অনুভূতিটা তোমায় ঘিরে পর্ব-০১

0
1281

#অনুভূতিটা_তোমায়_ঘিরে🥀🌺
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি🥀❤️
#পার্টঃ০১ 🥀🌺

ইয়াসিবার চোখের সামনে দিয়ে অন্য একটা মেয়েকে নিয়ে তাদেরই বেড রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো আফ্রিদ।
তা দেখে নিরবে অস্ত্রু বিসর্জন দিচ্ছে ইয়াসিবা।জীবনে কি পাপ করেছিলো কে জানে যে আজ ওকে এইসব দেখতে হচ্ছে।
বিয়ের ৩ মাস হয়ে গেলো আজও আফ্রিদ ইয়াসিবাকে আপন করে নিতে পারিনি।প্রতিটি মুহূর্তে ইয়াসিবাকে সে অবহেলা করে।ঘৃনা! ঘৃনা কি না পারে।মুহূর্তেই ২ বছরের ভালোবাসা ঘৃনার ভয়ংকর আস্তরন পরে ডেকে গেছে।ভালোবাসাটা ডুবে গেছে ঘৃনার ডোবায়।
—————–
—“তুই আমার রক্ষিতা বুজেছিস!সবাই তাই জানে।আর সারাজীবন তাই থাকবি!আমার জীবনে কোনদিন তোর ঠাই হবে না,বিয়ে করেছি শুধু তোকে শাস্তি দেবার জন্য।আর যদি কোনদিন আমার লাইফে ইন্টারফিয়ার করিস তোকে একদম মেরে ফেলবো।”
কথাগুলো বলে একপ্রকার গটগট করে চলে গেলো আফ্রিদ।
ফ্লোড়ে পড়ে অঝোড় ধারায় কাদছে ইয়াসিবা।একটু নড়াচড়ার শক্তিও নেই। একটু আগে আফ্রিদফ বেল্ট দিয়ে ইচ্ছামতো আঘাত করেছে ইয়াসিবার শরীরে।কিন্তু হৃদয়ের আঘাতের ব্যাথার কাছে এই ব্যাথা কিছুই না।তার হৃদয়টা যে প্রতি মুহূর্তে ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে আর তার একমাত্র কারন আফ্রিদ।
পুরো নাম আফ্রিদ চৌধুরি।ডক্টর সে,নিজের হাস্পাতাল আছে,দেখতে মাশা-আল্লাহ।যেকোন মেয়ের স্বপ্নপুরুষ এর মতো।আর ইয়াসিবা হলো ওর স্ত্রী।ভাবছেন তো ইয়াসিবা যদি ওর স্ত্রী হয়ে থাকে তাহলে রক্ষীতা কেন বললো জানবেন সব জানবেন আসতে আসতে।
—” এ কেমন জীবন দিলে তুমি আমায় খোদা,না পারি বলতে না পারি সইতে।আর কতো সয্য করবো হে খোদা।আমাকে পথ দেখাও তুমি খোদা পথ দেখাও।”কথাগুলো বলে ঠুকড়ে কেদে উঠে ইয়াসিবা।কাদতে কাদতে একসময় ফ্লোড়েই ঘুমিয়ে পড়লো সে।
একটু আগে______
প্রাই একঘন্টা পর মেয়েটাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো আফ্রিদ,মেয়েটা আফ্রিদ এর গা ঘেসে হেলেদুলে হাটছে।এইসব দেখে ইয়াসিবা কাদতে কাদতে আফ্রিদকে বলে,
—“আমি জানি আপনি এমন না তাহলে কেন নিজেকে খারাপ প্রমান করতে চান।আমি জানি আপনি এইসব আমাকে দেখিয়ে কষ্ট দেবার জন্য করছেন।”
ইয়াসিবার কথায় রাগে ফোসফোস করে উঠলো আফ্রিদ বলে,
–“সামনে থেকে সরো বলছি,আর আমি তোমাকে দেখানোর জন্য কিছুই করছি না।আমি একরমি,সো জাস্ট সাট আপ এন্ড লিভ।”
—“নাহ আমি কোথাও যাবো না।আপনি এই মেয়েকে নিয়ে কোথাও যেতে পারবেন না।আমি আপনার স্ত্রী আর কোন স্ত্রী তার স্বামি সাথে কোন মেয়েকে সজ্য করতে পারে না।”
—“কি বললি তুই?তোর এতো সাহস আমার সাথে মুখে মুখে তর্ক করিস।চল আজ তোকে বুজাবো আমি তোর কে?চল!!!” ইয়াসিবার হাত শক্ত করে চেপে ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো আফ্রিদ।
একপ্রকার ফ্লোড়ে ছুড়ে মারলো ফ্লোড়ে ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলো ইয়াসিবা।তারপর নিজের পরনের বেল্ট খুলে ইচ্ছামতো মেরে কথাগুলো বলে চলে গেলো সে।

রাত ২ টা______
ড্রিংকস করে হেলতে দুলতে নিজের রুমে প্রবেশ করলো আফ্রিদ।হাতরে ঘরের লাইট ওন করতেই ফ্লোড়ে ইয়াসিবাকে পড়ে থাকতে দেখলো,কেমন যেন কাপছে মেয়েটা।আফ্রিদ ধিরেধিরে এগিয়ে গেলো ইয়াসিবার কাছে।ইয়াসিবার মাথার কাছে বসলো সে।ইয়াসিবার মুখে চুল গুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে।আফ্রিদ আলতো করে হাত ছোয়ালো ইয়াসিবা’র কপালে। আৎকে উঠে আফ্রিদ জ্বরে গা পুরে যাচ্ছে মেয়েটার। আফ্রিদ তাড়াতাড়ি উঠে দাড়ালো তারপর বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে এসে ইয়াসিবাকে কোলে করে খাটে সুইয়ে দিলো এবং গায়ে একটা কম্বল জড়িয়ে দিলো।একটা ইঞ্জেকশন পুশ করে দিলো ইয়াসিবার হাতে।তারপর নিজে গিয়ে নিজ হাতে স্যুপ বানিয়ে এনে খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিলো।সারারাত ইয়াসিবাকে জলপট্টি দিলো আফ্রিদ,,ইয়াসিবার শাড়ি খুলে দিয়ে পুরো শরীর মুছে দিলো।তাও যেন ইয়াসিবার জ্বর কমছে না,জ্বরে কাপছে অনবরত। আফ্রিদ নিজের শার্ট টা খুলে এসে নিজেই কম্বলের নিচে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইয়াসিবাকে।একেবারে অদ্ভূত সিন্ধতায় ভরে গেলো মনটা,মেয়েটা তার বুকে থাকলে শান্তি লাগে আফ্রিদ এর। মনে হয় বিধাতা যেন সব সুখ ওকে দিয়ে দিয়েছে।মাথা নিচু করে তাকায় আফ্রিদ, দেখে ইয়াসিবা আফ্রিদ এর শরীরের উষ্ণতা পেয়ে লেপ্টে আছে ওর সাথে।আর একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইয়াসিবাকে নিজের সাথে।
—“কেন ইয়াসিবা কেন?আমার ভালোবাসাকে এইভাবে কেন অপমান করেছিলে সেদিন কেন?কমতো ভালোবাসা দেই নি আমি তাহলে?না পারি তোমাকে মেনে নিতে না পারি ছুরে ফেলে দিতে।যতোবার তোমার কাছে যাই আমার সেই দিনের কথাগুলো মনে পড়ে বড্ড কষ্ট হয়ে জানো এই বুকটায়।এইযে তোমাকে এইভাবে দেখে আমার কেমন লাগছে বলে বুজাতে পারবো না।ইচ্ছে করছে নিজেকে শেষ করে দেই।কিন্তু কার জন্য নিজেকে কষ্ট দেবো? কার জন্য, যে মেয়ে আমাকে ভালোবাসা তো দূরে থাক আমার ভালোবাসাকে কখনো সম্মান ওই করেনি।তাকে কিভাবে মেনে নেই আমি বলতো?”
কথাগুলো বলে একদৃষ্টিতে সেদিক তাকিয়ে ইয়াসিবার মুখের দিকে।সেকি মায়া আল্লাহ যেন সব মায়া এইমুখটায় ঢেলে দিয়েছে।এই মুখটা দেখেই তো একসময় প্রেমে পড়ছিলো সে।কিন্তু এই মুখটার অধিকারি যে প্রতারক, বিশ্বাসঘাতক।নাহ! আফ্রিদ আর এই চেহারার মায়ায় পড়বে না।কথাগুলো ভাবতেই ইয়াসিবা’কে ধাক্কা দিতে প্রস্তুত হলো তারপর কিছু একটা ভেবে ইয়াসিবাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো দুজন।

________
দূর থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে,এখনো বাহিরে অন্ধকার বলতে গেলে।শীতের মৌসুম তাই একেবারেই অন্ধাকার বলতে গেলে। কুয়াশায় চারিদিকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।এই কনকেন শীতে বারান্দার রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে ইয়াসিবা।জীবনটা তার বড্ড এলোমেলো,ভালোবাসার মানুষটি কাছে থাকতেও তার থেকে দূরে সে। মাজে মাজে বড্ড অসহায় মনে হয় নিজেকে।জীবনটা তো এরকম ছন্নছাড়া না হলেও পাড়তো।কেন এমনটা হলো?কি দোশ করেছিলো সে।আফ্রিদ কে ভালোই তো বেসেছিলো এটাই কি তার দোশ?ভাবতেই দু-ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

—“এখানে কি করছো?
হঠাৎ আফ্রিদ এর কথা দ্রুত চোখ মুছে নিলো ইয়াসিবা।
—“না কিছুনা এমনেই ভালো লাগছিলো না।”
—“এইরকম কনকনে ঠান্ডায় শোয়েটার না পরেই কেন এসেছ?এইভাবে এসে অসুখ বাধালেই ভাবছো আমি তোমাকে শাস্তি দেবো না।সেটা কখনোই হবে না।”
—“নাহ!আমি এরকম কখোনই ভাবিনি।”
—“আমার ভালোমতো জানা আছে তুমি কি ভাবতে পারো।তুমি শুধু পারো ভাবতে পারো কিভাবে বড়লোক ছেলেদের ফাসানো যায়।”দাতেদাত চেপে বললো আফ্রিদ।
মুহূর্তেই চোখ জোড়া জলে ভরে উঠলো ইয়াসিবা’র।ছলছল নয়নে তাকালো আফ্রিদ এর দিকে,করুন সে চাহনী।
ইয়াসিবার’র ছলছলে নয়নের করুন চাহনীর তেজ সয্য করতে পারে না আফ্রিদ।কেমন যেন দূর্বল হয়ে পড়ে সে চাহনীর উপর।তাড়াতাড়ি নিজের চোখ সরিয়ে নিলো সে।তা দেখে জলভরা নয়নেই হাসলো ইয়াসিবা।বললো,
—“আজোও আপনি আমার জলভরা নয়নের করুন চাহনী সইতে অক্ষম আফ্রিদ।”

চমকে সম্মুখে তাকায় আফ্রিদ।ছলছলে নয়নে তার মায়াবতী যে তার দিক তাকিয়ে।নাহ! আর একবার দ্বিতীয় ভূল সে কিছুতেই করবে না।সে ইয়াসিবা’কে শুধু কষ্ট দিতে বিয়ে করেছে শুধু কষ্ট।
—“তোমার ফালতু কথা ওফ করে।গায়ে সোয়েটার জরিয়ে নেও।তারপর নাস্তা বানাও।”
—“আমার শীত করছে না!”
—“সেটা কি আমি তোমার থেকে জিজ্ঞেস করেছি।”
—“চিন্তা যখন হয় তখন সরাসরি বললেই তো পারেন?”
দ্রুত পদে হেটে আফ্রিদ কাছে এলো ইয়াসিবার তারপর শক্ত করে চেপে ধরলো ওর গাল শক্ত গলায় বলে,,
—“আমি কখনোই তোমাকে নিয়ে চিন্তা করি না।আমাকে আফ্রিদ ভেবো না যে সবসময় তোমার আগে পিছে ঘুরবে আর তোমার কষ্টে তার বুক জ্বলবে।সেই আফ্রিদকে অনেক আগেই তুমি নিজ হাতে মেরে মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছো।এখন যে তোমার সামনে দাড়িয়ে আছে।সে আফ্রিদ তোমাকে ঘৃনা করে প্রচুর ঘৃনা। বুজেছো।”
—“তাহলে আমাকে আঘাত করে নিজে কেন কষ্ট পেয়ে নিজের হাত নিজে কাটলেন?কেন আমার জ্বর আসায় অস্থির হয়ে আমার সেবা করলেন?কেন আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমালেন?উত্তর দিন?”আফ্রিদ এর চোখের দিক তাকিয়ে একনাগাড়ে কথাগুলো বললো ইয়াসিবা।ইয়াসিবাকে ছেড়ে অন্যদিকে তাকালো আফ্রিদ বললো,,
—“এইসব কিছুর উত্তর আমি তোমাকে দিতে বাধ্য নই।”
হাসলো ইয়াসিবা বললো,
—“আমি জানি কারনটা কি?কারন আজোও আপনি আমাকে ভালোবাসেন!”
ইয়াসিবার দিকে তেড়ে গিয়ে ওর চুল গুলো শক্ত করে চেপে ধরলো আফ্রিদ।বলে উঠলো,
—“ফালতু কথা বলা বন্ধ করো।নাহলে এর শাস্তি হবে ভয়াবহ।নাউ গো এন্ড মেক ব্রেকফাস্ট ফোর মি!আমাকে অফিস যেতে হবে।তোমার এইসব থার্ডক্লাস মার্কা কথা শুনার টাইম আমার নেই।”
বলেই গটগট পায়ে চলে গেলো আফ্রিদ।দূর্বল চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো ইয়াসিবা।আফ্রিদ কি কখনোই তার ভালোবাসাটা বুজবে না।শুধু ঘৃনায় করে যাবে।বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ইয়াসিবার।ছোটছোট পা ফেলে চললো সে ব্রেকফাস্ট বানাতে।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে