৩
#অথৈ_মহল
#নুরে_হাফসা_অথৈ
_____
চলো তোমাকে বাইরে নিয়ে যাই। বাইরে ঘুরে দেখলে তোমার মন আরও ভালো হয়ে যাবে।
অথৈ কে নিয়ে নিবিড় বাইরে গিয়ে দাঁড়ায়। চারপাশে শুধু সবুজে ঘেরা পাহাড়। মাঝখানের পাহাড়ের উপর নিবিড় দের বাসা। আশেপাশের সব চা শ্রমিকরা চা পাতা তুলছে। তাদের সেই নিজস্ব পোশাক। কাঁধে একটা ঝুড়ি। দুটো পাতাসহ কুড়িটা দুই আঙুল দিয়ে সুন্দর করে ছিঁড়ে ঝুড়ি তে রাখছে। কি সুন্দর দৃশ্য! শিল্পীর রংতুলি তে আঁকিয়ে রাখার মতো একটা দৃশ্য।
অথৈ কে এমন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিবিড় বলল,
“তোমার কফি কিন্তু ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ”
নিবিড়ের কথায় অথৈ এর ঘোর কাটে। কফিতে চুমুক দেয়।
“বাহ! তোমার হাতের কফি ও কিন্তু দারুণ মজার। ”
“একটা ক্যাফে খুলে ফেলব নাকি তবে? ”
নিবিড়ের দুষ্টুমি কথা শুনে অথৈ হেসে ফেলে।
“হ্যাঁ, তুমি চাইলে নতুন ক্যাফে খুলে ফেলতেই পারো। আমি তখন তোমার ক্যাফে তে নিয়মিত যেয়ে কফি খেয়ে আসব। ”
“ইশ! তাহলে তো হয়েই গেল। ”
দুজনের ঠোঁটেই হাসি লেগে থাকে। অথৈ কিছু একটা ভাবে।
“জানো এখন আমার ছোট বেলার কথা খুব মনে পড়ছে। আমি যখন ছোট ছিলাম। তখন আব্বু আমাকে একটা চাকমাদের পোশাক কিনে দিয়েছিল। ওইটা পরে নাকি আমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছিল। তাই আব্বু ছবি তুলে বড় করে বাঁধাই করে তাদের রুমে রেখে দিয়েছে। ”
“সেই আব্বু কে ছেড়ে এসে কষ্ট লাগছে না? ”
“হ্যাঁ, হচ্ছে তো। ”
“বাসায় যাবে? ”
“না। গেলেই আমাকে বিয়ে করিয়ে দেবে। কিন্তু এখন আমি বিয়ে করতে চাই না। ”
“আচ্ছা। ”
“আমার পড়ালেখা এখনো কমপ্লিট হয়নি। পড়ালেখা শেষ করব। জব করব। তারপর বিয়ে নিয়ে ভাববো। ”
“বাহ! তাহলে তাই করবে।
হঠাৎ অথৈ একটা আবদার করে বসলো। ও নাকি চাকমাদের পোশাক পরে চা পাতা তুলতে যাবে। অগত্যা ওর কথা রাখতে নিবিড় অথৈর জন্য কিছু শাড়ি, চাকমাদের পোশাক আর ও যেগুলো পরে সব কিনে নিয়ে আসে। দুজন খাওয়া দাওয়া শেষ করে নেয়।
“নিবিড়? ”
“হু? ”
“তুমি কি জব করো? ”
“না। বিজনেস আছে আমাদের। ”
“তোমার বাবা এখানে আসে না? ”
“না। বাবা-মায়ের ডিভোর্স হবার পর বাবা আরেকটা বিয়ে করে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন। আমাকে ও নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু মা যেতে দেয়নি। আমার ও ইচ্ছে হয়নি বাবার সাথে থাকার। যেখানে শান্তি পাবো না সেখানে গিয়ে কি লাভ। বাবা মাঝে মাঝে ফোন করে। খোঁজ নেয়। এইতো। ”
“আমি কি তোমায় কষ্ট দিয়ে ফেললাম? ”
“আরে ধুর। এগুলো অনেক পুরনো কথা। সব পুরনো হয়ে গেছে। এখন সব স্বাভাবিক লাগে। সবাই সবার জায়গা থেকে ভালো থাকতে চায়। বাবা কেন তার ব্যতিক্রম হবে? যাইহোক, অনেক কথা হয়েছে। এবার এগুলো পড়ে এসো তো। রোদ উঠে গেছে। তোমার আর চা পাতা তোলা হবে না পরে। অবশ্য এখানে রোদ বৃষ্টির ঠিক নেই। এই রোদ তো এই বৃষ্টি। ”
