#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০৬
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)
তুলিকা যখন লাজুক কে তুলিনের সাথে দেখা করতে বলে তখন লাজুক যা বলে-
লাজুকঃতুলিকা আমি অতীতে ফিরতে চাইনা।তুলিন আমার জীবনের অভিশাপ।
তাই আমি কোনো মতেই আর তুলিনের মুখোমুখি হতে চাইনা।
তুই তুলিন কে বলে দিস আমি তুলিন কে ক্ষমা করে দিয়েছি।
কারন প্রকৃতি কখনো প্রতিশোধ নিতে ভুলে যায় না।
আজ আমি আসি তুলিকা।আমি খুব ক্লান্ত।
তুই ভালো থাকিস।আল্লাহ হাফেজ।
লাজুক তুলিকার উত্তরের অপেক্ষা না করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পড়ে বাসার উদ্দেশ্যে।
বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে,ডিনার সেরে মা কে কল করে।
লাজুকঃআসসালামু আলাইকুম আম্মু! কেমন আছে আমার আম্মুটা?
ওপাশেঃ ওলাইকুম আসসালাম।আমি ভালো আছি মা।তুই কেমন আছিস?
লাজুকঃআলহামদুলিল্লাহ।কি করো আম্মু?খেয়েছো?
ওপাশেঃসব করেছি।এখন শোন গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
তোর বাবা যে শিক্ষকের কারনে হার্ট অ্যাটাক করেছিলো, তাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে।
লাজুকঃ কি বলো এসব? কেন আম্মু? এসব কি করে হলো?
ওপাশেঃ শোন মা,পাপ বাপকে ও ছাড়েনা।যে মানুষ টা তোর থেকে তোর বাবা কে কেড়ে নিলো,মা-মেয়ের সম্পর্ক নষ্ট করলো!
তাকে কি আমি ছেড়ে দিবো?
কখনোই না।
তোর ঐ শিক্ষকের সকল প্রকার অন্যায় কাজের প্রমাণ জোগাড় করেছি আমি এই ক’বছরে।ঠিক সময়ে তা পুলিশের কাছে দিয়েছি।আজ আমি ভীষণ খুশি।
লাজুকঃথাক মা এসব বাদ দাও।অতীত মনে পড়লে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় আমার।
লাজুকের মা আর কথা বাড়ায়না।ফোন রেখে দেন আরো অল্প কিছু কথা বলে।
লাজুক ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়।তার মধ্যে একটা ম্যাসেজ আসে লাজুকের ফোনে।
“মায়াকন্যা রাত জেগোনা,আর দুশ্চিন্তা করোনা।সব ঠিক হয়ে যাবে।” (শুভাকাঙ্ক্ষী)
লাজুক মুচকি হাসে।তারপর ঐ নাম্বারে ডায়াল করে।কিন্তু কল টা রিসিভ হয়না।
রিং হতে হতেই কেটে যায়।
কল কেটে যাওয়ার পরেই লাজুক ফিরতি ম্যাসেজ পাঠায়।
“এই যে শুভাকাঙ্ক্ষী,অনেকদিন তো হলো! এবার কি আমার সাথে একটু কথা বলা যাবে?ইচ্ছে হচ্ছে আপনার সাথে কথা বলতে খুব।”
তখনি লাজুকের ফোনের টোন বেজে ওঠে।কল আসে ঐ নাম্বার থেকে।
লাজুক কল টা রিসিভ করার পর পর ই শুনতে পায়,
“জো হুকুম মহারানী! আপনি চাইলেন আর আমি চলে এলাম।”
লাজুক হেসে ফেলে তার কথা শুনে।আর বলে,”আমি আবার আপনি হয়েছি কবে থেকে?আপনার মুখে আপনি টা ঠিক মানায় না।আমি আপনার তুমিতেই অভ্যস্ত।”
শুভাকাঙ্ক্ষীঃ ঠিক আছে।আর আপনি বলবোনা।আমিতো মজা করছিলাম।
আরো কিছু টুকটাক কথা বলে ওরা ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরের দিন সকালে লাজুক অফিসে ঢোকে অফিস টাইমের ঠিক দশ মিনিট আগে।
লাজুক নিজের ডেস্কে গিয়ে বসতেই টেলিফোন টা বেজে ওঠে।
লাজুকের বস মুনতাসির লাজুক কে তার কেবিনে ডেকেছে।
লাজুক তো ভয়ে থাকে।কেন তাকে ডাকা হলো? বসের ডেস্কে যাওয়ার আগে লাজুক একবার সময় টা দেখে নেয়।ভাবে যে ঠিক সময়েই এসেছি।মানে বকা খাবোনা।
কিন্তু বসের কেবিনে গিয়ে লাজুক ভীষণ অবাক হয় বসের কথা শুনে।
মুনতাসিরঃ আপনার নাম যেনো কি? ও হ্যা মনে পড়েছে।লাজুক রহমান।
এখন কয়টা বাজে?
