অনুভূতিটা তোমায় ঘিরে পর্ব-০৭

0
830

#অনুভূতিটা_তোমায়_ঘিরে❤️🥀
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি🌺🥀
#পার্টঃ০৭💜🥀
–” মা আমি কতোবার বলেছি আমি ওই বাড়িতে যাবো নাহ।” আফ্রিদ খানিক বিরক্ত হয়ে বলে।
–” কেন আসবি নাহ?ওই মেয়েটা নিশ্চয়ই বারণ করেছে?” কায়া চৌধুরী রেগে বললেন।
–” মা তুমি ইয়াসিবা কেন দোষ দিচ্ছো?”
–” ওই মেয়েটারই সব দোষ ওই তোকে বলে যে আমার কাছে না আসতে।”
–” ওহ মা প্লিজ! আর ‘ওই মেয়ে,এই মেয়ে’ বলছো কেন? ওর একটা ভালো নাম আছে ইয়াসিবা।আর ভূলে যেও নাহ ইয়াসিবা এখন চৌধুরী বাড়ির বড় বউ।”
–” আমি ওকে কখনো পুত্রবধু রূপে মানি নাহ।তোকে কতোবার করে বললাম ওই মেয়েকে বিয়ে করিস নাহ! একবার ধোকা খেয়ে তোর শিক্ষা হয়নি?”
–” মা আ’ম ফেড-আপ! আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লিসেন এনিথিং রাইট নাউ।ওকে বাই।টেক কেয়ার।” বলেই ফোন কেটে দিলো আফ্রিদ।রাগে ওর মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গিয়েছে।কেন যে মা বুজে নাহ?ইয়াসিবাকে সে ভালোবাসে। আর ভালোবাসার মানুষটির নামে এইসব শুনে কেইবা ঠিক থাকতে পারে?আর যেখানে মূল কথা ইয়াসিবা’র কোন দোষই নেই।নাহ! আর একমুহূর্ত এখানে না।ইয়াসিবাকে এখন ওকে দেখতে হবে।এই মেয়েটাকে এখন না দেখলে নির্ঘাত সে পাগল হয়ে যাবে। সাত-পাঁচ না ভেবে আফ্রিদ বেড়িয়ে গেলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে আর অল্প সময়েই পৌছে গেলো।
———-
–” তোদের বিয়েটা হলো কিভাবে সেটা তো বলবি?” ইবাদ জিজ্ঞেস করলো।
–” এখন আর কিছু বলবো না ইবাদ।সময় হলে আমি নিজেই সব তোদের বুজিয়ে বলবো।” ইয়াসিবার কথায় ইবাদ মাথা ঝাকালো।সে বুজতে পারছে নিশ্চয়ই বড় কোন কারণ আছে নাহলে ইয়াসিবা তাদের বলে দিতো।
–” দোস্ত!!!!!!” হঠাৎ আবিয়ার চিৎকার ইয়াসিবা আর ইবাদ দুজনেই চমকে তার দিকে তাকালো।
ইয়াসিবা বললো,
–” কিচ্ছে?চিল্লাচ্ছিস কেন?”
–” এটাকে যে আমি কি করবো?” ইবাদ বিরক্তি নিয়ে বললো।
–” আরে আমার কথা শুন।পিছে তাকা ইয়াসিবা আমার ক্রাশ আসছে গো।কি হ্যান্ডসাম হায়য়য়!” আবিয়ার কথায় ইয়াসিবা পিছনে তাকালো দেখে আফ্রিদ এইদিকেই আসছে।মুখে হাসি ফুটে উঠলো ইয়াসিবা’র বিয়ের পরে এই প্রথম আফ্রিদ তার সাথে ভার্সিটিতে দেখা করতে আসছে।পরক্ষনে চারপাশে তাকাতেই দেখে সব মেয়েরা আফ্রিদকে পারলে চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে।ইয়াসিবার রাগ উঠে গেলো এই মেয়েগুলো এতো লুচু কেন?মন তো চাচ্ছে এক একটার চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে।ইয়াসিবা রাগে ফুসতে ফুসতে আফ্রিদের দিকে আগালো।ইয়াসিবাকে চলে যেতে দেখে আবিয়া বলে উঠে,
–” আরে ইয়ু আমাকে নিয়ে চল।ক্রাশ জিজুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিবি নাহ।” ইবাদ এইবার আর পারলো না রাগ ধরে রাখতে।আবিয়া উঠে যেতে নিতেই ইবাদ তার হাত শক্ত করে চেপে ধরলো।তা দেখে আবিয়া বলে,
–” কি হয়েছে?হাত ধরেছিস কেন?ছাড়! আমি আমার ক্রাশ জিজুর কাছে যাবো।”
–” তুই এখন আমার সাথে যাবি।” দাঁতে দাঁত চেপে বললো ইবাদ।
–” আরে কিন্তু….” আবিয়াকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওকে টানতে টানতে ভার্সিটির পিছনের দিকটায় নিয়ে আসলো ইবাদ।এদিকে আবিয়া তাকে বকেই যাচ্ছে।ইবাদ তার মুখে আঙ্গুল দিয়ে বললো,
–” হুসস!!”
–” কেন আমি..” আবিয়াকে থামিয়ে দিলো আনার ইবাদ।বললো,
–” তুই কি বুজিস না আবিয়া?” করূন গলা ইবাদের।
–” আজীব! কি বুজবো আমি?” মুখ থেকে ইবাদের হাত সরিয়ে বললো আবিয়া।
–” তুই এমন কেন?”
–” আরে আমি এমন আবার কি?তুই সর তো আমি ক্রাশ জিজুর কাছে যাবো।তাকে জিজ্ঞেস করবো তার কোন ছোট ভাই আছে না-কি যদি থাকে তাহলে তার সাথে লাইন মারার ট্রাই করবো।”
আবিয়ার কথায় ইবাদ রেগে আবিয়ার বাহু চেপে ধরে চিল্লিয়ে বললো,
–” স্টোপ আবিয়া!! কেন বুজিস না তুই?তোর মুখে অন্য কারো নাম শুনলে আমার কষ্ট হয়।কেন তুই আমার চোখের ভাষা বুজিস না?আমি যে প্রতিদিন কষ্ট সয্য করে যাচ্চজি।কেন বুজিস না যে আমি তোকে ভালোবাসি।”
আবিয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো ইবাদ।জোড়েজোড়ে নিশ্বাস নিতো লাগলো সে।প্রচন্ড রাগে তার সারা শরীর কাঁপছে।দু-হাতে মাথা চেপে ধরলো সে।হঠাৎ আবিয়া ঝড়ের গতিতে ইবাদকে জড়িয়ে ধরলো।শক্ত করে খুব শক্ত করে ধরলো।ইবাদ অবাক কি হলো এটা।আবিয়া ইবাদের বুকে আর একটু মিশে গিয়ে কান্নারত গলায় বললো,
–” এতোদিন লাগলো এটা বলতে?আমি যে এই শব্দগুলো শোনার জন্যে কতোটা পাগল ছিলাম তুই জানিস না?”
প্রচন্ডরকম শক পেয়েছে ইবাদ।সে তব্দা খেয়ে দাড়িয়ে আছে।আবিয়া নিজেই ইবাদের হাত দুটো নিয়ে নিজের কোমড়ে রাখলো।তারপর বলে,
–” কি আমাকে জড়িয়ে ধরবি না?”
ইবাদ তাকালো আবিয়ার দিকে মেয়েটা কতো সুন্দর করে মিশে আছে ওর বুকে।ইবাদ ব্যাপারটা বুজতে পেরেই ওর মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে উঠলো তার মানে আবিয়াও তাকে ভালোবাসে।ইবাদ আবিয়াকে আগলে নিলো নিজের বাহুতে।
–” কেন বলিস নি আমাকে?কেন এই ভালোবাসার দহনে আমাকে পুড়ালি?”ইবাদের কথা আবিয়া অভীমান করে বললো,
–” মেয়েরা কি আগে বলে?মেয়েদের লজ্জা করে না ভালোবাসার কথা বলতে। তুই আগে বললি না কেন? আমি যে তোকে ভালোবাসি সেটা তুই বললেই তো আমি বলে দিতাম।এতোদিন তোকে জ্বালানোর জন্যেই তো প্রতিদিন ছেলেদের নিয়ে প্রসংশা করতাম যাতে তুই জ্বেলাস হয়ে নিজের মনের কথা বলে দিস।কিন্তু তুই একটা হারামি তুই কোন প্রতিক্রিয়াই দেখাতি নাহ।”
–” ওরে চালাক রে তাহলে এই ছিলো তোর মনে।”
–” হাহ্ এইগুলো না করলে তুই যে আঁতেল কোথাকার নাহলে জীবনেও নিজের মনের কথা বলতি নাহ।”
–” হয়েছে আর অপমান করিস নাহ।এইবার বলে দে নাহ।”
আবিয়া হেসে বললো,
–” আমি তোকে ভালোবাসি ইবাদ।”
আবিয়ার কথায় ইবাদ ভ্রু-কুচকে তাকালে আবিয়া বলে,
–” কি?”
–” ‘তুই’ বলে আর ডাকবি না;এখন থেকে ‘তুমি’ ঠিক আছে।”
–” আচ্ছা!”
–” পাগলি একটা।”
ইবাদ আবিয়া একে অপরকে আরো নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরলো।
———
ইয়াসিবা বিড়বিড় করে আশেপাশের মেয়েগুলোকে বকতে বকতে আফ্রিদের কাছে এসে দাড়াতেই আফ্রিদের চিন্তিত মুখ ওর নজরে পড়লো।ইয়াসিবা অবাক হলো কি হয়েছে তার আফ্রিদের তাকে এতো চিন্তিত লাগছে কেন বুজতে পারছে না সে? ইয়াসিবা অস্থির হয়ে বললো,
–” কি হয়েছে আফ্রিদ আপনার?”
