অনুগল্পঃ শতাব্দী
লেখাঃ ফাহমিদা আঁখি
মিসেস রেবেকার দিকে তাকিয়ে শতাব্দী বলল,
-আন্টি, আপনি কি আমাকে কিছু বলতে চান?
-রেবেকা বেগম আমতাআমতা করতে করতে বললেন, না মানে আসলে…
-আপনি নিঃসংকোচে বলতে পারেন।
-দেখো, অনুরাগ আমার একমাত্র ছেলে। ওকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। ওর আবদারে তোমাকে দেখতে এসেছি। নইলে আমার এখানে আসার কোনো ইচ্ছে ছিলোনা।
-মিসেস রেবেকার এমন কথা শুনে, গম্ভীর হয়ে গেল শতাব্দী।
-আমাদের ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের সাথে তোমাদের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস একেবারেই যায়না। বিয়ে তো মুখের কথা নয় বলো। বিয়ে মানে শুধু দুজনের মিল বন্ধন নয়, দুটো পরিবারের মিল বন্ধন। তুমি শিক্ষিত মেয়ে। তোমাকে অতো খুলে বলতে হবেনা নিশ্চয়। কিন্তু এসব কথা আমার ছেলেকে বুঝাই কি করে? ও তো তুমি বলতে পাগল। তুমি তো আর পাগল নও। তাই তুমি যদি একটু….আই মিন…তুমি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো বিষয়টা?
-অজান্তেই শতাব্দীর চোখের কোল বেয়ে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। কোনোমতে তা লুকানোর ভান করে কান্না চাপা স্বরে বলল, আমি বুঝতে পেরেছি।
নিজের বিন্দু বিন্দু অনুভূতি দিয়ে যে ভালোবাসার সিন্ধু সে গড়ে তুলেছিল। তাতে এক নিমিষেই ঝড় শুরু হলো। সেদিনের পর থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে সে।
আশরাফ উদ্দিন দরজায় কড়া নেড়ে ডাকলেন, ঘুমিয়েছিস মা? বাবার ডাকে বিছানা থেকে উঠে বসলো শতাব্দী। তারপর বলল, ভেতরে এসো বাবা। আশরাফ উদ্দিন ভেতরে আসলেন। খেয়াল করলেন, মেয়ের চোখদুটো ফোলা। ধীরেধীরে মেয়ের পাশে গিয়ে বসে মাথা নিচু করে রইলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর শতাব্দী বলল,
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
-তোমার মেয়ে অতোটাও দূর্বল নয় বাবা। তুমি মাথা নিচু করে আছো কেন?
-আশরাফ উদ্দিন চোখ মুছতে মুছতে বললেন, আমি তোর অক্ষম বাবা। তোর জন্য কিছুই করতে পারলাম না। তুই আমার একটুকরো সুখ রে মা। সেই সুখের বুকে দুঃখ দেখার আগে আমি…..
-শতাব্দী বাবার কথা শেষ করতে দিলোনা। বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমার কাউকে লাগবেনা বাবা। কাউকে লাগবেনা।
-আশরাফ উদ্দিনও কাঁদতে লাগলেন।
মাঝরাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দী। হাতে অনুরাগের চিঠি___
“শতাব্দী, আজ অনেকদিন পর তোমার দেয়া সেই ডায়েরীতে তোমাকে নিয়ে লিখতে বসেছি। মনে আছে, ডায়েরী টা আমার হাতে দিয়ে বলেছিলে, “অনুরাগ, অবসরে আমাকে নিয়ে কবিতা লিখো এতে।” তোমার কথায় সেদিন হো হো করে হেসে উঠেছিলাম আমি। তা দেখে তোমার সেকি রাগ। যা ভাঙ্গাতে আমাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। কিন্তু কি করবো বলো, আমার মতো আনাড়ির দ্বারা কি আর কবিতা লেখা সম্ভব? তাও আবার তোমাকে নিয়ে। শতাব্দী, তুমিতো নিজেই এক জীবন্ত কবিতা ছিলে আমার কাছে। যে কবিতার ছন্দে, ছন্দহীন এই আমি জীবনের প্রকৃত ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলাম। তোমাকে পেয়ে আমি যে কি পেয়েছিলাম, তা যেমন বলতে পারিনি। তেমনি তোমাকে হারিয়ে আমি যে কি হারিয়েছি, তাও বলতে পারিনি। আমার প্রতি বেলার প্রার্থনায় তো আমি শুধু তোমাকেই চেয়েছিলাম। তবুও এই অধমের প্রতি বিধাতার এতোটুকু দয়া হয়নি।
