#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_নভেম্বর_২০২০
#অনুগল্প_ছলনা
#লেখিকা_অন্তরা_ইসলাম
ব্যস্ত শহরে ক্লান্ত দুপুরে সবাই যখন একটু বিশ্রামের আশায় বিছানায় গা এলিয়ে দেয়, ঊষা তখন পুরনো এলবামটা হাতে নিয়ে অঝোর ধারায় অশ্রু বির্সজন দিচ্ছে। কারণ এলবামে ঊষা আর আবিরের বিয়ের ছবি আছে। আবির তাকে কতো ভালোবাসতো। আর আজ কি হলো? সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।
কলেজে যাওয়ার পথে একদিন হঠাৎ করেই আবিরের সাথে দেখা হয় ঊষার। প্রথম দেখায়ই ঊষাকে ভালো লাগে আবিরের। আর ভাগ্যের পরিণতিতে তার ভালোলাগা ভালোবাসায় পরিবর্তন হয়। ঊষা আর আবিরের তিন বছরের সম্পর্কের পরে তারা পালিয়ে বিয়ে করে কারণ কেউ তাদের সম্পর্কটা মেনে নেয়নি।
ঊষারা দুইবোন। তার বাবার সম্পত্তির অর্ধেকটা তার ছোট বোনের নামে আর বাকিটা ঊষার নামে উইল করা। বাড়ি থেকে আসার সময় ঊষার মা তার সব কিছু তাকে দিয়ে দেয়। ঊষা আর আবির বিয়ে করে শহরে আসে। সেখানে ঊষার বেস্টফ্রেন্ড রনিতা থাকে। ওরা রনিতার বাসায় ওঠে। রনিতা ওদের আপ্যায়নের ত্রুটি রাখেনি।
আবির ঊষার টাকা দিয়ে একটা ছোট ব্যবসা শুরু করে। ঊষা ফ্যাশন ডিজাইনিং এর একটা বড় পোস্টে জব পায়। আবিরের ব্যবসা আর ঊষার স্যালারি দিয়ে ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিছুদিনের মধ্যেই আবির একটা ফ্লাট কিনে ঊষার নামে। তাদের প্রথম ম্যারেজ ডে উপলক্ষ্যে ঊষাকে গিফট দেয় আবির। ম্যারেজ ডে এর পার্টিতে আবিরের ব্যবসার পার্টনার, কর্মচারী, রনিতার ফ্যামিলি সবাইকে ইনভাইট করা হয়।
ভালোই চলছিল তাদের সংসার। আবির ব্যবসায় অনেক উন্নতি করে। এখন আর ঊষাকে জব করতে হয়না। নতুন বাড়ি, গাড়ি, চার- পাঁচ জন কাজের লোক। সুখ আর শান্তি যেন তাদের পরম আত্মীয়। এর মধ্যেই ঊষা আবিরকে বলে, ” আবির, আমার শপিং এ যেতে হবে , তুমি আজকে একটু তারাতারি চলে এসো।”
– ও কাম অন ঊষা, তুমি একা চলে যেও। আমার ফিরতে লেট হবে।
– কিন্তু..
– কোন কিন্তু নয়, আরে এখন তো অন্তত একা চলতে শিখে নাও। আমার দরকারি মিটিং আছে, বায়।
আবির চলে গেল। ঊষার মন খারাপ হয়ে গেল। অন্য সময়তো আবির এমন করেনা আজ মুখের উপর না করে দিল। ঊষা শপিংমলে গেল, ফাস্ট ফ্লোর থেকে সেকেন্ড ফ্লোরে উঠেতো অবাক। রনিতা আর আবির হাত ধরে আসছে। দুজনের হাসির শব্দে চারদিক মো মো করছে।ঊষাকে দেখে যেন আবির ভুত দেখার মতো চমকে উঠলো।
– তুমি এখন?
– এই তোমার দরকারি মিটিং আবির?
– আসলে ঊষা..
– থাক আর আসলে নকলে বুঝাতে হবে না। অনেক হয়েছে আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে।
– তুই ভুল ভাবছিস ঊষা, আসলে আমরাতো..
– তুই আবারর আমাকে কি বুঝাবি , শালি – দুলাভাই হাতধরে হেঁটেছিস এতে দোষের কিছু নেই। আমিতো মজা করছিলাম বলেই খিলখিল করে হেসে উঠলাম।
আমরা অনেক কিছু কিনলাম।ভালো হয়েছে এখন এসেছি বিকালে আসলেতো সেই একাই আসতে হতো। বাসায় ফিরে দুপুরে খেয়ে নিলাম। এভাবে কেটে গেল কয়েক মাস। একদিন আমার ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে।আমি ফোনটা তুলে বলি,
– হ্যালো, কে বলছেন?
– আপনার এক্স বয়ফ্রন্ড।
– কি বলছেন এগুলো, ভালোভাবে বলুন কে বলছেন?
– আরে রাগছিস কেন? আমি সোহেল, কেমন আছিস?
– ও তুই, ভালো আছি। এতদিন পরে কি মনে করে?
– তোর সাথে একটু দেখা করতে চাই, তখন সবটা বলবো। বিকালে একবার কফি শপে আয়।
– আচ্ছা, ঠিকআছে আসবো। বায়।
তারপর বিকালে ঊষা আর সোহেল কফি শপে দেখা করে। ওরা হ্যান্ড শেক করে ঊষা যদি জানতো যে এই হ্যান্ড শেক ওর জীবনের কাল হবে তাহলে কখনো করতো না। ওরা কথা বলে যে যার বাসায় চলে গেল।
রাতে আবির বাসায় ফিরলো। আমি বললাম,
– তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
– আমি খাব না।
– কেন? কি হয়েছে তোমার?
বেশি জোরাজুরি করায় আবির আমাকে চড় মারলো।
– তুমি আমার গায়ে হাত তুললে আবির!
– বেশ করেছি, তোর মতো বাজে মেয়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা।
– আমি কি করেছি আবির? যে তুমি আমার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করছো?
– এই দেখ কি করেছিস। বলেই আমার আর সোহেলের কিছু ছবি দিল আবির।
– এগুলোতো..
– থাক আর বলতে হবেনা।
আমি আবিরের হাত ধরতেই আমাকে ছিটকে ফেলে দিয়ে বেড়িয়ে গেল। ড্রেসিং টেবিলের সাথে ধাক্কা লেগে কপাল কেটে যায়। আমি ফ্লোরে বসে কান্না করতে করতে অজ্ঞান হয়ে যাই। সকালে রনিতা এসে আমাকে ফ্লোরে দেখে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
– ডাক্তার সাহেব ঊষা কেমন আছে?
– ভালো আছে তবে কিছু টেস্ট করতে হবে।
আমার রির্পোট নিয়ে রনিতা ডাক্তারের কেবিনে গেল।
– ডাক্তার সাহেব, ঊষার কি বড় কেনো অসুখ হয়েছে?
– আরে না, মিষ্টি নিয়ে আসেন উনি কনসিভ করেছেন। আজকেই উনাকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন
এটা শুনে রনিতা লাফাতে লাফাতে আবিরকে ফোন দিল।
– হ্যালো আবির, তোমার ওয়াইফ কনসিভ করেছে।
– কি বলছো? ওকে বাসায় নিয়ে এসো।
রনিতা আমাকে বাসায় নিয়ে গেলো। খুব খুশি হয়েছিলাম। কারণ আবির আমার উপর আর রাগ করে থাকতে পারবেনা। কিন্তু আমার ভাগ্য এতোটাই খারাপ যে বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে আবির বললো,
– দাঁড়া, আমার বাড়িতে তোর মতো নষ্টা মেয়ের কোন জায়গা নেই। ডির্ভোস পেপারে সাইন করে দিয়ে চলে যাও এ বাড়ি থেকে।
– আবির তুৃমি এগুলো কি বলছো?
– আবির ঠিকই বলছে, তোর বাচ্চার বাবা কে? ওই সোহেল তাইনা।
রাগের মাথায় রনিতাকে চড় মারতে যাই। কিন্তু আবির আমার হাত ধরে ফেলে আর বলে,
– তুমি ওর গায়ে হাত দিচ্ছিলে। ও ভুলটা কি বলেছে, আর সবচেয়ে বড় কথা আমি ওকে ভালোবাসি।
এটা শোনার পরর যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কলের পুতুলের মতো সাইন করে দিয়ে খালি হাতে বেড়িয়ে এসেছিলাম। আমার ছোট ফ্লাটটাই আমার শেষ আশ্রয়স্থল। এর মধ্যেই আসরের আযান হলো। আমি নামাজ পরে মেনাজাতে বললাম, এমন ভালোবাসা তুমি কাউকে দিওনা প্রভু, যেখানে শুধু ছলনা থাকে। আমার জানা নেই যে এখনও এই পৃথিবীর আলো দেখেনি তাকে আমি কি জবাব দেব।
– মা,মা, তুমি আমাকে বলো আমার বাবা কে? আমার বাবার নাম কি আবির না সোহেল বলো মা, কি হলো বলো।
না.. এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম তাহলে। একগ্লাস জল খেয়ে ছাঁদে গেলাম। কি জবাব দেব ওকে? যে তোর বাবা আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বের করে দিয়েছে। না আমি এটা পারবোনা। তার চেয়ে ভালো এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব। পাঁচ তলার ছাঁদ থেকে একলাফে নিচতলায়।
এমন ভালোবাসা যেন কারো জীবনে না আসে, ভালো থাকুক ভালোবাসা।
-সমাপ্ত –