অনুভূতি | অনুগল্প

0
3334

#অনুভূতি

অনুগল্প

urme prema (sajiana monir )

আফরাজ খাঁন আরসাল । এই নামটাই যথেষ্ট আমার শরীরের কম্পন উঠানোর জন্য । কি ভাবছেন ? ভয়ে ? উহু ,একদম না ।
এই কম্পন প্রেমের , ভালো লাগার অসয্য অনুভূতির !
আমার বাবার একমাত্র বন্ধুর ,এক মাত্র সন্তান আরসাল ভাই । খুব মেধাবী আর দেখতেও মাশাল্লা খুব হ্যান্ডসাম । তার উপর আবার হবু ডক্টোর ,আহা ! আর কি প্রয়োজন ?
আমার মামাতো ফুফাতো খালাতো চাচাতো বোনদের ক্রাশ উনি । বড় ছোট নেই আরসাল বলতেই তারা অজ্ঞান । আর আমার ? আমার কাছে তো স্বপ্নের রাজকুমার । যখন থেকে ভালোবাসা কি জেনেছি তাকেই ভালোবেসে গেছি । কিন্তু সে ? আমার দিকে তাকানোর ও প্রয়োজন মনে করে না । কেন আমি কি দেখতে এতই বাজে ? কিন্তু সবাই যে বলে আমি নাকি মমের পুতুলের মত ! তবে কি সবাই মিথ্যা বলে ? কিন্তু তা কি করে হয় !
আমার এই পুতুল নামটা তো তারই দেওয়া । রিদ্ধি আপুর থেকে শুনেছি আমি যখন ছোট ছিলাম উনি আমাকে পুতুল বউ বলে ডাকতো । বলতো “আমি বড় হলে সায়রা কে বিয়ে করবো ,সায়রাই আমার লাল টুকটুকে পুতুল বউ হবে । “
কিন্তু এখন?? বিয়ে তো অনেক দূরে থাক আমার দিকে তাকায় না পর্যন্ত ।
শুধু তাকে এক পলক দেখার জন্য পুরো বিশ মিনিটের রাস্তা ঘুরে তার হসপিটালের সামনে দিয়ে ভার্সিটি তে যাই । যদি এই সুযোগে ডাক্টার সাহেবের মুখ দর্শনের সৌভাগ্য হয় !
মাঝেমাঝে দেখা হতো আবার কখনো হতো না । যেদিন দেখা হতোনা সেদিন মনে হতো দুনিয়ার সব কষ্ট যন্ত্রণা হতাশা সব আমাকেই ঝেঁকে বসেছে ।
উনার তীক্ষ্ণ চাহনি আমার বুকে প্রেম বানের মত লাগে । তা উনি কি বুঝে ? বুঝবে কি করে ? আমার দিকে ভালো করে তাকালে তো বুঝবে ।
এই তো সেদিন তার জন্মদিনে এত সুন্দর করে শাড়ী পরে সাজগোজ করে তার সামনে গিয়ে মিষ্টি হেসে বললাম “শুভ জন্মদিন ভাইয়া !
কেমন আছেন ? ”
আর উনি কি করলো ? আমাকে উপর থেকে নিজ পর্যন্ত স্কেন করে চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে চলে গেল । এমন ভাব করলো , যেন আমাকে চিনেইনা । এই প্রথমবার আমাকে দেখছে ।
