কেননা ওখানে তো আর আমি থাকবো না আমার মতো অলক্ষীর মুখ আপনাকে দেখতে হবে না আমি আর আপনাকে জ্বালাবো না ‘
শান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে জারার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল
-‘ আবার কোন নাটক শুরু করলি এগুলা? তোর এসব ড্রামা অন্য জায়গায় গিয়ে কর আমার চোখের সামনে থেকে যা ‘
জারা মলিন হেসে বলল
-‘ হ্যাঁ চলে যাচ্ছি আমার মুখটা আর দেখা লাগবে না আপনি ভালো থাকবেন আর আমি কোনো ভুল করে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন নিজের খেয়াল রাখবেন ‘
-‘ ওফ হোয়াট এ্যা জোস ডায়লগ? শেষ তাহলে এখন যা ‘
জারা মলিন হেসে শানের মুখোপানে কয়েক মিনিট তাকিয়ে বলল
-‘ আসি ‘
-‘ ওফ্ফ যা তো ‘
জারা ধীর পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসলো। চোখের পানিতে তার দুচোখ টলমল করছে। বুকে তার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে অস্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস চলছে। কান্না আর দমিয়ে রাখতে পারলো দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। ওপর ওয়ালার কাছে নিজের নামে অভিযোগ করছে।
-‘ কেনো আল্লাহ আমি যাকে মন থেকে এতো ভালোবাসি তাকে কেনো আমার থেকে বার বার দূরে সরিয়ে দাও আল্লাহ কি দোষ আমার আমার মা-বাবা কেও তুমি কেরে নিলে আমি মা-বাবাকে খুব মিস করি। আল্লাহ তুমি তো জানো এই বিশাল পৃথিবীতে একটা মেয়ে বাবা-মা ছাড়া কতটা অসহায়! আমার নিজেকে হেল্পলেস লাগে কষ্ট হয় খুব রাতে যখন ঘুম ভাংঙে আগের মতো আমার দুপাশে মা-বাবাকে দেখতে পাই না মা আমাকে আর বকে না বাবা আমাকে আদর করে মা বলে ডাকে না অফিস থেকে এসে কেউ আমাকে চকলেট দেয় না। আমি কষ্ট পেলে কেউ বুঝে না। আমার অভিমান দেখে আর বাবা কান ধরে সরি বলে না। আমি সবার চোখের বিষ সবাই আমাকে উপরে ফেলতে চাই শান ভাইয়া আমাকে কখনো মেনে নিবে না আমার মনে হয় তিনি আর দেশেই ফিরবেন না। ভালোবাসা কখনো জোর করে হয় না আর আমি চাইও না ভাইয়াকে একপ্রকার জোর করে বিয়ে করছি জোর করে সংসার তো আর করা যাবে না। মনির যদি কখন মনে হয় তিনি ভুল করেছেন তখন আমি কোথায় যাবো আমার তো যাবার জায়গা নেই। আল্লাহ তুমি আমার আম্মু আব্বুকে ফিরিয়ে দাও না গো আর কিছু চাই না আমি জানি এটা কখনোই সম্ভব নায় তবুও তুমি একটা ম্যাজিক করে দাও ‘
জারা আজ সারাদিন কারোর সামনে যায় নি সারাদিন খাইও নি। বাসার কারোরই জারার দিকে খেয়াল নাই সবাই শানকে নিয়ে ব্যস্ত শান চলে যাবে বলে আপসেট। সন্ধ্যায় শান্তি জারার রুমে এসে বলল
-‘ জারা রেডি হয়েছিস চল এখনি বের হতে হবে না হলে দেরি হয়ে যাবে ‘
জারা মলিন কন্ঠে বলল
-‘ মনি আমি যাবো না ‘
-‘ ওমা সে-কি যাবি না কেনো? শান চলে যাচ্ছে আর তুই যাবি না’
-‘ না মনি আসলে শরীরটা খারাপ লাগছে একটু রেস্ট নিলেই ঠিক হয়ে যাবো তোমরা যাও আমি যাবো না প্লিজ জোর করো না ‘
শান্তি জারার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
-‘ কান্না করছিস? মন খারাপ করিস না শান ফিরে আসলে তোদের ধুমধামে বিয়ে দিবো দেখিস’
জারা ছলছল চোখে তাকালো শান্তির দিকে শান্তি জারাকে বুকে আগলে বলল
-‘ এই পাগলী মেয়ে কাঁদছিস কেনো? আমি জানি তোর কষ্ট হচ্ছে ‘
-‘ মনি তোমার কখনো মনে হবে না তো তুমি ভাইয়ার সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে ভুল করছো?’
-‘ তোকে আমি সেভাবেই গড়ে তুলবো একদম আমার মনের মতো যাতে আমার কখনো এমনটা মনে না হয়’
-‘ আমার ভয় হয় আমাকে গড়ে তোলার আগে যদি তোমার কখনো মনে হয় তখন?’
-‘ তখন তুই আমাকে মনে করিয়ে দিস এই দিনের কথা এখন চল রেডি হয়ে নে এসব নিয়ে মন খারাপ করিস না পাগলী মেয়ে আমার ‘
-‘ আমি যাবো না মনি ভাইয়ার চলে যাওয়া আমি দেখতে পারবো না আমার কষ্ট হবে আমাকে জোর করো না প্লিজ’
শান্তি আর কিছু না বলে চলে গেলো। সবাই বাসা থেকে বের হলে জারা এক ছুটে ছাঁদে চলে এলো শানকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য। শান ব্ল্যাক জ্যাকেট ও প্যান্ট, ভিতরে সাদা টি-শার্ট, আর সাদা সুস, হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ, চুলগুলো বরাবরের মতো এলোমেলো। জারা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শানের দিকে এ তৃষ্ণা মেটার নয়। শান গাড়িতে উঠলো সাই সাই করে গাড়ি চলে গেলো। জারার আজ ভুতের ভয় করছে না। বুক ফেটে আসছে কান্না প্রিয় মানুষটও দূরে চলে যাবার কষ্ট। জারা পাগলের মতো কাঁদল ছাদে। সেই চোখের জলের সাক্ষী ওপর একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ হলো না। রুমে গিয়ে ডাইরি খুলে এলোমেলো অগোছালো শব্দ লিখলো হাত চলছে না চোখের পানিতে ঝাপছা দেখছে তবুও লিখল।
চলবে ইনশাআল্লাহ