মুনতাসিরের কথা শুনে লাজুক বোকাবনে চলে যায়।
আর বলে,”কেনো স্যার আপনি জানেন না এখন কয়টা বাজে? আপনার হাতঘড়ির টাইম ঠিক নেই?”
মুনতাসির লাজুকের এমন কথা শুনে খুব রেগে যায়।আর বলে,”স্টুপিড”।
“আপনার অফিস টাইম কখন? এতো আগে কেন এসেছেন?
তার উপর আবার ফাঁকা অফিস।কোনো কমনসেন্স নেই আপনার?”
“কাল থেকে জাস্ট টাইমে আসবেন।এক মিনিট আগে বা এক সেকেন্ড পরে আসলে খুব খারাপ হবে।গেট আউট মাই রুম।”
লাজুকের অবাক হওয়া চরম সীমায় পৌঁছে গেলো।
লাজুক মুনতাসিরের রুম থেকে বেরিয়ে চিন্তা করতে লাগে,এতো সুন্দর,স্মার্ট একটা ছেলের ব্যবহার কি না এতো জঘন্য?
আর তার উপর কি না আমি ক্রাশ খাচ্ছিলাম! আল্লাহ তুমি মাটি ফাঁকা করো আমি মাটির মধ্যে ঢুকে যাই।
লাজুক আর দাঁড়িয়ে না থেকে কাজে মন দেয়।
অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে শুভাকাঙ্ক্ষী ফোন করে লাজুক কে।
শুভাকাঙ্ক্ষীঃ কী ব্যাপার ম্যাডাম,আজ অফিস কেমন কাটলো?
লাজুকঃ আর বলবেন না।অফিসের বস একটা খচ্চর,খাটাস।এতো সুন্দর,স্মার্ট,পুরো নায়কের মতো দেখতে।কোথায় মিষ্টি করে কথা বলবে।তা না করে বকাবকি করলো আমাকে।
শুভাকাঙ্ক্ষীঃ তা কি বকাবকি করলো একটু বলোতো!
লাজুক সকালের ঘটনা সব খুলে বলে।
তখন শুভাকাঙ্ক্ষী বলে,”আরে পাগলি এটাকে বকা দেওয়া বলেনা।এটাকে কেয়ার বলে।দেখো অফিস তো ফাঁকা ছিলো।তোমার তো কোনো ক্ষতি ও হতে পারতো তাইনা?”
লাজুক তখন বলে,”এটা কোন ধরনের কেয়ার?আচ্ছা বাদ দেন।মুড নষ্ট না করি।বাসায় চলে আসছি।এখন রাখছি।আল্লাহ হাফেজ।”
ফোন রেখে ফ্রেশ হয়ে,রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে লাজুক।
কারন আজ তার মুড ভালো নেই।
পরেরদিন সকালে জাস্ট টাইমে অফিসে যায়।
সেদিন আর মুনতাসির বকাবকি করেনা লাজুক কে।
লাজুক খুব অবাক হয়।কারন মুনতাসির আজ বকাবকির বদলে লাজুক কে ইনভাইট করে তার জন্মদিনে।
হ্যা,কাল মুনতাসিরের জন্মদিন।
তাই ইনভাইট পায় অফিসের সবাই।
পরেরদিন সন্ধ্যায় লাজুজ হাফ সিল্কের একটা ব্লু শাড়ি পরে,সাথে ম্যাচিং গহনা পরে চলে যায় পার্টির উদ্দেশ্যে।
পার্টিতে গিয়ে লাজুক খুব অবাক হয়ে যায়।
কারন পার্টির সমস্ত ডেকোরেশন,খাবারের আইটেম সব কিছু লাজুকের পছন্দের।
লাজুক ভাবে এখানে সব কিছু আমার পছন্দ মতো কেন? তারপর আবার ভাবে হয়তো স্যারের ও এসব পছন্দ।
দুইটা মানুষের পছন্দ মিলে যেতেই পারে।এটা অস্বাভাবিক কিছুনা।
মুনতাসির সবার উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলে।
তারপর শুরু হয় কেক কাটা।
মুনতাসিরের বাবা-মা কেউই মুনতাসিরের সাথে থাকেনা।ওনারা দুজনই বর্তমানে বিদেশে আছেন।
কেক কাটা পর্ব শেষে মুনতাসির সবার উদ্দেশ্যে বলে,”আজ আমার জন্মদিন।আমার বাবা-মা দুজনেই অনেক দূরে আছেন।এখানে আমার অনেক আত্মীয়স্বজন আছেন।আর আছেন আমার কলিগ।
আমি যদি আজ আপনাদের মধ্যে কারো কাছে কিছু চাই তাহলে কী পাবো?”
তখন সবাই একসাথে মুনতাসির কে বলে,” হ্যা অবশ্যই”।
মুনতাসির তখন লাজুকের দিকে তাকিয়ে বলে,”মিস লাজুক আমি………
চলবে,