অনুভবে_তুমি পর্ব-৩৯
#সাইমা_ইসলাম(প্রীতি)
.
–বল কোথায় আমার মিহিন।কোথায় আছে ও?তোদের সাহস কি করে হয় আমার আত্তাকে আমার থেকে আলাদা করার।”
.
আরো জোরে চেঁপে ধরলো রূপ তিরার গলা।চোক দুটো থেকে যেন আগুনের ফুলকি বের হচ্ছে।অনেকক্ষন কান্না করার জন্য নাক,গাল আর কান টকটাকে লাল হয়ে আছে।কথায়,আচরণে সব কিছুতে তার আজ হিংস্রতা।
তিরা চোখ খিচে বন্ধ করে রয়েছে।হাত দিয়ে মোচরা-মোচরি করছে রূপের হাত।শ্বাস প্রায় বন্ধের পথে তার।কিন্তু রূপের শক্তির কাছে পেরে ওঠা তার পক্ষে অসম্ভব।
কিছুক্ষন রূপ আপনা আপনিই ছেড়ে দেয় তিরাকে।ততক্ষনে ওর বেশ বাজে হাল হয়ে গিয়েছে।কাশছে আর সমানে নাক,মুখ দিয়ে শ্বাস নিয়ে যাচ্ছে।আঙ্গুলের ছাপ পড়ে গেছে গলার মাঝে।
সামনে থাকা গিটারটাকে তুলে সজোরে বারি দিয়ে ভেঙ্গে ফেললো রূপ।তিরার দিকে রক্তবর্ণ চোখে একবার তাকিয়ে মুহূর্তের মধ্যে রুম থেকে বের হয়ে গেলো রূপ।যাওয়ার আগে শ্বাসিয়ে গেছে মিহিনকে খুঁজে না পেলে এদের কাউকে ছাড়বে না ও।
রূপ যাওয়ার পর ধুপ করে মাটিতে বসে পড়লো তিরা।এইদিনটাই যে অপেক্ষা করে ছিল!বাবার পাপের শাস্তি যে ওকেই ভোগ করতে হবে।
তিরা তো কখনো চায়নি রূপকে জোর করে পেতে?খুশি দেখতে চেয়েছে।তা হোক না মিহিনের সাথেই!
নিজের ভালোবাসা গুলোকে তো বিসর্জন দিতেই চলেছিল।তাহলে কেনো আবার রূপকে পাওয়ার স্বপ্ন দেখানো হলো ওকে।
আজ এতো দূর আসার পর কিভাবে ওর পক্ষে সম্ভব রূপকে ছেড়ে যাওয়া।রূপ যে ওর বাগদত্তা।
.
প্র্যাকটিস রুমে ভাঙ্গচুরের আওয়াজে ছুটে নিজ রুম থেকে বের হয়ে এলেন মিসেস সীমান্তি।এসে দেখেন রূপ রাগের মাথায় বের হয়ে যাচ্ছে বাসা থেকে।নিজের ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে ছুটে গেলেন রূপের কাছে।
–আব্বু…আব্বু এই ভর দুপুরে কই যাও তুমি না খেয়ে।কি হয়েছে?তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?
রূপ এক ঝাটকায় সরিয়ে নিলো নিজেকে সীমান্তি এহরাজের কাছ থেকে।
–ধোঁকা……ধোঁকা দিয়েছো এতদিন তোমরা সবাই আমাকে।কেড়ে নিয়েছো আমার ভালোবাসা।জানা স্বত্তেও একবারের জন্যও আমাকে বুঝতে দাওনি তার উপস্থিতি।
কিছুটা থেমে চোখ মুছে রূপ আবার বললো,
–এই গানের জন্য না সব?ছেড়ে দেবো।ছেড়ে দেবো সব।গাইবো না আর কোনো গান।আমি এখন বিশ্ব বিখ্যাত গায়ক তার জন্যেই তো মিহিন আজ নেই আমার কাছে তাই না!আর গান গাইবো না আমি ওকে খুঁজে না পেলে।
কথা বলে আর এক সেকেন্ড দাড়ালো না রূপ।বের হয়ে গেলো এহরাজ মেনশন থেকে।
মিসেস সীমান্তি ঘাবড়ে গেলেন খুব।তিরা তো ওকে এসব কিছু বলার কথা না।তাহলে………….?
দৌড়ে প্র্যাকটিস রুমে এসে দেখেন তিরা গলা ধরে নিচে বসে কাঁদছে পাশেই পড়ে আছে ভেঙ্গে-চুরে যাওয়া গিটারটা।তিরা পাশে বসে কাধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে।
কিছুই বলছে না তিরা।সমানে শুধু কান্না করে যাচ্ছে।পাশে পিয়ানোর উপরে চোখ পড়তেই ভেতরটা মোচর দিয়ে ওঠলো মিসেস সীমান্তি।
মিহিনের ডায়েরি………?
এটা এখানে,,,,,,,,,
মিহিনের কাছে ছিলো এটা।জাপান থেকে যখন ফিরেছিলো তখন এসছিলো একবার এহরাজ মেনশনে।রূপের তখন কিছু মনে নেই।বাধ্য হয়ে সকলে ফিরিয়ে দিয়েছিলো মিহিনকে।
ইশু আর রিদ্দি মিহিনের কাছ থেকে ডায়েরিটা সরিয়ে নিয়ে ফেলে রেখে গেছিল রূপের খাটের কাভার্ডে।যাতে চোখে পরে রূপের।সীমান্তি নিজে সরিয়ে রেখেছিলেন এটা।স্টোর রুম,,,,,,,,,,হ্যা স্টোর রুমেই তো রেখেছিলেন এটা।
কিন্তু এখানে এলো কি করে…….?
রূপ পড়ে নিয়েছে এটা!
কথাটা ভাবতেই সবকিছুর মাঝেও কেমন যেনো একটা ভালোলাগা কাজ করছিলো মিসেস সীমান্তির।এতদিনের পাপ বোধে ভারী হয়ে থাকা মনটা যেনো আজ কিছুটা হলেও হালকা হয়েছে।
পাপের বোঝাটাও কমবে এবার।
কতো দিন পর মিহিনকে আবার বুকে জড়িয়ে নিবেন।কিন্তু মিহিন?সে কি মাফ করতে পারবে তাকে?
.
অবশ্য মাফ করবার কথাও না,যে অন্যায়টা তারা ওই অনাথ মেয়েটার সাথে করেছে!
একটা না পাওয়া সংসার রেখে যাওয়ার যে কি যন্ত্রণা তা খুব ভালো করেই জানেন মিসেস সীমান্তি।এই বাঁচ্চা মেয়েটার সাথে যে তারা বড়ই অত্যাচার করে ফেলেছে।
.
মাথা কাজ করছেনা রূপের।হাইওয়েতে ওড়াধুরা গাড়ি চালাচ্ছে রূপ।কার কাছে জানতে চাইবে ওর মিহিন কোথায়?কেমন আছে?
ইনফ্যাক্ট ওর মিহিনের চেহারাটাও কল্পনা করতে পারছে না।মাথার যন্ত্রণাটা চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে ঠেকেছে।হঠাৎ মনে হলো রিদ্দির কথা।রিদ্দি,ইশা ওদের নিশ্চয়ই যোগাযোগ আছে মিহিনের সাথে।
সাথে গাড়ি নিয়ে চলে এলো রিদ্দির বাসায়।ইশা,রিদ্দি বাসায় নেই।একদিনের জন্য ঘুড়তে গিয়েছে ঢাকার বাহিরে।
কুমিল্লা ফামহাউজে।রিদ্দি একটু জোর করেই নিয়ে গেছে ইশাকে।ইশাকে টাইম দেয়া হয়না একদম।রিদ্দির ভালোবাসা আর টাইমের অভাব,ইশাদ ভাইয়ার সাময়িক অবস্থা আর মিহিনের একাকিত্ব সব মিলিয়ে ভালোরকমের ট্স্রেস গিয়েছে ইশার উপর।এর মাঝেই হারাতে হয়েছে নিজ বাবাকে।হার্ট অ্যাটাক এ মার যান তিনি।
মানসিকভাবে অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছে ইশা।ডাক্তারের কথা মতো মাইন্ড ফ্রেশ করতে ঘুরতে যাওয়া।
ইশা আর রিদ্দিকে অবাক করে দিয়ে রূপ হাজির হয় সেখানে।
ইশারা বাগানের সাইডে বসে ছিলো।কেয়ারটেকার চাচা দৌড়ে এসে বললেন,
–রূপ দাদাবাবু এসছে।তাড়াতাড়ি চলেন আপনাগোরে খুঁজতাছে।
রিদ্দি বেশ অবাক হয়ে বলল,
–রূপ!এখানে হঠাৎ।কিছু হয়েছে কি?
–হে তো কইবার পারিনা দাদাবাবু।তয় কিছু একটা হইছে।রূপ দাদাবাবু চোখ,মুখের ধরন দেইখ্খা মনে কেমনে জানি ‘কু’ ডাকতাছে।
–আহা চাচা কি যে বলো না তুমি!চলো তো দেখি।
ইশা বেশ এক্সাইটমেন্ট নিয়ে দ্রুত পা চালিয়ে ড্রইং রুমে চলে এলো।
.
রূপকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে বললো,
–ভাইয়া আপনি…….।ঠিক আছে তো সব বাসায়।
–মিহিন কোথায় ইশা?ওর এড্রেসটা দাও।আমি এক্ষুণি যাবো ওর কাছে……….।
.
.
To be continue ?
#অনুভবে_তুমি
পর্ব-৪০
#সাইমা_ইসলাম(প্রীতি)
.
রূপের কথা শুনে ইশা তাজ্জব বনে গেলো।রূপ হঠাৎ মিহিনকে………?
রিদ্দি খুশি আটকে রাখতে না পেরে সোজা জড়িয়ে ধরলো রূপকে।নিশ্চয়ই রূপের মনে পড়ে গেছে সবটা।সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো হয়ত এমনি হয়,হারিয়ে গিয়েও হারায়না।রয়ে যায় মনে এমন কোনো কোনে যা অনুভব করা যায়,ছুঁতে গেলেই মিলিয়ে যায় শূণ্যে।
রূপের যেনো আর তর সইছে না।রিদ্দির মুখ দেখেই বুঝতে পারছে ও মিহিন কোথায় আছে তা রিদ্দি জানে।অনেক বেশি উত্তেজনা কাজ করছে মনের মাঝে।যে মেয়েটাকে ও এতটা ভালোবাসতো,ভুলে যাওয়ার পরও যার জন্য মনটা অস্থির হয়ে থাকতো সারাক্ষণ,তাকে অবশেষে পেতে চলেছে ও।
রিদ্দি হাসি মুখে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইশা রিদ্দিকে বললো,
–একটু এসো আমার সাথে।কথা আছে।
রিদ্দি ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইলো
–“কি?”
–আহা,আসোই না এদিকে।ভাইয়া একটু বসো তুমি।
রিদ্দি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বাধ্য হয়েই বেডরুম এলো ইশার সাথে।
রিদ্দি বললো,
–আরে এভাবে ডাকলে কেনো?দেখো না রূপের মনে হয় সব মনে পড়ে গেছে।আমি জানতাম,আমি জানতাম ঠিক এমনটাই হবে।আফটার অল ওরা একে অপরের জন্যই তো।
–তুমি মিহিনের ব্যাপারে কিছুই বলবে না ভাইয়াকে।
–মানেহ!কি বলতে চাইছো কি তুমি?পাগল হইছো?
–পাগল!আগে ছিলাম।এখন ঠিক আছি।আমি তো ভাইয়াকে অনেক সাপোর্ট করতাম।কিন্তু কি হলো!ও পরিবারটার সবাই মিলে আমার মিহিনটার জীবনটাই রংহীন ধূসর করে দিছে।আমি চাই না ও আর কোনো আঘাত পাক।
–আজব তোহ।মাথা ঠিক আছে তোমার কি সব আবল-তাবল বকছো?
–ঠিকই বলছি।আমি মিহিনকে কসম কাটিয়ে রাজি করছি ইশাদ ভাইয়াকে বিয়ে করার জন্য।তাই আর কোনো ঝামেলা চাইনা।
–কিহ!বিয়ে?তুমি জানো মিহিন শুধুমাত্র রূপকে ভালোবাসে।
–আর ইশাদ ভাইয়া মিহিনকে।
–তুমি কি সত্যিই চাও রূপ মিহিনকে খুঁজে না পাক?
–পাওয়ার পর হারিয়ে গেলে বাঁচবে না মেয়েটা।
–রূপ ছাড়বে না ওকে।
–এর আগেই তো ছাড়তে চায়নি।
–ওটা নিতান্তই একটা খারাপ কিছু ছিলো,,,,,,,,,,,,,,
–মিহিনের কাছে ফিরতে হলে রূপ ভাইয়ার ক্যারিয়ার,এতো নাম,যশ হারাতে হবে যে।
–তোমার মতো পাগলের সাথে কথা বলা বৃথা।এদের দু’জন আলাদা করার কথা ভাবলেও পাপ হবে।আমি পারবো না।
–দুদিন পর ইশাদ ভাইয়ার বিয়ে।ভাইয়ার কথাটা তো একটু ভাবো তুমি।তাছাড়া রূপ ভাইয়াও তো বিয়ে করছিলো তিরাকে।
–আমি হয়ত পারবো না তোমার মতো এতো স্বার্থপর হতে।
–দেখো বারাবারি করো না প্লিজ।
–সেটা করা তো তোমার কাজ প্রথম থেকেই।দুটো মানুষ যাদের আত্তা দুটো আরো অনেক আগেই এক হয়ে গেছে তাদের যদি শুধুমাত্র তোমার ভাইয়ের সুখের কথা ভেবে আলাদা করতে চাও,আমারো হয়ত তোমার সাথে আর থাকা হবে না।মাইন্ড ইট।
রাগে গঁজ গঁজ করতে করতে রিদ্দি বের হয়ে গেলো রুম থেকে।কি করে এখনো ইশা বলছে এই কথা?
খাটে ধাপ করে বসে পরলো ইশা।ঠোঁট কামড়ে চোখের জল আটকাবার চেষ্টা করছে।তাও পারছেনা সামলাতে নিজে।ওর কি দোষ?ও তো শুধু মিহিনের মুখের হাসিটা চায়।
.
রিদ্দি নিচে আসতে না আসতেই ওর উপর ঝাপিয়ে পড়লো রূপ।
–কিরে ভাই এতো টাইম লাগেনি!চল তাড়াতাড়ি।
–হুহ।
ততক্ষণে ইশাও বের হয়ে এসছে।কিভাবে আটকাবে ও ওদের।ইশাদ ভাইয়ার মন,ইচ্ছা,চাওয়া-পাওয়াগুলো যে আবার ভেঙ্গে চুরমার হতে চলেছে।আর বোন হয়ে তা কিভাব সহ্য করবে ইশা…………।
রূপের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে কিছুটা ফুস ফাস করে রিদ্দি জিজ্ঞেস করলো,
–আচ্ছা দোস্ত তোর মিহিনের ভালোবাসায় নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস আছে আমার।তবে যদি এমনটা হলো ধর মিহিনকে ফিরে পাওয়ার জন্য তোকে তোর গিংঙ্গার জীবনের ইতি টানতে হলো।পারবি?
–হাহাহা।(উচ্চ স্বরে শব্দ করে হেসে ওঠলো রূপ)।যার জন্য আমার গান গাওয়া,যে আমার গানের সুর,গিটারের তাল তার জন্য গান ছাড়া!!এ আর এমন কি হলো।
–পারবি তুই(রিদ্দির চোখ জলজল করে উঠলো)
–সব পারবো।
রিদ্দি রূপের পিঠে চাপর কেটে বলে ওঠলো,
–সাব্বাস ব্যাটা!পেয়ার কারো তো এসে হি।চল এবার তোকে মিহিন অব্দি পৌঁছানোর দায়িত্ব আমি নিলাম।
কিছুটা চুপ করে ইশার দিকে তাকিয়ে রিদ্দি আবার বললো,
–কেউ কেউ ভালোবাসা জিনিসটাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলেও আমি ঠিকই বুঝি এর দাম।বুঝি ভালোবাসার মানুষটা দূরে ঠেলে রাখলে বুকের ভেতরটাতে কি যন্ত্রণা হয়।চল।মিহিন দেখবি পাগল হবে।
দেখিস কিভাবে হামলা করে তোর এই নিশ্পাপ বুকে।
রূপ মুচকি হাসলো।
সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে প্রায়।আকাশ তার নীল আভা হারিয়েছে।ঈশাণ কোণে এখনো হালকা নীলের ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে।গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ।ভালোই লাগছে মিহিনের।বুকের অসহ্য যন্ত্রণাটা কমেছে একটু।এমনি হয়।রূপকে দেখলে আর ঠিক রাখতে পারেনা নিজেকে মিহিন।
একটু আগেই রূপের নতুন রেকর্ডিং এর গানটা শুনছিলো মিহিন।যেনো ওর জন্যই গাইছিলো।চলে যাবে আজ সে।রূপের শেষ স্মৃতি থেকেও।
মিহিনের মনে পড়ে যায় সেদিনটার কথা।ওর।রূপ আর মিহিনের ভালোবাসার এক বছরপূর্তি যেদিন।রূপের সাথে ভালোবাসার খুনসুটিগুলো।মিহিন বলতো ওর সমুদ্র ভালোলাগে।রূপ বুকে টেনে নিয়ে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বললো,”ছোট্ট একটা টুনাটুনি সংসার হবে ওদের,থাকবে সমুদ্রের পাড়েই।সূর্যদয়ের স্ম্লান আলোতে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেবে মিহিনের সবটা।
রূপ গিফ্ট করেছিলো সেদিন কক্সবাজারের এই ফ্ল্যাটটা মিহিনকে।নিজ হাতে সাজিয়েছিলো দুজনাতে।বেডরুমের বরাবর সমুদ্র সৈকত।
কতো পাগল ছিলো ওর রূপ।বলতো বিয়ের পর নাকি ওকে কোনো কাজই করতে দিবে না।সারারাত ভালোবাসার উষ্ণ পরশে ঘুমোতেই দিবেনা মিহিনকে।সমুদ্রের উত্তাল আর মিহিনের নেশায় আসক্ত হবে ও।জ্বালাবে বড্ড।সব সহ্য করতে হবে মুখ বুজে মিহিনকে।
এ কথা শুনে কি লজ্জাটাই না পেতো মিহিন।একদন্ড মুখটা লুকিয়ে নিতে চাইতো রূপের বুকের মাঝে,যাতে চোখ আড়াল হয় চোখের।
রূপ মুচকি হাসতো ওর লাজ্জাতে।কানের কাছে মুখ নিয়ে আলতো করে বলতো………………..।
.
.
To be continue ?
#অনুভবে_তুমি
পর্ব-৪১
#সাইমা_ইসলাম(প্রীতি)
.
রূপ কানের কাছে মুখ নিয়ে আলতো মাতাল সুরে বলতো,
সকালে ব্রেকফাস্ট তৈরী করে নিয়ে যখন বেডরুম ঢুকবে,,অত্যাচারিত মিহিন তখন বেঘোড় ঘুমে আচ্ছোন্ন।তাও ওকে দেখে দয়ার সঞ্চার হবে না রূপের মনে।ঝাঁপিয়ে পড়বে ওর ঠোঁটের নেশায়।কেড়ে নিবে এই নেশাতুর ঠোঁটের সব মিষ্টতা।মিটমিট চোখে মিহিন তাঁকাবে ওর চোখে।মুখ বুজে সহ্য করবে ওর অত্যাচার।
.
কথাগুলো ভাবতেই অজান্তেই মিহিনের বাম পাশের ঠোঁটে নিচের ভাজটা স্পষ্ট হয়ে ওঠলো আরো।
সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে মিহিন।ঢেউ এর পানির ঝাপটা বারবার ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্চে ওর এক পায়ের পায়লটাকে।সারা শরীরে বয়ে যাচ্ছে একটা অদ্ভুত শিহরণ।মনে হচ্ছে রূপ আসছে ওর কাছে।ভরিয়ে দিতে প্রেমে।ডুব খাওয়াতে রূপের নেশার সাগরে।কিন্তু………..আদো কি তা সম্ভব?
রূপ তো আর হবে মিহিনের।
তাহলে কেনো এই মিথ্যে চাওয়া?
তবে ও জানে রূপ আসবে।
ঠিক আসবে।
এই প্রতিক্ষাতেই তো এতগুলো বছর কুকুরের মতো পরে ছিলো এই ফ্ল্যাটে।ওর রূপ সব ছেড়ে ছুটে আসবে মিহিনের টানে।
.
আজ……?আজ যে সবকিছু ছাড়তে চলেছে।মিহিন জানে ইশাদ ভাইয়ার সাথে শুরু করতে পারবেনা ও কোনো দিনই।নতুন করে শুরু করার কিছু নেইও।
কিন্তু ছাড়তে হবে রূপকে।এই যন্ত্রণা ভুলতেই আজ এসে দাড়িয়েছে এখানে।ব্যাথা গুলো বোধ হয় বড়ই অবাধ্য।কমে না,কমে না!
.
কারো উপস্থি টের পেয়ে পিছু ফিরলো মিহিন।ইশাদ ভাইয়া!
ইশাদ মুচকি হেসে বললো,
–পুরনো কে যেতে না দিলে নতুন আসবে মনের কোন কোণে শুনি?
–রূপ আমার অতীত না।আমার বর্তমান,আমার ভবিষ্যৎ।আমার ভালোবাসা।আমার মনের কোনো কোণেই এক পরমাণু পরিমান নতুনের কোনো ঠাঁই নেই।
ইশাদ দু’মিনিট চুপ থেকে শান্ত চোখে তাকালো মিহিনের দিকে।হালকা পিংক কালার্রের একটা থ্রি পিছ পড়া ও।সাথে অফ হোয়াইট কালার্রের একটা চাদর জড়ানো গায়ে।চুলগুলো অবিচ্ছিন্নভাবে উড়ছে।এই অপূর্ব প্রকৃতিও হিংসে করতে ভুলবে না মিহিনে সৌন্দর্যের।
ইশাদ তো মিহিনকে চাইতো।খুব করে চাই তো।সেই ক্লাস এইটে পড়ে তখন প্রেমে পড়ে মেয়েটার।মিহিন তখন থ্রি কিংবা ফোরে পড়ে।ঘুমন্ত মিহিনের নাকের ঢগার বিন্দু বিন্দু ঘামের কণা দেখেই প্রেমে পড়েছে ও।
তারপর পাগল হওয়া ইশাদের খালামনির বিয়ে দেখে।
মোটামুটি ভালোই গর্জিয়াস করে সেজেছিল মিহিন।তাতে কি?
ওই কাজলহীণা চোখ দুটোই যে সব কেড়ে নিয়েছে ইশাদের।ঘুম কি ইশাদ তো তবে থেকেই চিনেনা।
তবে এভাবে তো মোটেই চায়নি মিহিনকে ও।মিহিনের বুকের হাহাকার যে প্রতি নিয়ত ইশাদকে কুঁরে কুঁরে খায়।
আজ ইশাদের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার পরও যদি রূপ এসে মিহিনকে চাইতো তাতেই সবচেয়ে খুশি হতো ইশাদ।
.
ইশাদের ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে মিহিন বললো,
–কি ভাবছেন?আমি এতো স্বার্থপর কেনো?
–তুমি স্বার্থপর হলে যে সবাই চাইবে এই স্বার্থপরতারই প্রেমে গুম করতে নিজেকে চিরোতরে।
মিহিনের ঠোঁটে তাচ্ছিল্য হাসি,
–মিহিন!!! এই নামটা আপনার জীবনে অব্যাক্ত মরীচিকা।যাকে দেখবেন।কিন্তু না ছোঁয়ার কষ্ট থাকতে দিবেনা আপনায়।
.
–আর কতক্ষণ না খেয়ে থাকবে?সকাল কিছুই তো খাওনি।এভাবে থাকলে তো শরীর খারাপ করবে।খেয়ে নাও।
–আমি খুব খারাপ তাই না চাচিমা……….।তোমরা কতো ভালোবাসো আমাকে।ছোটবেলা থেকেই মায়ের চাহিদা তোমার কোলেই মিটিয়েছি।আর আজ দেখো আমিই রূপকে এতো কষ্ট দিলাম!
–কে বলেছে তুমি খারাপ।হুম এটা ঠিক আমি রাগ ছিলাম একটু,তাও তোমার বাবার আচরণের জন্য।কেউ কাওকে ভালো না বাসলে কি তা জোরে বলে নেয়া যায়রে মা?
তিরা হঠাৎ খিলখিল করে হেসে ওঠলো।হাসতে হাসতে বললো,
–আন্টি এতটুকু আমি বুঝে গেছি মিহিনের মতন করে আমি রূপকে কখনোই ভালোবাসতে পারবো না।একবার শুধু রূপ মিহিনকে নিয়ে ফিরুক আমি নিজেই সাজাবো ওদের বাসর ঘর।
বলেই আবার হেসে দিলো তিরা।সীমান্তি বেশ অবাক হলেন।তিরা আবার বললো,
–আসলে আমি খুব বড় গাধি।আমার অবশ্যই মুভ অন করা উচিত ব্যাপারটা থেকে।এন্ড আই ওয়িল!
সীমান্তি হেসে বুকে জড়িয়ে নিলেন তিরাকে।
–গড ওয়িল ব্লেস ইউ মাই চাইল্ড।
রাত প্রায় তিনটা ছুঁই ছুঁই করছে।রূপদের গাড়ি এসে পৌঁছেছে মিহিনের এপার্টমেন্টের সামনে।উত্তেজনার বশে দৌড়ে ডুকে গেলো রূপ।এপার্টমেন্ট বঙ্গপোসাগরের তীর ঘেঁষে একদম।ভিতরে প্রবেশের পর অস্থিরতা যেনো বেড়ে গেছে আরো।দাড়োয়ানের কাছ থেকে মিহিনের রূম নম্বর কালেক্ট করে সোজা ফ্ল্যাটের সামনে এসে দাড়ালো রূপ।
কিন্তু যেটা দেখলো তার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলো না ও।দড়জায় একটা তালা ঝুলানো।তার মানে মিহিন নেই এই মুহূর্তে এখানে।
নিচে এসে দাড়োয়ানের কাছ থেকে জানতে পারলো আজ সন্ধ্যাতেই চলে গেছে মিহিন।আর হয়ত নাও আসতে পারে।
রিদ্দি খুব ভালো করেই জানে কাজটা ইশার।ওই হয়ত জোর করেছে মিহিনকে।
রাগে ফুস ফুস করতে করতে রিদ্দি বলে ওঠলো,
–তুই একদম চিন্তা করিস না।আমি……….
রিদ্দিকে চুপ করিয়ে রূপ বললো,
–বাকি কাজটা আমার।এখন আমি খুঁজে বের করবো আমার রাতপরীকে।
.
.
To be continue ?