#অনুভবে_তুমি
#প্রথম_পর্ব
#ফারজানা_আক্তার
খয়েরী রঙের একটি ছেঁড়া থ্রি পিচ গায়ে জড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে বসে আছি আমি, চোখে জল টলমল করছে, আমার সামনে বসে আছেন আমার হবু বর রাহিল আহমেদ, হা হয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে তাও সবার সামনে, লজ্জায় আমি কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছি। এমনিতে আমি খুব চঞ্চল হলেও আজ আমি ভদ্র মেয়ের মতো মাথা নিচু করে বসে আছি, কারণ আজ আমায় প্রথম দেখতে এসেছেন এই বিশ বছর বয়সে তাও একজন ভদ্রলোক যিনি আমার থেকে পনেরো বছরের বড়, মানে বুইড়া খাটাস আর কি.. তো আমি খুব গরিব ঘরের মেয়ে বলে কপালে টাকাওয়ালা বুইড়া ঝুটলো নয়তো এই সালমান খানের মতো বুইড়ার জন্য জীবনেও রাজি হইতাম না, ও একটা কথা তো বলতেই ভুলে গেছি, উনার, মানে আমার হবু বরের তিন বছরের এক মেয়েও আছে, আগের বউ নাকি ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, ইতিমধ্যেই মেয়েটা আমায় মা মা বলে ডাকা শুরু করে দিয়েছে, আমার বেশ লজ্জা পাচ্ছে হিহিহি। আমার আব্বু অনেক আগে তাদের বাড়িতে ড্রাইভার এর কাজ করতো সেই সুবাদেই চেনা-জানা।
‘
‘
‘
গরিবের ঘর বলে আলাদা কথা বলার জন্য কোনো রুম নেই, তাই সবাই বাহিরে চলে যায় ওদের কে কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে। ছোট্ট পুঁচকে মেয়েটাকেও নিয়ে যায় মেয়ের দাদি আর দাদা।
~আদিবা তুমি কি মন থেকে রাজি আছো এই বিয়েতে?
সবাই চলে যাওয়ার পর উনি আমায় এই প্রশ্নটা করে, আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা। শুধু ছলছল চোখে তাকিয়েছিলাম উনার দিকে একবার, খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে উনাকে ৩৫বছরের পুরুষ মনেই হচ্ছিলোনা, মনে হচ্ছিলো যেন ২৭/২৮ বছরের এক সুপুরুষ।
উনি আবারো বলল “তুমি কি মন থেকে রাজি আমার মেয়ে তুলির মা হওয়ার জন্য?
এবার কিছু না ভেবেই চোখ-মুখ খিঁচে হ্যাঁ বলে দিলাম। উনি আলহামদুলিল্লাহ বলল।
কি আর করবো? হ্যাঁ বলা ছাড়া যে আর কোনো উপায় নেই আমার। আমার ছোট বোন শিরুফা দশম শ্রেনিতে পা রেখেছে এবার, বুঝতেই পারছেন বিয়ের বয়স হয়ে গেছে তারও। আর আমাকে নিয়ে বাবা মায়ের যত চিন্তা, শিরুফা ধবধবে সাদা হলেও আমি একটু শ্যামলা তাই। কিন্তু সবাই বলে চেহেরা নাকি হেব্বি মায়াবী আমার। হিহিহি
‘
‘
‘
ধীরে ধীরে গনিয়ে আসতে লাগলো আদিবার বিয়ের দিন। মনটা ছটপট করা শুরু করে দিয়েছে আদিবার। খুব লজ্জা আর ঘৃণা হচ্ছে আদিবার নিজের উপর, কারণ বিয়ের সমস্ত খরচ পাত্রপক্ষ বহন করছে। আদিবার মনে হচ্ছে ওকে কেউ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। কেনো গরিব ঘরে জন্ম হলো এই চিন্তায় রাতে আর ঘুম হয়না আদিবার।
‘
‘
‘
লাল বেনারসি গায়ে জড়িয়ে বাসর ঘরে বসে আছে আদিবা, হাত পা ঠোঁট কাঁপছে আদিবার। কান্না পাচ্ছে খুব। হঠাৎ দরজার শব্দে মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে তুলিকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রাহিল আহমেদ। তুলিকে রাহিলের কোলে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো আদিবা। তুলি রাহিলের কোল থেকে নেমে দৌড়ে নতুন মায়ের কোলে গিয়ে উঠে যায়। আদিবাও হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে নেই তুলিকে।
রাহিল পাঞ্জাবি টা খুলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। রাহিলের মুখে চিন্তার ভাজ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। চোখ এড়ালো না আদিবার, আদিবা কিছু চিন্তা করার আগেই হঠাৎ রুমে প্রবেশ করলো রাহিলের ছোট বোন শোভা। শোভাকে দেখে তুলি আদিবাকে জড়িয়ে ধরে খুব জোরে, আজকে সে নতুন মায়ের সাথে ঘুমাবে,এটাই বলে যাচ্ছে শুধু। আদিবা হাসিমুখেই বললো “থাকুক না ও আমার সাথে ”
