#অনুভূতিটা_তোমায়_ঘিরে!🥀🌺
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি🥀❤️
#পার্টঃ০২_০৩♥🥀
রান্নাঘরে রান্না করছে ইয়াসিবা!রান্না করছে সে ঠিকই কিন্তু মন আর এখানে নেই। তরকারি নাড়াচাড়া করতে গিয়ে একসময় হাতে ছ্যাকা লেগে যায়। ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে ইয়াসিবা।
জলদি গিয়ে ট্যাবের নিচে হাত রাখে। জ্বলছে জায়গাটা প্রচুর।কিন্তু এইসব ব্যাথা ইয়াসিবার কাছে তুচ্ছ মনে হয়।
সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ না করে ইয়াসিবা সব রান্না শেষ করে টেবিলে সাজিয়ে রাখে।
কাজের মাজেই আফ্রিদ কে নিচে নামতে দেখে ইয়াসিবা।আকাশীরং এর শার্ট,আর সাদা ডেনিম প্যান্টে যেন রাজপুত্রের মতো লাগছে তাকে।
সিল্কি চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে,মাত্রই শাওয়ার নিয়েছে তাই স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।
বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকলো না ইয়াসিবা দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো। আফ্রিদ এসে চেয়ার টেনে বসে পড়লো।ইয়াসিবা তাকে খাবার বেরে দিলো।আফ্রিদ একবার খাবারের প্লেটের দিকে তাকিয়ে আবার ইয়াসিবার দিকে তাকালো।তার বলতে ইচ্ছে করছে ‘ইয়াসিবা আমার পাশে বসে খাও’ কিন্তু চেয়েও বলতে পারছে না সে।কিছুক্ষন স্থির হয়ে বসে থেকে খাবার খাওয়া শুরু করলো।কিন্তু খাবার গলা দিয়ে নামছে না।ভালোবাসার মানুষটি যদি সামনে না খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে কেই বা খেতে পারে। অল্প খেয়েই উঠে পড়ে আফ্রিদ।বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে দ্রুত প্রস্থান করলো।কারন সে দেখেছে ইয়াসিবার চোখে জল। আর এই একটা জিনিসই তাকে বারবার দূর্বল করে ফেলে।
আফ্রিদের যাওয়ারন পথে করুণ চোখে তাকিয় রইলো ইয়াসিবা।তার খুব ইচ্ছে ছিলো আফ্রিদের জন্যে সে রান্না করবে,সে আফ্রিদকে খাবার বেরে খাওয়াবে,আফ্রিদ তাকে খেতে না দেখে জোর করে খাইয়ে দিবে,কাজে যাবার আগে তার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিবে।কিন্তু তার ভাগ্যে যে স্বামির ভালোবাসা নেই।ভালোবাসা যে ছিলো না এমনটা না,শুধু কিছু ভূল বুজাবুজির কারনে ভালোবাসাটা ঘৃনার মোড়াকে মুড়িয়ে গিয়েছে।ইয়াসিবা আফ্রিদের ফেলে যাওয়া খাবার টুকুই খেতে লাগলো।শুনেছে স্বামির এটোঁ খেলে না-কি ভালোবাসা বাড়ে।যদিও এইসব গুজব মনে করে অনেকে।তবুও স্বামির এটোঁ খেতে ক্ষতি কি?ভালোবাসে তো সে মানুষটাকে।
