#অনুভবে_তুমি
#শেষ_পর্ব
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)
.
.
কোনো চান্স নিতে চায় না মুনতাসির।এই মেয়ের বিশ্বাস নেই, কখন কী করে বসে, তাই পরশু বিয়ে করার বদলে আজ সন্ধ্যাই ওদের বিয়ে হবে।বাকি অনুষ্ঠান খুলনাতে হবে।
বিকেলে লাজুক বাড়িতে এসে দেখে ঘর সাজানো, মেহমান এসেছে।সে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না ।এর মধ্যে মা এসে একটা মেরুন রং এর জামদানী শাড়ি আনে দিয়ে বলতেছে এটা পরো আজকেই তোর বিয়ে হবে, মি.নিজাম বলতেছে তার ছেলে নাকি আজকে বিয়ে করে তোকে নিয়ে যাবে , লাজুক এটা শুনে রাগে, দুঃখে লাজুকের কান্না করতে ইচ্ছে করছে ।
বাড়িতে মেহমান থাকায় লাজুক ঝামেলা করেনি আর।সন্ধ্যায় শরীয়ত মোতাবেক তার আর মুনতাসির চৌধুরী নীলাভের বিয়েটা হয়ে যায়।আজ থেকে সে মিসেস মুনতাসির চৌধুরী।অদ্ভুদ একটা ভালোলাগা খেলে যাচ্ছে লাজুকের মনে।আবার রাগও হচ্ছে।
রাত সাড়ে এগারোট লাজুক সেই কখন থেকে বিছানায় বসে আছে, মুনতাসির আড্ডা শেষ করে লাজুকের ঘরের দিকে যায় মুনতাসির ঘরে ঢুকতেই লাজুক তাকে ইচ্ছেমতো বকা দেয়।
“এই ঘরে কি আপনার?বের হয়ে যান এখনি।”
“অদ্ভুত! এটা আমার বউ এর ঘর।তোমার কথাতে বের কেন হবো?”
“আমি এই বিয়ে মানি না।”
“তোমাকে কে মানতে বলছে?আমার বউ মানলেই হবে।”
“আজব তো।বিয়ে তো আপনি আমাকে করছেন।আমিই আপনার বউ।আর কয়টা বউ লাগবে আপনার?”
“তুমিই তো বললে এই বিয়ে মানো না।এখন আবার বউএর অধিকার দেখাও কেন?”
একপ্রকার নীলাভকে মেরে ঘর থেকে বের করে দেয় লাজুক।
.
লাজুক গভীর ঘুমে আছন্ন।হঠাৎ করেই তার মনে হলো কেউ যেন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে।ভয় পেয়ে যায় লাজুক।হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে ফোনটা খুজে বের করে ফোনের ফ্লাস অন করে, চমকে ওঠে লাজুক।নীলাভ তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।ঘুমের মধ্যে তাকে একটা বাচ্চার থেকে মত মনে হচ্ছে, লাজুক ভাবনা বাধ দিয়ে ডাকতে থাকে নীলাভকে,
“স্যার এই ঘর থেকে বের হোন।ভালো করে বলছি, এরপর কিন্তু উত্তম মধ্যম প্রহার করবো।”
” মায়াকন্যা কী হয়েছে একটু ঘুমাতে দাও, সারাদিনে অনেক জ্বালিয়েছ তুমি, আজকে আমাদের বাসর রাতে তাও তুমি একটু আদর করলা না, এখন আমাকে ঘুমাইতে দিচ্ছ না ।”
ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললো নীলাভ।লাজুকের বুকটা ধক করে ওঠে ওর এমন কণ্ঠ শুনে।নিজেকে সামলিয়ে নীলাভকে খাট থেকে ফেলে দেয় লাজুক।নীলাভ এবার কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
“উফ মায়াকন্যা!এতো জ্বালাও কেন বলোতো?”
“বের হোন এখান থেকে।”
“আচ্ছা, বের হয়ে যাচ্ছি।”
নীলাভ ঘরের মধ্যে পায়চারী করছে।লাজুক নীলাভের মতিগতি ঠিক বুঝতে পারছে না।হুট করে নীলাভ লাজুককে পাজাকোল করে ছাদে নিয়ে যায়।লাজুক হতভম্ব হয়ে যায়।লাজুক কিছু বলার আগেই নীলাভ বলে,
“তোমার অনেক অভিমান আমার উপর, এটা আমি জানি।আমাকে প্লিজ মাফ করে দাও।তোমাকে শুভাকাঙ্খী হয়ে সবসময় আগলে রেখেছি।তোমার বস হয়ে শাসন করেছি।আমার অনুভবে সবসময় তুমি ছিলে।আমিও চাইতাম যেদিন তুমি নিজ মুখে বলবে নীলাভ আমার #অনুভবে_তুমি ছাড়া আর কেউ নেই ।সেদিন তোমার সামনে আসবো।” নীলাভ চলে
যেতে নিলে লাজুক তার হাত ধরে বলে উঠলো “আমার অনুভবে আপনি ছিলেন,আছেন এবং আজীবন থাকবেন।”
কথা গুলো বলে লাজুক নীলাভকে জড়িয়ে দরে তার বুকে মুখ লুকায়।লাজুক মনে মনে ভাবে, জীবন কতো সুখের?
ছাদে পাতানো দোলনাতে বসে নীলাভ আর লাজুক চন্দ্রবিলাস করছে।চাঁদটা আছ পরিপূর্ণভাবে উঠেছে।নিশাচরেরা ডাকছে।এর মাঝে সদ্য বিয়ে করা দুজন কপোত-কপোতী তাদের ভালোবাসা বিনিময় করছে।আলতো কণ্ঠে লাজুকের কানের কাছে মুখ এনে নীলাভ বলে,
.
.
আমি রবির প্রথম কিরণে তোমাকে চাই, কাকডাকা ভোরে দুর্বাঘাসের শিশিরবিন্দুতে শুধুই তোমাকে পাই;
তুমি মেঘে ঢাকা আকাশে এক চিলতে আলো, তুমি মোর অমনিশায় সহস্র প্রদীপ হয়ে জ্বলো।
শত ব্যর্থতায় যবে, ডুবি আমি আধারে, দেখা দাও তুমি চন্দ্র হয়ে ভেসে অকুল পাথারে।তুমি মানে শত সহস্র আশা, তুমি মানে শত ঘৃণার বিপরীতে এক পৃথিবী ভালোবাসা।
গোলাপের সৌন্দর্য হয়ে যায় ম্রিয়মান যখন দেখি তোমায়, স্বপ্ন ভেলায় ভাসমান; তুমি মানে আশা, তুমি মানে ভালোবাসা, তুমি মানে পূর্ণিমার আলো, তুমি মানে হৃদবনে জ্যোৎস্না এলোমেলো।
কখনো বলিনি তাই আজ বলছি,
“অনেক বেশি বাসি ভালো।”
(সমাপ্ত)