#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০৯
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)
লাজুক অবাক হলেও মুখে তা প্রকাশ করেনা।
চুপ করে বসে বসে মুনতাসিরের যত্ন নেওয়া দেখে লাজুকের প্রতি।
ব্যান্ডেজ করা শেষে মুনতাসির লাজুক কে বলে,”কেয়ারলেস মেয়ে কোথাকার।নিজের যত্ন নিজে নিতে পারেনা।আসছে প্রোজেক্টের কাজ করতে কোথায় সিম্পল পোশাকে থাকবে।তা না করে শাড়ি,চুড়ি পরে আসছে।নূন্যতম সেন্স টুকু নেই মাথায়।”
মুনতাসির লাজুক কে এসব বলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
লাজুক ভাবে এই লোক টা কেমন জানি।এই ভালো তো এই খারাপ।ওনার মন বোঝা প্রায় অসম্ভব।এই লোকের জন্য মুনার মতো মেয়েই ঠিক আছে।
লাজুকের ভাবনায় ছেদ পড়ে আবারো মুনতাসিরের চিৎকারে।
মুনতাসির লাজুক কে ডাকতে থাকে কিন্তু লাজুক ভাবনায় ছিলো।এ জন্য মুনতাসির চিৎকার করে।
লাজুক দ্রুত পায়ে হেঁটে মুনতাসিরের কাছে চলে যায়। নিজের কাজে মনযোগ দেই।
ওইদিন আর কোনো বকাবকি লাজুক শোনেনা।
রাতের আকাশে মেঘ জমেছে খুব।সেই সাথে সাথে কোনো একজনের মনেও মেঘ জমেছে।হয়তো মেঘের সাথে সাথে তার মনের একটা গভীর কানেকশন আছে।
যদি কানেকশন ই না থাকবে তাহলে মেঘের সাথে সাথে কেন মনে ও মেঘ জমবে?
হ্যা লাজুকের মন খারাপ।মেঘ টা লাজুকের মনেই জমেছে।
লাজুক বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছিলো এক মনে।কোনো দিকে কোনো খেয়াল ছিলোনা।
লাজুকের পাশে যে কেউ একজন দাঁড়িয়েছে অনেকক্ষন থেকে সেটা লাজুক খেয়াল ই করেনি।
লাজুকের পাশে এতোক্ষন মুনতাসির দাঁড়িয়ে ছিলো।মুনতাসির মুখে হালকা শব্দ করে লাজুক কে বোঝায় যে কেউ একজন তার পাশে দাঁড়িয়েছে।
লাজুক কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে চমকে উঠে। ফিরে তাকায় পাশে।দেখে মুনতাসির পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঠিক সেই ভঙ্গীতে যে ভঙ্গীতে লাজুক এতোক্ষন দাঁড়িয়েছিলো।
লাজুক মুনতাসির কে দেখে ঘরে চলে যেতে নিলে মুনতাসির লাজুকের হাত ধরে ফেলে।
লাজুক এবার আর অবাক হয়না।কারন লাজুক জানে হয়তো এখনো বকা খেতে হবে বসের কাছে।
কিন্তু অবাক করা বিষয় মুনতাসির লাজুক কে কোনো প্রকার কটু কথা শোনায়না।
বরং লাজুক কে এটা বলে,”মিস লাজুক আমি দুঃখিত সকালের ব্যবহারের জন্য।আসলে মুনা কে কেউ কিছু বললে আমার মাথা ঠিক থাকেনা।”
লাজুকঃঠিক আছে।কোনো সমস্যা নাই।ভালোবাসার মানুষ কে কেউ কিছু বললে সবার ই মাথা গরম হয়ে যায়।কিন্তু স্যার এক তরফা কোনো কথা শোনা উচিত না কখনোই।
অনেক রাত হয়েছে,আসি আমি।শুভ রাত্রী।
লাজুক আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ায় না।কারন লাজুকের খুব কান্না পাচ্ছিলো তখন।কান্নাগুলো গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছিলো।
দ্রুত লাজুক তার ঘরে চলে আসে।
ঘরে আসতে না আসতেই লাজুকের ফোন বেজে ওঠে।কিন্তু লাজুক ইচ্ছে করে ফোন রিসভ করেনা।আর এদিকে ফোন টা ও বাজতেই থাকে।থামাথামির কোনো নাম গন্ধ নাই।
এক পর্যায়ে লাজুক বাধ্য হয়ে ফোন টা রিসিভ করে।কারন ফোনের অপর পাশের ব্যক্তির লাজুকের মন ভালো করার ক্ষমতা আছে।
লাজুক ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশের ব্যক্তি টি বলে,”মায়াকন্যা তোমাকে আমি কখন থেকে ফোন দিচ্ছি ধরছোনা। মনের আকাশে কি খুব মেঘ জমেছে আজ?”
