#অনুভূতিটা_তোমায়_ঘিরে🌺🥀
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি🥀💜
#পার্টঃ০৪🥀❤️
ওয়াসরুমে গিয়ে স্থির হয়ে আছে ইয়াসিবা গাল দুটো লাল হয়ে ফুলে উঠেছে লজ্জায়।আফ্রিদ তাকে ধমকে ওয়াসরুমে পাঠিয়েছে বলেছে কামিজ টা চেঞ্জ করে আসতে পিঠে মেডিসিন লাগাবে সে।কিন্তু ওয়াসরুমে এসে সে টাওয়ালটা গায়ে জড়িয়ে এখন লজ্জায় লাল,নীল হয়ে বসে আছে ইয়াসিবা।নিজের কাছেই নিজের লজ্জা লাগছে তার তাহলে আফ্রিদের কাছে যাবে কিভাবে?ভেবে পাচ্ছে না ইয়াসিবা তাই থম মেরে বসে আছে।
অনেক্ষন যাবত অপেক্ষা করেও ইয়াসিবাকে আসতে না দেখে কপালে সূক্ষ্ম ভাজ পড়ে আফ্রিদের।মেয়েটা এতোক্ষন করছেটা কি ভেবে পাচ্ছে না সে।বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় আফ্রিদ তারপর ওয়াসরুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করে বললো,,
–” ইয়াসিবা কি হয়েছে তোমার?আর কতোক্ষন লাগবে?অনেক রাত হয়েছে মেডিসিন লাগিয়ে ঘুমোতেও হবে এমনিতেও তোমার শরীর ভালো নেই।ইয়াসিবা!!”
আফ্রিদের ডাকে কেঁপে উঠে ইয়াসিবা।তারপর আস্তে করে জবাব দেয়,
–” আপনি যান আমি আসছি।”
–” হুম!! জলদি এসো।”
আফ্রিদ গিয়ে বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।এদিকে খানিক বাদে বের হয়ে আসে ইয়াসিবা গায়ে টাওয়াল জড়ানো ওইযে লম্বা কোটের মতো একধরনের টাওয়াল থাকে মনে হয় বাথরাব বলে ওটাকে তা পড়েই বের হয়ে আসে।গুটিগুটি পায়ে গিয়ে আফ্রিদের সামনে দাঁড়ায়।আর আফ্রিদ তো হা করে তাকিয়ে আছে।কতোটা স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে তার মায়াপরিকে।চোখমুখে মনে হয় পানি দিয়েছে তাই বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে।সামনের ছোট ছোট চুলগুলো ভেজা আর মুখে,কপালে ল্যাপ্টে আছে।একধ্যানে তাকিয়ে রইলো আফ্রিদ।আফ্রিদকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইয়াসিবা লজ্জায় যেন পারে না মাটি খুঁরে তার মধ্যে ডুকে যেতে।ইয়াসিবা হালকা একটু কাঁশি দিয়ে উঠে আর কাশির আওয়াজেই আফ্রিদের ধ্যান ভাঙ্গে।তারপর বলে,,
–” এখানে এসে বসো।”
ইয়াসিবা কোন কথা ছাড়াই আফ্রিদের মুখোমুখি বসলো।আফ্রিদ তাকিয়ে আছে ইয়াসিবার দিকে।মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে আছে।আফ্রিদ শুনেছে মেয়েরা না-কি তাদের ভালোবাসার মানুষের সামনেই সবচেয়ে বেশি লজ্জা পায়।তাহলে ইয়াসিবাও তাকে ভালোবাসে।আফ্রিদ ইয়াসিবার প্রতিটি কাজে নিজের জন্যে অসীম ভালোবাসা খুজে পায়।তবে পুরনো সেসব কি মিথ্যে ছিলো।হ্যা!! মিথ্যেই সব মিথ্যে।আফ্রিদ ইয়াসিবার চোখে নিজের জন্যে ভালোবাসা খুজে পায় অসীম ভালোবাসা।আফ্রিদকে সব সত্যি খুজে বের করতে হবে।অতীতে কি হয়েছিলো সব জানতে হবে।তিন বছর আগে যে ভুলটা করেছে আবারও সেই একই ভুল সে করতে পারবে নাহ।শুধু মানুষের মুখের কথায় আর ভুলবে না আফ্রিদ এইবার নিজেই সন সত্যি বের করবে।ইয়াসিবার বাহু ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে আফ্রিদ।ইয়াসিবা চকিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে।আফ্রিদ মনে মনে হালকা হাসলো।ইয়াসিবার গালে হালকা করে নিজের হাত ছোঁয়ায়।কেঁপে উঠে ইয়াসিবা ওর হাত দুটো আফ্রিদের কাঁধে থাকায় আফ্রিদের কাঁধ খামছে ধরে।আফ্রিদ ইয়াসিবার গালের চুলগুলো কানের পিছে গুজে দেয়।চোখ নামিয়ে নেয় ইয়াসিবা।আফ্রিদের দিকে তাকানোর সাহস নেই তার। আফ্রিদ উঠে দাঁড়ায় তারপর ঘরের লাইট নিভিয়ে দেয়।ইয়াসিবা আফ্রিদকে ঘরের লাইট নিভাতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
–” লাইট নিভাচ্ছেন কেন?”ইয়াসিবার কথায় বাঁকা হেসে আফ্রিদ বলে,
–” তো আমার সামনে এতো আলোর মাজে নিজের উন্মুক্ত পিঠে মলম লাগাতে চাও?অবশ্য তাতে আমার কোন সমস্যা নেই।তুমি লজ্জা না পেলে আমি লাইট জ্বালিয়ে দিচ্ছি।”
ইয়াসিবা দ্রুত জবাবা দেয়,
–” নাহ নাহ! ঠিক আছে লাইট জ্বালোনোর দরকার নেই। ”
আফ্রিদ হালকা হেসে ইয়াসিবার পাশে এসে বসলো। ঘর ততোটাও অন্ধকার না।ব্যালকনি দিয়ে বাগানের লাইট জ্বালানো সেই আলো আসছে।প্রাই স্পষ্টই সব দেখা যাচ্ছে। আফ্রিদ ইয়াসিবা ঘুরিয়ে বসিয়ে দেয়।এখন ইয়াসিবার পিঠ আফ্রিদের বুক বরাবর।আফ্রিদ পিছন থেকেই ইয়াসিবার কোমড় পাশ দিয়ে হাত নিয়ে ওর পেটের কাছে ফিতাটা খুলে দেয়।ইয়াসিবা চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।
ফিতাটা খুলার পর ওর কাঁধ থেকে আস্তে আস্তে বাধরাব টা নামিয়ে দেয় আফ্রিদ।ইয়াসিবা জোড়েজোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।ইয়াসিবার উন্মুক্ত পিঠ আফ্রিদ পুরো স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছে বাগানের লাইটের আলোতে।ইয়াসিবার চুলগুলো ঘাড় থেকে সরিয়ে দেয়। ইয়াসিবা কেঁপে উঠে বিছানার চাঁদর খামছে ধরে।এক অদ্ভুত ভালোলাগায় ছেয়ে যাচ্ছে ইয়াসিবার হৃদয়।আফ্রিদ ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ইয়াসিবার পিঠে কালো তিলটা আফ্রিদকে প্রচুর টানছে মন চাচ্ছে একটু ছুঁয়ে দিতে।কিন্তু আবারও পিঠে মারের দাগগুলো দেখে বুকটা কষ্টে ছেঁয়ে যাচ্ছে।ইসস!! তার জন্যে এসব হয়েছে।আফ্রিদ নিজের মনকে আর বাধা দিলো নাহ।ভালোবাসে তো সে এই মেয়েটাকে।আর ইয়াসিবাও তাকে ভালোবাসে তা সে খুব ভালোভাবেই জানে এখন।আফ্রিদ ইয়াসিবার পিঠে নিজের ঠোঁটের উষ্ম স্পর্শ দিতে থাকলো ছোটছোট করে।এদিকে ইয়াসিবার জান যায় যায় অবস্থা। আফ্রিদ একি করছে? অসয্য সুখে সেতো মরেই যাবে।আচ্ছা আফ্রিদকি মন থেকে তার কাছে আসছে না-কি ঘোরের মাজে এসে এসব করছে।কথাটা ভাবতেই নিজের বাথরাবটা নিজের শরীরে জড়িয়ে আফ্রিদের দিকে ঘুরে বসে ইয়াসিবা।এদিকে ইয়াসিবাকে এমন করতে দেখে আফ্রিদ নিশ্চুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ইয়াসিবা কাঁপা গলায় বললো,,
–” আ..আপনি আ..আসলে ক..কি?”
