#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ৩
#ফারজানা_আক্তার
রাহিলের চোখ আঁটকে গেছে আদিবার দিকে তাকিয়ে, শ্যামলা চেহারার মেয়েটা এতো সুন্দর, আগে খেয়াল করেনি রাহিল। নিজের অজান্তেই বলে “অনিন্দ্য ”
আদিবা লজ্জা পেয়ে সরে যায় রাহিলের সামনে থেকে, ঘোর কাটে রাহিলের।
দুজন নামছে সিঁড়ি দিয়ে, সবাই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। রোকেয়া বেগম বলে উঠলো “মাশাআল্লাহ দারুণ মানিয়েছে দুজন কে”
তুলি দৌড়ে গিয়ে নতুন মাকে জড়িয়ে ধরে, আদিবাও আদর করে কোলে তুলে নেই তুলিকে। রাহিল আদিবার কোল থেকে তুলিকে নিতে চাইলে তুলি আসেনা, আদিবা ধীর কন্ঠে বলে থাকুক না আমার কাছে।
রাহিল আর কিছু না বলে নাস্তা করতে বসে যায়।
ডাইনিংয়ে রাহিলের আম্মু আব্বু আর শোভা আর নিহান বসা ছিলো, নিহান শোভার দু বছরের বড়। আদিবা এসে সালাম দিলো সবাইকে। শোভা বলল “বসুন ভাবি”।
রাহিলের পাশের চেয়ারে বসে আদিবা কোলে তুলি।। রমজান সাহেব বলল ” মা আদিবা কিছু কথা বলার ছিলো তোমায়”
~জি বলুন আব্বু।
~এখানে নয়, নাস্তা শেষে আমার রুমে এসো।
~ আচ্ছা আব্বু।
‘
‘
‘
নাস্তা শেষে যে যার মতো নিজের কাজে চলে যায়, রাহিল তুলিকে নিয়ে বাগানে যায় হাঁটতে। নিহান আর শোভা যায় কলেজে। রোকেয়া বেগম রান্না ঘরে কাজ করছিলো এমন সময় আদিবা গিয়ে বলে “আম্মু আপনাদের রুম কোনটা? আসলে এই ঘরে তো অনেক রুম কোনটা কার বুঝে আসছেনা আমার।
রোকেয়া বেগম মুচকি হেসে বললেন ” সমস্যা নেই, ধীরে ধীরে সব পারবে, শুরুতে একটু সমস্যা হবে।”
তারপর রোকেয়া বেগম সাথে করে নিয়ে রুমে দিয়ে আসে।
~আম্মু আপনিও থাকুন।
রোকেয়া বেগম এর হাত ধরে বলে আদিবা।
~নাহ মা, অনেক কাজ আমার। ওদের বাপ ছেলের জন্য টিফিন তৈরি করতে হবে, তুমি কথা সেরে আসো। যাও বেলকনিতে আছে তোমার শ্বশুর।
রমজান সাহেব বেলকনিতে ইজি চেয়ারে বসে দুলছে আর খবরের কাগজ পড়ছে। ধীর পায়ে আদিবা এগিয়ে যায় বেলকনির দিকে।
~আব্বু..
~আসছো তুমি।
খবরের কাগজ থেকে চোখ সরিয়ে আদিবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন রমজান সাহেব।
~জি
নিচের দিকে তাকিয়ে ধীর কন্ঠে বলে আদিবা।
~বসো মা
আদিবা একটা টুল টেনে বসে।
রমজান সাহেব বললেন “তুমি কি খুশি আছো”?
আদিবা কি বলবে বুঝতে পারছে না, তবুও মিনমিনিয়ে বলল ” জি আব্বু”।
রমজান সাহেব বেশ বুঝতে পারছে আদিবার মনের অবস্থা।
~রেশমা তুলির মা, তিনমাস হয়েছে আজ রেশমা নেই। আমার ছেলেটা ভীষণ ভেঙ্গে পড়ে ছিলো রেশমার হঠাৎ মৃত্যুতে। তুলিকে সামলানো তো খুব কষ্টকর হয়ে পরেছিলো। এমন সময় আমরা তোমার সন্ধান পায়, তাই আর দেরি না করে দ্রুত বিয়ের কাজটা সেরে ফেললাম। আমি জানি তুলি যত সহজে তোমাকে মা মেনে নিয়েছে রাহিলের পক্ষে এতো সহজ না তোমাকে মেনে নেয়া, রেশমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো আমার ছেলেটা, তাই তোমাকে মেনে নিতে একটু সময় লাগবে আমার ছেলেটার।ধৈর্য ধরতে হবে তোমাকে, পারবে তো?
ছল ছল নয়নে রমজান সাহেবের দিকে তাকালো আদিবা, নিজেকে সামলিয়ে মৃদুস্বরে বলল “চেষ্টা করবো আব্বু, তবে এইটুকু বলতে পারবো যে তুলিকে কখনো রেশমা আপুর অভাব বুঝতে দিবোনা, মায়ের আদরে বড় করবো তুলিকে আমি।
~তোমার কথা শুনে মনটা একটু হালকা হলো মা। কিন্তু তোমার একটা কাজ করতে হবে
~কি কাজ?
~রাহিলকে ধীরে ধীরে তোমার মায়ার জালে বাঁধতে হবে। আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।
বেশ লজ্জা পেলো আদিবা শ্বশুরের মুখে এমন কথা শুনে, তবুও কোনোমতে বলল ” জি আব্বু। ”
হেসে দিলেন রমজান সাহেব, আচ্ছা যাও এবার, আদিবা চলে যেতে নিলে আবার ডেকে বলে “তোমার আম্মুকে বলো আমার জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আসতে।
~আচ্ছা।
‘
‘
‘
আদিবা শাশুড়ী কে কফির কথা বলে সোজা নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে অবাক আদিবা, এ কি অবস্থা হলো রুমের।
বাবা মেয়ে খেলতে খেলতে পুরো রুম অগুছালো করে ফেলেছে, আদিবা আসতেই তুলি দৌড়ে আদিবার কাছে চলে যায়, রাহিল একবার আঁড়চোখে তাকিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে।
আদিবা তুলিকে একটা খেলনা দিয়ে সোফায় বসিয়ে পুরো রুম গুছিয়ে নেই। অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয় রাহিল।
আদিবা তখনো রুম গুছাচ্ছিলো। রাহিল আয়নার সামনে গিয়ে চুল আঁচড়াতে নিলে মনে পরে যায় রেশমার কথা, রেশমা সবসময় রাহিলের চুল আঁচড়ে দিতো আর দুষ্টুমি করতো। চোখ ভিজে উঠে রাহিলের, চুলগুলোকে এলোমেলো করে দেয় আবার। আদিবা রাহিলের পেছনে এসে বলল “একটা কথা বলবো “?
~বলো
~রেশমা আপুকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব, আপনার ফোনে তো আছেই ছবি, আমাকে দেখাবেন?
চোখ-মুখ খিঁচে কথাটি বলে আদিবা।
চোখ বড় বড় করে তাকায় রাহিল আাদিবার দিকে। আর শান্তভাবে বলে রাতে দেখিও, এখন অফিসের জন্য দেরি হচ্ছে। এটা বলে রাহিল তুলিকে কোলে তুলে নেই আর তুলির কপালে একটা চুমু দিয়ে আদিবার দিকে তাকিয়ে বলে ” খেয়াল রেখো নিজের আর তুলির, আর কিছু লাগলে বলো আমি অফিস থেকে আসার সময় নিয়ে আসবো।
আদিবা খুশি হয় মনে মনে, রাহিল তাকে নিয়ে একটু হলেও ভাবছে এটা ভেবে। আদিবা তুলিকে রাহিলের কাছ থেকে নিয়ে বলে “নাহ কিছু লাগবেনা আমার, আপনি সুস্থভাবে বাসায় ফিরুন, এটাই যথেষ্ট আমার জন্য।
রাহিল চলে যেতে নিলে আদিবা ডেকে বলে ” আমার কপালে চুমু দিবেননা?
রাহিল অবাক চোখে তাকায় আদিবার দিকে। এই মেয়ের দেখছি লজ্জা সরম কিচ্ছু নাই।
মনে মনে ভাবছে রাহিল।
আদিবা তুলিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে রাহিলের সামনে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ায়। আর বলে “কি ভাবছেন এতো?
~ভাবছি মাথা নষ্ট হয়েছে তোমার। ডাক্তার দেখাতে হবে।
বিরক্তিকর কন্ঠে বলে রাহিল।
~এ্যাঁ মাথা নষ্ট হয়েছে তোমার, আমার মাথা কেন নষ্ট হবে? আমি টিভিতে দেখেছি স্বামী কাজে যাওয়ার সময় স্ত্রী কে কপালে আদর করে যায়। হুম
~আজকে থেকে তোমার টিভি দেখা বন্ধ, আর তুলির সামনে কি শুরু করছো এসব?
~দেখুন তুলি কত মনোযোগ দিয়ে খেলছে, ও কিছু দেখবেনা, আপনি আমার কপালে আদর দিন।
~বেশি করতেছো কিন্তু,
দাঁতে দাঁত চেপে বলে রাহিল।
~আরে চুলগুলো এতো এলোমেলো কেন, একমিনিট
রাহিল অবাক হয়ে দেখছে আদিবার কান্ডগুলো। বেশ চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে তো, আমি তো ভাবছিলাম লজ্জাবতী হবে।
~দেখি মাথা টা একটু নিচু করুন।
রাহিলের ভাবনায় ছেদ পরে আদিবার কথায়।
~মানে কি এসবের?
আদিবা কোনো কথা না শুনে রাহিলের চুল আঁচড়িয়ে দেয়, রাহিল শক্ত হয়ে আছে।
~এবার কপালে আদর দিন।
~বাই
বলেই চলে যায় রাহিল, আদিবা দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে ” কি করবো বলুন, আব্বুকে কথা দিয়েছি আপনাকে আমার মায়ায় জড়াবো, হয়তো এমন একটা দিন আসবে যেদিন আপনি নিজেই বলবেন আমায় ‘অনুভবে শুধুই তুমি’। আর আমি সেদিনের অপেক্ষায় আছি।
~আম্মু আমি কিতু তাবো, ক্ষিদে লাগতে আমাত। (আমি কিছু খাবো,ক্ষিদে লেগেছে আমার)
তুলির কথায় ঘোর কাটে আদিবার।
আদিবা তুলিকে নিয়ে নিচে গেলো, তুলিকে ডাইনিংয়ে বসিয়ে রান্নাঘরে যায় খাবার আনতে। আদিবা রান্নাঘরে যেতেই তুলি চিৎকার করে কেঁদে উঠে, আদিবা দৌড়ে এসে দেখে_____
#চলবে