লাজুক কথা বলছেনা চুপ করে শুধু শুনছে।
শুভাকাঙ্ক্ষীঃ এই মায়াকন্যা কথা বলছোনা কেন তুমি আমার সাথে? প্লিজ বলো কাঁদছো কেন? বলোনা মন খারাপ কেন?
লাজুকঃআমি বুঝতেছিনা আমার সাথে এগুলো কেন হচ্ছে?
কখনো মনে হচ্ছে মুনতাসির চৌধুরী ই সেই নীলচে চোখের ছেলে।আজ থেকে দশ বছর আগে আমি যার প্রেমে পড়েছিলাম।
আবার কখনো মনে হচ্ছে,না এই মানুষ টা সে হতেই পারেনা।
কখনো আমার এতো বেশি কেয়ার করছে যে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।
আবার কখনো এমন বিহেভ করছে তাতে আমার সব কিছু ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।
শুভাকাঙ্ক্ষীঃ মায়াকন্যা এভাবে ভাবছো কেন? শান্ত হও। কেন কাঁদছো কি হয়েছে আমাকে বলো তুমি।সব ঠিক হয়ে যাবে।কাঁদছো কেন?
লাজুকঃকাঁদবো না তা কি করবো? আপনি আমাকে জানেন তো আমি কেমন? সকালে মুনা ছুরি ধরেছিলো আমার গলায়।অনেক কটু কথা শোনায় আমাকে।তখন আমি মুনাকে বলি আপনি একটা সাইকো,বেহায়া মেয়ে।
এটা বলাতেই মুনা রেগে গিয়ে আমার বাম হাতে ছুরি দিয়ে কেটে দেই।
তারপর যখন আমি রেডি হয়ে বাইরে এলাম তখন স্যার আমাকে খারাপ খারাপ কথা বলে।
দেয়ালে চেপে ধরে হাত।হাতে চুড়ি থাকায় সেগুলো ভেঙে হাতে ঢুকে যায়।
ব্যাথায় যেনো আমি মরেই যাচ্ছিলাম।
তবু কিছু বলিনি।যখন কাজের জায়গা গেলাম তখন নিজেই এসে ব্যান্ডেজ করে দিলো।
আবার কথাও শোনালো।
আমি আর ওনার কোম্পানি তে জব করবোনা।এখান থেকে ফিরেই রিজাইন দিবো।
শুভাকাঙ্ক্ষীঃ তোমার হাতের এখন কি অবস্থা?ওষুধ খেয়েছো? নিজের যত্ন নাও মায়াকন্যা।রাগ করে থেকোনা।তোমরা ফিরে যাচ্ছো কবে?
লাজুকঃ কাল সকালেই ফিরে যাবো।আর ফিরে গিয়েই রিজাইন দিবো।আমি চাইনা আর ওনার মুখোমুখি হতে।কষ্ট পাচ্ছি শুধু শুধু।
আচ্ছা মুনা কে দেখে কেন আমার এতো খারাপ লাগছে বলতে পারেন? অভিমান হচ্ছে খুব। কিন্তু কেন?
শুভাকাঙ্ক্ষীঃ তুমি প্রেমে পড়েছো মুনতাসিরের মায়াকন্যা।
মুখে বাঁকা হাসি দিয়ে কথাটা বললো অপর পাশের ব্যক্তিটি।
লাজুকঃ কখনোই না।ওনার মতো খচ্চর,খারাপ লোক কে ভালোবাসা যায়না।কিন্তু তবু আমার কষ্ট হচ্ছে বুকের বা’পাশ টা তে।
নিজেকে একা একা লাগছে খুব।
আচ্ছা শোনেন,আমি রাখি।ঘুমাতে হবে।সকালে আবার যেতে হবে নিজের ঠিকানায়।
শুভ রাত্রী।
এটা বলেই লাজুক কল কেটে দেয়।আর ভাবতে থাকে,”আচ্ছা এই শুভাকাঙ্ক্ষী,নীলাভ,আর মুনতাসির একজন না তো? আমার কখন কখন মন খারাপ থাকে সেগুলো শুভাকাঙ্ক্ষী কি করে জানে?সব কেমন যেনো গুলিয়ে যাচ্ছে আমার।আবার নীলচে চোখের ছেলের পদবী চৌধুরী,বসের পদবী ও চৌধুরী।কি হচ্ছে এগুলো আমার সাথে।”
লাজুক আর ভাবতে পারেনা।ঘুমিয়ে যায় ওভাবেই।
সকালে ঘুম ভাঙে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে।
লাফিয়ে উঠে যায় লাজুক।চিৎকার করতে যাবে তখনি কেউ একজন মুখ টা চেপে ধরে হাত দিয়ে।
“আপনি কি সবসময় এমন চিৎকার করার জন্য প্রস্তুত থাকেন নাকি?”