সেদিন, মায়ের সঙ্গে তোমার কি কথা হয়েছিল আমি জানিনা। কিন্তু আমি জানি, মায়ের কথা রাখতেই তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে। সন্তান কিসে সুখী হবে, বাবা-মা সবসময় এটাই তো ভাবে, তাইনা? আমার বাবা-মাও তাই ভেবেছিল। একটু বেশিই ভেবেছিল। নইলে কি আজ এতো সুখের মাঝেও নিজেকে অসুখী মনে হতো? তুমি ফিরিয়ে দিলে আর আমি অভিমানে অন্য তীরে নৌকা ভিড়ালাম। এদিকে শূন্য তীরে বসে একাকিনী আমার কবিতা তোমার হৃদয় থেকে কতটা বেদনা ঝরে পড়েছিল আমি বুঝতে চাইনি শতাব্দী। সেদিন যে বেদনার কাঁটা আমার হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল, তা আজও উপড়ে ফেলতে পারিনি। বরং সেই কাঁটা হৃদয়ের গভীরতায় খচখচ করে রোজ। একটু ভালোবাসা খুঁজতে গেলেই ব্যথায় মরে যায় আমার মন। কি করবো বলো? মায়ের পছন্দে যাকে জীবনের অংশ বানিয়েছি, তার তো কোনো দোষ নেই। সে বেচারি, আমার উপেক্ষা সহ্য করেও, অপেক্ষায় থাকে দিনভর।
গতরাতে ঘুমের ঘোরে বুক হাতড়ে তোমাকে খুঁজছিলাম খুব। ঘোর ভাঙতেই টের পেলাম, এ তুমি নও। অন্য কোনো শিউলি ফুল। মেয়েটার মাঝে কি আছে জানিনা। আমাকে বেঁধে রাখতে চায় পাগলিনীর মতো। কিন্তু আমি যে বড্ড ছটফট করি তোমাকে ছাড়া। আমার চোখ জোড়া তোমার খুব পছন্দ ছিলো বলে, সুযোগ পেলেই তাতে ভালোবাসা এঁকে দিতে। দ্বিতীয়বার চাইলে কক্ষনো দিতে না। বলতে, এমন ভালোবাসা শুধু একবারই দেয়া যায়। বিশ্বাস করো, আমি এমন ভালোবাসা শুধু একবারই চেয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার এ ভালোবাসার ভার আমি যে সইতে পারছিনা শতাব্দী।
মা মারা যাওয়ার আগে তার ভুলটা স্বীকার করে গেলেন। ফ্যামিলি স্ট্যাটাস দেখতে গিয়ে তিনি যে তার ছেলের ভালোবাসার মৃত্যু ঘটিয়েছেন, এজন্য তিনি অনুতপ্ত। তাছাড়া তার কারণে তুমি যে জীবনে একলা রয়ে গেছো, এ দুঃখে তিনি ছিলেন কাতর। মারা যাওয়ার আগে একবার তোমাকে দেখতে চেয়েছিলেন। আমি তার শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে হন্নে হয়ে তোমাকে খুঁজছিলাম। অবশেষে পড়ন্ত এক বিকেলে মাকে দেখতে এলে তুমি। মনে আছে, মা তোমার হাতদুটো ধরে বলেছিলো, মাগো, এ বাড়িতে তোমার একটা সংসার হওয়ার কথা ছিলো। আমি তোমার সেই না হওয়া সংসার নিজ হাতে ভেঙে দিয়েছি। আমাকে তুুমি ক্ষমা করে দিও। অদূরে দাঁড়িয়ে আমি দেখেছি, মা অঝোরে চোখের জল ফেলছিলেন। আর তুমি, পাথরের মতো স্থির হয়ে ছিলে। তোমার দুচোখ বেয়ে একটু তো নোনা জল পড়া উচিত ছিলো। এতোটা কঠিন কি করে হতে পারলে? তারমানে কি, নারীর হৃদয় নরম হলে খুব নরম আর কঠিন হলে খুব কঠিন?
সেদিন তুমি চলে যাওয়ার পর, ঘরে গিয়ে দেখি মেয়েটা কাঁদছে। নীরবে কাঁদছে। দেখে কেমন মায়া হলো। ও ভাবছে, এ সংসারটা অন্য কারো হওয়ার কথা ছিলো। ও উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। আমি ওকে বলতে পারতাম এতে ওর কোনো দোষ নেই। কিন্তু বলিনি। আসলে বলতে পারিনি। আমাকে দেখামাত্র আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আমি বাঁধা দিতেও পারিনি। বুকের ভেতর কেমন একটা হচ্ছিল। তোমাকে মনে পড়ছিল ভীষণ। এ কেমন কষ্ট!
এখন রোজ রাতে মেয়েটা আমার বুকেই ঘুমোয়। কিন্তু বুকের ভেতরে যে একটা কুঠুরি আছে, যাকে বলে হৃদয়কুঠুরি। সেখানে শুধু তুমিই ঘুমিয়ে থাকো। জেগেও ওঠো। মাঝেমাঝে পাগলামি করো। আমাকে আদর করো। আমাকে ভালোবাসো। এই আমার সংসার। তোমার না হওয়া সংসারটা আমি আমার বুকেই গড়ে নিয়েছি। জানো, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে যখন খোলা জানালায় চোখ রাখি, বুকের ভেতরটা কেমন হাহাকার করে ওঠে। শতাব্দী, আমার প্রতিটি দিনের প্রতিটি রজনী আমি তোমার সঙ্গে কাটাতে চেয়েছিলাম। এসব স্মৃতি কি করে ভুলি বলো তো?
শতাব্দী, ভালো আছো তো তুমি? আমি ভালো নেই। ভালো নেই।”
আমি ভালো আছি অনুরাগ। এই যে, এই অন্ধকার রাতের মতো ভালো আছি। যেখানে সহজে সব ব্যথা লুকিয়ে রাখা যায়। ব্যথা লুকিয়ে রাখায় কতটা সুখ তুমি জানো? ভালোবাসা প্রাপ্তির চেয়েও বেশি। হ্যা, এই শতাব্দী তার শতবছরের ভালোবাসা বিনিময় করেছে সীমাহীন ব্যথার আদলে। অনুরাগ, আমি ভালো আছি, ভালো আছি।
সমাপ্ত