#অনুভূতিটা_তোমায়_ঘিরে🌺🥀
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি❤️🥀
#পার্টঃ১০💜🥀
ইবাদ আর আবিয়ার দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে ইয়াসিবা।
এইদিকে জুবুথুবু হয়ে দাড়িয়ে আছে তারা।
ইয়াসিবা গম্ভীর স্বরে বললো,
–” কাহিনি কি তোদের দুটোর?”
–” কি কাহিনি দোস্ত কি বলছিস?” ভারি ইনোসেন্ট গলায় বললো আবিয়া।
–” থাপ্রিয়ে তোর দাঁত ছুটিয়ে ফেলবো যদি কথা ঘুরাবার চেষ্টা করিস।তাড়াতাড়ি বল।”
–“আমি বলছি ইয়াসিবা।” ইবাদ বলে উঠে।
–” হ্যা জলদি বল।ফাকা ক্লাস রুমে তোরা দুটো কাছাকাছা কি করছিলি?”
–” আসলে আমি আর আবিয়া রিলেশনে আছি।”
কথাটা বলতে দেরি ইয়াসিবার এক দৌড়ে গিয়ে ইবাদকে জড়িয়ে ধরতে দেরি নেই।
ইয়াসিবা খুশিতে লাফাচ্ছে আর ইবাদের গলা ধরে ঝুলছে।
–” ওয়াও! ওয়াও!ওয়াও! এতো তাড়াতাড়ি তোরা রিলেশনশিপে যাবি আমি ভাবি নাই।”
–” তার মানে তুই সব জানতি যে ইবাদ আমাকে ভালোবাসে।” আবিয়ার কথায় দাঁত কেলিয়ে হাসলো ইয়াসিবা।বললো,
–” হ্যা! আমি সব জানি।”
মুহূর্তেই আবিয়া রেগে দিলো এক চিৎকার,
–” ইবাইদ্দায়ায়ায়ায়া! তোর লগে ব্রেক-আপ হ্রামি।
তুই মর, তুই ইয়াসিবাকে বলতে পারলি।
আমি তোর বেষ্টফ্রেন্ড সাথে তুই আমাকে ভালোবাসিস আর আমাকে বলতে পারলি নাহ।”
ইবাদ কপাল চাপড়ে আফসুসের সুরে বলে উঠে,
–” এইজন্যেই বেষ্টফ্রেন্ডের সাথে প্রেম করতে নেই।
মান-ইজ্জত আর থাকে নাহ।”
–” কি বললি?” রেগে বললো আবিয়া।
–” আব! কিছু না বেবি তুমি না আমার কলিজা রাগ করে নাহ।” বলেই ইবাদ আবিয়াকে ধরতে এলে।
আবিয়া সরে গিয়ে বললো,
–” ধুর হো হারামি।আমাকে ধরবি নাহ।
ইবাদ অসহায় গলায় বললো,
–” আবিয়া আমি এখন তোর বেষ্টু নাহ।আমি এখন তোর বফ সাথে উডবি হাজবেন্ট একটু তো সম্মান দে।”
–” তোর সম্মানের গুল্লি মারি যা ভাগ।”
–” ইয়াসিবা তুই কিছু বল।” করুন গলা ইবাদের।
ইয়াসিবা এতোক্ষন হেসে কুটিকুটি হচ্ছিলো।
ইবাদের কথায় সে হাসতে হাসতে আবিয়াকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বললো,
–“দেখ আবিয়া ও তোকে ভালোবাসে সেটা তোকে বলেনি হ্যা আমি মানছি তার দোষ।
কিন্তু তুই নিজেও তো বলিস নি তাই নাহ?
তুই ঠিক যেই কারনে ওকে বলতি না
ও নিজেও ঠিক সেই কারনেই বলতো নাহ।
যদি ভালোবাসার কথা বলে তোর আর ওর বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়।আর আমাকেও ও কালকে বলেছে।
আর আমি যেটুকু জানি আমি যাওয়ার পর পরই এ তোকে প্রোপোজ করেছে ;রাইট?”
আবিয়া উপর নিচ মাথা ঝাকালো মানে হ্যা।
ইয়াসিবা আবার বলে,
–” তাহলে সিম্পল! এখানে এতো রিয়েক্ট করার কিছু নেই আবিয়া।”
আবিয়া কতোক্ষন গম্ভীর মুখে ইবাদের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
তারপর জোড়ে হেসে দিয়ে ইবাদকে একসাইড থেকে জড়িয়ে ধরলো।ইবাদও হেসে দিলো।
এদিকে ইয়াসিবা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,
–” বাহ বাহ! আমি মিল করিয়ে দিলাম।
এখন আমাকেই কেউ চিনে নাহ?”
