অনুভূতির সংমিশ্রণ?
তৃধা মোহিনী(মৃন্ময়ী)
পর্ব দশ
?
বিকালবেলা,
নিধি জ্ঞানহীন হয়ে বেডে পরে আছে,স্মৃতি পাশের মেহবুব দাড়িয়ে আছে..ইমরেত হাতমুঠো করে সোফায় বসে আছে,মুখ দেখে মনে হচ্ছে এখনো যমরাজের রাগ কাটে নি।।
“একে কোথায় পেলি তুই??এরকমভাবে পরে আছে কেন??জ্ঞান হারালো কিভাবে” এরকম নানান প্রশ্ন স্মৃতি দুই ঘন্টা যাবত করেই যাচ্ছে ইমরেতকে কিন্তু ইমরেত কাওকে কোন জবাব দিচ্ছে না।।
“ভাই বলবি ত নাকি??” মেহবুব এইবার বিরক্তিসুরে বললো।।
“ও সাতদিন যাবত ঠিকঠাক খায় না,তুমি(স্মৃতি দিকে তাকিয়ে) যে খাবার গুলো প্রতিদিন দিয়ে আসো সেইগুলো ও প্রতিদিন সকালে দারোয়ানকে দিয়ে আসে..টিউশানি করাচ্ছে এই সাত ধরে..রোদে হেটে আসে” ইমরেত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো।।
স্মৃতি আর মেহবুব প্রচন্ড অবাক হলো..নিধির মুখ দেখে মনে হচ্ছে এই কয়দিনে ইচ্ছা করে না খেয়ে নিজেকে কষ্ট দিয়েছে।।
“রাগ আমার উপর যেহেতু,সেহেতু ঝাল টা আমার উপর দিয়ে মেটাতো সে?? কেন সে নিজেকে কষ্ট দিলো?ও কি জানে না ওর কষ্টে আমার দ্বিগুন কষ্ট হয়?” ইমরেতের শান্ত জবাব।।
স্মৃতি আর মেহবুব কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,আসলে তাদের ও ভুল নিধির দিকে কড়া নজর দেয়া উচির ছিলো,বাচ্চা মেয়ে..আমানত সে কিন্তু দিনের পর দিন সে নিজেকে এইভাবে কষ্ট দিবে এটা ধারনার বাহিরে ছিলো তাদের।।
“ভাইয়া?তুমি(নিধির দিকে তাকিয়ে) ওর বাবা মা কে ফোন দাও..বিয়ের ডেট ফাইনাল করো..আই ডোন্ট ওয়ান্ট এনি কাইন্ড অফ এক্সকিউজেস..ও যা করেছে সে নিয়ে আমি আর রিস্ক নিতে চায় না” ইমরেত শান্তভাবে বললো।।
মেহবুব ও সায় দিলো কারন নিধির কর্মকাণ্ডে সেও ভয় পেয়ে গেছে কখন কি করে বসে।।
স্মৃতি শুধু এক ধ্যানে নিধির শুকনো মুখের দিকে চেয়ে রইলো,দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে নিচে গেলো..স্মৃতি চলে যেতেই,মেহবুব ও পা বাড়ালো নিধির বাবা মাকে কল করার জন্য।।
ইমরেত নিধির দিকে ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।।
“আমাকে কষ্ট দিতা আমি মেনে নিতাম কিন্তু তুমি তোমার মধ্যে আমার বসবাস টাকে কষ্ট দিয়েছো সেটা কি করে মেনে নেই বলো?তোমাকে শাস্তি অবশ্যই পেতে হবে” ইমরেত চোয়াল শক্ত করে বললো।।
সন্ধ্যাবেলা,
নিধি টিপটিপ করে চোখ খুলছে..আশেপাশে তাকিয়ে বেশ খানিকটা সময় লাগলো সে কোথায় আছে,দূর্বল লাগছে তার নিজের কাছে নিজেকে।।
নিধির বসে উঠতেই পরক্ষনে মনে হলো তার সামনে ইমরেত এসে কত জোরে থাপ্পড় মেরেছিলো..মনে পরতেই চোখে জল ভরে আসলো তার।।
নিধি চোখ মুছে,ওয়াশরুমে গেলো গোসল করতে..এরকমভাবে সে সাতটা দিন করছে।।
গোসল সেরে নিচে যাবে তার আগেই স্মৃতি এসে পরেছে তার রুমে..স্মৃতি নিধির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলো।।
“খাবারটা শেষ করো?” স্মৃতি শান্তভাবে জবাব দিলো।।