অথৈ পোশাক টা পড়ে নিল। তারপর আদিবাসীদের মতো করে সেঁজে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। নিবিড় কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকে। ও ভাবতে থাকে, একটা মানুষের মাঝে এত রকমের রুপ, সৌন্দর্য কিভাবে থাকতে পারে। ঠোঁটের উপরের ওই ছোট্ট তিলটা যেন সৌন্দর্য আরও দ্বিগুণ করে দিয়েছে।
অথৈ ওর দিকে তাকাতেই নিবিড় অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। দৃষ্টি সংবরণ করে। নিজেকে এই বলে বোঝায় যে, অন্য কোন মেয়ের দিকে এভাবে তাকানো উচিত নয় নিবিড়। দৃষ্টি নামা।
“এই, আমাকে কেমন লাগছে বলো তো? ”
নিবিড় না চাইতেও আরেকবার তাকায়।
“রঙিন প্রজাপতির মতো লাগছে। ”
অথৈ খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।
“সত্যি? ”
“১০০% সত্যি। ”
“প্রেমে পরেছো? ”
“এখনো পড়িনি। তবে পড়তে পারি। ”
নিবিড় চোখ টেপে। অথৈ চা বাগানে চলে যায়। নিবিড় ওকে ধরে ধরে পাহাড় থেকে নামিয়ে চা বাগানে নিয়ে যায়। অথৈ চা পাতা তুলতে থাকে। মাঝে মাঝেই হাসি দিচ্ছে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে। এই মুহূর্তটা ক্যাপচার না করলে চলে? একদমই না।
নিবিড় ফোন বের করে ক্যামেরা অন করেই অথৈর কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। যদিও অনুমতি ছাড়া কারোর ছবি তুলতে হয় না। কিন্তু কিছু সুন্দর মুহূর্ত পেতে চাইলে অনুমতির প্রয়োজন পরে না।
একটা ছবি তে অথৈ মুখে হাত দিয়ে হাসছে। প্রাণোচ্ছল সেই হাসি। আরেকটা তে চা পাতায় হাত দিয়ে ঝুঁকে আছে। আরেকটা তে কোমড়ে দুই হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। এমন আরও কিছু সুন্দর ছবি তুলেছে।
নিবিড় এই মুহূর্তে একটা সুখানুভূতি অনুভব করতে থাকে। যাকে বলা হয় “প্রেমময় সুখানুভূতি”।
হঠাৎ অথৈ ডেকে ওঠে।
“এই নিবিড় এদিকে এসো। ”
“হ্যাঁ, বলো। ”
“তুমিও চা পাতা তুলো। ভালো লাগবে। ”
তারপর দুজনেই চা পাতা তুলতে তুলতে গল্প জুড়ে দেয়। ওদের পাশেই কিছু চা শ্রমিক ছিল। তারা নিবিড় আর অথৈ কে দেখে মুচকি হাসে। প্রতিউত্তরে ও নিজেও হাসি দেয় ওদের দিকে তাকিয়ে।
অথৈ ওদের দিকে গভীর ভাবে তাকায়। দুজন মহিলা চা পাতা তুলছে। বাকিরা কিছুটা দূরে। শ্যামবর্ণের মানুষ গুলো কে দেখতে সুন্দর লাগছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তাদের গায়ের রং এমন ছিল না। রোদের তাপে রোজ কাজ করে অযত্নে মুখ পুড়ে গেছে এমন লাগছে। কেমন মায়া মায়া ভাব।
অথৈ নিবিড়ের শার্ট খাঁমচে ধরে। কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে,
“এই আমার না ওদের সাথে কথা বলতে ভীষণ ইচ্ছে করছে। ওরা কি আমার সাথে কথা বলবে? ”
নিবিড় ওর কথায় খুশি হয়। অহংকারহীন একটা মেয়ে। সবাই কিন্তু এদের সাথে কথা বলতে চায় না। উপরন্তু তাদের সংস্পর্শে বিরক্ত হয়। এজন্যই বোধহয় অথৈ বাকিদের থেকে আলাদা।
