অনপেখিত পর্ব-২৭

0
1718

#অনপেখিত
#পর্ব_২৭
লিখা: Sidratul Muntaz

সহীহ-সালামতে মেহেক ও ফারদিন ঢাকায় পৌঁছে গেল ভোর ছয়টার মধ্যেই। একটা পরিচিত রেস্টুরেন্ট থেকে নাস্তা করার পর ওরা কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করল। মেহেক একটুও ক্লান্ত ছিল না। বাসে সে অনেক ঘুমিয়েছে। ফারদিনেরও মেহেকের চনমনে ভাব দেখে ক্লান্তি ছুটে গেছিল। এই মেয়েটার মন ভালো করা হাসি দেখলেই তো তার হৃদয় আত্মতুষ্টিতে ভরে উঠে! তারা বাড়ি পৌঁছালো সকাল আটটায়। সেখানে আরও নতুন চমক! সুজি, আনজীর,ওয়াসীম,পূর্বি সব বান্দরের দল একসাথে হাজির হয়েছে৷ তারা নাকি ভোর পাঁচটা থেকে এখানে এসে অপেক্ষা করছে মেহেক-ফারদিনকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। ফারদিন যখন ফ্ল্যাটে এসে দরজায় নক করল, ওয়াসীম দরজা খুলে দিয়ে সবাইকে নিয়ে দরজার আড়ালে লুকিয়ে ছিল। ফারদিন ঘরে ঢুকে দেখল ড্রয়িং রুম পুরো নীরব। থমথম করছে সিমেন্ট রঙের কার্পেটের মেঝে, সাদা রঙের বল সোফা, নেভানো ঝাড়বাতি। সবকিছু এতো পিনপতন কেন? আর দরজাটাই বা খুললো কে? চারপাশে চোখ বুলিয়ে সে মেহেককে নিয়ে যখন ঘরে প্রবেশ করল তখনি কলিজা কাঁপানোর মতো দরজার আড়াল থেকে চিৎকার করে উঠলো বন্ধুরা। ফারদিন বিরক্ত হয়ে ধমক দিল সবাইকে। আর মেহেক ওদের কান্ড দেখে জোরে হেসে ফেলল। সুজি আর পূর্বি দু’দিক থেকে এসে মেহেককে জড়িয়ে ধরল। দেরি করে আসার জন্য ফারদিনকে পেটে,পিঠে কিল-ঘুষি মারল ওয়াসীম আর আনজীর। ফারদিন জিজ্ঞেস করল,” তোরা কখন এসেছিস?”
আনজীর পাঁচ আঙুল দেখিয়ে উত্তর দিল,” ভোর পাঁচটা থেকে এসে বসে আছি তোদের অপেক্ষায়। শালা! এতো দেরি করলি কেন? ডেটিং সেরে আসলি নাকি?”
ওয়াসীম টিপ্পনী কাটল,” আরে ধূর, বউয়ের সাথে আবার ডেটিং কিসের? ওদের জন্য তো মিনি হানিমুন ছিল এটা।”
সবাই হৈহৈ করে উঠলো। মেহেকের চেহারা লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে যাচ্ছিল। ফারদিন ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,” আচ্ছা, আম্মু কোথায়? তোদের আম্মুর সাথে দেখা হয়েছে?”
আনজীর দুষ্টুমি করে বলল,” না,না, আন্টি তো ঘরে দরজা আটকে লুকিয়ে আছে। তুই না এলে আমাদের সাথে দেখাই করবে না।”
” মানে?”
সুজি বলল,” আরে স্টুপিড, আন্টিই তো আমাদের দাওয়াত করেছে।”
ফারদিন হেসে বলল,
” সেটা বল। তা আম্মু কই এখন?”
হুট করেই হাজির হলেন মিসেস ফয়জুন্নিসা। ভারী উচ্ছ্বাস নিয়ে বললেন,
” কই,কই আমার ডটার ইন লো কই?”
ফারদিন দৌড়ে গেল মায়ের কাছে। জড়িয়ে ধরতে নিলে মা ধমক দিয়ে বললেন,
” তুই সর, বউমাকে দেখতে দে আগে।”
ফারদিনের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। সুজি ভীষণ অবহেলায় হাত দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়ার মতো বলল,” যাহ,যাহ, সর,সর!”
