অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব-০৫

0
1432

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [৫ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

গানঃ
আলো-আলো আমি কখনো খুঁজে পাবো না …
চাঁদের আলো তুমি কখনো আমার হবে না (২)
হবে না হবে না……

অন্তরিক্ষে নতুন চাঁদ ওঠেছে। বাতাসে বেলি ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ। চারিদিকে মিটমিটে আলোই সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। জারার রাতে ঘুম আসছিল না তাই ছাঁদে বেড়াতে এসেছিল। ছাঁদে যে শান ছিল সেটা জারা জানত না এসে দেখে শান রেলিং এর ওপরে উঠে বসে চোখ বন্ধ করে গান গাইছে। পাশেই ধোয়া ওঠা কফির মগ। জারা গান শুনতে শুনতে কখন যে শানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে জারা নিজেও জানে না। গান শুনতে শুনতে স্থির চোখে নিচ থেকে বেড়ে ওঠা বড় কাঠগোলাপ গাছের দিকে তাকিয়ে ছিলো গোলাপি রংয়ের ফুলটা টুপ করে পরতেই জারা দৌড়ে গিয়ে ফুলটা তুলে নিয়ে কানের পিটে গুঁজে দিলো। কাঠগোলাপ জারার বড্ড প্রিয় এবাড়িতে আসার পর থেকে প্রতিদিনই এই গাছ থেকে ফুল নিয়ে কানের পিটে গুঁজে। শান গান শেষ করে চোখ খুলে জারাকে দেখে রেগে গিয়ে বলল

-‘ তুই এখানে এতো রাতে কি করছিস? ‘

জারা চমকে গেলো। সে-তো ভুলেই গেছিলো শান এখানে আছে। জারা শুকনো ঢোক গিলে বলল

-‘ না মানে ভাইয়া ঘুম আসছিলো না তাই…. ‘

-‘ তাই? দেখতে আসছিস পাশের বাসার তোর প্রেমিক ছাদে আছে কি না থাকলে চুটিয়ে প্রেম করতি? ‘

জারা অবাক হয়ে গেলো শান কি বলছে তার কথা জারার বোধগম্য হচ্ছে না।

-‘ মানে কি বলছেন এগুলা? ‘

-‘ জানিস না কি বলছি না-কি জেনেও না জানার ভান করছিস ‘

জারা এবার ফুঁসে ওঠে বলল

-‘ আপনি সবসময় এমন করেন কেনো ভাইয়া ‘

-‘ গলা নিচে। আর কি করি তোর সাথে তুই কি মনে করিস আমি কিছু জানি না ছাদে পাশের বাসার ছেলেটা তোর দিকে তাকিয়ে থাকে আর তুই তাকে ভাব দেখাস ‘

জারা যেনো আকাশ থেকে টপ করে পড়লো অবাক গলায় বলল

-‘ কি বলছেন এগুলা আমি মটেও এগুলা করি না আর পাশের বাসায় যে কোনো ছেলে আছে এটাই জানি না ‘

-‘ তো কি করতে আসছিস তোর চেহারা দেখাতে যা এখান থেকে জানিস না রাতে ছাঁদে ভুত থাকে ‘

জারা ভয়ার্ত চোখে চারিদিকে অবলোকন করলো। শান আবার বলল

-‘ কি হলো যা রুমে যা ঘুম না আসলে পড়তে বস তোর না সামনে এসএসসি পরীক্ষা পড়াশোনা যা অবস্থা দেখছি তুই ফেল মারবি নিশ্চিত ‘

জারা ভয় পেয়ে ও বলল

-‘ তোমার সাথে আর একটু থাকি না ভাইয়া ‘

শান জারার মুখ পানে গভীর দৃষ্টি দিলো জারা শানের থেকে মুখ ফিরিয়ে বলল

-‘ ভাইয়া তুমি ভিনদেশে গিয়ে আমাকে ভুলে যাবে? আমার কথা তোমার একটুও মনে পড়বে না? ‘

-‘ কে তুই? তোর কথা ভেবে কেনো আমার মূল্যবান সময়টা নষ্ট করবো? আর আমি সেখানে পড়াশোনা করতে যাচ্ছি তোর মতো আমার কাছে ফাও সময় নাই বুঝলি? ‘

শানের কথা শুনে জারার ছোট মনটায় বড্ড অভিমান জমলো। শান অবলিলায় কোনো কিছু না ভেবে কত সহজে কথাগুলো বলে দিলো অভিমানে জারার কান্না পেলো কিন্তু সে কাদলো না। এক বুক অভিমান নিয়ে অভিমানী কন্ঠে বলল