নিবিড় ও অথৈ এর মতোই ফিসফিস করে বলে,
“অবশ্যই কথা বলবে। কেন বলবে না। এরা কিন্তু অনেক আন্তরিক। বাইরে থেকে কেউ আসলে ভীষণ খুশি হয়। অতিথি পরায়ন তারা। ঘরে যাই থাকুক না কেন সেটা দিয়েই যত্ন করে আপ্যায়ন করার চেষ্টা করে। ”
“বাহ! দারুণ তো। ওরা কি আমাদের মতো করেই কথা বলবে? ”
“হ্যাঁ, আমাদের মতোই কথা বলবে। দাঁড়াও আমি কথা বলিয়ে দেই। ”
নিবিড় গিয়ে ওই দুই চা শ্রমিক কে ডেকে কথা বলে। ওর সাথের মেয়েটা ওদের সাথে কথা বলতে চায় শুনেই ওরা খুশি হয়। একজনের নাম মিতালী রানী আরেকজন স্বর্ণা রানী।
অথৈ ওদের সাথে হেসে সুন্দর ভাবে কথা বলে,
“আপনারা রোজ এখানে কাজ করেন? ”
“সোমবার থাইকা শনিবার কাম করি। সকাল ৮টা থাইকা সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত।
“অনেক্ষণ কাজ করতে হয় তো আপনাদের। বেতন ও মনে হয় অনেক দেয়। ”
ওর কথা শুনে মিতালী রানী ফিক করে হেসে দেয়।
“কি যে কও না মাইয়া। বেতন কই বেশি পাই। সারাদিন কাম কইরা পাই ১২০ টাকা। এই দিয়া কি সংসার চলে কও? ”
“বলেন কি! এত কম কেন? আমি ভাবলাম ৪-৫ হাজার টাকা দেয় হয়তো বা। ”
মিতালী আর স্বর্ণা এবার এক সাথে হেসে দেয় ওর কথা শুনে। এসব কথা নিবিড়ের জানা। সে চুপচাপ ওদের কথা শুনছে। অথৈ এর এই আগ্রহ গুলো ওর ভালো লাগছে। নিবিড় অথৈ কে এই ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেয়।
“অথৈ শোনো, ব্যাপারটা একদিনে ১২০ টাকা এরকমও না। মানে একজন চা শ্রমিক যদি দিনে ২৪ কেজি চা পাতা তুলতে পারে তাহলে সে পাবে ১২০ টাকা। বেশিরভাগ শ্রমিক ২৪ কেজি তুলতে পারেন না। ১৪-১৫ কেজি তোলেন সর্বোচ্চ। আর একটু বয়স্ক যারা তাদের চা পাতা তোলার পরিমাণ আরও কম। ফলে তারা পুরো টাকাটা ও পান না। ”
“কি বলছো! এটা কিন্তু ঠিক না। তাদের বেতন বাড়ানো দরকার। এই অঞ্চলে চায়ের চেয়ে রোমাঞ্চকর জিনিস আর কী আছে? আমাদের প্রেম, আড্ডা, গল্প, গান, বিপ্লব, বিদ্রোহ কোনো কিছুই চা ছাড়া হয় না। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, রেস্তোরাঁয় এক কাপ চায়ের দাম ৩০০-৪০০ টাকা। বড় অভিজাত রেস্তোরাঁয় আরও বেশি দাম।
আর এই দিকে যাদের মাধ্যমে আমরা চা পাতা পাচ্ছি। তাদেরকেই সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করতে পারছি না। বিষয়টা দুঃখজনক। ওদের সংসার কিভাবে চলে আমার মাথাতেই আসছে না। ”
“চা শ্রমিক রা অনেক দিন থেকেই দৈনিক ৩০০ টাকা পারিশ্রমিকের জন্য আন্দোলন করছে। আশাকরি এটা হয়ে যাবে। ”
“হয়ে গেলেই ভালো। ”
এর মাঝেই চা শ্রমিকদের মধ্যাহ্নভোজনের সময় হয়ে যায়। সবাই খেতে যাচ্ছে। তখনই স্বর্ণা নামের মেয়েটা নিবিড় আর অথৈ কে টেনে ধরে সামনের দিকে নিয়ে যায়। অথৈ বুঝতে পারে পারছে না কেন নিয়ে যাচ্ছে ওদের। নিবিড় ঠোঁট টিপে হাসছে। ও জানে কেন নিয়ে যাচ্ছে ওদের।
অথৈ দেখলো সবাই গোল হয়ে বসেছে। এখন ওদের খাবারের সময়। এটাও বুঝলো ওদের কে খাওয়ানোর জন্যই সাথে জোর করে স্বর্ণা নিয়ে এসেছে। নিবিড় কিছু বলছে না। অথৈ ওদের দেখে অবাক হচ্ছে।
অস্থির হয়ে বলে,
“আমরা খাব না কিছু। বাসায় চলে যাব এখনি। আপনারা খেয়েনিন। ”
“আমরা গরিব হইলে কি হইব, কাউরে কিন্তু অসম্মান করি না। স্যার এর সাথে আপনে প্রথম আইছেন। না খাওয়াইয়া তো যাইতে দিমু না। অল্প একটু খাইয়াই লাগবো। ”
অথৈ আনন্দিত হয়। এভাবে কেউ অচেনা মানুষদের আদর করে তা জানতেই পারতো না এখানে না আসলে। নিবিড়ের সাথে অথৈ ওদের মাঝে বসে পড়ে।
পরিশ্রান্ত কর্মযজ্ঞের ব্যস্ততায় ক্ষুধা জানান দেয়। পেটপূর্তির আয়োজন না হলে বাকি কাজ যে কাঙ্ক্ষিত গতিতে শেষ হবে না! তাই চাই বিরতি। খেতে হবে মধ্যাহ্নের খাবার। দরিদ্র শ্রমিকদের কপালে দামি খাবার জোটে না কোনো দিনই। তবে তারা যেটি খেয়ে থাকেন তা অনেকের কাছেই অজানা। অবিশ্বাস্যও বটে। দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেটে চা পাতার কুঁড়ি দিয়ে তৈরি হয় চা শ্রমিকদের ঐতিহ্যবাহী ভর্তা। মুখরোচক এই বিশেষ ভর্তার নাম ‘পাতিচখা।’
কথা প্রসঙ্গে জানা যায়, তারা কেউ সকালে খেয়ে বের হন। কারও যদি সময় না থাকে তবে ছুটতে হয় খাবার নিয়েই। মধ্যাহ্নের খাবার বলতে সঙ্গে নিয়ে আসেন কেউ চাল ভাজা, কেউবা রুটি, কেউ কেউ মুড়ি, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা কিংবা শুকনো মরিচ এবং লবণ। সেগুলির সাথে চায়ের কুঁড়ির পাতা মিশিয়ে বানানো হয় বিশেষ ধরনের চা পাতার ভর্তা (পাতিচখা)। যা তাদের মধ্যাহ্নভোজের নিত্যসঙ্গী।
আলাপকালে জানা যায়, ক্লান্ত দুপুরে পাতিচখা খেয়ে দুর্বল স্নায়ু আবার সবল করে নেন। আবার শুরু হয় কর্মযজ্ঞ।
ওদের মধ্যেই একজন কচি পাতাগুলো একদম কুচিকুচি করে তাতে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, সেদ্ধ আলু আর চানাচুরকে সরিষার তেল দিয়ে সুন্দর করে মাখিয়ে নেয়। দেখতে এত সুন্দর আর লোভনীয় লাগছে যে অথৈর দেখেই জিভে পানি চলে আসছে।
একজন ভাতের পাত্র বের করে। ভাত গুলো বড় পাত্রে রেখে কাপড় দিয়ে বেঁধে রেখেছিল পাত্রের মুখটা। তাই এখনো হালকা গরম আছে। সবাই মিলে খাওয়া শুরু করলো। অথৈ গরম ভাতের সাথে পাতিচখা ভর্তাটা মাখিয়ে এক লোকমা মুখে নিয়ে শান্ত ভাবে খেয়ে নিল। তারপর খুশিতে জোরে একটা চিৎকার দেয়। উপস্থিত বাকি সবাই ওর চিৎকারে হকচকিয়ে যায়। নিবিড় ওর স্বভাব সম্পর্কে জানলেও বাকিদের তো জানা নেই।
নিবিড় সবাই কে শান্ত হয়ে খেতে বলে।
অথৈ সবাই কে জানালো খাবার টা কতটা মজার। এত মজার খাবার খুব কম খেয়েছে সে। চা শ্রমিকরা ও ওদের অল্প আপ্যায়ন করতে পেরেও খুশি হলো।
খাওয়া শেষে নিবিড় আর অথৈ সবার কাছে বিদায় নিয়ে চলে যায়। বিদায়ের সময় স্বর্ণা মিতালীসহ বাকিরা ও ওদের একবেলা করে খাওয়ানোর জন্য অনুরোধ করে। নিবিড় সবাই কে কথা দেয় সময় করে একদিন এক এক করে সবার বাড়িতেই নিয়ে যাবে অথৈ কে। ওরা সবাই খুশি হয়।
_____
“নিবিড় ছাদে যাও। আমি দু মগ চা নিয়ে আসছি এখনি। ”
“আজ কি জ্যোৎস্না বিলাস হবে নাকি হু? ”
অথৈ নিবিড়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে গলা টা নিচে নামিয়ে বলে,
“জ্যোৎস্না বিলাস হলে মন্দ হবে নাকি জনাব? ”
“উহু, একদমই না। ”
অথৈ চা বানিয়ে নিয়ে নিবিড়ের হাতে দেয়। নিবিড় চা’য়ে চুমুক দিয়েই অথৈ এর দিকে তাকিয়ে হাসে।
“ভালো হয়নি? ”
“চমৎকার হয়েছে। ”
“হি হি, জানি আমি। ”
“চাঁদটা অনেক সুন্দর তাই না? ”
“হ্যাঁ, পুরো আকাশ জুড়ে নক্ষত্ররা জ্বলজ্বল করছে। আর সবার মাঝখানে চাঁদটা যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। ”
“অসম্ভব সুন্দর একটা মুহূর্ত! ”
“আমার না চাঁদটা ধরে টুপ করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ”
“হা হা, তাই নাকি। ”
“হ্যাঁ, তো। ”
“অথৈ, ”
“হুঁ? ”
“চাঁদের কি অহংকার হয় না? ”
“কেন হবে? ”
“এই যে, কতশত প্রেমিক তার প্রেমিকা কে চাঁদ নিয়ে আসার কথা বলে। যদি সম্ভব হতো তবে বোধহয় এতদিনে আমরা আর চাঁদের আলো দেখতে পেতাম না। সব প্রেমিকরা এক মুঠো করে চাঁদ তার প্রেমিকার জন্য নিয়ে যেতো। ”
নিবিড়ের এমন মজার কথা শুনে দুজনেই হাসে। মাঝখানে টমি এসে দাঁড়িয়েছে। নিবিড় টমি কে কোলে নিয়ে বলে,
“কি রে টমি? চাঁদে যাবি? ”
টমি মিউ মিউ করে ঘাড় ঘুরিয়ে নেয়। যেন ও ঠাট্টা করে বলছে, এহ! নিজেরাই যেতে পারে না। আবার আমায় বলে।
______
পরদিন সকালে নিবিড় কি যেন খুঁজছে আর সিগারেট টানছে। আর নিবিড় যেদিকে যাচ্ছে। তার পেছন পেছন অথৈ ও সেদিকেই যাচ্ছে।
নিবিড় সেটা খেয়াল করে দাঁড়িয়ে যায়। অথৈ ও দাঁড়িয়ে থাকে। নিবিড় আবার অন্য জায়গায় যায়। অথৈ ও যায়।
ওর এমন কান্ড দেখে নিবিড় বলে,
“কি হচ্ছে? আমার পেছন পেছন ঘুরছো কেন? কিছু লাগবে? ”
অথৈ মাথা ঝাঁকিয়ে না সূচক মাথা নাড়ে।
“তাহলে? ”
“সিগারেট এর ঘ্রাণ টা আমার কাছে দারুণ লাগে। তাই তোমার পেছন পেছন ঘুরে ঘ্রাণ নিচ্ছি। ”
“সিগারেটের ঘ্রাণ তোমার ভালো লাগে! ”
“লাগে তো। ”
“অদ্ভুত মেয়ে তুমি! ”
“হি হি, এখন বুঝলে সেটা? আমি তো সবার থেকেই আলাদা। একদম অন্যরকম। ”
“বুঝলাম এখন থেকে আর বাসায় সিগারেট খাওয়া যাবে না। ”
“কেন? ”
“আমার সাথে সাথে তোমার আয়ু ও কমে যাবে। ”
“কচু হবে। ”
“আচ্ছা অথৈ শোনো, আমি বাইরে যাব একটু। দরকার আছে। তুমি বাইরের দরজাটা ভালো করে লক করে নিজের রুমে গিয়ে বসে থাকবে। একদম পাকনামি করে বাইরে বের হবে না। বাজে ছেলে আছে আশেপাশে অনেক। সুন্দর মেয়ে দেখলেই টুপ করে গিলে খাবে বুঝলে? ”
“এই ভয় দেখাচ্ছো কেন? ” আমি কি কাউকে ভয় পাই? ”
নিবিড় অথৈ এর গালে হাত রেখে বলে,
“সব জায়গায় সাহস দেখালে কাজ হয় না মেয়ে। আমি ফিরলে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাব। আপাতত লক্ষি মেয়ের মতো রুমেই থেকো প্লিজ। ”
“আচ্ছা, থাকব। ”
নিবিড় হেসে বাইরে চলে যায়।
_____
চলবে____