ফারদিন পিছিয়ে গেল। পূর্বি মেহেককে হাত ধরে নিয়ে এসে বলল,” এইযে আন্টি, আপনার পিচ্চি বউমাকে দেখুন।”
ফয়জুন্নিসা মাথা থেকে পা পর্যন্ত মেহেককে দেখে নিলেন। মেহেকের হালকা লজ্জা লাগছিল। ফয়জুন্নিসা ঝলমল করে বললেন,” মাশাল্লাহ, একদম ডানাকাটা পরী!”
সবাই হেসে উঠলো। সুজি হাত দিয়ে মেহেককে খোচা মারল। যার অর্থ,” শাশুড়ী পটে গেল।”
মেহেক বিনয়ী গলায় বলল,” আসসালামু আলাইকুম, আন্টি।”
ফয়জুন্নিসা চোখ কপালে তুলে বললেন,” আন্টি কাকে বলছো?”
পূর্বি ফিসফিস করে বলল,” এই বোকা মেয়ে, মা হয় না তোমার?”
মেহেক লজ্জায় চোখমুখ গুঁটিয়ে বলল,” স্যরি। মা!”
ফয়জুন্নিসা কাছে এসে মেহেককে জড়িয়ে ধরলেন। মেহেকের চারপাশ একটা মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠলো। এতো ভালো লাগলো! ফয়জুন্নিসা স্নেহ মেশানো গলায় জিজ্ঞেস করলেন,” কেমন আছো মা?”
এইটুকু প্রশ্নেই মেহেকের সমস্ত জড়তা, আড়ষ্টতা,লজ্জা,ভয় কেটে গেল। সে সহজ-স্বাভাবিক হয়ে বলল,” আমি ভালো আছি মা। আপনি কেমন আছেন?”
” তোমাদের দেখে এখন অনেক ভালো আছি। আচ্ছা, এবার ছেলেটার সাথে একটু কথা বলে আসি।”
ফয়জুন্নিসা ফারদিনের কাছে গিয়ে গালে হাত রেখে বললেন,” কেমন আছিস বাবা?”
ফারদিন মায়ের হাত নিয়ে একটা চুমু দিল,” খুব মিস করেছি আম্মু।”
মায়ের সাথে ফারদিনের কথা বলার ধরণ দেখে মেহেকের কেন যেন চোখের কোটরে পানি চলে আসলো। ইশশ, তার দেখা শ্রেষ্ঠ কাঠখোট্টা মানুষটি মায়ের সামনে কত কোমল,নরম! ভাবতেই ভালো লাগে। ফয়জুন্নিসা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,” আমিও অনেক মিস করেছি। এজন্যই তো সবকাজ গুছিয়ে এতো দ্রুত চলে এসেছি।”
” আম্মু বাবা কেন আসেনি?”
” তোর বাবা জরুরী কাজে ব্যস্ত ছিলেন। মনখারাপ করিস না। খুব তাড়াতাড়ি চলে আসবে।”
” ঠিকাছে।”
” আমি কিন্তু সবার জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়েছি। বন্ধুরাও তোদের জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করছে। যা দু’জনে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। গল্প হবে।”
মেহেক ইতস্তত বোধ করছিল। তারা যে আগেই রেস্টুরেন্ট থেকে নাস্তা করে এসেছে এটা তো কেউ জানে না। ইশশ, এখন কি হবে? দুশ্চিন্তা নিয়েই ফারদিনের সাথে বেডরুমে গেল মেহেক। ফারদিন বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল,” মেহেক, কেমন লাগল আমার আম্মুকে?”
মেহেক ড্রেসিংটেবিলে দাঁড়িয়ে ওরনা থেকে সেফটি পিন খুলে রাখছিল। ফারদিনের প্রশ্ন শুনে ওর দিকে ঘুরে তাকাল।
” চমৎকার মানুষ তিনি।”
” প্রথম দেখাতেই বুঝে গেলে? নাকি আমাকে খুশি করছো?”
মেহেক চোখ ছোট করে হালকা অভিমানের দৃষ্টিতে তাকাল। ফারদিন ফিক করে হেসে বলল,” আরে মজা করলাম। আম্মু কিন্তু অনেক ফ্রী মাইন্ডেড। মাঝে মাঝে তোমার সাথে বেস্টফ্রেন্ডের মতো আচরণ করবে। তুমি আবার ভ্যাবাচেকা খেয়ো না।”
” আমি মাকে দেখেই বুঝতে পেরেছি সেটা। আপনি টেনশন করবেন না। কিন্তু একটা ব্যাপার নিয়ে আমার কেমন জানি লাগছে।”
” কি ব্যাপার?”
” মা যে বললেন আমাদের জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়েছেন? সবাই না খেয়ে আমাদের জন্য অপেক্ষাও করছিল। আর আমরা কি-না রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে আসলাম! এটা এখন জানাজানি হলে কি হবে?”
” জানানোর দরকার কি? না জানালেই হলো!”
” কিন্তু আমার যে একটুও ক্ষিদে পায়নি। মা তো খেতে ডেকেছেন।”
” তুমি কি কিছুই খেতে পারবে না?”
” চেষ্টা করবো। কিন্তু যদি বুঝে যায়?”
” বুঝবে না। এতো সিলি ব্যাপার নিয়ে টেনশন করতে হয় না রে পিচ্চি!”
ফারদিন তোয়ালে বের করে ওয়াশরুমে চলে গেল। মেহেকের চিন্তা একটুও কমল না। তার নিজেকে বিরাট অপরাধী মনে হচ্ছে। সবাই তাদের জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করছিল। আর তারা ইচ্ছেমতো দেরি করে আসল। কাজটা স্বার্থপরের মতো হয়ে গেল না? ফ্রেশ হওয়ার পর মেহেক ডাইনিং রুমে গেল। সেখানে সবাই গুল্প-গুজব করতে করতে টেবিলে খাবার সাজাচ্ছিল। আজ সবাই কত হাসি-খুশি! বাড়িটা গমগম করছে। তিশা মেহেকের কাছে এসে তার চেহারায় আলতো স্পর্শ করে বলল,” কেমন আছো?”
” ভালো আছি ভাবী। আপনি কেমন আছেন?”
” খুব ভালো। এসো নাস্তা খাবে। জানো, আজকে তোমার শাশুড়ি মা নিজে রান্না করেছেন তোমার জন্য! বুঝো কত টান!”
মেহেক আহ্লাদী হাসি দিল। তিশা হাত ধরে তাকে টেবিলে নিয়ে এলো। দাদু মেহেককে দেখে বললেন,”
মেহেক,এদিকে এসো। তুমি আজকে আমার পাশে বসবে।”
তিশা মেহেককে দাদুর কাছে নিয়ে গেল। বসার জন্য চেয়ারটাও টেনে দিল। একটু পর ফয়জুন্নিসা এসে মেহেকের প্লেটে নিজের হাতে বানানো গ্রিল স্যান্ডউইচ তুলে দিলেন। ইশশ, মেহেকের আনন্দে চোখ টলমল হয়ে আসছিল৷ সবাই তাকে কত ভালোবাসছে। এতো সুখ বুঝি তার ভাগ্যে ছিল! দাদু মেহেককে চাপা গলায় জিজ্ঞেস করলেন,” তুমি একা কেন? গাঁধাটা কই?”
মেহেক হেসে বলল,” আমাকে যেতে বলে উনি ল্যাপটপ নিয়ে বসেছেন। মনে হয় একটু পর আসবে।”
” আচ্ছা ঠিকাছে।”
সুজি, পূর্বিরা এমনভাবে ফয়জুন্নিসার সাথে গল্প করছে যেনো মনে হচ্ছে তিনিও তাদের বন্ধু। মেহেকের সবার মাঝখানে বসে খাবার খেতে অনেক ভালো লাগছিল। মনে হচ্ছিল সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ! কিন্তু পেট ভরা থাকায় খেতে খুব অসুবিধা হচ্ছিল। এদিকে শাশুড়ী মা উদগ্রীব হয়ে আছেন মেহেকের খাবার কেমন লেগেছে জানার জন্য। মেহেকের এমনিই খাওয়া-দাওয়ার প্রতি অনীহা আছে। তারপর উপর ভরা পেটে সে খাবারের টেস্টই বুঝতে পারছে না। তার কাছে প্রত্যেকটা বাইট পাহাড়ের সমান ভারী মনে হচ্ছে। অথচ সবাই কি আনন্দ করে খাচ্ছে! মেহেক ওদের মতো খেতে পারছে না। ফয়জুন্নিসা জিজ্ঞেস করলেন,” সুজি, খাবার কেমন লাগছে?”
