অনুভূতিটা তোমায় ঘিরে পর্ব-১১

0
770

#অনুভূতিটা_তোমায়_ঘিরে!🌺🥀
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜🥀
#পার্টঃ১১❤️🥀
রেস্টুরেন্টের প্রতিটা কোনায় তন্নতন্ন করে ইয়াসিবাকে খুজে বেড়াচ্ছে আফ্রিদ।
কিন্তু তার ইয়াসিবা কোথাও নেই।
একসময় খুজে না পেয়ে চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে আফ্রিদ।
ইবাদ এগিয়ে এসে অনুতপ্ত গলায় বললো,
–” আ’ম সরি ভাইয়া সব আমার জন্যে হয়েছে
আমি ওর খেয়াল রাখতে পারিনি।আমায় ক্ষমা করুন ভাইয়া।”
ইবাদের কথায় চোখ তুলে তাকায় আফ্রিদ।
চোখ দুটো তার লাল টকটকে হয়ে আছে।
এখনি বুজে রক্ত ঝরবে চোখ থেকে এমন অবস্থা।
ইবাদ ভয় পেয়ে গেলো।
বললো,
–” ভাইয়া আপনি ঠিক আছেন?
আমাকে ক্ষমা করুন ভাইয়া।”
আফ্রিদ উঠে দাড়ালো,অত্যন্ত ঠান্ডা গলায় বললো,
–” তোমার কোন দোষ নেই ইবাদ।
যা হওয়ার হয়েছে,এখন আমাদের এটা খুজে বাহির করতে হবে যে এসবের পিছনে আসলে কে?
আর একবার যদি আমি তাকে ধরতে পারি আই সুয়্যের জ্যান্ত মাটিতে পুতে দিবো তাকে।”
লাস্ট কথাটা চোঁয়াল শক্ত করে বললো আফ্রিদ।
–” আমাদের এখন সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে হবে।চলো ইবাদ।” বলেই ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেলো আফ্রিদ।
আফ্রিদ কে ইবাদ আর আবিয়াই ফোন করে এখানে এনেছে।আসলে তারা ইয়াসিবাকে অনেক্ষন যাবত না আসতে দেখে আবিয়া গিয়ে ওয়াসরুম চেক করে দেখে সেখানে কেউ নেই।
এই কথা ইবাদকে বলায় ইবাদ রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার কে নিয়ে পুরো রেস্টুরেন্ট চেক করে কিন্তু কোথাও ইয়াসিবাকে না পেয়েই তারা আফ্রিদ কে কল করে।আর ইয়াসিবাকে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে প্রাই বিদ্যুৎ বেগে এখানে এসে হাজির হয়েছে আফ্রিদ।
এসেই সে-কি পাগলামি পুরো রেস্টুরেন্ট মাথায় উঠিয়ে ফেলেছে।
—————–
চোখ জোড়া আসতে আসতে খুলে তাকায় ইয়াসিবা।
মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে তার।
হালকা করে নড়ে উঠতেই সে বুজতে পারে তার হাত-পা মুখ সব বাধা আর তাকে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে।
চেয়েও ইয়াসিবা চিৎকার করতে পারছে নাহ।
চোখের অস্রুগুলো অবিরাম ঝড়তে লাগলো।
এ কোন বিপদে পড়লো সে?
আল্লাহ্ তায়ালা কেন তার আফ্রিদের সাথেই এমনটা করে?
কি পাপ করেছিলো তারা?
ভালোই তো বেসেছিলো একে-অপরকে তাহলে?
হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ পেতেই দ্রুত চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলে।
সে জানে তাকে যদি সজাগ দেখে তাহলে হয়তো অনেক খারাপ কিছু হতে পারে।
তাই সে চোখ বন্ধ করে রইলো।
রুমে প্রবেশ করেই মেঝেতে তাকায় আকাশ দেখে
ইয়াসিবা এখনো অজ্ঞান।আকাশ বললো,
–” এরতো দেখি এখনো জ্ঞান ফেরেনি।”
–” এর মুখে পানি ছুড়ে মারো।
অনেক জ্বালিয়েছে এইবার এর শেষ হবেই হবে।
ওকে মরতে হবে।” পাশ থেকে পৈচাশিক হাসি দিয়ে বললো কায়া চৌধুরী।
–” নাহ থাকুক! ঘুমাক এইতো শেষ ঘুম এরপর তো আর পারবে নাহ চিরতরেই তো ওকে ঘুমের রাজ্যে পাঠিয়ে দিবো।”
–” ঠিক বলছো আকাশ।একে আর বাচঁতে দেওয়া যাবে নাহ।
তিনবছর আগে অনেক প্লান করে ওকে আফ্রিদের জীবন থেকে সরিয়েছি।
কিন্তু এইবার চিরতরে ওকে সরাতে হবে।
আমার এতো কষ্ট,এতো এতো প্লান সব বিফলে গিয়েছে,আফ্রিদ সেই ওকেই বিয়ে করেছে।
কিন্তু আর নাহ! এই রাস্তার টোকাইয়া মেয়েকে আমি কিছুতেই আফ্রিদের বউ মানতে পারবো নাহ।
আর এখন তো ও বিশাল সম্পত্তির মালিক।
একে মেরে ফেললে সেই সব সম্পত্তি আফ্রিদের হয়ে যাবে আর ও মরলে আফ্রিদ এমনিতেই ভেঙে পড়বে।
সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমি সব সম্পত্তি আমার নামে করে নিবো।তারপর আফ্রিদকেও মেরে ফেলবো।আর এমন মৃত্যু দেবো যাতে সবাই ভাববে মানষিক চাপ সয্য করতে না পেরে ডাক্তার আফ্রিদের মৃত্যু হয়েছে।”বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো কায়া চৌধুরী।
–” আপনার প্লান কিন্তু ফ্লোপ যায়নি।
তিনবছর আগে যদি ইয়াসিবা মরেই যেতো তাহলে এতো এতো সম্পত্তি আমরা পেতাম কিভাবে?
একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে।” শয়তানি হাসি আকাশের ঠোঁটে।
–” হ্যা ঠিক বলেছো।
এর সম্পূর্ণ ক্রেডিট তোমার আকাশ।”
–” থ্যাক্স ম্যেম!”
–” কিন্তু আমার একটা বিষয়ে ভয় লাগছে।” চিন্তিত কন্ঠ কায়া চৌধুরীর।
–” কি?” ভ্রু-কুচকে বললো আকাশ।
–” আফ্রিদ কিন্তু অনেক চালাক।
আমার চিন্তা এই নিয়ে যে ওসব জেনে ফেললে সব ধ্বংস করে দিবে।”
–” আরে টেন্সন করিয়েন না ম্যেম।
আমি এমন কোন চিহ্নই রাখিনি যেটা দিয়ে ও বুজবে।”
–” তাই যেন হয় আকাশ।”
–“হুঁ!”
আকাশ আর কায়া চৌধুরী এক পলক ইয়াসিবার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।

ওরা যেতেই চোখ খুলে তাকায় ইয়াসিবা।
সে নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে নাহ।
এতোদিন সে ভাবতো আফ্রিদকে কায়া চৌধুরি অনেক ভালোবাসে আর সেই জন্যে একটা এতিম, অনাথ মেয়েকে নিজের ছেলের বউ হিসেবে মানতে পারবে নাহ এইজন্যেই ওইসব করেছিলো।
কিন্তু এখানে তো প্লান অন্য।
মানুষ এতোটা খারাপ কি করে হতে পারে?
সামান্য সম্পত্তির জন্যে এতো জঘন্য কাজ করলো তারা।
আরে তারা যদি একবার বলতো যে তারা সম্পত্তির জন্যে এসব করছে তাহলে ইয়াসিবা আর আফ্রিদ দুজনেই হাসি মুখে তা দিয়ে দিতো।
তবুও তো ওরা একটু সুখে থাকতো।
নাহ! আর কিছু ভাবতে পারছে নাহ ইয়াসিবা।
চোখের জলে ঝাপসা দেখছে সে।
তার এটা ভেবে কান্না পাচ্ছে আফ্রিদ যদি এইসব সত্যি জেনে যায় তাহলে সে একেবারে ভেঙে গুড়িয়ে যাবে।
সামলানো অনেক কষ্ট হয়ে যাবে তাকে।
মানুষ ঠিকই বলে সৎ মা কখনো আপন মায়ের জায়গা নিতে পারে নাহ।
আফ্রিদ যদি জানতে পারে কায়া চৌধুরী তার আপন মা না তাহলে ওর যে কি হবে?
