অনুভূতির সংমিশ্রণ?
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
শেষ পর্ব
?
ইমরেতের বুকে নিধি হেলান দিয়ে আছে,দুজনে এখনো কিচেনে..নিধি ছাড়ছে না আজ ইমরেতকে..ইমরেত উঠার নাম নিলেই,নিধি ভ্যা ভ্যা করে উঠছে একটু পর..কোন পিচ্চি মেয়ের পাল্লায় পরলো সে..কিন্তু নিধির এরকম বাচ্চাপোনা দেখেই ইমরেত ফিদা হয়েছিলো।।
বেশকিছুক্ষন পর দেখলো নিধির সাড়াশব্দ নেয়,তাকিয়ে দেখলে সে দেখে নিধি ঘুমিয়ে পরেছে হেলান দিয়ে..ইমরেত মুচকি হেসে কোলে করে নিধির রুমে এগোলো..নিধির রুমে নিধিকে শুইয়ে দিয়ে,নিধির কপালে চুমু একে দিয়ে বললো,”ভালোবাসি”।।
নিধির গায়ে কম্বল দিয়ে ইমরেত নিজের রুমে গেলো..আজ তার অনেক শান্তি লাগছে,তার নিধিমনি তাকে ভালোবেসে ফেলেছে,কতটা দিন অপেক্ষায় ছিলো এই দিনের..ইমরেত নিজের ঘরে যেয়ে বালিশে মাথা দিয়ে চোখ বুজলে নিধির হাসিমাখা ছবি ভেসে উঠে,এই প্রতিবিম্ব দেখে ইমরেত মুচকি হেসে ঘুমের রাজ্যে পারি জমালো।।
সকালবেলা,
নিধি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই তার চোখ চড়াকগাছ..তার বাবা মা নিচে বসে হেসে হেসে কথা বলছে,ইমরেত আর মেহবুব ভাইয়ের সাথে..তার মায়ের কোলে বসে মাহি কি যেন খাচ্ছে।।
নিধি মা বলে ডাকতেই তার মা তার দিকে হাসি দিলো।।
“আমার মা কত বড় হয়ে গেছে, যে এখন বিয়ে দিতে হবে?” নিধির মা এসে বললো।।
বিয়ের কথা শুনে সে অবাক..পরে সব বিস্তারিত আলোচনা শুনে বুঝলো,এই যমরাজ অর্থাৎ ইমরেত তার বাবা মাকে ডেকে এনে বিয়ের কথা তুলেছে..বিয়ের ডেট ও ফিক্সড হয়ে গেলো..ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হবে,নিধির এক্সাম শেষে বড় করে অনুষ্ঠান হবে।।
ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হলেও কিছু টুকিটাকি কেনাকাটা ত করাই লাগবে,স্মৃতির মন্তব্য.. তাই তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজকে সন্ধ্যাই সবাই শপিং এ যাবে।।
ইমরেত নিধিকে একা ডাকলে, নিধি শুধু মুখ ভেঙচি দিচ্ছে কখন থেকে..ইমরেত এইবার রেগে সবার মনোযোগ ভাগ হইলে নিধির হাত ধরে পাশের রুমে ঢুকে দেয়ালে চেপে ধরে ঠোটে কামড় দেয়।।
“আউচ!!আস্ত দানব” নিধি বললো।।
“হ্যা তোমারি ত?কোন সমস্যা” ইমরেতের বাকা জবাব।।
“হুহ” নিধি আবার ভেঙচি দিলো,এইবার নিধির ঠোট আকড়ে ধরে চুমু খেতে শুরু করলো..নিধিও কম যায় কিসে,নখ দিয়ে দেবে দিচ্ছে ঘাড় তার।।
সন্ধ্যাবেলা,
সবাই খুব শপিং করছে,মেহবুব আর ইমরেতের কাজ পরায় সাথে আসতে পারে নি তারা..নিধির জন্য লাল বেনারসি আর ইমরেতের জন্য সাদা ধবধবে পাঞ্জাবি..স্মৃতি গয়নাও কিনলো নিধির জন্য।।
শপিং শেষে রাত ১০টার দিক তারা মল থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে আসে,ড্রাইভার ব্যাগ গুলো গাড়িতে তুলে..সবাই দাড়িয়ে আছে,মাহি হূট করে বললো।।
“মা ফুপি কই”
স্মৃতি এইতো বলে দেখতে যেয়ে দেখে নিধি নাই,নিচে নিধির ব্যান্ড পরেছে চুলের..হন্য হয়ে খুজতে আরম্ভ করলো কিন্তু পায় না..স্মৃতি আর নিধির মায়ের বুক কেমন করছে এইসব দেখে,তারা আরেকবার গোটা শপিংমল দেখে এলো কিন্তু পেলো না।।