~নাহ ভাবি, আগামীকাল থেকে থাকবে তুলি, আজকে দিয়ে দিন।
স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে শোভা।
~কিন্তু এখন নিয়ে গেলে তো কান্না করবে খুব বোন।
তুলির গালে আলতোভাবে হাত বুলিয়ে বলে আদিবা।
~আচ্ছা ভাবি আপনি ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিন, তারপর নিয়ে যাবো তুলিকে আমি।
শোভা বসে আছে সোফাতে, আদিবা খুব আনন্দের সাথে ঘুম পাড়াতে লাগলো তুলিকে। আবার মনে ভয়ও লাগছে, তুলি চলে গেলে যদি রাহিল সাহেব মারাত্মক কিছু করতে চাই, কি করবো এখন? শোভা তো তুলিকে না নিয়ে যাবেনা এখান থেকে।
রাহিল ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে শোভাকে দেখে বুঝে যায় যে শোভা কেনো এতো রাতে এই রুমে এসে বসে আছে।
রাহিল শান্তভাবে বলে “তুই যা শোভা, সমস্যা নেই তুলি আমাদের সাথেই থাকবে।”
~নাহ ভাইয়া, তুলি আজ আমার সাথেই থাকুক, আগামীকাল থেকে না হয় তোমাদের সাথে থাকবে।
রাহিল আর কিছু বলল নাহ, সে বেলকনির দিকে পা বাড়ায়। তুলি ঘুমিয়ে পরলে শোভা তুলিকে নিয়ে চলে যায় আর আদিবার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে চোখ টিপ মেরে যায়।
আদিবা বুঝলোনা শোভা কেন চোখ টিপ মেরে গেলো। বিয়ের সাজ গুঁজে অস্বস্তি লাগছিলো আদিবার। তাই সে বিছানায় বসে খাঁচুমাচু করতেছিলো। রাহিল বেলকনি থেকে আসতে আসতে বলল “চেঞ্জ করে নাও”
আদিবা অসাহায় দৃষ্টিতে তাকায় রাহিলের দিকে। রাহিল প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকায় আদিবার দিকে। আদিবা আমতা আমতা করে বলে “আসলে আমার কাপড়চোপড়ের ব্যাগটা নিচে রয়ে গেছে হয়তো”
রাহিল কি বলবে বুঝতে পারছেনা, এখন ব্যাগের জন্য গেলে হয়তো আবার লজ্জায় পরতে হবে তাকে সবার সামনে। কপালে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে রাহিল। হঠাৎ আলমারি থেকে একটা টিশার্ট আর টাওজার এগিয়ে দেয় আদিবার দিকে। চোখ বড় বড় করে তাকায় আদিবা।
~যাও চেঞ্জ করে নাও, কোনোরকমে মানিয়ে নাও আজ রাত টা।
আদিবা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে, চোখ এড়ালো না রাহিলের। রাহিল আদিবার হাত টেনে ধরিয়ে দিলো কাপড়গুলো। আদিবা কিছু না বলে চুপচাপ ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। আদিবা লজ্জায় রাহিলের দিকে তাকাতে পারছিলো না কারণ রাহিল বিনা কাপড়ে ছিলো, পরনে ছিলো শুধু একটা টাওজার। আদিবা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজেই হাসতে লাগলো।
‘
‘
‘
কিছুক্ষণ পর টিশার্ট টানতে টানতে রুমে আসে আদিবা, রাহিল আধশোয়া হয়ে মোবাইল টিপছিলো, রাত তখন ২টা ২২বাজে।
আদিবা ধীরে ধীরে রাহিলের সামনে এসে বলল “খুব ঘুম পাচ্ছে, কোথায় ঘুমাবো আমি?
~বাসর রাতে কেউ ঘুমায়?
মোবাইলের দিকে তাকিয়েই কথাটি বলে রাহিল।
চোখ কপালে উঠে যায় আদিবার। এ কেমন মানুষ, লজ্জা বলতে কি কিছু নেই উনার? আর উনি এভাবে খালি গায়ে বসে আছেন কেন? গরম তো তেমন নেই।
মনে মনে ভাবতে থাকে আদিবা।
রাহিল হঠাৎ বসা থেকে দাঁড়িয়ে আদিবার দিকে এগোচ্ছে, কাঁপতে শুরু করে আদিবা। রাহিল কোলে তুলে নেই আদিবাকে আর কানে কানে ফিসফিস করে বলে ” বাসর রাতে বিড়াল মারতে হয়, জানো নাহ তুমি?
লজ্জায় আদিবা চোখ বন্ধ করে নেই, এই প্রথম কোনো পুরুরষের স্পর্শ পেয়ে ভিষণ ভাবে শিহরিত হয় আদিবা।
রাহিল আদিবাকে বিছানায় বসিয়ে দেয়, আর নিজে হাঁটু গেড়ে বসে মাথা রাখে আদিবার কোলে। চমকে উঠে আদিবা।
কি করতে চায় উনি? বিয়ে তো নাকি মেয়ের জন্য করেছে, তবে এতো আবদার কিসের? আগের বউ কে কি একটুও মনে পরে না উনার.??
ভাবতে থাকে আদিবা।
#চলবে