ইয়াসিবা মাথা ব্যাথায় ছিড়ে যাচ্ছে।এসব আর ভাবতে পারছে নাহ।
এই কষ্টগুলো তো ও গত তিনবছর আগে থেকে সয্য করে আসছে তার কতো সয্য করবে।
আর কতো? কান্নায় ভেঙে পড়লো ইয়াসিবা।
—————
সিসিটিভি রুমে দাঁড়িয়ে আছে আফ্রিদ,ইবাদ আর আবিয়া।
ম্যানেজার তাদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখাচ্ছে।
হঠাৎ আফ্রিদ চেঁচিয়ে উঠলো,
–” স্টোপ দেয়ের।
এখানেই এখানেই প্রোবলেম এই ওয়েটার টাকেই আমার সামনে হাজির করো।”
আসলে তখন যে ওয়েটারটা ইয়াসিবার গায়ে কোল্ড কফি ফেলে দিয়েছিলো।
সেই ওয়েটারকেই আনতে বলছে।ইবাদ বলে উঠলো,
–” কিন্তু ভাইয়া এই ওয়েটারটা তো কিছু করেনি।
ওটা ভুলেই হয়েছিলো।”
আফ্রিদ গম্ভীর স্বরে বললো,
–” নাহ ইবাদ! এটা ভুলবশত নাহ।
এখানে ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুজা যাচ্ছে যে সে ইচ্ছে করে কোল্ড কফিটা ফালিয়েছে।
খেয়াল করে দেখো তুমি।”
ইবাদ আর আবিয়া ফুটেজ টা ভালো করে দেখলো।
আবিয়া জোড়ে বলে উঠে,
–” আসলেই ভাইয়া আপনি ঠিক বলেছেন।”
আফ্রিদ ম্যানেজারকে বললো,
–” আপনারা এতোটা ইররেস্পোন্সিবাল কিভাবে হোন।
এই আপনাদের সিকিউরিটি সিস্টেম?আমি পুলিশে দিবো সবাইকে।যদি আমার ইয়াসিবার কিছু হয়ে যায়।”
ম্যানেজার মুখটা কাচুমাচু করে বললো,
–” সরি স্যার আমরা বুজতে পারিনি।
যে এরকম কিছু হয়ে যাবে।
আপনি আসুন আমার সাথে আমি আপনাকে সেই ওয়েটারের কাছে নিয়ে যাই আসুন।”
ম্যানেজার আফ্রিদকে নিয়ে গেলো সেই ওয়েটারের কাছে।
ওয়েটার’রা সবাই তখন একজায়গায় দাড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলো।
আফ্রিদ সোজা গিয়ে সেই ওয়েটারটার কলার চেপে ধরে নাক বরাবর ঘুশি মারলো।
ওয়েটারটা ছিটকে পড়ে গেলো।
আফ্রিদ আবার গিয়ে মারলো।
চিল্লিয়ে বললো,
–“বল আমার ইয়াসিবা কোথায়?বল?
নাহলে আমি তোকে মেরেই ফেলবো।”
বলেই আবারো মারতে লাগলো।
–” স্যার আমি জানি না স্যার আমি কিছু জানি নাহ।” গোজ্ঞাতে গোজ্ঞাতে বললো ওয়েটার।
–” বলবি না তাইনাহ?বলবি নাহ?
ইবাদ।”
আফ্রিদের ডাকে ইবাদ বলে,
–” জ্বি ভাইয়া।”
–” পুলিশ কে ইনফোর্ম করো।
জেলে গিয়ে শক্ত ডান্ডার বাড়ি খেয়েই ও সব বলবে।”
পুলিশের কথা বলতেই ওয়েটারটা ভয়ে জড়সড় হয়ে গেলো।
সাত-পাঁচ না ভেবে কাদঁতে কাদঁতে বললো,
–” আমি বলবো স্যার আমি বলবো।
প্লিজ আমাকে জেলে দিবেন নাহ স্যার।”
–” বল তাড়াতাড়ি! ”
–” স্যার লোকটার নাম আমি জানি নাহ!
তবে লোকটা আমাকে পঞ্চাজ হাজার টাকার ওফার করেছে বলেছে ওই ম্যেমের গায়ে জুস ঠেলে দিতে আর ম্যেম ওয়াসরুমে গেলে তাকে কৌশলে যেন লেডিস ওয়াসরুমে আমি ঢোকার ব্যবস্থা করে দেই।আর ম্যেম অজ্ঞান হলে তাকে যেন হেল্প করি ম্যেমকে উনার গাড়ি পর্যন্ত পৌছে দিতে।”
ওয়েটারের কথায় আফ্রিদের রাগ যেন আরো বেড়ে গেলো।
সে বিকট এক থাপ্পড় দিলো ওয়েটার টাকে।
বললো,
–” গাড়ির নাম্বার মনে আছে?
জলদি বল নাহলে!”
–” বলছি বলছি স্যার।”
ওয়েটারটা আফ্রিদকে গাড়ির নাম্বার বলে দিলো।
ততোক্ষনে পুলিশ এসে হাজির।
ইবাদই কল করেছিলো পুলিশকে।
পুলিশ এসে ওয়েটারটাকে ধরে ফেললো।
আফ্রিদ রাগে থরথর করে কাঁপছে।
–” আমার ইয়াসিবার কিছু হলে তাকে আমি
জানে শেষ করে দিবো।
আমাকে কেউ আটকাতে পারবে নাহ কেউ নাহ।”
———————
ইয়াসিবার সাড়া শরীর ব্যাথা করছে।
অনেক্ষন এইভাবে বেধে থাকায় এই অবস্থায়।
সে চেষ্টা করছে কোনরকম একটু উঠে বসতে কিন্তু তাও পারছে নাহ।
এর মাঝে রুমে প্রবেশ করলো কায়া চৌধুরী।
ইয়াসিবাকে এমন অবস্থায় দেখতেই সে হাসে দিলো।
ইয়াসিবা চট করে তাকায়।চাইতেও কিছু বলতে পারছে না সে।
কায়া চৌধুরী বললো,
–” আহারে মা কষ্ট হচ্ছে?
কি আর করার বলো শাশুড়ি মায়েরা একটু দজ্জাল টাইপ থাকে তুমি তো জানোই তবে আমি কিন্তু ওতোটাও খারাপ নাহ।
তোমাকে আমি তোমার শেষ ইচ্ছা বলার সুযোগ অবশ্যই দিবো।”
কায়া চৌধুরী ইয়াসিবার সামনে হাটু ভেঙে বসে পড়লো।তারপর ইয়াসিবার মুখের ট্যাপ টা একটানে খুলে দিলো।
ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে ইয়াসিবা।
তা দেখে কায়া চৌধুরী বললো,
–” আহারে ব্যাথা পেলে?
আ’ম সরি হ্যা!আমি তো তোমার মা বলো,
শাশুড়ীরা তো মা এই হয় তাই নাহ?”
ইয়াসিবা ঘৃনা ভরা গলায় বলে,
–” আপনি কারো মা হওয়ার যোগ্য না।
আপনি নিকৃষ্ট,জঘন্যতম একজন মহিলা।
আপনাকে মা বললে মা শব্দটাকে অপমান করা হবে।
আল্লাহ্ এইজন্যেই হয়তো আপনাকে মাতৃত্বের স্বাদ নিতে দেন নি।এইজন্যেই আপনি কখনো মা হতে পারেননি।”
ইয়াসিবার কথায় কায়া চৌধুরী ইয়াসিবা জোড়ে একটা থাপ্পড় মারলো বললো,
–” যতো বড় মুখ নয় ততো বড় কথা।
তুই মরবি খুব বাজেভাবে মরবি।”
ইয়াসিবাকে আবারও ধাক্কা মেরে চলে গেলো কায়া চৌধুরী।
ইয়াসিবা কেঁদে দিয়ে বললো,
–” আফ্রিদ আপনি কোথায়?আমাকে নিয়ে চলুন এখান থেকে।আপনার লাজুকলতার যে বড্ড কষ্ট হচ্ছে আফ্রিদ।”
কায়া চৌধুরী থাপ্পর দেওয়ায় ইয়াসিবার ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।
আবার ধাক্কা দেওয়ায় দেয়ালে গিয়ে বারি খায় ইয়াসিবা কপালটাতেও প্রচন্ড চোট পায়।
যার ফলে আবারও জ্ঞান হারায় ইয়াসিবা।
#চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে