#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০৮
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)
সব ভালোবাসাতে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ কি অনিবার্য?মনে হয়।
জীবনে প্রথম লাজুক প্রেমে পড়েছিল নীলচে চোখের ছেলেটার উপর।
তারপর ঝড়ের গতিতে তুলিন প্রবেশ করে তার জীবনে।আর কেড়ে নেয় আটটা বছর।
এরপর আবার ভালো লেগেছিলো এই মুনতাসির চৌধুরীকে।কিন্ত এখন?তার সাথেই কেন এমনটা হতে হবে?
মেঠো পথ, চারিদিকে নতুন গজানো ধানের শিষ।দেখে মনে হচ্ছে এটা সোনার খনি।
সামনে মুনতাসির আর মুনা একে অপরের হাত ধরে হাঁটছে।
মেয়েটার নাম মাইসারা রহমান মুনা।সে মুনতাসিরের কলেজিয়েট ফ্রেন্ড।
তাছাড়াও তাদের একটা গভীর সম্পর্ক আছে।
সেটাকে কি বলে আখ্যায়িত করবে জানা নেই লাজুকের।
গ্রামে একটা বাংলো বাড়িতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাতে ফ্রেশ হয়ে লাজুক মুনতাসিরের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।কিন্ত দরজা খুলতেই একটা শীতল রক্তের স্রোত তার শরীর দিয়ে উপরে উঠে যায়।
মুনা নামক মেয়েটা মুনতাসিরের বুকে মাথা দিয়ে তার হৃদস্পন্দন অনুভব করছে।
লাজুকের রাগ হচ্ছে প্রচন্ড।মনে হচ্ছে মুনাকে যদি কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারতে পারতো!কিন্ত তার এতো রাগ হওয়ার কারণও সে খুঁজে পাচ্ছে না।উদ্ভট চিন্তাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে লাজুক দরজায় নক করে।
.
.
“এক্সকিউজ মি স্যার!আই নিড টু টেল ইউ সামথিং ভেরি ইমর্পট্যান্ট।”
“ইয়াহ মিস লাজুক।কাম ইন।”
মুনা তখনও ওর বুকে মাথা রেখে আছে।মানুষ এতো বেহায়া কিভাবে হতে পারে বুঝে উঠতে পারছে না লাজুক।
ঘোর কাটে মুনতাসিরের চিৎকারে।সে মুনাকে ঘর থেকে বের হতে বলায় সে যেতে চাইছিলো না।তাই রেগে গিয়ে মুনতাসির চিৎকার করতে বাধ্য হয়।মুনা বেরিয়ে যাওয়ার সময় লাজুক ওর মুখে প্রচন্ড ভয়ংকর একটা প্রতিশোধের স্পৃহা দেখতে পাই।
.
.
মুনতাসিরের সাথে কথা বলা শেষ হয় প্রায় ১২ টার দিকে।নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায় লাজুক।
অনেক রাত হওয়াতে আম্মুকে আর ফোন করে না।
মুনার কথা ভাবতে ভাবতে শুভাকাঙ্খীর কথা প্রায় ভুলে যায় লাজুক।তখন ম্যাসেজ টোনটা বেজে ওঠে।
“আজ আকাশে অনেক মেঘ দেখেছো মায়াকন্যা।আর আমি এটাও জানি তোমার মনের আকাশেও অনেক মেঘ জমে আছে।ওগুলো বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে পড়তে চাইছে।কেঁদো না মায়াকন্যা।জীবনটা বড়ই ছলনাময়ী।”
কোনো উত্তর দেয়না মায়া।সত্যিই আজ তার মনের আকাশে অনেক মেঘ জমে আছে।আর দেরি করে না লাজুক।কাল প্রোজেক্ট প্লেসে ঠিক টাইমে যেতে হবে।
কোকিলের মিষ্টি মধুর কণ্ঠে ঘুমটা ভাঙে লাজুকের।আজ প্রকৃতিকে অপরূপ লাগছে তার কাছে।দ্রুত শাওয়ার নিয়ে রান্নাঘরে চা করতে যায় লাজুক।
পেছন থেকে জাপটে ধরে আছে লাজুককে।আর গলায় ধরা আছে একটা সদ্য কেনা ছুরি।নড়ারও উপায় নেই।
ক্রোধমিশ্রিত কণ্ঠে মুনা লাজুকের উদ্দেশ্যে বলে______
“যেই না হ্যান্ডসাম একটা ছেলে দেখো তার পিছনেই পড়তে হবে?”
