#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [৩ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
সকাল ৬ঃ৪৫ মিনিট চারিদিকে বৃষ্টির প্রবল বাতাসে সব লন্ড ভন্ড এই সকালে যারা রাস্তায় ছিল সবাই আশ্রয় নিলো কোনো না কোনো ছাওনির নিচে। টুপটাপ বৃষ্টি আর ঝড়োবাতাসে জারার দেহ ছুয়ে গেলো মন অব্দি আর পৌঁছাতে পারলো না। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে হাঁটতে হাঁটতে কাক ভেজা হয়ে পৌঁছে গেলো কোচিং-এ বসে পরলো পিছনের বেঞ্চে নতুন কোচিং নতুন স্কুলে জারার এখনো ভালো কোনো ফেন্ড হয়নি প্রয়োজনে টুকটাক সকালে সাথে কথা বলে। আসার সময়ও সেকি বৃষ্টি। বৃষ্টি জারাকে দমাতে পারলো না আগের মতোই এবারও কাকভেজা হয়ে বাড়িতে ফিরলো। বসার রুমে কাউকে দেখতে না পেয়ে রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে হেয়ারড্রাইয়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে বাইরে আসলো। বড়মামা খেয়ে চলে গেছে তারা নিজেদের মতো ঘুরতে কিংবা খালুর সাথে অফিসে এখন বাড়ির ছেলেমেয়েরা খাচ্ছে। জারাকে দেখে শান্তি বলল
-‘ জারা আয় বস খেতে নে। কখন ফিরলি?’
জারা চেয়ার টেনে বসতে বসতে কন্ঠ সর খাদে নামিয়ে মলিন কন্ঠে বলল
-‘ একটু আগে’
জারার ছোট মামা জারাকে ডেকে উঠে বলল
-‘ জারা মা এদিকে আয় তো’
জারা উঠে মামার কাছে গেলো মা-বাবার পরে জারাকে তার মামা আর মনি বেশি ভালোবাসে। জারাকে নিজের পাশে বসিয়ে মাথা হাত বুলিয়ে আস্তে আস্তে বলল
-‘ তোর চোখ দুটো ফোলাফোলা কেনো রাতে ঘুমাস নি না-কি ভালো ঘুম হয়নি কোনটা’
-‘ কোথায় মামা তুমি চোখে বেশি দেখছ’
-‘ আচ্ছা শোন আজ-ই তো আমরা সবাই মিলে খুলনায় রওনা দিচ্ছি তোর হাতখরচের টাকা আমি এসে এসে দিয়ে যাবো বুঝলি কাউকে বলার দরকার নাই নিজের মতো খরচ করবি যা মন চাই তাই করবি ঘুরবি দেখবি মন ভালো থাকবে’
-‘ না মামা আমার লাগবে না আর যা লাগবে সবই আছে আমার জন্য অযথা কেনো খরচ করবা বলতো এমনিতেই অনেক খরচ হচ্ছে আমার জন্য তোমাদের’
-‘ এক চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো তোমার বেশি বড় হয়ে গেছ তুমি? আমাদের কথার কোনো দাম নাই তোমার কাছে?’
জারার বলতে ইচ্ছে করলো “তোমাদের কথা মতোই তো বিয়ে করলাম এখন দেখ আমি তার জীবনে বিষকাটা সে আমাকে উপড়ে ফেলতে চাই আমি ও চাই”
-‘ কি হলো মেয়েটাকে বকছ কেনো? কি হয়েছে?’
জারা আর জারার ছোটমামা চমকে উঠল। ছোট মামা ভালোবাসলেও মামি সুবিধার নয়। জারা হেসে বলল
-‘ কিছু না মামি ঔ নতুন স্কুলে কি করবো কেউ কিছু বললে কিভাবে উত্তর দিবো সেটা শিখাচ্ছিল’
-‘ কেনো জারা ছোট না-কি ও এখন যথেষ্ট বড় হয়েছে যথেষ্ট বুদ্ধি-জ্ঞান আছে তুমি এসব উল্টো পাল্টা শিখিয়ে ওর মাথা বিগড়ে দিও না’
মামা বলল
-‘ আচ্ছা যা খেয়ে নে সকাল থেকে তো কিছু খাস নি যা খেয়ে নে’
মামি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে চলে গেলো। জারা বুঝলো মামি কিছু আচ করতে পারছে বাসায় গেলে মামা মামির ঝ-গ-ড়া লাগবে ভেবেই জারার মন খারাপ হলো তবুও মামাকে কিছু বলল না জানে বলে কিছু লাভ হবে না মামা টাকা দিবে বলেছে তখন দিবেই।
সবাই টুকটাক কথা বলল। শান এতোক্ষণ চুপ থাকলে-ও এখন গম্ভীর কন্ঠে শান্তিকে উদ্দেশ্য করে বলল
-‘ আম্মু আমার ১ সপ্তাহ পর ফ্লাইট’
-‘ সেকি এতো তাড়াতাড়ি? ‘
-‘ যত তারাতাড়ি যাওয়া যায় ততোই ভালো। ‘
কথাটা বলে শিরি দিয়ে উঠার সময় জারাকে উদ্দেশ্য করে বলল
-‘ জারা রুমে আয় কাম ফাস্ট’
শান কথাটা বলে চলে গেলো। জারার গলায় খাবার বেঁধে চোখে পানি চলে এলো মনি জারাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো। শান্তি জারার পাশ থেকে সরতেই সব কাজিন সার্কেলরা মিলে জারাকে পচাতে লাগলো। জারা অবশ্য এসবে লজ্জা বা হাসি পাচ্ছে বা তবুও মলিন হেসে খাবার ছেড়ে উঠে পরলো।
শানের রুমের দরজায় দুরুদুরু বুকে টোকা দিয়ে কাঁপা গলায় বলল
-‘ আসবো?’
ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে জারা দরজায় মোচড় দিয়ে দরজা খুলে রুমের ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখলো কেউ নেই। দরজা খুলে রুমে ডুকে ওয়াশরুমের দরজা দেখলো নাই ফিরে যাওয়ার জন্য দরজার কাছে আসতেই বেলকনি থেকে শান এসে বলল
-‘ কোথায় যাচ্ছি?’
জারা দাঁড়িয়ে গেলো। পিছনে ফিরে মাথা নিচু করে বলল
-‘ না মানে আপনাকে দেখতে না পেয়ে চলে যাচ্ছিলাম’
শান জারাকে দরজার কাছ থেকে সরিয়ে দরজা লক করে জারাকে দরজার সাথে দু’হাতে আটকিয়ে বলল
-‘ আজ সকালে কই গিয়ে ছিলি?’
জারা ভয়ার্ত চোখে বলল
-‘ ক কো চিং এ’
-‘ ও রেলি? তুই পড়াশোনা করতে যাস না-কি নিজের শরীরের প্রতিটা ভা’জ রাস্তার লোককে দেখাতে যাস?…’
শানের ধমকে জারা কেঁপে উঠলো। শান আবার বলল
-‘ এই বাড়িতে ন-ষ্টা-মি চলবে না। আমার বাবার একটা সম্মান আছে আর তোর মেয়ের জন্য তার সম্মানে এতটুকু আ’ঘা’ত লাগুক সেটা আমি চাই না? আর আমি বেশ বুঝতে পারছি আমি না থাকলে তুই কি কি করতে পারিস। মাথায় রাখবি তুই এই বাড়ির বউ। আমি যদি এদিক থেকে ওদিকে কিছু শুনছি তোকে নিজের হাতে খু-ন করবো মাইন্ড ইট ‘
“তুই এই বাড়ির বউ” জারার কানে বার বার প্রতি ধ্বনি হয়ে বাজতে লাগলো। ওখানেই আটকে রইল আর কিছু মাথায় ডুকলো না। শান সরে যেতেই শান বলল
-‘ গেট আউট’
জারা ধীর গতিতে বেড়িয়ে এলো। নিজের রুম থেকে সারাদিন আর বের হলো না খাবারটাও রুমেই খেলো।
★
কাঠফাটা রোদের দিনে অর্ধেক স্কুল করে বাসায় আসলো জারা স্কুলের হেডটিচার শানের বাবার বন্ধু হওয়ায় আগে থেকে বলে রাখা জারার প্রয়োজনে। শরীরটা ভালো না তার শরীর ম্যাজম্যাজ করছে। শাওয়ার নিয়ে বসার রুমে আসলো কালকে মামারা চলে যাবার পর থেকে বাসাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ফ্রিজ খুলে দেখলো কি কি আছে। ফল, চকলেট, জুস, কোল্ডিস…. ইত্যাদি জারার কিছু খেতে ইচ্ছে করলো না। শান পানির গ্লাসটা শব্দ করে টেবিলে রেখে বলল
-‘ তোর শাস্তি তুই এখন থেকে আমি যখনক্ষণ না তোকে নিচে আসতে বলবো ততক্ষণ তুই ছাদে ঠিক মাঝক্ষানে দাঁড়িয়ে থাকবে’
-‘ এ এই র রোদে?’
-‘ তোর শাস্তি’
-‘ ক কিসের শা শাস্তি?’
-‘ কালকে বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় আসার শাস্তি তখন দিতে পারি নাই বাসাই সবাই ছিল বলে বাট এখন কেউ তোকে এই শাস্তির হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না’
জারা ভয় পেলো। শান আবার বলল
-‘ খালি পায়ে কিন্তু নো শিলিপার…. কি হলো এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো না গেলে বল অন্য কিউট কিউট শাস্তি দি’
-‘ না না যাচ্ছি’
চলবে ইনশাআল্লাহ