তার সবার সামনে এভাবে ইগনোর করাটা আমার ইগোতে খুব লাগে । খুব বেশিই লাগে ।পাশে তাকিয়ে দেখি কয়েকজন আমার দিকে তাকিয়ে হাসা হাসি করছে । বেশ অপমানবোধ হচ্ছিলো ।চোখে জল এসে ভিড় করে । আর একমিনিটও সেখানে থাকি না ।অসুস্থতার বাহানা দিয়ে বাড়িতে চলে আসি ।
বাড়ি এসে খুব কান্না করি । সে নিজেকে কি ভাবে ? কোনো রাজ্যের রাজা ? আমি তাকে ভালোবাসি বলে আমার কোনো মূল্য নেই ? আমার পিছনেও ছেলেদের লাইন লাগে । আমার জন্য ও অনেক ছেলে পাগল । দুনিয়াতে কি উনি একা ছেলে নাকি ! আর ছেলে নাই ?
আমিও মনে মনে কঠোর প্রতিজ্ঞা করলাম আজকের পর তার পিছনে আর ছুটবো না । মনের মধ্যে খোদাই করে লিখে নিলাম আজকের পর থেকে শুধু তাকে ই- গ- নো- র (ইগনোর ) করবো । ভুলে যাবো এই নামের কাউকে চিনি ।
সেদিন রাতে পার্টি থেকে সবাই ফিরতেই জানতে পারি । বড় ফুপি তার বড় মেয়ে রুপ্সার জন্য । আরসাল ভাইয়ার বাড়ীতে বিয়ের প্রপোজাল পাঠিয়েছে । আঙ্কল আন্টি বলেছে আরসাল ভাইয়ের সাথে কথা বলে জানাবে । আপু আর ফুপি খুশি তে গদগদ করছে ।
যাক ভালোই হয়েছে এবার তার থেকে দূরে সড়ে যাওয়া আরো সহজ হবে ।আরসাল ভাইয়া কিছুদিন পর ডাক্তার হয়ে বের হবে আর এদিকে রুপ্সা আপুও মেডিকালে পড়ছে । দুজন কে বেশ মানাবে ।
তারপর থেকে তাকে ইগনোর করা শুরু করি । নিজের মূল্যহীন আবেগ গুলোকে সিন্দুক বন্ধী করে দেই । তার ভাবনা থেকে দূরে থাকতে । নিজেকে ব্যস্ত রাখতে শুরু করি । গভীর ভাবে পড়াশোনায় ডুবে যাই ।কোনো না কোনো ভাবে নিজেকে ব্যস্ত রাখি ।
আরসাল ভাইয়ের নাম শুনলেই দশ হাত দূরে ভাগতে লাগি । এমন করে তিন মাস কেটে যায় । এই তিন মাসে তিনি অনেক বার আমাদের বাড়ি তে এসেছে । আমি এক বারের জন্যও তার সামনে যাই নি !
মা এসে ডাকাডাকি করতো। আমি বের হতাম না । আমি খুব শক্ত গলায় বলতাম “আমি এখন ব্যস্ত ,পড়াশুনা করছি । আমার সময় নেই”
মা আমার জবাবে রেগে আপন মনে বকতে বকতে চলে যেত ।
এই তিন মাসে নিজে কে শক্ত করে নিয়েছিলাম । বার বার মনকে এই বলে সান্তনা দিতাম “সে আমার জন্য নিষিদ্ধ ! রুপ্সা আপুর হবু বর ,অন্য কারো সম্পদ । আর অন্যের সম্পদে নজর দিতে নেই । ”

