অতিথি_পাখি পর্বঃ ০৬(শেষ পর্ব)
লেখকঃ আবির খান
দিন থেকে রাত হয়ে গিয়েছে রিয়াজ এখনো বিছানায় মরার মতো পড়ে রয়েছে। চোখ থেকে অঝোরে অশ্রু তো সেই সকাল থেকেই ঝরছে। রিয়াজ অপেক্ষায় আছে শুধু সিথির। কিন্তু সিথির কোন খবর নেই। খাওয়া দাওয়া কিছুই করেনি রিয়াজ। মূহুর্তেই ওর জীবনটা কেমন উল্টো পাল্টো হয়ে গেল। রিয়াজ সিথির সাথে কাটানো সময়গুলো মনে করছে আর ডুকরে ডুকরে কেঁদে চলছে। অন্ধকারে কেমন হারিয়ে যাচ্ছে রিয়াজ। রিয়াজ চিৎকার করে বলছে,
রিয়াজঃ কেন এলে তুমি সিথি কেন??
অবুঝ কষ্টটা রিয়াজকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরে যে রিয়াজ আর নিতে না পেরে একসময় ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়।
সকালে,
হঠাৎ রিয়াজের ফোনটা বেজে উঠে। রিয়াজ ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে,
জামালঃ হ্যালো রিয়াজ স্যার..
রিয়াজঃ জি বলুন।(আস্তে করে)
জামালঃ স্যার আপনাকে বস এখনই অফিসে ডেকেছে।
রিয়াজঃ কিন্তু আমিতো আসতে পারবো না।
জামালঃ না স্যার, যে করেই হোক আপনি আসুন। নাহলে বস রাগ করবে পরে আপনারই সমস্যা হবে।
রিয়াজঃ আচ্ছা আসছি।
রিয়াজ ফোনটা পাশে রেখে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে সকাল ১১.২৫ মিনিট। আর অফিস শুরু হয়েছে সকাল ৯ টায়। রিয়াজ জানে বস ওকে বকা দিতেই ডেকেছে। এই চাকরিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ রিয়াজের জন্য। এই চাকরিটা থেকেই রিয়াজের পুরো পরিবার চলে। রিয়াজ চাকরিটা হারাতে চায়না। কিন্তু ওর যা অবস্থা আল্লাহ জানে বস ওকে কি বলে।
রিয়াজ কোন রকম রেডি হয়ে না চাওয়া স্বত্তেও অফিসে চলে যায়। এখন প্রায় দুপুর ১.১০ বাজে। অফিসে সবার সাথে নামাজ পড়ে রিয়াজ নিজের কেবিনে বসতেই ওকে বস ডাক দেয়। রিয়াজ ভয়ে ভয়ে বসের কাছে যায়। খুব কষ্টে সিথির কষ্টটাকে লুকিয়ে বসের কাছে যায় রিয়াজ।
রিয়াজঃ মে আই কামিন স্যার??
সোয়েব আহমেদ(বস)ঃ ইয়েস।
রিয়াজ সালাম দিল। বস উত্তর দিল আর রিয়াজকে বসতে বলে বলল,
সোয়েব আহমেদঃ কি ব্যাপার রিয়াজ তুমি ঠিক মতো অফিসে আসছো না। আজতো তোমার ছুটি নেই তাহলে আজ এতো লেট করলে কেন?? (গম্ভীর কণ্ঠে)
রিয়াজ কি বলবে বুঝতে পারছে না। চুপচাপ বসে আছে। কিছু একটা বলতে হবে না হলে বস রাগ করবে। এই ভেবে রিয়াজ বলে,
রিয়াজঃ স্যার একজন অতিথি এসেছিলো। খুব কাছের। সে আজ চলে গেল। তাকে ছেড়ে আসতেই দেরী হয়ে গেল।
সোয়েব আহমেদঃ আচ্ছা। আর যেন এমন না হয়। তুমি কাজের প্রতি সিন্সিয়ার তাই কিছু বললাম না। আর তোমাকে আমার খুব পছন্দও। তুমি খুবই সৎ একজন ছেলে।
রিয়াজ অবাক হচ্ছে। আর বলে,
রিয়াজঃ ধন্যবাদ স্যার।
সোয়েব আহমেদঃ তোমার পরিবার সম্পর্কে বলো।
রিয়াজঃ স্যার বাবা-মা আর বোন আছে। সবাই বরিশালে থাকে। আমরা ধনীও না মধ্যবিত্তও না। আল্লাহ আর আপনার এই অফিসের উছিলায় আমাদের চলে যায়।
সোয়েব আহমেদঃ বাহ!! বাকিরা যেমন টা বলল তুমি ঠিক তেমনি। খুব ভালো। তোমার রেজাল্ট সব আমি দেখেছি। খুব মেধাবী ছাত্র তুমি। তা বিয়ে করেছ??