মেহেক এতে আরও ভয় পেল। কখন জানি তাকে জিজ্ঞেস করে। সুজি খেতে খেতে উত্তর দিল,” অনেক ভালো হয়েছে আন্টি। আপনার বার্থডেতে ফারদিন যেই চিকেন স্যান্ডউইচ বানিয়েছিল একদম সেটার মতো লাগছে।”
এই কথা শুনে মেহেক বিস্মিত হয়ে বলে উঠলো,” ফারদিন চিকেন স্যান্ডউইচ বানায়?”
সুজি উত্তর দিল,” হ্যাঁ! শুধু চিকেন স্যান্ডউইচ কেন? বিরিয়ানি থেকে শুরু করে ইটালিয়ান,চাইনিজ,মেক্সিকান,সবকিছুই ও বানাতে পারে। আর একেকটা ডিশ যে কি ইয়াম্মি হয়! আমার তো ভাবতেই জীভে পানি চলে আসছে।”
পূর্বি হেসে বলল,” ওর আবার ফারদিনের রান্না খুব পছন্দ। ডোন্ট মাইন্ড, এই রান্নার গুণ দেখেই কিন্তু ফারদিনের প্রেমে পড়েছিল।”
শেষ কথাটা পূর্বি ফিসফিস করে মেহেকের কানে কানে বলল। মেহেক গলার খাবার গিলতে পারছিল না। অনেক কষ্টে ঢোক গিলে বলল,” ফারদিনের রান্নার গুণ আছে?”
পূর্বি বলল,” গুণ মানে? প্রতিভা! জ্বলন্ত প্রতিভা। যে একবার ওর রান্না খায় সেই ফ্যান হয়ে যায়। আর ইউটিউবে তো ওর দশ মিলিয়ন ফরোয়ার্স ওয়ালা চ্যানেলও আছে! আমরা মাঝে মাঝে ওর বানানো খাবার দিয়ে ভ্লগ করি। ”
মেহেক নাকে-মুখে কেশে উঠল। সুজি অবাক হয়ে বলল,” তুমি কি জানতে না এসব? ”
আনজীর ঠাট্টার স্বরে বলল,” জানলে কি আর বিষম খেতো?”
ওয়াসীম মাথায় হাত দিয়ে বলল,” ফারদিন তো আস্তো শয়তান! মেহেককে কিছুই জানায়নি?”
সুজি বলল,” আরে শয়তানির কি আছে এখানে? তোর মতো নিজের প্রশংসা ও নিজেই করবে নাকি? আমরাই তো এসব বলবো। শোনো মেহেক, কপাল করে দারুণ একটা হাসব্যান্ড পেয়েছো। সারাজীবন শুধু মজার মজার খাবার খেয়েই কাটিয়ে দিতে পারবে।”
ফয়জুন্নিসা বললেন,” তুমি এখন যেই সসটা খাচ্ছো সেটাও কিন্তু আমার ছেলের তৈরী।”
মেহেক অবাক হয়ে সসের দিকে তাকাল। তার নিজেকে এখন বড়সড় একটা ছাগল মনে হচ্ছে! সেদিন রাতে ফারদিন তাকে কতবড় একটা মিথ্যা বলে রান্নাঘরে পাঠিয়েছিল। গতকাল মেহেকও বোকার মতো তাকে ভালোবাসার প্রমাণ দেওয়ার জন্য রান্না করতে বলেছিল। যে রান্না ফারদিনের বা’হাতের কাজ! কি যেন বলেছিল ফারদিন? নাথিং ইজ ইম্পসিবল ইন লভ! কত্তবড় চিটার! মেহেকের ইচ্ছে করছে এখনি টেবিল ছেঁড়ে উঠে গিয়ে ফারদিনকে কিছু কঠিন কথা শোনাতে। কিন্তু সবার সামনে সেটা করতেও পারছে না। ভেতরে ভেতরে সে আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলছে। ফয়জুন্নিসা হঠাৎ বললেন,” তুমি খাচ্ছো না কেন মেহেক? খাবার ভালো হয়নি?”
মেহেক মিষ্টি হেসে বলল,” খুব ভালো হয়েছে মা।”
মেহেকের হাসিটা দেখে ফয়জুন্নিসা মনে মনে আপ্লুত হলেন। নতুন বউকে পেয়ে তিনি ভীষণ খুশি। তিনি তো প্রথমে বিয়েটাই মানতে চাননি। ফারদিনকে অনেক বার বুঝিয়েছেন যাতে এতোবড় ভুল না করে। কোনো আগ্রহ ছাড়া, শুধু বাগানবাড়ি ফিরে পাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি অপরিচিত, ভিন্ন পরিবেশের মেয়ে বিয়ে করা কি ঠিক? কিন্তু এখন ফয়জুন্নিসার মনে হচ্ছে ফারদিন সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিল। কারণ মেয়েটা চমৎকার! দেখে একদম বোঝা যায় না যে সে গ্রামের মেয়ে। বরং চেহারা,কথা-বার্তা,ব্যবহারে আধুনিকতার ছোঁয়া আছে। ফয়জুন্নিসা প্রথম দেখাতেই মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছেন। মেয়েটি দেখতেও অসম্ভব রূপবতী। ছবিতে তিনি আগেও দেখেছিলেন। কিন্তু তখন ভাবেননি যে ছবির মতো বাস্তবেও মেয়েটি দেখতে এতো সুন্দর হবে। কারণ আজ-কাল ক্যামেরাতে সবাই সুন্দর। আর মেহেক বাস্তবে আরও সুন্দর! সব মিলিয়ে ফয়জুন্নিসা ছেলের বউ নিয়ে ভীষণ সন্তুষ্ট। মেহেক গ্রিল স্যান্ডউইচটা ছুড়ি দিয়ে কেটে অর্ধেক করে নিল। তিশা সাথে সাথে বলল,” কাটছো কেন? এইটুকু স্যান্ডউইচ বুঝি তুমি পুরোটা খেতে পারবে না?”
মেহেক হকচকিয়ে গেল। কি উত্তর দিবে বুঝতে পারল না। পূর্বি বলল,” মেহেক অবশ্য অনেক লিমিট রেখে খায়৷ আমি খেয়াল করেছি।”
তিশা হতবাক কণ্ঠে বলল,” তাই বলে এতো কম? একটা পাঁচ বছরের বাচ্চাও এর চেয়ে বেশি খায়।”
সুজি বলল,” ওর মনে হয় আজ পেট ভরা। তোমরা কি বাহিরে থেকে খেয়ে এসেছো মেহেক?”
ওয়াসীম বলল,” হ্যাঁ এইটা হতে পারে। ফারদিন ছিল না ওর সাথে? ও আবার না খেয়ে বাসায় আসবে? তোদের মনে হয়?”
আনজীরও তাল মিলিয়ে বলল,” তাই হবে হয়তো।”
ফয়জুন্নিসা মেহেকের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন,” তাই নাকি মেহেক?”
সবার সহজ-স্বাভাবিক ব্যবহার দেখে মেহেক কথাটা স্বীকার করার সাহস পেল। আলতো মাথা নেড়ে বলল,” জ্বী মা। আমরা রেস্টুরেন্ট থেকে মোরগ পোলাও খেয়েছিলাম।”
ফয়জুন্নিসা মনে মনে আহত হলেন। বাহ, ছেলের তো ভালোই পরিবর্তন হয়েছে। যে ছেলে মা ছাড়া কিছুই বুঝতো না সে এখন মায়ের খাওয়ার খোঁজটা পর্যন্ত নেয় না। মা যে না খেয়ে অপেক্ষা করছেন সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। বউ নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে এলো। সুন্দর! খুব সুন্দর! বিয়ের পর ছেলেরা বদলে যায় এই কথার সত্যতা হারে হারে টের পেলেন আজ। ফয়জুন্নিসা নিজেকে সামলে হাসার চেষ্টা করে বললেন,” তাহলে তো তোমার ক্ষিদে থাকার কথা না। জোর করে খাওয়ার দরকার নেই। উঠে যাও।”
মেহেক উৎফুল্ল হয়ে বলে ফেলল,” থ্যাঙ্কিউ মা।”
তারপর দ্রুত হাত ধুঁয়ে খাবার টেবিল ছেঁড়ে উঠে গেল। ফয়জুন্নিসা গম্ভীর চোখে তাকিয়ে দেখলেন শুধু। মেহেক ক্ষীপ্রগতিতে ফারদিনের ঘরে যাচ্ছে। মেহেকের সাথে মিথ্যে বলার পরিণাম আজকে বুঝবে ফারদিন।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে