#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০৫
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)
এই ৮ বছরে লাজুক গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে ফেলেছে।
আর পিছু ফিরে তাকাইনি।
আর সেই চিঠিওয়ালা মানুষ টার প্রতি লাজুকের একটু দূর্বলতা শুরু হয়েছে।
চিঠিপত্র রেখে লাজুক উঠে পড়ে।খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমাতে আসে।তখন ই ফোনে ম্যাসেজ আসে একটা।
লাজুকের চাকরী টা হয়ে গেছে।একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানী তে লাজুকের চাকরী হয়েছে।
এল এন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এ লাজুকের জয়েনিং কাল।
লাজুক ভীষণ খুশি হয়ে যায়।ফোনটা হাতে নিয়ে ৮ বছর পর সেই পুরোনো নাম্বারে ডায়াল করে।
রিং হতে না হতেই ফোন টা রিসিভ হয়।মনে হয় অপর পাশের ব্যক্তিটি চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষা করে ছিলো এই ফোন কলের।
বেশ কিছুক্ষণ দু’পাশেই নিরবতা।
নিরবতা কাটিয়ে লাজুক ই প্রথম কথা বলে।
লাজুকঃআসসালামু আলাইকুম!
ওপাশেঃনিরবতা,কোনো উত্তর নেই শুধু ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
লাজুকঃ আম্মু! মা! ও মা! আম্মু গো! (লাজুক কাঁদতে কাঁদতে বলে) একটাবার কথা বলো মা আমার সাথে।
আর কতো শাস্তি দিবে মা তীমার মেয়েকে? আমি যে এতিম মা।তুমিও মুখ ফিরিয়ে আছো আমার থেকে।
আমি যে অনাথ হয়ে গেলাম।মা ও মা! আমার সোনা মা! একটু কথা বলো. মা!
ওপাশেঃ কাঁদতে কাঁদতে বললো, এক থাপ্পড়ে তোমার গাল লাল করে দেবো।অনেক বড় হয়ে গেছো তুমি তাইনা? আমি না হয় অভিমান করে ছিলাম।তাই কথা বলিনি এতোগুলো দিন।হ্যা রে লাজ তুই কেমনে পারলি? এতোদিনে একবার কল দিয়ে দেখতি আমাকে,আমি অভিমান করে থাকতে পারতাম?
লাজুকঃ নাও হয়েছে হয়েছে,আর কাঁদতে হবেনা।ঈশ,বাচ্চাদের মতো করে কাঁদছে। ভালোবাসি মা,খুব ভালোবাসি তোমাকে।আমাকে ক্ষমা করে দাও আম্মু।
ওপাশেঃ হু ঠিক আছে,বাড়িতে চলে আয় এবার।আমার একা ভালো লাগেনা যে আর।
লাজুকঃ না আম্মু।এখনি আসতে পারবোনা চাইলেও।আমার নতুন জব হয়েছে।কাল থেকে জয়েনিং।
খুব ভালো কোম্পানী।স্যালারি ও অনেক।তাই ছুটি পেলেই আসবো আম্মু।
ওপাশেঃ আচ্ছা যা ভালো বুঝিস কর।
লাজুক তার মা এর সাথে কথা বলার মাঝেই ডোর বেলটা বেজে ওঠে।
লাজুক ভাবে এতো রাতে আবার কে এলো?
লাজুক ফোনের লাইন কেটে যায় দরজা খুলতে।দরজা খুলে দেখে কেউ নেই।কিন্তু দরজার ওপাশে ফুলের তোড়া আর একটা চিরকুট রয়েছে।
লাজুক কিছু না ভেবে ওগুলো রুমে নিয়ে চলে আসে।
চিরকুট খুলে দেখে তাতে লেখা অভিনন্দন মায়াকন্যা।
লাজুকের বুঝতে অসুবিধা হয়না চিরকুট টা কে পাঠিয়েছে।
লাজুক মুচকি হেসে চিরকুট রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরেরদিন সকাল বেলা একটা কালো পাড়ের জামদানী শাড়ি পরে অফিসে যায় লাজুক।চুলগুলো হাত খোপা করা,চোখে হালকা কাজল।খুব সুন্দর দেখাচ্ছিলো লাজুক কে।
অফিসের এক জোড়া চোখ দেখতে থাকে লাজুক কে।
লাজুকের কেমন জানি ফিল হত।মনে হয় ওর আপন কেউ আছে এখানে।কিন্তু লাজুক এসবে পাত্তা দেইনা।ভাবে মনের ভুল।
অফিসের প্রথম দিনেই নতুন এমডি আসে।
আর তাকে ফুল দিয়ে বরণ করার দায় ভার পড়ে লাজুকের উপর।
লাজুক ফুল দয়ে শুভেচ্ছা জানানোর সময় থমকে যায় এমডি সাহেব কে দেখে।
কারন এমডি সাহেবের চোখ দুটো নীলচে।একদম লাজুকের স্বপ্নের নায়কের মতো।যার প্রতি লাজুক দূর্বল।
কিন্তু যাকে দেখে লাজুক থমকে যায় তার নাম মুনতাসির চৌধুরী।
লাজুক নিজেকে সামলে নেই।বস কে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানাই।
ঐ দিন টা ভালোই কাটে অফিসে।লাজুক বাসায় ফিরে শাওয়ার নিতে যায়।
শাওয়ার নিয়ে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ১৫ টা ম্যাসেজ।৫ টা কল।
লাজুক ম্যাসেজ চেক না করে আগে কল ব্যাক করে।কারন কল টা লাজুক এর মা এর ছিলো।
আমিঃআম্মু বলো,আমি শাওয়ারে ছিলাম।
আম্মুঃ অফিস কেমন কাটলো? খেয়েছিস কিছু? কেমন আছিস? অফিসের বস ভালো নাকি অনেক রাগী?
আমিঃবাপ্রে বাপ!এতো প্রশ্ন? একটাই উত্তর সব ভালো।খাইনি,এখন খাবো।তুমি খেয়ে নিও মা।এখন রাখছি আমি ক্লান্ত খুব।
আম্মুঃ ঠিক আছে সোনা মা।
লাজুক পরের দিন ঠিক সময়ে অফিসে চলে যায়।অফিস থেকে ফেরার পথে লাজুকের তুলিকার সাথে দেখা হয়ে যায়।
তুলিকা লাজুক কে দেখেই কেঁদে ফেলে।লাজুক আহম্মক হয়ে যায়।ভাবছে তুলিকা কেন কাঁদছে?
লাজুক আর তুলিকা এখন মুখোমুখী একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে।
নিরবতা ভেঙে লাজুক কে প্রশ্ন করে তুলিকা।কেমন আছিস লাজুক?
লাজুক হেসে বলে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আমি।তুই কেমন আছিস?
তুলিকাঃআমরা ভালো নেই রে লাজুক।
লাজুক অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, আমরা বলতে? ঠিক বুঝলাম না।
তুলিকাঃতুলিন ভাই ভালো নাই।তবে আমরা কিভাবে ভালো থাকি বল?
জানিস লাজুক তোর সাথে ব্রেকাপের পর প্রথম ক’দিন ভাইয়া খুব ভালো ছিলো।
সুন্দরী এক মেয়ের প্রেমে পড়ে।কিন্তু মেয়ে টা নেশা করতো।তাই ভাইয়া ও নেশা করা শুরু করে।
ইন্টারমিডিয়েট এ ফেইল করে এক সাব্জেক্টে।পড়াশোনা টা ওখানেই ছেড়ে দেয়।
রেস্টুরেন্টে চাকরী নেই,ওই মেয়েকে বিয়ে ও করে।কিন্তু ভাবী ভাইকে ঠকিয়ে অন্য ছেলের হাত ধরে পালিয়ে যায়।
ভাই তখন থেকে তোকে খুঁজে বেড়ায়।ভাই মনে করে তোর সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি পাচ্ছে ভাই।
ওই বউ চলে যাওয়ার পর ভাই আবার বিয়ে করে।এই বউ টা ও চলে যায় ভাইয়ের অত্যাচারের কারনে।
এখন ভাই ভবোঘুরে হয়ে ঘুরে বেড়ায়,আর তোকে খুঁজে।তোর কাছে ক্ষমা চাইবে বলে।
তুই কি একটু দেখা করবি লাজুক?
লাজুক তখন বলে…..
চলবে,