ওয়ালেট টা ভূলে বাড়িতে রেখে যাওয়ায় আবারও ঘরে ফিরে আসে আফ্রিদ। কিন্তু বাড়ির গেটের কাছে আসতেই থমকে দাঁড়ায় সে।ইয়াসিবা তার এটোঁ খাচ্ছে। কিন্তু এইগুলা সে কেন করছে?ইয়াসিবা তো আফ্রিদকে ভালোবাসে না।তবে এইসব কি?ভেবে কুল পায়না আফ্রিদ।আর যদি ভালোবেসেই থাকে তাহলে নিজের মুখে কেন স্বিকার করে নাহ সে।কেন স্বিকার করে না যে ওইসব সব মিথ্যে ছিলো।শতবার সে জিজ্ঞেস করেছে কি কারনে সে ওইদিন এরকম করেছিলো! কিন্তু আজও সে বলতে নারাজ।তাই তো ইয়াসিবা যদি সত্যি ভালোবেসে থাকে তাই জন্যেই বিভিন্ন মেয়েদেরকে টাকা দিয়ে বাড়িতে আনে।তবে রুমে গিয়েই সে রুমে এটাচ্ড মিনি ছাদে চলে যায়।আর মেয়েটাকে বলে দেয় যেন কাছে না আসে।আর যখন ইয়াসিবা এইসব দেখে কাঁদে তখন মন চায় প্রিয়তমাকে বুকে টেনে নিতে। কিন্তু পারে না সে কিছুতেই পারে নাহ।অতীতের কথাগুলো যে তাকে বড্ড পুড়ায়।ইয়াসিবার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নিস্তব্ধে উপরে চলে যায় আফ্রিদ।ওয়ালেট টা নিয়ে একপলক ইয়াসিবার দিকে তাকিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
হাস্পাতালে এসে রোগী দেখা শুরু করে আফ্রিদ।
ভালো ডাক্তার হওয়াতে প্রচুর রোগী হয় প্রতিদিন।
আফ্রিদ যখন কাজে ব্যস্ত তখন হঠাৎ করেই কেভিনে ডুকে পরে একটি মেয়ে।সে এসেই পাশ থেকে আফ্রিদকে জড়িয়ে ধরে।এদিকে হতভম্ব হয়ে আছে আফ্রিদ।ঝড়ের গতিতে কি হয়ে গেলো বুজে উঠলো আফ্রিদ।ব্যাপারটা বুজতে পেরে এক ঝটকায় মেয়েটাকে সরিয়ে দেয় আফ্রিদ।তারপর রেগে বলে,,
–“এইসব কি আয়েশা?তোমার বিহেব এমন কেন?কতোদিন বলেছি আমার ডিউটির সময় আমার কাছে আসবে নাহ।ইনফেক্ট আমার ধারেকাছেও তোমায় আসতে বারন করে দিয়েছি।”
আফ্রিদ পাশে তাকাতেই দেখে পেসেন্টগুলো তাদের দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।
তা দেখে আফ্রিদ আয়েশাকে আবারও দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
–“লিভ নাউ।আমার কাজ আছে এখন যাও।”
আফ্রিদের রাগী ধমক খেয়ে আয়েশা কাঁদো কাঁদো হয়ে কিছু বলবে কিন্তু আফ্রিদের রাগী চোখ আর রক্তিম চেহারা দেখে ভয়ে এক ঢোক গিলে জলদি জায়গা ত্যাগ করলো।আয়েশা যেতেই আফ্রিদ আবারও নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।এই মেয়েটাকে আফ্রিদের কাছে অসয্য লাগে।যখন তখন হুট-হাট আফ্রিদকে জড়িয়ে ধরে।যা আফ্রিদের চরম বিরক্ত লাগে।মাজে মাজে তার মন চায় ঠাটিয়ে দুটো চর মারতে কিন্তু আফ্রিদের মা মিসেস কায়া চৌধুরীর জন্যে পারে নাহ।কারন আয়েশা যে তার আদরের বোনের মেয়ে।
আফ্রিদের ক্যাভিন থেকে বের হয়েই আয়েশা মিসেস কায়া চৌধুরীকে কল দিলো।
–” হ্যালো খালামুনি।”
–” কি হয়েছে আমার মামুনিটার?”
–” খালামুনি তুমি আমাকে কেন এখানে পাঠালে?তোমার ছেলে তো আমার দিকে ফিরেও তাকায় নাহ।”
–” কেন কি করেছে আজ আবার ও?”
–” আমি ওর ক্যাভিনে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেছিলাম আর ও আমাকে এতোগুলো মানুষের সামনে ধমকে বাহির করে দিলো।”
–” চেষ্টা করতে থাক মামুনি একসময় ঠিক পারবি।”
–” আর কতো?গত তিন বছর ধরে চেষ্টা করছি।ইভেন তিন বছর বাদ দেও আমি সেই ছোট থেকে ওকে ভালোবাসি কিন্তু ও আমার দিকে ফিরেও তাকায় নাহ।”
–” কি যে করবো এই ছেলেটাকে নিয়ে এই ইয়াসিবার ভূত কবে যে মাথা থেকে নামবে আল্লাহ্ জানে।আমার ছেলেটাকেও আমার থেকে দূরে নিয়ে গিয়েছে।”
–” তুমি চিন্তা করো নাহ।আই উইল ট্রাই মাই বেস্ট।”
–” হুম আচ্ছা! আর দেখি আমি কিছু করতে পারি কি-না।”
–” আচ্ছা রাখছি।”
–“হুঁ!”
❤️
বাগানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গাছে পানি দিচ্ছে ইয়াসিবা।পাশেই একটা গাছ মারা গেছে তার জন্যে ভীষন মন খারাপ তার।এই ফুল গাছটার নাম কি তা জানে না ইয়াসিবা।তবে আফ্রিদকে যবে থেকে ভালোবাসে তখন থেকে এই গাছটা তার সাথে ছিলো।আফ্রিদ থেকে দূরে যাওয়ার পরেও অনেক যত্ন করে রেখেছে কতোবার শুকিয়ে যেতে চাইছিলো কিন্তু ইয়াসিবা সযত্নে আগলে রেখেছে।
কিন্তু আজ ২ দিন ধরে এতো চেষ্টা করার পরেও গাছটা মারা গেলো।ভীষন রকমের কান্না পাচ্ছে।
ইয়াসিবা এই গাছটাকে তার আর আফ্রিদের ভালোবাসার প্রতিক ভাবতো।যতোক্ষন গাছটা ছিলো সে মনে করতো তাদের ভালোবাসা আছে।
কিন্তু গাছটা শুকিয়ে গেছে তবে কি তাদের ভালোবাসাটাও এই গাছের মতো শুকিয়ে গেলো।গাছটার গায়ে আলতো স্পর্শ করে ইয়াসিবা।বললো,
–” আমার ভালোবাসা কি এতোই দূর্বল যে এক নিমিষে শেষ হয়ে যাবে।আমি তো মন প্রান উজার করে ভালোবেসেছি তবে কেন আমার সাথেই এমনটা হলো?আমি এতিম বলে? এতিমদের কি ভালোবাসা পাবার অধিকার নেই?” চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো ইয়াসিবার।চোখের পানিটুকু মুছে চলে আসতে নিবে কিন্তু তার চোখ আটকে যায় সেই শুকিয়ে যাওয়া গাছটার দিকে।সেই গাছটার গোড়ার দিক থেকে ছোট্ট একটা চারা গাছ উঠেছে।এটা দেখেই ইয়াসিবার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি একটা হাসি উকি দিলো।তার ভালোবাসা কখনো শেষ হতে পারে নাহ।পুরনো ভালোবাসার অতীতগুলো শুকিয়ে গেলে কি হবে?ইয়াসিবা ঠিক এই নতুন চারা গাছটার মতো নতুন ভালোবাসাময় স্মৃতি তৈরি করবে।খুশি খুশি মনে ইয়াসিবা বাড়ির ভীতরে গিয়ে আফ্রিদের পছন্দের খাবার,ভুনা খিচুরি আর গরুর মাংসের ভুনা রান্না করলো সাথে শুটকি ভর্তা।আফ্রিদের অনেক পছন্দ।ইয়াসিবা যখন প্রথম বার আফ্রিদের জন্যে এইসব রান্না করে নিয়ে গিয়েছিলো তখন আফ্রিদ সেকি তৃপ্তি সহকারে খেয়েছিলো।ইয়াসিবার হাতে সেদিন অসংখ্য চুমু খেয়েছিলো।পুরনো দিনের কথাগুলো মনে পড়লেই মনটা আনন্দে ভরে যায়।সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ইয়াসিবা সব রান্না শেষ করে ফেলে।একটু কষ্ট হয়েছে কারন সকালে তার হাতটা পুরে গিয়েছিলো সেখানে এখন রান্না করতে গিয়ে আগুনের আঁচ লাগায় আবারও জ্বলছে।ঠান্ডা পানিতে হাতটা একটু ভিজিয়ে নিলো ইয়াসিবা এতে যেন একটু শান্তি পেলো সে।তারপর এক এক করে সকল খাবার সাজিয়ে রাখলো টেবিলে।ঘড়ির দিকে তাকালো ইয়াসিবা সেখানে ৯ টা বাজে।এতোক্ষনে তো আফ্রিদের চলে আসার কথা।ইয়াসিবা বসে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো।অনেক্ষন বসে থাকলো ইয়াসিবা ১০টা,১১টা,১২ টা বেজে গিয়েছে আফ্রিদের আসার খবর নেই।চোখ ভিজে উঠলো ইয়াসিবার টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে লাগলো।আফ্রিদের দেরি হতেই পারে তবে কি সে একটা ফোন দিতে পারতো ওর কাছে।এতোটাই ঘৃনা ওর জন্যে।প্রচন্ড কষ্ট বুকে নিয়েই কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে ইয়াসিবা।
#চলবে,,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।লেখায় যদি ভুল হয়ে থাকে তা আমাকে দেখিয়ে দিবেন।এতে আমি খুশি হবো।ধন্যবাদ।
#অনুভূতিটা_তোমায়_ঘিরে!!🥀🌺
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি🥀❤️
#পার্টঃ০৩🥀💜
বারোটা বেজে ত্রিশ মিনিটে হাস্পাতাল থেকে বের হয় আফ্রিদ।আজ পেসেন্ট একটু বেশিই ছিলো।এইজন্যে দেরি হয়ে গিয়েছে।বাড়িতে পৌছাতে পনেরো মিনিট লাগলো আফ্রিদের।আফ্রিদের কাছে সব সময় এক্সট্রা চাবি থাকে বাড়ির তাই কোন ঝামেলা ছাড়াই নিশব্দে বাড়িতে প্রবেশ করলো।কিন্তু বাড়িতেই ডুকেই ওর নজর সবার আগে ডায়নিং টেবিলে পড়ে সেখানে ইয়াসিবা ঘুমিয়ে আছে।ঘড়ির দিকে তাকালে দেখে বারোটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট বাজে।আফ্রিদ আস্তে করে ইয়াসিবার পাশে গিয়ে দাডায়। ইয়াসিবার মুখের দিক তাকিয়েই রইলো।এই মুখটা দেখলেই তো সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায় তার।কোমড় এর কাছাকাছি লম্বা ঘন চুল,মায়াবি মুখ,হরিণী চোখের অধিকারিণী সেই চোখে কাজলটানা,গোলাপি ঠোঁট যুগল,বা পাশের গালে ছোট্ট একটা তিল, কপালেও একটা তিল আছে।ভালোবাসার মানুষটির এই আদুড়ে রূপে তো আফ্রিদ কতোবার ঘায়েল হয়েছে তা তার নিজেরও জানা নেই।হঠাৎ ইয়াসিবার চোখে জল দেখে থতমত খেয়ে যায় আফ্রিদ।তবে কি তার জন্যেই অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে মেয়েটা?ইয়াসিবার আর একটু কাছে যেতেই ওর হাতের দিক নজর যায় আফ্রিদের।দেখে ইয়াসিবার হাত পুড়ে গিয়ে ফোস্কা পড়ে গিয়েছে,ফুলেও আছে অনেক।