রিয়াজঃ না স্যার।
সোয়েব আহমেদঃ করার ইচ্ছা আছে??
রিয়াজঃ আল্লাহ যখন হুকুম করে আর কি স্যার।
সোয়েব আহমেদঃ তোমার বাবার নাম্বারটা দেও।
রিয়াজ অবাক হয়ে নাম্বারটা দেয়।
রিয়াজঃ স্যার কিছু না মনে করলে নাম্বার কেন নিলেন জানতে পারি?? আমি কি কোন ভুল করেছি?? (অবাক হয়ে)
সোয়েব আহমেদঃ তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার মেয়ের সাথে তোমাকে বিয়ে দিবো। আমি বেশ কদিন যাবৎ ভাবছিলাম তোমাকে বলবো বাট তুমি তো অফিসেই আসো নি। আজকেও কল করে আনাতে হলো। যাই হোক তোমার বাবা-মাকে ঢাকাতে আসতে বলো আমিও তাদের সাথে কথা বলবো নে। খুব শিগগিরই তোমাদের বিয়ে হবে।
রিয়াজ এ কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ে। এটা কি হলো। এত্তো বড় কোম্পানির মালিক ওকে পছন্দ করেছে। কিন্তু রিয়াজের মনে যে সিথি। এই অল্প সময়ের জন্য হলেও রিয়াজ সিথিকে ভালোবেসে ফেলেছে। ও নিজেকে ধোকা দিতে পারবে না। ও সিথিকে খুঁজে বের করবে। এই ভেবে রিয়াজ শক্ত কণ্ঠে বলে,
রিয়াজঃ সরি স্যার আমাকে মাফ করবেন। আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না।
সোয়েব আহমেদঃ কিহহহ!! তুমি আমাকে না করছো?? আমি কে জানো?? (রাগী কণ্ঠে)
রিয়াজঃ স্যার আমাকে ক্ষমা করবেন আমি পারবো না।
সোয়েব আহমেদঃ কেন পারবে না?? কি সমস্যা??
রিয়াজঃ স্যার আমি তাও আপনাকে বলতে পারবো না।
সোয়েব আহমেদঃ আর একটা কথা আমি তোমার শুনবো না। তোমাকে আমার মেয়েকে বিয়ে করতেই হবে। আমি আমার মেয়েকে তোমার কথা বলেছি। আমি ওকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। আমি আমার মেয়ের কাছে কোন ভাবেই ছোট হতে পারবো না।
রিয়াজঃ স্যার বুঝার চেষ্টা করুন আমি একজনকে ভালোবাসি। আমি তাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
সোয়েব আহমেদঃ কোথায় সে??আমি তার সাথে দেখা করবো।
রিয়াজ অসহায় ভাবে বলে,
রিয়াজঃ স্যার সে কোথায় জানি চলে গিয়েছে আমাকে বলেও যায়নি। আমাকে তাকে খুঁজতে হবে।
সোয়েব আহমেদঃ বুঝেছি। তোমার বাবা-মাকে কালই আসতে বলবে। আর একটা কথা আমি শুনতে চাইনা।
রিয়াজঃ সরি স্যার আমি বিয়েটা কোনভাবেই করতে পারবো না।
সোয়েব আহমেদঃ এটা কি তোমার শেষ কথা??