আফ্রিদ বুজতে পারছে ইয়াসিবা কি বলতে চাইছে।ইয়াসিবা তার এহেম বিহেবে একটু শক খেয়েছে।আফ্রিদ নেশাধরা গলায় বললো,,
–” আমি জানি তুমি কি ভাবছো?আমি কোন ফর্মালিটিস পছন্দ করি নাহ।আমি তোমার স্বামি আমি।আর তোমাকে নিজের মতো করে ভালোবাসার অধিকার ও আমার আছে।তুমি কি আমায় সেই অধিকার দিবে নাহ?”
আফ্রিদের কথায় ইয়াসিবার চোখে পানি চলে আসলো।তবে কি আফ্রিদ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে তাকে বিশ্বাস করেছে যে আগের কোন কিছুই ইয়াসিবা ইচ্ছে করে করেনি।ইয়াসিবা ধরাগলায় বললো,
–” আপনি আমার স্বামি! আমাকে ভালোবাসা,শাষন করার সব কিছুর অধিকারই আপনার আছে।”,
তারপর আবার আফ্রিদের হাত দুটো ধরে বলে,,
–“আপনি শুধু আমাকে ভালোবাসুন আর বিশ্বাস করুন।আমি সত্যি বলছি ওইসব আমি ইচ্ছে করে কিছুই করিনি।আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি আপনি ছেড়ে অন্য কারো কাছে যাওয়া কল্পনাও করতে পারিনাহ।” ইয়াসিবা হুঁহুঁ করে কেঁদে দিলো।আফ্রিদ ইয়াসিবার চোখে পানি দেখে আফ্রিদ নিজেরও চোখে পানি চলে এসেছে।নাহ! এই মেয়েটা কখনোই তাকে তাকে ঠকাতে পারে নাহ।আফ্রিদ ইয়াসিবাকে হেচঁকা টানে নিজের বুকে নিয়ে আসে।তারপর ইয়াসিবার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে বলে,
–” হুসস! আর কেঁদো নাহ।আমি আর তোমাকে কষ্ট দিবো নাহ।আমি তোমাকে বিশ্বাস করি ইয়াসিবা।আর অনেক ভালোবাসি।কিন্তু কি কারনে তুমি তিন বছর আগে সেসব করেছিলে বলো আমাকে ইয়াসিবা।”
ইয়াসিবা কাঁদতে কাঁদতেই বলে,
–” আমি বলতে পারবো নাহ আপনাকে।আমাকে মাফ করুন।এই কথাটা না-হয় অজানাই থাক।এটা আমাকে বলতে বলবেন নাহ প্লিজ।”
আফ্রিদ বুজতে পারলো এর পিছনে অনেক বড় একটা কারন আছে যেটা ইয়াসিবা বলতে চাইছে নাহ।আফ্রিদ আর জোড় করলো নাহ ইয়াসিবাকে। মেয়েটা এমনিতেও অসুস্থ।আফ্রিদ ইয়াসিবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
বললো,,
–” হুস! আর কাঁদবে নাহ।আজ থেকে তোমার চোখে আমি আর পানি আসতে দিবো নাহ।তোমাকে এতোটা ভালোবাসা দিবো যে তুমি আগের সব বিষাক্ত স্মৃতি ভুলে যাবে।”
ইয়াসিবাকে অনেক বুজিয়ে শুনিয়ে স্থির করে ওর পিঠে মেডিসিন লাগিয়ে দিলো।তারপর নিজে শুয়ে তারপর ইয়াসিবাকে বুকে টেনে নিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।ইয়াসিবা আজ খুশিতে আত্নহারা। ওর কতোদিনের মনের আশা পূরণ হলো নিজের ভালোবাসা মানুষটি তার স্বামি হবে।আর তার বুকে মাথা দিয়ে সে নিশ্চিন্তে ঘুমাবে।আজ সে শান্তিতে ঘুমোবে।এই বুকটাই যে তার চিরশান্তির স্থান।ইয়াসিবা চোখ বুজে আফ্রিদকে আরো জোড়ে আকড়ে ধরলো।আফ্রিদ ও ইয়াসিবার কপালে চুমু খেয়ে চোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো।সেও ঘুমাবে।অনেক দিন পর আজ মনটা অনেক হালকা লাগছে তার।আজ সে সুখী পৃথিবীর বুকে চিরসুখী।
#চলবে_______
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।