মুহূর্তেই মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায় আফ্রিদের।তার জন্যে রান্না করতে গিয়েই মনে গয় হাতটা পুড়েছে,বার্ন ক্রিম টাও লাগায় নি মেয়েটা ;ইনফেকশন হয়ে গেলে তখন কি করতো?এতোটা কেয়ারলেস কেন মেয়েটা?আর কেনই বা এতো কিছু করছে সে? কেন এতো ভালোবাসা দেখাচ্ছে ভেবে পায় না আফ্রিদ।ইয়াসিবার দিকে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকায় আফ্রিদ;তারপর আস্তে করে ইয়াসিবাকে কোলে তুলে নেয়।আর এদিকে ইয়াসিবার ঘুম অনেক হালকা যার কারনে সে জেগে যায় হালকা চোখ মেলে সে দেখে আফ্রিদ তাকে কোলে নিয়ে হাটছে।ইচ্ছে করেই চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় ইয়াসিবা।হোক না কিছু মিথ্যে অভিনয়;যেই অভিনয় করে প্রিয় মানুষটির ভালোবাসাময় ছোয়া পাওয়া যায়।
ইয়াসিবাকে নিয়ে রুমে এসে বিছানায় সুইয়ে দেয় আফ্রিদ।হাতটার অবস্থা অনেক খারাপ মেডিসিন লাগাতে হবে তাই উঠে দাড়াতে নেয় আফ্রিদ কিন্তু পারে নাহ।কারন ইয়াসিবা তার শার্ট শক্ত করে খামছে ধরে রেখেছে।
ইয়াসিবা ইচ্ছে করেই ধরে রেখেছে।মনে মনে একরাশ অভীমান করে থাকলেও আফ্রিদকে কাছে পেয়ে দূরে যেতে দিতেও চাইছে না ইয়াসিবা।
ইয়াসিবার চোখ দিয়ে অভিমানের অস্রু-ধারা বইতে লাগলো।আফ্রিদ বুজতে পেরেছে ইয়াসিবা সজাগ আছে;ওর চোখের জল রাশি গুলো মুক্তের মতো জল জল করছে।ইয়াসিবার দিকে খানিক তাকিয়ে থেকে আস্তে করে বলে আফ্রিদ,,
–” ছাড়ো আমাকে।”
–” উহুঁ!! বলেই আরো শক্ত করে আকড়ে ধরে আফ্রিদকে ইয়াসিবা।
–” কি উহুঁ?ছাড়ো আমাকে একটু আমি এখানেই আছি কোথাও যাচ্ছি নাহ।শুধু যাবো আর আসবো
!”
আফ্রিদের কথায় আসস্থ হয়ে ওকে ছেড়ে দেয় ইয়াসিবা।চোখ খুলে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো।আফ্রিদ গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে এসে ইয়াসিবার পাশে বসলো আর সেটা ইয়াসিবা বুজতে পেরেও তাকালো না ওর দিকে। আফ্রিদ ইয়াসিবার পোড়া হাতটায় হালকা হাত ছোয়াতেই চমকে উঠে হাতটি সরিয়ে নিতে চায় ইয়াসিবা কিন্তু তার আগেই ওর হাতটা খপ করে ধরে ফেলে আফ্রিদ।ইয়াসিবা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে,
–” কি করছেন কি হাত ধরছেন কেন?”
–” কেন আমি হাত ধরতে পারি নাহ?”
–” আমি সেটা কখন বললাম?”
–” তো কি বুজাতে চাইছো তুমি?আমি তোমার হাজবেন্ট আমার অধিকার আছে তোমাকে ছোঁয়ার।”
–” হ্যা আমি জানি… ” ইয়াসিবাকে বলতে না দিয়ে আফ্রিদ আবার বলে,
–” তারপর কি হ্যা?আমি ধরলে হাতে ফোসকা পড়ে হ্যা?ওই আকাশ তোমার হাত ধরলে বড্ড ভালো লাগে তাই নাহ?”
আফ্রিদের মুখে এইসব কথা শুনতেই ঘৃনায় চোখ বুজে নেয় ইয়াসিবা।ওর সারাটা শরীর ঘিনঘিন করছে এতোটা খারাপ কথা কিভাবে বলতে পারলো আফ্রিদ তাকে? তার কি একটুও বুক কাঁপলো নাহ? ইয়াসিবা উঠে যেতে নিতেই আফ্রিদ তার হাত ধরে আবার বসিয়ে দেয়।রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে ইয়াসিবার এতোটা আদিক্ষেতা তাকে নিয়ে কেন করছে? যদি তাকে সয্যই করতে পারে নাহ তাহলে কেন এখন আটকে রেখেছে?ইয়াসিবা রূঢ় কন্ঠেই বললো,,
–” আমাকে ধরে রেখেছেন কেন?ছাড়ুন আমি ঘুমাবো নিচে বিছানা করা লাগবে।”
–” আজ নিচে ঘুমান লাগবে নাহ! বিছানাতেই ঘুমাও ইনফেক্ট আজ থেকে বিছানাই ঘুমাও তুমি।”
–” তো আমি বিছানায় ঘুমালে আপনি কোথায় ঘুমাবেন?”,
–” আমিও বিছানায়ই ঘুমাবো।”,
আফ্রিদের এমন কথা শুনে বড় বড় চোখ করে ওর দিকে তাকায় ইয়াসিবা।তা দেখে আফ্রিদ বললো,
–” এভাবে তাকানোর কিছু নেই।আমরা স্বামি স্ত্রী এক বিছানায় ঘুমোতেই পারি।এখন আর কথা না বলে এখানে বসো।”,
আফ্রিদ ইয়াসিবাকে নিয়ে বিছানায় বসালো।তারপর ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে তারপর তুলোয় মেডিসিন লাগিয়ে ইয়াসিবার পোড়া জায়গা পরিস্কার করার জন্যে লাগাতেই ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠে ইয়াসিবা।নিজের জামা খামছে ধরে,দাঁতেদাঁত চেপে ব্যাথা সয্য করার প্রচেষ্টা চালাতে লাগলো।আফ্রিদ ইয়াসিবার দিকে তাকায় একবার আবার ইয়াসিবার হাতে ফুঁ দিচ্ছে।আফ্রিদ বুজতে পারছে পোড়া জায়টা প্রচুর জ্বলছে ওর।কিন্তু কিছু করার নেই মেডিসিন লাগাতেই হবে নাহলে যে ঘা’টা আরো বিগড়ে যাবে।ইয়াসিবার চাপা আর্তনাদে বুক কাঁপছে আফ্রিদের,চোখ জোড়া ভিজে উঠতে চাইছে বার বার,লাল হয়ে আছে।আফ্রিদ ভালোভাবে মেডিসিন লাগিয়ে ড্রেস-আপ করে দিলো ইয়াসিবার হাতে।ইয়াসিবার দিকে তাকায় মেয়েটা ব্যাথায় থরথর করে কাঁপছে।আফ্রিদ ওকে এইরকম করতে দেখে অস্থির হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলো,
–“,কি হয়েছে তোমার এরকম কাঁপছো কেন?”
ইয়াসিবা ভাঙ্গা গলায় কোনরকমভাবে বলে,,,,
–“, আ..আমার মা…মাথা ঘু..ঘুরাচ্ছে!!”
কথাটা শুনে আর একমুহূর্ত অপেক্ষা না করে আফ্রিদ দু-হাতে ইয়াসিবাকে জড়িয়ে ধরে।তারপর ওর মাথাটা বুকে চেপে ধরে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
–“, হুসস!! স্থির হও কিছু হবে নাহ।একটু শান্ত হও তুমি।নেও পানি খাও অল্প একটু!!”
আফ্রিদ পাশের টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ওকে খাইয়ে দিলো।ইয়াসিবা একটু স্থির হতেই আফ্রিদ ওকে সুইয়ে দিলো।তারপর উঠে যেতে নিতে ইয়াসিবা ওর হাত ধরতেই আফ্রিদ বললো,,
–” নিচে যাচ্ছি খাবার আনতে।এখনি চলে আসবো।”
ইয়াসিবা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আফ্রিদ দ্রুত নিচে গিয়ে খাবার নিয়ে আসে।দুজনের জন্যেই এনেছে,নিজের পছন্দের খাবার গুলো দেখে খাওয়ার লোভ সামলাতে পারছে না আফ্রিদ।রুমে এসে ইয়াসিবাকে আস্তে করে উঠাতে গিয়েই ওর পিঠে আফ্রিদের হাতের চাপ লাগায় ব্যাথা পায় ইয়াসিবা তাই ‘আহ’ করে উঠে।কারন কাল বেল্ট দিয়ে মারার কারনে এখনো ওর অনেক জায়গায় ব্যাথা রয়ে গেছে।ইয়াসিবাকে এরকম আর্তনাদ করতে দেখে বুজতে বাকি রইলো না আফ্রিদের কালকের মারের জন্যে শরীরে এখনো ব্যাথা আছে।আফ্রিদ ইয়াসিবাকে আস্তে আস্তে খাওয়াতে থাকে,সাথে নিজেও খাচ্ছে।খাওয়া দাওয়া শেষে প্লেট গুলো সরিয়ে রাখে আফ্রিদ।
ইয়াসিবা বালিশে হেলাম দিয়ে বসে আছে চোখ বুজে।আফ্রিদ হাতে মলম নিয়ে ইয়াসিবার কাছে আসলো।ওর কেমন যেন অসস্থি লাগছে কাল তো ইয়াসিবার জ্ঞান ছিলো না তাই ওর শাড়ী খুলে সারা শরীর মুছে দিয়েছিলো।কিন্তু আজ কিভাবে বলবে সে?আর ইয়াসিবার পক্ষেও মলম টা পিঠে লাগানো সম্ভব না।কি মনে করবে ইয়াসিবা? ধূর!! কি মনে করবে? আফ্রিদ ওর স্বামি আর স্বামি নিজের স্ত্রীর সেবা করতেই পারে।আফ্রিফ ইয়াসিবাকে ডাকে।
–” ইয়াসিবা! একটু এদিকে ফিরে বসো আর কামিজ টা খুলো।”
আফ্রিদের কথায় চকিতো নয়নে তাকায় ইয়াসিবা।মানে এতো বোল্টেজের শক লেগেছে ওর ও নিজেই বলতে পারবে নাহ।ইয়াসিবাকে এইরকম আচড়ন করতে দেখে আফ্রিদের নিজেরও কেমন যেন লাগছে।সে ইতস্থিত গলায় বলে,,
–” এরকম করার কিছু নেই।তোমার পিঠের আঘাতগুলোতে এই মলমটা লাগাবো স্রিফ।”
আফ্রিদের কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইয়াসিবা।শরীরের আঘাতগুলোতে মলম লাগিয়ে তো সারিয়ে দিতে পারবে আফ্রিদ কিন্তু ওর মনের আঘাতগুলো কি পারবে সারাতে।তাচ্ছিল্য হেসে ইয়াসিবা বললো,
–” তার কোন দরকার নেই।আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।”
আফ্রিদির প্রচুর রাগ লাগলো কথাটা শুনে।সে ধমকে বললো,,
–” বেশি মাতব্বরি কে করতে বলেছে তোমাকে যা করতে বলেছি করো।”
আফ্রিদের ধমকে কেঁপে উঠে ইয়াসিবা ভিতু চোখে একবার তাকায় আফ্রিদের দিকে দেখে আফ্রিদ ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।ভয়ে ইয়াসিবা একটানে কম্বলটা নিয়ে নিজেকে মুরিয়ে ফেলে মা থেকে মাথা অব্দি।এদিকে ইয়াসিবাকে এমন কান্ড করতে দেখে আফ্রিদ খানিক স্তব্দ চোখে তাকিয়ে রইলো তারপর নিশব্দে হেসে দিলো।বিরবির করে বললো,
–” পাগলিটা আজও আমার রাগি চোখ দেখে এতোটা ভয় পায়।”
#চলবে,,,,,,,,
ভূলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।