#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ১২
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)
সকাল সাত টা,,,লাজুক তখনো ঘুমে বিভোর, ইদানীং কী যে হয়েছে লাজুকের,অনেক বেলা অবধি ঘুমায়।
লাজুক উঠে দেখে সাত টা বাজে।ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে নাস্তা সেরে রুমে যায় রেডি হতে।
লাজুক ভাবে শাড়ি পরে যাবে না কি সালোয়ার কামিজ! পরে আবার চিন্তা করে শাড়ি পরেই যাই।
মুনতাসির চৌধুরী তো আর সেখানে থাকছেনা।শাড়ি পরে গেলেও দেখবেনা।
লাজুক এসব ভেবেই খয়েরী কালারের একটা কাতান শাড়ি হাতে নেয়।
শাড়ি টা সুন্দর করে পরে আঁচল ছেড়ে দেয়।ম্যাচিং অর্নামেন্টস পরে নেয়,চুল হাত খোপা করে মায়ের সামনে গিয়ে বলে,”দেখোতো কেমন লাগছে আমাকে?”
“আমার মেয়েকে সবসময় সুন্দর লাগে।এখন আসো নাহলে দেরী হয়ে যাবে ।”
লাজুক:- আচ্ছা আম্মু আমি যাচ্ছি আল্লাহ হাফেজ।
লাজুক বেরিয়ে যায় সেই চিরচেনা স্কুলের পথে, স্কুলের গেইটে যেতেই অবাক হয় লাজুক।
গেইটের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে তুলিন।লাজুক কে দেখে তুলিন এগিয়ে আসে।
লাজুক দেখেও না দেখার মতো করে হাঁটতে থাকে।কিন্তু কোনো লাভ হয়না।
তুলিন লাজুকের সামনে এসে পথ আটকায়।
লাজুক কথা বলেনা।চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
তুলিন:- লাজুক আমি জানিনা তোমার কাছে কিভাবে ক্ষমা চাইবো, তুমি চলে যাবার পর থেকে আমি ভালো নেই, তোমাকে কষ্ট আমি যেই কষ্ট দিয়েছি তার চেয়েও অনেক বেশি কষ্ট আমি এখন পাচ্ছি, দয়া করে পারলে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।
লাজুক:- কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ সুখী হতে পারে না, আমার কোনো অন্যায় ছিলোনা তারপর ও তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছ, যাক সেই সব কথা এখন বলে আর কোনো লাভ নেই, দেরিতে হলেও বুঝতে পারছ এটাই অনেক, তুমি তোমার কাজে অনুতপ্ত তাই আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম ।
আমার সাথে আর কখনো যোগাযোগ চেষ্টা করবে না আমার সামনেও আসবে না।
তুলিন আর কিছু বলেনা, লাজুক ও সামনে পা বাড়ায়।
অনেকদিন পর ইফরা,তুলিকা সবার সাথে দেখা হয় লাজুকের।লাজুক ওদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলো।
কোথ থেকে জানি এক জোড়া হাত লাজুক কে টানতে টানতে ওদের থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেলো।
“এই মেয়ে তুমি আজকেও শাড়ি পরে এসেছো?শাড়ি পরো কেন এতো হ্যা?”
কথাগুলো খুব রেগে বলতেছে মুনতাসির লাজুক কে।
লাজুক:- আমার হাত ছাড়ুন, সবাই দেখছে আমাদের।তার আগে বলুন আপনি এখানে কি করছেন?
মুনতাসির:- আমি এই স্কুলের চিপ গেস্ট হয়ে এসেছি।
আপনাকে বলেছিলাম বার বার শাড়ি না পরতে।যেহেতু পরেছেন আজ শাস্তি পাওনা।
বলেছিলাম আমি আপনাকে আমার করেই ছাড়বো,আজ সন্ধ্যায় আপনার আর আমার বিয়ে।
কথা টা মাথায় ঢুকিয়ে নেন।
লাজুক:- এক মিনিট।আমার আর আপনার বিয়ে মানে? আমার তো কাল এনগেজমেন্ট হয়েছে অন্য কারো সাথে।
মুনতাসির:- হায় রে বোকা মেয়ে।বোকা বোকাই থেকে গেলো।
মি.নিজাম চৌধুরী আমার বাবা।
তোমার সিনিয়র শিক্ষক।
সেই কাল তোমার হাতে আংটি পরিয়ে এসেছে।
লাজুক মুনতাসিরের কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো।
কিন্তু কোনো প্রশ্ন করার আগেই দেখলো সেখানে মুনা ও এসেছে।
মুনা এসেই লাজুক কে প্রশ্ন করলো,”কেমন আছো লাজুক?”