এই তো সেদিন বাবা মায়ের রুমের সামনে দিয়ে আসার সময় শুনি ,আরসাল ভাইয়ের বাড়ী থেকে খুব তাড়া দিচ্ছে বিয়ের জন্য । কিন্তু বাবা বলেছে মেয়ের পড়াশুনা শেষে বিয়ের কথা আগাবে ।
তার মানে রুপ্সা আপুর পড়াশুনা শেষ হলেই তাদের বিয়ের কথা আগাবে !
বুকটা চিনচিন করে উঠে ।চোখ ভিজে এলো । খুব রাগ ,জেদ , অভিমান হচ্ছে ! কিন্তু তা কিসের উপর করবো বুঝতে পারছি না ।
নিজের উপর করবো ? নাকি ভাগ্যে আর আরসাল ভাইয়ের উপর করবো !!!

সেদিন রাতে কাদি । খুব কাদি । নিদ্রাহীন আর একটা রাত পাড় করি ।
আজ তিন দিন পর ভার্সিটি যাচ্ছি সামনে এক্সাম ।নোট কালেক্ট করতে হবে ।ক্লাস শেষে ডিপার্টমেন্ট এর বড় ভাই তপন ভাইয়ের সাথে দেখা । নোট কালেক্ট করতে তিনি বেশ সাহায্য করেছে । উনার সাথে কথা বলতে বলতে গেটের সামনে আসতেই ,কেউ তড়িৎ বেগে ছুটে এসে আমার হাত চেপে ধরে ।আমি কিছু বুঝার আগেই । তপন ভাইয়ের গালে দু- তিনটা থাপ্পড় পড়ে গেছে । সামনে তাকিয়ে দেখি আরসাল ভাই তপন ভাইয়ের কলার চেপে ধরেছে । চোখে মুখে ভয়ংকর রাগ ।আমি সামনে এগিয়ে ছাড়াতে গেলে উনি গর্জন করে উঠে । বড় বড় চোখ করে ,আগুনের গোলা আমার দিকে নিক্ষেপ করে ।
আমি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলি ।
উনি তপন ভাইয়ার কলার চেপে ধরে ভয়ংকর রাগি গলায় বলে

– আরসাল খাঁনের জিনিসে নজর দেওয়া ? আজকের পর থেকে যদি ওর আসে পাশেও দেখি খুন করে ,গুম করে দিবো ।
মাইন্ড ইট ।

তপন ভাইকে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দেয় । তপন ভাই নিচে পরে যায় । উনি আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে ।টেনে গাড়ি তে নিয়ে যায় ।আমি হতভম্ব হয়ে আছি । কোন প্রকার প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতা আমার মাঝে নেই । হ্ঠাৎ উনার এমন ব্যবহারে আমি অবাকের শীর্ষে ।
উনার চোখে মুখে ভয়ংকর রাগ। মাথার চুল গুলো এলোমেলো । হাত কেটে তা থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে ।দেখে মনে হচ্ছে কিছুক্ষন পূর্বেই কেটেছে । কিন্তু সে দিকে তার কোন ধ্যান নেই । উনি ভয়ংকর রেগে গাড়ি চালাচ্ছে । কখনো উনাকে এতটা রাগতে দেখিনি ।
আজ উনাকে ডাক্টার কম গুন্ডা বেশি মনে হচ্ছে ।উনার যে এমন একটা রূপ আছে ,আমার তো জানাই ছিলোনা।!
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি কালো মেঘ ঝমেছে । মনে হচ্ছে প্রচন্ড বৃষ্টি হবে ।অনেক্ষন নিরবে কাটিয়ে ,অনেকটা সাহস জুটিয়ে আমি মুখ খুললাম,

– আরসাল ভাই ,আমরা কোথায় যাচ্ছি ?

আমি কথাটা শেষ করতেই উনি আমার দিকে তার অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন । যে এই আমি কথা বলে ভয়ংকর কোন অপরাধ করে ফেলেছি ।
উনি ঝাঁজালো কন্ঠে বলল

– এই মেয়ে ভাই কি ? হ্যা ?

আমি উনার দিকে ছোট ছোট চোখ করে আহত গলায় উত্তর দিলাম

– ও মা ,ভাই মানে ভাই আর কি ! দুদিন পর রুপ্সা আপুর সাথে আপনার বিয়ে তো আপনাকে ভাই বলেই তো ডাকবো । তাই না ?

উনার গম্ভির আওয়াজ

– না ভাই বলে ডাকবি না । দুনিয়ার সবাইকে বোন মানতে পারবো তোকে না ।

উনার কথায় আমি আরো আহত হলাম । কি চায় উনি ? আমি কি এতই খারাপ যে আমাকে বোনও মানতে পারবে না ? অবশ্য উনার বোন হওয়ার আমার ও কোনো শখ নেই । আমি তো জাস্ট ফ্ররমালিটির জন্য বলছিলাম । হুহ, সে না মানলে নাই ।
কিছুক্ষণ পর উনি গাড়ি থামায়।আসে পাশে কোন মানুষজন নেই একদম নির্জন জায়গা । আমি একটা ঢোক গিলে উনার দিকে তাকাই । উনি আমার দিকে ঘুরে খুব স্বাভাবিক ভাবে বসে আছে।উনার শান্ত চাহনি স্পষ্ট বলে দিচ্ছে । এই শান্তি কালবৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাস ।
আমি ভয়ে ভয়ে বলি ,

– এটা কোথায় ? আমি বাড়ি যাবো !

উনার সোজাসুজি কথা ,

– গত তিন মাস ধরে আমাকে ইগনোর করছিস কেন ? নতুন কাউকে পেয়েছিস ?

– আমার ইগনোরে আপনার কোন কিছু আসা যাওয়ার কথা না । আর তা ছাড়া এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত ব্যপার আমি কার সাথে কেমন ব্যবহার করবো । কাকে ইগনোর করবো কাকে করবোনা !

উনি আমার বাহু শক্ত করে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে চিৎকার করে বলেন ,

– খুব কথা শিখেছিস ,পাখা গজিয়েছে তাই না ? আমাকে ইগনোর করা ? দাড়া তোর পাখা ছাটানোর ব্যবস্থা করছি ।

উনার বেশ অবাক হলাম । পরক্ষনেই শক্ত গলায় বললাম ,

– আপনার আমাকে নিয়ে না ভাবলেও চলবে আরসাল ভাই । আমাকে নিয়ে ভাবার মত লোক আছে ।

উনি কটকট গলায় বললো

– কে আছে ? ওই তপন ?

উনার কথায় এবার মাথা বিগড়ে যায় । নিজের রাগ চেপে রাখতে পারি না ,

– হ্যা ,তপন ভাই । আপনার কোনো সমস্যা ? আপনি হ্ঠাৎ আমার লাইফে ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছেন কেন ।
আমি কার সাথে কি করবো না করবো তা সম্পূর্ন আমার ব্যপার ।আপনার আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না।

আমি কথা শেষ করতে না করতে ,উনি তড়িৎ গতিতে আমার কাছে আসে । আমার দুগাল শক্ত করে চেপে ধরে । আমার অধর জোড়া নিজের অধরের মাঝে নিয়ে নেয় ।গভীর ভাবে চুমু দিতে লাগে ।আমি হতবাক হয়ে বসে আছি । চিন্তা শক্তি হারিয়ে ফেলেছি । কি থেকে কি হলো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।শুধু বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে ছিলাম । আস্তে আস্তে তার স্পর্শ গুলো আরো গভীর থেকে গভীরতম হচ্ছিলো । প্রথমে রাগের বসে স্পর্শ করলেও এখন যেন উনি নেশায় পড়ে গেছেন ।
যেন হাজার বছরের নেশা মেটাচ্ছে !
আমি তখনো রোবটের মত হয়ে আছি । চোখ থেকে শুধু পানি ঝড়ছিলো । বেশ কিছুক্ষন পর উনি নিজের থেকে সরে যায় ।আমি মাথা নিচু করে মুখ চেপে কান্না করছি । বাহিরে মুষল ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে । যেন আমার সাথে প্রকৃতি ও কাদচ্ছে ।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে তখনো তার দৃষ্টি নেশাগ্রস্ত ।যেই চোখ জোড়ায় ছিলো ভয়ানক নেশা ।
হ্ঠাৎ উনি আমার কাছে এসে আমার চুলে গুলো কানের পিছনে গুজে দিতে দিতে বললেন ,

– ডোন্ট ডেয়ার টু সে ইট এগেইন ।ইউ ডোন্ট নো হাও ট্যারিভ্যাল দ্যা রেজাল্ট ক্যান বি !
এখন থেকে চব্বিশ ঘন্টা আমার নামে যব করবে কেমন?

তার কথায় রাগ ছিলো ? প্রেম ছিলো? কি ছিলো আমার জানা নাই !
আমি রেগে সরে যেতে নিলে উনি আমাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে । কপালে নিজের অধর জোড়া ছোঁয়ায় । তার বুকে ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে দেই । জানালার সাথে ঘেষে বসে কান্না করতে লাগি । উনি বেশ কিছুক্ষণ আমার দিকে শান্ত দৃষ্টি তে তাকিয়ে থেকে। গাড়ি স্টার্ট দেয়।
উনি কেন আমার কাছে আসছে ? কি চায় উনি ? কিছুদিন পর তার সাথে রুপ্সা আপুর বিয়ে আর এখন উনি এসব করছে । খুব কষ্ট হচ্ছে।আমি তো বেশ নিজের মনকে সামলিয়ে নিয়েছিলাম । তবে সে কেন ফিরে আসলো ? বুকের মাঝে আবার ঝড় হাওয়া তুলে দিলো । সে তো খুব ভালো থাকবে । রুপ্সা আপুর সাথে নিজের নতুন জীবন শুরু করবে । আমার কি হবে ? তার এই স্পর্শ যে আমার কামনা বাসনা লোভ বাড়িয়ে দিয়েছে । এখন আমার কি হবে ? কি করে তার এই স্পর্শ ভুলবো ।
এইসব ভেবেই বুক ফেটে কান্না আসছে ।চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করছে ।

গাড়ি থামতেই আশেপাশে না তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ি ।একবারের জন্যও পিছনে তাকাই না । সরাসরি নিজের রুমে চলে যাই । সারাদিন নিজেকে ঘর বন্ধী করে রাখি । মা এসে কয়েকবার ডেকে যায় । কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ করিনা।
পরের দিন সকালে মা- বাবা কে বলে নানু বাড়ি তে চলে যাই ।পুরোপুরি ভাবে সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই । সাতদিন কেটে যায় । এর মাঝে একদিন মা নানুর মোবাইলে ফোন করে ।আমি ফোন রিসিভ করতেই মা বললেন ,

– সায়রা তুই বাড়ী তে ফিরবি কখন ? এদিকে আরসালের বাড়ি থেকে বিয়ের

মা কে কথা শেষ করতে না দিয়ে বললাম

– আরসাল ভাইয়ের বাড়িতে বিয়ে টিয়ে নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই । আমার শান্তির প্রয়োজন । যেদিন ভালো লাগবে সেদিন বাড়ি ফিরবো ।

বলেই ফোন কেটে বন্ধ করে দেই । আজ শুক্রবার হ্ঠাৎ নানুর চিৎকার চেঁচামেচী তে সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যায়। নানু আতংকিত কন্ঠে বললেন ,

– এই মাইয়া উঠ । তাড়াতাড়ি তৈরি হইয়া বাড়িতে লো । তোর দাদীর শরীর ভালা না ।

ঘুম থেকে উঠার পর এমন কথা শুনে মাথা হ্যং হয়ে যায় । কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে বেড়িয়ে পড়ি ।
বাড়ির তে ডুকে এত লোকজন দেখে কলিজা ছেদ করে উঠে । আবার কোনো অঘটন ঘটেনি তো ?
ধীর পায়ে ভিতরের দিকে এগিয়ে যাই । ভিতরের দিকে যেতেই আরেক দফা ধাক্কা খাই । পুরো বাড়ি ভরা মানুষ । দাদী একদম সুস্থ । সবার সাথে কথা বলছে ।
আর হল রুমের বড় সোফার মাঝামাঝি তে আরসাল ভাই বসা বরের বেসে । তার সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ ফিরিয়ে নেই । এমন সময় মা টেনে ভিতরে নিয়ে যায় । আমি তখনো ধ্যানে । মায়ের কথায় ভাবনা জগৎ থেকে ফিরে আসি ।
মা বললেন ,

– এ কেমন কথা ? অল্প একটু কারনে কেউ এমন রাগ করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় । ছেলেটা না হয় ব্যস্ততার জন্য সময় দিতে পারেনা তাই বলে এভাবে সম্পর্ক ভেঙে ফেলবি । ইচ্ছে তো করছে ঠাটিয়ে দুটো দিতে ।

আমি মায়ের কথায় হা করে আছি কি বলছে কিছুই বুজে উঠতে পারছি না। সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি মায়ের দিকে জিগীষু দৃষ্টি তে তাকিয়ে বলি ,

– এসব কি বলছো মা ? কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক ভেঙেছি ?

মায়ের কঠোর কন্ঠে উত্তর ,

– নেকা সাজা হচ্ছে ? যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানিস না । আরসালের কথা বলছি । তোদের সম্পর্কের কথা বলছি । তুই কি ভাবেছিস আমরা কিছু জানিনা ?

মায়ের কথায় আমি অবাকের চূড়ান্ত পর্যায় । বাহ্ আমার রিলেশন চলচ্ছে আর আমিই জানি না ?
আমি ভীতু গলায় বলি,

– মা আরসাল ভাইয়ের সাথে না রুপ্সা আপুর বিয়ে ঠি ক ?

-তোর ফুপি রুপ্সার জন্য প্রপোজাল দিয়েছিলো কিন্তু আরসাল সোজাসুজি না করে দিয়েছে । এটাও বলেছে যে তোকে পছন্দ করে আর তোকেই বিয়ে করবে।তারা তো আরো আগেই বিয়ের কথা বলেছিলো তোর বাবা বলেছে তোর বিবিএ কমপ্লিট হলে বিয়ের কথা আগাবে ।কিন্তু সেদিন আরসালের পাগলামীর জন্য আর ফিরিয়ে দিতে পারিনি । ছেলেটা কত চায় তোকে । যতক্ষণ না তার বাবা রাজী হয়েছে ততক্ষন বাড়ির সামনে দাড়িয়ে ছিলো ।তোকে তা বলার জন্য ফোন করলাম তুই কথা না শুনেই ফোন কেটে দিলি । তাই মিথ্যা বলে বাড়ি আনতে হলো ।

আমি তখনো আমার কল্পনা জগৎ এ শক থেকে বের হতে পারিনি ।মা আমার হাতে শাড়ী ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

– যা রেডি হয়ে নে ।আজই তারা বিয়ের কাজ সাড়তে চায় । পরে বড় করে অনুষ্ঠান করবে । আরসাল তোকে নিয়ে আর কোন রিস্ক নিতে চায় না ।

আমি মায়ের কথা শুনে রোবটের মত সব করলাম । আমাকে সাজিয়ে উনার পাশে বসানো হলো । আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিলো না । আমি তার হতে যাচ্ছি । পুরো শরীর থরথর করে কাপঁছিলো ।
উনার পাশে বসতেই উনি সবার আড়ালে আমার হাত চেপে ধরে ।আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন ,

– অনেক নাচিয়েছিস । তোকে পেতে অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয়েছে । এবার সব সুদেআসলে উসুল করবো । সেদিন ঠোঁটে দাগ করেছি । আজ রাতে এমন দাগ শরীর জুড়ে করবো ।

আমি লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছিলাম । সেদিন তার থ্রেড টা ও মধুর মত মনে হচ্ছিলো । ইচ্ছে করছিলো তাকে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে বলি “ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি ”

বিয়ের এত বছর পর আজও তার স্পর্শ আমাকে সেই প্রথম বারের মত পাগল করে দেয় ।সে খুব কম কথা বলে । নিজের ফিলিংক্স খুব একটা প্রকাশ করে না । তাই হয়তো উনি এত স্পেশাল । তার ভালোবাসাও সবার চেয়ে আলাদা । একদম অন্যরকম ।
উনি যখন হাত ধরে মুগ্ধ নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে , সামান্য সাজসজ্জায় আমাকে অপ্সরীর সাথে তুলনা করে ।
তখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী মনে হয় ।
তিনি মুখে কিছু প্রকাশ না করলেও তার গভীর চোখ জোড়ায় অনেক কিছু প্রকাশ পায় । তার অবক্ত ভালোবাসাগুলো তার নয়নের গভীরত্বে ভেসে উঠে ।
উনার বুকের গভীরত্ব আমার সকল ভয় কাটিয়ে স্বর্গীয় শান্তি দেয় ।
ভালোবাসার প্রকাশের জন্য কোন শব্দের প্রয়োজন নেই ,ভালবাসার অনুভূতিই যথেষ্ট ।
ভালোবাসি । খুব বেশি ভালোবাসি তাকে আর শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত এভাবেই ভালোবাসতে চাই !

সমাপ্ত ❤️

সবাই সবার মতামত জানাবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে