অনুভূতিটা তোমায় ঘিরে পর্ব-০৫

0
786

#অনুভূতিটা_তোমায়_ঘিরে🥀🌺
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি🥀❤️
#পার্টঃ০৫🥀💜
সকালের কারো মিষ্ট ডাকে ঘুমু ঘুমু চোখ দুটো মেলে তায়ায় ইয়াসিবা।পরক্ষনেই সামনের মানুষটিকে দেখেই তার চেহারায় যেন একটা প্রাপ্তির হাসি ফুটে উঠলো।আজ কতোটা দিন পর সে আগের আফ্রিদকে দেখতে পারছে।ইয়াসিবাকে নিজের দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আফ্রিদ কিঞ্চিত হাসলো।তারপর আলতো হাতে ইয়াসিবা’র গাল স্পর্শ করলো।ইয়াসিবা আবেশে চোখ বুজে নিলো।এই মানুষটার এই আলতো হাতের স্পর্শটাও যে ইয়াসিবাকে স্বর্গীয় সুখ প্রদান করে তা কি সে জানে?

–” আমার ঘুমকুমারী উঠবেন না?আজকের সকালটা আল্লাহ্ তায়ালার নাম নিয়ে শুরু করা যাক।”

আফ্রিদের কথায় ইয়াসিবা চোখখুলে প্রাপ্তির হাসি দিলো।এইতো…এইটাই তো সে চেয়েছিলো খোদার দরবারে এতোদিন।অবশেষে তার রব তার দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছে।ইয়াসিবা ছোট বাচ্চাদের মতো আদুরে আদুরে মুখ বানিয়ে দু-হাত উপরে তুলে বাচ্চাদের মতো ভঙ্গি করে আফ্রিদকে বুজালো যে তাকে কোলে নিয়ে ফ্রেস করিয়ে আনতে।আফ্রিদ ইয়াসিবার কান্ড দেখে হেসে দিলো। তারপর ইয়াসিবাকে কোলে তুলে নিয়ে ওর নাকেনাক ঘসে দিয়ে বললো,

–” এতো বড় হয়ে গেলে এখনো সেই আগের বাচ্চা ইয়াসিবাই আছো।”
–” আমি আজীবন আপনার কাছে আগের ইয়াসিবা হয়েই থাকতে চাই।যেই ইয়াসিবাকে আফ্রিদ ভালোবেসেছিলো।!”
–“আচ্ছা।”
–” হ্যা!”

আফ্রিদ ইয়াসিবাকে নিয়ে ওয়াশরুমে নামালো ওকে সুন্দর ভাবে ফ্রেস করিয়ে দিয়ে দুজনে একসাথে ওজু করে এসে নামাজ আদায় করে নিলো।মসজিদ দূরে হওয়ায় আফ্রিদ ঘরেই নামাজ পড়লো।নামাজ আদায় শেষে আফ্রিদ বললো,

–” তুমি বারান্দায় যাও আমি আসছি।”
–” কোথায় যাবেন?”
–” বললাম না আসছি।”
–” আচ্ছা!”

ইয়াসিবা বারান্দায় চলে গেলো।শীতের ভোর হওয়াতে এখনো কুয়াশা কাটেনি।তবে ইয়াসিবার মনের কুয়াশা কেটে গেছে।মৃদ্যু মন্দ বাতাস এসে ইয়াসিবার গা ছুঁয়ে যাচ্ছে।নামাজ পড়ায় আজ কতোটা সতেজ লাগছে,দেখেই বুজা যাচ্ছে কতোটা খুশি আজ মেয়েটা,ইয়াসিবার চুলগুলো ছাড়া বিধায় কিছুক্ষন পর পর হালকা করে দুলে উঠছে,আর উড়ছে ইয়াসিবার শাড়ির আচঁল।এই হৃদয় কাঁপানো দৃশ্য কেইবা না চায় দেখতে।কফি হাতে বারান্দায় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রিয়তমার এই এই অপরূপ রূপ দেখতে ব্যস্ত আফ্রিদ।

কামের পিঠে চুল গুজে দিয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই আফ্রিদকে কফি গাতে বারান্দার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো ইয়াসিবা।ইয়াসিবা আফ্রিদের কাছে গিয়ে আস্তে করে বললো,

–” এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”
–” নিজের প্রিয়তমাকে প্রেমের সিক্ততায় আড়ষ্টতা নিয়ে দেখছিলাম।”
ঘোরমাখা কন্ঠ আফ্রিদের।আর আফ্রিদের এই কথায় যেন এক ভয়ংকার মাদকতা উপলব্ধি করতে পারলো ইয়াসিবা।সারা শরীর জুড়ে যেন তার ভালোবাসার এক অজানা বাতাস বয়ে গেলো।চোখ বুজে ফেললো সে।কিন্তু খানিক বাদে আচমকা তাকে আফ্রিদ পাজাঁকোলে তুলে নেওয়াতে ঘাবড়ে গিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরলো।আচমকা আফ্রিদ এমন করবে ভাবতে পারেনি সে।
আসলে আফ্রিদ ইয়াসিবাকে চোখ বুজে থাকতে দেখে পাশের টেবিলে কফি মগ দুটো রেখে ওকে কোলে তুলে নেয়।
..
ইয়াসিবাকে নিয়ে আফ্রিদ ডিভানে বসলো।ইয়াসিবাকে কোলে নিয়েই সে কফি মগদুটো নিলো।তারপর দুজনে কফি পান করে সকালের ভোরের আবহাওয়া উপভোগ করতে লাগলো।ইয়াসিবা কফি শেষ করে বসে আছে।আফ্রিদ ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আছে।সে ভেবে পায়না একটা মেয়ে এতোটা গরম কফি কিভাবে খেতে পারে।যেখানে আফ্রিদ ছেলে হয়েও পারে নাহ। আফ্রিদকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইয়াসিবা বলে,

–” কি হয়েছে এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”,
–” দেখছি তোমায়।”
–” আমি কি করলাম?”
–” কিছুই করোনি।”
–” তাহলে?”
–” তুমি সব কিছু এতো গরম খাও কিভাবে? আমি পুরুষ মানুষ হয়েও পারিনা গরম কিছু খেতে।”

আফ্রিদের কথায় ইয়াসিবা খিলখিল করে হাসলো।আর তার হাসিতে মাতাল আফ্রিদ।বললো,

–” এভাবে হেসো না সুন্দরী।”
–“কেন?”
–” এইযে বুকে বড্ড লাগে।” বুকের বা-পাশ দেখিয়ে আফ্রিদ বলে।ইয়াসিবা আবারো হেসে দিলো।
আফ্রিদ বুকের বা-পাশে চেপে ধরে বললো,
–” শেষ আমি। ওগো মোর মায়াবী কন্যা এইবার তো হৃদয়টা বুজি আপনার এই হাসির ঝংকারের এই তীরে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলো।”
ইয়াসিবা হেসেই বললো,
–” কি হয়েছে আপনার?”
–” ভয়ানক এক অসুখ।”
–” কিসের অসুখ?”
–” ভালোবাসাময় অসুখ।”
–” এখন আমি কি করতে পারি আপনার জন্যে?”
–” কিছু না মায়াবতী শুধু একটু অমৃত পান করিয়ে স্বর্গীয় সুখের রাজ্যের আংশিক দেখা দিন আমায়।” নেশাজড়ানো কন্ঠ আফ্রিদের।আফ্রিদের এই নেশাজড়ানো কন্ঠের আবদারটা কিসের তা ইয়াসিবা ভালোই বুজতে পারলো।মুহূর্তেই লজ্জায় ইয়াসিবার গাল দুটো ফুলে উঠলো।ইয়াসিবা আফ্রিদের কোল ছেড়ে উঠে দাড়াতে নিলেই আফ্রিদ তার হাত চেপে ধরে করুন গলায় বললো,

–” রূপবতী চলে গেলে যে ব্যাথাটা আরো বেড়ে যাবে।তোমার ওই ওষ্ঠদ্বয়ের আলতো ছোঁয়ায় আমার এই ব্যাথিত হৃদয়টা ভালো করে দেও।”

ইয়াসিবা লজ্জায় যুবুথুবু হয়ে বসে রইলো।লোকটা কি জানে না? যে তার রূপবতীর যে অনেক লজ্জা, এতো লজ্জা পেরিয়ে সে কিভাবে? ইসস! আর ভাবতে পারছে না ইয়াসিবা।তবুও কাঁপা গলায় বললো,
–” আপনার রূপবতীর ওষ্ঠদ্বয়ের ছোঁয়া আপনি নিজেই নিয়ে নিনি না।আপনার প্রিয়তমার যে বড্ড লজ্জা।”
–” এভাবে বললে যে আরো কিছু পাবার তৃষ্ণা বেড়ে যায়।” ইয়াসিবা আফ্রিদের ঠোঁট চেপে ধরলো ওর কথায়।আফ্রিদ ইয়াসিবার হাতের তালুতে চুমু খেলো।কেঁপে উঠলো ইয়াসিবা।আফ্রিদ ইয়াসিবার কোমড় জড়িয়ে ধরে টেনে নিজের বুকের মধ্যিখানটায় নিয়ে আসলো।ইয়াসিবা নিজের দৃষ্টি এখনো নিচের দিকে আবদ্ধ করে রেখেছে।

–” লাজুকলতা তাকাবে নাহ।”,
–” উহুঁ!”
–” কেন তাকাও নাহ।”
–” আমি যে তাকাতে পারবো নাহ।আপনার এই মাতাল করা চাহনী যে আমার ভীতরটা বড্ড এলোমেলো করে দেয়।” প্রচন্ড মিইয়ে যাওয়া গলাহ আস্তে করে বললো ইয়াসিবা।

–” ভালোবাসি ইয়াসিবা!” আফ্রিদের মুখে যতোবার এই ‘ভালোবাসি’ কথাটা শুনে ততবার ইয়াসিবা তার হৃদয়টায় একটা সুখের রাজ্যের দেখা পায়।ইয়াসিবা চোখ তুলে তাকাতেই আফ্রিদের তপ্ত ওষ্ঠদ্বয়ের তীব্র ছোঁয়া নিজের ওষ্ঠ জোড়ায় পেলো।মুহূর্তেই আফ্রিদের আরো কাছে এসে একহাতে ওর পিছনের চুলগুলো অন্যহাতে ওর বুকের কাছের শার্ট খামছে ধরলো। দীর্ঘ তিন বছর, সাত মাস পর এই ভালোবাসাময় আবেগে মাখামাখি দুজন।গভীর একটা প্রেমাসিক্ত চুম্বন শেষ করে আফ্রিদ ইয়াসিবাকে ছেড়ে দেয়।ইয়াসিবা দ্রুত নিজের লজ্জারাঙ্গা মুখটা লুকোতে আশ্রয় নিলো তার স্বামির বুকের মাঝখানটায়।
আফ্রিদ ইয়াসিবার চুলগুলো একপাশে সরিয়ে দিলো।আফ্রিদের ঠান্ডা হাতের ছোঁয়ায় আরো মিইয়ে গিয়ে মিশে গেলো আফ্রিদের বুকে সে।আফ্রিদ ইয়াসিবার ঘাড়ে গাঢ়ো এক চুমু খেলো।ইয়াসিবা আলতো করে ‘ উফফফ!’ করে শব্ধ করে তুললো। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে ইয়াসিবা বললো,,

–” এভাবে ছুঁবেন না-গো আমার যে মরণ হবে।”
–” ভালোবাসা উষ্ম স্পর্শে যদি মরণ হয় তবে আমিও মরতে চাই।”

ইয়াসিবা তাকালো আফ্রিদের দিকে আফ্রিদের চোখ দুটো যেন তাকে বলছে, ‘ একটু তোর অধরজোড়ার ছোঁয়া দে- না আমায় আমি যে বড্ড কাঙ্গাল তোর ভালোবাসার কাঙ্গাল।’ ইয়াসিবা ঝুকে এলো আফ্রিদের মুখের সামনে।মৃদ্যু হেসে আফ্রিদ নিজের চোখ বুজে নিলো।ইয়াসিবা ভালোবাসা দিয়ে তপ্ত এক চুমু খেলো আফ্রিদের কপালে তারপর দু- চোখে তারপর দু-গালে ঠোঁটের দিক তাকিয়ে থেমে গেলো সে।ওকে থামতে দেখে আফ্রিদ চোখ বন্ধ অবস্থায়ই বলে উঠে,
–” এই ঠোঁটজোড়া কি কোন ঘোর অন্যায় করেছে যে তারা এই সুন্দরীর অধরের একটুখানি ছোঁয়া পাচ্ছে নাহ।”
ইয়াসিবা হাত দিয়ে আলতো স্পর্শ করলো আফ্রিদের ঠোঁটে। আফ্রিদের ঠোঁট ইয়াসিবার আঙুলে চুমু খেলো প্রতিবার যতোবার ইয়াসিবা হাত ছুঁইয়েছে।
অবশেষ..অবশেষে ইয়াসিবা সময় নিয়ে গভীর এক চুমু খেলো আফ্রিদের ঠোঁটে।তারপর ঝাপটে ধরলো আফ্রিদকে।
আফ্রিদও তাকে জড়িয়ে ধরলো। দুজন ভালোবাসার মানুষের জন্যে এর চেয়ে আর সুখের সময় কিইবা হতে পারে? আজ আফ্রিদ পরিপূর্ণ। হ্যা সে তার প্রিয়সীর ভালোবাসায় পরিপূর্ণ।

#চলবে,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে