#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০৩
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)
তুলিনের এসব পাগলামী,ইমোশোনালী ব্ল্যাকমেইল দেখে লাজুক ও তার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে।
সেদিন প্রথম লাজুক তুলিন কে নিজমুখে ভালবাসার কথা বলেছিলো ভয়ে।কারন সেদিন তুলিন স্কুলের ছাঁদ থেকে লাফ দিতে গেছিলো।
লজ্জাবতী লাজুক তার লজ্জা ভুলে জাপ্টে ধরে তুলিন কে।তখন টিফিন টাইম হওয়ায় কোনো শিক্ষকের চোখে পড়েনি ওরা।
তবে দেখেছিলো অনেক শিক্ষার্থীরা।আর দেখেছিলো সেই নীলচে চোখের ছেলেটা।
,
,
কে এই নীলচে চোখের ছেলে??কি নাম তার?
আসুন জেনে নেই কে এই ছেলে!
নীলচে চোখের ছেলে,যার নাম নীলাভ চৌধুরী।নীলাভ এইচএসসি ক্যান্ডিডেট সে বার।যখন লাজুক সবে ক্লাস এইট এর ছাত্রী।
তো সেদিন যখন লাজুক তুলিন কে জড়িয়ে ধরে তখন এই দৃশ্য নীলাভ দূরে দাঁড়িয়ে দেখে ফেলে।কারন নীলাভ তার পরীক্ষা শেষ করে লাজুক কে প্রোপোজ করার জন্য লাজুকের স্কুলে আসে।
আর এসেই এটা দেখে ফেলে।সেদিনের পর থেকে নীলাভ কে আর কোথাও কেউ দেখতে পাইনি।
আর লাজুক তো চিনতোই না নীলাভ কে।শুধু নীলাভের চোখ দুটো চিনতো।
,
ওই ঘটনার পর থেকে শুরু হয় লাজুক আর তুলিনের প্রেম।কিশোর বয়সের প্রেম।যে প্রেমে আছে শুধু পাগলামী,মাতাল করা পাগলামী।
উত্তাল প্রেম যাকে বলে।
দুজন দুজন কে প্রচন্ড রকম ভালবাসতো।ওদের ভালোবাসায় ছিলোনা কোনো অপবিত্রতা।ছিলোনা কোনো অশালীন চাওয়া।
যেহেতু দুজনেই ক্লাসমেইট ছিলো,আর পড়তো ক্লাস এইটে তাই দুজনার ই সমাপনী পরীক্ষা ছিলো।
পরীক্ষা ও হলো আর দুজনে ভালো রেজাল্ট ও করলো।
নবম শ্রেণিতে উঠে দুজনেই সাইন্স নিলো।ভালোই চলছিলো ওদের দিনগুলো।
উত্তাল প্রেম,পাগলামী,ভালোবাসা খুনশুটি,সব মিলিয়ে ওরা ছিলো বেস্ট কাপল।
কিন্তু ওই যে কথায় আছেনা, বেশি ভালোবাসা বেশি দিন যায়না।কারো না কারো নজর লাগে।
তেমনি লাজুকের ভালোবাসায় ও নজর পড়ে লাজুকের বেস্ট ফ্রেন্ড ইফরার।
তুলিন ও হঠাৎ করে বদলাতে শুরু করে।আগের মতো লাজুকের কেয়ার করেনা।শাসন করেনা।ভালোওবাসেনা।
লাজুক খেয়াল করে এটা যে তুলিন আর আগের মতো নেই।
লাজুক সহ্য করতে না পেরে তুলিন কে প্রশ্ন করে কেন এমন ইগ্নোর করছে সে?
জবাবে তুলিন বলে,”দেখো লাজুক তোমার প্রতি আমার যে ফিলিংস টা ছিলো সেটা এখন আর নেই।
তোমাকে আমার আর ভালো লাগেনা।
আমি তোমার সুন্দরী বান্ধবী ইফরাকে ভালোবাসি।আর ইফরা ও আমাকে ভালোবাসে।তোমার থেকেও বেশি”।
এগুলো শোনার পর লাজুক কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে আসে।
এক প্রকার গুটিয়ে নেই নিজেকে।
অভিমানী মন নিয়ে বসে থাকে।কারো সাথে আর কথা বলেনা।হাসেনা।ইফরা আর তুলিকার সাথে এক বেঞ্চে বসেওনা।
এভাবেই দশম শ্রেণীতে উঠে যায় ওরা।
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ লাজুকের ফোনের টোন বেজে উঠে।
লাজুক ডায়েরী রেখে ফোন হাতে নিতেই দেখে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেছে অনেকক্ষন আগেই। কিন্তু লাজুক বুঝতে পারেনি।
স্মৃতির পাতা গুলো বুঝি এমন ই।বর্তমান ভুলিয়ে দেই।
তাড়াতাড়ি করে লাজুক উঠে পড়ে ডায়েরী রেখে।নাস্তা বানিয়ে বেরিয়ে পড়ে চাকরীর ইন্টারভিউ দিতে।
লাজুক এর প্রিপারেশন ভালো ছিলো।তাই ইন্টারভিউ ও খুব ভালো দেয়।তাই কোনো টেনশন থাকেনা আর।
লাজুক অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে এসে আবার ডায়েরী নিয়ে বসে।কারন লাজুক আবারো একবার অতীতে ফিরতে চাই।
অতীত লাজুক কে শক্তি দেয়।অনুপ্রেরণা যোগায়।তাই লাজুক অতীতে ফিরতে চাই।
ডায়েরী খুলে লাজুক আবারো পড়তে শুরু করে।পড়তে পড়তে ভাবনার জগতে ডুবে যায় আবার।
এইতো যেনো সেদিনের কথা,সব চোখের সামনে ভাসছে।
দশম শ্রেণী তে ওঠার পর তুলিন আবার লাজুকের কাছে ফিরতে চাই।
আবারো পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাই।
লাজুক সহজ সরল মেয়ে।আবার তুলিনের প্রতি তার দূর্বলতা ও কম না।তাই ক্ষমা করে দেই লাজুক তুলিন কে।
আবারো চলতে থাকে ওদের প্রেম।চুটিয়ে প্রেম করতে থাকে ওরা।
একদিন স্কুল ছুটি শেষে তুলিন আর লাজুক ক্লাস থেকে একসাথে বের হয়।সিঁড়ি ঘরে পা রাখতেই হঠাৎ করে তুলিন লাজুক কে জড়িয়ে ধরে।লাজুকের হার্টবিট বেড়ে যায়।
লাজুক ও দুহাতে জড়িয়ে নেই তুলিন কে।
আর এটা দেখে ফেলে ওদের ই এক শিক্ষক।তখনি দুজন কে বেত দিয়ে খুব মারে।আর গার্ডিয়ান কল করে।
তখন লাজুকের টেস্ট পরীক্ষা মাত্র তিনদিন পর।তার মধ্যেই এমন একটা কাণ্ড বাঁধিয়ে বসে ওরা স্কুলে।
বিচার বসায় ওদের নিয়ে স্কুল কমিটি।সব শিক্ষক-শিক্ষিকা যা নয় তাই বলে অপমান করে লাজুকের বাবা-মা কে।কিন্তু তুলিন কে কিছুই বলেনা।তুলিনের বাবা-মা কে ও কিছু বলেনা।
কারন ওগুলো ছিলো ওই শিক্ষকের প্ল্যান।
তুলিন কে কাজে লাগিয়ে লাজুকের বাবাকে হেনস্তা করা।আর ওই শিক্ষক তাতে জয়ী ও হন।
যেহেতু লাজুক ভালো স্টুডেন্ট ছিলো তাই তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়না।
আর ওদিকে,লাজুকের বাবা এই অপমান সহ্য করতে না পেরে স্ট্রক করেন।
হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই লাজুকের বাবা মারা যায়।
পাথর হয়ে যান নাহার বেগম।বাকরুদ্ধ হয়ে যায় লাজুক।
হারিয়ে যায় লাজুকের মাথার উপর থেকে বটগাছ নামক ছাঁয়া টা।
সেদিন থেকে নাহার বেগম লাজুকের সাথে কথা বলেন না।
লাজুক ও ভেঙে পড়ে খুব।বাবাকে হারিয়ে তো এতিম হয়েছে,আর মা কে ও হারায় এখন।অনাথের মতো হয়ে যায় লাজুক।
বাবার স্বপ্ন ছিলো লাজুক অনেক পড়াশোনা করবে।তাই এই শোকের মধ্যেও লাজুক টেস্ট পরীক্ষা দেই।
টেস্ট পরীক্ষাতে লাজুক এ প্লাস পাই।কিন্তু বোর্ড পরীক্ষায় বাধে বিপত্তি।
একদিকে মা কথা বলেনা।অন্যদিকে সবার অপমান।তুলিনের ও পরিবর্তন।
লাজুক এসএসসি তে ভালো রেজাল্ট করতে পারেনা।টেনেটুনে এ গ্রেইড পাই।
খুব কাঁদে লাজুক।ডিপ্রেশনে চলে যায়।কিন্তু তবুও নাহার বেগম তার কলিজার টুকরা কে শান্তনা দেননা।
এই সুযোগে তুলিন আবারো যোগাযোগ করে লাজুকের সাথে।কারন তুলিনের তখন টাকার প্রয়োজন।
যেহেতু লাজুক বরাবর ই তুলিনের প্রতি দূর্বল সএই সুযোগ টা কেই কাজে লাগাই তুলিন বারবার।
দু একটা মন ভোলানো কথা বলে ঠিক ই মানিয়ে নেই লাজুক কে।
যখন যখন টাকা লাগে তুলিন লাজুক কে বলে।আর বোকা লাজুক ও টাকা দিয়ে দেই ভালোবাসার পরীক্ষা দিতে।
এভাবেই চলতে থাকে ওদের দিন।
হঠাৎ একদিন তুলিন লাজুক কে বলে বসে,”লাজুক অনেকদিন তো হলো রিলেশনের।এতোগুলো দিনে তুমি আমাকে তোমার হাত ধরা ছাড়া আর কিছুই করতে দাওনি।
একবার জোর করে জড়িয়ে ধরেছিলাম…..
এতোটুকু বলতেই লাজুক রেগে যায়।লাজুক তখন তুলিন কে কয়েকটা কটূ কথা শুনিয়ে দেই।
লাজুক বলে,” সেদিন তোমাকে বাঁচাতে তোমার প্রেমে রাজি হয়েছিলাম।আর এখন সত্যি সত্যি ভালোবাসি বলে তুমি অন্যায় আবদার করতে পারোনা তুলিন।”
চলে আসে তুলিনের সামনে থেকে লাজুক।বেশ ক’দিন আর যোগাযোগ করেনা তুলিনের সাথে।
,
লাজুক ইন্টারমিডিয়েট এর পাশাপাশি কম্পিউটার সাইন্সে ডিপ্লোমা তে ভর্তি হয়।
লাজুকের বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে লাজুকের জীবনের সব কিছু পাল্টে যায়।তখনো নাহার বেগম লাজুকের সাথে কথা বলেনা।
লোক দিয়ে বিজনেস সামলান নাহার বেগম।আর মাস গেলে লাজুকের একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেন।
লাজুকের মা লাজুকের সাথে কথা বলেনা বলে লাজুক হোস্টেলে ওঠে।একা একা থাকে।কারো সাথে কথা বলেনা।
কলেজের এক সিনিয়র শিক্ষক লক্ষ্য করতো লাজুক কে।সে ঠিক লক্ষ্য করতোনা কেউ একজন তাকে দিয়ে লক্ষ্য করাতো লাজুক কে।
একদিন সেই সিনিয়র শিক্ষক লাজুক কে তার চেম্বারে যেতে বলেন।
,
,
চলবে