নিধির বুকটা কেমনে মোচড় দিয়ে উঠলো স্মৃতির মুখে তুমি ডাক শুনে।।
“কি হয়েছে ভাবীপু?তুমি আমাকে তুমি বলে ডাকছো কেন?” নিধির স্মৃতির দিকে এগিয়ে স্মৃতির হাত ধরে বললো।।
“কিছু হয় নি!!অপরিচিতদের আমি বয়সে ছোট দের তুমি বলি!” স্মৃতি উত্তর দিলো।।
“কিছু ত হয়েছে,বলো আমি কোন ভুল করেছি??করে থাকলে বকো মারো?এইভাবে কথা বলিও না প্লিজ ভাবীপু” নিধি কাদো মাখা কন্ঠে বললো।।
নিধির হাত নিজের থেকে সরিয়ে বললো স্মৃতি,
“তুমি খাবারবটা শেষ করো আমি দাড়িয়ে আছি..আমার আরো কাজ আছে”
নিধি এইবার হাউমাউ করে কাদতে আরম্ভ করলো স্মৃতিকে ধরে..স্মৃতির এরকম বিহেভিয়ারের সাথে সে পরিচিত নয়,স্মৃতি ও আর সামলাতে না পেরে উঠে নিধিকে ধরে সেও কেদে দিলো।।
“একবার বলতে পারতি?রাগ কার উপর করেছিস,ঝড় নিজের উপর দিয়ে তুললি??একবার জানাতে পারতি?আর না খেয়ে তোর শরীর কত দুর্বল করেছিস বুঝতে পারছিস?” স্মৃতি নিধির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো।।
“ইমরেতের উপর রাগ করেছিস??ইমরেত তোর জন্য পাগল হয়ে হন্ন হয়ে আজ খুজেছে?রাগে বকেছে সেইটা বুঝছি,কিন্তু তুই বুঝলি না তার রাগের চেয়েও গভীরতা বেশি তোর উপর ভালোবাসা তার..ইমরেত তোকে কতটা পাগলের মতো ভালোবাসে,তিলে তিলে কতটা না পাওয়ার যন্ত্রনা ভুগে আসছে চারটা বছর ধরে আমি দেখে আসছি” স্মৃতি কিছুক্ষন থেমে বললো।।
“আমিও যে তাকে খুব ভালোবাসি ভাবীপু?” নিধি নাক টেনে জবাব দিলো।।
“মানে?কবে থেকে??আর ভালোবাসলে এরকম করলি কেন?” স্মৃতি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।।
তারপর নিধি বলতে শুরু করলো সেদিন রাতের স্মৃতি আর ইমরেতের কথা শুনেছে,ইমরেতকে নিয়ে তার আংশিক ফিল নিয়ে বলা।।
সব শুনে স্মৃতি ত হতভম্ব.. এরা দুজনেই এমন আজাইরা কাজ করবে,মাথা খারাপ হবে তার।।
“আমি শুধু উনাকে বুঝাতে চেয়েছি,আমাকে কষ্ট দিলে উনিও আঘাত পান..ভালোবাসাটা আমার কতটুক তার প্রতি সেইটুকু শুধু বুঝতে চেয়েছি এই কয়দিনে.. আমি তার সামনে যাই নি ঠিকি কিন্তু তাকে এই কয়েকদিনে চোখের আড়াল হয়ে,আমার জন্য তার ঝটপটানি দেখেছি..আর আমি সাকসেস হয়েছি..কিন্তু বেয়াদবটা আজ আমাকে আবার মেরেছে” নিধি নাক টেনে বললো।।
“ত কি করবে??তুই এতো পাজি?এমন কাজ করে কেও??স্মৃতি হেসে বললো।।
” ত?উনি আমার রুমে সিসিটিভি রাখবে কেন??আমি ত দেখতে পেয়েছি যেখানে উনি ক্যামেরা রেখছিলো সেখানে আমার ফার্স্ট এইড বক্স ছিলো,আমার আঙ্গুল কেটে যাওয়াতে ওইখান থেকে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ আনতে যেয়ে দেখি ওখানে সিসিটিভি ক্যামেরা..আমি দেখে ভেঙে ফেলেছি তখন”নাক ফুলিয়ে বললো নিধি।।
স্মৃতি কি বলবে এদের কাহিনী দেখে বুঝে উঠতে না পেরে নিধিকে খাইয়ে দিয়ে নিচে গেলো আর তাকে বলে গেলো এমন উদ্ভট কাজ আর না করতে।।
রাতেরবেলা,
১টা বাজছে নিধি ঘুমায় না,ইমরেত একবারের জন্য তার ঘরে আসে নি..মেজাজ টায় নিধির খারাপ হয়ে যাচ্ছে..সেধে আসলে কি হয় বাপু?।।
নিধি আর থাকতে না পেরে ইমরেতের ঘরে গেলো দেখে ইমরেত নাই,তখন সে নিচে গেলো ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম খেতে..আইসক্রিম খেয়ে মাথা ঠান্ডা করবে সে।।
নিধি নিচে যেয়ে কিচেনে দেখতে পেলো ইমরেত খালি গায়ে ফ্রিজ খুলে,ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে খাচ্ছে।।
ফকফকা বডি দেখে নিধির চোখ কপালে..এতো সুন্দর ফিগার কোন ছেলের হয়??একটু কম সুন্দর হলেও পারতো..আর ও মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো যে উদাম শরীর নিয়ে নিচে আসছে এইজন্য??এই মুহূর্তে কেই যদি তার খালি গায়ে দেখে তার সুন্দর যমরাজ জামাইকে দেখে ফেলে..নজর দিয়ে দিবে।।
নিধি যেয়ে ইমরেতের মুখ থেকে বোতল নিয়ে নিলো,ইমরেত কিছু বললো না..ইমরেতের সামনে ঢকঢক করে পানি খেয়ে ফেললো নিধি।।।
“আপনি যে রুপবান তা দেখানো লাগবে সবাইকে?” নিধির কড়া প্রশ্ন।।
নিধির এমন প্রশ্নে ইমরেত ভড়কে যেয়ে হাসি পেলেও নিজেকে কন্ট্রোল করে,নিধিকে এভোয়েড করে উপরে যাচ্ছিলো।।
ইমরেতের এভোয়েডনেস দেখে নিধির মাথা খারাপ হয়ে গেলো..ইমরেত যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে নিধির ইমরেতের হাত টেনে ধরে সামনে আনলো।।
“এতো শক্তি কই পাইলো এই মেয়ে,এতো দুর্বল দেখলাম তাও” ইমরেত নিজে নিজে বললো।।
“উত্তর না দিয়ে কই যান?” নিধি রেগে বললো।।
“আ’ম নট ইন্টেরেস্টেড!!” ইমরেতের বললো..নিধির কর্মকাণ্ড দেখে ইমরেতের হাসি পাচ্ছে কিন্তু সে দেখেত চাই নিধি কি করে।।
“কি বললি” নিধি রেগে বললো।।
নিধির মুখে তুই ডাক শুনে ইমরেতের চোখ কপালে সে অন্তত এটা আশা করে নাই।।
নিধি রেগে ইমরেতকে কাছে টেনে,ইমরেতের চুল মুঠো করে মুখের কাছে যেয়ে তার ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে দিলো..আকস্মিকভাবে ইমরেতের চোখ আলুর মতোন হয়ে গেছে..সে ভাবতে পারে নাই নিধি এমন কিছু করবে..এদিকে নিধি তার চুল টেনে ঘাড় টাকে টেনে ধরে চুমু খেয়েই যাচ্ছে..বেশকিছুক্ষন নিধি চুমু খাচ্ছে তার ঠোটে কামড় ও দিয়েছে..ইমরেতের ও আর কন্ট্রোল পসিবল হচ্ছে না,নিধি সরতে যাবে তার আগে ইমরেত তাকে দেয়ালে চেপে ধরে কেমন তৃষাতুর হয়ে চুমু খেতে আরম্ভব করলো..উদাম বুকে নিধির নখের দাগ ও বসলো কয়েকটা…. নিধির কোমড় জুড়ে ইমরেতের হাত খেলা করছে..নিধি শ্বাস নিতে পারছে না কিন্তু ইমরেত ছাড়ছেও না এদিকে।।
আধাঘন্টা পর ইমরেত ছাড়লো নিধিকে..একে অপরের বুকের সাথে লেগে আছে তারা..হাপাচ্ছে দুজনেইই..।।।
“ভালোবাসি আপনাকে খুব!!কখনো ছেড়ে যাবেন প্লিজ” এই বলে নিধি ইমরেতকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।।
চলবে?
কেমন হয়েছে জানাবেন..ভুল ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।।