আবিয়া আর ইবাদ হেসে দিলো।
ইবাদ বললো,
–” আজ ক্লাস করা লাগবে নাহ।
চল আজ আমি ট্রিট দিবো তোকে।”
–” ইয়াহুউউ!! দাড়া আগে উনাকে একটু ফোন দিয়ে নেই ওকে।” বলেই ইয়াসিবা ফোন লাগালো আফ্রিদের কাছে।
আফ্রিদ ফোন রিসিভ করেই বললো,
–” কি ম্যাম আজ এতো খুশি? ব্যাপার কি?”
–” আপনি কি করে জানলেন?” অবাক হয়ে বললো ইয়াসিবা।
–” ম্যাম কাইন্ডলি আমার হাস্পাতালের ৫ তলায় তাকান সেখানে আপনার ইনোসেন্ট বরটা আপাতত দূর থেকে তার বউটার হাসি হাসি মুখ দেখছে।” আফ্রিদের কথায় ইয়াসিবা ঘাড় ঘুড়িয়ে পাসের বিল্ডিং যেটা আফ্রিদের হাস্পাতাল সেদিকে তাকায়।
ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে আফ্রিদ তার ক্যাভিনের ব্যালকনির কাচটা পুরো খুলে রেখেছে আর সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে সে ইয়াসিবাকে দেখছে।
ইয়াসিবা মুখ ফুলিয়ে বললো,
–” আমাকে দেখে আপনি কি করবেন?”
–” আমার বউটার মুখটা দেখলে যে আমার কি পরিমান সুখ অনুভূত হয় তা যদি আমার বউটাকে বুজাতে পারতাম।”
–” হয়েছে পাম মারা লাগবে নাহ।আমি এখনো রেগে আছি আপনার উপর।”
–” আল্লাহ্ বলে কি?এখনো রেগে আছে আমার বউটাহ!”
–” হ্যা সকালে আপনি যে কান্ড করেছেন আমি রাগবো নাহ?”
–” আচ্ছা রাতে এসে সব রাগ আদড়ে সোহাগে ভ্যানিস করে দিবো।”
–” আপনি আস্ত একটা অসভ্য।” লাজুক কন্ঠে বললো ইয়াসিবা।
–” হ্যা আমি জানি।” হেসে বললো আফ্রিদ।
–” আচ্ছা শুনুন নাহ?”
–” হ্যা বলুন নাহ।”
–” আমি না ইবাদ আর আবিয়ার সাথে রেস্টুরেন্ট এ যাবো ইবাদ আমাকে ট্রিট দিবে।”
–” কিসের ট্রিট?”ভ্রু-কুচকে বললো আফ্রিদ।
–” আবিয়া এন্ড ইবাদ আর ডেটিং ইচ আদার।” খুশি কন্ঠে বললো ইয়াসিবা।
–” ওহ আচ্ছা তাই তো বলি মেডাম এতো খুশি কেন?” আফ্রিদ বললো।
–” যাবো?”
–” মেডাম যখন যেতে চায় আমি না করি কিভাবে? নাহলে যে বউটার আরো রেগে যাবে তারপর এতো এতো রাগ ভাঙ্গানো তো আমার জন্যে মুশকিল।”
–” ধন্যবাদ ধন্যবাদ আপনাকে।” খুশিতে বলে উঠে ইয়াসিবা।
–” শুনো যেতে তো দিচ্ছি তবে সবসময় ইবাদের সাথে থাকবে।
ইবাদ ও সাথে যাবে বলেই আমি যেতে দিচ্ছি নাহলে দিতাম নাহ।
তবুও নিজের দিকে একটু খেয়াল রেখো।”
–” আচ্ছা।তাহলে রাখছি।”
–” ভালোবাসি ইয়াসিবা।”
চোখ বুযে ফেললো ইয়াসিবা যতোবার আফ্রিদের মুখে এই কথাটা শুনে তার যেন সারা শরীর এক অন্যরকম ভালোলাগায় ছেয়ে যায়।
–” আমিও ভালোবাসি।” বলেই ফোন রেখে দিলো ইয়াসিবা।
তারপর ইবাদ আর আবিয়ার সাথে রেস্টুরেন্ট এ চলে গেলো।
রেস্টুরেন্ট এ পৌছে ইবাদ একটা ওয়েটারকে ডাক দিলো।ওয়েটার আসতেই ইবাদ বলে,
–” ইয়াসিবা অর্ডার কর।”
–” আচ্ছা দাড়া করছি।” ইয়াসিবা মেনুকার্ড দেখে খাবার অর্ডার দিলো।
ওরা গল্প করার মাজেই ওয়েটার খাবার নিয়ে আসলো।
কোল্ড কফি দেওয়ার সময় ভূলবশত সেটা ইয়াসিবার গায়ের উপরে পড়ে যায়।
ওয়েটার ভয় পেয়ে বললো,
–” সরি সরি ম্যাম আমি খেয়াল করি নি। আ’ম সো সরি।”
ইয়াসিবা ড্রেস ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,
–” ইট্স ওকে।ভুল মানুষ দাঁড়াই হয়।আপনি যান।”
ওয়েটারটা আবারও সরি বলে চলে গেলো।
আবিয়া বলে,
–” ইস দোস্ত ড্রেসটা খারাপ হয়ে গেছে।”
–” হ্যা আমি ওয়াসরুম থেকে আসছি।”
–” আমিও যাই তোর সাথে চল।”
–” আরে নাহ তোরা বস আমি যাবো আর আসবো।”
–“আর ইউ সিয়র।”
–” আরে হ্যা।চিল আমি আসছি।”
–“সাবধানে যাস।”
ইয়াসিবা মুচকি হেসে ওয়াসরুমে চলে গেলো।
—————–
–“স্যার আমার কাজ শেষ।” সেই ওয়েটারটা হেসে বললো।
–” ওয়েল্ডান।এই নেও তোমার পেয়েমেন্ট।” বলেই একটা লোক কতোগুলো টাকা দিলো ওয়েটারটাকে।
ওয়েটারটা টাকা নিয়ে চলে গেলো।
এদিকে সেই লোকটি বিশ্রী হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বললো,
–” ইয়াসিবা তোমাকে এইবার আমার থেকে কে বাচাঁবে সুইটহার্ট!”
তিনবছর আগে আমাকে থাপ্পড় মারার মজা বুজবে।
তোমাকে তো এইবার আমি ছাড়ছি নাহ।”
বলেই লোকটাও ওয়াসরুমের দিকে যেতে লাগলো।
————–
এদিকে ওয়াসরুমে এসে নিজের জামাটা পরিস্কার করছে ইয়াসিবা।
–” উফফ! কি যে হলো পুরো ড্রেসটাই খারাপ হয়ে গেলো।
আমাকে এখনি বাসায় যেতে হবে এই ড্রেস পড়ে
বসে থাকা পসিবল নাহ।”
নিজে নিজে কথাগুলো বলে ব্যাগ নিয়ে বের হতে গিয়ে সে যেন পাথর হয়ে গেলো।
তার সারা শরীর বরফের ন্যায় জমে গেলো।
আবার!আবার সেই ভয়ানক অতীত তার সামনে।
আবার! কেন?কেন?তার সাথেই কেন এমনটা হয়?
আবার কেন অতীতগুলো তার জীবনে আসছে।
সে-কি একটু সুখে থাকতে পারবে নাহ?
তার কপালটা এতো খারাপ কেন?
যখনি তার জীবনে সুখ নামক পাখিটি এসে ধরা দেয়।
ঠিক তখনি দুঃখ নামক তীরটা এসে সেই পাখিটিকে হত্যা করে ফেলে।
ইয়াসিবার সারাশরীর থরথর করে কাপতে লাগলো।
তা দেখে সামনে থাকা ব্যাক্তিটি বিকট হেসে বললো,
–” কি সুইটহার্ট আমাকে দেখে বুজি খুশি হওনি?
আমাকে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?
আমরা যে একে-অপরকে কতো ভালোবাসতাম ভুলে গেলে?”
ইয়াসিবা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইলো স্রেফ।
ব্যাক্তিটি বাকা হেসে ইয়াসিবার দিকে আগাতে লাগলো।
ইয়াসিবা তাকে আগাতে দেখে ভয় পেয়ে পিছাতে লাগলো।
যখন একেবারে ওয়াসরুমের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো।
তখন ইয়াসিবা শব্দ করে কেঁদে দিলো।
ব্যাক্তিটি জলদি ইয়াসিবার কাছে এসে ওকে ধরতে গেলে ইয়াসিবা সাইড কেটে সরে যায়।
ব্যাক্তিটি অভিনয়ের মতো বলে,
–” আরে আরে কাঁদছো কেন?
কাঁদে নাহ।তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাই নাহ?
আসো আমার কাছে আসো।”
ইয়াসিবা কাঁদতে কাঁদতে পিছিয়ে গেলো।ইয়াসিবা ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
–” কেন আবার এসেছেন প্লিজ চলে যান।
আমি একটু সুখ চাই।
প্লিজ আফ্রিদের সাথে আমাকে একটু সুখে থাকতে দিন প্লিজ।”
–” তাতো হচ্ছে নাহ বেবি।”
বলেই ব্যাক্তিটি ইয়াসিবার মুখে রুমাল চেপে ধরলো।
রুমালে অজ্ঞান করার ওষুধ লাগানো ছিলো।
তাই ইয়াসিবা চোখে সব ঘোলা দেখতে লাগলো।
চোখ বুজার আগে সে অস্ফুটো স্বরে বলে উঠে,
–” আকাশ! কাজটা ভালো করলেন না আমার আফ্রিদ ছাড়বে না আপনাকে।”
ইয়াসিবা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো।
#চলবে,,,,,,,
ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করবেন