লাজুক মুনতাসিরের হাতে কামড়ে দেয়।
হ্যা মুনতাসির এসেছে লাজুকের ঘরে।
মুনতাসির দ্রুত হাত সরিয়ে নেই লাজুকের মুখ থেকে।তারপর বলে,”কামড়ে দিলেন কেন আমাকে?”
লাজুকঃসরি স্যার।আপনি মুখ এতো জোরে চেপে ধরেছিলেন যে কথা বলতে পারছিলাম না।তাই কামড়ে দিয়েছি।
“এখন বলুন আপনি আমার রুমে কি করে আসলেন?”
“এসেছি দরজা ভেঙে।”
কথাটা বলার সময় মুনতাসিরের ঠোঁটে বাঁকা হাসি লেগে ছিলো।
লাজুক ঘাবড়ে যায় মুনতাসিরের কথা শুনে।
লাজুক কে ঘাবড়ে যেতে দেখে মুনতাসির বলে,”এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম।দেখলাম আপনার ঘরের দরজা খোলা।ভাবলাম আপনি উঠে পড়েছেন।তাই চলে এলাম।”
লাজুক আবার প্রশ্ন করে মুনতাসির কে,”কেন এসেছেন আমার ঘরে?”
মুনতাসির তখন লাজুকের অনেকটা কাছে এসে বলে,”আপনার সাথে প্রেম করতে এসেছি।”
লাজুক মুনতাসিরের কথা শুনে দূরে সরে যেতে চাইলেও পারেনা।কারন লাজুকের হাত ধরে আছে মুনতাসির।
লাজুক যেনো ভারী অবাক হয়।লাজুক ভাবে মানুষ টা কে কি ভুতে পেয়েছে যে এমন অদ্ভূত আচরণ করছে।
“এখান থেকে সরুন তো আপনি।আমি উঠবো।লেইট হয়ে যাবে নাহলে।আর আপনার তো গার্লফ্রেন্ড আছেই,আমার সাথে প্রেম করতে আসছেন কেন আবার?”
মুনতাসির দেখলো লাজুক কথা গুলো অনেকটা অভিমান নিয়েই বলেছে।তাই মুনতাসির আবার দুষ্টামী শুরু করলো।আর বললো,”ওই গার্লফ্রেন্ড টা একটা সাইকো।পুরোনো হয়ে গেছে।তাই এখন আমি আপনার প্রেমে পড়েছি।”
লাজুক ভ্রু কুঁচকে ফেলে মুনতাসিরের কথা শুনে।
তখন মুনতাসির লাজুককে আবার বলে,”আপনাকে আমি আমার করেই ছাড়বো।এই সকাল বেলা চা না খেয়ে বলছি।চা এর প্রমিস।আপনাকে আমি আমার করেই নিবো।”
এটা বলে মুনতাসির লাজুকের হাতে একটা খাম দিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
লাজুক খামটা হাতে নিয়ে পড়ে দেখে, যে কন্ট্রাক্ট এর জন্য এলএন কোম্পানি এখানে এসেছিলো সেটা ওরা পেয়ে গেছে।
আর ওই খামের সাথে ছিলো লাজুকের এক সপ্তাহ ছুটির জন্য একটা চিঠি।
লাজুক যেনো এবার ভারী অবাক হয়।মুনতাসিরের লেখা চিঠি আর শুভাকাঙ্ক্ষীর দেওয়া চিঠির লেখা সেইম।
লাজুক কিছুটা আন্দাজ করতে পারে যে এই মুনতাসির ই কী তাহলে শুভাকাঙ্ক্ষী? কিন্তু তবু মনে একটা সন্দেহ থাকে।ভাবে স্যার কে একবার ফোন দিলে বুঝতে পারবো আসলে কি হচ্ছে।
লাজুক তাড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে আসে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে স্যার সকালে ওগুলো কি বললেন? আমাকে ওনার করেই ছাড়বেন মানে কি?
