অনুভূতিটা তোমায় ঘিরে পর্ব-০৬

0
588

#অনুভূতিটা_তোমায়_ঘিরে🥀🌺
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি🥀❤️
#পার্টঃ০৬🥀💜
আফ্রিদ হাস্পাতালে যাবে তাই রেডি হয়ে নিচে নেমে আসলো।আজ সার্ভেন্ট’স রাই রান্না করেছে।খানিক বাদে ইয়াসিবাও নিচে নেমে আসলো।আফ্রিদ ইয়াসিবার দিকে তাকালো মেয়েটা কালো একটা সেলোয়ার স্যুট পড়েছে,সাথে ম্যাচিং ইয়ারিংস,আর হালকা সাঁজ এতেই যেন মায়ারাজ্যের রাজকন্যা লাগছে তাকে।ইয়াসিবা আড়ঁচোখে একবার তাকালো আফ্রিদের দিকে লোকটা তাকে দেখছে একধ্যানে তাকিয়ে আছে।ইয়াসিবা এখনো চোখ তুলে তাকাতে পারছে না আফ্রিদের দিকে সকালের কথা মনে পড়লেই ওর লজ্জায় শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়।আফ্রিদ এগিয়ে এসে হাত বাড়ালো ইয়াসিবার দিকে তারপর বললো,

–” মাই বিউটিফুল ওয়াইফি!ক্যান আই?”
ইয়াসিবা হেসে আফ্রিদের হাতে হাত রাখলো।আফ্রিদ তাকে চেয়ারে বসিয়ে নিজে বসলো।তারপর এক প্লেটে খাবার বেড়ে নিজে খেলো সাথে ইয়াসিবাকেও খাইয়ে দিলো।খাওয়া দাওয়া শেষে দুজন বেড়িয়ে গেলো।আফ্রিদ গেলো তার হাস্পাতালে আর ইয়াসিবা গেলো তার ভার্সিটিতে।আফ্রিদ এর হাস্পাতাল আর ইয়াসিবার ভার্সিটি পাশাপাশি। যেতে মাত্র ২ মিনিটের মতো লাগে।
ইয়াসিবা ভার্সিটিতে পৌছাতেই কোথা থেকে যেন আবিয়া দৌড়া এসে ঝাপটে ধরলো ওকে।এতে ইয়াসিবা দু-কদম পিছিয়ে গেলো।আবিয়া লাফাচ্ছে রিতিমতো।

–” দোস্ত দোস্ত!! আজ কতোদিন পর তুই এলি।আ’ম সো হ্যাপি।”
ইয়াসিবা বহু কষ্টে আবিয়াকে ছাড়িয়ে বললো,
–” কেন হ্যাপি?আমাকে কি জীবনেও দেখিস নাই?”
–” এরকম করে বলছিস কেন?”
–” ওহ তো এমনি ছাগল পাগল কোথাকার।” পিছন থেকে ইবাদের কথায় হেসে ফেললো ইয়াসিবা।ইবাদ এবার ইয়াসিবাকে বলে,
–” কেমন আছিস?”
–” আলহামদুলিল্লাহ!! তুই?”
–” আমি ভালো থাকি আর কিভাবে তুই দুইদিন ছিলি নাহ এই পাগলকে সামলাতে সামলাতে আমার বেহাল দশা!”
ইবাদের কথায় আবিয়া ক্ষেপে গেলো।তেড়ে এসে বলে,
–” কি বললি তুই?আমাকে দু দুবার পাগল বলেছিস।শয়তান ছেলে আজ তোর চুল ছিরে ফেলবো।”
আর এক মুহূর্ত না থেমে আবিয়া ইবাদের চুল ধরে টানতে লাগলো।আর ইবাদ ও কম যায় না সেও আবিয়ার চুল ধরে টানতে লাগলো।এদিকে বিষ্ময়কর চোখে তাকিয়ে আছে ইয়াসিবা।সে জানে এই দুটো সারাদিন ঝগড়া করে।তাই বলে ভার্সিটির মাজে এইভাবে চুল ধরে টানাটানি করবে ভেবে পায়না ইয়াসিবা।কে বলবে?এই দুটো ভার্সিটি স্টুডেন্ট।ইয়াসিবা দ্রুত গিয়ে দুটোকে আলাদা করলো।এখন ইবাদ আর আবিয়া মাথা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
–” ইয়ু আমার মাথা ঘুরে কেন?”
–” ঘুরবে না চুলাচুলি করলে এমনি হবে।” নাক-মুখ কুচকে বললো ইয়াসিবা।
–” দোস্ত এই আবিয়া হাতিটা কি খায় আল্লাহ্ জানে এতো শক্তি হাতে।আহ্ আমার মাথা।”
–” ভালো হয়েছে এখন মন চাইতেছে দুটোকেই মাথা একসাথে করে ঠাস করে বারি মারি।”
আবিয়া ইয়াসিবার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বললো,
–” আচ্ছা দোস্ত শুন!”
ইয়াসিবা তাকালে আবিয়া আবার বলে,
,–“দোস্ত ক্রাশ খেয়েছি।”
–” হ্যা সেতো তুই প্রতিদিন ওই খাস।”
–” নাহ এইবার সিরিয়াস ক্রাশ।জামাই বানানোর ইচ্ছা আছে।”
এদিকে আবিয়ার কথাগুলো শুনে ইবাদের মুখটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো।এই মেয়েটা কি বুজে না যে ইবাদ তাকে কতোটা ভালোবাসে? তাও কেন এমন করে সে?নাহ! অনেক সুযোগ দিয়েছে সে আর না। এইবার যা করার সব সরাসরি করবে সে।এই মেয়ে বেশি তিরিংবিরিং করলে দরকার পড়লে হাত-পা ভেঙ্গে দিয়ে তাকে কোলে নিয়ে ঘুরবে।
–” দোস্ত এতো জোস পোলা।”আবিয়া বললো।
–” এমন করে বলছিস যেন কোন দেশের রাজা।”
–” রাজা কি তার থেকেও হ্যান্ডসাম, ড্যাসিং উফ” পুরাই হিরো।জানিস কোথায় আছে সে এখন?”
–” আমি কিভাবে বলবো?” প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে বললো ইয়াসিবা।”
–” ওই হাস্পাতালের মালিক সে আর ডাক্তার ও।এতোদিন যে কেন আমি দেখতে পাইনি আল্লাহ্ জানে আমার চোখ যে কই থাকে।”পাশের হাস্পাতালটা দেখিয়ে বললো আবিয়া।
চমকে আবিয়ার দিকে তাকালো ইয়াসিবা।এই হাস্পাতালের মালিক তো আফ্রিদ।তবে কি তার কথাই বললো আবিয়া?না-কি সে ভুল শুনেছে?
ইয়াসিবা কাঁপা হাতে নিজের ফোনে আফ্রিদ আর তার একটা ছবি বের করলো।এদিকে তো আবিয়া বকরবকর করেই যাচ্ছে তার তাকে ক্রুব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইবাদ।
ইয়াসিবা আবিয়ার সামনে তাদের ছবিটা তুলে ধরলো যেটা আজকে সকালেরই তোলা।যেখানে আফ্রিদ ইয়াসিবা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে আর ইয়াসিবার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি।
আবিয়া কথা থামিয়ে ছবিটার দিকে তাকিয়ে রইলো।ইয়াসিবা জিজ্ঞেস করলো,
–“এটাই কি তোর সেই ক্রাশ?”
–” হ..হ্যা দোস্ত।কিন্তু তুই উনার সাথে মানে?” অবাকের চরম পর্যায়ে আবিয়া।
–” এই হাস্পাতাল ‘ দ্যা মেডিল্যাপ প্লাস’ এর মালিক মিষ্টার আফ্রিদ চৌধুরী আমার হাজবেন্ট।মানে বুজতে পারছিস?আমিই মিসেস আফ্রিদ চৌধুরী।”
ইবাদও এইবার এই কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো।আবিয়া আর ইবাদ দুজনেই অবাক ইয়াসিবা যে বিবাহিত তারা কেউ জানতো নাহ।ইবাদ বললো,
–” তুই সত্যিই বিবাহিত?”
–” হ্যা! আর আফ্রিদই আমার হাজবেন্ট।”
–” তাহলে এতোদিন বলিস নি কেন?”
–” তার পিছনে অনেক কাহিনি বলবো একদিন সময় করে।” কথাটা বলেই ইয়াসিবা আবিয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটা এখনো আহাম্মক বনে দাঁড়িয়ে আছে।আবিয়াকে এইভাবে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হেসে ফেললো ইয়াসিবা।অনেক হাই বোল্টেজের ঝাটকা খেয়েছে বেচারি।
যতোবার কোন ছেলের উপর ক্রাশ খায় সেই ছেলে হয়তো বিবাহিত হয় নাহলে তার গার্ল্ফ্রেন্ড থাকে।
ইয়াসিবা আলতো করে ডাকে আবিয়াকে।
–” আবিয়া।”
সাথে সাথে ইয়াসিবা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে নিতেই ইবাদ তাকে ধরে ফেলে।ইবাদ অস্থির হয়ে আবিয়াকে কোলে তুলে নিয়ে বটগাছের নিচে গিয়ে বসলো।ইয়াসিবাও সাথে সাথে এলো।
ইবাদ আবিয়ার গালে হালকা চাপড় মেরে বললো,
–” এই আবিয়া চোখ খুল।তাকা আমার দিকে। আবিয়া!”
ইবাদ অস্থির হয়ে গেছে।হঠাৎ আবিয়া যে জ্ঞান হারাবে ইবাদ ভাবতেও পারিনি।ইবাদকে এমন হাইপার হতে দেখে ইয়াসিবা বললো,
–” ভালোবাসিস আবিয়াকে?”
আবিয়া ডাকা থামিয়ে স্থির দৃষ্টিতে তাকালো ইবাদ।ইয়াসিবা আবার একই কথা জিজ্ঞেস করলো।ইবাদ এইবার বললো,
–” হ্যা! প্রচন্ড ভালোবাসি।”
–” তাহলে বলিস না কেন?”
–” ওহ বুজে নিতে পারে নাহ? আমার চোখের ভাষা কি বুজতে পারে নাহ?এইযে ও প্রতিদিন একেক ছেলেকে নিয়ে প্রসংশা করে ক্রাশ খায় বলে তখন আমার ব্যাথিত চোখ দুটো কি ও দেখে না?”
–” জানিসই তো ও একটু ছেলেমানুষী করে তুই বলে দেনা নিজের মনের কথা।”
–” ও যে পাগল ছাগল সোজা কথায় বুজবে নাহ।এইবার ওকে থাপরিয়ে বুজান লাগবেম।” রাগী গলা ইবাদের।ইয়াসিবা হেসে ইবাদের বাহুতে চাপড় মেরে বললো,
–” রাগিস না।এইবার এর জ্ঞান ফিরা।”
ইবাদ মাথা ঝাকিয়ে ব্যাগ থেকে পানির বোতাল বের করে আবিয়ার মুখে পানির ছিটা দিলো।কিছুক্ষনের মাজেই আবিয়ার জ্ঞান ফিরলো।সে মাথার দু-পাশে চেপে ধরে উঠে বসতেই ইয়াসিবার দিকে নজর যায়।মুহূর্তেই একটু আগের ঘটনা মনে পড়তেই সে বড়বড় চোখে তাকিয়ে তুতলিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–” তুই বিবাহিত?”
ইয়াসিবা মাথা ঝাকালো।
–” তোর হাজবেন্ট এই হাস্পাতালের মালিক আফ্রিদ চৌধুরী?”
ইয়াসিবা মৃদ্যু হেসে আবারও মাথা ঝাকালো।
সাথে সাথে আবিয়া ভ্যা করে কেঁদে দিলো।
–“এখন আমার কি হবে গো?আমি যার উপর ক্রাশ খাই সেই কেন এরকম হয়?হয় বিবাহিত নাহলে জিএফ আছে।আর শেষে কি-না যাকে পার্মেনেন্ট করতে চাইলাম সেই না-কি আমার বেস্টুর বর।ইয়া মাবুদ!”
ইবাদ এইবার প্রচুর রেগে গিয়ে দিলো এক রাম ধমক।
–” চুপ বেয়াদপ মেয়ে আর একবার ভ্যা ভ্যা করবি তো থাপ্রিয়ে গাল লাল করে দিবো।”
আবিয়া কতোক্ষন ইবাদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর আবারো ভ্যা করে কেঁদে দিলো।
–” ইয়া মাবুদ! এ কোথায় এনে ফাসাইলা তুমি।”
–” আবিয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।” ইবাদের রাগী চিৎকারে সাথে সাথে কান্না থামিয়ে আবিয়া মুখে আঙ্গুল দিয়ে ড্যাবড্যাব করে ইবাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
–” আমি চুপ আর একটা কথাও বলবো নাহ।”
এদিকে ইয়াসিবা এদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।
💜
আসলে হাস্পাতাল নতুন উঠানো হয়েছে মাত্র ৫ মাস ধরে চালু হয়েছে।আফ্রিদ আগে অন্য হাস্পাতালে বসতো।কিন্তু এই হাস্পাতালটা কমপ্লিট হতেই সে এখানে এসে পড়ে।আর আফ্রিদ সচরাচর মাস্ক পড়েই বাহির হয়।আর এমনিতেও সে গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা হাস্পাতালে ডুকে যায় তাই তাকে কেউ আর বেশি দেখতে পায় না।শুধু যারা পেসেন্ট থাকে তারাই একটু দেখতে পায়।
আর ইয়াসিবা যে বিবাহিত সেটা আফ্রিদের সাথে মান অভিমান থাকার কারনেই সে কাউকে বলেনি যে সে বিবাহিত।
আর এখন এই সত্যি কথা শুনেই তার প্রিয় দুই বন্ধু টাস্কিত!”
#চলবে,,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে