৭
#অথৈ_মহল
#নুরে_হাফসা_অথৈ
____
অথৈ কলে ওর মায়ের সাথে কথা বলছে। এক ভাবে বকবক করেই যাচ্ছে। নিবিড় রুমের সামনে দিয়ে যাবার সময় একবার উঁকি দেয়। তারপর আবার চলে যায় সেখানে থেকে। নুডুলস বানিয়ে নিয়ে এসে অথৈর সামনে রাখে। টমি কে নিয়ে আবার চলে যায়।
অথৈ কথা শেষ করে চলে আসে নিচে।
রিদ কে কল করে।
“রিদ ভাইয়া, ”
“হ্যাঁ, অথৈ বলো। ”
“তোমরা না বললে আমি সুস্থ হয়ে গেলে আমায় নিয়ে ঘুরতে যাবে? ”
“হ্যাঁ, যাব তো। ”
“আমি সুস্থ এখন। চলো যাই সবাই। ”
রিদ কিছুক্ষণ ভাবে। তারপর বলে,
“আচ্ছা শুনো, আমি ওদের থেকে জেনে নেই। দেখি ওরা কবে যেতে চায়। সবারই তো ফ্রি হতে হবে তাই না? ”
“হ্যাঁ, তো। তুমি ওদের কে বলো এখনি। আমি তো নিবিড় কে ভয়ে কিছু বলতেই পারছি না। বলতে গেলেই যেভাবে তাকায়। ভয়ে আমার শরীর জমে যায় একদম। ”
অথৈ এর কথা শুনে রিদ হু হা করে হাসতে থাকে।
“নিবিড় কে এত ভয় পাও কেন তুমি? বেচারা কত কেয়ার করে তোমার। ”
অথৈ ঠোঁট উল্টায়। ভাবতে থাকে কেন সে নিবিড় কে ভয় পায়। তারপর কল কেটে ধুপ ধাপ পা ফেলে নিবিড়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
নিবিড় জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে।
“কি হলো, হুট করে এখানে এসে দাঁড়িয়ে পড়লে কেন? ”
“আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই। ”
“বলো। ”
“আমি কিন্তু তোমাকে আর ভয় পাই না। ”
“ভয় পেলে আবার কবে? ”
নিবিড় চলে যাচ্ছিল বাইরে। অথৈ আহাম্মক হয়ে যায় যেন। ও নিবিড় কে ভয় পেতো মাঝে মাঝে এটা নিবিড় জানেই না। সেই ভেবে ওর আফসোস হচ্ছে। অবশ্য এটা ভাবার কোন বিষয়ই না। নিবিড় যেতে যেতে আবার কিছু একটা ভেবে ঘুরে আসে। অথৈ ও তখন সামনে যাচ্ছিল। আচমকা ধাক্কা লাগে দুজনের।
অথৈ চিল্লিয়ে ওঠে।
“জিম করে শরীর কি পাথর বানিয়েছো নাকি গো? এত শক্ত কেন? ”
কথাটা বলেই অথৈ নিবিড়ের হাতের পেশিতে চাপ দিয়ে পরিক্ষা করতে থাকে আসলেই এটা শরীর নাকি পাথর। নিবিড় তাকিয়ে থেকে ওর এই দুষ্টুমি গুলো দেখছে।
“দেখা শেষ তোমার? ”
অথৈ মাথা তুলে তাকায়। মাথা দু দিকে ঝাঁকায়। আবার হাতের পেশিতে চাপ দেয়। নিবিড় এবার ও কিছু বলে না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করে,
“নুডলস বানিয়ে রুমে রেখে এসেছিলাম। খেয়েছিলে কি? ”
এই কথা শুনে ও মাথায় হাত দিয়ে এক দৌড়ে উপরের রুমে চলে যায়। নিচে থেকে নিবিড় ডাকছে।
“অথৈ, এতক্ষণে নুডলস ঠান্ডা হয়ে গেছে ওইটা আর খেতে হবে না। চলে আসো। ”
অথৈ রুম থেকে মাথা বের করে তাকিয়ে থাকে। দেখে মনে হচ্ছে কেউ একজন ওর মাথা কে*টে দেয়ালে বাঁধিয়ে রেখেছে।
নিবিড়ের কথা শুনে আবার লাফিয়ে নিচে নেমে আসে।
“আমি তো ভাবলাম তুমি বকবে। ”
“বকবোই তো। এত ছোটাছুটি, লাফালাফি কিসের শুনি? ধীরেসুস্থে যেতে পারো না? সেদিনই না পরে গিয়ে কোমরে ব্যথা পেলে? এমন করলে আর ঘুরতে যাওয়া হবে না বলে দিলাম কিন্তু। ”
অথৈ মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যায়। চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দেয়, তুমি না নিয়ে গেলেও কাব্য ভাইয়া আমাকে নেবেই। হুহ!
_____
কাব্য পরের দিন সকালে অথৈ কে ডাকতে থাকে। ও নিচে নেমে আসে।
“চল শপিং এ যেতে হবে। ”
“কেন? ”
“তোর কি কি কেনাকাটা আছে করে নিবি। ”
“আমার তো সব কিছুই আছে। ”
“গা*ধী, ঘুরতে যাব আমরা ২ দিন পর। তাই আরও কিছু কিনবি। ”
“কিহ! সত্যি আমরা ঘুরতে যাচ্ছি? ”
“হ্যাঁ, চল এবার। ”
অথৈ গাড়িতে উঠে পরে।
“নিবিড় কে বললে না যে। যদি বকে? ”
“বলতে হবে না। ও জানে তুই আমার সাথে আছিস। ”
“আমরা কোথায় ঘুরতে যাব? ”
“সেটা পরে বলব। আগে সিলেটের আশেপাশের জায়গা গুলো তে তোকে ঘুরতে নিয়ে যাব। পরে এক সময় বাইরে কোথাও আমরা সবাই মিলে যাব। ”
অথৈ আঁতকে ওঠে প্রথমে। তারপর খুশিতে হাত-পা ছুড়ে নাচতে শুরু করে গাড়ির মধ্যেই। ওর নাচানাচি দেখে টমি ও গাড়ির মধ্যে লম্ফ-ঝম্ফ শুরু করে দেয়। কাব্য হেসে ওঠে।
“থাম রে এবার। নয়তো তোর এই লাফ ঝাঁপের চক্করে এক্সিডেন্ট করে ফেলব। ”
অথৈ থেমে যায়।
“এই ভাইয়া আমার হাতে চিমটি কাটো তো একটা। ”
“কেন তোর কি বিশ্বাস হচ্ছে না নাকি। ”
“উহু, হচ্ছে না তো। ”
“সত্যি সত্যি যাচ্ছি ইন শা আল্লাহ। ”
“ইয়েএএএ! দারুন মজা হবে কিন্তু। ”
“তুই দেখলে একদম অবাক হয়ে যাবি। এত সুন্দর জায়গা। ”
“আসলেই? ”
“হ্যাঁ, ”
“এমনিতেই তো তোমাদের সিলেট শহরটা অনেক সুন্দর। ”
“সিলেটের সব সুন্দর জায়গা তোকে দেখাবো। একদম পাগল হয়ে যাবি। ”
অথৈ আরও খুশি হয়। আনন্দ গুলো প্রকাশ করবে কিভাবে ভাবতে পারে না।
_____
অথৈ নিবিড়ের সব পোশাক ভাজ করে ব্যাগে রাখা দেখছে দাঁড়িয়ে। কি সুন্দর করে শার্ট ভাজ করে। অথচ ও সব জামা কাপড় একদম দলাই মলাই করে রেখে দেয়। আজকে অবশ্য নিবিড় ওর ব্যাগ গুছিয়ে দিয়েছে। এই শীতে ও নিবিড় ঘেমে যাচ্ছে। টি-শার্ট অর্ধেক ভেজা। অথৈ এর মনে হচ্ছে চোখ দুটো নিবিড়ের দিকে টানছে।
“এভাবে তাকিয়ে কি দেখো? ”
“কই কিছু না তো। ”
নিবিড় ওর দিকে এগিয়ে আসে। দুষ্টমি করে বলে,
“পুরুষ মানুষ কি আগে কখনো দেখনি তুমি? ”
অথৈ ও বা কম যাবে কেন? সে ও চোখ টিপে আরেক দফা দুষ্টুমি করে।
“পুরুষ মানুষ তো অনেক দেখেছি জনাব। কিন্তু এমন সুদর্শন পুরুষ তো আর কোনদিন দেখিনি। ”
নিবিড় জোরে হেসে ফেলে।
“ফাজলামি রাখো। যাও গিয়ে ঠান্ডা পানি নিয়ে আসো। গলা শুকিয়ে গেছে। ”
“এই শীতে কারোর গলা শুকায়? ”
“দেখছো না ঘামে ভিজে গেছি? ”
অথৈ গ্লাসে পানি ঢালে। কি মনে করে যেন ওই গ্লাস থেকে অল্প পানি খেয়ে নিবিড়ের জন্য নিয়ে যায়। নিবিড় ঢকঢক করে পুরো গ্লাস পানি শেষ করে। পানি খাওয়ার সময় যখন নিবিড়ের কণ্ঠনালী উঠানামা করছিল। তখন সেই দৃশ্য দেখে অথৈর আবার গলা শুকিয়ে যায়।
বার বার ভাবতে থাকে, নিবিড় কে দেখে ওর এমন কেন লাগে। প্রেমে পরে যাচ্ছে নাকি। কি সর্বনাশ!
নিবিড় বুঝার চেষ্টা করে অথৈ এর মনের অবস্থা। ওর ভেতর কি চলছে সেটা। আদৌ কি অথৈ ওকে ভালোবাসতে শুরু করেছে? নাকি নিবিড়ের ভ্রান্ত ধারণা সবটা।
কে জানে?
অথৈ নিবিড়ের বিছানায় বসে থাকে। পা নাচায়। ভ্রু বাঁকিয়ে তাকিয়ে থাকে। নিবিড় শুধু আড়চোখে অথৈ এর এই কান্ড কারখানা দেখছে। টমি আসে। বিছানায় গড়াগড়ি খায়।
“নিবিড়, কত কিছু নিচ্ছো তুমি? ”
“আমি সব দরকারি জিনিস নিচ্ছি বুঝলে? ”
অথৈ আর কথা বাড়ায় না। নিবিড়ের বুকশেলফ থেকে একটা বই বের করে। কিন্তু পড়তে মন চায় না। কয়েক পৃষ্ঠা উল্টিয়ে আবার আগের মতো রেখে দেয়।
নিবিড় বুঝতে পারছে অথৈ ঘুরতে যাওয়ার জন্য কতটা এক্সাইটেড হয়ে আছে। ওর এই আনন্দ টুকু দেখতে ভালো লাগছে। এখানে নবনী থাকলে বেশ ভালো হতো। বাড়িটা মাথায় তুলে ফেলতো আজ। কবে যে ফিরবে ওরা। আবার কল দিতে হবে।
____
চলবে