রিয়াজঃ জি স্যার।
সোয়েব আহমেদঃ তাহলে যেন রাখো, এই শহরের কোথাও তোমাকে কেউ চাকরি দিবে না যদি আমি তোমাকে বের করে দেই। এতোটা ক্ষমতা নিয়ে আমি চলি বুঝলে। তোমার মতো ছেলের জীবন শেষ করা আমার হাতের ময়লা। জাস্ট চাকরি থেকে বের করে দিবো কোথাও চাকরি পাবে না। আর তোমার এই জিদের জন্য তোমার পরিবার পথে বসবে। তাই শেষবার বলছি, তোমার জিদ নাকি আমার সিদ্ধান্ত?? সময় ২ মিনিট সময় দিলাম। ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে উত্তর দিও।
রিয়াজ যে এমন গোলকধাঁধায় পড়বে ও জীবনেও ভাবে নি। ভাগ্য ওর সাথে এমন একটা খেলা খেলবে ও কল্পনাও করেনি। রিয়াজ এখন কি করবে?? একপাশে সিথি আর অন্যপাশে তিনটা মানুষ। মা, বাবা আর বোন। চাকরিটা চলে গেলে সবকিছু মূহুর্তেই বন্ধ হয়ে যাবে। সাথে সাথে ওরা পথে নেমে যাবে। আজকাল মায়ের শরীরটাও ভালো না। রিয়াজ আর ভাবতে পারে না। বাস্তবতার কাছে সত্যিকারের ভালোবাসাটা এভাবেই হেরে যায়। সিথির উপর খুব রাগ হচ্ছে রিয়াজের। ওর অন্তরে জায়গা করে ওকে অন্ধকারে ফেলে পালিয়েছে। আজ সিথি থাকলে ওকেই বিয়ে করতো। বসকে বুঝাতে পারতো। রিয়াজ মাথা নিচু করে অসহায় ভাবে বলে,
রিয়াজঃ স্যার আপনার সিদ্ধান্ত।
সোয়েব আহমেদঃ গ্রেট। তাহলে তোমার বাবা-মাকে আসতে বলো আমার সাথে দেখা করতে বলো। শুভ কাজে দেরী করতে নেই।
রিয়াজঃ জি আচ্ছা।
আমরা যখন চাই সময়টা ধীর গতিতে যাক, তখন সময়টা খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়। ঠিক যেমনটা রিয়াজের সাথে হয়েছে। রিয়াজের বাবা-মা বেজায় খুশি ছেলেকে এত্তো বড় একটা পরিবারর বিয়ে দিতে পেরে। দুই পরিবারই অনেক খুশী। কিন্তু শুধু খুশী নয় একজন। আর সে হলো রিয়াজ। ওর প্রতিনিয়ত মনে হচ্ছে ও বাস্তবতার কাছে হেরে গিয়েছে। হেরে গিয়েছে ক্ষমতার কাছে। ওর ভাগ্যে কি শুরু থেকেই হারানোর কষ্ট লিখা ছিল?? কোন দিন পূর্ণতা পাবে না ওর ভালোবাসা?? এমন হাজারো প্রশ্ন প্রতিটা মূহুর্ত রিয়াজকে শেষ করে দিচ্ছিল। রাগে দুঃখে কষ্টে একটি বারও রিয়াজ বউকে দেখতে চায়নি। এমনকি তার নাম পর্যন্ত জানে না। কেউ ওকে দেখায়ও নি বলেও নি। খুব তাড়াতাড়িই ধুমধাম করে ওদের বিয়েটা হয়ে গেল। বিশাল একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি শুধু ওদেরকে দেওয়া হলো। এতো কিছু পেয়েও রিয়াজের মনে কোন আনন্দ খুশি নেই।
রিয়াজের স্ত্রী বিশাল বড় রাজকীয় রুমে ওর জন্য অপেক্ষায় বসে আছে। রিয়াজ বাইরে দাঁড়িয়ে কয়েকফোঁটা অশ্রু ফেলে ভিতরে ঢুকে। ভিতরে ঢুকেই রিয়াজ দেখে ওর মাত্র বিয়ে করা বউটা খুব সুন্দর করে সাজানো বেডে বসে আছে ঘোমটা দিয়ে। রিয়াজের কষ্ট যেন আরো বেড়ে যায়। রিয়াজের ইচ্ছা ছিল এখানে সিথি থাকবে। রিয়াজ ওর স্ত্রীর কাছে গিয়ে বলল,
রিয়াজঃ দেখুন, জানি না আমি আপনাকে কখনো মেনে নিতে পারবো কিনা। পরিবারকে বাঁচাতে গিয়েই এই বিয়েটা করতে হয়েছে। নাহলে কখনোই আমি বিয়েটা করতাম না। কারণ আমার মনের গহীনে একজন আছে। সে অতিথি পাখি হয়ে এসেছিল আমার একাকিত্বের জীবনে। হঠাৎ না বলেই অাবার চলে গেল। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই সে আমার মনে তার জন্য জায়গা করে নেয়। আমি তাকে সত্যিকারের ভালোবেসে ফেলি। আমার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার স্পর্শ পেয়েছিলাম আমি সিথির কাছ থেকে৷ কিন্তু হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল আবার সব হারিয়ে গেল। আপনার সাথে হঠাৎ করে আমার বিয়ে হয়ে গেল। সব কিছু কেমন হঠাৎ হয়ে গেল। জানি না আমি ঠিক কবে আপনাকে মেনে নিতে পারবো। আমার ক্ষমা করবেন।
বলেই রিয়াজ জানালার কাছে চলে যায়। ওর নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। সিথিকেও হারিয়েও কষ্ট পাচ্ছে৷ এই মেয়েটাকেও কষ্ট দিয়ে কষ্ট পাচ্ছে। তীব্র ঠান্ডায় চারদিক আচ্ছন্ন। ওদের রুমে হিটারটা বেশ ভালোই গরম রেখেছে রুমটা। কিন্তু এই হাল্কা গরমের মাঝে রিয়াজ অনুভব করে ওর পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। ওর কানের কাছে তার গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। রিয়াজ দ্রুত পিছনে তাকিয়ে দেখে ওর স্ত্রী। রিয়াজ অসহায় ভাবে বলে,
রিয়াজঃ দেখুন জোর করে আমাকে পাবেন না। আমি এখন ঠিক নেই।
স্ত্রীঃ আমিও একজনকে খুব ভালোবাসতাম। সে আমাকে এটা গিফট করেছিল। দেখুন কি সুন্দর।
রিয়াজের কাছে ওর স্ত্রীর কণ্ঠটা কেমন পরিচিত মনে হলো। আর যখনই পিছনে ফিরে গিফটটা দেখে, রিয়াজ মূহুর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায়। রিয়াজ দেখে সিথিকে কিনে দেওয়া সেই ব্রেসলেটটা ওর মাত্র বিয়ে করা স্ত্রীর হাতে। রিয়াজ যেন আকাশ থেকে পড়ে। রিয়াজ দ্রুত ওর স্ত্রীর ঘোমটা উঠিয়ে যা দেখে তার জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিল না৷ রিয়াজ রীতিমতো ৫১২ ভোল্টের সক খায়।
রিয়াজঃ এ অসম্ভব!! তুমি তো সিথি। তুমি কি সত্যিই সিথি??
সিথিঃ এই যে মিস্টার আমাকে দেখে কি সন্দেহ হয় নাকি??
সিথিও ঠিক এভাবেই কথা বলে। রিয়াজ অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে সিথিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর বলে,
রিয়াজঃ কেন আমাকে একা করে চলে গিয়েছিলে?? আর এসব কি আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আজ সব বলবে তুমি। নাহলে…
সিথিঃ এই নাহলে কি??
রিয়াজ সিথির কানে কানে বলে,
রিয়াজঃ আদর করব না। (মজা করে)
সিথি রিয়াজের দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে বলে,
সিথিঃ আদর পাওয়ার জন্য এতো কিছু করলাম আর উনি এখন বলে কি।
রিয়াজঃ তাহলে সব খুলে বলো।
সিথিঃ আচ্ছা বলছি শোনো,
– “সেদিন আমি বাবা-মার সাথে রাগ করে বাসা থেকে পালিয়ে আমার ফ্রেন্ডের বাসায় যাচ্ছিলাম। ওই যে ফোন দিয়েছিলাম না ওর বাসায়। বাবা আমাকে জোর করে বিয়ে দিতে চাচ্ছিল। তাই আমি খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে বসে ছিলাম। কিন্তু কোন কিছুতেই লাভ হচ্ছিল না। তারা তাদের মতো করে সব করছিল। তাই আমি দুর্বল শরীর নিয়ে মিরপুর থেকে বাসে উঠে মতিঝিল আমার ফ্রেন্ডের বাসায় আসতে নি। ভাগ্যক্রমে তুমি ওই বাসেই ছিলে। আজ তোমার মতো সৎ আর ভালো পবিত্র মনের মানুষ না থাকলে হয়তো আমি আজ কবরে থাকতাম। আমাকে প্রথমে পশুর মতো খেতো তারপর মেরে ফেলতো। কিন্তু তুমি আমাকে বাচিঁয়েছ। আমার যখন হাসপাতালে জ্ঞান আসে আর আমি যখন প্রথম তোমাকে দেখি ঠিক তখনই আমি তোমাকে চিনে ফেলি। কারণ বাবার অফিসে তোমাকে অনেক বার দেখেছি। তোমার সামনে দিয়ে কতবার ঘুরাঘুরি করেছি। কিন্তু তুমি একবারও ফিরে চাও নি। তাই তোমার কাছে আসার জন্য তোমার প্রিয় হওয়ার জন্য ফ্রেন্ডের বাসায় আর না গিয়ে তোমার বাসায় যাই। বিশ্বাস করবে না ফ্রেন্ডের বাসা থেকে তোমার কাছে আমার নিজেকে অনেক সেইফ মনে হয়েছে। কারণ আমি যখন ঘুমিয়ে পড়ি তুমি সারারাত এই তীব্র ঠান্ডার বাইরে বসে ছিলে তাও আমাকে ডেকে কিছু বলো নি। আমাকে এতো কাছে পেয়েও আমাকে একটাবারও খারাপ ভাবে স্পর্শ করো নি। আমার সাথে কোন খারাপ কিছু করোনি। সত্যিই তোমার মতো ছেলে বা স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তাই মাকে আগেই আমি সেদিন বলে দিয়েছিলাম। মা বাবাকে সব বুঝিয়ে বলেছে। সেদিন যে তোমার কাহানী বললে, আমি তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তোমাকে বিয়ে করবো। তাই আমি সকালে চলে আসি। এসে আমিও বাবাকে সব বুঝিয়ে বললে সে তোমাকে পরীক্ষা করবে বলে আমাকে বলে। যদি তুমি পাশ করো তাহলে বিয়ে হবে আর না করলে না। আমার বিশ্বাস ছিল তুমি পাশ করবে। বাবা দিনে তোমাকে পরীক্ষা করে রাতে এসে আমাকে বলে,”তুই খাঁটি একটা মানুষকে পছন্দ করেছিস। যার কাছে আমার অঢেল সম্পত্তির কোন মূল্য নেই আছে শুধু তোর ভালোবাসার। তাই ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ওকে এভাবে মানিয়েছি। নাহলে বেটা বিয়েই করতো না।” বাবা আর আমার প্ল্যান মতো এসব হয়েছে। তোমাকে এই সারপ্রাইজটা দিবো বলেই তোমাকে কেউ কিছু বলেনি। তুমি এতোটা ভালোবাসো আমায় যে নিজের বউকে এসে এভাবে সব বলছিলে??”
রিয়াজঃ সীমাহীন ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা কখনো তুমি পরিমাপ করতে পারবে না।
সিথিঃ দেখেছো, একদিন বলেছিলাম হঠাৎ করে তোমার জীবনে তোমার আসল জীবন সঙ্গী চলে আসবে শুধু তোমার হয়ে। দেখো চলে এসেছি। আজ থেকে আর তুমি একা নও। আজ থেকে আমরা।
রিয়াজঃ আচ্ছা আমরা।
সিথিঃ নেও এখন মন ভরে একটু আদর করো তো। আমার কিন্তু দুইটা বাবু লাগবে বুঝলা। একটা ছেলে ঠিক তোমার মতো ভালো। আর একটা মেয়ে ঠিক আমার মতো দুষ্ট। হিহি।
রিয়াজঃ তাই??
সিথিঃ হুম। কই দেও দেও আদর দেও। নাহলে কিন্তু..
রিয়াজঃ নাহলে কি??
সিথিঃ আমি জোর করে নিবো হিহি…
এরপর আর কি..সিথি জোর করেই ওর ভালোবাসার কাছ থেকে আদর নিলো। ওরা মিশে গেল একে অপরের মাঝে। রিয়াজকে আজ থেকে আর হারানোর ব্যাথা পেতে হবে না। ওর ভালো কাজের ফল ও পেয়েছে।
—-> এই গল্পটি লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিলো সাহায্যের একটি হাত বাড়িয়ে দেওয়া। আপনি নিজেকে সৎ রেখে এভাবে সাহায্যের একটি হাত বাড়িয়ে দিলে সমাজে নারীরা আর অসহায় হয়ে পড়বে না। একটা অসহায় বিপদগ্রস্ত নারীকে দেখে কামুক দৃষ্টিতে না তাকিয়ে রিয়াজের মতো হাতটা বাড়িয়ে দিন। আপনার এই সাহায্য বা ভালো কাজের ফল আপনি অবশ্যই পাবেন। রিয়াজের চরিত্রটার মতো আমাদের সকল ছেলেদের চরিত্র হলো, বাংলার সব মেয়ে নিজেকে সেইফ মনে করবে। আমি বলবো আমার ভাইয়েরা যারা আছেন তারা রিয়াজ হয়ে দেখান। রিয়াজের চেয়েও বেশি কিছু পাবেন এই আপনার একটা হাত সাহায্যের দিকে বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। নারী কোন খেলনা না। সেও একজন মানুষ। তার সাথে খেলা করে আজ হয়তো ছুড়ে মারে ফেলে দিলেন। কিন্তু জেনে রাখুন, আজ আপনি যা করছেন ঠিক সেটাই একদিন আপনার হয়ে ফিরে আসবে। কারণ এটাই নিয়ম। যেমন, অবুঝ শিশু হয়ে দুনিয়াতে এসেছিলাম আবার অবুঝ বৃদ্ধ হয়ে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। তাই ধর্ষনলনের মতো জঘন্য কাজ না করে রিয়াজের মতো হয়ে দেখান। জীবনে অনেক কিছু পাবেন। ধন্যবাদ।
পুরো গল্পটি কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সবার মতামত চাই। সামনে কি আর আমার গল্প পড়তে চান তাও জানাবেন। সাথে থাকবেন সবসময় ধন্যবাদ।
– সমাপ্ত।
#অতিথি_পাখি
© আবির খান।
– কোনো ভুল হলে মাফ করবেন।