স্মৃতি তখন মেহবুবকে ফোন করে জানাতেই,মেহবুব ইমরেতকে জানালো..ইমরেতের বুক ধুক করে উঠলো ভাইয়ের এমন কি শুনাতে,ইমরেতকে বলার সে এক সেকেন্ড দেরী না করে সাথে বাড়ি পৌছালো..বাকিরাও বাড়ি গেছে,নিধির মা বারবার অজ্ঞান হচ্ছে,নিধির বাবা কেমন জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।।
ইমরেতেএ চোখে এতোবেশি লাল যে মনে হচ্ছে তক্ত বের হবে..শপিংমলের আর রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ আনালো..ল্যাপটপে বসে দেখছে সে,দেখতে পেলো নিধিকে একদল ছেলে পিছন থেকে অনেকক্ষন ধরে ফলো করছে..তারা যখন শপিং শেষে নিচে নামলো,সবাই সামনে নিধি পিছনে দাড়িয়ে চুল খোপা করে ব্যান্ড দিতে যাবে,ওমনিতে একটা গাড়ি এসে একটা লোক নেমে নিধির মুখ চেপে গাড়িতে নিয়ে চলে গেলো,ব্যান্ড ওখানেই পরে রইলো।।
“আরে এটা রকি না??জমিদারের ছেলে?” নিধির বাবা বললো।।
নিধির বাবার এমন আর্তনাদে ইমরেতের কাছে সব ঘটনা পানির মতো স্বচ্ছ..সব পুলিশ,গোয়েন্দাকে জানানো হলো এক ঘন্টার মধ্যে তার বউয়ের নিউজ চায়।।
নিধির মুখে হালকা পানি ছিটা পরাতে আধো আধো চোখ খুললে দেখলো চারপাশে বিভিন্ন বস্তা আর তাকে চেয়ারে দড়ি দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে..সামনে তাকালে,বসে থাকা মানুষটিকে দেখে নিধির আত্না শুকিয়ে গেছে..রকি বসে আছে সামনে।।
“তুই কি ভেবেছিস আমারে বিয়ে না করে ওই বড়লোকে ডাক্তারকে বিয়ে করবি??আর আমি বসে বসে আঙ্গুল চুষবো??তুই শুধু আমার” রকি বিশ্রিভাবে নিধির দিকে তাকিয়ে বললো।
নিধি ভয়ে কুকড়ে গেছে,চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।।
“ভাগ্যিস তোর মায়ে আজকে বাসে উঠার সময় রহিমার মাকে বললো তোর বিয়ের কথা,আমার চেলাপেলা ওখান দিয়ে না গেলে ধরতেই পারতাম না তোরে” বলে রকি এগিয়ে এসে নিধির গা থেকে কেমন বিশ্রিভাবে স্মেল নিচ্ছে।।
দরজা তে টোকা পরছে,রকি বিরক্তিকর হয়ে বললো,” কে রে?”
“বস,ফুলি আইছে খাবার নিয়ে”
“তোরা ব!!আমি আইতাছি” বলে রকি বেরিয়ে গেলো, নিধির মুখে ক্লোরফর্ম মেরে..নিধি বেহুশ হয়ে পরলো।।
দুই ঘন্টা পর নিধি আবার জ্ঞান ফিরলো কিন্তু বাধা অবস্থায়,রকি দেখি আবার আসছে কিন্তু চাহনী তার বিশ্রি।।
“জাইগা পরছোস!! আই বাসর রাত টা সাইরা নি” রকি বললো।।
“না প্লিজ,পায়ে পরি তোমার..ক্ষতি করবে না” নিধির শরীরে কুলোই না তাতপরেও আকুতিমিনুতি করছে।।
রকি সেই তোয়াক্কা না করে নিধির গা থেকে ওড়না টানতে যাবে,ওমনে রকির মুখে লাথি পরাতে মুখ থুবড়ে দূরে পরলো।।
নিধি চোখ তুলে তাকালে,হাসির ফুটলো মুখে,চোখ দিয়ে বৃষ্টি পরছে তার।।
“ইমরেত” অস্ফুটস্বরে বললো নিধি।।
ইমরেত তাড়াহুড়ো করে হেসে নিধিকে বুকে ধরলো..নিধির ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে জানতে পেরেছে সে,নিধির ব্যাগ দেখে দূরে পরেছে।।
রকি এগিয়ে আসলে ইমরেত আবারো এক লাথি দিলো..রকি নিচে পরলে,বুকে অনেকগুলা লাথি পরছে তার ইমরেতেএ,গালের থাপ্পড়.. রকির চেলাপেলা গুলো সবাইকে ধরে নিয়েছে পুলিশ।।
“ইউ ওয়ান্ট টু টাচ মাই ওয়াইফ??ইউ বাস্টা****” বলেই ইমরেত রকির মেইন পার্টে এক লাথি..রকি মা বলে এক চিৎকার দিলো..পুলিশ এসে ইমরেতকে থামালো নইত খুন হয়ে যাবে।।
ইমরেত নিজেকে শান্ত করে,জ্ঞানহীন নিধিকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো সে..তার জান টা এখনো ধকধক করছে।।
নিধিকে পেয়ে সবাই মনে হচ্ছে জান ফিরে পেলো।।
নিধিকে বেডে শুইয়ে,ইমরেত নিধির গায়ে ইঞ্জেকশন পুশ করলো।।
বেশকিছুক্ষন পর নিধি জ্ঞান ফিরলে,সামনে থাকা ইমরেতের দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেদে দিলো।।
“হুসস,বেবি!!সি?আই এম হেয়ার”ইমরেত নিজের চোখের পানিটা আড়াল করে নিধিকে শান্তনা দিলো।।
নিধি তার মাকে ধরেও কান্না করে দিলো,তখন মাহি বলে উঠলো,” নো কান্না,অনলি হাসি হবে”।।
সবাই ফিক করে হেসে দিলো।।
আজ সেই অনাকাঙ্ক্ষিত দিন,
নিধি আর ইমরেতের বিয়ের দিন..কিছুক্ষন আগে বিয়ে পরানো হয়েছে,লাল বেনারসি তে নিধিকে ইমরেতের কাছে পুতুল বউ লাগছে..আর ইমরেত?সে ত সাদা পাঞ্জাবিতে রাজার চাইতে কম লাগছে..আজ নিধি ড্যাবড্যাব করে ইমরেতের দিকে তাকিয়ে আছে,ইশারায় অনেকবার ইমরেত বলেছে চোখ নামাতে কিন্তু না,সে ইমরেত কে রীতিমতো গিলে খাচ্ছে..সবাই এই নিয়ে হাসাহাসিও করছে।।
নিধিকে ইমরেতেএ রুমে বসিয়ে রেখে, ইমরেতকে দরজার কাছে আটকে রেখেছে সে..তার পাওনা নাকি তাকে দিতে হবে,ইমরেত সময় ব্যয় না করে স্মৃতিকে টাকা দিয়ে দিলো..স্মৃতি হেসে ফেললো যে এতো ডেসপেরেট বউয়ের কাছে যাওয়ার জন্য।।
ইমরেত ঢুকে দরজা লাগালো,এদিকে মেহবুব এসে স্মৃতি কে কোলে তুলে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।।
“আরে করছো কি??বয়স হইছে বুদ্ধি নাই?” স্মৃতি বললো।।
“চুপ?আমার এইজ ৩৫ মাত্র?ত??” মেহবুব বললো।
“ত” স্মৃতি কিছু বলতে যাবে তার আগে মেহবুব তার ঠোট নিয়ে বন্ধ করে ফেলেছে নিজের ঠোট দিয়ে।।
স্মৃতিকে বেডে শুইয়ে দিয়ে মেহবুব বললো,”আরেকটা মাহি চাই!ডোন্ট ট্রাই টু স্টপ মি”এই বলে স্মৃতি কে আদর দিতে ব্যস্ত হয়ে পরলো..স্মৃতি ও কম কিসে,সেও মেহবুবকে দিচ্ছে..ভালোবাসার চাদরে তারা দুজন।।
ইমরেত দরজা লক করে কাছে আসতেই,নিধি বলে উঠলো,”এতোক্ষন লাগে আসতে?”।।
ইমরেত ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,নিধির কথা শুনে।।
“আমার গরম লাগে” নিধি বললে,ইমরেত তাড়াহুড়ো করে ঘোমটা তুলে নিধির..চাঁদের আলোতে অপসারী লাগছে নিধিকে তার…নিধিকে ওদিকে বকবক করছে,ইমরেত হূট করে নিধির ঠোটে চুমু খেলো..নিধি এমন আক্রমণে লজ্জা নেতিয়ে পরলো।।
“আজকে কোন কথা হবে না!আজকে আমাদের অনুভূতির সংমিশ্রণ হবে!আজকে আমাদের নিঃশ্বাস কথা বলবে” ইমরেত কথাগুলো বলেই নিধির ঠোট আকড়ে ধরলো..বাড়তে লাগলো দুইজনের উত্তেজনা,মেতে থাকলো নিজেদের মাঝে..ডুব দিলো তাদের অনুভূতির সংমিশ্রনে।।
সমাপ্ত?
অবশেষে শেষ হলো গল্প..আশা করি আমি গুছিয়ে লিখেছি এইবার গল্পটা..কেমন লাগলো জানাবেন,ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।
Ei rokom golpo bar bar chai apu. Ei bar aro boro golpo chai.