এটা ভেবেই লাজুক ফিক করে হেসে ফেলে।আর মুখে বলে স্যার সকালে কিসের প্রমিস করলেন?” চা এর”!উনি পারেন ও বটে।
মুনতাসির তখন আবারো লাজুকের রুমে আসে।এসে দেখে মেয়েটা হাসছে।
মুনতাসির লাজুকের সামনে গিয়ে হাতে তুড়ি বাজিয়ে লাজুকের মনোযোগ কাড়ে।
লাজুক চমকে বলে, “আ আ আপনি?”
মুনতাসিরঃ কখন এসে দাঁড়িয়েছি।আমার দিকে কোনো খেয়াল ই নেই।কি ভাবছেন এতো? আমাদের যেতে হবে তো।যাবেননা নাকি?
লাজুকঃআসলে স্যার,আপনি তো আমাকে এক সপ্তাহের ছুটি দিয়েছেন তাই ভাবছি আমি এই পথেই একবার বাড়িতে যাবো।
আম্মুর সাথে দেখা হয়না আট বছর।
ভাবছি এবার আম্মুর সাথে দেখা করে আসবো একবার।
মুনতাসিরঃওয়াও গ্রেট।চলুন তাহলে একসাথেই যাওয়া যাক।
আমি তো অলরেডি গাড়ি বুক করে নিয়েছি।
আপনার বাড়ি যেনো কোথায়?
লাজুক অস্পষ্ট ভাবে বলে,”গোপালগ্রাম,মাগুরা।”
মুনতাসির খুব খুশি হয়ে বলে, “ভেরি গুড।আমিও গোপালগ্রামে যাবো।তাহলে চলুন একসাথে যাওয়া যাক?”
লাজুক তখনি মুনতাসিরের উদ্দেশ্যে বলে,”শহুরে ছেলে আবার গ্রামে কেন যাবে হঠাৎ? ”
“এই হলো আপনাদের মেয়েদের সমস্যা।যেটা বলেছি সেটা শুনলেই হয়।তা না হাজার টা প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে বসে পড়েন।যাকগে ছাড়ুন।আজকে ঝগড়া করার মুড নাই।বাবা-মা এসেছে বিদেশ থেকে গতোকালের ফ্লাইটে।এজন্য গ্রামে যাচ্ছি।
আমাদের গ্রামের বাড়ি ও গোপালগ্রামে।”
লাজুক আর কথা বাড়ায়না।মুনতাসিরের সাথে বেরিয়ে পড়ে।
কিন্তু মুনতাসির আর লাজুক গাড়িতে ওঠার সময় কোথ থেকে জানি মুনা চলে আসে।
মুনা আসাতে লাজুক খুব বিরক্ত হয়।কিন্তু প্রকাশ করেনা।
মুনা মুনতাসির কে জড়িয়ে ধরে এসেই।আর বলে,”মিসড ইউ হ্যানি।”
“সেইম টু ইউ মুনা।”
“আমি তোমার সাথে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার বস আমাকে নিতে এসেছে।সে জন্য আর তোমার সাথে যাওয়া হলোনা।সাবধানে যেয়ো তোমরা।”
মুনা লাজুকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে যায়।
লাজুক যেনো খুব বেশি অবাক হয়।চমকে তাকায় মুনার দিকে।
লাজুক ভাবে কি হচ্ছে এগুলা আমার সাথে? সকালে স্যারের এমন রোমান্টিক কথাবার্তা,এখন আবার মুনা সাইকো টার হাসি।
মুনতাসির লাজুকের দিকে তুড়ি বাজিয়ে ডাকে,”ও হ্যালো ম্যাডাম,কি ভাবছেন?আমাদের যেতে হবে তো না কি?”
“আসলে স্যার আমি ভাবছি আপনাদের দুজনের আজ কি হলো? দুজনের এতো ভালো ব্যবহার আমার ঠিক হজম হচ্ছেনা।”
মুনতাসির কথাটা শোনামাত্রই লাজুকের কাছে চলে আসলো,আর বললো,,,,,,,
চলবে,,,,,,