#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ৫
#ফারজানা_আক্তার
পাশের টেবিলে রাখা বোতল টার চাপা খুলে আদিবার মুখে পানি ঢালতে চেয়েও ঢালেনি কারণ আদিবা রাহিলের বুকে ঘুমাচ্ছে ছোট বাচ্চাদের মতো জড়সড় হয়ে, এখন যদি আদিবার মুখে পানি ঢালে তবে সব পানি রাহিলের গায়েও পরবে তাই পানির বোতলটা জায়গা মতো রেখে দেয় আবার। ঘুমন্ত আদিবাকে দেখতে খুব মায়াবী লাগছে তাই রাহিলের আর আদিবাকে জাগাতে ইচ্ছে করছেনা। রাহিল ধীরে ধীরে খুব যত্নসহকারে আদিবাকে বালিসে শুইয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আদিবা চোখ খুলে দেখে সে বালিসে, পাশে তাকিয়ে দেখে রাহিল নেই।
আরে কোথায় গেলেন উনি? কয়টা বাজে?
হাতে মোবাইল নিয়ে দেখে মাত্র ৬টা। কয়েকদিন ধরে এই বোতাম ফোনটাও ডিস্টার্ব করতেছে। অনেক পুরোনো মোবাইল কিনা। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে যখন পড়ছিলো তখন একজন থেকে পুরোনো ফোনটা কিনেছিলো টিউশনির টাকা জমিয়ে।
আদিবা উঠে চুপচাপ বেলকনিতে চলে গেলো। সকালের বাতাস গায়ে লাগলে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। বেশ ভালো লাগে আদিবার। সকালে ভেজা ঘাসে হাঁটতে বড্ড ভালোবাসে আদিবা।
রাহিল রুমে এসে দেখে বিছানা গুছানো, আদিবা নেই।
কোথায় গেলো মেয়েটা এই সকাল সকাল। আদিবা,,, আদিবা
দুই বার ডাকতেই আদিবা দৌড়ে এসে রুমে ঢুকে।
~কি হয়েছে? সকাল সকাল এভাবে ডাকছেন?
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে আদিবা।
~সকাল সকাল ওড়না ছাড়া এই টিশার্ট পরে বেলকনিতে কাকে শরীর দেখাতে গিয়েছিলে?
একটু কর্কশ কন্ঠে বলে রাহিল।
~ছি আপনি এতো বাজে ভাবে কথা বলছেন কেন? আমি তো একটু সকালের ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করছিলাম। এতে মন সতেজ থাকে, আর আপনি,, ছিঃ
~তো ওড়না টা সাথে নিলে কি বাতাস গায়ে লাগতো নাহ?
~আপনার সাথে কথা বলাই বেকার।
এটা বলে আদিবা ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই হাতে হেঁচকা টান অনুভব করে। রাহিল একটানে আদিবাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেই। দু’জনের নিঃশ্বাস ভারী হচ্ছে, একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে স্পষ্ট। রাহিলের গরম নিঃশ্বাস আদিবার মুখে পরতেই কেঁপে কেঁপে উঠে আদিবা।
~ক কি করছেন আপনি? ছাড়ুন আমায়।
~তুমি তো এটাই চাও,, তাই
~বলছিতো ছাড়ুন আমায়।
রাহিলকে পুরো কথা বলতে না দিয়ে একটু চিল্লিয়ে কথাটি বলে আদিবা।
চরম রাগ উঠে যায় রাহিলের। সে কিছু চিন্তা না করেই ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় আদিবার ওষ্ঠদ্বয়ে। বরফের মতো জমে যায় আদিবা, আদিবা এমন কিছুর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা।
প্রায় ১০মিনিট পর রাহিল আদিবাকে ছেড়ে দিয়ে বেলকনিতে চলে যায় দ্রুত পায়ে হেঁটে। আদিবা শক্ত হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপর ধীর পায়ে এগিয়ে যায় ওয়াশরুমের দিকে।
‘
‘
‘
রাহিল চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে বেলকনির রেলিং ধরে।
সরি রেশমা বিশ্বাস করো আমি এমন কিছু মোটেও করতে চায়নি, আমি ওকে অনুভব করিনা, আমার অনুভবে শুধুই তুমি। হয়তো তুমি নেই এই পৃথিবীর বুকে কিন্তু এই বুকে অনন্তকাল শুধু তুমিই রবে। ভালোবাসি তোমায়।।।।
তুমি তো জানোই রাগ উঠলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা, কি করি তখন তা নিজেরই অজানা। প্লীজ ক্ষমা করে দাও আমায়, আর কখনো আদিবাকে স্পর্শ করবো নাহ।
বিড়বিড় করে কথাগুলো বলছে রাহিল, কথাগুলো বলতে বলতে গলা ধরে আসছে রাহিলের। ভেতরটা যেন ভেঙ্গে চূর্ণ চূর্ণ হয়ে যাচ্ছে তার। কে বলেছে পুরুষ রা কাঁদেনা, পুরুষদের কলিজা শক্ত, তীব্র ব্যাথায় একজন কঠোর পুরুষও কাঁদে, রাহিল তার প্রমান।
‘
‘
‘
অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে রাহিল ঠিক তখনই তুলি এসে বলে “আব্বু দাদু আমাতে এত্ততুলা তকলেট দিতে” (দাদু আমাকে এত্তগুলা চকলেট দিছে)
~আচ্ছা তবে চকলেটের লোভেই রাতে পরিটা আব্বুর সাথে ঘুমাতে আসেনি,,
তুলিকে কোলে নিয়ে তুলির নাকে নাক ঘসে বলে রাহিল। কুটকুট করে হাসে তুলি। মুগ্ধ হয়ে মেয়ের হাসি দেখছে রাহিল।
আদিবা রুমে ঢুকে বাবা মেয়ের খুনসুটি দেখে মুচকি হাসে। টিফিন বাক্সটা বিছানায় রাখতে রাখতে বলে “আপনার টিফিন বাক্স রেখেছি এখানে ” বলেই রুম থেকে চলে যেতে নিলো আদিবা। তখনই পেঁছন থেকে ডাক দেয় রাহিল, থেমে যায় আদিবা।
আদিবা রাহিলের দিকে না তাকিয়েই বলে “কিছু কি বলবেন?
~হুম এদিকে এসো।
ঢুক গিলে আদিবা, কি বলবেন উনি? আবার বকাঝকা করবেনা তো? কিন্তু এখন তো আমি কোনো ভুল করিনি।।
সাতপাঁচ চিন্তা করে ধীর পায়ে রাহিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় আদিবা।
~তোমার ফোনটা কোথায়?
~কেন?
~দাও আমায়
আদিবা আর কথা না বাড়িয়ে আধভাঙা ফোনটা এনে রাহিলের হাতে দেয়। রাহিল তুলিকে আদিবার কোলে দিয়ে কাবাড থেকে একটা বাক্স বের করে সোফায় গিয়ে বসে। নিহান এসে বায়না করে তুলিকে নিয়ে যায়, ছাদে যাবে বলে।
আদিবা রাহিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, রাহিল আদিবার ফোন থেকে সিম টা খুলে নেয় তারপর বাক্স থেকে একটা বড় টাচ মোবাইল বের করে সেটাতে সিম আর একটা মেমোরি সেট করে দেয়।
আদিবা হা হয়ে দেখছে শুধু।
~নাও আজ থেকে এই ফোনটা তোমার,
আদিবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে রাহিল।
~আ আসলে আমি তো পারিনা।
আমতাআমতা করে বলে আদিবা।
~কি পারোনা তুমি?
~এগুলো কিভাবে ব্যবহার করে জানিনা আমি।
মাথা নিচু করে বলে আদিবা।
~সমস্যা নেই, আমি রাতে এসে শিখিয়ে দিবো, এখন অফিসের দেরি হচ্ছে আমার।
এটা বলেই চলে যায় রাহিল।
রাহিলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে আদিবা।
উনি আমায় নিয়ে ভাবছে, তবে আর বেশি দূরে নয় সেই শুভ ক্ষণ, যখন উনি রাগ করে নয় ভালোবেসে কাছে টেনে নিবেন আমায়। খুশিতে চোখে পানি চলে আসে আদিবার।
‘
‘
‘
একা একা ছাদে কি করছো নিহান ভাই, আর তুলি কোথায়?
~ওই যে একমনে ফুল দিয়ে খেলছে আপনার মেয়ে,, ভাবি আপনি আমায় ভাইয়া না ডেকে নাম ধরেই ডাকতে পারেন, সমস্যা নেই ।
~নাহ ভাই, তুমি সম্পর্কে আমার ছোট হলেও বয়সে আমার বড়, এভাবে নাম ধরে ডাকা ভালো দেখায় নাহ।
~আচ্ছা আপনি যা ভালো বুঝেন।
~তো আজ কলেজ নেই তোমার? শোভা আপু তো চলে গেছে সেই কবে।
~নাহ ভাবি আজ আমার ক্লাস নেই।
~ও আচ্ছা।
~ভাবি আপনি আবার পড়াশোনা শুরু করলে ভলো হতো, আপনার তো ইন্টার সার্টিফিকেট আছেই।
~নাহ ভাই, এখন শুধু সংসার নিয়ে থাকতে চাই, তুলিকে নিয়েই এখন আমার সবকিছু। এখন আমি পড়াশোনা শুরু করলে ওর অযত্ন হতে পারে আর তা আমি মোটেও চায়না।
কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদিবা, খেয়াল করে নিহান সেটা। নিহান কিছু বলতে চেয়েও বলল না আর।
‘
‘
‘
তুলিকে কোলে নিয়ে আদিবা নিচে চলে যায়।
নিহান আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ছাদের রেলিং ধরে। খুব মনে পরছে শিরুফার ফর্সা চেহেরাটা তার। শিরুফাকে দেখতে এতোই সুন্দর লাগে যে যেকেউই প্রথম দেখায় প্রেমে পরে যাবে ওর। নিহানও এখন সেই জলে সাঁতার কাটছে।
ইস্ শিরুফা যদি থেকে যেতো কয়েকদিন, বেশ ভালো হতো।
‘
‘
‘
সন্ধ্যায় রোকেয়া বেগম, তুলি, শোভা, আদিবা সবাই ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিলো, রমজান সাহেব আর রাহিল ঘরে আসতেই রোকেয়া বেগম স্বামীর পেঁছন পেঁছন রুমে চলে যায়, কিছুক্ষণ পর আদিবাও চলে যায় রাহিলের জন্য কফি বানাতে।
শোভা তুলিকে জড়িয়ে ধরে বলে “আজ সিঙ্গেল বলে”
তখনই রান্না ঘর থেকে চিৎকার করে উঠে আদিবা, শোভা তুলিকে সোফায় বসিয়ে রেখে দৌড়ে গিয়ে যা দেখলো শোভার চোখ যেন কপালে উঠে গেলো, সে আতংক হয়ে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে ভাই, বাবা-মা সবাইকে ডেকে নিয়ে আসে ____
#চলবে