“কার পেছনে পড়তে দেখলেন আপনি আমাকে?”
“মুনতাসিরের সাথে কি সম্পর্ক তোমার?”
“সে আমার বস ছাড়া কিছু না।”
“তাহলে কাল রাতে ওর ঘরে গেছিলে কেন?”
“আপনি তো বড্ড বেহায়া।আপনি আমার হাতে ফাইল দেখছিলেন।তবুও এই প্রশ্ন কেন?”
“তোমার মতো মেয়েকে অনেক ভালো করে চেনা আছে আমার।”
“আপনি সত্যিই একটা সাইকো।কালকের ধারনা আজ সত্যি হলো।”
মুনাকে কোনোমতে সরিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে লাজুক।বিরক্ত লাগছে তার এই পরিবেশটাকে।
সুন্দর একটা চকোলেট কালারের হাফ সিল্কের শাড়ি পড়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে লাজুক।তারপর ম্যাচিং কিছু অর্নামেন্টস পড়ে নেয়।
ঘর থেকে বের হওয়ার পথে উত্তরের সোফাতে দেখতে পায় চকোলেট কালারের একটা ফর্মাল টিশার্টে বসে আছে মুনতাসির।চমকে ওঠে লাজুক।সাথে একটু ভয় পায়।
“মিস লাজুক আমরা কোনো বিয়ে এটেন্ড করতে যাচ্ছি না।এতো সাজ গোজের কিছু দেখছি না আমি।”
“আসলে স্যার……..”
কথা শেষ করতে না দিয়ে মুনতাসির মুনাকে ডাকে।তার হাত দেখিয়ে লাজুককে বলে_____
“আপনি কোন সাহসে মুনাকে বেহায়া বলেছেন?আর ওর হাত কেটে দিলেন কেন?”
লাজুক প্রচন্ড অবাক হয়।বরং মুনা ক্রোধের বশে লাজুকের বাম হতাটা কেটে দেয়।
মুনা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মুনতাসির তাকে দেওয়ালের সাথে আটকে ধরে দাঁতে দাঁত খিচে বলে____
“লোকজনকে নিজের সৌন্দর্য দেখানোর দরকার নেই।একটা ফর্মাল কামিজ পড়ে বের হয়ে আসুন॥”
বলেই বেরিয়ে যায় মুনতাসির।
লাজুক এতক্ষন ব্যাথায় কোকড়াচ্ছিলো।
হাতে থাকা কাচের চুড়িগুলো টুপটুপ করে ভেঙে পড়ছে।লাজুকের হাতের কয়েকটা জায়গা কেটেও গেছে।লাজুক ওগুলোকে পাত্তা না দিয়ে একটা নীল রং এর কামিজ পড়ে বের হয়ে আসে।
নিচে আসতেই লাজুক মুখোমুখি হয় মুনা আর মুনতাসিরের।মুনা তার দিকে তাকিয়ে পৈশাচিক হাসি হাসছে।
আর মুনতাসির ভাবছে নারীর আর কত রূপ?কিছুক্ষন আগে শাড়িতে লাগছিলো একটা পরিপূর্ণ নারী।আর এখন সেই চোখজোড়াতে নেই কাজলের আভা, ঠোঁটে নেই সেই লাল আভা,হাতে চুড়িও নেই।চুড়ির কথা মনে করে মুনতাসির লাজুকের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাত থেকে এখনো রক্ত পড়ছে।মুনতাসির খেয়াল না করে গাড়িতে ওঠে।
কিছুক্ষন পরে লাজুকের ফোনে সেই চিরচেনা নাম্বার থেকে ম্যাসেজ আসে।
“মায়াবতী নিজের যত্ন নিও।”
লাজুক উত্তর দেয়, “দেখা যাবে।”
অপর পাশের ব্যক্তিটা বোঝে তার মায়াবতীর অভিমান।
প্রোজেক্ট প্লেসে পৌঁছে মুনতাসির একটা ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এগিয়ে আসে লাজুকের দিকে।পরম যত্নে লাজুকের হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়।
লাজুক একটু না অনেকখানি অবাক হয় মুনতাসিরের এরূপ কাজে।
চলবে……….