লাজুক:- আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি।আপনি?
মুনা:- আমিও ভালো আছি। তো কেমন সারপ্রাইজ দিলাম তোমায় বলো?
লাজুক:- আমি সত্যিই সারপ্রাইজড হয়ে গেছি ।আমি এখনও ভাবতেই পারছিনা কী হচ্ছে আমার সাথে, আমার যার সাথে এনগেজমেন্ট হয়েছে সে নাকি মুনতাসির চৌধুরী।
মুনা:- কেন হতে পারে না ? এনি হাউ তুমি কী কোনো কারণে বিয়েটা করতে চাচ্ছোনা?
যায় বলো লাজুক,আমি কিন্তু তোমার চোখে নীলের জন্য ভালোবাসা দেখেছি।
অন্য মেয়ের প্রতি জেলাস দেখেছি।
লাজুক:- আপনি না স্যারের গার্লফ্রেন্ড?
লাজুক এ কথা বলাতে মুনা ও নীলাভ দুজনে একসাথেই হেসে ওঠে।
মুনা বলে,” হ্যা গার্লফ্রেন্ড তো।আমি নীলাভের ছোট্ট বেলার বেস্টফ্রেন্ড। আমাদের আরেকটা সম্পর্ক আছে।আমি নীলাভের থেকে ছয় মাসের বড়।আর আমি ওর চাচাতো বোন।
লাজুক মুনার কথা শুনে মুনতাসিরের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
আর বলে, “তাহলে এতোকিছু সব নাটক ছিলো?”
মুনা বলে,”হ্যা নাটক ছিলো।কারন নীল বুঝতে পারছিলোনা তোমার মনে ঠিক কী চলতেছে ।তাই সে আমার সাথে সব শেয়ার করে, আর আমরা এই প্ল্যান করে শিওর হলাম, তুমি নীলকে ভালোবাস।সরি লাজুক তোমার সাথে এতো নাটক আর তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য ।”
“তবে কি জানো,নীল তোমাকে অনেক ভালোবাসে।ওর সামনেই আমি তোমাকে বলছি।অনেক আগে থেকে ও তোমাকে ভালোবাসে।”
লাজুক মুনার কথা শুনে মনে মনে খুশি হলেও মুখে প্রকাশ করেনা।
মুনতাসিরের দিকে রাগী রাগী মুখ করে তাকিয়ে ওখান থেকে চলে যায়।
অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায় ততোক্ষনে।
অনুষ্ঠানের সকলের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু হলো লাজুক।এটাই সেই মেয়ে যার জন্য গ্রামে কত কাহিনী চললো।এটাই সেই মেয়ে যে আট বছর আগে তার ঘর ছেড়েছিলো।হ্যাঁ এটাই সেই মেয়ে যে এখন প্রতিষ্ঠিত।একজন সফল নারী চরিত্র।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাদের অনুষ্ঠান শুরু হয়।একে একে বর্তমান অনেক শিক্ষার্থীরা নাচ অথবা গান করছে।মুনতাসির প্রধান অতিথি হওয়াতে তার অবস্থান স্টেজে।আর লাজুক একদম প্রথম সারীতে বসে আছে।লাজুক দেখলো মুনতাসির তাদের শিক্ষককে কিছু একটা বললো।উনি উঠে মাইক্রোফোনের সামনে এসে বলেন,
“আজ থেকে গত আট বছর আগে এক সুমিষ্ট কণ্ঠের মেয়েকে চিনতাম আমি।আজ তার কাছে আমার অনুরোধ লাজুক রহমান তুমি স্টেজে আসো।”
লাজুক কিছু বুঝে ওঠার আগে ইফরা আর তুলিকা তাকে এক প্রকার জোর করে পাঠিয়ে দেয়।ভদ্রতার খাতিরে একটা মিষ্টি হাসি মুখে ঝুলিয়ে লাজুক স্টেজে যায় গান গাওয়ার জন্য।
“মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?
কেন মেঘ আসে হৃদয়ে-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয়না।
কী করিলে বলো পাইব তোমারে রাখিব আঁখিতে আঁখিতে
ওহে এতো প্রেম আমি কোথা পাব, নাথ,তোমারে হৃদয়ে রাখিতে।”
.
.
গানটা শেষ করে লাজুক মুনতাসিরের দিকে তাকাতেই মুনতাসির তাকে একটা চোখ টিপ দিলো।লাজুক কপট রাগ দেখিয়ে চলে আসে।
প্রায় বিকালে অনুষ্ঠান শেষ হয়।গোধূলি সময়, কোকিলের সমারোহ, ডালে ডালে অজস্র কৃষ্ণচূড়া।লাজুক স্কুলের পিছনের মাঠটাতে এসে হাঁটাহাঁটি করছিলো।হুট করে একটা হাত তাকে টেনে নিয়ে কৃষ্ণচূড়া গাছের সাথে বাহুবন্ধী করে ফেলে।প্রথমে ভয় পেলেও এখন লাজুকের লজ্জা লাগছে।প্রচন্ড আকারে লজ্জা।কারন এ যে তার অতি আপন একজনের ছোঁয়া।ভালোলাগাকে বাক্সবন্দী করে লাজুক ধাক্কা দেয় মুনতাসিরকে।
“আরে আরে কি করছো মায়াকন্যা?ব্যাথা পাবো তো।তাহলে পরশু আর বিয়ে করা লাগবে না।”
বাকি কথা লাজুকের কানে যায়না।সে অবাক হয়।কেননা মুনতাসির তাকে মায়াকন্যা বলে ডাকলো?মায়াকন্যা তো শুভাকাঙ্খী বলে।সন্দেহ নিয়ে লাজুক মুনতাসিরের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছোড়ে,
“আপনি আমাকে কি বলে ডাকলেন?”
“কেন?মায়াকন্যা বলে ডেকেছি।”
“এই নামটা আপনি কোথায় পেলেন?”
“আজব তো! আমিই তোমাকে এই নামে ডাকি।আর কে ডাকে?”
.
.
মুনতাসিরের ঠোঁটে মারাত্মক রহস্যজনক হাসি।লাজুক হিসেব মেলাতে পারছে না।মুনতাসির আর নীলাভ একই মানুষ।শুভাকাঙ্খী আলাদা।সে আমাকে মায়াকন্যা ডাকে, এদিকে স্যারও আমাকে মায়াকন্যা বললো।
তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে লাজুকের।আর মুনতাসির লাজুকের এই অবস্থা দেখে মজা নিচ্ছে।এক পর্যায়ে লাজুক হাত দিয়ে মাথা চেপে নিচে বসে পড়ে।মুনতাসির ভয়ে ভয়ে লাজুকের কাছে প্রশ্ন করে,
“মায়াকন্যা সমস্যা হচ্ছে তোমার?”
লাজুকের কোনো ভাবান্তর নেই।সে ফোন হাতে নিয়ে ডায়াল করে শুভাকাঙ্খীর নাম্বারে।আর লাজুককে অবাক করে মুনতাসিরের ফোন বেজে ওঠে।
চোখে মুখে রাগ উপচে পড়ছে লাজুকের।ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে এখানে জ্যান্ত পুতে ফেলতে।রাগটাকে নিয়ন্ত্রনে রেখে লাজুক শান্ত স্বরে প্রশ্ন করে,
“আর কয়টা রূপ আছে আপনার?”
“আর নেই।”
লাজুক মুনতাসিরকে ইচ্ছেমতো বকা দিয়ে চলে আসে।এইভাবে ঠকালো সবাই ওকে?
চলবে