-‘ ভিনদেশে গিয়ে সাদা চামড়ার মেয়ের প্রেমে পড়বেন? তারা তো অনেক সুন্দর দেখতে ‘

শান ভ্রু কুচকে ঠোঁট কামড়ে ধরে কি জেনো ভেবে বলল

-‘ কাউকে ভালো লাগলে প্রেমে পড়তেই পারি এটা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়! ‘

জারা ছোট করে বলল

-‘ ও আচ্ছা আপনি থাকেন আমি যায় ‘

কথাটা বলে হাটা দিলো শান ও জারার পিছে পিছে গিয়ে বলল

-‘ আর ইউ জেলাস? ‘

-‘ কেনো আমি আপনার কে যে জেলাস হবো? ‘

-‘ জেলাস হওয়ার মতোই কেউ একজন ‘

জারা তাড়াতাড়ি করে শিড়ি দিয়ে নামতে গেলে অন্ধকারে পা পিছলে যায় শান বুঝতে পেরে হাতে থাকা চায়ের কাপটা ছেড়ে দিলো সেটা পড়ে ঝনঝন শব্দ তুলে ভেংগে গেলো শান জারাকে দুহাতে আগলো নিলো। জারা তো ভয়ে শেষ চোখ বন্ধ করে ভাবল আজ-ই শেষ দিন কিন্তু কোনো ব্যাথা না পেয়ে চোখ খুলে দেখলো শান জারার খুব কাছে জারা শানকে ছেড়ে কয়েক শিরি দূরে দাঁড়ালো শান ধমকে উঠে বলল

-‘ এভাবে দৌড়া ছিলি কেনো? এখনি তো পড়ে যেতিস! ‘

-‘ আ আমি আসলে বুঝতে পারি নি ‘

-‘ তুই কখনো কিছু বুঝতে পারিস না জানিস না তাহলে কি পারিস? কি জানিস? যা রুমে যা আর কখনো যেন রাতের বেলা ছাদে না দেখি ‘

শানের ধমকে জারা ভয়ে দৌড় দিল শান কিছু বলতে গিয়েও বলল না।

_________________

সকালে জারার শরীর এখন দূর্বল থাকায় মনি জারাকে স্কুলে যেতে দিলো না। জারা স্কুলে যাবে না দেখে ইশা বলল

-‘ আমিও তাহলে আজ স্কুলে যাবো না ‘

জারার মুখে হাসি ফুটলো। সারাদিন বসে না থেকে তো বকবক করার মানুষ হলো কিন্তু পরক্ষণেই জারার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো শানের কথা শুনে

-‘ তুই স্কুলে যাবি না কেনো? তুই ওর মতো রুগী হয়ে গেছিস? ‘

-‘ একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবি না ভাইয়া। এমনিতেই ভালো লাগছে না যেতে প্রতিদিনই তো যায় আজ না গেলে কিছু হবে না ‘

-‘ ফাঁকিবাজ আমি প্রতিদিন ই স্কুল কলেজে যেতাম তোদের মতো ফাঁকি দিতাম না ‘

-‘ হ্যাঁ তুমি প্রতিদিন ই যেতে কিন্তু পড়াশোনা করতে না মারপিট করতে দুষ্টুমি করতে ‘

ইশা শব্দ করে খিলখিল করে হাসলো। জারা মুখটিপে হাসলো।

-‘ আম্মুউ। তোমার মেয়ের না সামনে জেএসসি পরীক্ষা আর জারা না সামনে সামনে এসএসসি পরীক্ষা তো তুমি ওদের লাই দিচ্ছো আবার আমার নামে বদনাম গাচ্ছো

-‘ বদনাম গাইলাম কই যেটা সত্যি সেটাই বললাম ‘

-‘ তোমার মেয়ে ফাজিল এটা নিয়ে সারাক্ষণ কানের কাছে প্যান প্যান করবে কার ভালো লাগে প্যান প্যান শুনতে’

-‘ কি আমি কি করি? গুন্ডা ছেলে ‘

-‘ দেখছ আম্মু? ‘

শান্তি হাসলেন কিছু বললেন না কতদিন পরে এমন হাসিখুশি দেখলেন ছেলেকে। ক’দিন পরে ছেলে পারি দিবে দূর দেশে ভাবতেই চোখে পানি চলে এলো। কিভাবে থাকবে তার ছেলেকে ছেড়ে? কখন তো এতোদিন ছেলেকে ছাড়া থাকেনি।

চলবে ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে