#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০৪
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)
সিনিয়র শিক্ষক লাজুক কে তার চেম্বারে ডাকেন।
এতোটুকুই তো ছিলো নাকি?
চলুন জানা যাক সেদিন স্যার কি বলেছিলেন লাজুক কে।
তিনি লাজুক কে তার চেম্বারে ডাকেন।সামনে বসিয়ে লাজুক কে প্রশ্ন করেন,”তোমার কি সমস্যা? এমন মন খারাপ করে থাকো কেন? আমাকে সব খুলে বলো।”
লাজুক এক মিনিট মতো চুপ করে থাকে।
স্যার আবারো প্রশ্ন করে,বলবা আমাকে?
যদি তুমি বলতে চাও তাহলে বলতে পারো।
লাজুক তখন কাঁদতে থাকে।স্যার ও কিছু টা সময় দেই লাজুক কে।
লাজুক তখনো ভুলতে পারেনি তুলিন কে।স্যার কে ভরসা করে লাজুক সব ঘটনা খুলে বলে।
প্রথম থেকে একদম শেষ পর্যন্ত, যা যা লাজুকের জীবনে ঘটেছে।
স্যার তখন লাজুক কে বোঝায়।অনেক যুক্তি দেখায়।
লাজুক কে বলে তুলিন কে ভুলে যেতে।তাহল লাজুকের মা আবার আগের মতো ভালোবাসবে লাজুক কে।
লাজুক কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারেনা।স্যার এর থেকে সময় চেয়ে নেই।বেরিয়ে আসে স্যারের চেম্বার থেকে।
সেরাতে লাজুকের ঘুম হয়না।স্যারের কথা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাই।
লাজুক তখন আপন মনেই বলে ওঠে,
আমার হাতে এখন দুটো রাস্তা।একটা রাস্তা আমাকে আমার স্বপ্ন পূরনের জন্য হাতছানি দিচ্ছে।
আর অপর রাস্তা আমাকে বলছে আমার স্বপ্নগুলোকে স্থগিত রেখে ভালোবাসা কে বছে নিতে।
কোনটা বেছে নেবো আমি? এই শহরে কী আদৌও ভালোবাসা নামক বস্তু আছে? নাকি সবকিছুই মরিচীকা?
এসব ভাবতে ভাবতে লাজুকের ফোনের টোন বেজে উঠে।
লাজুকঃআসসালামু আলাইকুম!কে বলছেন?
অপরপাশেঃওলাইকুম আসসালাম।আমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী লাজুক।তুমি কল কাটবেনা।জাস্ট একটা মিনিট কথা বলবো আমি তোমার সাথে।এই এক মিনিট তুমি চুপ করে আমার কথা শুনবে শুধু।
লাজুকঃঠিক আছে আমি কল কাটছিনা।বলেন আপনি কি বলতে চান।
অপরপাশেঃ লাজুক তুমি আমাকে চিনবেনা হয়তো বা।কিন্তু আমি তোমাকে চিনি।খুব কাছ থেকে তোমাকে আমি চিনি।এতো ভেবে লাভ নেই লাজুক।তোমার মন যেটা বলে তুমি তাই করো।আমি জানি তুমি চিন্তিত।
এটা বলেই অপরপাশের লোক টা ফোন কেটে দেই।
আর অন্যদিকে লাজুক হ্যালো হ্যালো করতে থাকে কিন্তু কোনো রেসপন্স পাইনা।কল ব্যাক করলে দেখে নাম্বার অফ।
তখন ই লাজুক তুলিন কে কল করে।আর বলে যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। তুমি আর যোগাযোগ করোনা আমার সাথে।ভালো থেকো।
সেদিন ই আমি ভালোবাসা ছেড়ে আমার ক্যারিয়ার কে বেছে নিয়েছিলাম।
তারপর থেকে অনেক গুলো বছর আর ডায়েরী লিখিনি। কেটে গেছে আটটা বছর।
এতোগুলো বছরে মা ও মুখ ফিরিয়ে আছে আমার থেকে। তাই বাড়ি যাওয়া হয়না।
ও হ্যা,এই ক’বছরে ঘটেছিলো অদ্ভুত এক কাণ্ড।
সেদিনের পর থেকে,মানে যেদিন আমি তুলিনের সাথে সবরকম সম্পর্ক শেষ করি।তারপর থেকে প্রতি মাসে আমার নামে একটা করে চিঠি আসতো।
চিঠিতে একটাই নাম থাকতো শুভাকাঙ্ক্ষী।
কিন্তু কে এই শুভাকাঙ্ক্ষী মানুষ টা? লাজুকের মন খারাপের দিনে এই লোক টা লাজুক কে ফোন করতো।পরিচয় জানতে চাইলে বলতো শুভাকাঙ্ক্ষী। তাকে লাজুক দেখেনি কখনো।কে এই মানুষ টা?
লাজুক এসব ভাবতে ভাবতেই একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ফেলে ডায়েরী বন্ধ করে দেয়।
খুঁজতে থাকে ওই চিঠিগুলো।
প্রথম চিঠি থেকেই লাজুক পড়তে থাকে।
মায়াবিনী,
প্রিয়তম মায়াবী চোখের মেয়ে,কেমন আছো তুমি? যদিও আমি জানি তুমি ভালো নেই।তুমি অনেক ডিপ্রেশনে আছো।কিন্তু তুমি চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে।আল্লাহ তোমার সকল ডিপ্রেশন দূর করে দিবেন।আমিন।
ভাবছো তো আমি কে? আমি তোমার ছায়া।জানো মায়াকণ্যা,যখন তুমি বাচ্চা মেয়ে ছিলে আমি তখন প্রথম তোমার প্রেমে পড়ি।
তোমার ঐ মায়াবী চোখ,কোঁকড়ানো চুল,তোমার গানের সুর,তোমার বাঁকা দাঁতের হাসি সব মিলিয়ে আমার মন কেড়ে নাও তুমি।
আর যেটা ভাল্লাগে তা হলো তোমার লজ্জা পাওয়া।
কিন্তু আমি খুব দেরী করে ফেলি, তোমাকে আমার মনের কথা জানাতে।আমি তোমাকে ভালোবাসতাম। আজ ও ভালোবাসি।ভীষণ রকম।খুব করে চাই আমি তোমাকে।
সেদিন ই আমি তোমার সামনে আসবো যেদিন তোমার মনে আমার জন্য অনূভুতির সৃষ্টি হবে।যেদিন তুমি বলবে #অনুভবে_তুমি আছো।সেদিন ই আমাকে দেখতে পাবে।
সবসময় আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।আর ভুলেও ভুল কোনো পদক্ষেপ নেবেনা।
আমি সবসময় তোমার আশেপাশে থাকি।যত্ন নিও নিজের।
ইতি
তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী
লাজুকের অদ্ভূত লাগে চিঠিটা পড়ে। ভাবিতে থাকে কে এই লোকটা।
মাথা না ঘামিয়ে লাজুক পড়াশোনায় মন দেই।এরপর থেকে প্রতিমাসে লাজুকের নামে চিঠি আসতো।আর লাজুক চিঠিগুলো পড়তো।সব চিঠিই অনুপ্রেরণামূলক।
অপরদিকে লাজুক ওই নীলচে চোখের ছেলেটা কে মিস করতে থাকে।কারন লাজুকের দূর্বলতা,প্রথম ভালোলাগা ছিলো সেই নীলচে চোখ দুটো।
লাজুক তার মুখ দেখেনি।শুধু চোখ দুটোই দেখেছিলো।
নিজের মনের ভালোলাগার কথা প্রকাশ করার আগেই তো তুলিনের সাথে এতোসব ঘটে গেলো।
আচ্ছা,লাজুক কি আর কখনো নীলচে চোখের ছেলেটির দেখা পাবেনা???
নীলাভ কোথায় হারিয়ে গেলো? সে কি আর ফিরবেনা??
আর কে ই বা এই শুভাকাঙ্ক্ষী? তাহলে কি লাজুকের গল্প টা নতুন মোড় নিচ্ছে? লাজুক কি হারিয়ে ফেলবে তার প্রথম ভালো লাগাকে?
কতো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে লাজুকের।এরপর কি হতে চলেছে??
,
,
চলবে