আফ্রিদ কোন কথা বললো শুধু হুট করে মাঠ ভরা স্টুডেন্ট’সদের সামনে ইয়াসিবাকে জড়িয়ে ধরলো।
ইয়াসিবা এইবার আরো চিন্তাগ্রস্ত হয়ে উঠলো লোকটার কি হলো কে জানে?এরকম আচঁড়ন করছে কেন? ইয়াসিবার আশেপাশে চোখ যেতে দেখে সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে; আর মেয়েগুলোর তো চেহারা দেখার মতো হয়েছে।ইয়াসিবা মনে মনে খুশি হলো যাক লুচুনি গুলো বুজেছে যে আফ্রিদ শুধু তার।ইয়াসিবা এইবার আফ্রিদের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে আস্তে করে বললো,
–” কি হয়েছে আপনার?কি নিয়ে এতো চিন্তিত আপনি?আমাকে বলুন।”
আফ্রিদ এতোক্ষন চোখ বুজে ছিলো ইয়াসিবার কথায় চোখ তুলে তাকালো।চোখ খুলতেই সে দেখে সবাই ওদের দেখছে তাই সে ইয়াসিবাকে ছেড়ে দিয়ে ওর হাত ধরে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
–” চলো আমার সাথে।”
ইয়াসিবাও কোন কথা বললো না চুপ-চাপ আফ্রিদের সাথে চলতে লাগলো।আফ্রিদ তাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো গাড়ি চলছে আপন গতিতে।ইয়াসিবা কিছুই বলছে না শুধু তাকিয়ে আছে আফ্রিদের মুখপাণে কতোটা প্রেসারাইজ দেখাচ্ছে তাকে।
অনেক্ষনবাদে আফ্রিদ গাড়ি থামায়।ইয়াসিবা জানালা খুলে দিয়ে দেখে এটা একটা নদীর পাড়।প্রচন্ড সুন্দর আবহাওয়া! চারদিকে হিমেল বাতাস,নদীতে উত্তাল ঢেউ,পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। ইয়াসিবা খুশি মনে আফ্রিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
–” আমরা এখানে কেন?”
আফ্রিদ কিচ্ছুটি না বলে শুধু জানালার কাঁচগুলো বন্ধ করে দিলো।জানালা বন্ধ করে দেওয়াতে ইয়াসিবা অবাক হয়ে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করতে নিবে তার আগেই আফ্রিদ তাকে হেচঁকা টানে নিজের কাছে এনে একটুও অপেক্ষা না করে ইয়াসিবার ওষ্ঠদ্বয় নিজের ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা আকড়ে ধরলো।এদিকে ইয়াসিবা আকস্মিক ঘটনায় কিছুই বুজতে পারছে না কি হচ্ছে।সে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে।কিন্তু যখন আফ্রিদের চুমু খাওয়ার তীব্রতা বৃদ্ধি পেলো; ইয়াসিবা আবেশে চোখ বুজে ফেললো।নিজেও আরো আফ্রিদের বুকের মাজে সিটিয়ে গেলো,আফ্রিদকে নিজের সাথে আকড়ে ধরলো।আফ্রিদ তো নিজের প্রিয়তমার অধরজোড়ার সুধাপাণে ব্যস্ত।অনেক্ষন বাদে ইয়াসিবার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ওর গলার ওরনাটা সরিয়ে দিয়ে সেখানে ছোট ছোট উষ্ম স্পর্শ দিতে লাগলো আফ্রিদ,এদিকে ইয়াসিবা আফ্রিদের এই তীব্র ভালোবাসাময় স্পর্শ সয্য করতে না পেরে প্রায় নেতিয়ে গিয়েছে।সে দু-হাতে আফ্রিদের গলা জড়িয়ে ধরলো।আফ্রিদ এইবার সরে আসলো ইয়াসিবার কাছ থেকে।কিন্তু মেয়েটা তাকে ছাড়ছেই না।বউটা যে তার প্রচন্ড লজ্জাবতী,দেখো এটুকুতেই লজ্জায় কেমন নেতিয়ে তার বুকের সাথে লেপ্টে আছে।আফ্রিদ ধীরগলায় ডাকলো,
–” ইয়াসিবা।”
ইয়াসিবার কোন জবাব নেই কিন্তু সে চেষ্টা করছে পারলে আফ্রিদের বুক চিড়ে সেখানে ডুকে যেতে।
–” লাজুকলতা।”
ইয়াসিবা এইবার একটা জোড়ে নিশ্বাস ছাড়লো।কম্পিত গলায় বললো,
–” এভাবে ডাকবেন। আপনার এই ডাকটায় ভয়ানক এক মাদকতা আছে যেখানে আমি সাড়া না দিয়ে পাড়ি নাহ।কিন্তু এই মুহূর্তে আমাকে তাকাতে বলবেন ন আপনার দিকে।তাহলে যে আপনার লাজুকলতা লজ্জায় শ্বাস আটকে নির্ঘাত মারা যাবে।”
আফ্রিদ নিশব্দে হাসলো।সময় থেমে যাক ভালোবাসার মানুষ দুটো একে অপড়ের মাজে বিলীন থাকুক চিরকাল।
#চলবে,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে